সাহাবাগণের জীবনকথা-৭৪ || আবদুল্লাহ ইবন সুহাইল (রাঃ)-এর জীবনী
আবদুল্লাহ ইবন সুহাইল (রাঃ)
আবদুল্লাহ (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ
ইসলামের প্রথম পর্বে ঈমান আনেন এবং হাবশা অভিমুখী দ্বিতীয় কাফিলার সাথে হাবশায় হিজরাত করেন। কিছুদিন হাবশায় অবস্থানের পর মক্কায় ফিরে এলে পিতা তাঁকে বন্দী করে এবং তাঁর ওপর নির্দয় অত্যাচার চালায়। 'আবদুল্লাহ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ইসলাম ত্যাগ করে পুনরায় মুশরিকী জীবনে বা পৌত্তলিকতায় ফিরে যাওয়ার ভান করেন। মাতা-পিতা ও মক্কার মুশরিকরা তাঁর বাহ্যিক আচরণ দেখে ইসলাম পরিত্যাগ সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হয়ে যায়।
আবদুল্লাহ (রাঃ) এর বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ
এদিকে হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে যান। মক্কা ও মদীনার মাঝে সামরিক সংঘর্ষ শুরু হয়। মক্কাবাসীরা 'আবদুল্লাহকে তাদের সহযোদ্ধা হিসেবে বদরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু যে হৃদয়ে একবার ঈমানের নূর প্রবেশ করে সেখানে যে কক্ষনো শিরকের অন্ধকার প্রবেশ করতে পারেনা – একথাটি তাদের জানা ছিল না। মূলতঃ 'আবদুল্লাহ কোনদিন ইসলাম ত্যাগ করেননি। তিনি শুধু সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। বদরে মুসলিম ও কুরাইশ বাহিনী মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমনি সময় সুযোগ বুঝে 'আবদুল্লাহ মুসলিম বাহিনীতে যোগদান করেন।
এ আকস্মিক ঘটনায় 'আবদুল্লাহর পিতা ক্রোধে ফেটে পড়ে। সে এর প্রতিশোধকল্পে প্রচণ্ড বেগে আক্রমণ চালায়। কিন্তু তাতে কোন লাভ হলোনা। 'আবদুল্লাহ তখন স্বাধীন, তাঁর দ্বীনী ভাইদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে পিতার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়ছেন। অবশেষে বিজয় হলো মুসলমানদের। বদরের পর সকল প্রসিদ্ধ যুদ্ধেই হযরত 'আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহর (সাঃ) সংগে থেকে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। হুদাইবিয়ার সন্ধি ও বাইয়াতে রিদওয়ানেও তিনি শরিক ছিলেন। (আল-ইসাবা-২/৩২৩)
মক্কা বিজয়ের সময় আবদুল্লাহ (রাঃ) এর পিতার জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা
মক্কা বিজয়ের সময়ও হযরত 'আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সফরসঙ্গী ছিলেন। তাঁর পিতা সুহাইল তখনও মক্কায় কাফির অবস্থায় জীবিত। হযরত 'আবদুল্লাহ (রাঃ) পিতার জন্য রাসুলুল্লাহর (সাঃ) নিকট আমান বা নিরাপত্তা চাইলেন। এ সম্পর্কে তাঁর পিতা সুহাইল বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, আমি আমার ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলাম। তারপর আমার ছেলে আবদুল্লাহকে আমার নিরাপত্তার আবেদন জানানোর জন্য মুহাম্মাদের (সাঃ) নিকট পাঠালাম। কারণ, আমি যে নিহত হবো না, এমন বিশ্বাস আমার ছিল না। আবদুল্লাহ রাসুলুল্লাহর (সাঃ) নিকট গিয়ে বললো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার পিতাকে কি আমান বা নিরাপত্তা দান করছেন?” রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “হা। তাকে আল্লাহর আমানে আমান বা নিরাপত্তা দেওয়া গেল। সে আত্মপ্রকাশ করুক।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর আশে পাশের লোকদের বললেন, “সুহাইল ইবন 'আমরকে কেউ যেন হেয় চোখে না দেখে। আল্লাহর কসম, সে একজন সম্মানী ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি। এমন ব্যক্তি কক্ষনো ইসলামের সৌন্দর্য থেকে অজ্ঞ থাকতে পারেনা। এখন তো সে দেখতে পেয়েছে, সে যার সাহায্যকারী ছিল তাতে কোন কল্যাণ নেই।”
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) পিতার নিকট উপস্থিত হয়ে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নির্দেশ শুনিয়ে সুসংবাদ দিলেন। পিতা পুত্রের সৌভাগ্যে আনন্দে বিগলিত হয়ে বলে ওঠেন, “আল্লাহর কসম, তুমি ছোটবেলা ও বড় হয়ে- উভয় জীবনে সৎকর্মশীল।” রাসুলুল্লাহর (সাঃ) এ আশ্বাসের পর সুহাইল দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান অবস্থায় তাঁর দরবারে হাজির হন। হুনাইন যুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে মক্কা থেকে রওয়ানা হন। পথে মক্কার অনতিদূরে 'জিরানা' নামক স্থানে পৌঁছে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) হুনাইনের গণীমত থেকে তাঁকে ১০০ (একশো) উট দান করেন। (হায়াতুস সাহাবা ১/১৭৩-১৭৪)
আবদুল্লাহ (রাঃ) এর শাহাদাত বরণ
খলীফা আবু বকর সিদ্দীকের (রাঃ) খিলাফতকালে 'আরব উপদ্বীপে যাকাত অস্বীকারকারী ও ভণ্ড নবীদের যে বিদ্রোহ দেখা দেয়, হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) সেই বিদ্রোহ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। হিজরী ১২ সনে ইয়ামামার প্রান্তরে ভণ্ড নবী মুসাইলামার সাথে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়, আবদুল্লাহ (রাঃ) সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতানুসারে মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র আটত্রিশ বছর।
আবদুল্লাহর (রাঃ) পিতা সুহাইল (রাঃ) তখনও মক্কায় জীবিত। এ ঘটনার পর খলীফা হযরত আবু বকর (রাঃ) হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় আসেন। তিনি আবদুল্লাহর পিতার সাথে দেখা করে তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। আবদুল্লাহর পিতা খলীফাকে বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘একজন শহীদ ব্যক্তি তার পরিবারের সত্তর (৭০) জনের শাফায়াত বা শুপারিশ করবে।' আমার আশা আছে, সে সময় আমার ছেলে আমাকে ভুলবে না।”
******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.