প্রাত্যহিক জীবনে “আল্লাহ’র স্মরণ” || মসজিদে গমন, মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়া এবং মসজিদে অবস্থানের দুআ







(শাইখুল ইসলাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শারফ আন-নববী রহ. রচিত “আল আযকার” গ্রন্থ অবলম্বনে)

মসজিদে গমনের সময় পড়ার দুআ


পূর্বে ঘর থেকে যে কোন স্থানের উদ্দেশ্যে বের হওয়া সময় যে দুআ পড়বে তা উল্লেখ করা হয়েছে। যদি মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয় তাহলে উক্ত দুআর সাথে নীচের অংশটি যুক্ত করা মুস্তাহাব।

* মুসলিম শরিফে হজরত ইবনে আব্বাস রাদি.-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খালা মায়মুনা রাদি.-এর ঘরে রাত্রিযাপন করলেন। তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ নামাজের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, যখন মুআজ্জিন ফজরের আজান দিতেন, তখন তিনি নামাজের জন্য বের হতেন এবং এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا، وَفِي لِسَانِي نُورًا، وَاجْعَلْ فِي سَمْعِي نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِي بَصَرِي نُورًا، وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِي نُوْرًا، وَمِنْ أَمَانِي نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِيِّ نُوْرًا،وَمِنْ تَحْتِي نُوْرًا، اَللَّهُمَّ أَعْطِنِي نُوْرًا.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজআল ফি কালবি নুরান, ওয়া ফি লিসানি নুরান, ওয়াজআল ফি সামঈ নুরান, ওয়াজআল ফি বাসারি নুরান, ওয়াজআল ফি খালফি নুরান, ওয়া মিন আমামি নুরান, ওয়াজআল ফি ফাওকি নুরান, ওয়ামিন তাহতি নুরান, আল্লাহুম্মা আ'তিনি নুরান ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমার অন্তরে, যবানে, কানে এবং চোখে নুর দাও। আমার পেছনে, সামনে, উপরে এবং নিচে নুর দাও। হে আল্লাহ, আমাকে নুর দান করো ।

* ইবনুস সুন্নির কিতাবে হজরত বিলাল রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজের জন্য বের হতেন তখন এ দুআ পড়তেন-

بِاسْمِ اللهِ، ، آمَنْتُ بِاللهِ ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ، اللَّهُمَّ بِحَقِّ السَّائِلِينَ عَلَيْكَ، وَبِحَقِّ مَخْرَجِيْ هَذَا، فَإِنِّي لَمْ أَخْرُجْهُ أَشَرًا وَلَا بَطَرًا وَلَا رِيَاءً وَلَا سُمْعَةً، خَرَجْتُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِكَ، وَاتَّقَاءَ سَخَطِكَ؛ أَسْأَلُكَ أَنْ تُعِيْذَنِي مِنَ النَّارِ وَأَنْ تُدْخِلَنِي الْجَنَّةَ.

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আমানতু বিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি আল্লাহুম্মা বিহাক্কিস-সাইলিনা আলাইকা ওয়া বিহাক্কি মাখরাজি হাযা ফাইন্নি লাম আখরুজহু আশারান, ওয়া লা বাতরান ওয়া লা রিয়াআন, ওয়া লা সুম'আতান, খরাজতু ইবতিগাআ মারযাতিকা ওয়া ইত্তিকাইকা সাখাতিকা, আসআলুকা আন তুঈযানি মিনান-নারি ওয়া তুদখুলানিল জান্নাতা ।

অর্থ: আল্লাহর নামে রওনা করলাম, ঈমান আনলাম আল্লাহর ওপর এবং তার ওপরই ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া নেক কাজ করা বা খারাপ কাজ থেকে বাঁচার কোন শক্তি নেই। হে আল্লাহ, আপনার কাছে সুওয়ালকারী ব্যক্তিদের এবং আমার এই বহির্গমনের ওসিলায় কামনা করছি। আমি উৎফুল্লতা, অহমিকা, লৌকিকতা ও সুখ্যাতির জন্য বের হইনি, বের হয়েছি কেবল আপনার সন্তুষ্টি অর্জন এবং অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে।

আমি আপনার কাছে মিনতি করছি যেন, আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান। 

হাদিসটি দুর্বল। এতে ওয়াজি বিন নাফে উকাইলি নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে, সে দুর্বল ও মুনকারুল হাদিস হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম একমত।

মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দুআ


মসজিদে প্রবেশের সময় এ দুআগুলো পড়া মুস্তাহাব-

أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ، اللهُمَّ صَلَّ وَسَلَّمْ عَلى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ. اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي، وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ .

উচ্চারণ: আউযু বিল্লাহিল আযিম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারিম, ওয়া সুলতানিহিল কাদিম, মিনাশ শাইতানির রাজিম। আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ। আল্লাহুম্মাগফির লি যুনুবি ওয়াফতাহ লি আবওয়াবা রহমাতিক।

অর্থ: আমি মহান আল্লাহর কাছে, তাঁর মহৎ সত্ত্বার কাছে এবং তাঁর স্থায়ী ক্ষমতার কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন এবং তার পরিবারবর্গের ওপর। হে আল্লাহ, আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও ।

এরপর বিসমিল্লাহ বলে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে। বের হওয়ার সময় বাম পা আগে দিবে। বের হওয়ার সময়ও পূর্বোল্লিখিত দুআ পড়বে। তবে أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ (আবওয়াবা রাহমাতিক) এর পরিবর্তে  أَبْوَابَ فَضْلِكَ (আবওয়াবা ফাজলিক: করুণার দরজাসমূহ) বলবে। 

* আবু হুমাইদ বা আবু উসাইদ রাদি.-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيُسَلَّمْ عَلى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لْيَقُل: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، فَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلِ : اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ

অর্থ: তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন সে যেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়ে। এরপর যেন বলে:

اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রহমাতিক।

অর্থ: আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। আর যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখন বলবে:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাযলিক। ৪

অর্থ: হে আল্লাহ, আমার জন্য আপনার করুণার দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দাও। –ইবনুস সুন্নির রেওয়ায়েতে এতটুকু বৃদ্ধি করেছেন, যখন বের হবে তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে। এরপর বলবে-

اللَّهُمَّ أَعِذْنِيْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আয়িযনি মিনাশ শাইতানির রাজিম।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে হেফাজত করুন।

ইমাম ইবনে মাজাহ, ইবন খুযাইমা ও আবু হাতিম ইবনে হিব্বান এই বৃদ্ধির সাথে বর্ণনা করেছেন। 

* হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন এই দুআ পড়তেন-

أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ

উচ্চারণ: আউযু বিল্লাহিল আযিম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারিম, ওয়া সুলতানিহিল কাদিম, মিনাশ শাইতানির রাজিম।

অর্থ: আমি মহান আল্লাহর কাছে, তাঁর মহৎ সত্ত্বার কাছে এবং তাঁর স্থায়ী ক্ষমতার কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করি।

যখন এই দুআ পড়ে তখন শয়তান বলে সে সারাদিনের জন্য আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেল। 

* ইবনুস সুন্নির কিতাবে হজরত আনাস রাদি, এর সূত্রে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় বলতেন-

بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ صَلَّ عَلَى مُحَمَّدٍ.

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ।

অর্থ: আল্লাহর নামে প্রবেশ করলাম। হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।

আর বের হতে বলতেন-

بِسْمِ اللَّهِ، اللهُمَّ صَلَّ عَلَى مُحَمَّدٍ.

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ।

অর্থ: আল্লাহর নামে বের হলাম। হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। 

ইবনুস সুন্নির কিতাবেও ইবন উমর রাদি.-এর সূত্রে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দরুদ পাঠের বিষয়টি বর্ণনা করেছি।

* আবদুল্লাহ বিন হাসান তিনি তার মা থেকে তিনি তার দাদী (ফাতেমা রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ حَمِدَ اللَّهِ وَسُمِّيَ وَقَالَ
: "اللهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ . وَإِذَا خَرَجَ قَالَ مِثْلَ ذَلِكَ. وَقَالَ :
"اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ فَضْلِكَ."
:
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন আল্লাহর প্রশংসা করতেন এবং বিসমিল্লাহ বলে এই দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি ওয়াফতাহ লি আবওয়াবা রহমাতিক।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দাও এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। আর যখন বের হতেন তখনও এমনই করতেন এবং পড়তেন-

اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ فَضْلِكَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাফতাহ লি আবওয়াবা ফাযলিক ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমার জন্য আপনার করুণার দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দাও । 

* আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَخْرُجَ مِنَ الْمَسْجِدِ تَدَاعَتْ جُنُودُ إِبِلِيْسَ، وَأَجْلَبَتْ، وَاجْتَمَعَتْ كَمَا تَجْتَمِعُ النَّخْلُ عَلى يَعْسُوْبِهَا، فَإِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ فَلْيَقُلِ: اَللّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ إِبْلِيْسَ وَجُنُودِهِ؛ فَإِنَّهُ إِذَا قَالَهَا لَمْ

অর্থ: তোমাদের কেউ যখন মসজিদ থেকে বের হতে চায়, ইবলিসের সৈন্যরা পরস্পরে ডেকে জমায়েত হয়, যেমনিভাবে মৌমাছি তাদের আমীরের কাছে জমায়েত হয়। আর যখন তোমাদের কেউ মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে এই দুআ পড়ে, তখন ইবলিস তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। দুআটি হলো-

اللهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ إِبْلِيسَ وَجُنُودِهِ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন ইবলিসা ওয়া জুনুদিহ। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নিকট শয়তান এবং তার বাহিনীর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করি । 

মসজিদে অবস্থানকালীন দুআ


মসজিদে বেশি বেশি জিকির করা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়া এবং বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। হাদিস ও ইলমে ফিকহসহ শরিয়তের সকল ইলম বিষয়ক আলোচনা করাও মুস্তাহাব। আল্লাহ তাআলা বলেন-

في بُيُوتٍ أَذِنَ اللهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ
رِجَالٌ لا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ.

অর্থ: মহান আল্লাহ তাআলা যেসব ঘরকে মর্যাদা দিতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আদেশ করেছেন। তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবিহ পাঠ করে সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহ তাআলার স্মরণ থেকে এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত আদায় থেকে গাফেল করে না । ১০

আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেন-

وَمَنْ يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ، فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّهِ.

অর্থ: আল্লাহ যে সব জিনিসকে মর্যাদা দিয়েছেন, যে ব্যক্তি তা রক্ষা করবে, সুতরাং এটা তার প্রতিপালকের কাছে তার জন্য কল্যাণকর হবে। ১১

وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ، فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ.

অর্থ: আল্লাহ যে সব জিনিসকে নিদর্শন বানিয়েছেন, যে ব্যক্তি তা সংরক্ষণ করবে, সুতরাং এটা তার জন্য অন্তরের তাকওয়ার পরিচায়ক। ১২

*  হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إِنَّمَا بُنِيَتِ الْمَسَاجِدُ لِمَا بُنِيَتْ لَهُ.

অর্থ: নিশ্চয় মসজিদগুলোকে যে জন্য বানানো হয়ে এখানে তাই করতে হবে। ১৩

* হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ গ্রাম্যলোককে বলেছিলেন যে মসজিদের মধ্যে পেশাব করেছিলো-

إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ وَلَا الْقَدْرِ، إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ.

অর্থ: নিশ্চয় এই মসজিদগুলো পেশাব-পায়খানা ও ময়লা-আবর্জনার স্থান নয়। এগুলো আল্লাহর জিকির, নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য নির্মিত। ১৪

মসজিদে অবস্থানকারীর করণীয়


মসজিদে ইতেকাফের নিয়তে অবস্থান করবে। যদিও তা অল্প সময় হোক না কেন। এমনকি মসজিদে কেবল গমন করেই চলে আসে, অবস্থান নাও করে তার জন্যও ইতিকাফের নিয়ত করা চাই। যাতে ইতেকাফের ফজিলত লাভ হয়ে যায় । তবে উত্তম হল কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর বের হওয়া।

মসজিদে অবস্থানকারী ভালো কাজের আদেশ করবে। মন্দ কাজ থেকে বাধা দেবে। অবশ্য এই কাজ মসজিদ ও মসজিদের বাইরে সব জায়গায় করা চাই। তবে মসজিদে বিশেষভাবে বলা হয়েছে মসজিদের সম্মান মর্যাদা এবং মসজিদ সবচেয়ে উত্তম জায়গা হিসেবে। কেউ কেউ বলেন, যদি মসজিদে প্রবেশের পর কোন কারণে যেমন হৃদসের বা অন্য কোন কাজে মগ্ন হওয়ার কারণে তাহিয়্যাতুল মসজিদ (মসজিদের প্রবেশের পর দুই রাকাত নামাজ) পড়তে না পারে তাহলে এ দুআটি চারবার পড়া মুস্তাহাব-

سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَإِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ.

উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ।

অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি, সকল প্রশংসা তারই। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আর আল্লাহ মহান ।

মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা ও ক্রয় বিক্রয় নিষেধ


* মুসলিম শরিফে আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَنْ سَمِعَ رَجُلًا يَنْشُدُ ضَالَّةٌ فِي الْمَسْجِدِ فَلْيَقُلْ لَا رَدَّهَا اللَّهُ عَلَيْكَ، فَإِنَّ الْمَسَاجِدَ لَمْ تُبْنَ لِهَذَا.

অর্থ: যে ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিতে শুনে সে যেন বলে-

لَا رَدَّهَا اللهُ عَلَيْكَ

উচ্চারণ: লা রাদ্দাহাল্লাহু আলাইক

অর্থ: আল্লাহ তোমার হারানো বস্তু তোমার কাছে যেন ফিরিয়ে না দেন । কেননা মসজিদগুলোকে এসব কাজের জন্য বানানো হয়নি। ১৫

*  মুসলিম শরিফে হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত—

أَنَّ رَجُلًا نَشَدَ فِي الْمَسْجِدِ، فَقَالَ : مَنْ دَعَا إِلَى الْجَمَلِ الْأَحْمَرِ ؟ فَقَالَ النَّبِيُّصَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَا وَجَدْتَ إِنَّمَا بُنِيَتِ الْمَسَاجِدُ لِمَا بُنِيَتْ لَهُ.

অর্থ: এক ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিল। বলল, আমার লাল উট হারানো গিয়েছে। কেউ পেয়ে থাকলে দয়া করে আমার কাছে পৌঁছে দেবেন। তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি উট পাবে না। নিশ্চয় মসজিদগুলোকে যে জন্য বানানো হয় এখানে তাই করতে হবে। ১৬

* তিরমিজি শরিফে আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَبِيعُ، أَوْ يَبْتَاعُ فِي الْمَسْجِدِ فَقُوْلُوْا : لَا أَرْبَحَ اللَّهُ تِجَارَتَكَ. وَإِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَنْشُدُ فِيْهِ ضَالَّةٌ فَقُوْلُوْا : لَا رَدَّ اللهُ عَلَيْكَ.

অর্থ: যদি মসজিদে কাউকে ক্রয়-বিক্রয় করতে দেখো, তাহলে তাকে বলে দিও- আল্লাহ যেন তোমার ব্যবসায় লাভ না দেন। অনুরূপভাবে কেউ যদি হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়, তাকে বলে দিও- আল্লাহ যেন তোমার হারানো বস্তু ফিরিয়ে না দেন। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান পর্যায়ের। ১৭

মসজিদে অনৈসলামিক কবিতা, গান ইত্যাদি বলা যাবে না। (৭৯) সাওবান রাদি.-এর সূত্রে ইবনুস সুন্নি তার কিতাবে বর্ণনা করেন-

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ رَأَيْتُمُوهُ يَنْشُدُ شِعْرًا فِي الْمَسْجِدِ فَقُوْلُوْا لَهُ: فَضَّ اللهُ فَاكَ ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তোমরা কাউকে মসজিদে অনৈসলামিক কবিতা আবৃত্তি করতে দেখো তাকে তিনবার বলে দিও

فَضَّ اللهُ فَاكَ.

উচ্চারণ: ফাযযাল্লাহু ফাকা ।

অর্থ: আল্লাহ তোমার মুখ ভেঙ্গে দিন। 


তথ্যসূত্রঃ
১. সহিহ মুসলিম: ৭৬৩, সহিহ বুখারি: ৬৩১৬, সুনানে আবু দাউদ: ১৩৫৩, সুনানে তিরমিজিঃ ৩৪১৯, সুনানে নাসাঈ ২ / ২১৮।
২. ইবনুস সুন্নি ৮৪।
৩. অর্থাৎ এভাবে বলবে: أعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيم وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، الحَمْدُ لِلَّهِ، اللّهُمَّ صَلَّ وَسَلَّمْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ. اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُونِي، وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ فَضْلِكَ.
৪. সহিহ মুসলিম: ৭১৩, সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭৭২, সুনানে নাসাঈ ২/৫৩, আমালুল ইয়াউম: ৯০, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ১/২०৭
৫. আমালুল ইয়াউম: ৮৬, ইবনেস সুন্নি, সহিহ ইবনে খুযাইমা: ৪৫২; সহিহ ইবনে হিব্বান : ২০৪৭।
৬. সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৬।
৭. ইবনেস সুন্নি: ৮৮।
৮. সুনানে তিরমিজি: ৩১৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭৭১, ইবনু সুন্নি ৮৭।
৯. ইবনুস সুন্নি: ১৫৫। উ.
১০. সুরা নুর: ৩৬।
১১. সুরা হজ্জ, আয়াত: ৩০।
১২. সুরা হজ্জ, আয়াত: ৩২।
১৩. সহিহ মুসলিম: ৫৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭৬৫, আমালুল ইয়াউম: ১৭৪, ১৭৫, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউম: ১৫০, ইবনুস সুন্নি।
১৪. সহিহ বুখারি: ২১৯, সহিহ মুসলিম: ২৮৫ ।
১৫. ১২৪, সহিহ মুসলিম: ৫৬৮, সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৩, সুনানে তিরমিজি: ১৩২১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭৬৭।
১৬. সহিহ মুসলিম: ৫৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭৬৫। 
১৭. সুনানে তিরমিজি: ১৩২১, ইবনুস সুন্নি: ১৫৪।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url