প্রাত্যহিক জীবনে “আল্লাহ’র স্মরণ” || বাথরুম, টয়লেট ব্যবহার এবং অজু, গোসল ও তায়াম্মুমের দুআ
টয়লেটে প্রবেশের দুআ
* হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাথরুমে প্রবেশের ইচ্ছা করতেন তখন এ দুআটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস । ০১
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট অনিষ্টকর নারী ও পুরুষ শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করি।
* সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম ব্যতীত অন্যান্য কিতাবে আছে-
بِسْمِ اللهِ ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস।০২
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করলাম। হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট অনিষ্টকর নারী ও পুরুষ শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করি।
* হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
سَتْرُ مَا بَيْنَ أَعْيُنِ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِي آدَمَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُهُمُ الْخَلَاءَ، أَنْ يَقُوْلَ:
অর্থ: মানুষের সতর ও জিনদের চোখের মধ্যকার পর্দা হল টয়লেটে প্রবেশের সময় 'বিসমিল্লাহ' বলা । ০৩
ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন, এর সনদ বেশি শক্তিশালী নয়। তবে আগেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, ফযিলত প্রসঙ্গ হলে দুর্বল হাদিসের ওপর আমল করা যাবে। আর খালি মাঠে বা দেয়াল ঘেরা ঘরে হোক এই দুআটি পড়া যাবে। তবে মুস্তাহাব হল প্রথমে বিসমিল্লাহ পড়া এরপর উল্লিখিত দুআটি পড়া।
* হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ قَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الرِّجْسِ النَّجِسِ الخَبِيثِ الْمُخْبِثِ الشَّيْطَانِ الرَّحِيْمِ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাথরুমে যেতেন তখন এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الرَّجْسِ النَّجِسِ الْخَبِيْثِ الْمُخْبِثِ: الشَّيْطَانِ الرَّحِيْمِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনার রিজসিন নাজিসিল খাবিসিল মুখবিসিশ শাইতানির রাজিম। ০৪
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট পঙ্কিল, অপবিত্র, দুষ্ট এবং অন্যকে দুষ্টকারী অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করি ৷
বাথরুমে জিকির বা কথা বলা
টয়লেট করা অবস্থায় জিকির করা ও কথা বলা মাকরুহ। চাই দেয়াল ঘেরা বাথরুম হোক বা খোলা হোক। সকল দুআ ও জিকির এবং সবধরনের কথা নিষিদ্ধ। তবে একান্ত প্রয়োজনীয় কথার বিষয়টি ভিন্ন। এমনকি, হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলা, হাঁচির জবাব, সালামের উত্তর, মুআজ্জিনের আযানের জবাব দেয়া যাবে না। সালামকারী উত্তর কামনা করতে পারবে না। এগুলো সব মাকরূহে তানযিহি। হারাম নয়। কেউ যদি হাঁচি দেয় এবং মনে মনে জিহ্বা না নাড়িয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তাহলে কোন সমস্যা নেই। অনুরূপভাবে সহবাস অবস্থায় জিকির-আজকারের হুকুম এটিই।
* আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَجُلًا مَرَّ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبُوْلُ، فَسَلَّمَ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ.
অর্থ: এক ব্যক্তি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি পেশাব করছিলেন, লোকটি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলেন; তবে তিনি সালামের উত্তর দেননি। ০৫
* মুহাজির বিন কুনফুয রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَبُوْلُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّىٰ تَوَضَّأَ ثُمَّ اعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ: إِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا عَلَى طُهْرٍ أَوْ قَالَ: عَلَى طَهَارَةِ.
অর্থ: তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন, তখন তিনি পেশাব করছিলেন। তিনি সালাম দিলেন; কিন্তু নবিজি কোন উত্তর দিলেন না। এমনকি, অজু করলেন। অতঃপর ওজর পেশ করে তিনি বললেন, আমি পবিত্র অবস্থা ছাড়া আল্লাহর জিকির করতে অপছন্দ করছিলাম । ০৬
পায়খানা-পেশাবকারী ব্যক্তিকে সালাম দেয়া নিষেধ
পূর্বোল্লেখিত হাদিসসমূহের বিবেচনায় পায়খানা-পেশাবকারী ব্যক্তিকে সালাম দেয়া মাকরুহ। যদি কেউ সালাম দেয়, তাহলে তার জবাব দেয়া হবে না ।
বাথরুম থেকে বের হওয়ার দুআ
বাথরুম থেকে বের হয়ে বলবে:
غُفْرَانَكَ، الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذَى، وَعَافَانِي.
উচ্চারণ: গুফরনাক, আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আযহাবা আলি আযা ওয়া আফানি ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করেছেন এবং আমাকে নিরাপদ করেছেন। ০৭
সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে তিরমিজিতে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে-
أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَرَجَ مِنَ الْغَائِطِ قَالَ: غُفْرَانَكَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন টয়লেট থেকে বের হতেন তখন এ দুআটি পড়তেন- এটা (গুফরানাক): আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ০৮
* হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَرَجَ مِنَ الْخَلَاءَ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذَاقَنِيْ لَذَّتَهُ، وَأَبْقَىٰ فِي قُوَّتَهُ، وَأَذْهَبَ عَنِّي أَذَاهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন টয়লেট থেকে বের হতেন তখন বলতেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذَاقَنِي لَذَّتَهُ، وَأَبْقَىٰ فِي قُوَّتَهُ، وَأَذْهَبَ عَنِّيْ أَذَاهُ
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি আযাকানি লাযযাতাহু, ওয়া আবকা ফিয়্যা কুওয়াতাহু, ওয়া আযহাবা আনিল আযাহু । ০৯
অর্থ: সমুদয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এই খাদ্যের স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন, এর শক্তি আমার ভিতরে রেখে দিয়েছেন এবং আমার থেকে এর কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দিয়েছেন ।
অজুর পানি ঢালার সময় কোন দুআ পড়বে
অজুর পানি ঢালার সময় বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব ।
অজুর শুরুতে পড়ার দুআ
অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলা মুস্তাহাব। আর যদি বিসমিল্লাহা বলে তাও চলবে। শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে মাঝখানে পড়ে নিবে। আর যদি অজুর শেষে মনে হয়, তাহলে আর বলবে না। অজু শুদ্ধ হয়ে যাবে। চাই তা ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলক্রমে হোক। এটা আমাদের ও সংখ্যাগরিষ্ট উলামায়ে কেরামের মাজহাব ।
বিসমিল্লাহর ব্যাপারে অনেক দুর্বল হাদিসও আছে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, অজুর মধ্যে বিসমিল্লাহ সংক্রান্ত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত কোন হাদিস সম্পর্কে আমার জানা নেই। কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করা হল-
* আবু হুরায়রা রাদি. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
لا وُضُوْءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللَّهُ عَلَيْهِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহ বলেনি, তার অজু হয়নি (অর্থাৎ তার অজু পূর্ণাঙ্গ হয়নি) । ১০
অজুর শুরুতে যে দুআ পড়বে
শাইখ আবুল ফাতাহ নাসর মাকদিসি যাহেদ রহ. বলেন, অজুকারীর জন্য বিসমিল্লাহ বলার পর নিম্নোক্ত কালিমা পড়া মুস্তাহাব-
أَشْهَدُ أَنْ لا إله إلا الله وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহম্মাদান আবদুহ ওয়া রাসুলুহু ।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিশেষ বান্দা ও শেষ রাসুল । ১১
এটি কেউ পড়লে সমস্যা নেই। তবে এটি সুন্নাত হওয়ার বিষয়ে কোন প্রমাণ নেই। কোন উলামায়ে কেরাম এটি পড়া সুন্নাত বলেননি। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন ।
অজুর শেষে যে দুআ পড়বে
অজুর শেষে এ দুআ পড়বে-
أَشْهَدُ أَنْ لا إله إلا الله وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ. اللهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَوَّابِينَ، واجْعَلْني مِنَ المُتَطَهِّرِينَ، سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وأتُوبُ إِلَيْكَ.
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহম্মাদান আবদুহ ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত - তাওয়াবিনা ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাতহহিরিন। সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা ।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিশেষ বান্দা ও শেষ রাসুল। হে আল্লাহ, আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাকে পরিচ্ছন্নতাপ্রিয় করে দিন। আমরা আপনার পবিত্রতার গুণগান করি । আপনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই বলে সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি। ১২
* উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ تَوَضَّأَ فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لا إلهَ إلا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ؛ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ، يَدْخُلُ مِنْ أَيُّهَا شَاءَ.
অর্থ: যে ব্যক্তি অজুর পর এ দুআটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যেই দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে প্রবেশ করতে পারবে। দুআটি হল-
أَشْهَدُ أَنْ لا إلهَ إلا الله وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ.
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিশেষ বান্দা ও শেষ রাসুল। ১৩
তবে তিরমিজি শরিফে অতিরিক্ত আছে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ المُتَطَهِّرِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত-তাওয়াবিনা ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাতহহিরিন ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাকে পরিচ্ছন্নতাপ্রিয় করে দিন।
অন্য বর্ণনায় আছে-
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা।
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ.
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার পবিত্রতার গুণগান করি, আপনার প্রশংসার সাথে। ১৪
* উমর বিন খাত্তাব রাদি, থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ تَوَضَّأَ ثُمَّ قَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلا اللَّهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ؛ قَبْلَ أَنْ يَتَكَلَّمَ؛ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَ الْوُضُوْءَيْن.
অর্থ: যে ব্যক্তি অজুর পর কোন কথা বলার আগে পড়বে-
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ.
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহ ওয়া রাসুলুহু ।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিশেষ বান্দা ও শেষ রাসুল। তাহলে তার এই অজু এবং আগের অজুর মধ্যকার (সাগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে ।১৫
* মুসনাদে আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ ও ইবনুস সুন্নির কিতাবে হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ، ثُمَّ قَالَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ: أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ؛ فُتِحَتْ لَهُ ثَمَانِيَةُ أَبْوابِ الْجَنَّةِ، مِنْ أَيُّهَا شَاءَ دَخَلَ.
অর্থ: যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করার পর তিনবার পড়বে-
أَشْهَدُ أَنْ لا إله إلا الله وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ.
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহ ওয়া রাসুলুহু ।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিশেষ বান্দা ও শেষ রাসুল । ১৬
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যেই দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে প্রবেশ করতে পারবে। ১৭
* ইবনুস সুন্নির কিতাবে দুর্বল সনদে হজরত উসমান রাদি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, যাতে কালিমায়ে শাহাদাত তিনবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শাইখ আবুল ফাতাহ নাসর মাকদিসি রহ. বলেন, উক্ত দুআসমূহের সাথে যুক্ত করবে-
اللهُمَّ صَلَّ وَسَلَّمْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ ৷
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ ও তার পরিবারের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। ১৮
–শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, এই দুআসমূহ অজু থেকে ফারেগ হওয়ার পর কিবলামুখী হয়ে পড়বে।
অঙ্গসমূহ ধোয়ার সময়ের দুআ
অজুর অঙ্গসমূহ ধোয়ার সময়ের কোন দুআ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আসেনি। তবে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, সালাফে সালেহিন থেকে কিছু দুআ এসেছে, যেগুলো পড়া মুস্তাহাব। উক্ত দুআসমূহে কমবেশি আছে। ১৯
তবে তাদের দুআসমূহের সারাংশ হল-
(১) বিসমিল্লাহ বলার পরে পড়বে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَعَلَ الْمَاءَ طَهُوْرًا.
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি জাআলাল মাআ তাহুরা ।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর, যিনি পানিকে পবিত্র করেছেন।
(২) কুলি করার সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ اسْقِنِي مِنْ حَوْضِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ كَأْسًا لَا أَظْمَأُ بَعْدَ هَا أَبَدًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকিনি মিন হাউযি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদ, কাসান লা আযমাউ বা'দাহা আবাদান ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আপনার নবির হাউজ থেকে পেয়ালা পান করাবেন, যাতে এর পরে কখনো তৃষ্ণার্থ না হই।
(৩) নাকে পানি দেয়ার সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنِي رَائِحَةَ نَعِيمِكَ وَجَنَّاتِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনি রা-ইহাতা নাঈমিকা ওয়া জান্নাতিকা ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আপনার নেয়ামতরাজি ও জান্নাতের সুগন্ধি থেকে বঞ্চিত করবেন না।
(৪) মুখ ধোয়ার সময় পড়বে -
اللهُمَّ بَيِّضُ وَجْهِي يَوْمَ تَبْيَضُ وُجُوْهُ وَتَسْوَدُّ وُجُوْهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বাইয়িদ ওয়াজহি ইয়াউমা তাবয়াদ্দু উজুহন, ওয়া তাসওয়াদ্দু উজুহুন।
অর্থ: হে আল্লাহ, সেদিন আমার মুখ উজ্জ্বল করুন, যেদিন কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন কোন মুখ হবে কালো ।
(৫) দুই হাত ধোয়ার সময় পড়বে-
اللهُمَّ أَعْطِنِي كِتَابِي بِيَمِينِي، اللهُمَّ لَا تُعْطِنِي كِتَابِي بِشِمَالِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ'তি কিতাবি বিয়ামিনি লা তু'তি কিতাবি বিশিমালি ।
অর্থ: হে আল্লাহ, কেয়ামতের দিন আমার আমলনামা ডান হাতে দান করুন। হে আল্লাহ, বাম হাতে আমলনামা দিয়েন না ।
(৬) মাথা মাসাহের সময় পড়বে-
اللهُم حَرِّمُ شَعْرِي وَبَشَرِيْ عَلَى النَّارِ، وَأَظِلَّني تَحْتَ ظِلَّ عَرْشِكَ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাররিম শারি ওয়া বাশারি আলান নারি, ওয়া আযিললিনি তাহতা যিল্লা আরশিকা ইয়াউমা লা যিল্লা ইল্লা যিল্লুকা ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার চুল-চামড়া জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিন। আর আমাকে আপনার আরশের নিচে ছায়া দিন, যেদিন আপনার ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না ।
(৭) কান মাসাহ করার সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ الَّذِينَ يَسْتَمِعُوْنَ القَوْلَ فَيَتَّبِعُوْنَ أَحْسَنَهُ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাল্লাযিনা ইয়াসতামিউনাল কাওলা ফাইয়াত্তাবিঊনা আহসানাহ ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে সেসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর উত্তমটার অনুসরণ করে।
(৮) দুই পা ধোয়ার সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ ثَبِّتْ قَدَمِي عَلَى الصِّرَاطِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাব্বিত কাদামি আলাস সিরাত।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে সিরাতে মুসতাকিমের ওপর অবিচল রাখুন।
* ইমাম নাসাঈ ও ইবনুস সুন্নি তাদের কিতাবে আবু মুসা আশআরি রাদি.-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَضُوْءٍ، فَتَوَضَّأَ، فَسَمِعْتُهُ يَدْعُوْ وَيَقُولُ: "اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي، وَبَارِكْ لِيْ فِي رِزْقِيَّ، فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ, سَمِعْتُكَ تَدْعُو بِكَذَا وَكَذَا، قَالَ: "وَهَلْ تَرَكْنَ مِنْ شَيْءٍ؟
অর্থ: আমি অজুর পানি নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম। অতঃপর তিনি অজু করলেন, তখন আমি তাঁকে এই দুআ পড়তে শুনলাম-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِيْ، وَوَسَّعْ لِي فِي دَارِي، وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি যামবি, ওয়া ওয়াসসি' লি ফি দারি ওয়া বারিক লি ফি রিযকি ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার পাপ মার্জন করে দাও, আমার ঘরে প্রশস্ততা দাও এবং আমার রিযিকে বরকত দাও।
আমি বললাম, হে আল্লাহর নবি, আমি আপনাকে এমনটি বলতে শুনলাম? তিনি উত্তর দিলেন, আর কি কিছু রয়ে গেল? ২০
গোসলের দুআ
গোসলকারী ব্যক্তির জন্য অজুকারীর ন্যায় বিসমিল্লাহ ইত্যাদি পাঠ করা মুস্তাহাব। এক্ষেত্রে ফরজ গোসলকারী ও ঋতুবতী এবং অন্যদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ।
কারো কারো মতে, ফরজ গোসলকারী ও ঋতুবতী হলে বিসমিল্লাহ পড়বে না। তবে প্রসিদ্ধ মত হল, অন্যদের মতো এদেরও বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব । তবে এর দ্বারা তারা কুরআন তিলাওয়াত উদ্দেশ্য নিতে পারবে না।
তায়াম্মুমের দুআ
তায়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। ফরজ গোসলকারী ও ঋতুবতী মহিলাদের জন্যও। যেমনটি গোসলের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে।
তবে কালিমায়ে শাহাদত ও অজুর অন্যান্য দুআ এবং চেহারা ও হাত মাসাহের সময়ে দুআর বিষয়ে কোন উলামায়ে কেরামের বক্তব্য পাইনি। তবে স্বাভাবিক বিষয় হল- এগুলো অজুর মতো তায়াম্মুমেও পড়া । কারণ, তায়াম্মুমও অজুর মতো পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম ।
তথ্যসূত্রঃ
০১. সহিহ বুখারি: ১৪২; সহিহ মুসলিম: ৩৭৫ ।
০২. সুনানে তিরমিজি: ০৫, সুনানে আবু দাউদ: ০৪, কিতাবুদ দুআ: ২৮৬৪; তবারানি, আলমুসান্নাফ ১/১১, ইবনে আবি শাইবাহ।
০৩. সুনানে তিরমিজি: ৬০৬।
০৪. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৫, ইবনুস সুন্নি, কিতাবুদ দুআ: ৩৬৭, তবারানি।
০৫. সহিহ মুসলিম: ৩৭০ ।
০৭. সুনানে আবু দাউদ: ১৭, সুনানে নাসাঈ ১/৩৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৫০।
০৭. সুনানে আবু দাউদ: ৩০, সুনানে তিরমিজি: ০৭।
০৮. সুনানে আবু দাউদ: ৩০, সুনানে তিরমিজি: ০৭, সুনানে নাসাঈ : ৯৮২৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩০১।
০৯. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৫, ইবনুস সুন্নি, কিতাবুদ দুআ ৩৭০, তবারানি।
১০. সুনানে আবু দাউদ: ১০১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৯৯।
১১. উবায়দুল্লাহ
১২. উবায়দুল্লাহ
১৩. সহিহ মুসলিম: ২৩৪ ।
১৪. ইবনুস সুন্নি: ৩০, সহিহ মুসলিম: ২৩৪, সুনানে আবু দাউদ: ১৬৯, সুনানে তিরমিজি: ৫৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৭০, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৮৪।
১৫. সনানে দারাকুতনি: ১/৯৩।
১৬. উবায়দুল্লাহ
১৭. মুসনাদে আহমাদ: ৩/২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪৬৯; আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৩৩।
১৮. উবায়দুল্লাহ
১৯. আমাদের ফিকহে দুআগুলো একটু ভিন্নভাবে রয়েছে। দেখুন, নুরুল ইজা কিভাবে। উবায়দুল্লাহ
২০. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৮০, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৮, ইবনুস সুন্নি।
******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.