প্রাত্যহিক জীবনে “আল্লাহ’র স্মরণ” || নামাজের সঠিক পদ্ধতি-২ || নামাজের ভিতরে রুকু ও সিজদার দুআসমূহ







(শাইখুল ইসলাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শারফ আন-নববী রহ. রচিত “আল আযকার” গ্রন্থ অবলম্বনে)

রুকুর দুআ


সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবির বলতেন। যদি কেউ তা ছেড়ে দেয় তাহলে মাকরূহে তানযিহি । নামাজ নষ্ট হবে না এবং সেজদায়ে সাহু দিতে হবে না। নামাজের অন্যান্য তাকবিরের ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য। তবে তাকবিরে তাহরিমা ব্যতিক্রম। কেননা এটা নামাজের রুকন, এটা ছাড়া নামাজ হবে না। পূর্বে নামাজে তাকবিরের সংখ্যার আলোচনা গেছে ।

ইমাম আহমদ রহ. এর অভিমত রয়েছে যে, নামাজের সকল তাকবির ওয়াজিব ।

আল্লাহু আকবার মদ করে পড়বে কিনা? এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ির দুটি মত রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল রুকুতে যাওয়া পর্যন্ত তাকবির টেনে বলবে। যেন নামাজের কোন অংশ জিকির থেকে মুক্ত না থাকে। তবে তাকবিরে তাহরিমা টেনে বলবে না। সেক্ষেত্রে না টেনে বলাই মুস্তাহাব।

রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পড়বে। তিনবার বলবে:

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ.

উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম ।

অর্থ: আমার রবের মহত্ত্ব ঘোষণা করছি।

* হজরত হুজায়ফা রাদি. এর হাদিস থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দীর্ঘ রুকুতে বলতেন, যা ছিল সুরা বাকারা, আলে ইমরান ও নিসা পড়ার সমপরিমাণ। তিনি এ দীর্ঘ রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ. (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) বলতেন। অর্থাৎ তিনি سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ. বার বার পড়তেন। ১

সুনানের কিতাবসমূহে আছে-

أَنَّهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَقَالَ فِي رُكُوعِهِ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ، ثَلَاثَا، فَقَدْ تَمَّ رُكُوعُهُ.

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন তিনবার রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ. (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) বলবে তখন তার রুকু পূর্ণ হয়ে যাবে। 

*  হজরত আয়েশা রাদি থেকে বর্ণিত আছে-
.
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي رُكُوْعِهِ وَسُجُوْدِهِ : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي .

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন:

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِي .

উচচারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।

অর্থ: হে আমার পালনকর্তা আল্লাহ, সপ্রশংস আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো।

* মুসলিম শরিফে হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে এই দুআ পড়তেন-

اللهُم لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِيْ، وَمُنِّيْ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা রাকাতু, ওয়াবিকা আমানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশাআ লাকা সাময়ি ওয়াবাসারি, ওয়া মুখখি, ওয়া আজমি ওয়া আসাবি । 

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সামনে রুকু করলাম, আপনার প্রতিই ঈমান রাখি এবং আপনার প্রতি সমর্পিত হলাম। আমার চক্ষু-কর্ণ, অস্থি-মজ্জা, শিরা-স্নায়ু সবই আপনার সামনে বিনয়াবত হল । 

সুনানের কিতাবসমূহে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ার কথাও বর্ণিত হয়েছে-

خَشَعَ سَمْعِي وَبَصَرِي، وَمُخَيْ وَعَظْمِي، وَمَا اسْتَقَلَّتْ بِهِ قَدَتَيْ لِلَّهِ رَبِّ

উচ্চারণ : খাশাআ সাময়ি ওয়াবাসারি, ওয়া মুখখি, ওয়া আজমি। ওয়ামাস্তাকাল্লাত বিহি কাদামি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

অর্থ: আমার চক্ষু-কর্ণ, অস্থি-মজ্জা ও কদম বিশ্বপতি আল্লাহর সামনে বিনয়াবত হল ।

*  হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু-সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন:

سُبُّوحٌ قُدُّوسُ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ.

উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার্রুহ।

অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা। 

*  হজরত আউফ বিন মালেক রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

قُمْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً، فَقَامَ فَقَرَأَ سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ، لَا يَمُرُّ بِآيَةِ رَحْمَةٍ إِلَّا وَقَفَ فَسَأَلَ، وَلَا يَمُرُّ بِآيَةِ عَذَابٍ إِلَّا وَقَفَ فَتَعَوَّذَ قَالَ : ثُمَّ رَكَعَ بِقَدْرِ قِيَامِهِ، يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ : " سُبْحَانَ ذِي الْجُبَرُوتِ وَالْمَلَكُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ " . ثُمَّ سَجَدَ بِقَدْرِ قِيَامِهِ، ثُمَّ قَالَ فِي سُجُوْدِهِ مِثْلَ ذَالِكَ.

অর্থ: আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামাজ আদায় করেছি। তিনি সুরা বাকারা পড়তে আরম্ভ করলেন, যখন রহমতের আয়াত তিলাওয়াত করতেন তখন থেমে যেতেন এবং আল্লাহর কাছে রহমত চাইতেন। আযাবের আয়াত তিলাওয়াত করে থেমে যেতেন। আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। এরপর কিরাত সমপরিমাণ সময় রুকু করতেন। রুকুতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-

سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ.

উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুত ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল আযামাহ ।

অর্থ: শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। তিনি সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। 

*  ইবনে আব্বাস রাদি থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظَمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ.

অর্থ: তোমরা রুকুতে আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করো। 

এই শেষোক্ত হাদিসটিই এই অধ্যায়ের মূল। তা হল রুকুতে আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব বর্ণনা করা, সেটি যে শব্দেই হোক না কেন। সম্ভব হলে উত্তম হল, রুকুতে উক্ত সকল দুআ পড়া। তবে যেন অন্যের কষ্ট না হয়। উক্ত দুআসমূহ থেকে তাসবিহগুলো আগে পড়া। যদি কম পড়তে চায়, তাহলে তাসবিহ পড়া মুস্তাহাব। সর্বনিম্ন তিনবার তাসবিহ পড়া। এর চেয়ে কম করলেও মূল তাসবিহ পাঠকারী হিসেবে গণ্য হবে। যদি কোন একটি তাসবিহ পড়ে থাকে তাহলে এক নামাজে এক তাসবিহ পড়বে অন্য নামাজে আরেক তাসবিহ পড়বে। যেন সকল তাসবিহ পড়া হয়ে যায়। নামাজের সকল জিকিরের ক্ষেত্রে একই কথা।

রুকুতে তাসবিহ পড়া সুন্নাত। যদি তা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে ছেড়ে দেয় তাহলেও নামাজ নষ্ট হবে না। গুনাহগারও হবে না। সেজদায়ে সাহুও করা লাগবে না। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর মতে তা ওয়াজিব। অতএব, নামাজি ব্যক্তির তাসবিহ বলা উচিত। কারণ, বিভিন্ন সহিহ হাদিসে তা পড়ার নির্দেশ এসেছে। যেমন-

فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظْمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ.

এই হাদিসটি পূর্বে গেছে। উলামায়ে কেরামের ইখতেলাফ থেকে বাঁচার জন্য তাসবিহ বলা চাই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন ।

রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত


রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। যদি সুরা ফাতেহা ছাড়া অন্য কোন সুরা পড়ে তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না। সুরা ফাতেহা পড়লেও নামাজ নষ্ট হবে না। বিশুদ্ধ মত এটাই। তবে কেউ কেউ বলেছেন: নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।

* হজরত আলি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু ও সিজদারত অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন। 

* হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

أَلَا وَإِنِّي نُهِيْتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا.

অর্থ: আমাকে রুকু ও সিজদারত অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। 

রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার দুআ


রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ( সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ: যে আল্লাহর প্রশংসা করেছে, আল্লাহ তা কবুল করুন) বলবে।

আর যদি ম তো না হলে বলে তাও হবে। ইমাম শাফেয়ি কিতাবু উম্মে এ ব্যাপারে বলেছেন।
রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত দুআ পড়বে-

رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ حَمْداً كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ - وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدُ. لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ

উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকন ফিহ। মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু। আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা কালাল আবদু। ওয়া কুল্লুনা লাকা আবদুন। লা মানিআ লিমা আতাইতা, ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু ।

অর্থ: হে আমাদের রব, আপনার প্রশংসা, যা আপনার নেয়ামতের মতোই পর্যাপ্ত-প্রচুর। এই প্রশংসা প্রদর্শনেচ্ছামুক্ত এবং বড় বরকতময়। আসমান- যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ওহে পূর্ণ প্রশংসা ও চূড়ান্ত সম্মানের মালিক! বান্দার মিনতি কবুলকারী এবং আমরা সবাই আপনারই বান্দা। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। ১০

* হজরত আবু হুরায়রা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে কোমর সোজা করে দাঁড়াতেন, তখন
বলতেন-

سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ ।

অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন।

এরপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বলতেন-

رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ.

উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদ ।

অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। ১১

কোন কোন বর্ণনায় আছে- এ, (ওয়া লাকাল হামদ) ‘ওয়াও’ অব্যয়ের সাথে। উভয়টিই উত্তম।

* হজরত আলি এবং ইবনে আবি আওফা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-

سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ.

উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদ। মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু ।

অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমান-যমি পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ । ১২

* হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময় বলতেন-

رَبَّنَا لَكَ الحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ - وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدُ. لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الجد.

উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু। আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা কালাল আবদু। ওয়া কুল্লুনা লাকা আবদুন। লা মানিআ লিমা আতাইতা, ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু ।

অর্থ: হে আমাদের রব, আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ওহে পূর্ণ প্রশংসা ও চূড়ান্ত সম্মানের মালিক! বান্দার মিনতি কবুলকারী এবং আমরা সবাই আপনারই বান্দা। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। ১৩

*  হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে নিম্নোক্ত দুআর কথা বর্ণিত আছে-

رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ.

উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু । অর্থ: হে আমাদের রব, আসমান-যমি পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ১৪

* হজরত রিফাআ বিন রাফে যারকি রাদি. থেকে বর্ণিত-

كُنَّا يَوْمًا نُصَلِّي وَرَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ قَالَ : "سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ قَالَ رَجُلٌ وَرَاءَهُ : رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ : مَنِ الْمُتَكَلِّمُ ؟ قَالَ : أَنَا، قَالَ : " رَأَيْتُ بِضْعَةٌ وَثَلَاثِينَ مَلَكًا يَبْتَدِرُوْنَهَا أَيُّهُمْ يَكْتُبُهَا أَوَّلُ

অর্থ: রিফাআ রাদি. বলেন, আমরা একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামাজ আদায় করছিলাম। তিনি রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় বললেন: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ ) তখন তাঁর পেছনে এক ব্যক্তি নিম্নোক্ত দুআ পড়লেন-

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ.

উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকন ফিহ ।

অর্থ: হে আমাদের রব, আপনার প্রশংসা, যা আপনার নেয়ামতের মতোই পর্যাপ্ত-প্রচুর। এই প্রশংসা প্রদর্শনেচ্ছামুক্ত এবং বড় বরকতময় ।

নামাজ শেষে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে দুআটি বলেছে? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ৩০ জনের বেশি ফেরেশতাকে এর সওয়াব লেখার জন্য প্রতিযোগিতা করতে দেখেছি । ১৫

রুকু থেকে উঠার সময় পূর্বোল্লেখিত সকল দুআ পড়া মুস্তাহাব, যেমনটি পূর্বের রুকুর দুআর ক্ষেত্রে গেছে। যদি কোন একটি দুআ পড়তে হয়, তাহলে নিচের দুআটি পড়বে-

سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ.

উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বা’দু

অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ ।

আর যদি এরচেও বেশি সংক্ষেপ করতে চায় তাহলে এরা سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদ) বলবে। এরচে আর কম কোন দুআ নেই ।

উল্লিখিত দুআগুলো ইমাম, মুক্তাদি, একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য মুস্তাহাব। তবে ইমাম সকল দুআ পড়বে না। অবশ্য ইমাম যদি জানে যে, দীর্ঘায়িত হলে মুক্তাদিদের কষ্ট হবে না। তারা এটি পছন্দ করে তাহলে কোন সমস্যা নেই ।

এই দুআগুলো সুন্নাত; ওয়াজিব নয়। এগুলো ছেড়ে দিলে মাকরুহ তানযীহী হবে। এর জন্য সেজদায়ে সাহু লাগবে না ।

সোজা হয়ে দাঁড়িয়েও কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করা মাকরুহ যেমন রুকু, সিজদা অবস্থায় মাকরুহ। আল্লাহ পাক ভালো জানেন ।

সিজদার দুআ


রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুআ পড়ে সিজদার জন্য তাকবির বলবে। আর মাটিতে কপাল রাখা পর্যন্ত তাকবির লম্বা করবে। এই তাকবির হল সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না। সিজদার অনেক দুআ রয়েছে যেমন-

সহিহ মুসলিমে হজরত হুজায়ফা রাদি. এর সূত্রে নবিজির নামাজ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একই রাকাতে সুরা বাকারা, নিসা ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করেছেন। রহমতের আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে রহমত চেয়েছেন। আযাব সংক্রান্ত আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।

এরপর তিনি সিজদা করেছেন। সিজদায় سُبحانَ ربِّيَ الأعلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) পড়েছেন। তিনি সিজদা করেছেন কিয়াম সমপরিমাণ। ১৬

*  হজরত আয়েশা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু, সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ খুব বেশি পড়তেন-

سُبْحَانَكَ اللهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي.

উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি। অর্থ: হে আমাদের রব আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করি। আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো।১৭

* হজরত আয়েশা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু-সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-

سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ.

উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার্রুহ।

অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা। ১৮

* হজরত আলি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন)

اللهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার জন্য সাজদা করলাম, আপনার ওপরই ঈমান আনলাম, আপনার সামনেই সমর্পিত হলাম। আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন । আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা। ১৯

* রুকুর অধ্যায়ে হজরত আউফ বিন মালেক রাদি থেকে সুনানের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ রুকু করলে নিম্নোক্ত দুআ বলতেন। সেজদাতেও এমনটি করতেন-

سُبْحَانَ ذِي الْجِبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظْمَةِ.

উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুত ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল আযামাহ ।

অর্থ: শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। তিনি সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। ২০

* হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সিজদা করে তখন সে যেন তিনবার পড়ে। এটিই সর্বনিম্ন স্তর:
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা ।

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى

অর্থ: আমি আমার মহা মহীয়ান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।২১

* হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি খুঁজতে লাগলাম, হঠাৎ আমি দেখলাম যে, তিনি রুকু বা সিজদারত অবস্থায় আছেন। তিনি তখন নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করছিলেন-

سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.

উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা লাইলাহা ইল্লা আনতা ।

অর্থ: আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- আয়েশা রাদি. বলেন, আমার হাত তার পায়ে লাগল, তিনি নামাজের স্থানে ছিলেন এবং উভয় পা দণ্ডায়মান ছিল । তিনি তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়ছিলেন-

اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ، لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আউজু বি রিজাকা মিন সাখাতিকা, ওয়াবি মুআফাতিকা মিন উকুবাতিক। ওয়া আউজুবিকা মিনকা, লা উহসি সানাআন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সন্তুষ্টি চাই। ক্রোধ থেকে পানাহ চাই। শাস্তি থেকে মুক্তি চাই। আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। আপনি তেমনই মহিমান্বিত যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন । ২২

* হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

فَأَمَّا الرُّكُوْعُ فَعَظَمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ، وَأَمَّا السُّجُوْدُ فَاجْتَهِدُوْا فِي الدُّعَاءِ، قَمِنْ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ.

অর্থ: তোমরা রুকুতে রবের মহিমা বর্ণনা কর, বড়ত্ব প্রকাশ কর। আর সিজদায় বেশি বেশি দুআ করো কেননা, সিজদারত অবস্থায় দুআ বেশি কবুল হয়। ২৩

*  হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.

অর্থ: সেজদার সময় বান্দা আল্লাহ তাআলার বেশি নিকটে থাকে। অতএব, তোমরা সিজদারত অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করো। ২৪

*  হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ، دِقَّهُ وَجِلَّهُ ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি যাম্বি কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখেরাহু, ওয়া আলানিয়াহু ওয়াসিররাহু।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিন, ছোট-বড়, শুরু-শেষ, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব গুনাহ মাফ করে দিন। ২৫

উল্লিখিত সকল দুআ সিজদায় পড়া মুস্তাহাব। এক সময়ে না পড়তে পারলে বিভিন্ন সময়ে পড়বে। যেমনটি পূর্বের আলোচনায় গেছে। অন্যান্য দুআ পড়তে না পারলে সিজদার তাসবিহ পড়বে ও কিছু দুআ পড়বে। সিজদায়ও রুকুর মত কুরআনের আয়াত পড়া মাকরুহ। অন্যান্য বিষয়ও পূর্বোল্লেখিত রুকুর মতই।

নামাজে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম নাকি রাকাত বেশি পড়া উত্তম- এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। শাফেয়ি রহ. ও তার অনুসারীদের মতে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম। কেননা হাদিসে আছে أَفْضَلُ الصَّلَاةِ طُوْلُ الْقُنُوْتِ তথা উত্তম নামাজ যাতে কিয়াম দীর্ঘ হয়। ২৬

এর দ্বারা বুঝা যায় কিয়াম উত্তম। তাছাড়া নামাজে কিয়াম দীর্ঘ হলে তাতে কুরআন বেশি পড়া হবে। আর সিজদা দীর্ঘ হলে তাসবিহ বেশি পড়া হবে। আর কুরআন শ্রেষ্ঠ। তাই দীর্ঘ কিয়ামও শ্রেষ্ঠ হবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বেশি রাকাত উত্তম। কেননা হাদিসে আছে-

أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.

অর্থ: সিজদার সময় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে । ২৭

ইমাম তিরমিজি রহ. সুনানে তিরমিজিতে উল্লেখ করেন, উলামায়ে কেরাম উক্ত বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ দীর্ঘ কিয়ামকে উত্তম বলেছেন আর কেউ কেউ বেশি রাকাতকে উত্তম বলেছেন।

ইমাম আহমদ রহ. বলেন, এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম আহমদ রহ. কোন ফয়সালা দেননি। ইসহাক রহ. বলেছেন, দিনের বেলা রুকু-সিজদা বেশি করা উত্তম আর রাত্রিবেলা দীর্ঘ কিয়াম উত্তম।

ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, ইসহাক রহ. এমনটি বলেছেন। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামাজের বিবরণ হাদিসে এসেছে। আর সেসব বিবরণে দীর্ঘ কিয়ামের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর দিনের নামাজে রাতের নামাজের মতো বিবরণ হাদিসে আসেনি।

নামাজের সিজদায় যা পড়বে, তিলাওয়াতের সিজদাতেও তাই পড়া মুস্তাহাব। সেগুলোর সঙ্গে এ দুআটি পড়াও উত্তম-

اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا، وَأَعْظَمُ فِيْ بِهَا أَجْرًا، وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا، وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলহা ইনদাকা যুখরা, ওয়া আদিম লি বিহা আজরা, ওয়া দা' আন্নি বিহা বিযরা, ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি কামা তাকাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাউদ আলাইহিস সালাম।

অর্থ: হে আল্লাহ, একে আমার জন্য আপনার কাছে সঞ্চয় করে রাখো, এর পরিবর্তে আমাকে মহাপ্রতিদান দান করো। এর মাধ্যমে আমার পাপ মার্জনা করে দাও। এটি আমার পক্ষ থেকে কবুল করো যেমনটা কবুল করেছিলেন দাউদ আলাইহিস সালাম থেকে। ২৮ – নিচের আয়াতটি পড়াও মুস্তাহাব-

سبحْنَ رَبِّنَا إِن كَانَ وَعْدُ رَبَّنَا لَمَفْعُولًا.

অর্থ: আমাদের পালনকর্তা পবিত্র মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালনকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে।

* হজরত আয়েশা রাদি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াতের সিজদায় নিচের দুআটি পড়তেন-

سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ.

উচ্চারণ: সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। বিহাওলিহি ওয়া কুওয়্যাতিহ।

অর্থ: আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং নিজ কুদরত ও শক্তিতে দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন।

ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ২৯ হাকেম রহ. উক্ত দুআর সঙ্গে فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ (ফা-তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা)ও বৃদ্ধি করেছেন।৩০ ইমাম তিরমিজি আরো বলেন, ইমাম হাকেম রহ. কর্তৃক বৃদ্ধিকরণ এটা সহিহাইনের শর্ত সাপেক্ষে হয়েছে।

দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় দুআ


সুন্নাত হল, যখন মাথা উঠাতে শুরু করবে তখন থেকে তাকবির বলবে এবং সোজা হয়ে বসা পর্যন্ত তাকবিরকে দীর্ঘ করবে পূর্বে তাকবিরের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তাকবির লম্বা করা প্রসঙ্গে মতানৈক্যও পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তাকবির শেষ করে সোজা হয়ে বসবে। এসময় যেসব দুআ পড়বে-

* হজরত হুজায়ফা রাদি থেকে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিয়াম করেছিলেন। সেই হাদিসের বিবরণে আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে বলছিলেন। দুই সিজদার মাঝে তিনি সিজদার সমপরিমাণ বসেও ছিলেন। দুআটি এই:

رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي.

উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দিন, আমাকে মাফ করে দিন। ৩১

*  হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে রাতে তিনি তাঁর খালা মাইমুনা রাদি. এর ঘরে রাত্রি যাপন করেন। তিনি রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তিনি নিচের দুআটি পড়তেন-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْني وَاهْدِنِي وَارْزُقْني.

উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, ওয়ার হামনি ওয়াজ বুরনি, ওয়ার জুকনি, ওয়াহ দিনি ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করুন, দয়া করুন, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাকে রিজিক দান করুন এবং হেদায়াত দিন।- সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় ৬৬৬, (ওয়াআ ফিনি: আমাকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রাখুন) অতিরিক্ত এসেছে। ৩২

দ্বিতীয় সিজদার দুআ


দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে। দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবির বলে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ আরাম করে বসবে। এরপর সেজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় যে তাকবির বলেছিলো সেটি সোজা হয়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত লম্বা করবে। শব্দের লামের পরে লম্বা করবে। এটাই শাফেি উলামায়ে কেরামের প্রসিদ্ধ মত। তাদের আরেকটি অভিমত রয়েছে যে, তাকবির বলা ছাড়াই বসবে। এরপর উঠার সময় তাকবির বলে উঠে দাঁড়াবে।

তৃতীয় আরেকটি অভিমত রয়েছে, তাকবির বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে । এরপর উঠে দাঁড়াবে তাকবির ছাড়া। তবে সকলের মতে, এক তাকবির বলবে। দুই তাকবিরের কথা কেউ বলেন না। শাফেয়িগণ প্রথম পদ্ধতিটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেন নামাজের কোন সময় জিকির থেকে খালি না থাকে । ৩৩

সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসা সুন্নাত। বুখারি শরিফসহ অন্যান্যসহ অন্যান্য কিতাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন বলে বর্ণিত আছে। শাফেয়ি মাজহাবে তা মুস্তাহাব। এটা প্রতি রাকাতে দ্বিতীয় সিজদার পর করতে হয়। সিজদায়ে তিলাওয়াতে উক্ত বৈঠক নেই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। ৩৪

দ্বিতীয় রাকাতের জিকির


প্রথম রাকাতের সেসব দুআ পড়ার কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় রাকাতেও তাই পড়বে। ফরজ নামাজ হোক বা নফল হোক। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে ।

১. প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা আছে, দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে তাকবিরে তাহরিমা নেই। দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে যে তাকবির বলা হয়ে থাকে, সেটি সেজদা থেকে উঠার তাকবির। আর সেটি সুন্নাত।

২. দ্বিতীয় রাকাতে শুরুর দুআ তথা সানা নেই। প্রথম রাতে সানা আছে।

৩. প্রথম রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে- এ বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। দ্বিতীয় রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল আউজুবিল্লাহ পড়া।

৪. দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত প্রথম রাকাত অপেক্ষা ছোট হবে। এটিই নির্ভরযোগ্য অভিমত । আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন ।

ফজরের নামাজে কুনুত পড়া

ফজরের নামাজে কুনুত পড়া সুন্নাত। এটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ৩৫

*  হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَزِلْ يَقْنُتَ فِي الصُّبْحِ حَتَّى فَارَقَ

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজে মৃত্যু পর্যন্ত সবসময় কুনুত পড়েছেন। হাদিসটি হাকিম রহ. “কিতাবুল আরবায়িন” এ উল্লেখ করে বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। ৩৬

ফজরের নামাজে কুনুত পড়া শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না, তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছাডুক বা ভুলবশত ছাডুক ।

ফজরের নামাজ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্য কোন নামাজে পড়বে কিনা? এ ব্যাপারে শাফেয়ি থেকে তিন ধরনের মত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ মত হলঃ

১. যদি বিশেষ কোন বিপদাপদ দেখা দেয় তাহলে কুনুত পড়বে অন্যথায় পড়বে না ।
২. বিপদাপদ থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় কুনুত পড়বে ।
৩. বাকি নামাজে কোন অবস্থাতেই কুনুত পড়বে না ।

শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী রমজান মাসের শেষ অর্ধেকে বিরের শেষ রাকাতে কুনুত পড়া মুস্তাহাব। আরেকটি মত হল, পুরো রমজান মাসে কুনুত পড়া। তৃতীয় মত হল, পুরো বছর কুনুত পড়বে। এটা ইমাম আবু হানীফা রহ. এরও মাজহাব। তবে শাফেয়ি রহ. এর প্রসিদ্ধ মত হল প্রথমটি ।

ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে কুনুত পড়ার সময় হল, ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠার পর। আর ইমাম মালেক রহ. এর মতে রুকু করার পূর্বে। শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, শাফেয়ি মাজহাবের কোন ব্যক্তি যদি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়ে, তাহলে সেটি কুনুত বলে গণ্য হবে না। অন্য মতে কুনুত হিসেবে গণ্য হবে। তবে বিশুদ্ধ মত হল, রুকুর পরে পুনরায় পড়বে এবং সিজদায়ে সাহু করবে। কেউ কেউ বলেছেন সিজদায়ে সাহু করবে না। নিচের যে কোন দুআয়ে কুনুত পড়া যাবে:

* হাসান বিন আলি রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিম্নোক্ত কালিমা শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো যেন আমি বিতর নামাজে পড়ি। কালিমাগুলো হল-

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لي فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহদিনি ফি হাদাইতা, ওয়া আফিনি ফি মান আফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লনি ফি মান তাওয়াল্লাইতা। ওয়া বারিকলি ফি মা আতাইতা, ওয়াকিনি শাররা মা কাজাইতা, ফা ইন্নাকা তাকজি ওয়ালা যুকজা আলাইক ৷ ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াজিল্লু মান ওয়া লাইতা, তাবারাকতা রাব্বানা ওয়া তাআলালাইত ।

অর্থ: হে যাদের তুমি হেদায়াত দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও হেদায়াত দাও, যাদের তুমি সুরক্ষা দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও সুরক্ষা দাও। যাদের তুমি অভিভাকত্ব করছো তাদের মাঝে আমারও অভিভাকত্ব করো। আর আমাকে দানকৃত বস্তুতে বরকত দান করো। আপনার নির্ধারিত তাকদিরের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো। তাকদিরের ফয়সালা আপনিই করেন, আপনার বিপক্ষে কোন ফয়সালা হয় না। যাকে আপনি আপন করেন সে লাঞ্চিত হয় না। হে আমাদের রব, আপনি বরকতময় মহা মহিয়ান ।

ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কুনুত এটিই সবচেয়ে সুন্দর। বায়হাকি রহ. এর এক বর্ণনায় আছে- মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়্যা (তিনি আলি রাদি. এর ছেলে) বলেন, এই দুআটি আমার পিতা ফজরের নামাজে পরতেন।

এই দুআ পড়ার পরে মুস্তাহাব হল নিচের দরুদটি পড়া-

اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَسَلَّمْ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, ওয়া সাল্লিম।

অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। - নাসাঈ শরিফে এই হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে। তাতে অতিরিক্ত বর্ণিত আছে-

وَصَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ.

উচ্চারণ: ওয়া সাল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যি ।

অর্থ: আর আল্লাহর নবিজির ওপর রহমত বর্ষণ করুন। ৩৭

শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, উমর রাদি থেকে যে কুনুত বর্ণিত সেটি পড়া উত্তম। তিনি ফজরের নামাজে রুকুর পর নিচের কুনুতটি পড়তেন-

اللهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنَكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ ، وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَخْلَعُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلّي وَنَسْجُدُ وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ، وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجُدُّ بِالْكَافِرِيْنَ مُلْحِقِّ اللَّهُمَّ عَذَّبِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ وَيُكَذِّبُونَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِيَاءَكِ. اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِينَ، وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ، وَاجْعَلْ فِي قُلُوبِهِمُ الْإيْمَانَ وَالْحِكْمَةَ ، وَثَبِّتْهُمْ عَلَى مِلَّةِ رَسُولِكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَوْزِعْهُمْ أَنْ يُوْفُوا بِعَهْدِكَ الَّذِي عَاهَدْتَهُمْ عَلَيْهِ ، وانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوّكَ وَعَدُوِّهِمْ إِلَهَ الْحَقِّ وَاجْعَلْنَا مِنْهُمْ .

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা, ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া লা নাকফুরুকা, ওয়া নু' মিনু বিকা ওয়া নাখলাউ মান ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু, ওয়া লাকা নুসাল্লি ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু, নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আজাবাক। ইন্না আজাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক। আল্লাহুম্মা আজ্জিবিল কাফারাতাল্লাজিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিক, ওয়া ইয়ুকাজ্জিবুনা রুসুলাক, ওয়া য়ুকাতিলুনা আউলিয়াআক । আল্লাহুম্মাগফির লিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত। ওয়া আসলিহ জাতা বাইনিহিম, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম । ওয়াজআল ফি কুলুবিহিমুল ঈমানা ওয়াল হিকমাহ। ওয়া সাব্বিতহুম আলা মিল্লাতি রাসুলিকা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওয়া আউযিহুম আন য়ুফু বি-আহদিকাল্লাজি আহাদতাহুম আলাইহ। ওয়ানসুরহুম আলা আদুয়্যিকা ওয়া আদুয়্যিহিম, ইলাহাল হাক্কি ওয়াজআলনা মিনহুম ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে সাহায্য কামনা করি, আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, কোন অকৃতজ্ঞতা করি না, আপনার প্রতি ঈমান রাখি । আর যে আপনার নাফরমানি করে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। হে আল্লাহ, আমরা আপনারই ইবাদত করি।, আপনার জন্যই নামাজ আদায় করি, আপনাকেই সেজদা করি। আপনার প্রতি ধাবিত হই, আপনার দিকেই ছুটে যাই। আপনার রহমতের আশা রাখি এবং শাস্তিকে ভয় করি। নিশ্চয়ই আপনার কঠিন শাস্তি আপতিত হবে কাফেরদের ওপরে। হে আল্লাহ, সেসব কাফেরদেরকে শাস্তি দিন, যারা আপনার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, আপনার রাসুলদের মিথ্যা অভিহিত করে এবং আপনার প্রিয় বান্দাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। হে আল্লাহ, মুমিন নর-নারী, মুসলিম নর-নারীদের ক্ষমা করে দাও, তাদের মাঝে একতা পয়দা করে দাও, তাদের মনে সম্প্রীতি দান করো এবং তাদের মনে ঈমান ও প্রজ্ঞা দান করো। তাদেরকে আপনার রাসুলের মিল্লাতের ওপর অবিচল রাখুন, তাদেরকে আপনার অঙ্গীকার পূরণের তাওফিক দান করুন, যার ওপর আপনি তাদের সাথে প্রতিজ্ঞবদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে আপনার ও তাদের দুশমনের বিরুদ্ধে মদদ করো। ওহে সত্য মাবুদ, আমাদেরকেও তাদের দলভুক্ত করো। ৩৮

শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, পূর্বে উল্লেখিত কুনুত ও উমর রাদি. বর্ণিত কুনুত উভয়টি একসঙ্গে পড়া উত্তম। যেকোন একটি কুনুত পড়তে চাইলে উমর রাদি, বর্ণিত কুনুত পড়বে। আর সংক্ষেপ করতে চাইলে প্রথমটি পড়বে। উভয় কুনুত পড়া মুস্তাহাব একাকী নামাজি ব্যক্তির জন্য ও ঐ ইমামের জন্য যার মুক্তাদিরা দীর্ঘ নামাজে বিরক্ত হয় না। প্রসিদ্ধ মাজহাব মতে কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দুআ নেই। তাই সুতরাং যে দুআই পড়বে সেটিই কুনুত হয়ে যাবে। যদি দুআ সম্বলিত কুরআনের কোন আয়াত পড়ে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে। তবে উত্তম হল হাদিসে বর্ণিত কুনুত পড়া। কেউ কেউ বলেছেন হাদিসে বর্ণিত দুআ ছাড়া অন্য কোন দুআ পড়লে কুনুত আদায় হবে না। অবশ্য প্রাধান্যপ্রাপ্ত কথা সেটিই যে, কুনুতের জন্য কোন দুআ নির্দিষ্ট নেই ।

মুস্তাহাব হল, নামাজি ব্যক্তি ইমাম হলে, কুনুতের মধ্যে (আল্লাহুম্মাহদি না) বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। বাকি সবগুলো শব্দের ক্ষেত্রে অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। যদি ও
একবচনের শব্দ ব্যবহার করে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে, তবে মাকরুহ হবে। কেননা ইমাম হলে খাস করে নিজের জন্য দুআ করা মাকরুহ। 

*  হজরত সাওবান রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

لا يَؤُمُّ عَبْدُ فَيَخُصَّ نَفْسَهُ بِدَعْوَةٍ دُونَهُمْ، فَإِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ.

অর্থ: যে ইমাম মুসল্লীদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য বিশেষভাবে দুআ করে, সে খেয়ানতকারী । ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, এটি হাসান হাদিস । ৩৯ কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো

কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো ও হাত চেহারায় মাসেহ সংক্রান্ত তিনটি অভিমত রয়েছে:

১. মুস্তাহাব হল, উভয় হাত উঠানো এবং তা চেহারায় মাসেহ না করবে। এটাই সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত।
২. হাত উঠাবে, মাসেহও করবে।
৩. কোনটিই করবে না ।

তবে চেহারা ব্যতীত অন্য কোন অঙ্গে মাসেহ না করার ব্যাপারে সবাই একমত যেমন বুক মাসেহ করা। বরং এমন করা মাকরুহ।

কুনুত আস্তে পড়া ও জোরে পড়া সম্পর্কে শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি নামাজি ব্যক্তি একাকী হয় তাহলে আস্তে পড়বে। আর ইমাম হলে জোরে পড়বে। এটিই পছন্দনীয় ও অধিকাংশের অভিমত।

দ্বিতীয় অভিমত হল, নামাজের অন্যান্য দুআর ন্যায় কুনুতও আস্তে পড়বে। ইমাম যদি উঁচু আওয়াজে কুনুত না পড়ে তাহলে মুক্তাদিরা নীচু স্বরে কুনুত পড়বে। আর ইমাম উঁচু আওয়াজে কুনুত পড়ে এবং মুক্তাদিরা শোনে তাহলে আমিন আমিন বলবে। আর না শুনলে নীচু আওয়াজে মুক্তাদিরা কুনুত পড়বে। কেউ কেউ বলেন, এ অবস্থাতেও আমিন বলবে। আবার কেউ কেউ বলেন, কোনার সাথে সাথে সে নিজেও পড়বে। তবে প্রথম অভিমতটিই অধিক পছন্দনীয়।

যদি ফজর ছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত পড়ে, সে নামাজ যদি জেহরি হয় যেমন, মাগরিব ও এশা। তাহলে সেক্ষেত্রেও ফজরের মতই পড়বে। আর যদি সিররির হয় যেমন জোহর ও আছর তাহলে কেউ কেউ বলেন, আস্তে পড়বে। আবার কেউ কেউ বলেন ফজরের মতই পড়বে।

সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, বিরে মাউনার ঘটনায় সত্তর জন কারী সাহাবি রাদি, কে শহিদ করার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নামাজে উঁচু আওয়াজে কুনুত পড়তেন ।

সহিহ বুখারিতে (لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ) এই আয়াতের তাফসিরে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুতে নাযিলা উঁচু আওয়াজে পড়েছেন। ৪০


তথ্যসূত্রঃ
১. সহিহ মুসলিম: ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭১, সুনানে নাসাঈ ৩/২২৬।
২. সুনানে তিরমিজি: ২৬১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৯০।
৩. সহিহ বুখারি: ৭৯৪, সহিহ মুসলিম: ৪৮৪, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৭, সুনানে নাসাঈ ২/২১৯।
৪. সহিহ মুসলিম: ৭৭১।
৫. সহিহ মুসলিম: ৪৮৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭২, সুনানে নাসাঈ ২/২২৪।
৬. সুনানে নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩। 
৭. সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদঃ ৮৭৬।
৮, সহিহ মুসলিম: ৪৮০, সুনানে আবু দাউদ: ৪০৪৪ । 
৯, সহিহ মুসলিম: ৪৮০।
১০. সহিহ মুসলিম: ৪১১, ৭৯৯। উ.
১১. সহিহ বুখারি: ৭৮৪, সহিহ মুসলিম: ৩৯২। 
১২. সহিহ মুসলিম: ৪৭৬, সুনানে আবু দাউদ: ৮৪৬।
১৩. সহিহ মুসলিম: ৪৭৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৪৭, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৮-১৯৯। 
১৪. সহিহ মুসলিম: ৪৭৮, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৮।
১৫. সহিহ বুখারি: ৭৯৯, সুনানে আবু দাউদ: ৭৭০, মুয়াত্তা মালেক ১/২১২, সুনানে তিরমিজি: ৭৭০, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৬
১৬. সহিহ মুসলিম: ৭৭২ |
১৭.সহিহ বুখারি: ৭৯৪, মুসলিম: ৪৮৪। 
১৮. সহিহ মুসলিম: ৪৮৭।
১৯. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে আবু দাউদ: ৭৬০। 
২০. নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩ । 
২১. সুনানে আবু দাউদ: ৮৮৬, সুনানে তিরমিজি: ২৬।
২২. সহিহ মুসলিম: ৪৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, মুয়াত্তা মালেক ১/২১৪, সুনানে আবু দাউদ:৮৭৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯১, সুনানে নাসাঈ ২/২২৫, ২২৩।
২৩. সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৬, সুনানে নাসাঈ ২/১৮৯ ।
২৪. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২৫. সহিহ মুসলিম: ৪৮৩, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৮।
২৬. সহিহ মুসলিম: ০৪ |
২৭. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২৮. সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে নাসাঈ ২/২২২, মুসতাদরাকে হাকেম ১/২২০।
২৯. সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে নাসাঈ ২/২২২। 
৩০. মুসতাদরাকে হাকেম ১/১২০।
৩১. সহিহ মুসলিম: ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭, সুনানে নাসাঈ ৩/২২৬।
৩২. সুনানে বাইহাকি ২/১২২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৫০, সুনানে তিরমিজি: ২৮৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৯৮।
৩৩. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে, দ্বিতীয় তাকবিরের পরে সামান্য বসবে না; বরং সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। সুতরাং তাদের নিকট এসব এখতেলাফ নেই। বরং সেজদা থেকে উঠার সময়ের তাকবিরকে দীর্ঘ করেই সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। (হেদায়া 1 / 110 )
৩৪. হানাফি মাজহাবে উক্ত বৈঠক সুন্নাত নয়। (হেদায়া ১/১১০)
৩৫. হানাফি মাজহাব মতে, বিতরের নামাজে পুরো বছর তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে কুনুত পড়া ওয়াজিব। এছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত নেই। হাদিসে ফজরের নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুত পড়েছেন বলে যেসব বর্ণনা এসেছে, সেগুলো হলো 'কুনুতে নাজিলা। আপদকালীন কুনুত। সবসময়ের জন্য নয়। তাই হানাফি উলামায়ে কেরাম মহা বিপদের সম্মুখীন হলে 'কুনুতে নাযিলা পড়ার কথা বলেন। কিন্তু সবসময় সর্বাবস্থায় ফজরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন না। যদি ইমাম ফজরের নামাজে কুনুত পড়েন, তাহলে মুক্তাদি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। (হেদায়া ১/১৪৫)
৩৬. সুনানে বাইহাকি ২/ ২০১, মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৬২।
৩৭. সুনানে নাসাঈ : ৩/২৪৮, সুনানে তিরমিজি: ৪৬৪, সুনানে আবু দাউদ: ১৪২৬, সুনানে ইবনে
৩৮. সুনানে বাইহাকি : ২/২১০, তুহফাতুল আশরাফ ১৩/১৮৪, মারাসিলে আবু দাউদের সূত্রে।
৩৯. সুনানে আবু দাউদ: ৯০, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯২৩, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৮০।
৪০. সহিহ বুখারি: ৪৫৬০। হানাফি উলামায়ে কেরাম যেহেতু বিতর ছাড়া অন্য নামাজে কুনুতের অনুমতি প্রদান করে না। যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে গেছে। তাই এসকল মাসআলারও প্রয়োজন নেই। তাঁরা শুধু বিরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন। সে কুনুত সর্বাবস্থায় ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামাজি ব্যক্তি সকলেই আস্তে পড়বে। আর অন্য নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কুনুত পড়েছেন, সেটি ছিলো 'কুনুতে নাযিলা'। এই শেষোক্ত হাদিসটি হানাফিদের দলিল যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নামাজে কুনুতে নাযিলা পড়তেন। (হেদায়া ১/১৪৫-৪৬ )




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url