প্রাত্যহিক জীবনে “আল্লাহ’র স্মরণ” || নামাজের সঠিক পদ্ধতি-১ || নামাজের ভিতরের দুআসমূহ







(শাইখুল ইসলাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শারফ আন-নববী রহ. রচিত “আল আযকার” গ্রন্থ অবলম্বনে)

ইকামতের দুআ


ইমাম শাফেয়ি রহ. ‘কিতাবুল উম্ম’ এ মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন-

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَطْلُبُوا اسْتِجَابَةَ الدُّعَاءِ عِنْدَ الْتِقَاءِالجُيُوشِ وَإِقَامَةِ الصَّلَاةِ وَنُزُولِ الْغَيْثِ.

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা যুদ্ধের সময়, ইকামতের সময়, বৃষ্টির সময় দুআ কর। এ সময়গুলোতে দুআ কবুল হয় । ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, আমি অনেকের থেকে ইকামতের সময় ও বৃষ্টির সময় দুআ কবুলের বিষয়টি শুনেছি। 

নামাজের ভিতরের দুআসমূহ


এ অধ্যায়টি অনেক ব্যাপক। এ প্রসঙ্গে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। অনেক মাসআলা-মাসায়েল রয়েছে। সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয়ের অবতারণা না করে এখানে কিছু মূলনীতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করব। আর সংক্ষিপ্তকরণের জন্য বেশিরভাগ দলিল উল্লেখ করব না। কারণ, এ কিতাবটি দলিল বর্ণনার জন্য প্রণয়ন করা হয়নি। বরং আমলের বিষয়গুলোর জন্য এ কিতাবটি লেখা হয়েছে। আল্লাহ তাআলাই তাওফিকদাতা ।

তাকবিরে তাহরিমা


তাকবিরে তাহরিমা (নামাজ শুরুর তাকবির) ছাড়া নামাজ সহিহ হবে না। নামাজ ফরজ হোক বা নফল। তাকবিরে তাহরিমা ইমাম শাফেয়ি রহ. সহ অনেকের মতে নামাজের অংশ ও রোকন। আবু হানিফা রহ. এর মতে এটা রোকন নয়। নামাজের শর্ত ।

তাকবিরে তাহরিমার শব্দ হল । اللَّهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) অথবা আল্লাহুল আকবার। 

এই দুই শব্দ ইমাম শাফেয়ি রহ., আবু হানিফা রহ. ও অন্যান্য ইমামগণের মতে জায়েয। 

ইমাম মালেক রহ.-এর মতে দ্বিতীয় শব্দটির মাধ্যমে নামাজ শুদ্ধ হবে না।

অতএব, সব ধরনের মতপার্থক্য থেকে বাঁচতে اللَّهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করাই উত্তম।

এই শব্দ ছাড়া যেমন- اللَّهُ الْمُتَعَالِي (আল্লাহুল মুতাআলি), ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ (আল্লাহুল আজিম), আল্লাহু আজামআল্লাহু আআজ্জুআল্লাহু আজাল্লু অথবা এ জাতীয় অন্য কোন শব্দ বলে, তাহলে নামাজ ইমাম শাফেয়ি রহ. সহ আরো অনেকের মতে নামাজ সহিহ হবে না। ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতে সহিহ হবে। আর যদি আকবার আল্লাহু বলে এক্ষেত্রে শাফেরি মাজহাবের সঠিক বর্ণনা মতে সহিহ হবে না। তবে কেউ কেউ বলেন সহিহ হবে। যেমন সঠিক বর্ণনা মতে কেউ যদি নামাজের শেষে عَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ (আলাইকুমুস সালাম) বলে, তাহলে সেটি সঠিক হবে। 

তাকবিরে তাহরিমাসহ সকল জিকির এতটুকু উচু আওয়াজে পড়তে হবে যেন ব্যক্তি নিজে শুনতে পায়। এরচে কম আওয়াজে পড়লে শুদ্ধ হবে না। অবশ্য, কথা বলতে না পারা বা এ জাতীয় কোন সমস্যা থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। এবিষয়ে আলোচনা পূর্বে চলে গেছে।

যে ব্যক্তি আরবি ভাষায় তাকবিরে তাহরিমা বলতে পারে, সে অনারবি ভাষায় তাকবিরে তাহরিমা বললে নামাজ শুদ্ধ হবে না। আর যে ব্যক্তি আরবিতে বলতে না পারে তার জন্য সহিহ হবে। তবে তার জন্য আরবি ভাষা শিখে নেওয়া জরুরি। যদি শেখার ব্যাপারে অলসতা করে তাহলে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না। আর যত দিন আরবি শেখার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী থাকবে ততদিনের নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।

তাকবিরে তাহরিমা খুব টেনে না বলা, বরং দ্রুত বলা, এটিই স্বীকৃত ও সঠিক মাজহাব। তবে কেউ কেউ টেনে বলার কথা বলেছেন। প্রথম মতটিই বিশুদ্ধ। বাকি তাকবিরের ক্ষেত্রে সঠিক মাজহাব মতে মুস্তাহাব হল পরবর্তী রোকনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত টানা। কেউ কেউ বলেছেন একদম না টানা । সেখানে টানার বিধান নেই সেখানে যদি কেউ টেনে তাকবির বলে বা টানার স্থানে যদি না টানে তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না; তবে নামাজের ফজীলত কমে যাবে।

اللَّهُ (আল্লাহ) এর লামের পরে টানার স্থান। এছাড়া তাকবিরের অন্য কোথাও না টানা ।

ইমাম সাহেবের তাকবির


ইমাম সাহেব তাকবিরে তাহরিমা ও অন্যান্য তাকবির উঁচু আওয়াজে বলবে যেন মুক্তাদিরা শুনতে পায়। আর মুক্তাদিরা এতটুকু নীচু আওয়াজে বলবে যাতে নিজে শুনতে পায়। অবশ্য, ইমাম আস্তে বলে, আর মুক্তাদিরা জোরে বলে তাহলে নামাজ বাতিল হবে না।
তাকবির শুদ্ধ করে শিখে নেবে। অজায়গায় টেনে বলবে না। যদি
اللَّهُ (আল্লাহ) শব্দের হামযা বা أَكْبَرُ (আকবার) এর ‘বা’ টেনে বলে, তাহলে নামাজ সহিহ হবে না ।

নামাজে তাকবিরের পরিমাণ


দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজে ১১ বার তাকবির বলার বিধান রয়েছে। তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজে ১৭ বার তাকবির বলার বিধান রয়েছে। চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে ২২ বার তাকবির বলার বিধান রয়েছে। কেননা প্রতি রাকাতে পাঁচবার তাকবির বলতে হয়। যেমন রুকুর তাকবির, দুই সেজদা এবং সেজদা থেকে উঠার সময় চার তাকবির, তাকবিরে তাহরিমা, তাশাহুদ পড়ে উঠার সময় তাকবির ।

তাকবিরে তাহরিমা ছাড়া বাকি তাকবিরগুলো সুন্নাত। যদি কেউ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ছেড়ে দেয় তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না। এর জন্য সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। আর তাকবিরে তাহরিমা ফরজ। এটা ছাড়া নামাজ সহিহ হবে না। এ ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

তাকবিরে তাহরিমার পরের দুআ


এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সকল হাদিসের সমন্বয়ে নিচের দুআগুলো পড়া-

اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيلًا وَجَهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، اَللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلهَ لِي إِلَّا أَنْتَ، أَنْتَ رَبِّيْ، وَأَنَا عَبْدُكَ، ظَلَمْتُ نَفْسِي، وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيْعًا، إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ، وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ، لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ، وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ.

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা। ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফান মুসলিমান ওয়া মা আনা মিনাল মুসলিমিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা-শারিকালাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা আউওয়ালুল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা আনতাল মালিকু, লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা রাব্বি ওয়া আনা আবদুক। জালামতু নাফসি ওয়া'তারাফতু বি-জাম্বি, ফাগফিরলি যুনুবি জামিআন, লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লাহ আনতা। ওয়াহদিনি লি-আহসানিল আখলাক, লা ইয়াহদি লি-আহসানিহা ইল্লা আনতা। ওয়াসরিফ আন্নি সাইয়িআহা, লা ইয়াসরিফু সাইয়িআহা ইল্লা আনতা । লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফি ইয়াদাইক ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইক। আনা বিকা ওয়া ইলাইকা, তাবারাকতা ওয়া তাআলাইতা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক।

অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি। আমি নিজেকে আসমান-যমিনের সৃষ্টিকর্তার দিকে অভিমুখী করলাম, একনিষ্ঠ ও অনুগত হয়ে। আর আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গীত। তার কোন অংশীদার নেই। এটাই আমাকে (মানতে) নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, আর আমি মুসলমান। হে আল্লাহ, আপনিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আপনি আমার রব এবং আমি আপনার বান্দা। আমি নিজের ওপর জুলুম করে ফেলেছি, নিজের গুনাহের কথা স্বীকার করছি। অতএব, আমার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দাও। আপনি ব্যতীত আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না। আমাকে উত্তম চরিত্র দান করুন, নিশ্চয় উত্তম চরিত্র আপনি ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না। আমার থেকে অসচ্চরিত্র দূর করুন, আপনি ছাড়া অন্য কেউ এটা বিতাড়ন করতে পারে না। বান্দা হাজির, বান্দা এখানেই। সকল কল্যাণের চাবিকাঠি আপনার হাতে। আপনার দিকে মন্দের সম্বন্ধ হয় না। আমি আপনার তওফিকের মুহতাজ এবং আমার সব আশা-ভরসা আপনার কাছে। আপনি মহিমান্বিত ও মহান। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তাওবা করি।  

এই দুআও পড়বে-

اللَّهُمَّ بَاعِدُ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللهُمَّ نَقِّنِي مِنَ الْخطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বায়িদ বাইনি ওয়া বাইনা খাতাইয়ায়া কামা বাআদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব। আল্লাহুম্মা নাক্কিনি মিন খাতাইয়ায়া কামা য়ুনাক্কাস সাউবুল আবয়াদু মিনাদ্দানাস। আল্লাহুম্মাগ সিলনি মিন খাতাইয়ায়া বিস্সালজি ওয়াল মায়ি ওয়াল বারদ ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমার এবং আমার পাপের মধ্যখানে পূর্ব-পশ্চিমের মতো দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও। হে আল্লাহ, আমাকে পাপ থেকে পবিত্র করুন, যেভাবে সাদা জামাকে দাগ মুক্ত করা হয়। হে আল্লাহ, আমাকে আমার পাপ থেকে বরফ, পানি ও শিশির দিয়ে ধুয়ে দিন। 

উল্লিখিত সকল দুআই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ হাদিসে এসেছে। এছাড়াও এ ব্যাপারে আরো অনেক হাদিস রয়েছে- 

*  হজরত আয়েশা রাদি. এর হাদিস। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন এই দুআটি পড়তেন-

سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ.

উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুক।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতার গুণগান করি, আপনার নাম বরকতময় এবং আপনার বড়ত্ব সুউচ্চ। আর আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই।' 

বাইহাকি বলেন, এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ সনদে উমর বিন খাত্তাব রাদি, থেকে বর্ণিত, তিনি তাকবিরে তাহরিমার পর এ দুআটি পড়তেন-

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ.

উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুক ।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতার গুণগান করি, আপনার নাম বরকতময় এবং আপনার বড়ত্ব সুউচ্চ। আর আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। ৫ 

*  হজরত আলি রাদি. বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-

لا إلهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ ، ظَلَمْتُ نَفْسِي ، وَعَمِلْتُ سُوْءًا فَاغْفِرْ لِيْ إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ، اللهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ لِي إِلَّا أَنْتَ، أَنْتَ رَبِّي وَأَنا عَبْدُكَ، ظَلَمْتُ نَفْسِي، وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ، وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ، لَا يَهْدِي جَمِيعًا، إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، وَالخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ، وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ.

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাক, যালামতু নাফসি, ওয়া আমিলতু সুআন ফাগফিরলি ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জনুবা ইল্লা আনতা। ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফান মুসলিমান ওয়া মা আনা মিনাল মুসলিমিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা-শারিকালাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা আউওয়ালুল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা আনতাল মালিকু, লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা রাব্বি ওয়া আনা আবদুক। জালামতু নাফসি ওয়া’তারাফতু বি-জাম্বি, ফাগফিরলি যুনুবি জামিআন, লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লাহ আনতা। ওয়াহদিনি লি-আহসানিল আখলাক, লা ইয়াহদি লি- আহসানিহা ইল্লা আনতা। ওয়াসরিফ আন্নি সাইয়িআহা, লা ইয়াসরিফু সাইয়িআহা ইল্লা আনতা। লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা ওয়াল খাইরু কুলুহু ফি ইয়াদাইক ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইক। আনা বিকা ওয়া ইলাইকা, তাবারাকতা ওয়া তাআলাইতা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক ।

অর্থ: আপনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আপনি অংশীদার থেকে পবিত্র। আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি এবং মন্দকাজ সম্পাদন করেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ব্যতীত আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না। আমি নিজেকে আসমান-যমিনের সৃষ্টিকর্তার দিকে অভিমুখী করলাম, একনিষ্ঠ ও অনুগত হয়ে। আর আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গীত। তার কোন অংশীদার নেই। এটাই আমাকে (মানতে) নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, আর আমি মুসলমান। হে আল্লাহ, আপনিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আপনি আমার রব এবং আমি আপনার বান্দা। আমি নিজের ওপর জুলুম করে ফেলেছি, নিজের গুনাহের কথা স্বীকার করছি। অতএব, আমার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দাও। আপনি ব্যতীত আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না। আমাকে উত্তম চরিত্র দান করুন, নিশ্চয় উত্তম চরিত্র আপনি ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না। আমার থেকে অসচ্চরিত্র দূর করুন, আপনি ছাড়া অন্য কেউ এটা বিতাড়ন করতে পারে না। বান্দা হাজির, বান্দা এখানেই । সকল কল্যাণের চাবিকাঠি আপনার হাতে। আপনার দিকে মন্দের সম্বন্ধ হয় না। আপনার দ্বারাই আমার সব, আপনার দিকেই আমার সব। আপনি মহিমান্বিত ও মহান। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তাওবা
করি। 

হারেসে আরো নামক একজন দুর্বল রাবীর কারণে হাদিসটি দুর্বল। কেননা সে মতৈক্যক্রমে দুর্বল। ইমাম শাবি বলতেন, হারেস একজন মিথ্যুক।

এই অধ্যায়ের প্রথম হাদিসে الشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ (আশশাররু লাইসা ইলাইক) এর শাব্দিক অর্থ হল: আল্লাহর থেকে অকল্যাণ আসে না।' অথচ আহলে হক সকল উলামায়ে কেরামের মতে, ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে ।

হাদিসে বর্ণিত উক্ত কথাটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। উলামায়ে কেরাম এর কয়েকটি ব্যাখ্যা করেছেন-

১. وَالشَّرُّ لَا يَتَقَرَّبُ بِهِ إِلَيْكَ অর্থাৎ মন্দ কাজ দ্বারা তোমার নৈকট্য লাভ করা যাবে না। এ ব্যাখ্যাটিই প্রসিদ্ধ। নজর বিন শুমাই ও পরবর্তী উলামায়ে কেরাম এটিই বলেছেন।
২. মন্দ আপনার দিকে উঠে না; বরং উত্তম কথাই তোমার কাছে উঠে।
৩. মন্দকে আপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বলা হয় না, সম্মানের জন্য । 
৪. আল্লাহর হিকমতের বিবেচনায় এটি মন্দ নয়। কারণ, তিনি কোন কিছু অনর্থক সৃষ্টি করেননি।

উল্লিখিত দুআগুলো একাকী নামাজি ব্যক্তি ও ইমাম সবার জন্যই পড়া মুস্তাহাব। মুসল্লিরা বিরক্ত হলে ইমাম শুধু  وَجَّهْتُ وَجْهِيَ এ থেকে وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ পর্যন্ত পড়বে। অনুরূপভাবে একাকী নামাজি ব্যক্তি দ্রুত নামাজ পড়লে উক্ত দুআটি পড়বে। ৭

উক্ত দুআগুলো ফরজ ও নফল সব নামাজে পড়া মুস্তাহাব। প্রথম রাকাতে যদি ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশতঃ না পড়ে তাহলে পরবর্তীতে পড়বে না। যদি পড়ে তাহলে মাকরুহ হবে। তবে নামাজ নষ্ট হবে না। এমনিভাবে যদি তাকবিরের না পড়ে কিরাত শুরু করে দেয় আউজুবিল্লাহ পড়ে ফেলে তাহলেও পড়বে না। এসময় পড়লে নামাজ নষ্ট হবে না। মাসবুক ব্যক্তি নামাজ শুরু করার পর পড়ে নেবে। যদি এগুলো পড়তে গেলে সুরা ফাতিহা ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে দুআ না পড়ে সুরা ফাতিহা পড়বে। কারণ, সুরা ফাতিহা ওয়াজিব আর এটি পড়া সুন্নাত। আর যদি মাসবূক জামাতে শরিক হয় দাঁড়ানো ছাড়া অন্য কোন রোকনে তাহলে এ দুআগুলো পড়বে না। বরং ঐ রোকনের দুআই পড়বে।

নামাজ শুরুর দুআ


নামাজ শুরুর দুআ পড়ার পর আউজুবিল্লাহ পড়া সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নাত। এটি কিরাতের সূচনা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-

فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَنِ الرَّجِيمِ.

অর্থ: যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও । সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে এর অর্থ: যখন তিলাওয়াতের ইচ্ছে করবেন তখন আউজুবিল্লাহ পাঠ করুন। ১০

জেনে রাখুন, আশ্রয় কামনার পছন্দনীয় শব্দ হল-

أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ.

উচ্চারণ: আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম।

অর্থ: সর্বজ্ঞ সর্ববিষয়ে অবহিত আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে!
এছাড়া অন্য বর্ণনায় এসেছে-

أَعُوذُ بِاللهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ.

উচ্চারণ: আউযুবিল্লাহিস সামিইল আলিমি মিনাশ শায়তানির রাজিম।

অর্থ: আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে! এটাকেও আউজুবিল্লাহ বলা হয়। তবে প্রথমটিই বেশি প্রসিদ্ধ।

*  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে কিরাত শুরু করার আগে পড়তেন:

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ؛ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ.

উচ্চারণ: আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম মিন নাফখিহি ও নাফাসিহি ও হামাযিহ।

অর্থ: হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে অভিশপ্ত শয়তানের মাতলামি, দাম্ভিকতা ও কাব্যিকতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। ১১

আউজুবিল্লাহ পড়া


আউজুবিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ছেড়ে দিলে গুনাহগার হবে না। নামাজও নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না। নফল, ফরজসহ সকল নামাজেই এটি মুস্তাহাব। জানাযার নামাজেও মুস্তাহাব। ১২

নামাজের বাইরে কুরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য সর্বসম্মতিক্রমে আউজুবিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব। সকলের মতে প্রথম রাকাতে আউজুবিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব। যদি প্রথম রাকাতে না পড়ে থাকে তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে পড়বে, তাও না হলে পরবর্তী কোন রাকাতে পড়ে নিবে ।

প্রথম রাকাতে পড়লে দ্বিতীয় রাকাতে পড়তে হবে কি-না এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম থেকে দুধরনের বক্তব্যই পাওয়া যায়। সঠিক মতানুযায়ী দ্বিতীয় রাকাতে পড়াটাই মুস্তাহাব। তবে দ্বিতীয় রাকাতের তুলনায় প্রথম রাকাতে পড়ার গুরুত্ব বেশি। সিররি নামাজে (যেসব নামাজে কিরাত আস্তে পড়া হয়) আউজুবিল্লাহ আস্তে পড়বে। আর জেহরি নামাজে (যেসব নামাজে কিরাত উঁচু আওয়াজে পড়া হয়) সেসব নামাজে আউজুবিল্লাহ আস্তে পড়বে নাকি জোরে পড়বে এবিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। শাফেয়ি কিছু কিছু উলামায়ে কেরাম বলেন, সেসব নামাজের আউজুবিল্লাহ আস্তে পড়বে। আর অধিকাংশ শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, ইমাম শাফেয়ি রহ. এর এ মাসআলায় দুটি বক্তব্য রয়েছে। এক বক্তব্য অনুযায়ী আস্তে পড়া ও জোরে পড়া সমান। অন্য বক্তব্য অনুযায়ী জোরে পড়া সুন্নাত ।

কেউ কেউ বলেন, এ ব্যাপারে দুটি বক্তব্য হল, এক. আস্তে পড়া। দুই. জোরে পড়া। তবে সার্বিক বিবেচনায় জোরে পড়াই মুস্তাহাব। শায়খ ইসফারায়িনি ও তাঁর শাগরেদ মুহামিলি ও অন্যরা এটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহাবি আবু হুরাইরা রাদি. এমনটিই করতেন। তবে আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. আস্তে পড়তেন। জোরে পড়াটাই আমাদের বেশিরভাগ উলামায়ে কেরামের নিকট প্রণিধাযোগ্য ও পছন্দনীয়। ১৩

আউজুবিল্লাহ পরে কিরাত পড়া

নামাজের কিরাত পড়া ওয়াজিব। এটি কুরআন-হাদিসের স্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত। এটিই শাফেয়িসহ সকল উলামায়ে কেরামের মাজাহাব।

যে ব্যক্তি কিরাত পড়তে সক্ষম তার জন্য কিরাত ছাড়া নামাজ সহিহ হবে না। এ ব্যাপারে হাদিস নিম্নরূপ :

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

لا تَجْزِيءُ صَلَاةٌ لَا يُقْرَأُ فِيْهَا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.

অর্থ: সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হবে না। ১৪ - সহিহ বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে-

لَا صَلَاةَ إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ

অর্থ: সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হবে না ।১৫

বিসমিল্লাহ পড়া


নামাজে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' পড়া ওয়াজিব। এটি শাফেয়িদের মতে সুরা ফাতেহার একটি স্বতন্ত্র আয়াত। তাদের মতে সকল তাশদিদসহ সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। সুরা ফাতিহাতে মোট ১৪টি তাশদিদ রয়েছে।

তিনটি বিসমিল্লায়। আর বাকিগুলো বাকি আয়াতে। যদি কোন একটি তাশদিদ বাদ পড়ে যায়, তাহলে কিরাত বাতিল হয়ে যাবে। ১৬

সুরা ফাতিহা তারতিবের সাথে ধারাবাহিকভাবে পড়বে। যদি তারতিবের সঙ্গে না পড়ে বা ধারাবাহিকতা বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে কিরাত শুদ্ধ হবে না। তবে নিঃশ্বাস নেওয়া পরিমাণ চুপ থাকলে কোন সমস্যা নেই। মুক্তাদি যদি ইমামের সঙ্গে তিলাওয়াতের সেজদা করে বা ইমামের আমিন শোনে, সেও আমিন বলে অথবা ইমামের কিরাতের চাহিদানুযায়ী মুক্তাদি আল্লাহর কাছে রহমতের জন্য দুআ করে বা জাহান্নাম থেকে পানাহ চায় অথচ মুক্তাদি তখন সুরা ফাতিহা পড়ছিলো তাহলে তার কিরাত বাতিল হবে না । কারণ, সে অক্ষম। ১৭

সুরা ফাতেহায় এমন ভুল হলে, যার ফলে অর্থ বিকৃত হয়ে যায় তাহলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর অর্থ বিকৃতকারী ভুল না হলে কিরাত শুদ্ধ হবে; নামাজ নষ্ট হবে না।

অর্থ বিকৃত হওয়ার উদাহরণ- أَنْعَمْتَ এর মধ্যে تَ বর্ণে পেশ দিয়ে পড়া অথবা إِيَّاكَ نَعْبُدُ এর মধ্যে كَ বর্ণে যের দিয়ে পড়া।

অর্থ বিকৃতি না হওয়ার উদাহরণ- رَبِّ الْعَالَمِينَ এর মধ্যে بِّ বর্ণে পেশ বা যবর দিয়ে পড়া। نَسْتَعِينُ -এর দ্বিতীয় নুনকে যবর বা যের দিয়ে পড়া।

অবশ্য وَلَا الضَّالِّينَ , এর মধ্যে ضَّ এর স্থানে জ্বোয়া পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এটিই প্রসিদ্ধ মত। তবে যদি কেউ শিখার চেষ্টা করার পরও ضَّ উচ্চারণ করতে না পারে তাহলে সে অপারগ বলে গণ্য হবে। তার নামাজ নষ্ট হবে না ।

যদি সুরা ফাতেহা ভালোভাবে পড়তে না পারে তাহলে এর সমপরিমাণ অন্য কোন কিরাত পড়বে। যদি অন্য কোন কিরাতও পড়তে না পারে তাহলে সুরা ফাতিহার সমপরিমাণ তাসবিহ, তাহলিল ইত্যাদি পড়বে। আর যদি তাও না পারে, আর তা শেখার মতো নামাজের ওয়াক্ত না থাকে তাহলে সুরা ফাতেহা পরিমাণ সময় দাঁড়িয়ে থাকবে। তাহলেও তার নামাজ শুদ্ধ হবে যদি সে শেখার ক্ষেত্রে কোন ধরনের অলসতা না করে থাকে। আর যদি অলসতা করে থাকে তাকে সেই নামাজগুলো পুনরায় পড়তে হবে।

আর যখনই শিখতে শুরু করবে তখন সর্ব প্রথম সুরা ফাতিহা শিখবে। যদি অনারবী ভাষায় ভালো করে সুরা ফাতিহা পড়তে পারে; কিন্তু আরবি ভাষায় ভালো করে না পারে, তাহলে সেও অক্ষম। সেও পূর্বের আলোকে জিকির- আজকার করবে।

সুরা ফাতেহার পর কোন একটি সুরা পূর্ণ পড়বে বা আংশিক পড়বে, এটি সুন্নাত। যদি অন্য সুরা না মিলায় তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না। সেজদায়ে সাহুও দেয়া লাগবে না। ফরজ নামাজ হোক বা নফল নামাজ। সঠিক মতানুযায়ী জানাযায় সুরা পড়া মুস্তাহাব নয়। ১৮

নামাজি ব্যক্তি চাইলে পুরো সুরা পড়তে পারে বা আংশিক সুরা পড়তে পারে। বড় সুরার আংশিক পড়ার চেয়ে ঐ পরিমাণের ছোট সুরা পড়া উত্তম । কুরআনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সুরা পড়া মুস্তাহাব। সুতরাং প্রথম রাকাতে পঠিত সুরার পরবর্তী সুরা দ্বিতীয় রাকাতে পড়া। যদি এর ভিন্নতা করে তাহলেও জায়েজ আছে । সুন্নাত হল সুরা ফাতিহা পড়ার পরে সুরা পড়া। যদি ফাতিহার পূর্বে পড়ে তাহলে সেটি সুরা মিলানো বলে গণ্য হবে না।

জেনে রাখুন, পূর্বের বিবরণ অনুযায়ী সুরা পড়ার মুস্তাহাব হল ইমামের জন্য, একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য এবং সিররি নামাজ আদায়কারী মুক্তাদির জন্য।

জেহরি নামাজের মুক্তাদি কেবল ইমামের সঙ্গে সুরা ফাতিহা পড়বে। আর যদি ইমামের কিরাত শুনতে না পায় বা অস্পষ্টভাবে শুনতে পায় তাহলে উক্ত মুক্তাদির জন্যও সুরা পড়া মুস্তাহাব। ১৯

সুন্নাত পরিমাণ কিরাতের বিবরণ


ফজর ও যোহরের নামাজে সুরা হুজুরাত থেকে সুরা বুরুজ পর্যন্ত যে কোন সুরা বা এর সমপরিমাণ কিরাত। আসর ও এশার নামাজে সুরা বুরুজ থেকে সূর বায়্যিনা পর্যন্ত যে কোন সুরা বা এর সমপরিমাণ অন্য কোন কিরাত । মাগরিবের নামাজে সুরা বায়্যিনাহ থেকে সুরা নাস পর্যন্ত যে কোন সুরা বা এর সমপরিমাণ অন্য কোন কিরাত ।

ইমাম চাইলে এরচে কম পড়তে পারবে। তবে যদি জানে যে, মুক্তাদিরাও এই পরিমাণ কিরাতে আগ্রহী, তাহলে কোন এই পরিমাণই পড়বে।

অনুরূপভাবে সূন্নত হল, জুমুআর দিন ফজরের নামাজের প্রথম রাকাতে আলিফ লাম মিম, আসসাজদাহ দ্বিতীয় রাকাতে দাহর পড়া।

ঈদ ও ইস্তেসকার নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সুরা ক্বাফ পড়া। দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কামার পড়া। আর চাইলে প্রথম রাকাতে এবং সুরা আলা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা গাশিয়াহ পড়তে পারবে। উভয়টিই সুন্নাত।

জুমুআর নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা জুমুআ এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মুনাফিকুন পড়া। প্রথম রাকাতে সুরা আলা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা গাশিয়াহ পড়তে পারবে। উভয়টিই সুন্নাত।

এসব ক্ষেত্রে এক সুরা দিয়েই দুই রাকাত পড়বে না। সহজতা চাইলে একটু দ্রুত দুই সুরা পড়ে নেবে ।

সুন্নাত হল, ফজরের সুন্নতের প্রথম রাকাতে  قُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡنَا ২০ এবং দ্বিতীয় রাকাতে قُلۡ یٰۤاَهۡلَ الۡکِتٰبِ تَعَالَوۡا اِلٰی کَلِمَۃٍ سَوَآءٍۢ ২১ আর চাইলে প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়বে। উভয়টিই সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়টি করেছেন।

মাগরিবের সুন্নতে, তাওয়াফের দুই রাকাতে এবং ইস্তিখারার নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন পড়া এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া, সঙ্গে সুরা ফালাক ও নাস পড়া। আমরা এখানে সে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি, এসব বিষয়ে সহিহ, গাইরে সহিহ ইত্যাদি অনেক হাদিস এসেছে। এসব হাদিস প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণে আমরা এখানে উল্লেখ করিনি।

যদি কেউ জুমুআর প্রথম রাকাতে সুরা জুমুআ না পড়ে থাকে, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মুনাফিকুনের সঙ্গে সুরা জুমুআ পড়ে নেবে। অনুরূপভাবে ঈদের নামাজ, ইস্তিস্কার নামাজ, বিত্র ও ইত্যাদি নামাজে, যার আলোচনা পূর্বে গেছে, সেসব নামাজে প্রথম রাকাতে না পড়ে থাকলে দ্বিতীয় রাকাতে প্রথম রাকাতের সুরাটিসহ পড়বে। যেন নামাজে উভয় সুরা পড়া হয়ে যায় । 

আর যদি জুমুআর প্রথম রাকাতে সুরা মুনাফিকুন পড়ে, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে সুরা জুমুআ পড়বে, আর সুরা মুনাফিকুন পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নেই। এ সম্পর্কে আমি বিস্তারিত প্রমাণ শরহুল মুহায্যাবে উল্লেখ করেছি। 

সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর ও অন্যান্য নামাজে প্রথম রাকাতে দ্বিতীয় রাকাতের তুলনায় কিরাত দীর্ঘ করতেন।

অধিকাংশ শাফেরি ইমামগণ এ বিষয়ের হাদিসটিকে ব্যাখ্যা করে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাকাতের তুলনায় দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত লম্বা করতেন না।

তবে মুহাক্কিক শাফেয়িগণ বলেন, উক্ত সহিহ হাদিসের কারণে প্রথম রাকাতে কিরাত দীর্ঘ করা মুস্তাহাব। উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতের চেয়ে ছোট হবে। সঠিক মতানুযায়ী শেষের দুই রাকাতে কিরাত মুস্তাহাব নয়। শেষ দুই রাকাতে কিরাত পড়া হলেও সমান সমান পড়া হবে। কেউ কেউ বলেন, সেক্ষেত্রেও তৃতীয় রাকাত চতুর্থ রাকাতের চেয়ে দীর্ঘ হবে ।

সকল উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, ফজরের নাময, মাগরিব ও এশারের প্রথম দুই রাকাতে কিরাত উঁচু আওয়াজে পড়া হবে। জোহর, আছর ও মাগরিব নামাজের তৃতীয় রাকাতে এবং এশার নমাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে কিরাত আস্তে পড়া হবে ।

জুমুআর নামাজ উভয় ঈদ, তারাবিহ ও তারাবির পরের বিতরের নমাযে কিরাত জোরে পড়বে। ইমাম ও একাকী নামাজি ব্যক্তির জন্য এসব নামাজে উচু আওয়াজে কিরাত পড়া মুস্তাহাব। ২২

আর মুক্তাদি কোন নামাজেই উচ্চস্বরে কিরাত পড়বে না। ২৩

চন্দ্রগ্রহণের নামাজে উচ্চস্বরে কিরাত পড়া সুন্নাত। আর সূর্যগ্রহণের নামাজে নিম্নস্বরে কিরাত পড়া সুন্নাত। ইস্তিসকার নামাজে উচ্চস্বরে কিরাত পড়বে। আর জানাযার নামাজে নিম্নস্বরে কিরাত পড়বে। ঈদ ও ইস্তিসকার নামাজ ছাড়া দিনের সকল নফল নামাজে উচ্চস্বরে কিরাত পড়বে না ।

রাতের নফলের ক্ষেত্রে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেন, নিচু আওয়াজে পড়বে, কেউ বলেন, উঁচু আওয়াজে পড়বে। তৃতীয় মতটি হল অধিক বিশুদ্ধ, তা হল- মাঝামাঝি আওয়াজে পড়বে। এটিই কাজি হুসাইন ও বাগাবি রহ. দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন। যদি রাতের নামাজ দিনে কাযা করে, বা দিনের নামাজ রাতে কাযা করে তাহলে সেক্ষেত্রে কাযার ওয়াক্তের বিবেচনা করা হবে নাকি আদায়ের ওয়াক্তের বিবেচনা করা হবে, এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল, কাযার ওয়াক্তের বিবেচনা করা হবে। কেউ কেউ বলেন, সর্বদা কিরাত আস্তে পড়বে।

জেহরি নামাজে (যেসব নামাজে কিরাত উঁচু আওয়াজে পড়া হয়) কিরাত উচু আওয়াজে পড়া এবং সিররি নামাজে (যেসব নামাজে কিরাত নিম্ন আওয়াজে পড়া হয়) কিরাত আস্তে পড়া সুন্নাত; ওয়াজিব নয়। যদি আস্তের জায়গায় জোরে পড়ে বা জোরের জায়গায় আস্তে পড়ে তাহলে তার নামাজ শুদ্ধ হবে, তবে মাকরূহে তানযিহি হবে। সেজদায়ে সাহু লাগবে না। ২৪

পূর্বে আমরা আলোচনা করে আসছি, নামাজে আস্তে কিরাত ও জিকিরের ক্ষেত্রে অন্তত ব্যক্তি নিজে শুনতে হবে। যদি নিজে শুনতে না পায় তাহলে কিরাত ও জিকির শুদ্ধ হবে না। অবশ্য কোন প্রতিবন্ধকতা যেমন বোবাত্ব ইত্যাদি থাকলে সেটি ভিন্ন। ২৫

শাফেয়িদের মতে, জেহরি নামাজে ইমামের জন্য চার জায়গায় সিকতা তথা চুপ থাকা মুস্তাহাব । এক. তাকবিরে তাহরিমার পর ছানা পড়ার আগে । দুই. সুরা ফাতিহা শেষ করার পর আমিন বলার আগে খুবই অল্প সময় চুপ থাকা, যেন স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আমিন সুরা ফাতিহার অংশ নয়। তিন. আমিন বলার পর দীর্ঘ সময় চুপ থাকা যেন মুক্তাদিরা এসময় সুরা ফাতিহা পড়তে পারে। চার. কিরাত শেষ করার পর রুকুতে যাওয়ার আগে চুপ থাকা । এর মাধ্যমে কিরাত ও রুকুর তাকবির মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করা। ২৬

ইমাম সুরা ফাতিহা শেষ করার পর আমিন বলবে। এটি মুস্তাহাব। এবিষয়ে অনেক প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে। হাদিসসমূহে আমিন বলার অনেক ফজিলত ও সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে।
এই আমিন বলা সুরা ফাতিহার সকল পাঠকের জন্য মুস্তাহাব। নামাজের ভেতরে পড়ুক বা বাইরে। নামাজে ইমাম, মুক্তাদি, একাকী ব্যক্তি সকলের জন্য আমিন বলা মুস্তাহাব। ইমাম ও একাকী নামাজি ব্যক্তি জেহরি নামাজে উঁচু আওয়াজে আমিন বলবে। মুক্তাদিরাও উঁচু আওয়াজে বলবে। মুক্তাদি কম হোক বা বেশি হোক । ২৭

নামাজের ভিতর বা বাইরে কুরআন তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি কোন রহমতের আয়াত পড়লে আল্লাহর কাছে দয়া-অনুগ্রহ কামনা করবে। আর আযাবের আয়াত পড়লে আল্লাহর কাছে জাহান্নাম, শাস্তি, মন্দ ও অপছন্দনীয় বিষয় থেকে পানাহ চাবে। অথবা বলবে-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াহ ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে নিস্কৃতি চাচ্ছি। অথবা এজাতীয় কিছু বলবে। 
আর আল্লাহ তাআলার পবিত্রতার কোন আয়াত পাঠ করলে বলবে-

سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى.

উচ্চারণ: সুবহানাহু ওয়া তাআলা ।

অর্থ: আল্লাহ পুতঃপবিত্র ও মহান। অথবা-

تَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ

উচ্চারণ: তাবারাকাল্লাহু রাব্বুল আলামিন ।


অর্থ: বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহ তাআলা বড় মহান। অথবা বলবে-

جَلَّتْ عَظْمَةُ رَبِّنَا.

উচ্চারণ: জাল্লাত আযমাতু রাব্বিনা ।

অর্থ: আমার রবের মহত্ত্ব বিরাট। অথবা এজাতীয় কিছু বলবে। 

*  হজরত হুজায়ফা বিন ইয়ামান রাদি. থেকে বর্ণিত-

صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَافْتَتَحَ الْبَقَرَةَ، فَقُلْتُ : يَرْكَعُ عِنْدَ الْمِائَةِ، ثُمَّ مَضَى فَقُلْتُ : يُصَلِّي بِهَا فِي رَكْعَةٍ، فَمَضَى، فَقُلْتُ : يَرْكَعُ بِهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ النِّسَاءَ فَقَرَأَهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ، فَقَرَأَهَا يَقْرَأُ مُتَرَسِّلًا؛ إِذَا مَرَّ بِآيَةٍ فِيهَا تَسْبِيحُ سَبَّحَ، وَإِذَا مَرَّ بِسُؤَالٍ سَأَلَ، وَإِذَا مَرَّ بِتَعَوذ

অর্থ: হুজায়ফা বিন ইয়ামান রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামাজে দাঁড়ালাম। তিনি সুরা বাকারা শুরু করলেন, আমি ভাবলাম, হয়ত ১০০ আয়াত পড়ে রুকু করবেন। কিন্তু না তিনি তা করলেন না। ভাবলাম হয়তবা বা সুরা বাকারা পুরো পড়ে রুকু করবেন। সুরা বাকারা শেষ করার পর তিনি সুরা সুরা আলে ইমরান শুরু করলেন। সুরা আলে ইমরান শেষ করে সুরা নিসা শুরু করে দিলেন। সুরা নিসাও পড়ে শেষ করলেন।

তিনি পড়ছিলেন খুবই আস্তে-ধীরে। তারতিলের সাথে। যখন আয়াতে তাসবিহের আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন তিনি তাসবিহ পড়ছিলেন। যখন তিনি কোন প্রার্থনামূলক আয়াত পড়ছিলেন, তখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলেন। যখন অশ্রয় চাওয়ার আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছিলেন। ২৮

শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, নামাজের ভিতর বা বাইরে কুরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য তাসবিহ, প্রার্থনা ও আশ্রয় চাওয়া মুস্তাহাব। সে মুক্তাদি হোক, ইমাম হোক বা একাকী নামাজি ব্যক্তি হোক। এক্ষেত্রে আমীনের মতো সকলেই সমান। সুতরাং যে ব্যক্তি اَلَیۡسَ اللّٰهُ بِاَحۡکَمِ الۡحٰکِمِیۡنَ ২৯ পড়বে সে বলবে: بَلَى وَأَنَا عَلَى ذَلِكَ مِنَ الشَّاهِدِينَ (হ্যাঁ, আমিও এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি) এবং যখন পড়বে  (তবুও কি সেই আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করতে সক্ষম নন?) ৩০ তখন বলবে, বালা ওয়া আশহাদু , (হ্যা, আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি) এবং যখন পড়বে فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَهٗ یُؤۡمِنُوۡنَ.

(বস্তুতঃ এরপর কীসের ওপর ঈমান আনবে?) ৩১ তখন বলবে নেয় । امنت بالله (আল্লাহর ওপর ঈমান আনলাম) আর যখন পড়বে  سَبِّحِ اسۡمَ رَبِّکَ الۡاَعۡلَی (আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন)৩২ তখন বলবে: سُبحانَ ربِّيَ الأعلَى. (আমি আমার মহার রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি)।

তথ্যসূত্রঃ
১. কিতাবুল উম্ম ১/২২৩, ইমাম শাফেয়ি।
২. উ.
৩. উ.
৪. সুনানে আবু দাউদ: ৭৭৬, সুনানে তিরমিজি: ২৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮০৬। উ. 
৫. সহিহ মুসলিম: ৩৯৯। উ.
৬. সুনানে বাইহাকি ২/৩৩।
৭. হানাফি মাজহাব মতে আয়েশা রাদি থেকে বর্ণিত দুআটি পড়া উত্তম। (হেদায়া: ১/১০২):
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ.
৮. হানাফি মাজহাব মতে মাসবুক ব্যক্তি এ দুআ ইমামের সঙ্গে কোন অবস্থাতেই পড়বে না। বরং ইমাম সালাম ফেরানোর পর মাসবুক ব্যক্তি নিজের ছুটে যাওয়া নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমে এ দুআ পড়ে নেবে এর পর সুরা ফাতিহা ইত্যাদি পড়বে। (হেদায়া ১/১০২)
৯. সুরা নাহাল: ৯৮।
১০. তিলাওয়াতের পূর্বে আউজুবিল্লাহ পাঠ করার দর্শন হচ্ছে- যে ব্যক্তি উপলব্ধিসহকারে তিলাওয়াত করে, তাকে শয়তান ভ্রষ্ট করতে এবং তার চিন্তা ও উপলব্ধিকে ভুল পথে পরিচালিত করার চূড়ান্ত সাধনা করে থাকে। এজন্য আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা অপরিহার্য। যাতে আল্লাহ তাআলা তার ফিকির এবং উপলব্ধিকে বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করেন এবং শয়তানি কুমন্ত্রণা থেকে সংরক্ষণ করেন। যদি কুরআনের পাঠক এমন করে থাকে, তাহলে আশা করা যায় যে, সে কুরআনের কথাগুলো বিশুদ্ধভাবে বুঝতে সক্ষম হবে। অন্যথায় সন্দেহ ও সংশয়ে লিপ্ত হতে পারে। তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন (বাংলা)।
১১. সুনানে আবু দাউদ: ৭৬৪, ৭৭৫, সুনানে তিরমিজি: ২৪২, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮০৭ ।
১২. হানাফি মাজহাব মতে জানাযার নামাজে মুস্তাহাব নয়। (হেদায়া ১/১৮০ )
১৩. হানাফিদের মতে, আউযুবিল্লাহ আস্তে পড়বে। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. বলেন, নামাজে চারটি জিনিস ইমাম আস্তে বলবে। সেগুলোর মাঝে রয়েছে: আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ ও আমিন। (হেদায়া ১/১০৩)
১৪. সহিহ ইবনে খুজাইমা ১/২৪৮, সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৭৮৯।
১৫. বুখারি শরিফ : ৭৫৬, মুসলিম শরিফ: ৩৪-৩৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮২২, সুনানে তিরমিজি: ২৪৭, সুনানে নাসাঈ ১৩৭, সুনানে ইবন মাজাহ: ৮৩৭।
উল্লেখ্য, হানাফি মাজহাব মতে মুক্তাদি কিরাত পড়বে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَانْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ.
অর্থ: যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো। যাতে তোমাদের ওপর দয়া করা হয়। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রাদি বলেন, এটি ফরজ নামাজের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে।- তাফসিরে ইবনে কাসির ২/২৮।
ইমামের কিরাতই মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট। ইমামের কিরাত যদি মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট না হতো, তাহলে রুকুতে এসে জামাতে শরিক হলে সে ব্যক্তি ঐ রাকাত পেয়েছে বলে ধরা হতো না। অথচ সে তো ঐ রাকাতে কোন কিরাতই পড়েনি। যেহেতু ইমামের কিরাত মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট তাই মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পড়ার প্রয়োজন নেই; বরং কোন প্রকার কিরাত পড়া উক্ত আয়াতের নিষেধাজ্ঞার দরুন নাজায়েজ হবে ।
আর উল্লিখিত দুটি হাদিস হল একাকী নামাজি ব্যক্তি ও ইমামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আনুসাঙ্গিকভাবে মুক্তাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ, ইমামের কিরাত যখন মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট, তখন মুক্তাদিও যেন সুরা ফাতিহা পড়েছে।
এছাড়াও ইমামের পেছনে মুক্তাদির কিরাত নিষিদ্ধের বিষয়টি অন্য হাদিসে স্পষ্টভাবে এসেছে। এবিষয়ে অনেক সাহাবির স্পষ্ট বক্তব্যও রয়েছে। সাধারণ পাঠক এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে মাওলানা আবদুল মাতিন দা. বা. এর 'দলিলসহ নামাজের মাসায়েল' নামক বইটি পড়ুন। -অনুবাদক
১৬. হানাফিদের মতে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত। এটি না পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে। (হেদায়া ১/১০৩)
১৭. হানাফি মাজহাব মতে, মুক্তাদির কিরাত বাতিল হওয়ার প্রশ্নই নেই। কারণ, মুক্তাদির জন্য কিরাতের অনুমোদনই নেই। যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে চলে গেছে। এসব ক্ষেত্রে সে ইমামের অনুসরণ করবে।
১৮. হানাফি মাজহাব মতে, সুরা ফাতিহার পর অন্য সুরা মিলানো ওয়াজিব। ইচ্ছা করে না মিলালে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর ভুলবশতঃ এরূপ হলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব। (হেদায়া ০১/১০৪)
১৯. হানাফি মাজহাব অনুযায়ী মুক্তাদি কোন অবস্থাতেই ইমামের পেছনে কোন ধরনের কিরাত পড়বে না। যার আলোচনা পেছনে গেছে।
২০. সুরা বাকারাঃ ১৩৬। 
২১. সুরা আলে ইমরান: ৬৪।
২২. হানাফি মাজহাব মতে, এসব নামাজে ইমামের জন্য উচ্চস্বরে কিরাত পড়া ওয়াজিব। (হেদায়া ১/১১৫)
২৩. হানাফি মাজহাব মতে, কিরাতই পড়বে না। যার আলোচনা পূর্বে গেছে।
২৪. হানাফিদের মতে ওয়াজিব। সুতরাং ভিন্নরূপ হলে ওয়াজিব তরক করার কারণে সেজদায়ে সাহু লাগবে। (হোদায়া ১/১৫৮)
২৫. এ বিষয়টি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের মাঝে অনেকেই নামাজে এমনভাবে কিরাত ও দুআ-দরুদ এবং তাসবিহ পড়ে যে, ঠোঁটই নড়ে না। এভাবে পড়লে কিরাত শুদ্ধ হবে না। আর কিরাত শুদ্ধ না হলে নামাজও শুদ্ধ হবে না।
২৬. হানাফিদের মতে, নামাজে কোন সিকতা তথা চুপ থাকার বিষয় নেই। সুতরাং উক্ত চার জায়গায় চুপ থাকবে না
২৭. হানাফিদের মতে, আমিন আস্তে বলবে। ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামাজি ব্যক্তি সকলেই আমিন আস্তে বলবে।
২৮. সহিহ মুসলিম: ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭১, সুনানে নাসাঈ ২/১৭৬।
২৯. সুরা তীন: ৮।
৩০. সুরা কিয়ামাহ: ৪০।
৩১. সুরা আরাফ: ১৮৫।
৩২. সুরা আলা: ০১


****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url