মোবাইল ব্যবহারের ইসলামিক রীতিনীতি || মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় যে বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত!

>>> Welcome to the website of Mohammadia Foundation>>>





মোবাইলে কথা বলার সময় প্রথমে যা করতে হবে


কারো কাছে মোবাইল করার সময় সর্বপ্রথম আপনাকে যে বিষয়টির প্রতি সবিশেষ খেয়াল রাখতে হবে তাহলো খুব সতর্কতার সাথে বাটন টিপা, যাতে ভুল নম্বরে টিপ না পড়ে। এতদ্‌সত্ত্বেও কল ঢুকানোর জন্য সেণ্ড বাটন টিপার পূর্বে আরেকবার নম্বরগুলো চেক করে নেওয়া। এমন যেন না হয়, আপনার অসতর্কতার দরুণ কারো প্রয়োজনীয় ঘুম নষ্ট হলো, কোনো অসুস্থ রোগী কষ্ট পেল কিংবা অযথাই কেউ বিরক্ত হলো ।

ভুল নম্বরে কল চলে গেলে


সতর্কতা সত্ত্বেও নম্বর টিপতে ভুল হয়ে গেলে এবং অন্য নম্বরে কল চলে গেলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। বলবেন, ভাই! দুঃখিত । ভুলবশতঃ আপনার কাছে কল চলে গেছে। কিছু মনে করবেন না ।

ভুলে কারো কল চলে আসলে


ভুলবশতঃ কারো কল যদি আপনার মোবাইলে চলে আসে তাহলে বিরক্ত না হয়ে ভদ্রতার সাথে সুন্দরভাবে ভুলের বিষয়টি তাকে জানিয়ে দিবেন। এবং এভাবে জানিয়ে দেওয়াটাই হবে আপনার জন্য উত্তম আখলাকের পরিচায়ক। আর যদি কলকারী ব্যক্তি ভুলে কল করার জন্য আপনার নিকট দুঃখ প্রকাশ করে এবং বলে যে— ‘ভাই! ভুলবশতঃ আপনার কাছে কল চলে গেছে। কিছু মনে করবেন না' তখন আপনারও উচিত তাকে এমন কথা বলা যদ্বারা তার মন খুশি হয়ে যায় এবং ভুলে কল অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে তার মনে ‘অন্যকে অযথা বিরক্ত করার জন্য যে অনুশোচনা' সৃষ্টি হয়েছে তা একেবারেই পরিস্কার হয়ে যায়। মনে রাখবেন, মানুষকে আপনি যতভাবে যতবেশি শাস্তি ও আরাম পৌঁছাতে পারবেন, যতবেশি তাকে খুশি করতে পারবেন, মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহ আপনার উপর ততবেশি খুশি হবেন এবং ততবেশি সাওয়াব আপনাকে দান করবেন।

অবশ্য কারো ব্যাপারে যদি জানতে পারেন যে, আপনাকে বিরক্ত ও হয়রানি করার জন্য ইচ্ছে করেই অযথা সে রং নম্বরের পিছনে পড়েছে তবে যে কোনোভাবে এ অন্যায় কাজ থেকে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করা শুধু জায়েযই নয়, উচিতও বটে!

মোবাইলে কথা বলার সময় ২য় পর্যায়ে যা করতে হবে


মোবাইলে কথা বলার সময় সঠিক নম্বরে কল ঢুকানোর পর দ্বিতীয় যে কাজটি আপনাকে করতে হবে তাহলো, সালাম আদান-প্রদান পর্ব সেরে স্পষ্টভাবে নিজের পরিচয় দেওয়া।

পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বদা কেবল নাম বলাই যথেষ্ট নয়। বরং যেভাবে পরিচয় দিলে রিসিভকারী সহজেই চিনতে পারবেন সেভাবেই পরিচয় দেওয়া। যেমন অনেক সময় নিজের নাম না বলে পিতার পরিচয় দিলে রিসিভকারী সহজেই চিনতে পারেন। আবার অনেক সময় ছেলের পরিচয় দিলেও চিনতে সহজ হয়। মোটকথা যেভাবে রিসিভকারী অতি সহজে কলকারীর পরিচয় পেয়ে যায় সেভাবেই পরিচয় দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতাকে খুবই অপছন্দ করতেন। যেমন এক হাদিসে সাহাবি জাবের রা. বলেন, একদা আমি আমার পিতার ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে দরজায় নক করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম- 'আমি'। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আমি আমি!!

‘আমি আমি' বলার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া াল্লামের ভাবখানা এমন ছিল যে, আমার (পরিচয়ে প্রদানের ক্ষেত্রে) শুধু 'আমি' বলা তিনি অপছন্দ করেছেন। [বোখারি, মুসলিম, মিশকাত, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৪০০]

বর্ণিত হাদিসে 'আমি বলার মাধ্যমে সাক্ষাৎপ্রার্থীর পরিচয় সুস্পষ্ট হয়নি বিধায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু 'আমি' বলাকে অপছন্দ করেছেন। এবং এর মাধ্যমে তিনি এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা থাকা উচিত নয়। তাই যিনি ফোন করবেন তার দায়িত্ব হলো, নিজের সুস্পষ্ট পরিচয় দেওয়া।

পরিচয় না দিয়ে কিংবা অস্পষ্ট পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করলেও অনেক সময় রিসিভকারীকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। যেমন, ধরুন কেউ অন্য কারো মোবাইল থেকে ফোন করল। এক্ষেত্রে কখনো দেখা যায়, যার মোবাইল থেকে ফোন করা হলো, তার নম্বর ওই ব্যক্তির মোবাইলে সেভ করা থাকে। এমতাবস্থায় ফোনকারী যদি নিজের সুস্পষ্ট পরিচয় না দেন এবং রিসিভকারী ব্যক্তি যার মোবাইল থেকে কল আসল তাকে মনে করে কথা বলতে শুরু করেন তাহলে নিশ্চয়ই তিনি ভুল প্রকাশ পাওয়ার পর ব্রিতবোধ করবেন। এখানে যিনি ফোন করেছেন তিনি যদি সালাম পর্ব শেষ করে প্রথমেই পরিচয় পর্বের কাজটা সুন্দরভাবে সেরে নিতেন তাহলে হয়তো এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না ।

মোবাইলে কথা বলার সময় ৩য় পর্যায়ে যা করতে হবে


মোবাইলে কথা বলার সময় তৃতীয় পর্যায়ে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তাহলো, রিসিভকারী আপনার উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কিনা তা যে কোনো উপায়ে নিশ্চিতভাবে জেনে নিতে হবে। কন্ঠস্বর শুনে চিনতে অসুবিধা হলে প্রয়োজনে জিজ্ঞেস করে হলেও জেনে নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, তিনিই আপনার উদ্দিষ্ট ব্যক্তি। অন্যথায় এমনও হতে পারে যে, আপনি রিসিভকারীকে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি মনে করে কথা বলতে শুরু করলেন অথচ পরে দেখা গেল সে অন্য ব্যক্তি। ফলে রিসিভকারী যেমন বিব্রত হয় তেমনি পরে ফোনকারীকেও লজ্জিত হতে হয়।

মোবাইলে কথা বলার সময় ৪র্থ পর্যায়ে যা করতে হবে


সালাম আদান প্রদান, সুস্পষ্ট পরিচয় দান ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর চতুর্থ পর্যায়ে আপনাকে যা করতে হবে তাহলো, লম্বা কথা বলার প্রয়োজন হলে সেজন্য আনুমানিক যে পরিমাণ সময় লাগতে পারে তা উল্লেখ করে রিসিভকারী থেকে তার অনুমতি নিয়ে নেওয়া। যেমন, উদাহরণস্বরূপ এভাবে বলা যেতে পারে যে, ভাই! আমি আপনার সাথে ৪/৫ মিনিট কথা বলতে চাই। এখন আপনার সুযোগ হবে কি ?

যদি রিসিভকারী সুযোগ দেয় তবেই বলতে হবে। অন্যথায় তিনি কখন অবসর হবেন তা জেনে নিয়ে সেই সময় কল করতে হবে। এটাই হলো ভদ্রতা। এটাই হলো কথা বলার গুরুত্বপূর্ণ আদব ।

পাকিস্তানের শরয়ি আদালতের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং বর্তমান বিশ্বের খ্যাতনামা আলেম আল্লামা তাক্বী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন, আমার পিতা আল্লামা মুফতি শফি সাহেব রহ. বলতেন— বর্তমানে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার একটি যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে। যার নাম ফোন। এটি এমন এক যন্ত্র যার মাধ্যমে অন্যকে যত ইচ্ছা কষ্ট দেওয়া যায়। যেমন কেউ কারো কাছে ফোন করে দীর্ঘ আলাপ জুড়ে দিল। অথচ সে একবারও খেয়াল করল না যে, আমি যার কাছে ফোন করলাম সে এখন কোনো জরুরি কাজে ব্যস্ত নেই তো? তার এখন লম্বা কথা বলার মতো সময় আছে তো ?

এই মনীষী তার অমরাস্থ তাফসীরে মারেফুল কোরআনে আরো বলেন, ফোন করার আদবসমূহের মধ্যে এটিও একটি আদব যে, কারো সাথে যদি লম্বা কথা বলতে হয় তাহলে তার কাছে বলে নেওয়া উচিত যে, আমার একটু দীর্ঘ আলাপ আছে। এতে আনুমানিক এত মিনিট সময় লাগতে পারে। যদি আপনি এখন অবসর থাকেন তাহলে এখনই বলব। আর যদি এখন ব্যস্ত থাকেন তাহলে একটি সময় বলে দিন তখন কথা বলে নিব। আল্লামা মুফতি তাক্বী সাহেব বলেন, আব্বাজান এ আদবসমূহ লিখে এর উপর আমল ও করে গেছেন । [দুসরু কো তাকলীফ মত্ জিয়ে, পৃষ্ঠা : ৩৭]

মোটকথা, প্রতিটি ফোনকারীকে একথা ভালো করে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি যে, আমি যার সাথে এখন কথা বলব তার ব্যস্ততার পরিমান কতুটুক? বিশেষ করে বড় ও মহান ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার সময় এ বিষয়ের প্রতি বেশি লক্ষ্য রাখা দরকার। কারণ ব্যক্তি যত বড় তার সময় তত মূল্যবান। আর তাদের মূল্যবান সময় অনেকে নষ্ট করলেও আখলাক তথা উন্নত চরিত্রের কারণে তারা তা প্রকাশ করেন না । কিন্তু আমরা অনেকেই নির্বুদ্ধিতার কারণে এটাকে সুযোগ মনে করি। শুধু তা-ই নয়, অনেককে তো এ নিয়ে গর্ব করে বলতে দেখা যায় যে- আমি অমুকের সাথে প্রায়ই লম্বা লম্বা কথা বলি!

আফসোস! তারা যদি আসল ব্যাপারটা বুঝত!! সেই সাথে তারা যদি একথাটিও অনুধাবন করতে পারত যে, বড়দের সময় নষ্ট করা মানে গোটা জাতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।

মোবাইলে কথা বলার সময় ৫ম পর্যায়ে যা করতে হবে


মোবাইলে কথা বলার সময় ৫ম পর্যায়ে যা করতে হবে তাহলো, যে উদ্দেশ্যে আপনি ফোন করেছেন তা সাজিয়ে গুছিয়ে মধ্যম আওয়াজে স্পষ্ট করে বলা। আপনার আওয়াজ যেন অবশ্যই কর্কশ বা এত উঁচু না হয় যদ্বারা রিসিভকারীর কষ্ট বা বিরক্তির উদ্রেক হয়। আবার এত আস্তেও যেন না হয় যে, কথা বুঝাই কষ্টকর হয়। বরং আপনার কথা হবে, ভদ্রতা ও শালীনতার সাথে হাসিমুখে, হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে। পাসের সুবিধা নেওয়ার জন্য বা এক মিনিটের মধ্যে সব কথা শেষ করার জন্য অনেকে মোবাইলে এত দ্রুত কথা বলেন যে, অনেক সময় কিছুই বুঝা যায় না। কিংবা বুঝা গেলেও ভুল বুঝা হয়। এর ফলে ফোন করার উদ্দেশ্যই কেবল বিফলে যায় না, অনেক ক্ষেত্রে ফোনকারী বা রিসিভকারী অথবা কখনো কখনো উভয়কেই নানাবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মতো একসাথে মিলিয়ে কথা বলতেন না। বরং তিনি কথা বলতেন- স্পষ্ট করে, পৃথক পৃথকভাবে। ফলে উপস্থিত যে কেউ তার কথা সহজেই মুখস্থ করে নিতে পারত। [শামায়েলে তিরমিজি : ১৮]

সাহাবি আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অনেক সময়) কথাকে তিনবার বলতেন। যেন শ্রোতারা কথাটি ভালোভাবে বুঝে নিতে পারে ।

সংখ্যায় কম হলেও কিছু সংখ্যক লোক এমন আছে যাদের মুখ থেকে দু'একটি বাক্য শুনার সাথে সাথে তাদের অবশিষ্ট জরুরি কথাটুকু শুনার আগ্রহও আর বাকী থাকে না। পক্ষান্তরে কিছু লোক এমনও পাওয়া যায় যাদের বিনয়-নম্রতা, বলার ভঙ্গি, শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার এতই সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক হয় যে, তাদের সাথে কথা বললে মন খুশি হয়ে যায় এবং আরো বেশি কথা বলতে মনে ইচ্ছা জাগে । এমন লোক পেলে তাদের কাছ থেকে শিখে নেওয়া দরকার যে, কথা কীভাবে বলতে হয়!

মোবাইলে কথা বলার সময় সবশেষে যা করতে হবে


মোবাইলে কথা বলা শেষ হওয়ার পর সবশেষে আপনাকে যা করতে হবে তাহলো, সালাম দিয়ে কথা সমাপ্ত করা। এক্ষেত্রে যিনি ফোন করেছেন তিনিই সালাম দিবেন। এটাই নিয়ম। তবে রিসিভকারী যদি আগে সালাম দিয়ে দেয় তবে ফোনকারী শুধু উত্তর দিবেন। তাকে আর পুনরায় সালাম দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

উল্লেখ্য যে, কথা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সালামের পূর্বে ফোনকারী বা রিসিভকারী যদি শুকরিয়া আদায় বা দোয়া হিসেবে আল্লাহ হাফেয, জাযাকাল্লাহ, ধন্যবাদ ইত্যাদি বলে তাহলে তাতে দোষের কিছুই নেই। মোটকথা, সর্বশেষ বাক্য সালাম হতে হবে। অনেকে শুধু উপরোক্ত বাক্যগুলোর যে কোনো একটি দিয়েই কথা শেষ করেন; সালাম বলেন না, এটা ঠিক নয় ।

সালামের জবাব শেষ হওয়ার পূর্বে লাইন কেটে দিবেন না


অনেককে দেখা যায়, মোবাইলে কথা বলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কথা শেষ হওয়ার পর সালাম শুনে বা সালাম দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লাইন কেটে দেয়। এরূপ করা মোটেও উচিত নয়। কেননা এতে সালাম দাতাকে সালামের উত্তর শুনিয়ে দেওয়া যায় না। অথচ সালাম দাতাকে সালামের উত্তর শুনিয়ে দেওয়া জরুরি। আমার মনে হয়, কেউ কেউ 'মিনিট শেষ হয়ে গিয়ে এখনই নতুন মিনিট শুরু হয়ে যাবে- মোবাইল স্ত্রীনে এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে এমনটি করে থাকেন। অর্থাৎ সালামের জবাব না শুনে বা না দিয়েই লাইন কেটে দেন। কিন্তু মনে রাখবেন, শরিয়তের কোনো নির্দেশ পালন বা একটি সুন্নত আদায়ের প্রতিদান দুনিয়াবী এ সামান্য ক্ষতির চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশি লাভের। আমার বিশ্বাস, সালামের জবাব শুনিয়ে দেওয়া জরুরি- এই বিধান পালন করার নিয়তে কেউ যদি দুনিয়ার সামান্য ক্ষতি মেনে নেয় তাহলে দয়াময় মহান আল্লাহ তাকে দুনিয়াতেই এর বিনিময়ে অনেক বেশি জাযা দিবেন। আর আখেরাতে তো এর অফুরন্ত সাওয়াব থাকবেই। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।

বড়দের সাথে কথা বলার সময় আগে ফোন রাখবেন না


বড় ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার সময় আপনি কখনোই আগে লাইন কেটে দিবেন না। কেননা এরূপ করা ভদ্রতা ও আদবের পরিপন্থী। এটা যেন এমন হলো যে, আপনি এবং কোনো সম্মানিত ব্যক্তি কথা বলার জন্য কোথাও একত্রিত হলেন অতঃপর প্রয়োজনীয় কথা শেষ হয়ে গেলে আপনি তাকে সেখানে রেখেই আগে উঠে চলে গেলেন ।

ভদ্রতার সুযোগ না নেওয়াই ভদ্রতার পরিচয়


অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কোনো সম্মানিত ব্যক্তির কাছে ফোন করল । কিন্তু তাকে পেল না। পরে এ সম্মানিত ব্যক্তি যখন তার মোবাইলে মিসকল দেখতে পেলেন বা অন্য কোনো ভাবে বুঝতে পারলেন যে, কেউ তাকে ফোন করেছিল তখন তিনি সাধারণত ভদ্রতার খাতিরেই কলব্যাক করে থাকেন । এক্ষেত্রে প্রথম ফোনকারীর উচিত ছিল লাইন কেটে দিয়ে পুনরায় ফোন করা। ভদ্রতার সুযোগ নিয়ে সম্মানিত ব্যক্তি বা বড়দের ‘ব্যাক করা কল' রিসিভ করা ঠিক নয়। অবশ্য কারো সাথে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক থাকলে ভিন্ন কথা।

কাউকে ডেকে দেওয়ার জন্য যেভাবে বলা উচিত


কাউকে ডেকে দিতে বলার জন্য খুবই নম্রতা ও ভদ্রতার সাথে সুন্দরভাবে অনুরোধ করা উচিত। যেমন, এভাবে বলা যেতে পারে যে, ভাই! অমুকের সাথে আমার একটু কথা ছিল। যদি আপনার হাতে সময় থাকে তাহলে মেহেরবানী করে তাকে একটু ডেকে দিলে খুব ভালো হতো ।

ডেকে দিতে বলার জন্য এমনভাবে বলা উচিত নয় যদ্বারা হুকুম বুঝা যায়। এমনভাবে ভদ্রভাবে বলার পরও কেউ যদি কোনো অসুবিধার কারণে ডেকে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তবে সেজন্য মনক্ষুন্ন হওয়া বা ডেকে দিতে পীড়াপীড়ি করাও ঠিক নয়। বরং এমতাবস্থায় রিসিভকারীর কাছে খবরটা বলে দিলেই ভালো হয়। এতে হয়তো তার জন্য সুবিধা হবে। তিনি সময়মতো সুযোগ করে খবরটা বলে দিবেন। হ্যাঁ, বিশেষ কোনো অসুবিধা না থাকলে রিসিভকারী যদি একটু কষ্ট করে ফোনকারীর কাঙ্ক্ষিত লোকটিকে ডেকে দেন তাহলে অবশ্যই তিনি সাওয়াবের অধিকারী হবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে অবহেলা করে বিনা কারণে ডেকে না দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যা সাধারণত বিভিন্ন অফিস-বয় বা পি,এ'রা করে থাকে। তবে এখনই ডেকে দিতে রিসিভকারীর কোনো গ্রহণযোগ্য অসুবিধা থাকলে ফোনকারীকে ধমক না দিয়ে সুন্দরভাষায় পরবর্তীতে ফোন করার জন্য বলে দিবেন।

অনেক সময় ফোনকারী 'অমুক ব্যক্তির সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে- একথা বলে রিসিভকারীকে দিয়ে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে ডেকে আনতে বাধ্য করেন। মনে রাখবেন, এরূপ করাও অন্যায় ও গুনাহের কাজ । মোটকথা, এক্ষেত্রে কাউকে কষ্ট দেওয়া যেমন উচিত নয়, তেমনি অবহেলা করাও ঠিক নয়। তাই উভয়পক্ষের জন্যই নিজ নিজ দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়া এবং দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হওয়া জরুরি। এতে উভয়ের কষ্টই লাঘব হবে।

যদি অন্য সময় ফোন করতে বলে


কাউকে কখনো ফোন করলে কোনো অসুবিধার কারণে ফোনকারীর সাথে রিসিভকারীর কথা না-বলার পূর্ণ এখতিয়ার আছে। কেননা কোনো ওজর থাকলে সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুমতি শরিয়ত দিয়েছে। সেই সাথে অনুমতি না পেলে সাক্ষাৎপ্রার্থীকেও ফিরে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে। সুতরাং কাউকে যদি পরে ফোন করতে বলা হয় তাহলে এটা তার অন্যায় হবে না। তাই এক্ষেত্রে ফোনকারীর উচিত হলো, তার প্রতি কোনোরূপ খারাপ ধারণা পোষণ না করে পরে সুযোগ মতো ফোন করা । চাই সে যত সাধারণ লোকই হোক না কেন ।
অবশ্য কোনো ওজর না থাকা অবস্থায় কোনো মুসলমান যদি আপনার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে তাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া আপনার কর্তব্য। শুধু তাই নয়, ওজরবিহীন অবস্থায় ফোনকারী ব্যক্তি আপনার সাথে কথা বলার অধিকারও রাখে। তাই বিনা কারণে তার সাথে কথা না বলা বা পরে ফোন করতে বলা অনুচিত কাজ।

ভুলে চাপ পড়ে আপনার মোবাইলে কল চলে এলে


অনেক সময় দেখা যায়, মোবাইল রিসিভ করলে অন্য প্রান্ত থেকে কেউ কোনো কথা বলে না। এভাবে ১০/১৫ সেকেণ্ড অতিবাহিত হয়ে গেলে বুঝবেন, ইচ্ছাকৃতভাবে এ কলটি করা হয়নি। বরং বেখেয়ালে চাপ পড়ে কল হয়ে গেছে। তাই মোবাইলের মালিককে আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য তাড়াতাড়ি লাইন কেটে দিবেন। এটাই হলো নিয়ম, এটাই হলো নৈতিক দায়িত্ব।

এসব ক্ষেত্রে অনেককে দেখা যায়, রিসিভ করে চুপচাপ বসে থাকে! দুই/চার/দশ মিনিট চলে গেলেও লাইন কাটে না। কিছুদিন আগে এক ভাই বড় গর্ব করে আমার কাছে বললেন, এক ব্যক্তি গতরাত দশটায় আমার কাছে ফোন করে। কিন্তু কোনো কথা বলে না। আমি লাইন কেটে না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। শেষ রাতে উঠে দেখি, এখনও লাইন চালু আছে! আমি দুষ্টমি করে তখনও লাইন কাটিনি। অতঃপর ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর সকাল ১০টায় আমি লাইন কেটে দেই !!

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! বলুনতো, এটা কোন্ ধরনের নৈতিকতা আর কোন্ ধরনের মানবতা? পোস্ট পেইড সংযোগ হওয়ার কারণে ঐ ব্যক্তি হয়তো সেদিন ব্যাপারটি বুঝতে পারেনি। কিন্তু মাস শেষে তার বিল যখন ৮/১০ গুণ বেশি আসবে তখন তার অবস্থাটা কী দাঁড়াবে!! অথচ রিসিভকারী ব্যক্তি ইচ্ছে করলেই তাকে এ মারাত্মক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারত ।
মনে রাখবেন, ইচ্ছা করে কোনো মুসলমানের ক্ষতি করা জায়েয নেই। তাই এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা সবার জন্য জরুরি।

উলামায়ে কেরামের সাথে যেভাবে কথা বলবেন


নবী-রাসুলগণের পর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সমস্ত মানুষের মধ্যে সব চাইতে মর্যাদাবান ও সম্মানিত মানুষ হলেন উলামায়ে কেরাম। একজন আলেম ও একজন গাইরে আলেম অর্থাৎ যিনি আলেম নন তাদের দু'জনের মধ্যে মর্যাদার ব্যবধান কত বেশি তা স্বয়ং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন । তিনি বলেছেন- আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর এত বেশি যেমন পূর্নিমা রাত্রিতে চন্দ্রের মর্যাদা অন্যসকল নক্ষত্রে উপর। একটু চিন্তা করে দেখুন, আবেদ তথা ইবাদতকারী আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির চেয়ে একজন আলেমের মর্যাদা যদি এত বেশি হয় তাহলে সাধারণ মানুষ— যারা ইবাদত-বন্দেগী করে না বা করলেও ততটা করে না- তাদের চেয়ে একজন আলেমের মর্যাদা ও সম্মান কত বেশি হবে?! কিন্তু এতদ্‌সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় সরাসরি বা মোবাইল ফোনে উলামায়ে কেরামের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁদের উঁচু মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখি না। বরং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যেভাবে কথা বলি তাঁদের সঙ্গেও সেভাবে কথা বলি ।

অনেক সময় উলামাদের সামনে হাত নেড়ে কথা বলি, নিজের কথাকে তাদের কথার উপর প্রাধান্য দিতে চেষ্টা করি। এমনকি মাঝে মধ্যে এত জোরে কথা বলি যে, আমাদের কথার আওয়াজে তাঁদের কথা চাপা পড়ে যায়। মনে রাখবেন, এভাবে কথা বলা আদব পরিপন্থী এবং আমাদের জন্য বিরাট বড় ক্ষতির কারণ । পবিত্র কোরআনের সূরা হুজুরাতের ২নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ التي وَلَا تَجْهَرُوا له بالقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ (٢) (الحجرات : ٢)

“হে ঈমানদানরগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠ-স্বরের উপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং একে অপরের সাথে যেভাবে উঁচুস্বরে কথা বল তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা টেরও পাবে না ।”

এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে মুফতি শফী সাহেব রহ. মাআরেফুল কোরআনে বলেন, খোদাভীরু আলেমগণ যেহেতু নবীগণের উত্তরসূরি তাই তাঁদের মজলিসে উঁচুস্বরে কথা বলাও উক্ত নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে। তাই তাঁদের সাথে এত উঁচুস্বরে কথা বলবে না যাতে তাঁদের আওয়াজ চাপা পড়ে যায়। [মাআরিফুল কোরআন ঃ ৮/১০১]

মোটকথা, উলামায়ে কেরামের সাথে কথা বলার সময় বিনয়-নম্রতা ও ভদ্রতার সাথে এমনভাবে কথা বলতে হবে যাতে তাদের সুমহান মর্যাদা এতটুকু ম্লান না হয়। চাই মোবাইলে হউক চাই সরাসরি হউক।

জামাতের সময় কল করবেন না


অনেক সময় আমরা বেখেয়ালে জামাতের সময় কল করে থাকি। অথচ এমনটি করা ঠিক নয়। কারণ হতে পারে মোবাইল বন্ধ করতে সে ভুলে গেছে। আর আমি কল করে তাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিলাম এবং তাকেসহ সব মুসলিদের নামাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলাম। নষ্ট করে দিলাম তাদের খুশু-খুজু! বড় আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ইমাম সাহেবদের মোবাইলেও অনেক সময় কল আসতে দেখা যায়। অথচ যিনি কল করেছেন তার তো জানা থাকার কথা যে, তিনি একজন ইমাম। এতদ্‌সত্ত্বেও ঠিক নামাজের জামাতের সময় তার নম্বরে তিনি কিভাবে কল দিলেন? আসলে ব্যাপার হলো, অধিকাংশ সময়ই আমরা ভেবে দেখি না যে, এখন আমি যার কাছে কল করতে যাচ্ছি, তিনি এখন কী অবস্থায় থাকতে পারেন। সত্যি বলতে কি, যদি আমরা কল করার পূর্বে এ বিষয়টি একটু খেয়াল করতাম তাহলে কারো কোনো সমস্যা হতো না ।

ফজরের জামাত শেষ হতেই কল না করা


বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির অফার পেয়ে অনেকে ফজরের জামাত শেষ হতে না হতেই কল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা মনে করেন, আমাদের নামাজ যেমন শেষ হয়ে গেছে তেমনি সবার নামাজই শেষ হয়ে গেছে। অথচ এমনটি না হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা সময়ের পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন জেলায় ফজরের জামাত এক সঙ্গে শুরু হয় না, বরং পাঁচ/দশ মিনিট এদিক সেদিক হয়। তাছাড়া কেরাত ছোট বড় তিলাওয়াত করার কারণেও সব মসজিদের নামাজ এক সঙ্গেও শেষ হয় না। উপরন্ত ফজরের নামাজ আদায় করে অনেকেই তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেন। তাই আমাদের উচিত হলো, ফজরের নামাজের পরপরই কল না করে অন্ততঃ পনের বিশ মিনিট পর কল করা। যাতে কারো কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন।

যথাসময়ে কল করুন


যারা সময়-সচেতন তাদের প্রত্যেকেরই বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য সময় নির্ধারিত থাকে। যেমন ঘুমের সময়, আরামের সময়, খাবারের সময়, নামাজের সময় ইত্যাদি। এছাড়া খুব বেশি ব্যস্ত মানুষ তাদের অনেকেরই ফোনে কথা বলার একটি নির্ধারিত সময় থাকে। তাই এমন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলতে হলে অবশ্যই তাদের ‘ফোনে কথা বলার নির্ধারিত সময়' জেনে নেওয়া উচিত। অথবা কোন্ সময় কথা বলতে তাদের সুবিধা হবে তা জেনে সেই সময় ফোন করা উচিত। এমন যেন না হয় যে, আমি আমার সময়মতো ফোন করলাম অথচ তাদের ঘুম, আরাম, নামাজ বা জরুরি কাজে ব্যাঘাত ঘটল।

আমাদের যেন এমন ভুল কখনো না হয়

আমরা প্রায় সময় একটি মারাত্মক ভুল করে থাকি। তাহলো, ফোন রিসিভ করার পর ফোনকারী যখন জিজ্ঞেস করেন, অমুক ব্যক্তি আছেন? তখন কেউ কেউ এতটুকু শুনেই তড়িঘড়ি করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে খবর দিয়ে বসেন যে, আপনার ফোন এসেছে। এমনকি অনেক সময় ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেন কিংবা খানা খাওয়া অবস্থায় তার হাতে মোবাইল তুলে দেন। অথচ অনেক সময় ফোনকারীর উদ্দেশ্য থাকে তার উপস্থিতি জানা বা কারো মাধ্যমে তার কাছে কোনো সংবাদ পৌঁছানো। এরূপ করার ফলাফল এই দাঁড়ায় যে, অনর্থক সে দু'জন লোককে কষ্ট দিল ।

মোটকথা, ফোনকারী যখন জিজ্ঞেস করেন, অমুক আছেন কিনা? তখন তার কাছ থেকে রিসিভকারীর একথা জেনে নেওয়া উচিত যে, তাকে ডাকতে হবে নাকি অন্য কিছু করতে হবে ?

মোবাইলে সব কাজ করা উচিত নয়


বর্তমানে মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার কারণে আমরা এখন সব কাজই মোবাইলে সারার চেষ্টা করি। অথচ মোবাইল ফোনকে যে কোনো প্রয়োজনেই প্রথম এবং একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। বরং যেসব কাজ পত্রের মাধ্যমে করা সম্ভব সেগুলো পত্রের মাধ্যমেই সারা উচিত। কেননা ফোনে এমন কিছু বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয় চিঠি-পত্রের মাধ্যম অবলম্বন করলে সেগুলো থেকে সহজেই বাঁচা যায়। যেমন মনে করুন, আপনি যাকে ফোন করলেন তিনি হয়তো কোনো পেরেশানিতে আছেন। যার কারণে এখন তিনি কারো সাথে কথা বলতে প্রস্তুত নন। অথবা তিনি এখন হয়তো খাবার খাচ্ছেন কিংবা তিলাওয়াত করছেন বা বিশ্রাম নিচ্ছেন; যে অবস্থায় আপনি সরাসরি গেলেও হয়তোবা তিনি আপনাকে সময় দিতেন না বা অন্তত কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তার চলমান কাজ থেকে ফারেগ হয়ে সময় দিতেন। কিন্তু ফোন করার কারণে তাকে তৎক্ষণাৎ ওই অবস্থায়ই আপনাকে সময় দিতে হয় এবং কথা বলতে হয়। পক্ষান্তরে ফোন না করে যদি চিঠি দেওয়া হতো তাহলে তিনি প্রয়োজনীয় কাজ থেকে ফারেগ হয়ে ধীর- সুস্থে চিন্তা ভাবনা করে তার সুযোগমতো পত্র পড়ার এবং তার উত্তর দেওয়ার সুযোগ পেতেন। তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ফোনের কাজ পত্রের মাধ্যমে করা উচিত।

অবশ্য কেউ কেউ আবার চিঠির উত্তর লেখার ঝামেলা এড়াতে ফোনেই কথা বলা পছন্দ করেন। তাই তাদের কাছে চিঠি না লিখে ফোনেই কাজ সেরে নেওয়া উচিত।

যানবাহনে যেভাবে কথা বলবেন


অনেককে দেখা যায়, বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদি যানবাহনে বসে কল রিসিভ করে এত জোরে কথা বলতে থাকেন যে, আশেপাশের লোকজনের তাতে কষ্ট হয়। অন্যের অসুবিধার দিকে খেয়াল না করে এভাবে কথা বলা মোটেও উচিত নয়। বরং যানবাহনে বসে ফোনে কথা বলতে হলে এতটা নীচু আওয়াজে শালীনতা বজায় রেখে কথা বলা উচিত যাতে অন্য কোনো যাত্রীর কোনোরূপ অসুবিধা না হয় এবং তারা কোনো ধরনের ব্রিতবোধ না করেন।

প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটি জরুরি কথা বলে রাখা দরকার যে, অনেক সময় অনেক চালককে গাড়ী চালানো অবস্থায় অন্যের সাথে মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায়। এসময় বাধ্য হয়েই তাকে এক হাতে মোবাইল ও অন্য হাতে গাড়ি চালানোর কাজ করতে হয়। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তাই এ ধরনের কাজ থেকে চালকদেরকে অবশ্যই বিরত থাকা দরকার। হ্যাঁ, যদি একান্ত প্রয়োজনে কোনো কথা মোবাইলে বলতেই হয় তাহলে রাস্তার পাশে কোনো নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামিয়ে বলা উচিত।

ফ্রী অফার পেলে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে কি


ফ্রী বা কম রেটে কথা বলার অফার পেলে অনেকের মাঝে দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আর সে সুযোগে অনেক অপ্রয়োজনীয় কথাও এসে যায়। অথচ খুব ভালোভাবে স্মরণ রাখা দরকার, মানুষের প্রতিটি কথারও হিসেব হবে। দুই কাঁধের দুই ফেরেশ্তা- কিরামান কাতেবীন— কিন্তু আমাদের আমলনামায় সবকিছুই লিপিবদ্ধ করছেন! তাই আমাদের উচিত মেপে মেপে কেবল প্রয়োজনীয় কথাগুলোই বলা।

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনা প্রয়োজনে কোনো কথা বলতেন না। বোখারি শরিফে বর্ণিত অপর এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে” । সত্যি বলতে কি, প্রিয় নবীজির এই হিদায়াতকে কেউ যদি অনুসরণ করে চলতে থাকে তবে সে নিজেই অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বাঁচতে পারবে। আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন ।



কাউকে কখনো ফোন করলে যদি দেখা যায় যে, সে রিসিভ করছে না এবং ফোনকারীরও ধারণা হয় যে, সে রিংটোনের আওয়াজ শুনেও হয়তো কোনো ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবেই রিসিভ করছে না বা করতে পারছে না তখন বারবার কল করে তাকে বিরক্ত না করে পরে অন্য সময়ে তা সেরে নেওয়া উচিত।



Thank you. If you like this article, please share it with others and stay tuned with us. May Allah help you....

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url