মোবাইল ব্যবহারের ইসলামিক রীতিনীতি || গভীর রাতে বা অসময়ে বারবার কল করা সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশ কি?

>>> Welcome to the website of Mohammadia Foundation>>>




গভীর রাতে কল করা


বর্তমানে মোবাইল কোম্পানিগুলো যত অফার দিচ্ছে তার অধিকাংশই শুরু হয় রাত বারটা থেকে। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য কেউ কেউ রাত বারটার পর কিংবা আরো গভীর রাতে পরিচিতজনদের কাছে ফোন করে থাকে। অথচ আশ্চর্যের কথা হলো, পয়সা বাঁচানোর তাগিদে একটি বারও সে ভেবে দেখে না যে, আমি যার কাছে কল করছি তিনি হয়তো এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন। অফার চলাকালে কল দেওয়ার দ্বারা আমার কয়টা পয়সা বাঁচবে ঠিকই, কিন্তু তার তো আরামের নিদ্রা ভঙ্গ হলো! পূর্ব পরিচিতি কিংবা অধিক ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি হয়তো কিছু বলবেন না, কিন্তু তাই বলে একজন মানুষকে এভাবে কষ্ট দেওয়া কি উচিত?

আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ. লিখেছেন, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কারো নামাজ, ঘুম বা জরুরি কাজের সময় ফোন করা জায়েয নেই। কারণ এভাবে ফোন করার মাধ্যমে তাকে ঐরূপ কষ্টই দেওয়া হয় যেমন কষ্ট দেওয়া হয়, অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ ও তার স্বাধীনতা বিনষ্টকরণের মাধ্যমে মোটকথা, মোবাইল কোম্পানিগুলোর অফার গ্রহণ করতে গিয়ে এভাবে যখন তখন ফোন করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া অবশ্যই পরিহার যোগ্য। তাছাড়া ইশার নামাজের পর দুনিয়াবি কথাবার্তা বলাও শরিয়ত পছন্দ করে না। যেমন সাহাবি আবু বারযা রা. বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইশার নামাজের পূর্বে ঘুমানো এবং ঈশার নামাজের পর (দুনিয়াবি) কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। তবে যদি কারো নিশ্চিত জানা থাকে যে, আমি যার কাছে কল করছি তিনি এখন জাগ্রত আছেন এবং তার সাথে এসময় কথা বললে কোনো অসুবিধা হবে না তাহলে তার কাছে কল করাতে কোনো দোষ নেই। অনুরূপভাবে কোনো কথা যদি এমন জরুরি হয় যা এখনই বলা দরকার তবে তাও বলাতে কোনো অসুবিধা নেই। [মাআরিফুল কোরআন, খণ্ডঃ ৬, পৃষ্ঠাঃ ৩৯৪; তিরমিযি শরিফ, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৪৪২]

মোবাইলে কাউকে হুমকি দেওয়া


আজকাল আমাদের সমাজের কারো কারো মধ্যে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, তারা দুষ্টুমি করে অন্যকে মোবাইলে হুমকি দেয় কিংবা নানান কথা বলে ভয় দেখায়। অবশ্য পরবর্তীতে এই ভয় কোনো না কোনোভাবে কাটিয়ে দেওয়া হয় বা সে নিজেই অনুমান করে বুঝে নেয় যে, এটা দুষ্টুমী করে বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, কিছু সময়ের জন্য হলেও তো একজন মুসলমানকে অহেতুক পেরেশান ও ভীত সন্ত্রস্ত রাখা হলো। তাকে ঠেলে দেওয়া হলো চিন্তা ও উদ্বেগের অথৈ সাগরে! বিঘ্ন ঘটানো হলো তার স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়। ক্ষতি করা হলো তার প্রয়োজনীয় কাজের। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তার আহার নিদ্রা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় ।

যেহেতু কোনো মুসলমানকে অযথা কষ্ট দেওয়া জায়েয নেই, তাই দুষ্টুমী করে অল্প সময়ের জন্য হলেও কাউকে হুমকি দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে পেরেশান করা জায়েয নয়। এটা মারাত্মক গুনাহের কাজ ।

হাদিস শরিফে আছে-
একবার কিছুসংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সফর করছিলেন। পথিমধ্যে কোনো জায়গায় বিশ্রামের সময় সফরসঙ্গীদের একজন ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর অপর এক সাহাবি ঘুমন্ত সাহাবির সাথে রাখা রশি আনতে গেলে তিনি ঘাবড়ে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কোনো মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানকে ভয় দেখানো জায়েয নেই । [মিশকাত, পৃষ্ঠা : ৩০]

অন্যের মোবাইল টিপাটিপি করা 


অনেক আল্লাহর বান্দাকে দেখা যায়, তারা অন্যের মোবাইল হাতে নিয়ে টিপাটিপি শুরু করে দেয়। ফলে অনেক সময় মোবাইলের বিভিন্ন প্রোগ্রাম উলট পালট হয়ে যায়। যেমন, রিংটোন বন্ধ হয়ে ভাইব্রেশন চালু, সময় ও তারিখ পরিবর্তন, ফোন বুক উধাও! ইত্যাদি। এই পরিবর্তনের ফলে মোবাইলের মালিককে অনেক ক্ষেত্রে দারুণ পেরেশানি ভোগ করতে হয়। কোনো কোনো সময় তো মারাত্মক ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হয়। কেননা, না জেনে উল্টাপাল্টা টিপাটিপির ফলে মোবাইল যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে তো তার আর্থিক ক্ষতি হলো। আর যদি মোবাইলের ফোনবুক বা সেখান থেকে কোনো জরুরি নাম্বার ডিলেট হয়ে যায় এবং এ কারণে সে কারো সাথে সময়মতো যোগাযোগ করতে না পারে তাহলে এর দ্বারা একদিকে যেমন তাকে পেরেশানিতে পড়তে হয় তেমনি অন্যদিকে তার নানাবিধ ক্ষতিও হতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ খেয়ালী করে মোবাইল সেট লুকিয়ে রাখে। ফলে সে অনর্থক হয়রানির শিকার হয়। অথচ অনর্থক কাউকে পেরেশান করতে হাদিস শরিফে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ যেন খেলাচ্ছলে দুষ্টুমী করে আপন ভাইয়ের লাঠি না নেয়। যদি কেউ নিয়ে থাকে তবে সে যেন তা ফিরিয়ে দেয়।” মোটকথা, মুসলমানকে অহেতুক কষ্ট দেওয়া বা তাকে পেরেশান করা জায়েয নেই। তাই তার কষ্ট বা পেরেশানি হয়, এমন সব কাজ থেকে আমাদের সবাইকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। [তিরমিযি, খণ্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ৩৯]

এক টানা বারবার রিং করতে থাকা


অনেক সময় দেখা যায়, অন্য প্রান্ত থেকে রিসিভ না করলে ফোনকারী একের পর এক রিং দিতেই থাকে । এভাবে ক্রমাগত রিং দেওয়া মোটেও উচিত নয়। আসলে তারা নিয়ম জানেন না বলেই এমনটি করে থাকে। নিয়ম হলো, তিনবার পর্যন্ত রিং দিয়ে ক্ষান্ত হয়ে যাওয়া। তাও এভাবে যে, একবার পূর্ণ রিং দেওয়ার পর যখন অপর প্রান্ত থেকে রিসিভ হলো না তখন দ্বিতীয় বার রিং দেওয়ার পূর্বে একটু চিন্তা করে নেওয়া যে, এখন জামাতের সময় নয় তো ? অথবা এটা তার আরাম বা জরুরি কোনো কাজের সময় নয় তো ? যদি উত্তর 'হ্যাঁ' হয় তাহলে তখন আর রিং না করা। আর যদি উত্তর 'না' হয় তাহলে ২/৪ মিনিট বিরতি দিয়ে আবার রিং করা। যাতে তিনি নামাজে থাকলে বা অন্য কোনো বিশেষ জরুরি কাজে থাকলে এ সময়ের মধ্যে তা থেকে ফারেগ হয়ে ফোন রিসিভ করতে পারেন। এভাবে দ্বিতীয়বারেও ফোন রিসিভ না করলে খানিক বিরতি দিয়ে তৃতীয় বার রিং করা। হ্যাঁ, তৃতীয় বার রিং করার পরেও যদি মোবাইল রিসিভ না হয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি মোবাইল থেকে দূরে আছেন অথবা এমন অবস্থায় আছেন; যে অবস্থায় মোবাইল রিসিভ করা সম্ভব নয়। তাই তৃতীয়বারের পর আর রিং না করা। আসলে এ বিষয়টি ‘অনুমতি' নেওয়ার মতো। কারো ঘরে ঢুকার সময় তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি অনুমতি না পাওয়া যায় তখন যেমন ফিরে আসার বিধান, তেমনি মোবাইলে রিং দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনবার পর্যন্ত রিং দিয়ে তখন আর রিং না দেওয়া চাই। অবশ্য একান্ত জরুরি হলে ভিন্ন কথা। [ফাতহুল বারী, খণ্ডঃ ১১, পৃষ্ঠাঃ ৩৩]

মানুষের সামনে স্ত্রীর সাথে কথা বলা


স্ত্রীর সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে নিরিবিলি স্থান বেছে নেওয়াই উত্তম। কেননা এক্ষেত্রে অনেক সময় এমন কথাও মুখে এসে যায় যা স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপন কথা। আর হাদিস শরিফে স্বামী-স্ত্রীর গোপন কথা অপরকে শোনানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট সর্বাধিক ঘূর্ণিত ঐ ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর নিকট গমন করে এবং স্ত্রীও স্বামীর নিকট গমন করে অতঃপর সে স্ত্রীর গোপন বিষয় প্রকাশ করে দেয়।

হ্যাঁ, যদি জরুরি কোনো কথা হয় কিংবা এমন কোনো কথা হয় যা স্বামী-স্ত্রীর গোপনীয় কোনো কথা নয়, তাহলে তা অন্যের সামনে বলাতে কোনো দোষ নেই । [মিশকাত শরিফঃ ২৭৬ পৃষ্ঠা]

মোবাইলে রোগীর খোঁজ-খবর নেওয়া বা দোয়া চাওয়া


মোবাইল অনেক কঠিন কাজ সহজ করেছে- একথা যেমন সত্য তেমনি সবকাজ মোবাইলে হয় না একথাও সত্য। কেননা অনেক কাজ এমন আছে যা স্বয়ং উপস্থিত হয়ে করতে হয় বা করলে অনেক বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। যেমন, মোবাইলের মাধ্যমে রোগীর খোঁজ-খবর নেওয়ায় সাওয়াব আছে বটে, তবে সরাসরি হাজির হয়ে খোঁজ-খবর নিলে যে পরিমাণ সাওয়াব পাওয়া যাবে শুধু মোবাইলের দ্বারা নিশ্চয়ই তা পাওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে বুযুর্গদের কাছ থেকে দোয়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও মোবাইলের সুযোগকে গ্রহণ করা হয়। যা কখনোই সাক্ষাতের বরাবর হতে পারে না। তাই যেসব ক্ষেত্রে সাক্ষাতের ভিন্ন ফজিলত আছে, মোবাইলের সুবিধা পেয়ে অলসতা করে তা হাতছাড়া করা মোটেও উচিত নয়। বরং এসব ক্ষেত্রে একটু কষ্ট করে হলেও অধিক সাওয়াব লাভের জন্য স্বয়ং উপস্থিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরাসরি উপস্থিত হওয়া সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে মোবাইলের মাধ্যমেই কাজ চালিয়ে নিতে হবে । কেননা কোনো কাজ একেবারে না হওয়ার চেয়ে কিছুটা হওয়া অনেক ভালো ৷

বারবার সিম পরিবর্তন করা


আজকাল একাধিক সিম ব্যবহার একটি মারাত্মক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যাধির ফলে একদিকে যেমন অন্যদেরকে সিমাহীন বিরক্তি ও নানাবিধ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তেমনি একাধিক সিম ব্যবহারকারীদেরকেও দিতে হচ্ছে বিভিন্ন রকম খেসারত ।

যারা একাধিক সিম ব্যবহার করেন তাদেরকে প্রায় সময় অনেক জরুরি প্রয়োজনেও খোঁজ করে পাওয়া যায় না। এতে বারবার কল করতে গিয়ে কলকারীকে প্রচুর সময় ব্যয় করার পাশাপাশি অনেক পেরেশান হতে হয়। তাছাড়া অনেক সময় এমনও হয় যে, প্রয়োজনটা মূলত যার কাছে কল করা হয়েছে তার, কিন্তু কল করে সময়মতো তাকে না পাওয়ার কারণে তার বিরাট ক্ষতি হয়ে যায়। যার জন্য পরবর্তীর্তে তাকে অনেক আফসোস করতে হয়।

একাধিক সিম ব্যবহারকারীরা সাধারণত বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সুযোগ গ্রহণ করার জন্যই এরূপ করে থাকে। অথচ তারা জানে না যে, এজন্য অন্যদেরকে কী পরিমাণ হয়রানী ও কষ্ট পোহাতে হয়! তাই একাধিক সিম ব্যবহার করা ঠিক নয়। হ্যাঁ, কেউ যদি একান্ত করতেই চায়, তাহলে সে যেন একাধিক সেটও ব্যবহার করে। অথবা পরিচিত মহলে তার সবগুলো নাম্বার দিয়ে রাখে। সেই সাথে এও জানিয়ে রাখে যে, এতটা থেকে এতটা পর্যন্ত আমার অমুক সিম চালু থাকে। মোটকথা একাধিক সিম ব্যবহারকারীদেরকে একথা খুব ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে যে, একাধিক সিম ব্যবহার করার কারণে অন্যদের যেন কোনোভাবেই কোনো প্রকার কষ্ট না হয় ।


****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url