সফর মাসের আমল ও ফজিলত || সফর মাসের আমল সম্পর্কে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা






সফর মাসের আমল ও ফজিলত


'সফর' মাস ইসলামী দিনপঞ্জির দ্বিতীয় মাস। এ মাসে উদযাপনের জন্য বিশেষ কোনো ইবাদাত বা আলাদা কোনো নিয়ম নেই ।

কিছু মানুষ এ মাসকে অশুভ মনে করে থাকে, সে কারণে তারা এ মাসে বিবাহ অনুষ্ঠান অথবা অন্য কোনো শুভ জনসমাবেশ করা থেকে বিরত থাকে। এরূপ ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং প্রাচীন জাহেল আরবদের মাঝে প্রচলিত কুসংস্কারের একটি। মহানবী (সাঃ) এরূপ সকল কুসংস্কারকে রহিত করেছেন। বিশেষ করে সফর মাসের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, এ সফর মাসের কোনো لَا صَفَرَ (কুলক্ষণ) নেই ।

সুতরাং, এরূপ কোনো কুসংস্কারে মুসলমানদের কান দেয়া উচিত নয়। এ মাসে বিবাহ-শাদী ইত্যাদি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা নেই।

সফর মাস সংক্রান্ত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা


এ মাসের কোনো দিবসে বা রাত্রে কোনো প্রকারের সালাত আদায়ের বিশেষ সাওয়াব বা ফযীলত সম্পর্কে কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়নি। অনুরূপভাবে এ মাসের কোনো দিনে সিয়াম পালনেরও কোনো বিশেষ ফযীলত কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি। এ বিষয়ে যা কিছু বলা হয় সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। এ মাসকে কেন্দ্র করে অনেক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা মুসলিম সমাজে প্রচলিত হয়েছে। এগুলো কে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমত, সফর মাসের 'অশুভত্ব' ও 'বালা-মুসিবত' বিষয়ক, দ্বীতিয়ত, সফর মাসের প্রথম তারিখে বা অন্য সময়ে বিশেষ সালাত। তৃতীয়ত, আখেরি চাহার শোম্বা বা শেষ বুধবার বিষয়ক।

সফর মাসের অশুভত্ব বা বালা-মুসিবত


কোনো স্থান,সময়,বস্তু বা কর্মকে অশুভ, অযাত্রা বা অমঙ্গলময় বলে মনে করা ইসলামী বিশ্বাসের ঘোর পরিপন্থি একটি কুসংস্কার। এ বিষয়ে আমরা পরিবর্তীতে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ। এখনে লক্ষণীয় যে, আরবের মানুষেরা জাহেলী যুগ থেকে 'সফর' মাসকে অশুভ ও বিপদাপদের মাস বলে বিশ্বাস করত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের এই কুসংস্কারের প্রতিবাদ করে বলেন-

لا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةً، وَلَا صَفَرَ وَلَا هَامَةً.

“কোনো অশুভ-অযাত্রা নেই ।

অথচ এর পরেও মুসলিম সমাজে অনেকের মধ্যে পূর্ববর্তী যুগের এ সকল কুসংস্কার থেকে যায়। শুধু তাই নয়, এ সকল কুসংস্কারকে উসকে দেয়ার জন্য অনেক বানোয়াট কথা হাদীসের নামে বানিয়ে সমাজে প্রচার করেছে জালিয়াতগণ। তারা জালিয়াতি করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এর নামে বলেছে, এ মাস বালা মুসিবতের মাস। এ মাসে এত লক্ষ এত হাজার... বালা নাজিল হয়। এ মাসে আদম ফল খেয়েছিলেন। এ মাসে হাবিল নিহত হন। এ মাসে নূহের কাওম ধংস হয়। এ মাসে ইবরাহীমকে আগুনে ফেলা হয়। ....এ মাসের আগমনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ব্যাথিত হতেন। এ মাস চলে গেলে খুশি হতেন....। তিনি বলতেন: “যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করার সুসংবাদ প্রদান করব।"

... ইত্যাদি অনেক কথা বানিয়েছে। আর অনেক সরলপ্রাণ বুযুর্গও তাদের সকল জালিয়াতি বিশ্বাস করে ফেলেছেন। মুহাদ্দিসগণ একমত যে সফর মাসের সকল কথা ভিত্তিহীন মিথ্যা।

সফর মাসের প্রথম রাতের সালাত


উপরোক্ত মিথ্যা কথাগুলির ভিত্তিতেই একটি ভিত্তিহীন 'সালাতের' উদ্ভাবন করা হয়েছে। কেউ যদি সফর মাসের ১ম রাত্রিতে মাগরিবের পরে বা ইশার পরে... চার রাকা'আত সালাত আদায় করে, অমুক অমুক সূরা বা আয়াত পাঠ করে... তবে সে বিপদ থেকে রক্ষা পাবে, এত পুরস্কার পাবে... ইত্যাদি। এগুলো সবই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা, যদিও অনেক আলেম এগুলো বিশ্বাস করেছেন বা তাদের বইয়ে বা ওয়াযে উল্লেখ করেছেন।

সফর মাসের শেষ বুধবারের আমল


বিভিন্ন জাল হাদীসে বলা হয়েছে, বুধবার অশুভ এবং যে কোনো মাসের শেষ বুধবার সবচেয়ে অশুভ দিন। আর সফর মাস যেহেতু অশুভ, সেহেতু সফর মাসের শেষ বুধবার বছরের সবচেয়ে বেশি অশুভ দিন এবং এ দিন সবচেয়ে বেশি বালা মুসিবত নাযিল হয়। এ সবই ভিত্তিহীন কথাবার্তা অনেক সরলপ্রাণ বুযুর্গ বিশ্বাস করেছেন। একজন লিখেছেন: সফর মাসে এক লাখ বিশ হাজার 'বালা' নাজিল হয় এবং সবদিনের চেয়ে 'আখেরী চাহার শুম্বা'-তে (সফর মাসের শেষ বুধবারে) নাজিল হয় সবছেয়ে বেশী। সুতরাং ঐ দিনে যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত নিয়মে চার রাকা'আত নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তা'আলা তাকে ঐ বালা থেকে রক্ষা করবেন এবং পরবর্তী বছর পর্যন্ত তাকে হেফাজতে রাখবেন...।

এগুলো সবই ভিত্তিহীন কথা। তবে আমাদের দেশে বর্তমানে 'আখেরী চাহার শুম্বা'-র প্রসিদ্ধি এ কারণে নয়, অন্য কারণে। প্রসিদ্ধ আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সফর মাসের শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি সফর মাসের শেষ দিকে কিছুটা সুস্থ হন এবং গোসল করেন। এরপর তিনি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই অসুস্থতাতেই তিনি পরের মাসে ইন্তিকাল করেন। এজন্য মুসলমানেরা এ দিনে তাঁর সর্বশেষ সুস্থতা ও গোসলের স্মৃতি উদযাপন করেন।

এ বিষয়ক প্রচলিত কাহিনীর সার সংক্ষেপ প্রচলিত একটি পুস্তক থেকে উদ্ধৃতি করছি : নবী করীম (সাঃ) দুনিয়া হতে বিদায় নেবার পূর্ববর্তী সফর মাসের শেষ সপ্তাহে ভীষণভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি (সাঃ) এ মাসের শেষ বুধবার সুস্থ হয়ে গোসল করত: কিছু খানা খেয়ে মসজিদে নববীতে হাযির হয়ে নামাযের ইমামতি করেছিলেন। এতে উপস্থিত সাহাবীগণ অত্যধিক আনন্দিত হয়েছিলেন। আর খুশির কারণে অনেক অনেক দান খয়রাত করেছিলেন। বর্ণিত আছে আবু বকর (রাঃ) খুশিতে ৭ সহস্র দীনার এবং ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) ৫ সহস্র দীনার, ওসমান (রাঃ) ১০ সহস্র দীনার, আলী (রাঃ) ৩সহস্র দীনার, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) ১০০ উট ও ১০০ ঘোড়া আল্লাহর ওয়াস্তে দান করেছিলেন। তৎপর হতে মুসলমানগণ সাহাবীগণের নীতি অনুকরণ ও অনুসরণ করে আসছে । নবী করিম (সাঃ)-এর এ দিনের গোসলই জীবনের শেষ গোসল ছিল। এরপর আর তিনি জীবিতকালে গোসল করেননি। তাই সকল মুসলমানের এ দিনে ওযু গোসল করত: ইবাদাত বন্দেগী করা উচিৎ এবং নবী করীম (সাঃ)-এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করতঃ সাওয়াব রেছানী করা কর্তব্য...।

উপরের এ কাহিনীটিই কমবেশী সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন গ্রন্থে লেখা রয়েছে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেও কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীসে এ ঘটনার কোনো প্রকারের উল্লেখ পাইনি। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোনো মুসলিম সমাজে সফর মাসের শেষ বুধবার পালনের রেওয়াজ বা কাহিনী প্রচলিত আছে বলে আমার জানা নেই।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সর্বশেষ অসুস্থতা


রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সফর বা রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কত তারিখে ইন্তিকাল করেন সে বিষয়ে হাদীস শরীফে কোনোরূপ ইঙ্গিত নেই। অগণিত হদীসে তাঁর অসুস্থতা, অসুস্থতা কালীন অবস্থা, কর্ম, উপদেশ, তাঁর ইন্তিকাল ইত্যাদির ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোনোভাবে কোনো দিন, তারিখ বা সময় বলা হয়নি। কবে তাঁর অসুস্থতা শুরু হয়, কতদিন অসুস্থ ছিলেন, কত তারিখে ইন্তিকাল করেন সে বিষয়ে কোনো হাদীসেই কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

২য় হিজরী শতক থেকে তাবেয়ী ও তাবে তাবিয়ী আলেমগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবনের ঘটনাবলী ঐতিহাসিক দিন তারিখ সহকারে সাজাতে চেষ্টা করেন। তখন থেকে মুসলিম আলেমগণ এ বিষয়ে বিভিন্ন মত পেশ করেছেন।

তাঁর (সাঃ) অসুস্থতা সম্পর্কে অনেক মত রয়েছে। কেউ বলেছেন সফর মাসের শেষ দিকে তাঁর অসুস্থতা শুরু। কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাস শুরু থেকে তার অসুস্থতা শুরু। দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রখ্যাত তাবেয়ী ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক (১৫ হি/ ৭৬৮ খৃ) বলেন-

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যে অসুস্থতায় ইন্তিকাল করেন, সেই অসুস্থতার শুরু হয়েছিল সফর মাসের শেষ কয়েক রাত থাকতে, অথবা রবিউল আউয়াল মাসের শুরু থেকে।

কি বার থেকে তাঁর অসুস্থতা শুরু হয়েছিল, সে বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন শনিবার, কেউ বলেছেন বুধবার এবং কেউ বলেছেন সোমবার তাঁর অসুস্থতা শুরু হয়।

কত দিনের অসুস্থতার পর তিনি ইন্তিকাল করেন, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন ১০ দিন, কেউ বলেছেন ১২ দিন, কেউ বলেছেন ১৩ দিন, কেউ বলেছেন ১৪ দিন অসুস্থ থাকার পর তিনি ইন্তিকাল করেন।

পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাব যে, তিনি কোন তারিখে ইন্তিকাল করেছিলেন, সে বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, ১লা রবিউল আউয়াল, কেউ বলেছেন, ২রা রবিউল আউয়াল এবং কেউ বলেছেন, ১২ই রবিউল আউয়াল তিনি ইন্তিকাল করেন।

সর্বাবস্থায়, কেউ কোনোভাবে বলছেন না যে, অসুস্থতা শুরু হওয়ার পরে মাঝে কোন দিন তিনি সুস্থ ছিলেন। অসুস্থ অবস্থাতেই, ইন্তিকালের কয়েকদিন আগে তিনি গোসল করেছিলেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। বুখারী সংকলিত হাদীসে আয়েশা (রাঃ) বলেন-

إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا دَخَلَ بَيْتِي وَاشْتَدَّ بِهِ وَجُعُهُ قَالَ هَرِيقُوْا عَلَيَّ مِنْ سَبْعِ قُرَبٍ ... لَعَلِّي أَعْهَدُ إِلَى النَّاسُ وَفِي رِوَايَةٍ لَعَلِّي أَسْتَرِيْحُ فَأَعْهَدُ إِلَى النَّاسِ... ثُمَّ خَرَجَ إِلَى النَّاسِ فَصَلَّى بِهِمْ

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন আমার গৃহে প্রবেশ করলেন এবং তার অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার উপরে ৭ মশক পানি ঢাল..., যেন আরাম বোধ করে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তাঁর দেহে পানি ঢাললাম...। এরপর তিনি মানুষদের নিকট বেরিয়ে যেয়ে তাদরেকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তাদেরকে খুতবা প্রদান করলেন বা ওয়ায করলেন। "

এখানে স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর অসুস্থতার মধ্যেই অসুস্থতা ও জরের প্রকোপ কমানোর জন্য এভাবে গোসল করেন, যেন কিছুটা আরাম বোধ করেন এবং মসজিদে যেয়ে সবাইকে নসীহত করতে পারেন।

এ গোসল করার ঘটনাটি কত তারিখে বা কী বারে ঘটেছিল তা হাদিসে কোনো বর্ণনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় নি। তবে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম অন্যান্য হাদীসের সাথে এ হাদীসের সমন্বয় করে উল্লেখ করেছেন যে, এই গোসলের ঘটনাটি ঘটেছিল ইন্তিকালের আগের বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ইস্তিকালের ৫ দিন আগে।১০ ” ১২ই রবিউল আউয়াল ইন্তিকাল হলে তা ঘটেছিল ৮ ই রবিউল আউয়াল।

উপরের আলোচনা থেকে আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, সফর মাসের শেষ বুধবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুস্থ হওয়া, গোসল করা এবং এজন্য সাহাবীগণের আনন্দিত হওয়া ও দান সদকা করার এ সকল কাহিনীর কোনোরূপ ভিত্তি নেই। আল্লাহই ভাল জানেন ।

যেহেতু মূল ঘটনাটিই প্রমাণিত নয়, সেহেতু সেই ঘটনা উদযাপন করা বা পালন করার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। এরপরেও আমাদের বুঝতে হবে যে, কোনো আনন্দের বা দঃখের ঘটনায় আনন্দিত বা দুঃখিত হওয়া এক কথা, আর প্রতি বৎসর সেই দিনে আনন্দ বা দুঃখ করা বা “আনন্দ দিবস” বা “শোক দিবস” উদযাপন করা সম্পূর্ণ অন্য কথা। উভয়ের মধ্যে আসমান জমিনের পার্থক্য।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর জীবনে অনেক আনন্দের দিন বা মুহূর্ত এসেছে, যখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন, শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য আল্লাহর দরবারে সাজদাবনত হয়েছেন। কোনো কোনো ঘটনায় তার পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণও আনন্দিত হয়েছেন ও বিভিন্নভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরের বছর বা পরবর্তী কোনো সময় সেই দিন বা মুহূর্তকে তারা বাৎসরিক আনন্দ দিবস হিসেবে উদযাপন করেন নি। এজন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নির্দেশ বা সাহাবীদের কর্ম ছাড়া এরূপ কোনোদিন বা মুহূর্ত পালন করা বা এগুলোতে বিশেষ ইবাদতকে বিশেষ সাওয়াবের কারণ বলে মনে করার কোনো সুযোগ নেই।

আখেরী চাহারা শোম্বার নামায


উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, সফর মাসের শেষ বুধবার কোনো প্রকার বিশেষত্ব হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়নি। এ দিনে কোনোরূপ ইবাদাত, বন্দেগি, সালাত, যিকির, দু'আ, দান, সাদকা ইত্যাদি পালন করলে অন্য কোনো দিনের চেয়ে বেশি বা বিশেষ কোনো সাওয়াব বা বরকত লাভ করা যাবে বলে ধারণা করা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা। এজন্য আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী লিখেছেন যে, সফর মাসের শেষ বুধবারে যে বিশেষ নফল সালাত বিশেষ কিছু সুরা বা আয়াত ও দু'আ পাঠের মাধ্যমে আদায় করা হয় তা বানোয়াট ও ভিত্তহীন।১১



তথ্যসূত্রঃ
১. বুখারী, আস-সহীহ ৫৭১৭: মুসলিম, আস-সহীহ 2220
২. সাগানী আল মাউদু'আত পৃ. ৬১: মোল্লা কারী, আল-আসরার, পৃ. ২২৫। তাহের ফাতানী, ত্যকীরা, পৃ. ১১৬: আজনী, কাশফুল খাফা ২/৩০৯: শাওকনী, আল-ফাওয়াইদ ২/৫৩৯ নিযামুদ্দীন আউলিয়া, রাহাতুল মুহিব্বীন, পৃ. ১০১ রাহাতুল কুলুব, পৃ. ১৩৮।
৩. খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া, রাহাতুল কুলুব, পৃ. ১৩৮-১৩৯: মুফতি হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফযীলত, পৃ. ১৪।
৪. খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া, রাহাতুল কুলুন, পৃ. ১৩৯ ।
৫. মুফতি হাবীব ছামদানী, বার চান্সের ফজীলত, পৃ. ১৫।
৬. ইবনু হিশাম, আস সীরাহ আন নববিয়্যাহ ৪/২৮৯৷
৭. কাসতালানী, আহমদ ইবনু মাহাম্মদ, আল-মাওয়াহিৰ আল লাদুনিয়া ৩/৩৭৩, যারকানী, শারহুল মাওয়াহিৰ ১২/৮৩।
৮. কাসতালানী, আহমদ ইবনু মাহাম্মদ, আল-মাওয়াহিৰ আগ-পাঙ্গুরিয়া ৩/৩৭৩: আল-লাদুন্নিয়া ৩/৩৭৩: যারকানী, শারহুল মাওয়াহিব ১২/৮৩।
৯. বুখারি আস-সহীহ ১/৮৩, ৪/১৬২৪, ৫/২১৬০: হাকীম, আল-মুসতাদরাক ১/২৪৩: ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ১৪/৫৬৬।
১০. ইবনু হাজার, ফাতাহুল বারী ৮/১৪২।
১১. আব্দুল হাই লখনবী, আল- আমার, পৃ. ১১১।




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url