ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধ করতে ২০ হাজার ইয়েমেনির প্রশিক্ষণ | স্থল অভিযান বন্ধ করে বিমান হামলার ওপর জোর


ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধ করতে ২০ হাজার ইয়েমেনির প্রশিক্ষণ

ইয়েমেনের ২০ হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি ঘোষণা করেছেন। এ তথ্য জানিয়েছে ইয়েমেনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা 'সানা'। এসব মানুষ এরই মধ্যে যুদ্ধের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারা 'আল আকসা তুফান' নামের সামরিক প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন।

ইয়েমেনি গণবাহিনীর ২০ হাজার সদস্যের কুচকাওয়াজ

যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এই ২০ হাজার ইয়েমেনি হাজ্জাহ প্রদেশে সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেন এবং তারা এ সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে নানা শ্লোগান দেন।

তারা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনকে রক্ষায় তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। হাজ্জাহ প্রদেশে অনুষ্ঠিত সামরিক কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী এসব ব্যক্তির অনেকের হাতেই অস্ত্র ছিল। এছাড়া তারা ফিলিস্তিন ও ইয়েমেনের পতাকা বহন করছিলেন। তারা উচ্চস্বরে বলছিলেন, 'আমেরিকা নিপাত যাক, ইসরাইল ধ্বংস হোক'।

গণবাহিনীর এসব সদস্য সামরিক কুচকাওয়াজ শেষে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ঘাতক ইহুদিবাদী ইসরাইলের হাত থেকে ফিলিস্তিনিদের নিষ্পাপ শিশু ও নারীদের রক্ষা করতে হবে। ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে তারা ফিলিস্তিনি ভাইদের সঙ্গে এক হয়ে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।

এই কুচকাওয়াজে বক্তব্য রেখেছেন ইয়েমেনের সর্বোচ্চ জাতীয় রাজনৈতিক পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য ও জননেতা মোহাম্মাদ আলী আল হুথি। তিনি বলেছেন, আজ হাজ্জাহ প্রদেশের মানুষ জনসমাবেশে যোগ দিতে আসেননি বরং স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে এসেছেন তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য জীবন দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত।

আরও দুই ইহুদী সেনার মৃত্যুর কথা ঘোষণা

গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে আরো দুই ইহুদী সেনার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এ নিয়ে ২৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালাতে গিয়ে এ পর্যন্ত ইসরাইলের স্বীকারোক্তি অনুসারে ১৫৬ জন সেনা নিহত হলো। তবে হামাস বলছে, ইসরাইলের নিহত সেনার সংখ্যা এর চেয়ে অনেক গুণ বেশি। 

নতুন নিহত দুই সেনার পরিচয় প্রকাশ করেছে ইসরাইল। তারা হলো- রিজার্ভ ফোর্সের ৩০ বছর বয়সী সার্জেন্ট নিটাই মেইসেল এবং ২০ বয়সী সার্জেন্ট রানি তামের। এর আগে ইসরাইলের দখলদার বাহিনী জানিয়েছিল, গতকাল (রোববার) আরিয়েহ রেইন নামে আরো এক সেনা নিহত হয়েছে। 

ইহুদী সেনাদের কৌশল নিয়ে কথা বলে তোপের মুখে ইসরাইলি মন্ত্রী

এদিকে, গাজায় যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে দখলদার বাহিনী যে কৌশল অনুসরণ করেছে তা ইতিবাচক নয় বলে সমালোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী নীর বারকাত। তিনি অভিযোগ করেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেনাদের জীবন রক্ষার জন্য যথেষ্ট করা হচ্ছে না।

সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে এবং জনসাধারণের ভেতরে তার এ মন্তব্য ঝড় তুলেছে। বারকাত অভিযোগ করেন, গাজায় বিমান হামলা কমিয়ে দেয়া হয়েছে এবং গোপন ফাঁদ পেতে রাখা ভবনে সেনাদেরকে অভিযান চালানোর জন্য পাঠানো হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর এই কৌশল সেনাদেরকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে।

তার এই মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্তজ। নেতানিয়াহু বলেছেন, বারকাতের অভিযোগ মিথ্যা। বারকাতকে নেতানিয়াহুর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করা হয়।

অপরাশেন সোর্ড অব আয়রন” এর সংবাদ প্রকাশে ইসরাইলি বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা

গাজা যুদ্ধ নিয়ে আটটি বিষয়ের কোন তথ্য ইসরাইলের কোনো গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। দ্যা ইন্টারসেপ্টর শনিবার এই তথ্য দিয়েছে।

প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, ইসরাইলের চলমান “অপরাশেন সোর্ড অব আয়রন’ অভিযান নিয়ে খবর প্রকাশের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন দখলদার ইসরাইলের সেনাবাহিনীর চিফ সেন্সর ডিরেক্টিভ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কোবি মান্দেলব্লিত। গত ৭ অক্টেবার গাজা থেকে ইসরাইলের ভেতরে অভিযান চালানোর পর কোনো এক সময়ে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

নিষেধাজ্ঞা আদেশে বলা হয়েছে, দখলদার বাহিনীর অনুমতি ছাড়া “অপরাশেন সোর্ড অব আয়রন” এর আট বিষয়ে কোনো খবর প্রকাশ করা যাবে না। এগুলো ইসরাইলের নিরাপত্তার সাথে জড়িত। এ বিষয়ে পত্রিকা ও রেডিও-টিভির  রিপোর্টার এবং ডেস্কের সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ করেছে দখলদার বাহিনী।

যেসব বিষয়ে নিধেষাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেগুলো হলো- ইসরাইলের ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরন, হামাস কী ধরনের অস্ত্র দখল করেছে, ইসরাইলের মন্ত্রিসভায় নিরাপত্তা নিয়ে আলোচিত বিষয়গুলো এবং গাজায় বন্দী থাকা ইসরাইলিদের নিয়ে যেকোনো তথ্য। 

এছাড়া, ইসরাইলি সেনাদের অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলা যাবে না, ইসরাইলের গোয়েন্দা বিষয় ও ইসরাইলের যেসব স্পর্শকাতর স্থানে গাজার রকেট আঘাত হানছে সেসব নিয়েও কথা বলা নিষেধ। এর পাশাপাশি সাইবার হামলা ও সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের গাজার যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শন নিয়েও কোনো রকমের খবর বা তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।

আমেরিকার টাস্ক ফোর্স থেকে বিদায় নিয়েছে ফ্রান্স, স্পেন এবং ইতালি

ইয়েমেনের হুতি আন্দোলন সমর্থিত সামরিক বাহিনীর তৎপরতার মধ্যে লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল নির্বিঘ্ন করার অজুহাতে ইহুদিবাদী ইসরাইলি জাহাজকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমেরিকা যে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিল তা ছেড়ে চলে গেছে ফ্রান্স, স্পেন এবং ইতালি।

দেশ তিনটি সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘ, ন্যাটো জোট বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে তবে এককভাবে আমেরিকার সাথে জোটবদ্ধ হতে চায় না। এই ঘটনাকে আমেরিকা জন্য বড় রকমের ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।

ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা লোহিত সাগর এবং আশপাশের এলাকায় নৌ চলাচলের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে এবং এরইমধ্যে ওই অঞ্চলে কাজ করেছে। তবে, এখন থেকে জাহাজগুলো ফরাসি কমান্ডের অধীনে থাকবে তবে আরো নৌ সেনা মোতায়েন করবে কিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তা জানায়নি।

এদিকে, ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও বলেছে, তারা ইতালির জাহাজ মালিকদের সুর্দিষ্ট অনুরোধে সাড়া দিয়ে শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য নৌবাহিনীর ফ্রিগেট ভার্জিনিও ফাসানকে লোহিত সাগরে পাঠাবে। ইতালি বলেছে, তারা লোহিত সাগরে সম্প্রতি যে তৎপরতা চালিয়েছে তা মার্কিন নেতৃত্বাধীন নৌ জোটের অংশ ছিল না।

অন্যদিকে, স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একেবারে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র ন্যাটো নেতৃত্বাধীন অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ে কোন অভিযানে অংশ নেবে। তারা কোনভাবে লোহিত সাগরে একতরফা কার্যক্রমে অংশ নেবে না।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন জানিয়েছিল, ২০টিরও বেশি দেশ মার্কিন নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্সে যোগ দিতে রাজি হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এই টাস্ক ফোর্স যে কার্যক্রম শুরু করেছিল তাতে আমেরিকার পাশাপাশি ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেন অংশ নেয়।

স্থল অভিযান বন্ধ করে বিমান হামলার ওপর জোর

ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদার সামরিক বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গেছে। তারা নতুন করে তৃতীয় ধাপের আগ্রাসন শুরু করবে এবং এর আওতায় বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইহুদিবাদী ইসরাঈল গাজার ওপর বর্বর আগ্রাসন, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে আসছে।

অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরাইলের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় তৃতীয় ধাপের যুদ্ধ শুরুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। নতুন এই ধাপে গাজায় স্থল অভিযান বন্ধ করা হবে, সেখানে সেনা সদস্য কমানো হবে এবং রিজার্ভ সেনাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। এর পরিবর্তে বিমান হামলা চলবে এবং গাজা ও ইসরাইল অধিকৃত ভূখণ্ডের মধ্যবর্তী স্থানে বাফারজোন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে।

ইসরাইলের সরকারি সম্প্রচার সংস্থার খবরে দাবি করা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী উত্তর গাজার বেশিরভাগ অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তবে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে ইসরাইলি সেনারা কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের কথিত দুর্ধর্ষ গোলানি ব্রিগেড নাস্তানাবুদ হওয়ার পর এই ব্রিগেডকে ইসরাইল প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এরপর গাজায় স্থল অভিযান অবসানের পরিকল্পনার কথা জানা গেল।

এদিকে, ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে যে, ইসরাইলি বাহিনী গাজায় "মারাত্মক" এবং "বাস্তব" ফাঁদের সম্মুখীন হয়েছে। ইসরাইলি সেনাদের ফাঁদে ফেলার জন্য প্রতিরোধ যোদ্ধারা লাউড স্পিকার ব্যবহার করছে, যা মানুষের কান্নাকাটি বা হিব্রু ভাষায় কথা বলার শব্দ সম্প্রচার করছে।

গত ২৪ ঘন্টায় ইসরাইলের ১৩ সেনা নিহত

ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদার বাহিনী জানিয়েছে, শনিবার গাজায় যুদ্ধ করতে গিয়ে তাদের আরো আট সেনা নিহত হয়েছে। তার আগের সন্ধ্যায় মারা গেছে পাঁচজন। গতকাল নিহত আট সেনার মধ্যে একজন ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় কর্মকর্তা রয়েছে।

এ নিয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, গত সাত ২৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় স্থল অভিযান চালাতে গিয়ে ১৫৩ জন দখলদার সেনা নিহত হলো।

তবে গাজার হামাসসহ অন্য প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলো বলছে, এর চেয়ে অনেক বেশি সেনা গাজায় নিহত হয়েছে কিন্তু সেসব তথ্য দখলদার ইসরাইল গোপন করছে। কারণ, গাজায় নিহত সব সেনার তথ্য প্রকাশ করলে জনমত আরো বেশি বিগড়ে যেতে পারে।

গাজার যোদ্ধাদের হাতে আটক একজন বন্দীকেও ইসরাইলি সেনারা এ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি। বরং গাজায় অভিযান চালাতে গিয়ে বহু সংখ্যক সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া, ইসরাইলের সেনাদের হাতেই বেশ কয়েকজন বন্দি মারা গেছে। এ সমস্ত ঘটনায় যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর সরকার প্রচণ্ড চাপের মুখে আছে।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url