গাজায় ইসরাইলের বর্বরতায় শহীদের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছালো, মারাত্মকভাবে আহত ৫৫ হাজার, নিহতদের অধিকাংশই শিশু


গাজায় ইসরাইলের বর্বরতা


গাজায় শহীদের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছালো

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভয়াবহ আগ্রাসন, গণহত্যা এবং নারকীয় তাণ্ডবে বেসামরিক নাগরিক শহীদের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইউনিসেফ বলেছে গাজায় নিহতদের মধ্যে ৪০ শতাংশ বা তার উপরে শিশু। তারা গাজা যুদ্ধকে শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলেছে।

গাজায় আহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার

এর পাশাপাশি ৫৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছে যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজন এবং অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। এছাড়া এখনো কয়েক হাজার মানুষ গণনার বাইরে রয়েছে। ইসরাইলি বর্বরতায় এ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়েছে গাজার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ।
গত ৭ অক্টোবর গাজার ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভিতরে আল-আকসা তুফান অভিযান চালায়। এরপর দখলদার ইসরাইল অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে গাজা উপত্যকায় নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। এছাড়া আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে ইহুদিবাদীরা গাজার হাজার হাজার আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ ও গির্জায় লাগাতার বোমা হামলা চালিয়েছে।


ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ তীব্রতর

দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহর সংঘর্ষ তীব্রতর হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় উপশহরগুলোতে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বহু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর ফলে ইসরাইলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৮ অক্টোবর থেকেই যুদ্ধ করে আসছে লেবাননের হিজবুল্লাহ।

ইসরাইলি উপশহরে বহু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ

আজ ইহুদিবাদীদের উপশহর 'কারিয়াত শামুনা'-তে কাতিউশা রকেটের সাহায্যে হামলা চালানো হয়েছে। হিজবুল্লাহর রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে পৌঁছার পর ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা 'আয়রন ডোম' সচল হয়ে ওঠে। এরপরও কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ঐ উপশহরে আঘাত হেনেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি সূত্র বলছে, ইসরাইলের আল-জালিল ও কারিয়াত শামুনা এলাকা লক্ষ্য করে লেবানন থেকে অন্তত ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। 

ইসরাইল লেবাননেও হামলা চালাচ্ছে

এদিকে, দখলদার ইসরাইলি বাহিনী আজ দক্ষিণ লেবাননের কয়েকটি উপশহরের আশেপাশের এলাকায় বিমান ও কামানের সাহায্যে হামলা চালিয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বনে আগুন-বোমা ফেলেছে। আজকের হামলায় দক্ষিণ লেবাননের মারুন আল রাস উপশহরে এক নারী শহীদ ও তার স্বামী আহত হয়েছেন। গত কয়েক দিন ধরেই হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরাইলের সামরিক স্থাপনা ও সরঞ্জামের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এ অবস্থায় দখলদার বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের জনবসতিতে হামলা শুরু করেছে। অবশ্য হিজবুল্লাহ আজ আবারও স্পষ্টভাবে বলেছে, তারা বেসামরিক মানুষের ওপর আঘাত কোনোভাবেই সহ্য করবে না।

হামাস নেতাদের হত্যার হুমকি দিল ইসরাইল

ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা ইজ্জাত আর রিশক বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন হামাসের শীর্ষ নেতাদের হত্যার ব্যাপারে যে হুমকি দিয়েছেন তা মূলত এক ধরনের হতাশা থেকে বলেছেন।

ইজ্জত আর রিশক বলেন, প্রতিরোধকামী সংগঠনের কাছে ইসরাইল যে পরাজিত হতে চলেছে এ কারণে ইহুদিবাদী ইসরাইলিদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।

কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলকে গতকাল (বুধবার) কোহেন ফিলিস্তিনি নেতাদের হত্যার হুমকি দিয়ে বলেন, "আমরা হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা ইসমাইল হানিয়া এবং খালেদ মাশআলকে হত্যা করব এবং তারা স্বাভাবিকভাবে মারা যাবেন না।"

হামাসের পলিটব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আর-রিশক আজ ইসরাইলি মন্ত্রীর ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে তিরস্কার করে বলেন, এলি কোহেনের মন্তব্য "লজ্জাজনক" এবং এটি গাজায় ইহুদিবাদীদের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার বিষয়ে হতাশার ইঙ্গিত দেয়।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতাদের হত্যা ও গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্র চালানোর বিষয়ে ইসরাইলের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত মাসে বলেছিলেন, তিনি "মোসাদকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, হামাসের প্রধানরা যেখানেই থাকুন না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেন ম্যাকরন

আগ্রাসী ইহুদিবাদী ইসরাইল যখন গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা অব্যাহত রেখেছে তখন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যকরন গাজার অবকাঠামো ধ্বংস এবং বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্বিচারে হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন।

কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই মানে গাজার ধ্বংস এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা নয়- সেদিকে ইঙ্গিত করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে এ ধরনের হামলা বন্ধ করতে বলেন। কারণ কোনো হামলা সমানুপাতিক হতে পারে না যার মাধ্যমে ওই এলাকার প্রত্যেকের জীবন নষ্ট হয়। ম্যকরন বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং গাজায় একটি মানবিক যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের এসব বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন তিনি এবং তার অন্যান্য ইউরোপীয় মিত্ররা গাজার বাসিন্দাদের উপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এটিকে তেল আবিব সরকারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বলে মনে করে এবং গাজার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। 

গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপের অন্যান্য কিছু দেশ ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত রাখতে এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যার প্রতি আর্থিক সাহায্য ও অস্ত্র দিয়ে সমর্থন করেছে। 

ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের হত্যাকে ইসরাইলের আত্মরক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বলে অভিহিত করেছে এবং এমনকি ফিলিস্তিনিদের হত্যা, হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক কেন্দ্রে হামলার নিন্দা জানিয়ে তাদের নিজ দেশে যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে তার বিরোধিতা করেছে। যাইহোক, ফিলিস্তিনিদের হত্যার তীব্রতা এবং গাজায় ইসরাইলের সর্বাত্মক হামলার কারণে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা জনমতের চাপে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর নেতাদের সমালোচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে গাজার অবকাঠামো ধ্বসংস এবং বেসামরিক লোকদের ওপর গণহত্যা চালানোর  বিষয়ে ম্যাকরন এখন ইসরাইলের সমালোচনা করলেও  ফ্রান্স সরকার এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা তেল আবিবের অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

গাজা পরিস্থিতিতে রবার্ট ফিকো’র সমালোচনা

স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো গাজার চলমান পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে বলেছেন, গাজায় ২০ হাজার মানুষের মৃত্যুকে উপেক্ষা করা যাবে না কারণ ইসরাইল এটি ঘটিয়েছে। আমি ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দকে জোর দিয়ে বলছি যে ফিলিস্তিন ইস্যুতে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়ার ব্যাপারে আমাদের অক্ষমতার কারণে ইউনিয়ন বিশ্বব্যাপী তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। 

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তথ্য অফিস তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছে যে  গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধের শুরু থেকে গাজায় শহীদের সংখ্যা ২০ হাজার ছুঁয়েছে। এদের মধ্যে ৪ হাজার শিশু এবং ৬,২০০ জন নারী রয়েছেন৷  এছাড়া এই কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে  যে  এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৫২ হাজার ৬০০ মানুষ আহত হয়েছেন। 

গাজায় মানবিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটার কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ ও হামলা বন্ধ করার চেষ্টা করতে এবং এই উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ বন্ধ করার জন্য ইউরোপের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url