ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ: গাজা যুদ্ধের সর্বশেষ সকল খবরাখবর

মার্কিন জাহাজে ইয়েমেনের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা


লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করে ব্যাপকভাবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন। ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলন সমর্থিত সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করে ব্যাপকভাবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় ইয়েমেনের সেনারা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলেও জানিয়েছে।

ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারিয়ি গতকাল (বুধবার) এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন সন্ত্রাসী বাহিনী সম্প্রতি লোহিত সাগরে ইয়েমেনি নৌ বাহিনীর ওপর যে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে তার প্রাথমিক জবাব এই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা। মার্কিন সেনাদের সাম্প্রতিক হামলায় ইয়েমেনের নৌ বাহিনীর তিনটি স্পিডবোট ডুবে যায় এবং ১০ সেনা নিহত হন।
জেনারেল সারিয়ি জানান, মার্কিন বাহিনীর জাহাজে হামলা চালানোর অভিযানে দেশের নৌ বাহিনী, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইউনিট অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকার যে যুদ্ধ জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে সেটি লোহিত সাগরে অবস্থান করে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে গাজার চলমান যুদ্ধে সহায়তা দিচ্ছিল।

ইয়েমেনি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র সুস্পষ্ট করে বলেন, তার দেশের সামরিক বাহিনী মাতৃভূমি এবং ইয়েমেনি জাতিকে রক্ষার ক্ষেত্রে বৈধ অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে কোন রকমের দ্বিধাবোধ করবে না।

তিনি বলেন, ইয়েমেনের সামরিক বাহিনী লোহিত সাগর দিয়ে বিশ্বের যেকোনো জাহাজ কোম্পানিকে তাদের জাহাজ পরিচালনার অনুমতি দেবে। শুধুমাত্র ইসরাইল অভিমুখী কোনো জাহাজকে এই পথে চলাচল করতে দেয়া হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না গাজার গণহত্যা বন্ধ হয়।


ইসরাইলকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানালো মুসলিম পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন


ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সংসদীয় ইউনিয়ন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার জন্য ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিচার দাবি করেছে। গতকাল (বুধবার) ইরানের রাজধানী তেহরানে সংগঠনটির ৫ম জরুরি অধিবেশন শেষে প্রকাশিত চূড়ান্ত ঘোষণায় এই দাবি জানানো হয়।

এছাড়া, ইহুদিবাদীদের চলমান আগ্রাসন ও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে নজিরবিহীন বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।

চূড়ান্ত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ইসরাইলকে অবশ্যই যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ইসরাইলের এই অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয় এ ঘোষণায়। পাশাপাশি ইসরাইলের চলমান আগ্রাসন দ্রুত বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

চূড়ান্ত ঘোষণায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, ইসরাইল গাজায় যে নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে তা বন্ধ না হলে মুসলিম বিশ্ব একেবারে চুপ করে থাকবে না।

গাজায় ইসরাইলি সেনা হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে


গাজায় প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর হামলায় ইসরাইলের সেনাদের হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে যুদ্ধক্ষেত্রে ইহুদিবাদি ইসরাইলের আরো এক সেনা নিহত হয়েছে। ইসরাইলের দখলদার বাহিনী ঘোষণা করেছে যে, গতকাল (মঙ্গলবার) ৯৯ ডিভিশনের কম্ব্যাট মেডিক্যাল ইউনিটের রিজার্ভ সেনা এলকানা নিউল্যান্ডার মারা যায়।

ইসরাইলের স্বীকারোক্তি মতে- নিউল্যান্ডারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত গাজায় স্থল অভিযান চালাতে গিয়ে ১৮৬ জন দখলদার সেনা নিহত হয়েছে। তবে গাজার প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলো বলছে, তাদের হামলায় ইসরাইলের আরো বেশি সেনা মারা গেছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলের সর্বমোট ৫২০ জন সেনা ও ৬০ জন পুলিশ নিহত হয়েছে বলে তেল আবিব স্বীকার করেছে।

এদিকে, গতকাল মধ্য গাজায় ইহুদিবাদীদের ইফতাচ ব্রিগেডের আরেক সেনা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, গাজায় যুদ্ধ করতে গিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের খ্যাতনামা নায়ক ইদান আমেদি মারাত্মকভাবে আহত হয়ে এখন হাসপাতালে শয্যাশায়ী। জীবনে প্রথম যুদ্ধ করতে গিয়েই সে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। এর আগে ইসরায়েলের একটি সিরিয়ালে একজন সেনার ভূমিকায় অভিনয় করে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল আমেদি। ওই সিরিয়ালে গাজা ও পশ্চিম তীরে বহু অভিযানের সফল নেতৃত্ব দেয় আমেদি। কিন্তু বাস্তব জীবনে যুদ্ধে গিয়েই সে আহত হয়েছে। কুর্দি বংশোদ্ভুত আমেদি একজন সঙ্গীতশিল্পী ও লেখক হিসেবেও পরিচিত।

গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের ৫ কর্নেলসহ ১৩৫ সেনা কর্মকর্তা নিহত

গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রায় ১২ শত সেনা ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও অন্য কয়েকটি সংগঠনের যোদ্ধাদের হামলায় এ পর্যন্ত ইহুদিবাদী ইসরাইলের ৫২০ জন সেনা ও ৬০ জন পুলিশ নিহত হয়েছে। ইসরাইলের দখলদার সরকার এসব নিহত সেনা ও পুলিশের নাম পরিচয় প্রকাশ করেছে।


প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, গাজা থেকে চালানো অভিযানের প্রথম দিন থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছে ইসরাইলের ৫ কর্নেলসহ ১৩৫ সেনা কর্মকর্তা। ৭ অক্টোবর গাজার প্রতিরোধকামী যোদ্ধাদের অভিযানে ইসরাইলের নাহাল ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল জনাথন স্টেইনবার্গ নিহত হয়েছেন। ওইদিন সকালে আরো নিহত হয়েছেন ইসরাইলের কথিত ‘ঘোস্ট ইউনিটের’ কমান্ডার কর্নেল রয় লেভি, গাজা ডিভিশনের সাউদার্ন ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল আসাফ হামামি। এরমধ্যে আসাফ হামামির লাশ হামাস যোদ্ধারা গাজায় নিয়ে গেছেন।

এছাড়া গাজার শুজাইয়া এলাকায় হামাসের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধের সময় গোলানি ব্রিগেডের অন্যতম কমান্ডার কর্নেল ইজ্জাক বেন বাসাত এবং অন্য নয় সেনা নিহত হয়। এর পাশাপাশি ইসরাইলের রিজার্ভ সেনা কর্মকর্তা কর্নেল লায়ন বার চলমান যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গাজা যুদ্ধ শুরু পর থেকে এই পর্যন্ত ইসরাইলের নয় জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, ৩৬ জন মেজর, ৪৭ জন ক্যাপ্টেন এবং ৩৯ জন লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের হামাস-সহ অন্য প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর হামলায় ইসরাইলের এই ব্যাপক সংখ্যক সেনাসহ এ পর্যন্ত ১২শর বেশি মানুষ মারা গেছে। এতে ইসরাইলের ভেতরে ব্যাপকভাবে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে এবং নেতানিয়াহু সরকার প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে।

যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বারবার ইসরাইলি জনগণকে হামাস নির্মূল করার মধ্য দিয়ে বন্দীদের জীবিত ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেও যুদ্ধের তিন মাসে একজন বন্দীকেও মুক্ত করতে সক্ষম হয়নি। এ নিয়ে ইসরাইলের ভেতরে নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ সরাসরি বলেছেন, এই সরকার ভেঙে দিয়ে নতুন সরকার গঠন করতে হবে যেখানে নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না।

অনির্দিষ্টকাল যুদ্ধ চললেও প্রতিরোধ ফ্রন্ট নির্মূল হবে না


ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজায় যত দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধই চালাক না কেন এটি গাজা-ভিত্তিক প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোকে নির্মূল করতে পারবে না। ইসলামি জিহাদের সামরিক বাহিনী আল-কুদস ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু হামজা গতরাতে এক ভিডিও বার্তায় এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, “প্রতিরোধ ফ্রন্টকে নির্মূলের ইসরাইলি লক্ষ্য কোনোদিন অর্জিত হবে না তা সে যুদ্ধ যতই প্রলম্বিত হোক।” গত ৭ অক্টোবর গাজার প্রতিরোধ ফ্রন্টগুলো ইসরাইলের অভ্যন্তরে ঢুকে আল-আকসা তুফান অভিযান চালানোর পর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। দখলদার সেনাদের পাশবিক হামলায় এ পর্যন্ত ২৩,২১০ গাজাবাসী নিহত হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

হামাস’সহ গাজা-ভিত্তিক প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে নির্মূল করার পাশাপাশি গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীকে এই উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চালাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। এ সম্পর্কে আবু হামজা বলেন, “গাজাবাসীকে বিতাড়িত করার যে বেপরোয়া চেষ্টা চলছে ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের প্রতিরোধ ফ্রন্ট তার চেয়ে শক্তিশালী।” আল-কুদস ব্রিগেডের মুখপাত্র বলেন, “ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইহুদিবাদী জনগণকে গাজায় ফেরার মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন।” ২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল তেল আবিব।

আবু হামজা আরো বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা মেনে নিয়ে নেতানিয়াহুকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অচিরেই গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। ইসরাইলি বাহিনী গাজায় ঐতিহাসিক পরাজয়ের সম্মুখীন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

চেচনিয়ায় ফিলিস্তিনিদের জন্য নির্মিত হবে অ্যাপার্টমেন্ট


রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রে গাজা উপত্যকা থেকে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিদের জন্য বহু সংখ্যক অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রজাতন্ত্রের প্রধান রমজান কাদিরভ। তিনি বলেছেন, উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের জন্য যা কিছু সম্ভব তার সবই করবে চেচনিয়া প্রজাতন্ত্র।

চেচনিয়ায় আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য বাসভবন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল (বুধবার) এ ঘোষণা দেন রমজান কাদিরভ। তিনি বলেন, “অত্যন্ত আনন্দের সাথে আমি গাজার আশ্রয় গ্রহণকারী লোকজনকে জানাচ্ছি যে, শিগগিরই তারা বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি পাবেন। আমি জোর দিয়ে বলছি, আমরা তাদেরকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা এবং সমর্থন দিয়ে যাব।”

আঞ্চলিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো এই আবাসিক প্রকল্প নির্মাণের অর্থ যোগান দিয়েছে। আবাসিক প্রকল্পে বসবাসকারী গাজার প্রতিটি পরিবারের জন্য এক লাখ রুবল বা ১১২০ ডলার করে দেয়া হবে। চেচনিয়ার আঞ্চলিক সরকার এই অর্থ যোগান দেবে।

চেচেন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে তারা গাজার জন্য মানবিক সহায়তা এবং উদ্বাস্তুদের জন্য বাসভবন নির্মাণ করতে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ দিয়েছেন।

গাজা থেকে এ পর্যন্ত ২০০ ফিলিস্তিনি চেচনিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ৩০ জন স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন।

প্রতিরোধ কমাণ্ডারদের হত্যার ঘৃণ্য কৌশল হাতে নিয়েছে ইসরাইল


গাজায় সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে অবৈধ এই আগ্রাসী সরকার প্রতিরোধকামী কমান্ডারদের হত্যাকে কৌশলে পরিণত করেছে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আমেরিকা ও ইহুদিবাদী শাসক প্রতিরোধকামী কমান্ডারদের বিরুদ্ধে ৪টি সন্ত্রাসী অভিযান চালিয়েছে। সিরিয়ায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডবাহিনী আইআরজিসির অন্যতম কমাণ্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইয়্যেদ রাজি মুসাভি, লেবাননের হিজবুল্লাহর অপারেশন বিভাগের অন্যতম প্রধান কমান্ডার ও কর্মকর্তা উইসাম হাসান আল-তাওয়িল, হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের উপপ্রধান সালেহ আল-আরুরি ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলায় শাহাদাৎ বরণ করেছেন। এছাড়া মার্কিন সন্ত্রাসী বাাহিনীর ড্রোন হামলায় ইরাকের আল-নুজবা আন্দোলনের কমান্ডার আবু তাকাভি আল-সাইদিও নিহত হন। এদিকে, হিব্রু সূত্রে প্রকাশিত একটি নথি অনুযায়ী, ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিভাগকে প্রতিরোধকামী নেতাদের নির্মূল করার জন্য একটি ব্যাপক পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কোন পরিস্থিতিতে এবং কোন লক্ষ্য হাসিলের জন্য এসব হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে? প্রকৃতপক্ষে  এসব হত্যাকাণ্ড এমন একটি পরিবেশে পরিচালিত হয়েছে যেখানে গাজার বিরুদ্ধে ৩ মাসের যুদ্ধ অতিক্রম করলেও ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী তার দুটি প্রধান সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। যেমন সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকামীদের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দীদেরকে জোরপূর্বক মুক্ত করে নিয়ে আসা এবং হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া। অন্যদিকে এসব হত্যাকাণ্ড এমন এক পরিস্থিতিতে সংঘটিত হয়েছে  যখন দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বেড়ে গেছে এবং একইসঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া বা বন্দীদের মু্ক্ত করার বিষয়ে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার মধ্যে উত্তেজনা ও মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা লাভবান হওয়ার জন্য এবং মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে চলমান চাপ কমানোর জন্য প্রতিরোধ কমান্ডারদের হত্যার কৌশল বেছে নিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

সুতরাং, হত্যাকাণ্ড থেকে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর অন্যতম লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি আরও দুটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রতিরোধের সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করা এবং যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করা। প্রকৃতপক্ষে গাজায় পরাজয় এড়াতে ইহুদিবাদী শাসক আমেরিকার উপস্থিতি নিয়ে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে একটি বড় যুদ্ধ বাধানোর পায়তারা করছে।তেল আবিব সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে চলমান গাজা যুদ্ধে আমেরিকাকে টেনে নিয়ে আসা এবং ইরানকে জড়িয়ে গাজায় অপমান অপদস্ত  হওয়া থেকে নিজের গা বাছানো।

পরিশেষে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পশ্চিম এশিয়া জুড়ে প্রতিরোধকামী কমান্ডারদের হত্যার জন্য একটি অভিযান চালানোর বিষয়ে তেল আবিব সরকারের পরিকল্পনার প্রতি ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে সন্ত্রাস কার্যক্রম চালিয়েও ইহুদি-মার্কিন অক্ষ প্রতিরোধকামী ফ্রন্টগুলোকে দুর্বল করতে পারে নি কারণ গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডাররা এর আগেও ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় শহীদ হয়েছিল। আল-আকসা তুফান অভিযান প্রমাণ করছে যে ইসরাইলি বাহিনীর এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধকামীতাকে তো থামাতে পারেই নি বরং এতে বিপরীত ফল হয়েছে এবং প্রতিরোধ শক্তি আরো দৃঢ় হয়েছে। একই সঙ্গে ইহুদিবাদী শাসকদের মনে রাখতে হবে যে প্রতিরোধের কৌশলগত ধৈর্য সীমাহীন ধৈর্য নয়। বরং তাদের জন্য একটি কঠোর প্রতিশোধের অপেক্ষা করছে।

ইসরাইল গণহত্যা বিষয়ক কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে


দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেছেন, হামাস-বিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজায় গণহত্যা বিষয়ক কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে দায়ের করা মামলার শুনানির প্রথম দিনে তিনি একথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইল ৩ মাসের বেশি সময় ধরে বর্বর যুদ্ধ চালাচ্ছে এবং হামাসের ৭ অক্টোবরের অভিযানের জবাব দিতে গিয়ে ইসরাইল যে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে তা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী আরো বলেছেন, গাজার যে সহিংসতা আমরা দেখতে পাচ্ছি তা ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়নি, তা মূলত শুরু হয়েছে ৭৫ বছর আগে। লামোলা বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনের জনগণ ইসরাইলের হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নের মধ্যে বসবাস করে আসছে। আন্তর্জাতিক আইনের গ্যাঁড়াকলে ফেলে এখনো গাজাকে অধিকৃত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তিনি সুস্পষ্ট করে বলেন, ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানের জবাবে ইসরাইল যেভাবে আগ্রাসন চালিয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক সমস্ত কনভেনশন লংঘন হয়েছে।

গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পরই দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী সৌদি আরব


ইহুদিবাদী বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যা চালানো সত্ত্বেও সৌদি আরব এখনও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। ব্রিটিশ সরকারের অর্থে পরিচালিত গণমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রিয়াদের এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন লন্ডনে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর।

তিনি বলেছেন, গত বছরের শেষ দিকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে মার্কিন মধ্যস্থতায় একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল সৌদি আরব। তবে ৭ অক্টোবর গাজা-ভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো আল-আকসা তুফান অভিযান চালানোর পর সে প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।

প্রিন্স বন্দর বলেন, গাজায় ‘ব্যাপক মাত্রায়’ হতাহতের ঘটনা সত্ত্বেও সৌদি আরব এখনও মনে করে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সৌদি রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষেও কথা বলার ভাব করেন। তিনি বলেন, গাজা একটি ‘মানবিক বিপর্যয়ের’ সম্মুখিন এবং আন্তর্জাতিক সমাজ যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।  তিনি আরো দাবি করেন, ইসরাইলের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির শর্ত হবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

মুসলমানদের দু’টি প্রধান ধর্মীয় স্থান মক্কা ও মদীনা সৌদি আরবে অবস্থিত হওয়ায় দেশটিকে অনেকে আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতা মনে করে।  ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ভূমি জবরদখল করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে এখন পর্যন্ত রিয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে তেল আবিবকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে সৌদি আরব ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে দিলে তা অবৈধ দখলদার এই শক্তির জন্য বিশাল অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।

গত সেপ্টেম্বরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান একটি মার্কিন টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, রিয়াদ প্রতিদিন একটু একটু করে ইসরাইলের সঙ্গে একটি চুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেননি যে, তেল আবিবের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির শর্ত হবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url