ইসরাইলের হাইফা বন্দর বিপর্যস্ত ইরাকের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে | হিজবুল্লাহর হামলায় বিমান ঘাঁটির ব্যাপক ক্ষতি


ইসরাইলের হাইফা বন্দরে ইরাকের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইহুদিবাদী ইসরাইলের হাইফা বন্দরের পাশাপাশি ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থিত বিভিন্ন মার্কিন অবস্থানে হামলা চালানোর কথা ঘোষণা করেছে ইরাকের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন। ইরাকের সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনের ছাতা সংগঠন ‘ইসলামি রেসিস্ট্যান্স ইন ইরাক’ আজ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ইসরাইলের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দর নগরী হাইফার একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটে’ হামলা চালিয়েছে।

ওই হামলায় উন্নত প্রযুক্তির দূরপাল্লার ‘আল-আরকাব’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ইরাকি রেসিস্ট্যান্স ফোর্স বলেছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী বাহিনীর চলমান গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি সংহতি জানিয়ে হাইফায় হামলা চালানো হয়েছে।

ইরাকের প্রতিরোধ আন্দোলন একইসঙ্গে সিরিয়ার কাছ থেকে দখলীকৃত ইসরাইলের গোলান মালভূমির একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানার কথা ঘোষণা করেছে। এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলেও প্রত্যয় জানিয়েছে ইরাকের প্রতিরোধ আন্দোলন।
গোলানে হামলা চালানোর আগে ইরাকের প্রতিরোধ আন্দোলন সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হাসাকাহ শহরে দখলদার মার্কিন সেনাদের ‘কাসরাক’ ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায়। এছাড়া, ইরাকের আল-আনবার প্রদেশের আইন আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতেও ড্রোন হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইরাকের প্রতিরোধ আন্দোলন।

গত ৭ অক্টোবর গাজা উপ্যত্যকায় ইসরাইলি ভয়াবহ গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে ইরাকের প্রতিরোধ আন্দোলন ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুর পাশাপাশি তেল আবিবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মার্কিন বাহিনীর ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানোর হুমকি দেয়। তখন থেকে তারা ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের হামলা চালিয়ে আসছে।


হিজবুল্লাহর হামলায় বিমান ঘাঁটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর হামলায় নিজের একটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ঘাঁটির ‘ব্যাপক ক্ষতি’ হওয়ার কথা স্বীকার করেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। উত্তর ইসরাইলের ওই ঘাঁটিতে শনিবার ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল হিজবুল্লাহ।  সংগঠনটি বলেছিল, বৈরুতে হামাসের উপ প্রধান সালেহ আল-আরুরিকে হত্যার জবাব দিতে ওই হামলা চালানো হয়েছে।

ইহুদিবাদী গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, লেবানন সীমান্ত থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে মেরন পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ওই বিমান ঘাঁটিতে শনিবার হিজবুল্লাহ অন্তত ৪০টি রকেট ও বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। 

হামলায় ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি’ হওয়ার কথা স্বীকার করলেও সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষতির পরিমাণ জানায়টি দখলদার সেনারা। তবে হিজবুল্লাহ ওই হামলার যে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইলি ঘাঁটিটির দু’টি রাডার গম্বুজে ট্যাংক-বিধ্বংসী গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানছে। যে ঘাঁটির কাজই হচ্ছে ‘শত্রু বাহিনীর’ বিমান হামলা সম্পর্কে আগাম সতর্কতা সৃষ্টি ও প্রতিহত করা সেই ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর  ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানল।

গতরাতে (রোববার রাতে) ইসরাইলি বাহিনীর সেনা মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি দাবি করেন, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ঘাঁটিটির ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করা সম্ভব।  তিনি বলেন, “আমরা আগে থেকে মেরামতের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম।” ব্যাকআপ সিস্টেমের মাধ্যমে ঘাঁটির কার্যক্রম এখনও চলছে বলে তিনি দাবি করেন। হ্যাগারি বলেন, এরকম একটি স্পর্শকাতর ঘাঁটিতে হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য শনিবারের হামলা কীভাবে সম্ভব হলো তার তদন্ত শুরু হয়েছে।

হিজবুল্লাহ শনিবারই এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, সালেহ আল-আরুরিকে হত্যার ‘প্রাথমিক জবাব’ হিসেবে ইসরাইলের ওই বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় মেরন ঘাঁটিতে বিভিন্ন ধরনের ৬২টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির একজন সিনিয়র কমান্ডার বলেছেন, ইসরায়েলি বিমান হামলা প্রতিহত করার জন্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা একদিন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করবে। তিনি আরো বলেছেন, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আইআরজিসির কুদস ফোর্সের শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইরাজ মাসজেদি রোববার তেহরানে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনিরা আজ শুধু রকেট দিয়ে যুদ্ধ করছে কিন্তু এমন দিন আসবে যখন তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হস্তগত করবে এবং ইহুদিবাদী সেনাদেরকে বিমান হামলা চালাতে দেবে না।”

জেনারেল মাসজেদি বলেন, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্রুপগুলো গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর ভয়াবহ ক্ষতি করেছে। স্পেশাল গোলানি ব্রিগেডসহ ইসরাইলের ছয়টি ব্রিগেড ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে প্রচণ্ড মার খেয়েই গাজা থেকে সরে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জেনারেল মাসজেদি এর আগে ইরাকে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মধ্যপ্রাচ্যে তৎপর ইহুদিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রতিরোধ অক্ষের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি রোববারের সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে আরো বলেন ইরানের সমর্থনপুষ্ট প্রতিরোধ গ্রুপগুলো চূড়ান্তভাবে শত্রুদের পরাজিত করবে।


আরুরির সহযোদ্ধারা ইসরাইলের দুঃস্বপ্ন হবে

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের উপপ্রধান শহীদ সালেহ আল-আরুরির অনুসারী যোদ্ধারা ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র কুদস ফোর্সের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কায়ানি আজ (রোববার) একথা বলেছেন।

হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে লেখা এক চিঠিতে তিনি এসব কথা বলেন। জেনারেল কায়ানি সালেহ আল-আরুরির শাহাদাতের জন্য হামাস নেতা হানিয়াকে অভিনন্দন ও সমবেদনা জানান। গত ২ জানুয়ারি লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দাহিয়ে এলাকায় ইসরাইলের গুপ্ত হত্যার শিকার হন আরুরি।

চিঠিতে জেনারেল কায়ানি আরো বলেছেন, বিশ্ব দেখবে কিভাবে শহীদ আরুরির সহযোদ্ধারা শিশু হত্যাকারী দখলদার ইসরাইলের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। কুদস ফোর্সের প্রধান আরো বলেন, ইসরাইল-বিরোধী লড়াই সংগ্রামে উজ্জ্বল ভূমিকা এবং মেধাবী রেকর্ড সৃষ্টি করে সালেহ আল-আরুরি শহীদ হয়েছেন।

হামাসের ৫৭ বছর বয়সী এই নেতা হামাসের সামরিক শাখা ইজাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়া, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভেতরে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো যে অভিযান চালিয়েছে তার মূল কারিগর ছিলেন আরুরি।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url