নেতানিয়াহুর ক্ষমতা ছাড়ার দাবিতে ইসরাইলে গণ-বিক্ষোভ | মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক উপায় খুঁজছে ইসরাইলি মন্ত্রী


নেতানিয়াহুর ক্ষমতা ছাড়ার দাবিতে ইসরাইলে গণ-বিক্ষোভ

গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর হাতে আটক ইসরাইলি বন্দিদের জীবিত উদ্ধার করার দাবিতে গতরাতে রাজধানী তেল আবিবসহ ইসরাইল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের পতন এবং গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শনিবার রাতে তেল আবিবের ‘পণবন্দি’ স্কয়ারে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন। বিক্ষোভে গত ৭ অক্টোবরের আল-আকসা তুফান অভিযানে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দিদের স্বজনরাসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।

ওই বিক্ষোভ সমাবেশ সম্পর্কে তেল আবিব থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানান, নেতানিয়াহু সরকারের পতন ও গাজা যুদ্ধ বন্ধের যে দাবি তোলা হয়েছে তা নজিরবিহীন ঘটনা। কারণ, যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা পর্যন্ত এ বিষয়ে একমত ছিল যে, যখন গাজায় যুদ্ধ চলছে এবং সেখানে পণবন্দিরা আটক রয়েছে তখন ইসরাইলে ঐক্য বজায় রাখতে হবে।

ওই সংবাদদাতা আরা জানান, বিগত সপ্তাহগুলোতে তেল আবিবের বিক্ষোভে কয়েক ডজন থেকে শুরু করে কয়েকশ’ মানুষ সমবেত হতো। কিন্তু গতরাতের বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়।  বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে ‘শেম শেম’ বা ‘লজ্জা লজ্জা’ বলে স্লোগান দেন। তারা ৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য নেতানিয়াহু সরকারকে দায়ী করেন।

জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের জেরুজালের শহরেও প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগের বাসভবনের সামনে বিপুল সংখ্যক ইসরাইলি সমাবেশ করেন। তারা গাজায় এখনও আটক শতাধিক ইসরাইলি ‘পণবন্দি’কে মুক্ত করে আনার দাবি জানান। ইসরাইলের অন্যান্য শহরেও শনিবার রাতে একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

যুদ্ধের বিস্তার গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণ ঘটাবে

দক্ষিণ লেবাননে যুদ্ধের বিস্তার ঘটলে গোটা অঞ্চলে ‘ভয়াবহ বিস্ফোরণ’ ঘটবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।

দক্ষিণ লেবানন সীমান্তে যখন ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের মধ্যে গোলাগুলি বিনিময় চলছে তখন তিনি এ হুঁশিয়ারি দিলেন।

মিকাতি গতকাল (শনিবার) বৈরুত সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোসেপ বোরেলের সঙ্গে এক বৈঠকে এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। হিজবুল্লাহ ইসরাইলের একটি নজরদারি বিমানঘাঁটিতে ৬২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার কয়েক ঘণ্টা পর বোরেল-মিকাতি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর আল-আকসা তুফান অভিযানের জের ধরে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এটি ছিল হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ইসরাইল-বিরোধী হামলা। বৈরুতে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় হামাসের ডেপুটি পলিটব্যুরো প্রধান সলেহ আল-আরুরির হত্যাকাণ্ডের জবাব দিতে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হিজবুল্লাহ।

বোরেলের সঙ্গে বৈঠকে মিকাতি আরো বলেন, লেবানন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। ওই প্রস্তাবে লেবাননের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ইসরাইলি হামলা বন্ধ করার এবং লেবাননের দখলীকৃত এলাকাগুলো থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।  নাজিব মিকাতি ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে ফিলিস্তিন সংকটের একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধান করার আহ্বান জানান।

মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক উপায় খুঁজছে ইসরাইলি মন্ত্রী

গাজাবাসীকে শাস্তি দেয়ার জন্য ‘মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক উপায়’ খুঁজে বের করতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার মন্ত্রিসভার একজন উগ্র ডান-পন্থি মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, জাপানি নাগরিকদের মনোবল ভেঙে তাদেরকে পরাজিত করার জন্য আমেরিকা যা করেছিল গাজাবাসী ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেও তেলআবিবকে একই আচরণ করতে হবে।

উগ্র মন্ত্রী অ্যামিচাই এলিয়াহু ইসরাইলের ১০৩ এফএম রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে ঢুকে আল-আকসা তুফান অভিযান চালানোর পর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গাজা উপত্যকাকে পিষে ফেলার হুমকি দিয়েছিল ইহুদিবাদী ইসরাইল। কিন্তু তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও গাজা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছে না তেল আবিব। এ কারণে গাজাবাসীকে শাস্তি দেয়ার জন্য ইসরাইলের নানা মুনি নানা মত দিয়ে যাচ্ছেন।

উগ্রবাদী মন্ত্রী এলিয়াহু তার সাক্ষাৎকারে বলেন, আগে গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের মনোবল ভাঙার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস ও তাদেরকে বাস্তুচ্যুত করে তাদের জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিতে হবে।

ইসরাইলি মন্ত্রী বলেন, গাজাবাসীর সামনে এই উপত্যকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কোনো বিকল্প রাখা যাবে না। তারা যাতে এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয় সে ব্যবস্থা করতে  হবে।

ইহুদিবাদী যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট ‘যুদ্ধ-পরবর্তী’ গাজার জন্য যে পরিকল্পনা উত্থাপন করেছেন তার তীব্র সমালোচনা করেন এলিয়াহু। গ্যালান্ট সম্প্রতি বলেছিলেন, যুদ্ধ শেষে গাজার বেসামরিক প্রশাসনের দায়িত্বভার এমন কারো কাছে হস্তান্তর করতে হবে যারা ইসরাইলের প্রতি শত্রু-ভাবাপন্ন নয়। কিন্তু এলিয়াহু বলেন, গাজায় এমন মানসিকতাসম্পন্ন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ইতামার বেন-গাভিরের নেতৃত্বাধীন উগ্র ডান-পন্থি ওজমা ইয়েহুদিত পার্টির এই মন্ত্রী গত নভেম্বর মাসে গাজা উপত্যকায় পরমাণু বোমা নিক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইসরাইলের এই পার্টি গাজা উপত্যকার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে আবার ইহুদি বসতি নির্মাণের জোর দাবি জানিয়ে আসছে।


খোদায়ি ওয়াদা অনুযায়ী ইসরাইলের ধ্বংস অনিবার্য বলেছেন রায়িসি

ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি বলেছেন, বিশ্বের দাম্ভিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে নিরঙ্কুশ সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও ইহুদিবাদী ইসরাইল নিশ্চিতভাবে একদিন অদৃশ্য হয়ে যাবে।

তিনি গতকাল (শনিবার) ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর জানজানে এক বিশাল জনসভায় এ ভবিষ্যদ্বাণী করেন।

রায়িসি বলেন, ভুয়া ইসরাইল সরকার অন্যায় ও অবিচারের মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঐশী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্যায় ও অবিচারের কোনো স্থায়িত্ব নেই। শুধুমাত্র ন্যায়বিচার ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা টিকে থাকবে।

তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এদেশের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের শত্রুতার প্রধান কারণ ইরান নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। রায়িসি বলেন, সমস্ত শত্রুতা সত্ত্বেও আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা ও নীতি হচ্ছে বিশ্বের নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে থাকা।

প্রেসিডেন্ট রায়িসি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের স্থপতি ইমাম খোমেনী (রহ.) চার দশকেরও বেশি সময় আগে নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি ইহুদিবাদীদের কবল থেকে জেরুজালেম আল-কুদস শহর মুক্ত করা এবং ইসরাইল সরকারের বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন যে নীতি তেহরান এখনও ধারন করে। তিনি বলেন, ইরান চার দশক ধরে ফিলিস্তিনি জাতির অধিকার নিয়ে যে কথা বলে এসেছে গোটা বিশ্ব এখন তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলার জন্য গত প্রায় ৪৫ বছর ধরে নানারকম শত্রুতা ও অন্যায় আচরণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরে যায়নি তেহরান। সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইরান সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হুমকি ধমকির কথা উল্লেখ করে রায়িসি বলেন, তারা ভেবেছিল তারা ইরানকে পরমাণু শিল্প থেকে বঞ্চিত করতে পারবে, কিন্তু তা পারেনি। সামরিক শিল্পের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এসব শিল্পে আমাদের অর্জন অনেক এবং আমাদেরকে এখনও আরো বহুদূর যেতে হবে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ নানামুখী চাপ সত্ত্বেও ইরান ৫% অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বলে প্রেসিডেন্ট রায়িসি উল্লেখ করেন।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url