দ্বীনি জিজ্ঞাসা ও জবাব | ইসলামিক প্রশ্ন ও উত্তর (পর্ব - ১১)


বিতর নামাযের উল্টা তাকবীর


প্রশ্ন-৯১: বিতর নামাযের মধ্যে যে উল্টা তাকবীর দেয়া হয় এটা কতটুকু সঠিক?

উত্তর: কুনুতের আগে যে 'আল্লাহু আকবার' বলে আমরা রুকুতে না গিয়ে উপরে হাত ওঠাই, এটাকে বাংলাদেশের মানুষ উল্টা তাকবীর বলে । কুনুতের আগে তাকবীর বলা এটা হযরত উমার রা.সহ বিভিন্ন সাহাবি থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে । রাসূল (*) রুকুর আগে বিতরের কুনুত পড়তেন, এটাও সহীহ প্রমাণিত এবং কুনুতের আগে তাকবীর আল্লাহু আকবার বলা, এটাও প্রমাণিত । তবে আল্লাহু আকবার বলার পরে হাত বাঁধব না কি মুনাজাতের মতো হাত তুলে দাঁড়াব, এ ব্যাপারে হাদীসে তেমন স্পষ্ট পাওয়া যায় না। কোনো সাহাবি মুনাজাতের মতো হাত তুলে কুনুত পড়তেন । তাবেয়িদের কেউ কেউ হাত বেঁধে ফেলতেন। তো এজন্য আল্লাহু আকবার বলাটা সহীহ সনদে প্রমাণিত । আপনি মুনাজাতের মতো হাত তুলে কুনুত পড়তে পারেন, আবার হাত বেঁধেও পড়তে পারেন ।

ইসলামিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল


প্রশ্ন-৯২: বাংলাদেশে ইসলামিক ইংলিশ মিডিয়াম অনেক স্কুল আছে। আমি (নারী) পড়াশোনা শেষ করে ওই ধরনের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে জয়েন করতে চাই । তবে আমার বাবা চান, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী আমি যেন অনার্স লেভেলের কলেজে শিক্ষকতা করি। যেহেতু জাগতিক বিচারে অনার্স লেভেলের শিক্ষকের মর্যাদা বেশি, তাই । তো আমি যদি ইসলামিক পরিবেশ আর ঈমানের দিক থেকে সহায়ক ইসলামি কোনো স্কুলে জয়েন করি তাহলে আমার মা বাবার প্রতি অন্যায় করা হবে কি না?

উত্তর: শুরুতে আমি আপনার বাবা-মার প্রতি অনুরোধ করব, মূলত দুনিয়াতে আমরা কী চাই? অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া। আর তো কিছু নয়! বাকি আমাদের হৃদয়ের শান্তি, সামাজিক শান্তি, পারিবারিক মর্যাদা- এটা তো আসল । আর এগুলো তখনই নিশ্চিত হয়, যখন আমরা দীন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে পারি পরিবারেও শান্তি হয়, আমাদের হৃদয়ও প্রশান্ত হয়। কাজেই অল্প কিছু টাকার ফারাকের চিন্তা না করে আমাদের আরো বেশি চিন্তা করতে হবে কীভাবে আমাদের দীন, বিবেক, মূল্যবোধ বজায় রেখে অন্তত মৃত্যু পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারি এবং পরবর্তী জীবন সুন্দর করতে পারি। আপনার বাবা-মা যদি এমন কিছু বলেন, যেটা শরীআতের সাথে সাংঘর্ষিক, তাহলে সেটা মানা কোনো সন্তানের জন্য ফরয নয় । তবে এ জন্য বাবা-মার সাথে বেয়াদবি করা যাবে না। আপনি আপনার সিদ্ধান্ত নেবেন । 

বাবা-মাকে আদবের সাথে বলবেন । ইনশাআল্লাহ বাবা-মা আস্তে আস্তে বুঝে যাবেন । তবে আপনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দীনি পরিবেশ সংরক্ষণ করে কর্ম করবেন, এটা অবশ্যই ঠিক করেছেন । এটা আপনার ঈমানের চাহিদা । এবং আমরাও আপনাকে এই পরামর্শই দিচ্ছি ।

আযান ও ইকামত


প্রশ্ন-৯৩: যে আযান দিবে তাকেই কি ইকামত দিতে হবে ?

উত্তর: একটা দুর্বল সনদের হাদীসে এসেছে-

مَنْ أَذَّنَ، فَهُوَ يُقِيمُ

যে আযান দেবে, সে ইকামত দেবে”। হাদীসটার সনদ দুর্বল। ফুকাহাগণ এটাকে মুস্তাহাব হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যে আযান দেবে সে-ই যদি ইকামত দেয়, এটা উত্তম । তবে অন্য কেউ ইকামত দিলে কোনো সমস্যা নেই। কেউ তাকে মাকরুহ বলেন নি । অনুচিতও বলেন নি এবং এর নযির আছে ।

কুরআন তিলাওয়াতের রিংটোন


প্রশ্ন-৯৪: রিংটোন হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত দেয়া যাবে কি না?

উত্তর: কুরআনের কোনো কথা রিংটোন হিসেবে কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না । কারণ, এতে কুরআনের অবমাননা হয় । কুরআন পড়তে হয় মন দিয়ে শোনার জন্য অথবা অপরকে শোনানোর জন্য। তবে অন্যান্য ইসলামি কথা, গজল, দুআ অবশ্যই ব্যবহার করতে পারি ।

জাকির নায়েকের পোশাক


প্রশ্ন-৯৫: ডা. জাকির নায়েক যে পোশাক পরেন এটাকে কি ইসলামি পোশাক বলা যায়? বা ইসলামি পোশাক আসলে কোনটা?

উত্তর: প্রথমে একটা মূলনীতি আমাদের বুঝতে হবে । ইসলাম বিশ্বজনীন সর্বজনীন ধর্ম হিসেবে আমাদের কর্মকে দুইভাগে বিভক্ত করে। একটা ইবাদত। যেটা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য আমরা করি । আরেকটা হল, যেটা জাগতিক কাজ । যেটা সকল ধর্মের মানুষ করে। বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সবাই করে । তো ইবাদত রাসূলুল্লাহ সা.এর পদ্ধতিতে হতেই হবে । আর পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া, বাড়িঘর ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশস্ততা রয়েছে । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই বলেছেন, 'তোমরা যা খুশি খাও, যা খুশি পান করো, যা খুশি পরো; তবে এই নির্ধারিত নিয়মের ভেতরে' । ইসলামি পোশাকের ভেতরে কয়েকটা পর্যায় রয়েছে। যে পোশাক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পরতেন এটা হুবহু অনুসরণ করা ভালো । সাহাবিরা করেছেন । এটা কেউ করতে পারলে সোয়াব আছে । না করলে গোনাহ নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে পোশাক পরলে প্রথম নজরেই আপনাকে মুত্তাকি মুসলিম হিসেবে চেনা যায়, এটা নিঃসন্দেহে উত্তম । তৃতীয় হল, যে পোশাক পরলে আপনাকে প্রথম নজরেই অমুসলিম অথবা কোনো পাপী গ্রুপের মনে হয়, এটা পরা নাজায়েজ । মাঝখানে যে পোশাকগুলো আছে, যেগুলো সবাই পরে, এগুলোর অধিকাংশই বৈধ। আমার নিজেরই লেখা একটা বই আছে পোশাকের ব্যাপারে, আপনারা দেখতে পারেন । আপনি জাকির নায়েকের পোশাকের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন, টাইয়ের ব্যাপারে অনেকের আপত্তি আছে, কেউ জায়েয বলেছেন । আর প্যান্ট এটা তো পায়জামার মতোই । বাকি শার্ট এটা বৈধ পোশাক । তবে এটাকে আমি ইসলামি বলব না । ইসলামসম্মত বলতে পারি ।

ভাইয়ের সন্তানকে লালন পালন


প্রশ্ন-৯৬: আমার বিয়ের বয়স আট বছর। আমাদের বাচ্চা হচ্ছে না। তাই আমার ছোট ভাইয়ের সন্তান নিতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে এই সন্তানের সাথে আমার স্ত্রীকে কি পর্দা করতে হবে? 

উত্তর: সন্তান না হলে সন্তান নিতে পারেন। এর দুটো পর্যায় রয়েছে। যদি শিশু অবস্থায় নেন, সাধারণত সন্তান না হলে স্তনে দুধ আসে না, তারপরেও আধুনিক পদ্ধতিতে স্ত্রী যদি শিশুকে দুধ খাওয়ান তাহলে ওই সন্তান আপনার দুধসন্তানে পরিণত হবে । এক্ষেত্রে পর্দার কোনো প্রশ্ন থাকবে না। আর যদি এমনি লালনপালন করেন তাহলে ইসলামি শরীআতে সেটা আপনার ভাইয়েরই সন্তান থাকবে, উত্তরাধিকার ভাইয়ের থাকবে, আপনি শুধু পালন করেন এটার ছওয়াব আপনি পাবেন । তার ভরণপোষণ, খাওয়ানোর ছওয়াব পাবেন । আপনার উত্তরাধিকার সে পাবে না, আপনি যদি উইল করে না দেন ।

ইসলামি অনুষ্ঠানে অনৈসলামিক বিজ্ঞাপন


প্রশ্ন-৯৭: টেলিভিশনে ইসলামি অনুষ্ঠানের ফাঁকে অনৈসলামিক বিজ্ঞাপন প্রচার কতটা যুক্তিযুক্ত?

উত্তর: আমরাও চাই না এই ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার হোক । আসলে একটা টিভি প্রোগ্রাম চালানোর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন । আমরা আশা করব টিভি কর্তৃপক্ষ আরো একটু ইসলামসম্মত করার চেষ্টা করবেন। তবে তাদের অর্থের প্রয়োজন । আমরা আপনাদের কাছে দুআ চাইব এবং আপনারাও সবাইকে বলবেন । যদি আমরা এমন স্পন্সর পেয়ে যাই, যারা বিজ্ঞাপন ছাড়া বা শরীআহসম্মত বিজ্ঞাপন দিয়ে এটা চালাতে পারেন, তাহলে টিভি কর্তৃপক্ষের তো কোনোই আপত্তি থাকার কথা না । আপনারা সবাই দুআ করেন, যেন এই ধরনের প্রোগ্রাম স্পন্সর করার মতো দীনদার মানুষ মিলে যায় ।

স্বামী চাইলে স্ত্রীর ভ্রূ-প্লাক করা


প্রশ্ন-৯৮: স্বামী চাইলে স্ত্রীদের ভ্রূ-প্লাক করা বৈধ হবে কি?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যারা ভ্রূ বা শরীরের চুল টেনে তুলে ফেলে, তারা অভিশপ্ত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে বাড়াতে বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে । তবে কৃত্রিম সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা, পশম তুলে ফেলা- এগুলো নিষেধ করেছেন । স্বামী এটা কেন চাইবেন! একটা নিষিদ্ধ কাজ স্বামী করতে বলবেন কেন! স্বামীর এটা উচিত নয় । স্বামী বললেও গোনাহের কাজ করা বৈধ নয় । স্বামী বললে, মুবাহ কাজ, যেখানে অপশন আছে, করা বৈধ। স্বাভাবিক পশম তোলা যায় না। যদি এমন কোথাও পশম হয় যেটা অস্বাভাবিক, অবাঞ্চিত, সেটা তোলা যায় । কিন্তু ভ্রূ চিকন চিকন করে তুলে ফেলা, এগুলো ইসলামসম্মত নয় ।

মহিলাদের হাতে আঙটি পরা


প্রশ্ন-৯৯: আমরা বোরকা পরি, এতে হাত বের হয়ে থাকে । হাতের আঙটি পুরুষের নযরে পড়লে কি গোনাহ হবে?

উত্তর: হাদীসের আলোকে এটা বৈধ হবে বলেই মনে হয় । কারণ, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনে মহিলাদের হাতে মেহেদি না থাকলে আপত্তি করতেন । তার মানে মেহেদিসহ হাত খোলা থাকত । মেহেদি না থাকলে তিনি রাগ করতেন। বলতেন, তোমার হাত পুরুষের মতো কেন! আবার আঙটি পরা হাত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দেখেছেন । দেখে আঙটির যাকাত দিতে বলেছেন। এটা আমরা হাদীসে পাই। এ জন্য আমরা আশা করি, এইটুকু সৌন্দর্য মেয়েরা বের করতে পারবেন। এতে গোনাহ হবে না । তবে ঢেকে রাখা ভালো ।

ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা


প্রশ্ন-১০০: আমরা হানাফি মাযহাবের মানুষেরা নামাযের ভেতর ডান দিকে এক সালাম ফিরিয়ে তারপর সাহু সিজদা করি । এটা ঠিক আছে কি না? বা এর নিয়মটা কী?

উত্তর: আসলে সাহু সিজদা বা ভুল হওয়ার কারণে সিজদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদীসে বিভিন্নভাবে এসেছে । কখনো তিনি সালামের পরে সাজদা করেছেন । কখনো সালামের আগে সিজদা করে পরে সালাম করেছেন । এ জন্য, এক পদ্ধতি হল, আপনি আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন, দুরুদ শরীফ পড়বেন, দুআ মাসুরা পড়বেন, সর্বশেষ দুটো সিজদা দিয়ে এরপর সালাম ফিরিয়ে দেবেন। এটা সহজ। দ্বিতীয় হল, আপনি আত্তাহিয়্যাতু পড়ে অথবা আরো কিছু পড়ে সালাম ফেরাবেন একদিকে বা দুই দিকে, এরপর সিজদা করবেন, আবারো আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন, দুরুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেবেন । হাদীসের আলোকে বিভিন্ন পদ্ধতি পাওয়া যায় । আর মাযহাব বা ফিকহেও- আমরা যদিও মনে করি এটাই বোধহয় হানাফি মাযহাব- একটু ভালো করে পড়লে আমরা দেখব আসলে মাযহাব এই রকম না। তারা বলেছেন এটা উত্তম, অন্যভাবে করা যেতে পারে । অধিকাংশ মাযহাবি বিষয়- যেটা নিয়ে আমরা বিতর্ক করি- এগুলো উত্তম অনুত্তমের প্রশ্ন। তারা বলেছেন, এটা আমাদের কাছে উত্তম মনে হয়, অন্য পদ্ধতিতে করলে কোনো সমস্যা নেই। কাজেই আমরা যেটা করি, একদিকে সালাম ফেরানো, এই মর্মে কোনো হাদীস আমার নজরে পড়ে নি । কিন্তু অনেক সহীহ হাদীস আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সালামের পরে সিজদা করেছেন। এবং সিজদার পরে আবার আত্তাহিয়্যাতু পড়েছেন এরকমও হাদীসে এসেছে । এই জন্য সবমিলিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি বৈধ । আপনার কাছে যেটা সহজ হয় সেটা করবেন ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url