গাজা যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের সর্বশেষ খবরাখবর, ১১৫ তম দিনেও গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত

গাজা যুদ্ধের ১১৫ তম দিনে আজ

১১৫ তম দিনেও গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত



গণহত্যা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গণহত্যাসহ নানা অপরাধ অব্যাহত রেখেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। 

 গাজায় বেসামরিক জনগণের ওপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ও এমনকি হাসপাতালগুলোর আশপাশেও হামলাও অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল।

আজ সোমবার গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ১১৫ তম দিনে অন্তত ৩৮ জন শহীদ ও ২৩ জন আহত হয়েছে।  আশশাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় শহীদ হন ১০ ফিলিস্তিনি এবং আর রিমাল এলাকায়ও ইসরাইলি বিমান হামলায় শহীদ হন আরও ১৩ জন। গতরাতে গাজার আবাসিক এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় শহীদ হন ১৫ ফিলিস্তিনি। হতাহতদের অনেককেই আনা হয় আশ শিফা হাসপাতালে।

ইসরাইলি সেনারা গাজার খান ইউনুসে আল আমাল ও আন নাসির হাসপাতাল এখনও ঘিরে রেখেছে।  

গাজা উপত্যকায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি আগ্রাসনে অন্তত ২৬,৪২২ জন ফিলিস্তিনি শহীদ  হয়েছেন যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। অন্যদিকে গাজায় স্থল আগ্রাসন চালাতে গিয়ে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ২২০ ইসরাইলি সেনা। ৭ অক্টোবরের আল-আকসা তুফান অভিযানের দিন নিহত প্রায় ৪০০ সেনাসহ এ পর্যন্ত মোট নিহত হয়েছে ৬০০ জনেরও বেশি ইসরাইলি সেনা। 

ইরান বিরোধী মার্কিন অভিযোগের পুনরাবৃৃত্তির রহস্য



জর্ডানের উত্তর-পূর্বে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে রোববার রাতে হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি কয়েক ডজন আহত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ কিছু আমেরিকার কর্মকর্তা দাবি করেন যে এই হামলা ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলো পরিচালনা করেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন বাহিনী বা ইহুদিবাদী শাসকদের অবস্থানে প্রতিটি হামলার পর সাধারণত পাশ্চাত্যের কর্মকতারা এবং গণমাধ্যমগুলো এ অঞ্চলে প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোকে সমর্থন দেয়ার অজুহাতে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানকে হামলার মূল শক্তি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এখানে এটার বলার অপেক্ষা রাখে না যে অবশ্যই ইরান সব সময় বলে আসছে যে তারা ইসলামী প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর ওপর সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তবে তেহরান এও জোর দিয়ে বলেছে যে এসব সংগঠন তাদের সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইরানের কাছ থেকে কোনো নির্দেশ গ্রহণ করে না।

এর আগে সফল আল-আকসা তুফান অভিযান যেটি ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোকামী সংগঠন হামাসের নেতৃত্বে অন্যান্য প্রতিরোধকামী বাহিনী ৭ অক্টোরব শুরু করেছিল এবং ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর প্রতিরোধকে চূর্ণ করেছিল কিছু আমেরিকান এবং জায়নবাদী চক্র এ ধরনের বড় গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ইরানকে জড়িয়ে নানা অভিযোগ করেছে।  

তারপর  ইরাক এবং সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো অক্টোবর থেকে ড্রোন, রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইরান। 

ইরাক ও সিরিয়াসহ পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের ইসলামি প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর সঙ্গে ইয়েমেনি বাহিনী গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর বর্বরোচিত হামলা এবং এই ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর প্রতি ওয়াশিংটনের সর্বাত্মক সমর্থনের পর বারবার এ অঞ্চলে মার্কিন ঘাটিগুলোকে টার্গেট করার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে। 

গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর ক্রমাগত হামলা এবং এ হামলায় জাতিসংঘের সর্বাত্মক সমর্থনের কারণে এই অঞ্চলে সংঘাতের পরিধি বেড়ে হওয়ার বিপদ সম্পর্কে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বারবার সতর্ক করেছে। 

আমেরিকান বাহিনীর মাধ্যমে ইরাক ও সিরিয়ার জাতীয় সার্বভৌমত্বের বারবার লঙ্ঘন এবং ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনের জনগণের বিরুদ্ধে বোমা হামলা পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে চলমান অস্থিতিশীলতার পরিবেশ আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে ইরান বারবার বলে আসছে। 
পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সামরিক অবস্থানের বিরুদ্ধে গতকালের পদক্ষেপ যেটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্ত হামলার মধ্যে একটি ছিল সেটি গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে আমেরিকার ব্যাপক সমর্থন এবং এই অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করার ওয়াশিংটনের তৎপরতার ফলাফল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

অতএব এই অঞ্চলে মার্কিন অবস্থানের উপর হামলার ক্ষেত্রে ইরানের ভূমিকার দাবিকে আঞ্চলিক সংঘাতকে প্রসারিত করার এবং গাজায় ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর গণহত্যা যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা  থেকে জনগণের দৃষ্টিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা উচিত।  

আসল বিষয় হল যে প্রতিরোধের বৈধ অধিকারের জন্য ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের সমর্থন এবং দখলদার ও আগ্রাসী বাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য তেহরানের সমর্থন সর্বদা অব্যাহত রয়েছে এবং বহুবার এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।  তবে এর অর্থ এই নয় যে  প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর কাজ এবং তাদের কর্মকাণ্ডে ইরান হস্তক্ষেপ করছে।


ইসরাইলের নিক্ষিপ্ত অবিস্ফোরিত গোলাগুলোই ব্যবহার করছে হামাসের যোদ্ধারা

ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলা অব্যাহত



ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখা 'আল-কুদস ব্রিগেডসের' যোদ্ধারা গতরাতে গাজার খুব কাছেই ইসরাইলের ভেতরে ইহুদি বসতি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, গাজার কাছে ইহুদি বসতিতে রকেট আঘাত হানলে সাইরেন বাজার শব্দ শোনা গেছে।

 'আল-কুদস ব্রিগেডসের' প্রতিরোধ যোদ্ধারা এমন সময় ইহুদি বসতি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে যখন সম্প্রতি খোদ ইসরাইলি সামরিক ও গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ইসরাইলের এবং ফিলিস্তিনি  যোদ্ধারা এসব অস্ত্র যুদ্ধের গণিমত হিসাবে পেয়েছিল। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, তাদের অনেক অস্ত্র হামাসের ভূগর্ভস্থ টানেল দিয়ে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে পৌঁছেছে।

যুদ্ধ পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ইসরাইলিরা শুধু যে হামাসের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও কৌশল ধরতে ব্যর্থ হয়েছে তাই নয় একই সাথে ফিলিস্তিনিদের অস্ত্রের সক্ষমতা নিয়েও তারা ভুলের  মধ্যে রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গত ১৭ বছর ধরে গাজা অবরোধের জন্য যেসব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছিল এখন সেইসব অস্ত্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ বিভাগের সাবেক ডেপুটি মাইকেল করদশ বলেছেন, অবিস্ফোরিত অস্ত্রই হামাসের অস্ত্রের প্রধান উৎস। তারা ইসরায়েলি বোমা নিয়ে যায় এবং এগুলো তারা বিস্ফোরক ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে কাজে লাগায়।

ইসরাইলের অস্ত্র দিয়েই ইসরাইলকে ঘায়েল করছে হামাস- সম্প্রতি এমনই এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকা। এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর পরিত্যক্ত ও অকেজো অস্ত্র সংগ্রহ করে ইসরাইলের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছে গাজা-ভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। পত্রিকাটিতে বলা হয়েছে, গাজায় যেসব গোলা বর্ষণ করছে ইসরাইল, সেগুলোর বেশ কিছু সংখ্যক বিস্ফোরিত হয় না। ইসরাইলিররা এ বিষয়টি এত দিন বুঝতে পারেনি।

পাশ্চাত্যের এক সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, হামাসের বেশিরভাগ বিস্ফোরক আসছে অবিস্ফোরিত ইসরাইলি গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র থেকে। ইসরাইলের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, গাজায় নিক্ষেপ করা ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অবিস্ফোরিত গোলার সংখ্যা প্রায় ১৫ ভাগ। হামাসের অস্ত্র সংগ্রহের আরেকটি উৎস হলো ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর ঘাঁটিগুলোতে চুরি। সিনাই মরুভূমির মাধ্যমে এসব অস্ত্র পশ্চিম তীর বা গাজায় চলে যাচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, হামাস প্রমাণ করেছে যে তারা দুই হাজার পাউন্ড ওজনের গোলা বানাতে পারে। তারা অবিস্ফোরিত বারুদ থেকেই এসব গোলা বানিয়ে থাকে।


সিরিয়ার দামেস্কে আবারও ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা



সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। আল-মায়াদিন টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, দামেস্কের জেইনাবিয়া এলাকার অদূরে একটি ভবনে ইসরাইলের তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।

সিরিয়ার সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশেই কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। কোনো কোনো সূত্র বলছে, ইসরাইলের আজকের হামলায় অন্তত দুই জন শহীদ ও কয়েক জন আহত হয়েছে। অধিকৃত গোলান মালভূমি থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।

গত কয়েক বছর ধরে ইহুদিবাদী ইসরাইল বহু বার সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। গত ৭ অক্টোবরের আল আকসা তুফান অভিযানের পর থেকে গাজায় গণহত্যার পাশাপাশি সিরিয়াতেও হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে দখলদার বাহিনী।

সিরিয়া সব সময় দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ছিল, এ কারণে ইসরাইল সব সময় দেশটিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। আইএস সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেওয়ার পেছনেও ইসরাইলের সরাসরি হাত রয়েছে।


ইহুদিবাদী ইসরাইলকে জার্মানির সাহায্যের প্রতিবাদ

জার্মানি এবং নাইজারে ইসরাইল বিরোধী মিছিল ও সমাবেশ


গাজার নিপীড়িত জনগণের সমর্থনে জার্মানি এবং নাইজারের প্রতিবিাদী জনগণ মিছিল সমাবেশ করেছে। সমাবেশে তারা গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলি অপরাধ ও গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে।

সমর্থকরা আবারও বালিনের রাস্তায় রাস্তায় সমবেত হয়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধের বিরুদ্ধে এবং ইসরাইলকে জার্মান সরকারের সমর্থনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনী জনতার সমর্থনে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ অঞ্চলে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানায় সমবেত জনতা।

আমেরিকা এবং ব্রিটেনের সঙ্গে জার্মান সরকার তাল মিলিয়ে সবসময় ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সমর্থন দেয় এবং ওই শিশু হত্যাকারী বর্বর শাসকদের সামরিক সাহায্য দেয়।

জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী এ বছর জার্মানি তেলআবিবকে অন্যান্য বছরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি সামরিক সাাহয্য দিয়েছে। এই সাহায্য আল-আকসা তুফান অভিযান শুরুর পর থেকে দেওয়া হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।


হামলাটি ছিল আমেরিকার জন্য বার্তা

জর্দান-সিরিয়া সীমান্তের কাছে মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা


জর্দান, ইরাক ও সিরিয়ার যৌথ সীমান্তের কাছে একটি মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় অন্তত তিন মার্কিন সেনা নিহত ও অপর ৩৪ জন আহত হয়েছে। গতকাল (রোববার) ওই হামলা চালানো হয় এবং এর ফলে অক্টোবরের শুরুতে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে কোনো মার্কিন সেনা নিহত হলো।

প্রাথমিকভাবে হামলাটি জর্দানে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে হয়েছে বলে আমেরিকার সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হলেও রোববার রাতে আম্মান সরকার জানায়, ঘাঁটিটি সীমান্তের ওপারে সিরিয়ায় অবস্থিত। মার্কিন সরকার জাতিসংঘের ম্যান্ডেট বা দামেস্কের অনুমতি ছাড়াই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে সিরিয়ায় অবৈধভাবে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে।

ইরাকের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন রোববার রাতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওই ড্রোন হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে বলেছে, জর্দানের সীমন্তবর্তী সিরিয়ার আল-তানাফ ঘাঁটিতে তারা ওই হামলা চালিয়েছে।

এর আগে গতমাসে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন সেনাদের ওপর গত ১৭ অক্টোবর থেকে অন্তত ৯৭ বার হামলা হয়েছে। তবে এসব হামলায় কেউ গুরুতর আহত হয়নি। এই প্রথম ইরাকের প্রতিরোধ আন্দোলনের হামলায় মার্কিন সেনা হতাহতের ঘটনা ঘটল। গাজা উপত্যকার ওপর দখলদার সেনাদের পৈশাচিক গণহত্যার প্রতিবাদে ইরাকের প্রতিরোধ আন্দোলন ইসরাইল ও তার দোসর আমেরিকার স্বার্থে আঘাত হানছে।

আমেরিকার জন্য বার্তা: হামাস


ফিলিস্তিানের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, সিরিয়ার মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা ছিল আমেরিকার জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা।

হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিন মার্কিন সেনার নিহত হওয়ার ঘটনায় বাইডেন প্রশাসনের কাছে এই বার্তা পৌঁছেছে যে, গাজার নিরপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকলে তাকে গোটা মুসলিম উম্মাহর মোকাবিলা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, গাজার বিরুদ্ধে মার্কিন-ইহুদিবাদী আগ্রাসনের আগুন গোটা অঞ্চলকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিতে পারে। 

মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া


ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলনও মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে হামলা ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এটি এক বিবৃতিতে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে অবৈধ মার্কিন সামরিক উপস্থিতির বিরুদ্ধে এটি ছিল একটি স্বাভাবিক ও বৈধ প্রতিক্রিয়া।

ইসলামি জিহাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যয় প্রায় চার মাস ধরে ইহুদিবাদী ইসরাইলের গণহত্যার প্রতি আমেরিকা যে নির্লজ্জ সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে তার পরিণতি হচ্ছে এই হামলা।

গাজা উপত্যকায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি আগ্রাসনে অন্তত ২৬,৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। অন্যদিকে গাজায় স্থল আগ্রাসন চালাতে গিয়ে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ২২০ ইসরাইলি সেনা। ৭ অক্টোবরের আল-আকসা তুফান অভিযানের দিন নিহত প্রায় ৪০০ সেনাসহ এ পর্যন্ত মোট নিহত হয়েছে ৬০০ জনের বেশি ইসরাইলি সেনা।


ইয়েমেনের কঠোর হুঁশিয়ারি

সাগরের যেকোনো স্থানে শত্রুর জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে


ইয়েমেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, লোহিত সাগর, আরব সাগর ও ভূমধ্য সাগরের যেকোনো স্থানে শত্রুর যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। সানা এমন সময় এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করল যখন গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের ভয়াবহ গণহত্যার প্রতিবাদে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী গত অক্টোবর থেকে ইসরাইলের সঙ্গে জড়িত বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে।

ইয়েমেনের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-এজ্জি গতরাতে নিজের ভেরিফায়েড এক্স পেজে দেয়া এক পোস্টে লিখেছেন, “আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা [ইয়েমেনের মূল ভূখণ্ডের যেকোনো স্থান থেকে লোহিত, আরব ও ভূমধ্য সাগরের যেকোনো স্থানে থাকা] বাণিজ্যিক বা যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখি।”

এজ্জি আরো লিখেছেন, “তবে আমরা অন্য কোনো সময়ের জন্য সে কাজটি ফেলে রাখছি। কারণ, আমরা যুদ্ধের আর বিস্তার না ঘটিয়ে এখনই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”

ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধাদের সমর্থিত সরকার গত নভেম্বর মাস থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি ভয়াবহ গণহত্যার জবাবে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও বাব আল-মান্দাব প্রণালিতে ইসরাইলি মালিকানাধীন ও ইসরাইলগামী জাহাজগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ইঙ্গো-মার্কিন বাহিনী হুথিদের অবস্থানে বিমান হামলা চালানোর পর ইয়েমেনের সেনাবাহিনী হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে মার্কিন ও ব্রিটিশ জাহাজগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সূত্র: parstoday.ir/bn

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url