গাজা যুদ্ধের ১০০ দিনে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ এবং ইসরাইলের ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র


গাজা যুদ্ধের ১০০ দিনে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ এবং ইসরাইলের অর্জন


ইহুদিবাদী ইসরাইলে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের "আল-আকসা তুফান" অভিযানের ১০০ দিন পর প্রতিরোধকামী ফ্রন্টের শক্তি এবং ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী ক্রমশ এক ঘরে হয়ে পড়ার বিষয়টি বিশ্ব জনমতের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর আল আকসা তুফান অভিযান শুরুর একশত দিন পেরিয়ে গেছে। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর ক্রমাগত অপরাধ এবং অমানবিক কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া হিসাবে "আল-আকসা তুফান" অভিযান শুরু করে। এই অভিযানের ভৌগোলিক ব্যাপ্তি এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র দলগুলোর ব্যাপক উপস্থিতির দিক থেকে এটি অনন্য ছিল। প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর অভিনব উদ্যোগ এবং অভিযানে নতুন সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে তারা ইসরাইলি সরকারকে অবাক করে দিয়েছিল। 

আল-আকসা তুফান অভিযানের প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সরকারের সমর্থনে এবং এমনকি তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্রতিরোধকামী শক্তির মোকাবেলায় অসহায়ত্বের কারণে ইসরাইল তার নিজের পক্ষে ভারসাম্য পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গাজা যুদ্ধে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও হামাস এবং "আল-কাসাম ব্রিগেড সহ প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত সামরিক শাখাগুলোর বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর জন্য পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছিল। 

অবশেষে, ইসরাইল গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একটি যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের শক্তিশালী অবস্থান এবং ইহুদিবাদীদের অসহায়ত্ব ও অক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত দেয়। ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যিনি গাজা যুদ্ধের প্রথম দিনগুলোতে একটি দ্রুত এবং সহজ বিজয় এমনকি "হামাস" ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলন কিন্তু এখন ইসরাইলের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি স্বীকার করেছেন যুদ্ধ শেষ করতে তিনি অক্ষম এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে তিনি হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে সমঝোতা এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ  করার ক্ষেত্রে ইহুদিবাদীদের স্বাভাবিক আচরণের প্রতি ইঙ্গিত দেয়। 

"আল-আকসা তুফান অভিযানের পরিণতি কেবলমাত্র অধিকৃত অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং বিস্ময়কর এ অভিযান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলেছে। লোহিত সাগরের বাব আল-মান্দেব প্রণালীতে ইয়েমেনি প্রতিরোধ বাহিনীর দখলকৃত অঞ্চলের দিকে ইসরাইলি জাহাজের চলাচলে বাধা দেয়ার মাধ্যমে পশ্চিমাদের ক্রমাগত জোটের মোকাবেলা করার জন্য এই অঞ্চলের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলির প্রস্তুতির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইয়েমেনের সেনা কর্মকর্তারা লোহিত সাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্রদের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জোর দিয়ে বলেছেন যে যে ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং ইয়েমেনের ওপর ইঙ্গো মার্কিন হামলার সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য তারা পুরোপুরি প্রস্তুত।

"আল-আকসা" অভিযানের পরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হচ্ছে হোয়াইট হাউসে ইহুদিবাদী শাসক এবং তার মিত্রদের অসম্মান। সাম্প্রতিক দিন এবং সপ্তাহে নিয়মিত এবং বিনা বাধায় বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণ ইউরোপ এবং আমেরিকার প্রধান শহরগুলোতে বড় বড় সমাবেশের আয়োজন করে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছে। নিঃসন্দেহে গাজায় ইহুদিবাদীদের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধযজ্ঞের বিষয়ে কিছু পশ্চিমা কর্মকর্তাদের স্বীকারুক্তি ফিলিস্তিনপন্থি কর্মীদের সংগ্রামের ফল।

যুদ্ধের ১০০তম দিনেও গাজায় হামলা হয়েছে


গত ৭ অক্টোবর দখলদার ইসরাইলের দখলদারি ও হত্যা-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশংসনীয় ও অভাবনীয় হামলা চালায় ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। সেদিন থেকেই গাজার নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষদের ওপর সর্বাত্মক হামলা ও গণহত্যা শুরু করে বর্ণবাদী ইসরাইল। এর পর কেটে গেছে ১০০ দিন।
আজ (রোববার) যুদ্ধের ১০০তম দিনেও গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। এই হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ জন ফিলিস্তিনি শহীদ ও ২৬৫ জন আহত হয়েছেন।

১০০ দিনে শহীদের সংখ্যা ২৪ হাজার


এ নিয়ে গাজায় গত ১০০ দিনে মোট ২৩ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হলেন। মোট আহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ৫৮২ জন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। 

গত ১০০ দিনের যুদ্ধে গাজার মোট ভবনের ৪৫ থেকে ৫৬ শতাংশ ধ্বংস অথবা বড় আকারে ক্ষতির শিকার হয়েছে। গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৫টি আংশিকভাবে কার্যকর রয়েছে। বাকি ২১টির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ আছে। ব্যাপক আকারে ক্ষুধা ও অনাহারে ভুগছেন পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি।

গাজার ৬৯ শতাংশেরও বেশি স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪২টি মসজিদ ও ৩টি গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২১টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে ছয় লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী।

গোটা বিশ্বের প্রধান ইস্যু এখন গাজা যুদ্ধ


ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি বলেছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুটি এর আগে মুসলিম বিশ্বের প্রধান ইস্যু হিসেবে গণ্য হতো, এখন তা গোটা বিশ্বের প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

আজ (রোববার) সকালে রাজধানী তেহরানে আল-আকসা তুফান ও জাগ্রত বিবেক শীর্ষক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) বলেছেন ফিলিস্তিন হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের প্রধান ইস্যু এবং পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করাকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে। এর মধ্যদিয়ে ফিলিস্তিন ইস্যুটি গোটা মুসলিম বিশ্বের প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠে। এখন তা গোটা বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছে, গোটা বিশ্বের প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রায়িসি বলেন- জুলুম-নির্যাতন ও আগ্রাসন মোকাবেলার একমাত্র উপায় হচ্ছে দৃঢ়তা ও প্রতিরোধ। লেবানন, ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেনেও প্রতিরোধের এই চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে বিস্ময়কর প্রতিরোধ-অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের সংগ্রামীরা। এরপর থেকে গাজায় যুদ্ধ চলছে। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে না পেরে ইসরাইলি বাহিনী সেখানে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে।

সালেহ আল-আরুরির দুই বোনকে ধরে নিয়ে গেছে ইসরাইলি সেনারা


বর্বর ইসরাইলি সেনারা জর্দান নদীর পশ্চিম তীর থেকে হামাসের নিহত উপ প্রধান সালেহ আল-আরুরির দুই বোনসহ বহু মানুষকে ধরে নিয়ে গেছে। দখলদার সেনারা আজ ভোরে রামাল্লাসহ পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরে হানা দিয়ে এসব ফিলিস্তিনিকে ধরে নিয়ে যায়।

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনারা মাজরা’ আল-গারবিয়া, আরুরা ও বিরজিত শহরের পাশাপাশি জালাজোন শরণার্থী শিবিরে হানা দেয়। আজ ভোররাতে দখলদার সেনারা সাঁজোয়া যান ও সামরিক জিপে করে এসব শহরে ঢুকে পড়ে।

ইহুদিবাদী সেনারা বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে ও সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তারা প্রচুর সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। আটকদের মধ্যে সালেহ আল-আরুরির বোন দালাল আল-আরুরি ও ফাতিমা আল-আরুরি রয়েছেন।

হামাসের উপ প্রধান সালেহ আল-আরুরিকে গত ২ জানুয়ারি লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দাহিয়া এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে। হামাসের পলিটব্যুরো সদস্য ইজ্জাত আর-রিশক ওই হত্যাকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যা বলে অভিহিত করেন।

শহীদ আরুরি হামাসের সিনিয়র পলিটব্যুরো সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সামরিক দিকটি বেশি দেখাশুনা করতেন। এর আগে তিনি পশ্চিম তীরের যোদ্ধাদেরকে সশস্ত্র সংগ্রামে নামতে উদ্বুদ্ধ করেন। গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইরের অভ্যন্তরে ঢুকে যে হামলা চালিয়েছিল তার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন সালেহ আল-আরুরি।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url