ইসরাইলের সামরিক নজরদারি ব্যবস্থা ধ্বংস || মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ও ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারে হামলা

নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমি অব্যাহত

আন্তর্জাতিক আদালতের রুলিং সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল


ইসরাইলের দখলদার সেনারা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় তাদের বোমাবর্ষণ জোরদার করেছে। গতকাল হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গাজায় গণহত্যা ঠেকানোর ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেয়ার পরেও এই হামলা জোরদার করা হলো।

হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা আজ (শনিবার) জানিয়েছে, গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে ইসরাইলের মারাত্মক বিমান হামলার পর বহু আহত মানুষ আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। ইসরাইলের ভয়াবহ বিমান হামলার মধ্যেও এই হাসপাতালটি সচল রয়েছে।

এদিকে, গাজা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনুস শহরে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত নয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন যার মধ্যে কয়েকজন নারী রয়েছেন। এর আগে আজ দিনের শুরুতে রাফা ক্রসিং সীমান্তের কাছে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত দুই ব্যক্তি শহীদ এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ওদিকে, খান ইউনুস শহরের ওপর আরেকটি হামলায় অন্তত ২৮ বেসামরিক ব্যক্তি শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে- গত ২৪ ঘন্টায় ইহুদিবাদী সেনাদের হামলায় অন্তত ১৮৩ ফিলিস্তিনি শহীদ এবং ৩৭৭ জন আহত হয়েছেন।

হামাসের সামরিক শাখা ইজাদ্দিন আল-কাসাম ব্রিগেড আজ ঘোষণা করেছে যে, তারা ইসরাইলের একটি আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ারের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় তারা ইয়াসিন ১০৫ এন্টি-আর্মর মিসাইল ব্যবহার করে।


ইরাকি প্রতিরোধ সংগঠনের বিবৃতি

প্রতিরোধের ভাষা ছাড়া অন্য কিছুই বোঝে না আমেরিকা 



ইরাকের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী ইসলামী সংগঠনগুলোর জোট পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিট বা হাশদ আশ-শাবি বলেছে, ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে কমিটি গঠন করতে সম্মত হওয়ার মধ্য দিয়ে একথা প্রমাণ হয়েছে যে, প্রতিরোধকামী যোদ্ধাদের হামলার ফলে তারা এই সমঝোতায় পৌঁছেছে। সাথে সাথে একথা প্রমাণ হয়েছে যে, আমেরিকা শক্তির ভাষা ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না।

ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাতাহারের বিষয়ে সময়সূচী ঠিক করার জন্য বাগদাদ এবং ওয়াশিংটন কমিটি গঠন করতে রাজি হওয়ার পর এই বিবৃতি দিল পপুলার মবিলাইজেশন ইউনিট। এতে বলা হয়েছে, আমেরিকা বছরের পর বছর ধরে যে অশুভ এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছিল পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের হামলা, ইরাকি সংসদের সিদ্ধান্ত এবং ইরাকের মাটি থেকে মার্কিন সেনা বহিষ্কারের ব্যাপারে ব্যাপকভাবে জনসমর্থন ওয়াশিংটনের সেই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।

ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা যদি মার্কিন বাহিনীর ওপর একের পর এক হামলা অব্যাহত না রাখতো তাহলে এগুলোর কোনো কিছুই ঘটতো না। মার্কিন বাহিনী বহিষ্কারের এই সফলতা বহু শহীদের রক্তে বিনিময়ের অর্জিত হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

ইরাকে বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। এসব সেনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ইরাকের জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপ রয়েছে।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সুলাইমানিকে মার্কিন সন্ত্রাসী বাহিনী হত্যা করার পর ইরাক থেকে মার্কিন সেনা বহিষ্কারের ব্যাপারে সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। সে সময় ইরাকের জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে একটি প্রস্তাব পাস হলেও মার্কিন বাহিনী তা আমলে নেয়নি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা বাড়িয়েছে পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের সদস্যরা।


ইসরাইলের জন্য অগ্নিঝরা রাত!

ইসরাইলের সামরিক নজরদারি ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে হিজবুল্লাহ


লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ইহুদিবাদী ইসরাইলের নতুন একটি নজরদারি ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) রাত ৯টার দিকে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা নতুন বসানো এই নজরদারি ব্যবস্থার ওপর গোলাবর্ষণ করে তা ধ্বংস করে।

লেবাননের আরবি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল আল-মায়াদিন এ খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেনারা কিছুদিন আগে দক্ষিণ লেবানন সীমান্তের কাছাকাছি জারিত শহরের একটি আউটপোস্টে এই নজরদারি ব্যবস্থা বসিয়েছিল।

নজরদারি ব্যবস্থা ধ্বংসের কিছুক্ষণ পরই হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে ঘোষণা করে যে, তারা ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ফালাক-১ নামের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে অধিকৃত গোলান উপত্যকার একটি সেনা ব্যারাকে হামলা চালিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম হিজবুল্লাহ ফালাক-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল। 

গতকাল লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারা অবশ্য ইহুদিবাদী ইসরাইলের একটি সেনা সমাবেশের ওপরেও হামলা চালায়। উত্তর ইসরাইলের হিউনিন ক্যাসেলের কাছে ওই হামলা হয়। এছাড়া হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরাইলের আরো বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে রকেট ও ট্যাংক বিধ্বংসী গোলাবর্ষণ করে।

সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি ইরাক ও আমেরিকা


ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা এবং একটি কমিটি গঠন করতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে।

ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের ওপর যখন প্রতিরোধকারী সংগঠনগুলোর জোট পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিট বা হাশদ আশ-শাবির যোদ্ধারা হামলা জোরদার করেছে তখন এই খবর এলো। ইরাকি যোদ্ধাদের হামলার কারণে কারণে মার্কিন সরকার নতুন করে চাপে পড়েছে।

কয়েকদিন আগেই ইরাকের প্রধানমন্ত্রী শিয়া আস-সুদানি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনোমি ফোরামের বৈঠকে বলেছিলেন, ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা পেরিয়ে গেছে এবং এখন অবশ্যই আমেরিকাকে সেনাপ্রত্যাোর করে নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় আলোচনা শুরু করা জরুরি।

ইরাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে দুই দেশের সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এজন্য দুই দেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। এই ওয়ার্কিং গ্রুপ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট সময়সীমা ঠিক করবে এবং ধীরে ধীরে ইরাকের মাটি থেকে বিদেশী সেনা কমিয়ে ফেলা হবে। 

ইরাকি মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, উগ্র তাকফিরি গোষ্ঠী আইএস’র ঝুঁকি এবং ইরাকি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা রক্ষার সক্ষমতা মূল্যায়ন করে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।

এদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সম্ভাব্য এই বৈঠকের কথা জানিয়ে বলেছেন, গত আগস্ট মাসে ইরাক ও আমেরিকার কর্মকর্তাদের মধ্যে যে নিরাপত্তা সহযোগিতা ডায়লগ অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সেনাপ্রত্যাহারের বিষয়টি ঠিক করা হবে।


এডেন উপসাগরে ইয়েমেন থেকে ৬০ নটিক্যাল মাইল দূরের ঘটনা

মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ও ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারে হুথিদের হামলা


এডেন উপসাগরে একটি মার্কিন রণতরী এবং একটি ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারে সরাসরি আঘাত হেনেছে ইয়েমেনের জনপ্রিয় হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলন সমর্থিত সশস্ত্র বাহিনী।  হামলায় মার্কিন রণতরীটির ক্ষয়ক্ষতির ধরন ঘোষণা করা না হলেও এর ফলে ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারটিতে আগুন ধরে যায়।

গতকাল (শুক্রবার) হুথি আন্দোলন জানায়, তারা ওইদিন বিকেলে লন্ডনভিত্তিক একটি কোম্পানির মালিকানাধীন মারলি লুয়ান্ডা নামক তেল ট্যাংকারে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলার ফলে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায় এবং অগ্নিনির্বাপণকারী যন্ত্র দিয়ে সে আগুন নেভাতে হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন।

এদিকে, ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারে হামলা চালানোর পর মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কারনি এবং একটি ফরাসি ফ্রিগেট তেল ট্যাংকারটিকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায়। মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এডেন উপসাগরে শুক্রবার ইউএসএস কার্নি নিজেও হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়েছে।

তবে হামলায় ইউএসএস কার্নির কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা ঘোষণা করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে স্কাই নিউজ জানিয়েছে, গত অক্টোবরে অভিযান শুরু করার পর এই প্রথম হুথিরা কোনো মার্কিন যুদ্ধজাহাজে সরাসরি আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।

ব্রিটিশ মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন্স বা ইউকেএমটিও বলেছেন, ইয়েমেনের এডেন শহর থেকে ৬০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পূর্বে ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারে শুক্রবারের হামলাটি হয়। এটি জানায়, হামলার শিকার জাহাজটির সব নাবিক নিরাপদে রয়েছেন। এডেন উপসাগর দিয়ে চলাচলকারী সব জাহাজকে সাবধানে চলাচল করার আহ্বান জানিয়েছে ইউকেএমটিও।

ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেছেন, তারা উপযুক্ত নৌ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারে হামলাটি চালিয়েছেন এবং এটি সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। তিনি বলেন, নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে এবং ইয়েমেনের ওপর মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর আগ্রাসনের জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। 

ইয়েমেনের সেনা মুখপাত্র বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় যথেষ্ট খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ করতে না দেয়া পর্যন্ত লোহিত ও আরব সাগরে ইসরাইলি, ব্রিটিশ ও মার্কিন জাহাজের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলমান থাকবে।

ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধাদের সমর্থিত সরকার গত অক্টোবর মাস থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি ভয়াবহ গণহত্যার জবাবে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও বাব আল-মান্দাব প্রণালিতে ইসরাইলি মালিকানাধীন ও ইসরাইলগামী জাহাজগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ইঙ্গো-মার্কিন বাহিনী হুথিদের অবস্থানে বিমান হামলা চালানোর পর ইয়েমেনের সেনাবাহিনী হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে মার্কিন ও ব্রিটিশ জাহাজগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

আন্তর্জাতিক আদালতের রায় কেন ইসরাইলের জন্য অস্বস্তির কারণ?


আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে গাজায় চলমান গণহত্যার বিষয়ে প্রাথমিক রায় ঘোষণা করেছে। গাজায় ইসরাইলের চলমান বর্বরোচিত গণহত্যার চার মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে, এই সময়ে সেখানে ইসরাইলি হামলায় ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, আহতের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার।

এই গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা মামলা করেছে। মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালত যে প্রাথমিক রায় দিয়েছে তাতে দখলদার ইসরাইল আইনি দিক থেকে আরও বেশি কোণঠাসা হয়েছে। ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিষয়টি আদালতেও প্রমাণিত হলো। ইসরাইল প্রথমে চেষ্টা করেছিল আন্তর্জাতিক আদালত যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলা গ্রহণ না করে। কিন্তু আদালত বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ যৌক্তিক এবং তা নিয়ে শুনানি হতে হবে।

এছাড়া হেগের এই আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে, ইসরাইলের মাধ্যমে চলমান গণহত্যার মামলা নিয়ে কাজ করার এখতিয়ার তাদের রয়েছে। এই আদালতের ১৭ জন বিচারকের ১৬ জনই মনে করেন, ইসরাইলকে গাজায় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে হবে। একইসঙ্গে গাজাবাসীর মানবিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য ইসরাইলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই এটা করতে হবে। এই রায়ের মাধ্যমে ইসরাইলকে এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে, অপরাধ বন্ধ না হলে ইসরাইলের জন্য আইনি পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। ইসরাইল এ পর্যন্ত বহুবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, কিন্তু জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো কেউ মানতে বাধ্য নয়।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ অবস্থায় ইসরাইলকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই আদালতের নির্দেশ তারা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে। আগামী এক মাসের মধ্যে ইসরাইলকে তার গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। অবশ্য বাস্তবতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এই রায় বাস্তবায়নে বাধ্য করার জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের দাপটে ইসরাইল এই রায় বাস্তবায়ন করবে না।

এর আগে দখলদার ইসরাইল আমেরিকার সাবেক সরকারের সমর্থনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২৩৩৪ নম্বর ইশতেহার বাস্তবায়ন করেনি। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় উপেক্ষা করলে আন্তর্জাতিক আইনি ও বিচার প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে। এর ফলে ইউরোপ-আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার

হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রুলিং মানবে না ইসরাইল


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইল যে বর্বর আগ্রাসন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালাচ্ছে তা প্রতিরোধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রুলিংকে প্রত্যাখ্যান করেছে দখলদার সরকার। যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা শুধু মিথ্যা নয় তা আপত্তিকরও বটে।

ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ এনে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা আদায় করে। গতকাল ওই মামলার বিষয়ে আদালতের ১৫ সদস্যের বিচারক প্যানেল রুলিং দিয়েছে। আদালত ওই রুলিংয়ে বলেছে, গাজায় গণহত্যা প্রতিরোধের জন্য ইসরাইলকে অবশ্যই সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যে সমস্ত সামরিক কর্মকর্তা গণহত্যামূলক কাজের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর পাশাপাশি অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় আরো বেশি মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দেয়ার কথা বলেছে।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দখলদার সেনারা ২৬ হাজারের বেশ মানুষকে হত্যা করেছে এবং ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এছাড়া, হাজার হাজার মানুষ গাজায় নিখোঁজ রয়েছেন। ধারণা করা হয় যে, এসব মানুষ বিধ্বস্ত ভবনের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন।

ইসরাইল নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে গাজার প্রায় ৬০ ভাগ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে এবং নিহত লোকজনের ভেতরে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং মারাত্মক অসুস্থ মানুষ রয়েছেন। নিহতদের শতকরা ৭০ ভাগের বেশি নারী ও শিশু বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে। এরপরেও ইসরাইলের নেতারা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করছেন। এইভাবে নির্বিচারে বেসামরিক ও অসহায় মানুষ হত্যার পরেও যদি ইসরাইল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগকে মিথ্যা বলে তাহলে প্রশ্ন আসে কত মানুষকে হত্যা করলে গণহত্যা হয়।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url