ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধঃ গাজা যুদ্ধের সর্বশেষ খবরাখবর

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বাড়ছে

গাজার আকাশে ভারতের  তৈরি কিলার ড্রোন



ইহুদিবাদী ইসরাইলের কাছে ভারত হার্মিস-৯০০ মডেলের কিলার ড্রোন পাঠিয়েছে। দখলদার ইসরাইল সরকার নির্বিচারে বোমা হামলার মাধ্যমে গণহত্যার জন্য এই ড্রোন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত একটি ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

‘আদানি-এলবিট অ্যাডভান্সড সিস্টেমস ইন্ডিয়া লিমিটেড’ ইসরাইলকে ২০টিরও বেশি হারমিস -৯০০ মডেলের ড্রোন দিয়েছে। মাঝারি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এই ড্রোন ইসরাইলের কাছে বিক্রির কথা প্রথম জানায় প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট শেফার্ড মিডিয়া। এ নিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট করেন নীলম ম্যাথিউস। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এটি এখনো তেল আবিব বা নয়াদিল্লি কেউই প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি। 

২০১৮ সালে ইসরাইলের এলবিট সিস্টেমস শতকরা ৪৯ ভাগ শেয়ারে আদানি গ্রুপের সাথে জয়েন্ট ভেনচারে ড্রোন উৎপাদন শুরু করে এবং ইসরাইলের বাইরে প্রথমবারের মতো ড্রোন তৈরির জন্য হায়দ্রাবাদে ১৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যে নির্মিত স্থাপনা চালু করে।

শেফার্ড মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, তারা ইসরাইলের এলবিট সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ করলে একজন মুখপাত্র জানায় যে, “তারা নিশ্চিত করতে পারে- এলবিট সিস্টেম আদানির সাথে সহযোগিতা করে, যেটি আমাদেরকে ড্রোন সরবরাহ করে থাকে।"

গাজায় ইসরাইলকে জিততে দেওয়া হবে না


লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ বলেছেন, ইসরাইলকে যুদ্ধে জয়লাভ করতে দেওয়া যাবে না। ইসরাইল যদি গাজা যুদ্ধ থেকে বিজয়ী হিসেবে বেরিয়ে আসে তাহলে তা কেবল গাজা উপত্যকা নয় বরং গোটা অঞ্চল বিশেষকরে লেবাননের জন্য বিপজ্জনক হবে।

তিনি আজ (মঙ্গলবার) ইমাম হোসাইন (আ.)'র শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভাষণে এ কথা বলেন।

সাইয়্যেদ নাসরুল্লাহ আরও বলেন- লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিশর ও ফিলিস্তিনের জন্য ভালো হবে যদি ইসরাইলকে গাজায় পরাজিত করা যায়। ইসরাইলকে পরাজিত করতে সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান এই নেতা।

তিনি গাজাবাসীর প্রশংসা করে বলেন, গত ১৩০ দিনে গাজাবাসী নজিরবিহীন বীরত্বগাথা রচনা করেছে। এ পর্যন্ত দখলদারেরা অক্ষমতা ও ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই তুলে ধরতে পারেনি।

হিজবুল্লাহ মহাসচিব বলেন, এই অঞ্চলের সব সংকটের মূলে রয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। তারা অতীতে যেমন সংকট  তৈরি করেছে, এখনও একই কাজ করছে।

রাফাহ শহরে ইসরাইলি আগ্রাসনের পরিকল্পনা

চীনের হুশিয়ারিঃ রাফাহ শহরে মানবিক বিপর্যয়

ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে চীন


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে সামরিক আগ্রাসনের যে পরিকল্পনা করেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে চীন। অনতিবিলম্বে গাজায় স্থল অভিযানের পরিকল্পনা বন্ধ করার জন্য তেল আবিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাফাহ অঞ্চলের ঘটনাবলী চীন অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরোধিতা ও নিন্দা জানায় চীন। 

চীনা কূটনীতিক যত দ্রুত সম্ভব ইসরাইলকে সামরিক আগ্রাসন চালানোর পরিকল্পনা বাতিল করার আহ্বান জানান এবং বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা এড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, রাফাহ অঞ্চলে ভয়াবহ রকমের মানবিক বিপর্যয় এড়াতে এই পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর তেল আবিব রাফাহকে নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা করে এবং উত্তর গাজা থেকে লোকজন সেখানে আশ্রয় নেন। অথচ সেখানে এখন সর্বাত্মক আগ্রাসন চালানোর হুমকি দিচ্ছে ইসরাইল।

রাফাহ শহরে বর্তমানে ১৪ লাখ মানুষ বসবাস করছে যা স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। সেখানে ইসরাইল যদি সামরিক আগ্রাসন চালায় তাহলে ইতিহাসের জঘন্যতম মানবিক বিপর্যয় ঘটবে বলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলে সানি

ইরানের কূটনৈতিক তৎপরতার প্রশংসা


ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইরানের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং গাজা সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে তেহরানের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলে সানি।

রাজধানী দোহায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন, গাজায় হামলা বন্ধের প্রচেষ্টা, গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো এবং ফিলিস্তিনিদের মাধ্যমেই ফিলিস্তিন পরিচালনার বিষয়ে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কাতারের আমির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার ওপরও জোর দেন।

এ সময় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজা ইস্যুতে ইরানের নানা প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ইরান ও কাতারের সহযোগিতা গঠনমূলক ও প্রভাবশালী। ইরানের বিশেষ ইস্যুতে কাতারের মধ্যস্থতারও প্রশংসা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ান।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। গত কয়েক দিন ধরে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সফর করছেন হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। গতকাল তিনি সিরিয়া থেকে কাতার সফরে গেছেন।

ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ’র বিবৃতি

দ. লেবাননে ইসরাইলি হামলায় ৫ সেনা শহীদ


দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর আরও পাঁচ সেনা শহীদ হয়েছেন। লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ আজ (মঙ্গলবার) ভোরে এক বিবৃতিতে পাঁচ সেনার শাহাদাতের খবর জানিয়ে বলেছে, পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস ও গাজার সমর্থনে তারা শহীদ হয়েছেন।

শহীদ পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন দক্ষিণ লেবাননের তালুসা উপশহরের বাসিন্দা ছিলেন।

গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা শুরুর পর ফিলিস্তিনের বাইরে প্রথমে যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে আঘাত হানে তারা হলেন হিজবুল্লাহর সেনা। হিজবুল্লাহর সেনারা তখন থেকে আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। হিজবুল্লাহর হামলায় প্রতিদিনই দখলদার ইসরাইলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।   

এদিকে, লেবাননের হিজবুল্লাহপন্থী সংসদ সদস্য ইব্রাহিম আল মুসাভি দখলদার ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইসরাইলের যেকোনো বোকামির যথোপযুক্ত জবাব দেওয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। ইসরাইলকে মনে রাখতে হবে তারা এমন এক জাতি এবং প্রতিরোধ আন্দোলনের সামনে দাঁড়িয়েছে যাদের শক্তি অনেক বেশি। কোনো হুমকিতেই তারা পিছু হটবে না।

তিনি বলেন, ইসরাইলের যেকোনো হামলার সমপরিমাণ জবাব দেওয়া হয়েছে এবং আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

জানিয়েছেন শীর্ষ কমান্ডার

দীর্ঘ পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ল আইআরজিসি



ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি সফলতার সঙ্গে তাদের একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি গতকাল (সোমবার) একথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এই সফলতা অর্জনের অর্থ হচ্ছে এখন থেকে আইআরজিসি বিশ্বের যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে কারণ ইরানের সমুদ্রগামী যুদ্ধজাহাজগুলো পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় চলাচল করতে পারে।

জেনারেল সালামির বরাত দিয়ে ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, আইআরজিসির নৌ শাখা এবং অ্যারোস্পেস ডিভিশনের যৌথ সহায়তায় দীর্ঘ পাল্লার এ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে ইরান নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী অঞ্চলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে সফলতার সাথে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। তবে ইরান সবসময় বলে আসছে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে প্রতিরক্ষামূলক, আঞ্চলিক দেশগুলোর জন্য কোন হুমকি নয়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন

গাজা যুদ্ধই শেষ যুদ্ধ নয়


ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, চলমান গাজা যুদ্ধই শেষ যুদ্ধ নয়। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলে চলে যাওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনি জাতি দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এসেছে এবং এই ভূখণ্ড পুরোপুরি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি গতরাতে (রোববার রাত) এ কথা বলেন। গতরাতে দামেস্কে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর ১৫ জন প্রতিনিধি ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

তিনি আরও বলেন,৭ অক্টোবরের আল আকসা তুফান অভিযানের পর ইসরাইল পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমেরিকার সাহায্য-সহযোগিতা না থাকলে এই বিপর্যয় আরও স্পষ্ট হয়ে উঠত।

বৈঠকে ফিলিস্তিনের সংগ্রামী নেতারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য ইরানের প্রশংসা করে বলেন, আমেরিকার সর্বাত্মক সহযোগিতা সত্ত্বেও গাজা যুদ্ধে ইসরাইল নারী ও শিশুসহ নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারেনি। গাজায় এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরাই বিজয়ী পক্ষ বলে তারা মন্তব্য করেছেন। 

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক দেশগুলো সফরের অংশ হিসেবে রোববারই বৈরুত থেকে দামেস্কে উড়ে যান। সিরিয়া সফর শেষে তিনি আজ কাতারে গেছেন।

গাজায় দখলদারদের আগ্রাসনের প্রতিবাদ

ইসরাইলের গুপ্তচর ঘাঁটিতে নিখুঁত হামলা


লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ইহুদিবাদী ইসরাইলের স্পর্শকাতর গুপ্তচরবৃত্তির স্থাপনায় নতুন করে হামলা চালিয়েছে। গতকাল (সোমবার) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, আল-রাডার সামরিক ঘাঁটিতে নিখুঁতভাবে হামলা চালানোর জন্য তারা গাইডেড রকেট ব্যবহার করেছে।

এর একদিন আগেও হিজবুল্লাহ ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ব্রেইন্ট ব্যারাকে ফালাক-ওয়ান ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এর আগে অপর এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, ইসরাইলের আল-এবাদ গোয়েন্দা স্থাপনায় তারা হামলা চালিয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহ হামলা চালিয়ে আসছে। গতকাল ‌এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ এ পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে ১০০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে।

ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত গাজায় ২৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। লেবাননের প্রতিরোধকামী সংগঠনটি বলেছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা হামলা থামাবে না। ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে গিয়ে হিজবুল্লাহরও বহু যোদ্ধা হতাহত হয়েছেন।

গাজা উপত্যকায় গণহত্যা

ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে ইইউ’র আহ্বান


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্বর গণহত্যা অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল গতকাল (সোমবার) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান। এর আগে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “বিভিন্ন দেশ উপর উপর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে”। এছাড়া পশ্চিমা বহু দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরাইলি হামলায় গাজায় অনেক বেশি বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছেন।

এসব কথার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান বলেন, “যদি আপনারা বিশ্বাস করেন গাজায় অনেক বেশি বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছেন তাহলে অনেক মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে আপনাদের উচিত কম অস্ত্র সরবরাহ করা।”

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর আমেরিকা এ পর্যন্ত ইসরাইলকে ১০ হাজার টনের বেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে। গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের গণহত্যা চালাতে এ সমস্ত অস্ত্র বড় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া, আমেরিকা প্রতিবছর ইসরাইলকে ৩৮০ কোটি ডলারের বার্ষিক সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে।

রাফাহ শহরে অভিযানের ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি

পণবন্দিদের মুক্ত করার আলোচনায় অগ্রগতি


গাজা উপত্যকায় হামাস’সহ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর হাতে আটক ইসরাইলি পণবন্দিদের মুক্ত করার আলোচনায় ‘প্রকৃত অগ্রগতি’ অর্জিত হয়েছে বলে মার্কিন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইসরাইলি যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে ৪৫ মিনিট ধরে ফোনালাপ হয়েছে। ওই আলাপের মূল বিষয় ছিল পণবন্দি মুক্তির সম্ভাব্য চুক্তি।

এখনও বন্দি মুক্তির আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য দূরত্ব’ রয়েছে জানিয়ে ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘দূরত্বটি সত্যিই অনেক বেশি।’

ফোনালাপে বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন, গাজার সর্ব-দক্ষিণের শহর রাফাহতে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা ছাড়া তিনি ওই শহরে ইসরাইলের সামরিক অভিযান সমর্থন করবেন না। ইসরাইল দাবি করছে, রাফাহ ছাড়া গাজা উপত্যকার বাকি অংশে হামাসকে ‘প্রায় নির্মূল’ করে ফেলা হয়েছে। নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, রাফাহতে অভিযান না চালালে গাজা যুদ্ধে ‘বিজয়’ অর্জিত হবে না।

এর আগে শনিবার নেতানিয়াহু রাফাহ শহরে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিতে ইসরাইলি বাহিনীর প্রতি নির্দেশ জারি করেন। তার ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে; এমনকি ওয়াশিংটনও এর বিরোধিতা করে। কারণ, গত চার মাস ধরে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতে গিয়ে উপত্যকার বেশিরভাগ অধিবাসীকে রাফাহ শহরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখই এখন রাফাহতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক সমালোচনা নাকচ করে দিয়ে নেতানিয়াহু রোববার বলেছেন, রাফাহতে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানোর অর্থ গাজা যুদ্ধে ইসরাইলকে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য করা।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

রাফাহ শহরে ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধ বিস্তার


অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে ইহুদিবাদী ইসরাইল যদি যুদ্ধাপরাধ বিস্তৃত করে তাহলে অবৈধ এই শক্তিকে ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান গতকাল (সোমবার) সামাজিক মাধ্যম এক্স পেইজে দেয়া এক পোস্টে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

রাফাহ শহরের ওপর বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে অন্তত ১০০ বেসামরিক ফিলিস্তিনি শহীদ হওয়ার পর তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন। ইসরাইলি হামলায় আরো ২৩০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এদিকে, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন জসিম আলে সানির সাথে গতকাল এক বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বিস্তারের বিপক্ষে কথা বলছে অথচ একই সাথে তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাতে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করে যাচ্ছে। লেবানন এবং সিরিয়া সফর শেষে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দোহা সফর করেন।

কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি আরো বলেন, আমেরিকা যদি যুদ্ধের অবসান চায় তাহলে তাদেরকে কথাই নয় বরং কাজেই প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু গাজা যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সততার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা এই যুদ্ধের অবসান ঘটানোর ব্যাপারে নিজেদের সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়েছেন।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

গাজা যুদ্ধে ইসরাইল ও পশ্চিমারা অচলাবস্থার মুখে পড়েছে


ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছে, গাজা এখন শুধু মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জন্য নয় সেইসঙ্গে গোটা বিশ্বের ‘প্রধান ইস্যুতে’ পরিণত হয়েছে। তিনি গতরাতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে এ মন্তব্য করেন।

প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সাক্ষাতে ইরান ও সিরিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের প্রতিরোধ সংগ্রামে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ক্ষেত্রে সিরিয়া ফ্রন্ট লাইনে রয়েছে।

সাক্ষাতে প্রেসিডেন্ট আসাদ বলেন, গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলি মারাত্মক অচলাবস্থার মুখে পড়েছে। এই অচলাবস্থা থেকে বের করে ইসরাইলকে রক্ষা করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও লেবাননের ওপর আগ্রাসন চালাতে তেল আবিবকে সবুজ সংকেত দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদেরকে নিজেদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা নিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকতে হবে। কারণ, ফিলিস্তিনিরা চলমান যুদ্ধে যা অর্জন করেছে তা বিগত কয়েক দশকেও অর্জিত হয়নি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক দেশগুলো সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে রোববারই বৈরুত থেকে দামেস্কে উড়ে যান। বৈরুতে তিনি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ স্পিকারের পাশাপাশি লেবানন ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা এবং গাজা পরিস্থিতিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

‘তেল আবিবকে দায় নিতে হবে’

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ২ পণবন্দি নিহত


গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের গত ৯৬ ঘণ্টার বিমান হমলায় দু’জন ইসরাইলি পণবন্দি নিহত ও অপর আটজন আহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক বাহিনী ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড এ তথ্য জানিয়েছে।

নিজেদের অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে রোববার রাতে কাসসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আহত ইসরাইলি পণবন্দিদের অবস্থা ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কারণ, তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।  ইহুদিবাদীদের নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণে আহত পণবন্দিদের জীবন নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তার দায়ভার তেল আবিবকে বহন করতে হবে।”

এর আগে ইসরাইলের প্রধান সেনা মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, গাজায় আটক পণবন্দিদের মধ্যে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং এসব ব্যক্তির পরিবারবর্গকে সে তথ্য জানানো হয়েছে।

তেল আবিব দাবি করছে, গাজায় এখনও অন্তত ১৩০ ইসরাইলি পণবন্দি আটক রয়েছে। ইসরাইলি যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার দাবি করেছেন, গাজায় আটক ১৩২ পণবন্দির ‘বেশিরভাগই’ জীবিত রয়েছেন।  গাজা উপত্যকার ওপর চলমান ভয়াবহ গণহত্যাকে বৈধতা দিতে এ দাবি করে তিনি বলেন, এসব পণবন্দিকে উদ্ধার করার জন্য হামলা চালিয়ে যাওয়া জরুরি।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url