মধ্য প্রাচ্য এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের সর্বশেষ খবরাখবর
ইরানের প্রধান বিচারপতি
মুসলিম বিশ্বকে অবশ্যই ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে
ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি-ইজেই বলেছেন, সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে অবশ্যই ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় তেল আবিব সরকারের অব্যাহত বর্বরতা বন্ধ করার জন্য সমস্ত উপায় ব্যবহার করতে হবে।
আজ (বুধবার) বাগদাদে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া' আস-সুদানির সঙ্গে এক বৈঠকে মোহসেনি-এজেই গাজার জনগণকে সমর্থন করার জন্য ইরাকি সরকার ও জাতির শক্তিশালী অবস্থানের প্রশংসা করেন।
ইরানের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা বন্ধে ইসরাইলকে বাধ্য করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরো বেশি রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের জন্য মুসলিম উম্মাহর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “পুরো মুসলিম বিশ্বকে ইহুদিবাদী যুদ্ধযন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। গাজায় নির্বিচার ও বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা সক্রিয় করা অপরিহার্য।”
মোহসেনি-ইজেই ইরান ও ইরাকের মধ্যে অসংখ্য মিল এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্কের উচ্চ মাত্রার দিকেও ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, “ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সবসময় ইরাকের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অগ্রগতিকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। এছাড়া ইরাককে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করতে এবং বিদ্যমান সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে সহায়তা করতে তেহরান সব সময় প্রস্তুত বলেও জানান মোহসেনি-ইজেই।
ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান তেহরান ও বাগদাদের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানের দাবি জানিয়েছেন। বৈঠকে সুদানি ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইরানের নীতিগত সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি এ এসময় বলেন, বাগদাদ ইরাকি সরকার ও জাতির জন্য ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির ক্রমাগত সমর্থনের প্রশংসা করেন। ইরাকি প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনকে সমর্থনকারী ইরাক, ইরান এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
রয়েছে দূরবর্তী যুদ্ধের ক্ষমতা
ইরান 'অতুলনীয় নৌ শক্তি' অর্জন করেছে
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি সমুদ্র যুদ্ধে এলিট এই বাহিনীর অত্যাধুনিক সক্ষমতার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, ইরানের মাটিতে কোনো আগ্রাসন বিনা জবাবে পার পাবে না।
আজ (বুধবার) ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুশেহরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে আইআরজিসির নৌ শাখার জন্য কিছু স্পিডবোট এবং অন্যান্য সামরিক প্রযুক্তি উন্মোচন করা হয়।
জেনারেল সালামি ইরানের উচ্চ-প্রযুক্তিগত সামুদ্রিক সক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, শত্রুর হুমকি মোকাবেলা করতে সক্ষম নৌবাহিনী গড়ে তোলা একটি দেশের প্রতিরোধ ক্ষমতার "সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান"। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশ্ব নৌশক্তির সামনে একটি শক্তিশালী নৌশক্তির অবশ্যই "কিছু বলার থাকে।"
সালামি বলেন, আইআরজিসি নৌ-যুদ্ধ প্রযুক্তি এবং স্বাধীন নৌচলাচলের ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন, “নৌ যুদ্ধের মধ্যে নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ শক্তিশালী এবং স্বাধীন হতে হবে। নৌ যুদ্ধ আসলে প্রযুক্তির যুদ্ধ। ইরানের ওপর কোনো আগ্রাসন বিনা জবাবে পার পাবে না।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন
এক কমান্ডারসহ আরও তিন ইহুদি সেনা নিহত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন চালাতে গিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের আরো এক কমান্ডারসহ তিন সেনা নিহত হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) দখলদার সেনাবাহিনী তিন সেনা নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে।
ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে, নিহত কমান্ডারের নাম লেফটেন্যান্ট কর্নেল নেটানেল ইয়াকোভ আল-কুবি। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গাজা ডিভিশনের দক্ষিণ ব্রিগেডের ৬৩০তম ব্যাটালিয়নকে কমান্ড করার সময় ৩৬ বছর বয়সী লেফটেন্যান্ট কর্নেল নেটানেল আল-কুবি মারা যায়।
সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছেন, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনুস শহরের একটি ভবনে অবস্থান করার সময় সেখানে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান এবং এই তিন সেনা নিহত হয়। তিন সেনা নিহত হওয়ার ফলে গাজায় স্থল অভিযান চালাতে গিয়ে ইসরাইলের এ পর্যন্ত নিহত সেনার সংখ্যা ২৩২ জনে দাঁড়ালো।
তবে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকামী যোদ্ধারা বলছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি নিহত সেনার সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গতকালের ঘটনায় আরো দুই সেনা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার পরিণতি হবে ভয়াবহ
ইসরাইলকে ‘এক হাজার বছরের যুদ্ধের’ হুমকি
আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গেইত সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইল যদি গাজা উপত্যকা বা পশ্চিম তীর দখল করে নেয়ার চেষ্টা করে তাহলে ‘এমন এক যুদ্ধ শুরু হবে যা এক হাজার বছর ধরে চলবে।’ তিনি গতকাল (মঙ্গলবার) দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে দেয়া এক বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
আবুল গেইত বলেন, দখলীকৃত ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে বের করে দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টার ফল হবে ভয়াবহ এবং সেক্ষেত্রে ‘এক হাজার বছরের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ শুরু হবে।’ তিনি গাজা উপত্যকার ঘনবসতিপূর্ণ রাফাহ শহরে স্থল অভিযান চালানোর ব্যাপারেও তেল আবিবকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
আরব লীগের মহাসচিব ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেয়ার জন্যও ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানান। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের মধ্যদিয়ে দুই রাষ্ট্র-ভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনা প্রসঙ্গেও কথা বলেন আবুল গেইত। তিনি বলেন, ইসরাইল যদি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি নির্মাণের কাজ বন্ধ করে তাহলেই কেবল সেরকম কিছু সম্ভব।
তিনি বলেন, জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের সকল ভূখণ্ড একে একে গ্রাস করে ফেলছে ইসরাইল। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে রাষ্ট্র গঠনের জন্য ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো ভূমি অবশিষ্ট থাকবে না।
আবুল গেইত বলেন, গাজায় ইসরাইল ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যে আচরণ করছে তার ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে মিশর ও জর্দানের সঙ্গে তেল আবিবের স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি ইসরাইলকে গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করার জন্য আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
ইরানের স্বার্থে আঘাত সহ্য করা হবে না
ইসরাইলের হ্যাঙ্গার ধ্বংস করার মহড়া
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইহুদিবাদী ইসরাইলের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের একটি হ্যাঙ্গার ধ্বংস করে দেয়ার মহড়া চালিয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। ‘ন্যাশনাল গার্ডস ডে’ উপলক্ষে গতকাল (মঙ্গলবার) ওই মহড়া চালায় আইআরজিসি।
মহড়ার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইসরাইলের কল্পিত ‘পালমাচিম’ বিমান ঘাঁটিতে রক্ষিত এফ-৩৫ বিমানের হ্যাঙ্গার লক্ষ্য করে এমাদ ও কাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধ্বংস ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি এগুলোর পাল্লা এবং নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
ইরানের বার্ত সাংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, তরল জ্বালানি চালিত এমাদ ক্ষেপণাস্ত্র এক হাজার ৭০০ কিলেমিটার দূরের লক্ষ্যবস্ততে আঘাত হানার সময় লক্ষ্যবস্তু থেকে সর্বোচ্চ চার মিটার দূরত্বে আঘাত হানছে।
ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর উপকূলে অবস্থিত ‘পালমাচিম’ বিমান ঘাঁটিতে আমেরিকার কাছ থেকে পাওয়া সর্বাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানগুলো মোতায়েন করে রেখেছে দখলদার সরকার। এই ঘাঁটিতে বসেই গতমাসে ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার হুমকি দিয়েছিলেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সব সময় বলে এসেছে, দেশটি কারো বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাবে না। তবে আগ্রাসনের শিকার হলে ইরান সর্বশক্তি নিয়ে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে আইআরসিজির একজন সিনিয়র কমান্ডার তেল আবিবকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, বিশ্বের যেকোনো স্থানে ইরানের স্বার্থে আঘাত আসলে তার দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিরোধ ফ্রন্ট
সিরিয়ার মার্কিন ঘাঁটিতে ৩ দিনের মধ্যে তৃতীয়বারে মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেইর আজ-জোর প্রদেশে অবস্থিত একটি মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। রাশিয়ার বার্তা সংস্থা স্পুৎনিকসহ কয়েকটি সংবাদ সূত্র জানিয়েছে, গতরাতে প্রদেশের আল-ওমর তেলক্ষেত্রে অবস্থিত ওই মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়।
সিরিয়া সরকারের বিনা অনুমতিতে নির্মিত ওই ঘাঁটিতে মোট পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে বলে এসব খবরে উল্লেখ করা হয়। গত তিন দিনে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো চালানো এ হামলায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের বিবরণ জানা যায়নি।
এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী গত তিন দিনের হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি। তবে গত অক্টোবর মাসের গোড়ার দিকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ইরাকের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে কয়েক ডজন হামলা চালিয়েছে। যেসব ঘাঁটি এসব হামলার শিকার হয়েছে সেসবের মধ্যে রয়েছে আইন আল-আসাদ, খারাব আল-জির এবং কোনিকো।
ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্টগুলো এ অঞ্চলে মার্কিন সেনা উপস্থিতির ঘোর বিরোধী। তাদের মতে, এসব বিদেশি সেনা মধ্যপ্রাচ্যের সকল অস্থিতিশীলতার উৎস। এসব ফ্রন্ট গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান গণহত্যার প্রতি মার্কিন সমর্থনেও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে।
💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url