আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল মায়েদা’র বাংলা অনুবাদ | সূরা আল মায়েদা | Al-Maidah | سورة المائدة


সূরা আল মায়েদার বাংলা অনুবাদ


সূরা আল মায়েদা, মদীনায় অবতীর্ণ- আয়াত ১২০ রুকু ১৬

সূরা আল মায়েদা



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. হে ঈমানদার বান্দারা, তোমরা যারা ঈমান এনেছো তোমরা ওয়াদাসমূহ প রণ করো (মনে রেখো); তোমাদের জন্যে চার পা বিশিষ্ট পোষা জন্তু হালাল করা হয়েছে, তবে সেসব জন্তু ছাড়া, যা (বিবরণসহ একটু পরেই) তোমাদের পড়ে শোনানো হচ্ছে, এহরাম (বাঁধা) অবস্থায় (কিন্তু এসব হালাল জন্তু) শিকার করা বৈধ মনে করো না; (অবশ্যই) আল্লাহ তায়ালা যা চান সে আদেশই তিনি জারি করেন।

২. হে ঈমানদার বান্দারা, তোমরা আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনসমূহের অসম্মান করো না, সম্মানিত মাসগুলোকেও (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্যে) কখনো হালাল বানিয়ে নিয়ো না, (আল্লাহর নামে) উৎসর্গীত জন্তুসমূহ ও যেসব জন্তুর গলায় (উৎসর্গের চিহ্ন হিসাবে) পট্টি বেঁধে দেয়া হয়েছে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অর্জনের ল্যে আল্লাহর পবিত্র (কাবা) ঘরের দিকে রওনা দিয়েছে (তাদের তোমরা অসম্মান করো না), তোমরা যখন এহরামমুক্ত হবে তখন তোমরা শিকার করতে পারো, (বিশেষ) কোনো একটি সমপ্রদায়ের বিদ্বেষ- (এমন বিদ্বেষ যার কারণে) তারা তোমাদের আল্লাহ তায়ালার পবিত্র মাসজিদে আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছিলো, যেন তোমাদের (কোনো রকম) সীমালংঘন করতে প্ররোচিত না করে, তোমরা (শুধু) নেক কাজ ও তাকওয়ার ব্যাপারেই একে অপরের সহযোগিতা করো, পাপ ও বাড়াবাড়ির কাজে (কখনো) একে অপরের সহযোগিতা করো না, সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, কেননা আল্লাহ তায়ালা (পাপের) দন্ডদানের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর!

৩. মৃত জন্তু, রক্ত, শুয়োরের গোশ্ত ও যে জন্তু আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো নামে যবাই (কিংবা উৎসর্গ) করা হয়েছে, (তা সবই) তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরা, আঘাত খেয়ে মরা, ওপর থেকে পড়ে মরা, শিংয়ের আঘাতে মরা, হিংস্র জন্তুর খাওয়া জন্তুও (তোমাদের জন্যে হারাম), তবে তোমরা তা যদি (জীবিত অবস্থায় পেয়ে) যবাই করে থাকো (তাহলে তা হারাম নয়) | পূজার বেদীতে বলি দেয়া জন্তুও হারাম, (লটারি কিংবা) জ্বয়ার তীর নিপে করে ভাগ্য নির্ণয় করা (হারাম), এর সব কয়টাই হচ্ছে বড়ো (বড়ো) গুনাহের কাজ, আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন (নির্মূল করা) সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েছে, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো; আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও আমি পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের জন্যে জীবন বিধান হিসাবে আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম; (হারামের ব্যাপারে মনে রেখো,) যদি কোনো ব্যক্তিকে ক্ষুধার তাড়নায় (হারাম খেতে) বাধ্য করা হয়, কিন্তু (ইচ্ছা করে) সে কোনো পাপের দিকে ঝুঁকে পড়তে না চায় (তার ব্যাপারটা আলাদা), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

৪. তারা তোমার কাছ থেকে জানতে চায় কোন্ কোন্ জিনিস তাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে? তুমি (তাদের) বলো, সব ধরনের পাক-সাফ বস্তুই (তোমাদের জন্যে) হালাল করা হয়েছে এবং সেসব শিকারী (জন্তু ও পাখীর) ধরে আনা (জন্তু এবং পাখী)-ও তোমরা খাও, যাদের তোমরা (শিকার করার নিয়ম) শিক্ষা দিয়েছো, যেভাবে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, (তবে) এর ওপর অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার নাম নেবে, তোমরা আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করো; আল্লাহ তায়ালা দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।

৫. আজ তোমাদের জন্যে যাবতীয় পাক জিনিস হালাল করা হলো; যাদের ওপর আল্লাহর কেতাব নাযিল করা হয়েছে তাদের খাবারও তোমাদের জন্যে হালাল, আবার তোমাদের খাদ্যদ্রব্যও তাদের জন্যে হালাল, (চরিত্রের) সংরক্ষিত দুর্গে অবস্থানকারী মোমেন নারী ও তোমাদের আগে যাদের কেতাব দেয়া হয়েছিলো, যখন তোমরা (তাদের) মোহরানা আদায় করে দেবে, সেসব (আহলে কেতাব ) সতী সাধ্বী নারীরাও (তখন তোমাদের জন্যে হালাল হয়ে যাবে), তোমরা (থাকবে চরিত্রের) রক হয়ে, কামনা চরিতার্থ করে কিংবা গোপন অভিসারী (উপপত্নী) বানিয়ে নয়; যে কেউই ঈমান অস্বীকার করবে, তার (জীবনের) সব কর্মই নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং শেষ বিচারের দিনে সে হবে (চরমভাবে) ক্ষতিগ্রস্থদের একজন।

৬. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা যখন নামাযের জন্যে দাঁড়াবে তোমরা তোমাদের (পুরো) মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত তোমাদের হাত দুটো ধুয়ে নেবে, অতপর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা দুটো গোড়ালি পর্যন্ত (ধুয়ে নেবে,) কখনো যদি (এমন বেশী) নাপাক হয়ে যাও (যাতে গোসল করা ফরয হয়ে যায়), তাহলে (গোসল করে ভালোভাবে) পবিত্র হয়ে নেবে, যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো কিংবা তোমরা যদি সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ যদি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে অথবা যদি নারী সম্ভোগ করে থাকো (তাহলে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করো), আর যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও, (আর তায়াম্মুমের নিয়ম হচ্ছে, সেই পবিত্র) মাটি দিয়ে তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসেহ করে নেবে; (মূলত) আল্লাহ তায়ালা কখনো (পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে) তোমাদের কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পাক-সাফ করে দিতে এবং (এভাবেই) তিনি তোমাদের ওপর তাঁর নেয়ামতসমূহ পূর্ণ করে দিতে চান, যাতে করে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা
আদায় করতে পারো।


৭. তোমাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতসমূহ তোমরা স্মরণ করো এবং তোমাদের কাছ থেকে যে পাকা প্রতিশ্রুতি তিনি গ্রহণ করেছিলেন (সে কথাও ভুলে যেয়ো না), যখন তোমরা (তাঁর সাথে অংগীকার করে) বলেছিলে (হে আমাদের মালিক), আমরা (তোমার কথা) শুনলাম এবং (তা) মেনে নিলাম, তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অন্তরে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।

৮. হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা আল্লাহর জন্যে (সত্য ও ন্যায়ের ওপর সাক্ষী হয়ে অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে থাকো, (মনে রাখবে, বিশেষ) কোনো সম্প্রদায়ের দুশমনী যেন তোমাদের এমনভাবে প্ররোচিত না করে যে, (এর ফলে) তোমরা (তাদের সাথে) ন্যায় ও ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ করো, কারণ এ (কাজ)-টি (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে চলার অধিক নিকটতর; তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে পূর্ণাংগ ওয়াকেফহাল রয়েছেন।

৯. যারা ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে (এই বলে) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (যে), তাদের জন্যে (তাঁর কাছে বিশেষ) মা ও মহাপুরস্কার রয়েছে।

১০. (অপরদিকে) যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারা সবাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী।

১১. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ করো, যখন একটি জনগোষ্ঠী তোমাদের বিরুদ্ধে হাত ওঠাতে উদ্যত হয়েছিলো, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের সে হাত তোমাদের ওপর (আক্রমণ করা) থেকে সংযত করে দিলেন, অতপর তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, মোমেনদের তো আল্লাহ তায়ালার ওপরই ভরসা করা উচিত।

১২. আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাঈলদের কাছ থেকে আনুগত্যের) অংগীকার গ্রহণ করলেন, অতপর আমি (এ কাজের জন্যে) তাদের মধ্য থেকে বারো জন সর্দার নিযুক্ত করলাম; আল্লাহ তায়ালা তাদের বললেন, অবশ্যই আমি তোমাদের সাথে আছি, তোমরা যদি নামায প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত আদায় করো, আমার রসূলদের ওপর ঈমান আনো এবং (দ্বীনের কাজে যদি) তোমরা তাদের সাহায্য- সহযোগিতা করো, (সর্বোপরী) আল্লাহ তায়ালাকে তোমরা যদি উত্তম ঋণ প্রদান করো, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের গুনাহসমূহ মোচন করে দেবো এবং তোমাদের আমি এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবো যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়, এরপর যদি কোনো ব্যক্তি (আল্লাহকে) অস্বীকার করে, তাহলে সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে।

১৩. (অতপর) তাদের সেই অংগীকার ভংগ করার কারণে আমি তাদের ওপর অভিশাপ নাযিল করেছি এবং তাদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি (তাদের চরিত্রই ছিলো), তারা (আল্লাহর) কালামকে তার নির্দিষ্ট অর্থ থেকে সরিয়ে নিয়ে বিকৃত করে দিতো, (হেদায়াতের) যা কিছু তাদের শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো তার অধিকাংশ কথাই তারা ভুলে গেলো; প্রতিনিয়ত তুমি তাদের দেখতে পাবে, তাদের সামান্য একটি অংশ ছাড়া অধিকাংশ মানুষই (আল্লাহর সাথে) বিশ্বাসঘাতকতা করে চলেছে, অতএব তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও, (যথাসম্ভব) তুমি তাদের (সংস্রব) এড়িয়ে চলো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা কল্যাণকামী মানুষদের ভালোবাসেন।

১৪. আমি তো তাদের (কাছ থেকেও আনুগত্যের) অংগীকার গ্রহণ করেছিলাম, যারা বলে, আমরা খৃস্টান (সম্প্রদায়ের লোক), অতপর এরাও (সে অংগীকার সম্পর্কিত) অধিকাংশ কথা ভুলে গেলো, যা তাদের স্মরণ করানো হয়েছিলো, অতপর আমিও তাদের (পরস্পরের) মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত (এক স্থায়ী) শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে দিলাম; অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তাদের বলে দেবেন (দুনিয়ার জীবনে) তারা যা কিছু উদ্ভাবন করতো।

১৫. হে আহলে কেতাবরা, তোমাদের কাছে আমার (পক্ষ থেকে) রসূল এসেছে, (আগের) কেতাবের যা কিছু তোমরা এতোদিন গোপন করে রেখেছিলে তার বহু কিছুই সে তোমাদের বলে দিচ্ছে, আবার অনেক কিছু সে এড়িয়েও যাচ্ছে; তোমাদের কাছে (এখন) তো আল্লাহর পক্ষ থেকে আলোকবর্তিকা এবং সুস্পষ্ট কেতাবও এসে হাযির হয়েছে।

১৬. যে আল্লাহর আনুগত্য করে তার সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তার শান্তি ও নিরাপত্তার পথ বাতলে দেন, অতপর তিনি তাঁর অনুমতিক্রমে তাদের (জাহেলিয়াতের) অন্ধকার থেকে (ঈমানের) আলোতে বের করে আনেন, আর (এভাবেই) তাদের তিনি সঠিক পথে পরিচালিত করেন।

১৭. নিশ্চয়ই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, মারইয়ামের পুত্র মাসীহই আল্লাহ; (হে মোহাম্মদ,) তুমি তাদের বলো, আল্লাহ তায়ালা যদি মারইয়াম পুত্র মাসীহ, তার মা ও গোটা বিশ্ব-চরাচরে যা কিছু আছে সব কিছুও ধ্বংস করে দিতে চান, এমন কে আছে যে আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে এদের রা করতে পারে? এই আকাশমালা, ভূমন্ডল ও এর মধ্যবর্তী স্থানে যা কিছু আছে, তার সার্বভৌমত্ব (এককভাবে) আল্লাহ তায়ালার জন্যেই (নির্দিষ্ট); তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন; আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয়ের ওপর একক ক্ষমতাবান।

১৮. ইহুদী ও খৃস্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়পাত্র; তুমি (তাদের) বলো, তাহলে তিনি কেন তোমাদের গুনাহের জন্যে তোমাদের দন্ড প্রদান করবেন; (মূলত) তোমরা (সবাই হচ্ছো তাদের মধ্য থেকে কতিপয়) মানুষ, যাদের আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা মা করে দেন আবার যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি প্রদান করেন; আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যবর্তী সব কিছুর একক মালিকানা আল্লাহ তায়ালার জন্যেই (নির্দিষ্ট), সবকিছুকে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে।

১৯. হে আহলে কেতাবরা, রসূলদের আগমন ধারার ওপরই আমার (পক্ষ থেকে) তোমাদের কাছে একজন রসুল এসেছে, সে তোমাদের জন্যে (আমার কথাগুলো) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে, যাতে করে তোমরা (বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে) একথা বলতে না পারো যে, (কই) আমাদের কাছে (জান্নাতের) সুসংবাদ বহনকারী ও (জাহান্নামের) সতর্ককারী (হিসেবে) কেউ তো আগমন করেনি, (আজ তো সত্যি সত্যিই) তোমাদের কাছে সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী (একজন রসূল) এসে গেছে, বস্তুত আল্লাহ তায়ালা সর্ববিষয়ে শক্তিমান।

২০. (স্মরণ করো,) যখন মূসা তার জাতিকে বলেছিলো, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর যে নেয়ামত নাযিল করেছেন তা তোমরা স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের মাঝে বহু নবী পয়দা করেছেন, তিনি তোমাদের (এ যমীনের) শাসনকর্তা বানিয়েছেন, এছাড়াও তিনি তোমাদের এমন সব নেয়ামত দান করেছেন যা (এ) সৃষ্টিকূলে (এর আগে) তিনি আর কাউকে দান করেননি।

২১. হে আমার জাতি, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্যে যে পবিত্র ভূখন্ড লিখে রেখেছেন তোমরা তাতে প্রবেশ করো এবং (এ অগ্রাভিযানে) কখনো পশ্চাদপসরণ করো না; তারপরও তোমরা যদি ফিরে আসো তাহলে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

২২. তারা বললো, হে মুসা (আমরা কিভাবে সেই জনপদে প্রবেশ করবো), সেখানে (তো) এক দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সম্প্রদায় রয়েছে, তারা সেখান থেকে বেরিয়ে না এলে আমরা কিছুতেই সেখানে প্রবেশ করবো না, তারা সেখান থেকে বেরিয়ে এলে আমরা (অবশ্যই) প্রবেশ করবো।

২৩. যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করছিলো, তাদের (এমন) দুজন লোক, যাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করেছিলেন, (এগিয়ে এসে) বললো, তোমরা (সদর) দরজা দিয়েই তাদের (জনপদে) প্রবেশ করো, আর (একবার) সেখানে প্রবেশ করলেই তোমরা বিজয়ী হবে, তোমরা যদি (সত্যিকার অর্থে) মোমেন হও তাহলে আল্লাহর ওপরই ভরসা করো।

২৪. তারা (আরো) বললো, হে মূসা, সেই (শক্তিশালী) লোকেরা যতোণ (পর্যন্ত) সেখানে থাকবে, ততক্ষণ আমরা কোনো অবস্থায়ই সেখানে প্রবেশ করবো না, (বরং) তুমিই যাও, তুমি ও তোমার মালিক উভয়ে মিলে যুদ্ধ করো, আমরা এখানেই বসে রইলাম।

২৫. (তাদের কথা শুনে) মূসা বললো, হে (আমার) মালিক (তুমি তো জানো), আমার নিজের এবং আমার ভাই ছাড়া আর কারো ওপর আমার আধিপত্য চলে না, অতএব আমাদের মাঝে ও এই নাফরমান লোকদের মাঝে তুমি একটা মীমাংসা করে দাও।

২৬. আল্লাহ তায়ালা বললেন, ( হাঁ, তাই হবে, আগামী) চল্লিশ বছর পর্যন্ত সে (জনপদ) তাদের জন্যে নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো, (এ সময়ে) তারা উদ্ভ্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াবে; সুতরাং তুমি এই না- ফরমান লোকদের ওপর কখনো দুঃখ করো না।

২৭. (হে মোহাম্মদ,) তুমি এদের কাছে আদমের দুই পুত্রের গল্পটি যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও! (গল্পটি ছিলো,) যখন তারা দুই জনই (আল্লাহর নামে) কোরবানী পেশ করলো, তখন তাদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে কোরবানী কবুল করা হলো, আরেকজনের কাছ থেকে তা কিছুতেই কবুল করা হলো না, (যার কোরবানী কবুল করা হয়নি) সে বললো, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করবো (যার কোরবানী কবুল করা হলো), সে বললো, আল্লাহ তায়ালা তো শুধু পরহেযগার লোকদের কাছ থেকেই (কোরবানী) কবুল করেন।

২৮. (হিংসার বশবর্তী হয়ে) তুমি যদি আজ আমাকে হত্যা করার জন্যে আমার দিকে তোমার হাত বাড়াও, তাহলে আমি (কিন্তু) তোমাকে হত্যা করার জন্যে তোমার প্রতি আমার হাত বাড়িয়ে দেবো না, কেননা আমি সৃষ্টিকুলের মালিককে ভয় করি।

২৯. আমি (বরং) চাইবো, তুমি আমার গুনাহ ও তোমার গুনাহের (বোঝা) একাই তোমার (মাথার) ওপর উঠিয়ে নাও এবং (এভাবেই) তুমি জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে পড়ো, (মূলত) এ হচ্ছে যালেমদের (যথার্থ) কর্মফল।

৩০. শেষ পর্যন্ত তার কুপ্রবৃত্তি তাকে নিজ ভাইয়ের হত্যার কাজে উস্কানি দিলো, অতপর সে তাকে খুন করেই ফেললো এবং (এ কাজের ফলে) সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো।

৩১. অতপর আল্লাহ তায়ালা (সেখানে) একটি কাক পাঠালেন, কাকটি (হত্যাকারীর সামনে এসে) মাটি খুঁড়তে লাগলো, উদ্দেশ্য, তাকে দেখানো কিভাবে সে তার ভাইয়ের লাশ লুকিয়ে রাখবে; (এটা দেখে) সে (নিজে নিজে) বলতে লাগলো, হায়! আমি তো এই কাকটির চাইতেও অক্ষম হয়ে পড়েছি, আমি তো আমার ভাইয়ের লাশটাও গোপন করতে পারলাম না, অতপর সে সত্যি সত্যিই (নিজের কৃতকর্মের জন্যে) অনুতপ্ত হলো।

৩২. (পূর্ববর্তীকালে) ওই (ঘটনার) কারণেই আমি বনী ইসরাঈলদের জন্যে এই বিধান জারি করলাম যে, কোনো মানুষকে হত্যা করার কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ (করার শাস্তি বিধান) ছাড়া (অন্য কোনো কারণে) কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করলো; (আবার এমনিভাবে) যদি কেউ একজনের প্রাণ রা করে তবে সে যেন গোটা মানব জাতিকেই বাঁচিয়ে দিলো; এদের কাছে আমার রসুলরা সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিলো, তারপরও এদের অধিকাংশ লোক এ যমীনের বুকে সীমালংঘনকারী হিসেবেই থেকে গেলো।

৩৩. যারা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং (আল্লাহর) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাদের জন্যে নির্দিষ্ট শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদের হত্যা করা হবে কিংবা তাদের শূলবিদ্ধ করা হবে, অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে, কিংবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হবে; এই অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের জন্যে, তাছাড়া) পরকালে তাদের জন্যে ভয়াবহ আযাব তো রয়েছেই।

৩৪. তবে (এটা তাদের জন্যে নয়,) যাদের ওপর তোমাদের আধিপত্য স্থাপিত হবার আগেই তারা তাওবা করেছে, তোমরা জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা একান্ত ক্ষক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।

৩৫. হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং তাঁর দিকে ধাবিত হওয়ার জন্যে) উপায় খুঁজতে থাকো (তার বিশেষ একটি উপায় হচ্ছে), তোমরা আল্লাহর পথে জেহাদ করো, সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে।

৩৬. আর যারা ঈমান আনতে অস্বীকার করেছে, (কেয়ামতের দিন) পৃথিবীর সমুদয় ধন-দৌলতও যদি তাদের করায়ত্ত থাকে-(তার সাথে আরো) যদি সমপরিমাণ সম্পদ তাদের কাছে থাকে, (এ সমদ) মুক্তিপণ হিসেবে দিয়েও যদি সে কেয়ামতের দিন জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি পেতে চায় (তাও সম্ভব হবে না), তার কাছ থেকে (এর কিছুই সেদিন) গ্রহণ করা হবে না, তাদের জন্যে (সেদিন) কঠোর আযাব নির্ধারিত থাকবে।

৩৭. তারা (সেদিন) দোযখের আযাব থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে, কিন্তু (কোনো অবস্থায়ই) তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না, তাদের জন্যে স্থায়ী আযাব নির্দিষ্ট হয়ে আছে।

৩৮. পুরুষ ও নারী- এদের যে কেউই চুরি করবে, তাদের হাত দুটো কেটে ফেলো, এটা তাদেরই কর্মফল এবং আল্লাহর প থেকে নির্ধারিত দন্ড; আল্লাহ তায়ালা মহাশক্তিশালী ও প্রবল প্রজ্ঞাময়।

৩৯. (হাঁ,) যে ব্যক্তি (এ জঘন্য) যুলুম করার পর (আল্লাহ তায়ালার কাছে) তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তার তাওবা কবুল করবেন; আল্লাহ তায়ালা নিসন্দেহে বড়ো ক্ষমাশীল ও দয়াময়।

৪০. তুমি কি (একথা) জানো না, এই আকাশমণ্ডলী ও যমীনের একক সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যে; তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দেন, আবার যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি মাফ করে দেন; (কেননা) সব কিছুর ওপর তিনিই হচ্ছেন একক ক্ষমতাবান।

৪১. হে রসূল, যারা দ্রুতগতিতে কুফরীর পথে ধাবিত হচ্ছে, তারা যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়, এরা সে দলের (লোক) যারা মুখে বলে, আমরা ঈমান এনেছি, কিন্তু (সত্যিকার অর্থে) তাদের অন্তর কখনো ঈমান আনেনি, আর (তাদের ব্যাপারও নয়) যারা ইহুদী- তারা মিথ্যা কথা শোনার জন্যে (সদা) কান খাড়া করে রাখে এবং (তাদের বন্ধু সম্প্রদায়ের) যেসব লোক কখনো তোমার কাছে আসেনি, এরা সেই অপর সম্প্রদায়টির জন্যেই নিজেদের কান খাড়া করে রাখে; আল্লাহর কেতাবের কথাগুলো আপন জায়গায় (বিন্যস্ত) থাকার পরেও এরা তা বিকৃত করে বেড়ায় এবং (অন্যদের কাছে) এরা বলে, (হাঁ) যদি এ (ধরনের কোনো) বিধান তোমাদের দেয়া হয় তাহলে তোমরা তা গ্রহণ করো, আর সে ধরনের কিছু না দেয়া হলে তোমরা (তা থেকে) সতর্ক থেকো; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যার পথচ্যুতি চান, তাকে আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে বাঁচানোর জন্যে তুমি তো কিছুই করতে পারো না; এরাই হচ্ছে সেসব (হতভাগ্য) লোক, আল্লাহ তায়ালা কখনো যাদের অন্তরগুলোকে পাক-সাফ করার এরাদা পোষণ করেন না, তাদের জন্যে পৃথিবীতে (যেমনি) রয়েছে অপমান (ও লাঞ্ছনা), পরকালেও (তেমনি) তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ আযাব।

৪২. (ইহুদীদের চরিত্র হচ্ছে.) এরা (যেমন) মিথ্যা কথা শুনতে অভ্যস্ত, (তেমনি) এরা হারাম মাল খেতেও ওসত্দাদ; অতএব এরা যদি কখনো (কোনো বিচার নিয়ে) তোমার কাছে আসে তাহলে তুমি (চাইলে) তাদের বিচার করতে পারো কিংবা তাদের উপেক্ষা করো, যদি তুমি তাদের ফিরিয়ে দাও তাহলে (নিশ্চিত থাকো), এরা তোমার কোনোই অনিষ্ট করতে পারবে না, তবে যদি তুমি তাদের বিচার ফয়সালা করতে চাও তাহলে অবশ্যই ন্যায়বিচার করবে; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ন্যায় বিচারকদের ভালোবাসেন।

৪৩. এসব লোক কিভাবে তোমার কাছে বিচারের ভার নিয়ে হাযির হবে, যখন তাদের নিজেদের কাছেই (আল্লাহর পাঠানো) তাওরাত মজুদ রয়েছে, তাতেও তো (বিচার-আচার সংক্রান্ত) আল্লাহর বিধান আছে, (তুমি যা কিছুই করো না কেন) একটু পরেই তারা তোমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, এরা আসলেই (আল্লাহর কেতাবের ব্যাপারে) ঈমানদার নয়।

৪৪. নিসন্দেহে আমি (মূসার কাছে) তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে (তাদের জন্যে) পথনির্দেশ ও আলোকবর্তিকা বর্তমান ছিলো, আমার নবীরা যারা আমার বিধানেরই অনুবর্তন করতো, ইহুদী জাতিকে এ (হেদায়াত) মোতাবেকই আইন-কানুন প্রদান করতো, (নবীদের পর তাদের) জ্ঞানসাধক ও ধর্মীয় পন্ডিতরাও (এ অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করতো), কেননা, (নবীর পর) আল্লাহর কেতাব সংরণ করার দায়িত্ব এদেরই দেয়া হয়েছিলো, তারা (নিজেরাও) ছিলো এর (প্রত্যক্ষ) সাক্ষী, সুতরাং তোমরা মানুষদের ভয় না করে একান্তভাবে আমাকেই ভয় করো, আর আমার আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না; যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না, তারাই (হচ্ছে) কাফের।

৪৫. (তাওরাতের) সেখানে আমি তাদের জন্যে বিধান নাযিল করেছিলাম যে, (তাদের) জানের বদলে জান, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত, (শাস্তি প্রয়োগের সময় এই শারীরিক) যখমটাই কিন্তু আসল দন্ড (বলে বিবেচিত হয়); অবশ্য (বাদী পরে) কেউ যদি এই দন্ড মাফ করে দিতে চায়, তাহলে তা তার নিজের (গুনাহ খাতার) জন্যে কাফফারা (হিসেবে গণ্য) হবে; আর যারাই আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করেনা, তারাই যালেম।

৪৬. এ ক্রমধারায় অতপর আমি মারইয়াম-পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি, (সে সময়) আগে থেকে তাওরাতের যা কিছু (অবশিষ্ট) ছিলো, সে ছিলো তার সত্যতা স্বীকারকারী, আর আমি তাকে ইনজীল দান করেছি, তাতে ছিলো হেদায়াত ও ন র; তখন তাওরাতের যা কিছু (তার কাছে বর্তমান ছিলো- ইনজীল কেতাব) তার সত্যতাও সে স্বীকার করেছে, (তদুপরি) তাতে আল্লাহভীরু লোকদের জন্যে পথনির্দেশ ও উপদেশ (মজুদ) ছিলো।

৪৭. ইনজীলের অনুসারীদের উচিত এর ভেতর আল্লাহ তায়ালা যা কিছু নাযিল করেছেন তার ভিত্তিতে বিচার ফয়সালা করা; (কেননা) যারাই আল্লাহর নাযিল করা আইনের ভিত্তিতে বিচার করেনা তারাই ফাসেক।

৪৮. (হে মোহাম্মদ,) আমি তোমার প্রতি সত্য (দ্বীন)-সহ এ কেতাব নাযিল করেছি, (আগের) কেতাবসমূহের যা কিছু (অবিকৃত অবস্থায়) তার সামনে মজুদ রয়েছে, এ কেতাব তার সত্যতা স্বীকার করে (শুধু তাই নয়), এ কেতাব (তার ওপর) হেফাযতকারীও বটে! (সুতরাং) আল্লাহ তায়ালা যেসব বিধি-বিধান নাযিল করেছেন তার ভিত্তিতেই তুমি তাদের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করো, আর (এ বিচারের সময়) তোমার নিজের কাছে যা সত্য (দ্বীন) এসেছে, তার থেকে সরে গিয়ে তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করো না; আমি তোমাদের প্রতিটি (সম্প্রদায়ের) জন্যে শরীয়ত ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছি; আল্লাহ তায়ালা চাইলে তোমাদের সবাইকে একই উম্মত বানিয়ে দিতে পারতেন; বরং তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তার ভিত্তিতে তোমাদের যাচাই-বাছাই করে নিতে চেয়েছেন, অতএব ভালো কাজে তোমরা সবাই প্রতিযোগিতা করো; (কেননা) আল্লাহ তায়ালার দিকেই হবে তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তনস্থল, (এখানে) তোমরা যেসব বিষয় নিয়ে মতভেদ করতে, (অতপর) তিনি অবশ্যই তা তোমাদের (স্পষ্ট করে) বলে দেবেন।

৪৯. (অতএব, হে মোহাম্মদ,) তোমার ওপর আল্লাহ তায়ালা যে আইন-কানুন নাযিল করেছেন তুমি তারই ভিত্তিতে এদের মাঝে বিচার ফয়সালা করো এবং কখনো তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না এবং তাদের থেকে সতর্ক থেকো, যা কিছু আল্লাহ তায়ালা তোমার ওপর নাযিল করেছেন তার কোনো কোনো বিষয়ে যেন তারা কখনো তোমাকে ফেতনায় না ফেলতে পারে; অতপর (তোমার ফয়সালায়) যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা তাদের নিজেদেরই কোনো গুনাহের জন্যে তাদের কোনোরকম মসিবতে ফেলতে চান; মানুষের মাঝে (আসলে) অধিকাংশই হচ্ছে অবাধ্য।

৫০. তবে কি তারা পুনরায় জাহেলিয়াতের বিচার ব্যবস্থা তালাশ করছে? অথচ যারা (আল্লাহতে) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তাদের কাছে আল্লাহ তায়ালার চাইতে উত্তম বিচারক আর কে হতে পারে?

৫১. হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা (কখনো) ইহুদী-খৃস্টানদের নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (কেননা) এরা নিজেরা (সব সময়ই) একে অপরের বন্ধু; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি (কখনো) এদের কাউকে বন্ধু বানিয়ে নেয় তাহলে সে তাদেরই দলভুক্ত হয়ে যাবে; আর আল্লাহ তায়ালা কখনো যালেম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না।

৫২. অতপর যাদের অন্তরে (মোনাফেকীর) ব্যাধি রয়েছে তাদের তুমি দেখবে, তারা (বিশেষ) তৎপরতার সাথে এই বলে তাদের সাথে মিলিত হচ্ছে যে, 'আমাদের আশংকা হচ্ছে, কোনো বিপর্যয় এসে আমাদের ওপর আপতিত হবে'; পরে হয়তো আল্লাহ তায়ালা (তোমাদের কাছে) বিজয় নিয়ে আসবেন কিংবা তাঁর কাছ থেকে অন্য কিছু (অনুগ্রহ তিনি দান করবেন), তখন (তা দেখে এ) লোকেরা নিজেদের মনের ভেতর যে কপটতা লুকিয়ে রেখেছিলো, তার জন্যে ভীষণ অনুতপ্ত হবে।

৫৩. (তখন) ঈমানদার লোকেরা বলবে, এরাই কি ছিলো সেসব মানুষ, যারা আল্লাহ তায়ালার নামে বড়ো বড়ো শপথ করতো (যে), তারা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে আছে; (এই আচরণের ফলে) তাদের কার্যকলাপ বিনষ্ট হয়ে গেলো, অতপর তারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়লো।

৫৪. হে মানুষ, তোমরা যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছো, তোমাদের মধ্যে কোনো লোক যদি নিজের দ্বীন (ইসলাম) থেকে (মোরতাদ হয়ে) ফিরে আসে (তাতে আল্লাহ তায়ালার কোনো ক্ষতি নেই,) তবে আল্লাহ তায়ালা অচিরেই (এখানে) এমন এক সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটাবেন যাদের তিনি ভালোবাসবেন, তারাও তাঁকে ভালোবাসবে, (তারা হবে) মোমেনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর, তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে, কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া তারা করবে না; (মূলত) এ (সাহসটুকু) হচ্ছে আল্লাহর একটি অনুগ্রহ, যাকে চান তাকেই তিনি তা দান করেন; আল্লাহ তায়ালা প্রাচুর্যময় ও প্রজ্ঞার আধার।

৫৫. তোমাদের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসুল এবং সেসব ঈমানদার লোকেরা, যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, (সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালার সামনে যারা) সদা অবনমিত থাকে।

৫৬. আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসূল ও ঈমানদারদের নিজের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে (তারা যেন জেনে রাখে), কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার দলটিই বিজয়ী হবে।

৫৭. হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের আগে যাদের (আল্লাহ তায়ালার) কেতাব দেয়া হয়েছিলো, তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে বিদ্রূপ ও খেল-তামাশার বসতে পরিণত করে রেখেছে, তাদের এবং কাফেরদের কখনো তোমরা নিজেদের বন্ধু বানিয়ো না, যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে মোমেন হয়ে থাকো তাহলে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকেই (বন্ধু বানাও এবং তাঁকেই) ভয় করো।

৫৮. যখন তোমরা (মানুষদের) নামাযের জন্যে ডাকো, তখন এই ডাককে এরা হাসি-তামাশা ও খেলার বস্তু বানিয়ে দেয়; এরা হচ্ছে এমন এক সম্প্রদায়, যারা (হক-বাতিলের) কিছুই বোঝে না।

৫৯. (হে রসূল,) তুমি এদের বলো, তোমরা যে আমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছো, তার কারণ এই যে, আমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি এবং আমাদের ওপর আগে ও বর্তমানে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি! (আসলে) তোমাদের অধিকাংশ (মানুষই) হচ্ছে গুনাহগার।

৬০. (হে রসূল,) তুমি বলো, আমি কি তোমাদের বলে দেবো- আল্লাহর কাছ থেকে সবচাইতে নিকৃষ্ট পুরস্কার কে পাবে? সে লোক (হচ্ছে,) যার ওপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ দিয়েছেন, যার ওপর আল্লাহর ক্রোধ রয়েছে এবং যাদের কিছু লোককে তিনি বানর, (কিছু লোককে) শুয়োরে পরিণত করে দিয়েছেন, যারা মিথ্যা মারুদের আনুগত্য স্বীকার করেছে; এরাই হচ্ছে সেসব লোক, (পরকালে) যাদের অবস্থান হবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট এবং (দুনিয়াতেও) এরা সরল পথ থেকে (বহুদূরে) বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।

৬১. তারা যখন তোমার সামনে আসে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, (আসলে) তারা তোমার কাছে কুফরী নিয়েই প্রবেশ করছিলো এবং তা নিয়েই তোমার কাছ থেকে তারা বেরিয়ে গেছে; (তারা মনের ভেতর) যা কিছু লুকিয়ে রাখছিলো আল্লাহ তায়ালা সে ব্যাপারে পূর্ণ ওয়াকেফহাল রয়েছেন।

৬২. তাদের অনেককেই তুমি দেখতে পাবে- গুনাহ, (আল্লাহর সাথে) বিদ্রোহ ও হারাম মাল ভোগ করার কাজে এরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে চলেছে; এরা যা করে (মূলত) তা বড়োই নিকৃষ্ট কাজ!

৬৩. (কতো ভালো হতো এদের) ধর্মীয় নেতা ও পন্ডিত ব্যক্তিরা যদি এদের এসব পাপের কথা ও হারাম মাল ভোগ করা থেকে বিরত রাখতো! (কারণ) এরা যা কিছু (সংগ্রহ) করছে তা বড়োই জঘন্য!

৬৪. ইহুদীরা বলে, আল্লাহর (দানের) হাত বাঁধা পড়ে গেছে; (আসলে) তাদের নিজেদের হাতই বাঁধা পড়ে গেছে, আর তারা যা কিছু বলেছে সে কারণে তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ নাযিল করা হয়েছে। আল্লাহর তো (দুনিয়া আখেরাতের) উভয় হাতই মুক্ত, যেভাবে তিনি চান সেভাবেই তিনি দান করেন। (প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে), তোমার মালিকের পক্ষ থেকে যা কিছু তোমার ওপর নাযিল করা হয়েছে, তা তাদের অনেকেরই সীমালংঘন ও কুফরীকে অবশ্যই বাড়িয়ে দিয়েছে; (ফলে) আমি তাদের মাঝে কেয়ামত পর্যন্ত একটা শত্রুতা ও পরস্পর বিদ্বেষ সঞ্চার করে দিয়েছি; যখনি তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তখনি তা নিভিয়ে দিয়েছেন, তারা (বার বার) এ যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছে; আসলে আল্লাহ তায়ালা বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের মোটেই ভালোবাসেন না।

৬৫. যদি আহলে কেতাবরা ঈমান আনতো এবং (আল্লাহকে) ভয় করতো, তবে অবশ্যই আমি তাদের গুনাহখাতা মুছে দিতাম এবং তাদের আমি অবশ্যই নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাতাম।

৬৬. যদি তারা তাওরাত ও ইনজীল (তথা তার বিধান) প্রতিষ্ঠা করতো, আর যা তাদের ওপর তাদের মালিকের কাছ থেকে নাযিল করা হয়েছে তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতো, তাহলে তারা রেযেক পেতো তাদের মাথার ওপরের (আসমান) থেকে ও তাদের পায়ের নীচের (যমীন) থেকে; তাদের মধ্যে অবশ্য একদল (ন্যায় ও) মধ্যপন্থী লোক রয়েছে, তবে তাদের অধিকাংশই হচ্ছে এমন, যাদের কর্মকান্ড খুবই নিকৃষ্ট!

৬৭. হে রসূল, যা কিছু তোমার ওপর নাযিল করা হয়েছে তা তুমি (অন্যের কাছে) পৌঁছে দাও, যদি তুমি (তা) না করো তাহলে তুমি তো (মানুষদের কাছে) তার বার্তা পৌঁছে দিলে না! আল্লাহ তায়ালা তোমাকে মানুষের (অনিষ্ট) থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কখনো কোনো অবাধ্য জাতিকে পথ প্রদর্শন করেন না।

৬৮. তুমি (তাদের) বলো, হে আহলে কেতাবরা, যতোণ পর্যন্ত তোমরা তাওরাত, ইনজীল ও তোমাদের প্রতি তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (মনে করতে হবে) তোমরা কোনো কিছুর ওপরই প্রতিষ্ঠিত নেই; তোমার মালিকের কাছ থেকে যা কিছু তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে তা তাদের অনেকেরই সীমালংঘন ও কুফরী বাড়িয়ে দেবে, সুতরাং তুমি এই কাফের সম্প্রদায়ের জন্যে মোটেই আফসোস করো না।

৬৯. নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ছিলো ইহুদী, সাবেয়ী, খৃস্টান- (এদের) যে কেউই এক আল্লাহ তায়ালা ও শেষ বিচার দিনের ওপর ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তাদের কোনো ভয় নেই, (পরকালেও) তাদের কোনো দুশ্চি নৎদাগ্রসত্দ হতে হবে না।

৭০. বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে আমি (আনুগত্যের) অংগীকার আদায় করে নিয়েছিলাম এবং (সে মোতাবেক) আমি তাদের কাছে রসূলদের প্রেরণ করেছিলাম; কিন্তু যখনি কোনো রসূল তাদের কাছে এমন কিছু (বিধান) নিয়ে হাযির হয়েছে, যা তাদের পছন্দসই ছিলো না, তখনি তারা (এই রসূলদের) একদলকে মিথ্যাবাদী বলেছে, আরেক দলকে তারা হত্যা করেছে।

৭১. তারা ধরে নিয়েছিলো, (এতো কিছু করা সত্ত্বেও) তাদের জন্যে কোনো বিপর্যয় থাকবে না, তাই তারা (সত্য গ্রহণ করার ব্যাপারে) অন্ধ ও বধির হয়ে থাকলো, তারপরও আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর ক্ষমাপরবশ হলেন, অতপর তাদের অনেকেই আবার অন্ধ ও বধির হয়ে গেলো; তারা যা কিছু করছে আল্লাহ তায়ালা তা পর্যবেক্ষণ করছেন।

৭২. নিশ্চয়ই তারা কাফের হয়ে গেছে যারা (একথা) বলেছে, আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়ামের পুত্র মাসীহ; অথচ মাসীহ (নিজেই একথা) বলেছে যে, হে বনী ইসরাঈল, তোমরা এক আল্লাহর এবাদাত করো, যিনি আমারও মালিক, তোমাদেরও মালিক; মূলত যে কেউই আল্লাহর সাথে শরীক করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেবেন, আর তার (স্থায়ী) ঠিকানা হবে জাহান্নাম; এই যালেমদের (সেদিন) কোনো সাহায্যকারীই থাকবে না।

৭৩. তারাও কুফরী করেছে যারা বলেছে, তিন জনের মধ্যে তৃতীয় জন হচ্ছেন আল্লাহ। অথচ এক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই; তারা যদি এখনো তাদের এসব (অলীক) কথাবার্তা থেকে ফিরে না আসে, তবে তাদের মাঝে যারা (একথা বলে) কুফরী করেছে, তাদের অবশ্যই কঠিন যন গাদায়ক আযাবে পেয়ে যাবে।

৭৪. তারা কি আল্লাহর কাছে তাওবা করবে না? (কখনো কি) তারা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ তায়ালা বড়োই ক্ষমাশীল ও দয়াময়।

৭৫. মারইয়াম পুত্র মাসীহ তো রসুল ছাড়া কিছুই ছিলো না, তার আগেও (তার মতো) অনেক রসূল গত হয়েছে; তার মা ছিলো এক সত্যনিষ্ঠ মহিলা; তারা (মা ও ছেলে) উভয়ই (আর দু'দশটি মানুষের মতো করেই) খাবার খেতো; তুমি ল্য করে দেখো, আমি কিভাবে (আমার) আয়াতগুলো খুলে খুলে বর্ণনা করছি, তুমি দেখো, কিভাবে তারা সত্যবিমুখ হয়ে যাচ্ছে।

৭৬. তুমি বলো, তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর এবাদাত করছো যা তোমাদের কোনো তি কিংবা উপকার কিছুই করার মতা রাখেনা; (প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালা (সব কিছুই) শোনেন এবং (সব কিছুই) জানেন।

৭৭. তুমি বলো, হে আহলে কেতাবরা, তোমরা কখনো নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না, (মাসীহের ব্যাপারে) তোমরা সেসব জাতির খেয়ালখুশীর অনুসরণ করো না, যারা তোমাদের আগেই পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং তারা অনেক লোককেই গোমরাহ করে দিয়েছে, আর তারা নিজেরাও সহজ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।

৭৮. বনী ইসরাঈলদের আরো যারা (মাসীহের ব্যাপারে আল্লাহর এ ঘোষণা) অস্বীকার করেছে, তাদের ওপর দাউদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখ থেকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে; কেননা, তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং সীমালংঘন করেছে।

৭৯. তারা যেসব গর্হিত কাজ করতো তা থেকে তারা একে অপরকে বারণ করতো না, তারা যা করতো নিসন্দেহে তা ছিলো নিকৃষ্ট।

৮০. তুমি তাদের মাঝে এমন বহু লোককে দেখতে পাবে, যারা (ঈমানদারদের বদলে) কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করতেই বেশী আগ্রহী, অবশ্য তারা নিজেরা যা কিছু অর্জন করে সামনে পাঠিয়েছে তাও অতি নিকৃষ্ট, এ কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর ক্রোধান্বিত হয়েছেন, এ লোকেরা চিরকাল আযাবেই নিমজ্জিত থাকবে।

৮১. তারা যদি সত্যিই আল্লাহ তায়ালা, (তাঁর) নবী ও তাঁর প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি যথাযথ ঈমান আনতো, তাহলে এরা কাফেরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতো না, কিন্তু তাদের তো অধিকাংশ লোকই হচ্ছে। গুনাহগার।

৮২. অবশ্যই তোমরা ঈমানদারদের সাথে শত্রুতার ব্যাপারে ইহুদী ও মোশরেকদেরই বেশী কঠোর (দেখতে) পাবে, (অপরদিকে) মোমেনদের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে তোমরা সেসব লোককে (কিছুটা) নিকটতর পাবে, যারা বলেছে আমরা খৃস্টান; এটা এই কারণে যে, (তখনো) তাদের মধ্যে ধর্মীয় পন্ডিত ব্যক্তি ও সংসার বিরাগী ফকীর-দরবেশরা মজুদ ছিলো, অবশ্যই এ ব্যক্তিরা অহংকার করে না ।

৮৩. রসুলের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তা যখন এরা শোনে, তখন সত্য চেনার কারণে তুমি এদের অনেকের চোখকেই দেখতে পাবে অশ্রুসজল, (নিবেদিত হয়ে) তারা বলে ওঠে, হে আমাদের মালিক, আমরা ঈমান এনেছি, তুমি আমাদের (নাম) সত্যের সাক্ষ্যদাতাদের দলে লিখে নাও |

৮৪. আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে আমাদের কাছে যা কিছু সত্য এসেছে তার ওপর আমরা ঈমান আনবো না কেন? (অথচ) আমরা এই প্রত্যাশা করি যে, আমাদের মালিক আমাদের সৎকর্মশীলদের দলভুক্ত করে দেবেন,

৮৫. অতপর তারা যা বললো সেজন্যে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়ে (পরকালে) তাদের এমন এক জান্নাত দান করবেন, যার তলদেশ দিয়ে (অমীয়) ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী; আর এটা হচ্ছে নেককার লোকদের (যথার্থ) পুরস্কার |

৮৬. অপরদিকে যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতগুলো যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তারা সবাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী ।

৮৭. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্যে যে পবিত্র জিনিসগুলো হালাল করে দিয়েছেন, তোমরা সেগুলো (নিজেদের জন্যে) হারাম করে নিয়ো না, আর কখনো (হারামের) সীমা লংঘন করো না; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সীমালংঘনকারীদের অপছন্দ করেন ।

৮৮. আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যে হালাল ও পবিত্র রেযেক দান করেছেন তোমরা তা খাও এবং (এ ব্যাপারে) সে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, যাঁর ওপর তোমরা ঈমান এনেছো |

৮৯. আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্যে তোমাদের পাকড়াও করবেন না, কিন্তু যে শপথ তোমরা জেনে-বুঝে করো তার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তোমাদের পাকড়াও করবেন, অতপর তার কাফ্ফারা হচ্ছে দশ জন গরীব মেসকীনকে মধ্যম মানের খাবার খাওয়ানো, যা তোমরা (সচরাচর) নিজেদের পরিবার পরিজনদের খাইয়ে থাকো, কিংবা তাদের পোশাক দান করা, অথবা একজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেয়া; যে ব্যক্তি (এর কোনোটাই) পাবে না, তার জন্যে (কাফফারা হচ্ছে) তিন দিন রোযা রাখা); শপথ ভাঙলে তোমাদের (শপথ ভাংগার) এ হচ্ছে কাফফারা; (অতএব ) তোমরা তোমাদের শপথসমূহ রক্ষা করো; আল্লাহ তায়ালা এভাবেই তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারো ।

৯০. হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো (তোমরা জেনে রেখো), মদ, জুয়া, পুজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর হচ্ছে ঘূর্ণিত শয়তানের কাজ, অতএব তোমরা তা (সম্পূর্ণরূপে) বর্জন করো। আশা করা যায় তোমরা মুক্তি পেয়ে যাবে |

৯১. শয়তান এই মদ ও জুয়ার মধ্যে (ফেলে) তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দিতে চায় এবং এভাবে সে তোমাদের আল্লাহ তায়ালার স্মরণ ও নামায থেকে দুরে সরিয়ে রাখে, তোমরা কি (এ কাজ থেকে) ফিরে আসবে না?

৯২. তোমরা (সর্ববিষয়ে) আল্লাহর আনুগত্য করো, আনুগত্য করো (তাঁর রসুলের, (মদ ও ড্রয়ার ধ্বংসকারীতা থেকে) সতর্ক থেকো, আর তোমরা যদি (রসুলের নির্দেশনা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রাখো, আমার রসুলের দায়িত্ব হচ্ছে সুস্পষ্টভাবে (আমার কথাগুলো) পৌঁছে দেয়া |

৯৩. যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে, (এ নিষেধাজ্ঞা জারির আগে) তারা যা কিছু খেয়েছে তার জন্যে তাদের ওপর কোনোই গুনাহ নেই, (হাঁ, ভবিষ্যতে) যদি তারা সাবধান থাকে, (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, অতপর (আল্লাহ তায়ালার নিষেধ থেকে) তারা সতর্ক থাকে, (একইভাবে যতোক্ষণ পর্যন্ত) তারা ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, অতপর আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে ও সততার নীতি অবলম্বন করতে থাকবে (আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাদের ক্ষমা করে দেবেন, কেননা); আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীল মানুষদের ভালোবাসেন |

৯৪. হে ঈমানদার লোকেরা, (এহরাম বাঁধা অবস্থায়) আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই এমন কিছু শিকারের বস্তু দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা নেবেন, যেগুলো তোমরা সহজেই নিজেদের হাত ও বর্ণা দ্বারা ধরতে পারো, যেন আল্লাহ তায়ালা এ কথা ভালো করে জেনে নিতে পারেন যে, কে তাঁকে গায়বের সাথে ভয় করে, সুতরাং এর পরও যদি কেউ সীমালংঘন করে, তার জন্যে যনণাদায়ক আযাব রয়েছে।

৯৫. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, এহরাম (বাঁধা) অবস্থায় কখনো শিকার হত্যা করো না, যদি তোমাদের কেউ (এ অবস্থায়) জেনে-বুঝে কেউ তাকে হত্যা করে (তার জন্যে এর বিনিময় হচ্ছে), সে যে জন্তু হত্যা করেছে তার সমান পর্যায়ের একটি গৃহপালিত জন্তু কোরবানী হিসেবে কাবায় পৌঁছে দেবে, (যার) ফয়সালা করবে তোমাদের দু'জন ন্যায়বান বিচারক ব্যক্তি, কিংবা (তার জন্যে) কাফফারা হবে (কয়েকজন) গরীব-মেসকীনকে খাওয়ানো অথবা সমপরিমাণ রোযা রাখা, যাতে করে সে আপন কৃতকর্মের স্বাদ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়, (এ নিষেধাজ্ঞা জারির আগে) যা কিছু গত হয়ে গেছে আল্লাহ তায়ালা তা মাফ করে দিয়েছেন; কিন্তু (এর পর) যদি কেউ (এর) পুনরাবৃত্তি করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা (অবশ্যই) তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন; আর আল্লাহ তায়ালা পরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণে প্রবল শক্তিমান |

৯৬. তোমাদের জন্যে সমুদ্রের শিকার হালাল করা হয়েছে এবং তার খাবার হচ্ছে তোমাদের জন্যে ও (সমুদ্রের) পর্যটকদের জন্যে (উৎকৃষ্ট) সম্পদ, (মনে রাখবে), যতোক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এহরাম (বাঁধা) অবস্থায় থাকবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত (শুধু) স্থলভাগের শিকারই তোমাদের জন্যে হারাম থাকবে; তোমরা ভয় করো আল্লাহ তায়ালাকে, যাঁর সমীপে তোমাদের সবাইকে জড়ো করা হবে |

৯৭. আল্লাহ তায়ালা (খানায়ে কাবাকে সম্মানিত করেছেন মানব জাতির জন্যে (তার) ভিত্তি হিসেবে (তিনি একে প্রতিষ্ঠা করেছেন), একইভাবে তিনি সম্মানিত করেছেন (হজ্জের) পবিত্র মাসগুলোকে, কোরবানীর জন্তুগুলোকে এবং (এ উদ্দেশে বিশেষ) পট্টি বাঁধা জন্তুগুলোকে, এসব (বিধান) এ জন্যেই (দেয়া হয়েছে) যাতে করে তোমরা (এ কথা) জেনে নিতে পারো যে, আকাশমালা ও পৃথিবীর যেখানে যা কিছু আছে আল্লাহ তায়ালা তা সবই জানেন, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ |

৯৮. তোমরা জেনে রাখো, আল্লাহ তায়ালা শাস্তিদানের ব্যাপারে (যেমনি) কঠোর, (তেমনি পুরস্কারের বেলায়) আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু |

৯৯. রসুলের দায়িত্ব (হেদায়াতের বাণী) পৌঁছে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়, আর তোমরা যা কিছু প্রকাশ করো, যা কিছু গোপন রাখো, আল্লাহ তায়ালা তা সবই জানেন |

১০০. (হে রসুল,) তুমি বলো, পাক এবং নাপাক জিনিস কখনো সমান হতে পারে না, নাপাক জিনিসের প্রাচুর্য যতোই তোমাকে চমৎকৃত করুক না কেন! অতএব হে জ্ঞানবান মানুষরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, (আশা করা যায়) তোমরা সফলকাম হতে পারবে |

১০১. হে ঈমানদার লোকেরা, (আল্লাহর নবীর কাছে) এমন সব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করো না, যার জবাব প্রকাশ করা হলে (তাতে) তোমাদের কষ্ট হবে, অবশ্য কোরআন নাযিল হবার মুহূর্তে যদি তোমরা সে প্রশ্ন করো, তাহলে তা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হবে; (এ বিধান জারির) আগে যা কিছু হয়ে গেছে তা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন: কেননা আল্লাহ তায়ালা পরম ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল ।

১০২. তোমাদের আগেও কিছু সম্প্রদায় (তাদের নবীকে এ ধরনের) প্রশ্ন করতো, কিন্তু এর পরক্ষণেই তারা তা অমান্য করতে শুরু করলো ।

১০৩. দেবতার উদ্দেশে প্রেরিত (কান ছেড়াঁ) ‘বহীরা', (দেবতার নামে উৎসর্গীত) 'সায়েবা', (দেবতার উদ্দেশে ছেড়ে দেয়া নর ও মাদী বাচ্চা প্রসবকারী) ওয়াসীলা' ও (দেবতার উদ্দেশে ছেড়ে দেয়া দশ বাচ্চা প্রসবকারিণী উষ্ট্রী) 'হাম' এর কোনোটাই কিন্তু আল্লাহ তায়ালা নির্দিষ্ট করে দেননি, বরং কাফেররাই (এসব কুসংস্কার দিয়ে) আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে, আর এদের অধিকাংশ লোক তো (সত্য-মিথ্যার তফাৎটুকুও) উপলব্ধি করে না।

১০৪. যখন এদের বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা যা কিছু নাযিল করেছেন তোমরা সেদিকে এসো, এসো তাঁর) রসুলের দিকে, (তখন) তারা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের যে বিধানের ওপর পেয়েছি তা-ই আমাদের জন্যে যথষ্টে; যদিও তাদের বাপ-দাদারা (সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে) কিছুই জানতো না এবং তারা হেদায়াতের পথেও চলতোনা |

১০৫. হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব তোমাদের নিজেদের ওপর, অন্য (কোনো) ব্যক্তি যদি গোমরাহ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে সে পথভ্রষ্ট ব্যক্তি তোমাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত তোমরা নিজেরা সঠিক পথের ওপর চলতে থাকবে; তোমাদের ফেরার জায়গা (কিন্তু) আল্লাহর দিকেই, অতপর আল্লাহ তায়ালা তোমাদের (সেদিন) বলে দেবেন তোমরা কে কী করছিলে!

১০৬. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমাদের কারো যখন মৃত্যু (সময়) এসে উপনীত হয়, ওসিয়ত করার এ মুহূর্তে তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে দু'জন ন্যায়পরায়ণ মানুষকে সাক্ষী বানিয়ে রাখবে, আর যদি তোমরা প্রবাসে থাকো এবং এ সময় যদি তোমাদের ওপর মৃত্যুর বিপদ এসে পড়ে, তখন বাইরের লোকদের মধ্য থেকে দু'জন ব্যক্তিকে সাক্ষী বানিয়ে নেবে; (পরে যদি এ ব্যাপারে) তোমাদের কোনো সন্দেহ দেখা দেয় তাহলে (সাক্ষী) দু'জনকে নামাযের পর আটকে রাখবে, অতপর তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলবে, আমরা কোনো স্বার্থের খাতিরে এ সাক্ষ্য বিক্রি করবো না, (এর কোনো পক্ষ আমাদের) ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলেও (নয়), আমরা আল্লাহর (জন্যে এ) সাক্ষ্য গোপন করবো না, (কেননা) আমরা যদি তেমন কিছু করি তাহলে আমরা গুনাহগারদের দলে শামিল হয়ে যাবো |

১০৭. পরে যদি একথা প্রকাশ পায়, এ (বাইরের) দু'জন সাক্ষী অপরাধে লিপ্ত ছিলো, তাহলে আগে (যাদের) স্বার্থহানি ঘটেছিলো তাদের মধ্য থেকে দু'জন সাক্ষী তাদের স্থলাভিষিক্ত হবে, তারা (এসে) আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যই তাদের সাক্ষ্য অপেক্ষা বেশী সত্যভিত্তিক (হবে), আমরা (সাক্ষ্যের ব্যাপারে) সীমালংঘন করিনি (আমরা যদি তেমনটি করি), তাহলে আমরা যালেমদের দলভুক্ত হয়ে পড়বো।

১০৮. এ (পদ্ধতি)-তে বেশী আশা করা যায় যে, তারা ঠিক ঠিক সাক্ষ্য নিয়ে আসবে অথবা তারা অন্ততপক্ষে এ ভয় করবে যে, (তাদের) কসম আবার অন্য কারো কসম দ্বারা বাতিল করে দেয়া হবে; তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং (রসুলের কথা) শোনো; আল্লাহ তায়ালা কখনো পাপী লোকদের সৎপথে পরিচালিত করেন না ।

১০৯. যেদিন আল্লাহ তায়ালা সকল রসুলকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের (দাওয়াতের প্রতি মানুষদের পক্ষ থেকে) কিভাবে সাড়া দেয়া হয়েছিলো; তারা বলবে, আমরা তো (তার) কিছুই জানি না; যাবতীয় গায়বের বিষয়ে তুমিই পরিজ্ঞাত |

১১০. (স্মরণ করো,) যখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে মাইরয়াম-পুত্র ঈসা, আমার সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাকে ও তোমার মাকে দান করেছিলাম, যখন আমি পবিত্র আত্মা দিয়ে তোমাকে সাহায্য করেছিলাম | তুমি মানুষের সাথে (যেমনি) দোলনায় থাকতে কথা বলতে, (তেমনি বলতে) পরিণত বয়সেও, আমি যখন তোমাকে কেতাব, জ্ঞান-বিজ্ঞান, তাওরাত ও ইনজীল দান করেছিলাম, যখন তুমি আমারই হুকুমে কাঁচা মাটি দিয়ে পাখি সদৃশ আকৃতি বানাতে, অতপর তাতে ফুঁ দিতে, আর আমার আদেশক্রমেই তা পাখী হয়ে যেতো, আমারই হুকুমে তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করে দিতে, আমারই আদেশে তুমি মৃতদের (কবর থেকে) বের করে আনতে, পরে যখন তুমি তাদের কাছে (নবুওতের) এসব নিদর্শন নিয়ে পৌঁছলে, তখন তাদের মধ্যে যারা (তোমাকে) অস্বীকার করেছিলো তারা বললো, এ নিদর্শনগুলো যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়, তখন আমিই তোমার (কোনো অনষ্টি সাধন) থেকে বনী ইসরাঈলদের নিবৃত্ত করে রেখেছিলাম |

১১১. (আরো স্মরণ করো,) যখন আমি হাওয়ারীদের (অন্তরে) এ প্রেরণা দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রসুলের প্রতি ঈমান আনো, তারা বললো (হে মালিক), আমরা (তোমার ওপর) ঈমান আনলাম, তুমি (এ কথার) সাক্ষ্য থেকো যে, আমরা তোমার অনুগত ছিলাম |

১১২. (অতপর) যখন এই হাওয়ারীদের দল বললো, হে মারইয়াম-পুত্র ঈসা! তোমার মালিক কি আসমান থেকে খাবার সজ্জিত একটি টেবিল আমাদের জন্যে পাঠাতে পারেন? ঈসা জবাব দিলো, (সত্যিই) যদি তোমরা মোমেন হয়ে থাকো তাহলে (কোনো অহেতুক দাবী পেশ করার ব্যাপারে) তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো |

১১৩. তারা বললো, আমরা (শুধু এটুকুই) চাই যে, আল্লাহর পাঠানো সেই (টেবিল) থেকে (কিছু) খাবার খেতে, এতে আমাদের মন পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে, (তাছাড়া এতে করে) আমরা এও জানতে পারবো তুমি আমাদের কাছে সঠিক কথা বলেছো, আমরা নিজেরাও এর ওপর সাক্ষী হবো |

১১৪. মারইয়াম-পুত্র ঈসা (আল্লাহর দরবারে) বললো, হে আল্লাহ, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের জন্যে আসমান থেকে খাবার সজ্জিত একটি টেবিল পাঠাও, এ হবে আমাদের জন্যে, আমাদের পূর্ববর্তী ও আমাদের পরবর্তীদের জন্যে তোমার কাছ থেকে (পাঠানো) একটি আনন্দোৎসব; (সর্বোপরি এটা) হবে তোমার (কুদরতের একটি) নিদর্শন, তুমি আমাদের রেযেক দাও, কেননা তুমিই হচ্ছো উত্তম রেযেকদাতা |

১১৫. আল্লাহ তায়ালা বললেন, হাঁ, আমি তোমাদের ওপর (অচিরেই) তা পাঠাচ্ছি, তবে এরপরও যদি তোমাদের কেউ (আমার ক্ষমতা) অস্বীকার করে তাহলে তাকে আমি এমন কঠিন শাস্তি দেবো, যা আমি সৃষ্টিকূলের কাউকেই আর দেবো না| 

১১৬. যখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে মারইয়াম পুত্র ঈসা! তুমি কি কখনো (তোমার) লোকদের (একথা) বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে ‘ইলাহ' বানিয়ে নাও! (এ কথার উত্তরে) সে বলবে (হে আল্লাহ), সমগ্র পবিত্রতা তোমার জন্যে, এমন কোনো কথা আমার পক্ষে শোভা পেতো না, যে কথা বলার আমার কোনো অধিকারই ছিলো না, যদি আমি তাদের এমন কোনো কথা বলতামই, তাহলে তুমি তো অবশ্যই তা জানতে; নিশ্চয়ই তুমি তো জানো আমার মনে যা কিছু আছে, কিন্তু আমি তো জানি না তোমার মনে কি আছে; যাবতীয় গায়ব অবশ্যই তুমি ভালো করে অবগত আছো |

১১৭. তুমি আমাকে যা কিছু বলতে হুকুম করেছো আমি তো তাদের তাছাড়া (অন্য) কিছুই বলিনি, (আর সে কথা ছিলো), তোমরা শুধু আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করো, যিনি আমার মালিক, তোমাদেরও মালিক, আমি যতোদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততোদিন তো আমি (নিজেই তাদের কার্যকলাপের) সাক্ষী ছিলাম, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই ছিলে তাদের ওপর একক নেগাহবান, যাবতীয় ক্রিয়াকর্মের তুমিই ছিলে একক খবরদার |

১১৮. (আজ) তাদের অপরাধের জন্যে তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও (দিতে পারো), কারণ তারা তো তোমারই বান্দা, আর তুমি যদি তাদের ক্ষমা করে দাও (তাও তোমার মর্জি), অবশ্যই তুমি হচ্ছো বিপুল ক্ষমতাশালী, প্রজ্ঞাময় |

১১৯. আল্লাহ তায়ালা বলবেন (হাঁ), এ হচ্ছে সেদিন, যেদিন সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তিরা তাদের সততার জন্যে (প্রচুর) কল্যাণ লাভ করবে; (আর সে কল্যাণ হচ্ছে,) তাদের জন্যে এমন সুরম্য জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে অমীয় ঝর্ণাধারা প্রবাহিত থাকবে, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে; আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন এবং তারাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকবে; (বস্তুত) এ হচ্ছে এক মহাসাফল্য |

১২০. আকাশমালা ও যমীন এবং এর মধ্যবর্তী সমগ্র সৃষ্টিলোকের ভেতর যা কিছু আছে তার সমুদয় বাদশাহী তো আল্লাহর জন্যেই এবং তিনিই সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url