আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল আনয়াম-এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আল আনয়াম | Surah Al An`am | سورة الأنعام



সূরা আল আনয়ামের বাংলা অনুবাদ


সূরা আল আনয়াম, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৬৫, রুকু ২০

সূরা আল আনয়াম


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি আকাশমালা ও ভূমন্ডল পয়দা করেছেন| তিনি অন্ধকারসমূহ ও আলো সৃষ্টি করেছেন; অতপর যারা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করে, তারা (প্রকারান্তরে এর দ্বারা অন্য কিছুকেই) তাদের মালিকের সমকক্ষ হিসেবে দাঁড় করায় |

২. তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতপর তিনি (প্রত্যেকের জন্যে বাঁচার একটি) মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, (তেমনি তাদের মৃত্যুর জন্যেও) তাঁর কাছে একটি সুনির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে, তারপরও তোমরা সন্দেহে লিপ্ত আছো!

৩. আসমানসমূহের এবং যমীনের (সর্বত্র) তিনিই তো হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ; তিনি (যেমনি) তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়সমূহ জানেন, (তেমনি) তিনি জানেন তোমরা কে (পাপ-পুণ্যের) কতোটুকু উপার্জন করছো তাও |

৪. তাদের মালিকের নিদর্শনসমূহের মধ্যে এমন একটি নিদর্শনও নেই, যা তাদের কাছে আসার পর তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি |

৫. তাদের কাছে যতোবারই (আমার পক্ষ থেকে) সত্য (দ্বীন) এসেছে; ততোবারই তারা তা অস্বীকার করেছে; অচিরেই তাদের কাছে সে খবরগুলো এসে হাযির হবে যা নিয়ে তারা হাসি-তামাশা করছিলো ।

৬. তারা কি দেখেনি, তাদের আগে আমি এমন বহু জাতিকে বিনাশ করে দিয়েছি যাদের আমি পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠা দান করেছিলাম, যা তোমাদেরও করিনি | আকাশ থেকে তাদের ওপর আমি প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছি, আবার তাদের (মাটির) নীচ থেকে আমি ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করে দিয়েছি, অতপর পাপের কারণে আমি তাদের (চিরতরে) ধ্বংস করে দিয়েছি, আর তাদের পর (তাদের জায়গায় আবার) আমি এক নতুন জাতির উত্থান ঘটিয়েছি |

৭. (হে নবী,) আমি যদি তোমার কাছে কাগজে লেখা কোনো কেতাব নাযিল করতাম এবং তারা যদি তাদের হাত দিয়ে তা স্পর্শও করতো, তাহলেও কাফেররা বলতো, এটা তো সুস্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়!

৮. তারা বলে, এ (নবী)-র প্রতি কোনো ফেরেশতা নাযিল করা হলো না কেন (যে তার সত্যতা সম্পর্কে আমাদের বলে দিতো)? যদি সত্যিই আমি কোনো ফেরেশতা পাঠিয়ে দিতাম তাহলে (তাদের) ফয়সালা (তো তখনি) হয়ে যেতো, এরপর তো আর কোনো অবকাশই তাদের দেয়া হতো না |


৯. (তা ছাড়া) আমি যদি (সত্যিই) ফেরেশতা পাঠাতাম, তাকেও তো মানুষের আকৃতিতেই পাঠাতাম, তখনও তো তারা এমনিভাবে আজকের মতো সন্দেহেই নিমজ্জিত থাকতো |

১০. (হে রসুল,) তোমার আগেও বহু নবী-রসুলকে এভাবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিলো, (অনন্তর) তাদের মধ্যে যারা নবীর সাথে যে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে তাই (তাদের আযাবের আকারে) পরিবষ্টেন করে ফেলেছে!

১১. (হে নবী,) তুমি তাদের বলো, তোমরা এ পৃথিবীতে ঘুরে-ফিরে দেখো, দেখো যারা (নবী-রসুলদের) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের কী (ভয়াবহ পরিণাম হয়েছে।

১২. (হে নবী!) তুমি তাদের জিজ্ঞেস করো, আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা সব কার? তুমি বলো, (এর সবকিছুই) আল্লাহ তায়ালার জন্যে; (মানুষদের ওপর) দয়া করাটা তিনি তাঁর নিজের ওপর (কর্তব্য বলে) স্থির করে নিয়েছেন | কেয়ামতের দিন তিনি তোমাদের অবশ্যই জড়ো করবেন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই; (সত্য অস্বীকার করে) যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে, তারা (এমন একটি দিনের আগমনকে কখনো) বিশ্বাস করে না।

১৩. রাত ও দিনের মাঝে যা কিছু স্থিতি লাভ করছে তার সব কিছুই তাঁর জন্যে; তিনি (এদের সবার কথা) শোনেন এবং (সবার অবস্থা) দেখেন |

১৪. (হে নবী,) তুমি বলো, আমি কিভাবে আসমানসমূহ ও যমীনের মালিক আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নিজের পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে নেবো, অথচ তিনিই (সৃষ্টিলোকের সবাইকে) আহার যোগান, তাঁকে কোনো রকমের আহার যোগানো যায় না; (তুমি) বলো, আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে, যেন সবার আগে আমি মুসলমান হয়ে যাই এবং (আমাকে এই মর্মে আরো) আদেশ দেয়া হয়েছে, 'তুমি কখনো মোশরেকদের দলে শামিল হয়ো না।'

১৫. (তুমি আরো) বলো, আমি যদি আমার মালিকের কথা না শুনি, তাহলে আমি এক মহাদিবসের আযাব (আমার ওপর আপতিত হওয়ার) ভয় করি ।

১৬. সে (কেয়ামতের) দিন যাকে তা (শাস্তি) থেকে রেহাই দেয়া হবে, তার ওপর (নিসন্দেহে) আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করবেন, আর এটিই (হবে সেদিনের) সুস্পষ্ট সাফল্য |

১৭. (জেনে রেখো,) যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাকে কোনো দুঃখ পৌঁছাতে চান তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউই (তোমার থেকে) তা দুর করতে পারবে না; অপরদিকে তিনি যদি তোমার কোনো উপকার করেন তাহলে (কেউ তাতে বাধাও দিতে পারে না,) তিনি সব কিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান!

১৮. তিনি তাঁর বান্দাদের ওপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী; তিনি মহাজ্ঞানী, তিনি সম্যক ওয়াকেফহাল |

১৯. তুমি (তাদের) বলো, সাক্ষী হিসেবে কার সাক্ষ্য সবচেয়ে বেশী বড়ো? তুমি বলো, (হাঁ) একমাত্র আল্লাহ তায়ালার, যিনি তোমাদের এবং আমার মাঝে (সর্বোত্তম) সাক্ষী হয়ে থাকবেন। এ কোরআন (তাঁর কাছ থেকেই) আমার কাছে নাযিল করা হয়েছে, যেন তা দিয়ে তোমাদের এবং (তোমাদের পর) যাদের কাছে এ গ্রন্থ পৌঁছবে (তাদের সকলকে) আমি (আযাবের) ভয় দেখাই; তোমরা কি (সত্যিই) একথার সাক্ষ্য দিতে পারবে যে, আল্লাহর সাথে আরো কোনো ইলাহ রয়েছে ? (হে নবী,) তুমি (তাদের) জানিয়ে দাও, আমি (জেনে-বুঝে) কখনো এ ধরনের (মিথ্যা) সাক্ষ্য দিতে পারবো না, তুমি বলো, তিনি তো একক, তোমরা (আল্লাহ তায়ালার সাথে) যে শেরেক করে যাচ্ছো, তার থেকে আমি সমপূর্ণ মুক্ত।

২০. (তোমার আগে) যাদের আমি কেতাব দান করেছি তারা নবীকে ঠিক সেভাবেই চেনে, যেভাবে চেনে তারা তাদের আপন ছেলেদের, কিন্তু যারা নিজেরা নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে তারা তো (কখনো) ঈমান আনবে না |

২১. তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে আছে, যে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে কোনো মিথ্যা কথা রচনা করে কিংবা তাঁর কোনো আয়াতকে অস্বীকার করে, এ ধরনের) যালেমরা কখনো সাফল্য লাভ করতে পারবে না ।

২২. একদিন আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করবো, অতপর মোশরেকদের আমি বলবো, তারা সবাই আজ কোথায় যাদের তোমরা (দুনিয়ার জীবনে) আমার সাথে শরীক মনে করতে!

২৩. অতপর তাদের (সেদিন) একথা (বলা) ছাড়া কোনো যুক্তিই থাকবে না যে, আল্লাহ তায়ালার কসম, যিনি আমাদের মালিক, আমরা কখনো মোশরেক ছিলাম না ।

২৪. (হে নবী,) তুমি চেয়ে দেখো, কিভাবে (আজ) লোকগুলো ( আযাব থেকে বাঁচার জন্যে) নিজেরাই নিজেদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে এবং (এও দেখো,) তাদের নিজেদের রচনা করা মিথ্যা (কিভাবে আজ) নিষ্ফল হয়ে যাচ্ছে!

২৫. তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে যে (বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয়) তোমার কথা সে কান দিয়ে শুনছে, (কিন্তু আসলে) আমি তাদের মনের ওপর পর্দা ঢেলে দিয়েছি, যার কারণে তারা কিছুই উপলব্ধি করতে পারে না, আমি তাদের কানেও ছিপি এঁটে দিয়েছি; (মূলত) তারা যদি (আল্লাহর) সব নিদর্শন দেখেও নেয়, তবু তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে না; এমনকি তারা যখন তোমার সামনে আসবে তখন তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে, (কোরআনের আয়াত সম্পর্কে) কাফেররা বলবে, এতো পুরনো দিনের গল্পকথা ছাড়া আর কিছুই নয় |

২৬. তারা (যেমন) নিজেদের তা (শোনা) থেকে বিরত রাখে, (তেমনি) অন্যদেরও তা থেকে দুরে রাখে, (মুলত এ আচরণে) তারা নিজেদেরই ধ্বংস সাধন করছে, অথচ তারা কোনো খবরই রাখে না।

২৭. তুমি যদি (সত্যিই তাদের) দেখতে পেতে যখন এই (হতভাগ্য) ব্যক্তিদের (জ্বলন্ত) আগুনের পাশে এনে দাঁড় করানো হবে, তখন তারা (চীৎকার করে) বলবে, হায়! যদি আমাদের আবার (দুনিয়ায়) ফেরত পাঠানো হতো, তাহলে আমরা (আর কখনো) আমাদের মালিকের আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম না এবং আমরা (অবশ্যই) ঈমানদার লোকদের দলে শামিল হয়ে যেতাম |

২৮. এর আগে যা কিছু তারা গোপন করে আসছিলো (আজ) তা তাদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেলো; (আসলে) যদি তাদের আবার দুনিয়ায় ফেরত পাঠানোও হয়, তবু তারা তাই করে বেড়াবে যা থেকে তাদের নিষেধ করা হয়েছিলো, তারা (আসলেই) মিথ্যাবাদী |

২৯. (এ) লোকগুলো আরও বলে, আমাদের এ পার্থিব জীবনই হচ্ছে একমাত্র জীবন, আমরা কখনোই পুনর্জীবিত হবো না |

৩০. হায়! তুমি যদি সত্যিই (সে দৃশ্য) দেখতে পেতে যখন তাদেরকে তাদের মালিকের সামনে দাঁড় করানো হবে এবং তিনি তাদের জিজ্ঞেস করবেন (আজ বলো), এ দিনটি কি সত্য নয়? তারা বলবে, হাঁ, আমাদের মালিকের শপথ (এটা সত্য); তিনি বলবেন, তাহলে (আজ) সে (কঠিন) আযাব ভোগ করো, যাকে তোমরা সব সময় অবিশ্বাস করতে |

৩১. অবশ্যই তারা (ভীষণভাবে) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, যারা আল্লাহর সামনা সামনি হওয়াকে মিথ্যা বলেছে; আর একদিন যখন (সত্যি সত্যিই) কেয়ামতের ঘন্টা হঠাৎ করে তাদের সামনে এসে হাযির হবে, তখন তারা বলবে, হায় আফসোস, (দুনিয়ায়) এ দিনটিকে আমরা কতোই না অবহেলা করেছি, সেদিন তারা নিজেদের পাপের বোঝা নিজেদের পিঠেই বয়ে বেড়াবে; কতো (ভারী ও) নিকৃষ্ট বোঝা হবে সেটি!

৩২. আর (এ) বৈষয়িক জীবন, এ তো নিছক কিছু খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়; (মূলত) পরকালের বাড়িঘরই তাদের জন্যে উৎকৃষ্ট যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে; তোমরা কি (মোটেই) অনুধাবন করো না?

৩৩. (হে রসুল,) আমি জানি, এ লোকগুলো যেসব কথাবার্তা বলে, তা তোমাকে (বড়োই) পীড়া দেয়, কিন্তু তুমি কি জানো, এরা (এসব বলে শুধু) তোমাকেই মিথ্যা সাব্যস্ত করছে না; বরং এ যালেমরা (এর মাধ্যমে) আল্লাহ তায়ালার আয়াতকেই অস্বীকার করছে।

৩৪. তোমার আগেও (এভাবে) বহু (নবী)-রসুলকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছিলো, কিন্তু তাদের মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা ও (নানা রকম) নির্যাতন চালাবার পরও তারা (কঠোর) ধৈর্য ধারণ করেছে, শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে আমার (পক্ষ থেকে) সাহায্য এসে হাযির হয়েছে। আসলে আল্লাহর কথার রদবদলকারী কেউ নেই, তদুপরি নবীদের (এ সব) সংবাদ তো তোমার কাছে (আগেই) এসে পৌঁছেছে |

৩৫. (তারপরও) যদি তাদের এ উপেক্ষা তোমার কাছে কষ্টকর মনে হয়, তাহলে তোমার সাধ্য থাকলে তুমি (পালানোর জন্যে) ভূগর্ভে কোনো সুড়ংগ কিংবা আসমানে সিঁড়ি তালাশ করো, (পারলে ‘সেখানে চলে যাও) এবং (সেখান থেকে) তাদের জন্যে কোনো কিছু একটা নিদর্শন নিয়ে এসো; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যদি চাইতেন, তিনি তাদের সবাইকে হেদায়াতের ওপর জড়ো করে দিতে পারতেন, তুমি কখনো মূর্খ লোকদের দলে শামিল হয়ো না।

৩৬. যারা (এ কথাগুলো যথাযথভাবে) শোনে, তারা অবশ্যই (আল্লাহর) ডাকে সাড়া দেয় এবং যারা মরে গেছে আল্লাহ তায়ালা এদের সবাইকেও কবর থেকে উঠিয়ে (জড়ো করে) নেবেন, অতপর (মহা বিচারের জন্যে) তারা সবাই তাঁর সামনে প্রত্যাবর্তিত হবে |

৩৭. এরা বলে, (নবীর) ওপর তার মালিকের পক্ষ থেকে (আমাদের কথামতো) কোনো নিদর্শন নাযিল করা হয়নি কেন? (হে রসুল,) তুমি তাদের বলো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (সব ধরনের) নিদর্শন পাঠানোর ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু এদের অধিকাংশ লোকই তো কিছু জানে না |

৩৮. যমীনের বুকে বিচরণশীল যে কোনো জন্তু কিংবা বাতাসের বুকে নিজ ডানা দুটি দিয়ে উড়ে চলা যে কোনো পাখীই (তোমরা দেখো না কেন)-এগুলো সবই তোমাদের মতো (আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি); আমি (আমার) গ্রন্থে বর্ণনা বিশ্লেষণে কোনো কিছুই বাকী রাখিনি, অতপর এদের সবাইকে (একদিন) তাদের মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে |

৩৯. যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তারা (হেদায়াতের ব্যাপারে) বধির ও মুক, তারা অন্ধকারে পড়ে আছে; আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে গোমরাহ করে দেন; আবার যাকে চান তাকে সঠিক পথের ওপর স্থাপন করেন |

৪০. তুমি বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছো, যখন তোমাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে (বড়ো ধরনের) কোনো আযাব আসবে, কিংবা হঠাৎ করে কেয়ামত এসে হাযির হবে, তখন তোমরা কি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কাউকে ডাকবে? (বলো) যদি তোমরা সত্যবাদী হও!

৪১. বরং তোমরা (তো সেদিন) শুধু তাঁকেই ডাকবে, তোমরা যে জন্যে তাঁকে ডাকবে তিনি চাইলে তা দুর করে দেবেন (এবং) যাদের তোমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে অংশীদার বানাতে, তাদের সবাইকেই (তখন) তোমরা ভুলে যাবে |

৪২. তোমার আগের জাতিসমূহের কাছেও আমি আমার রসুল পাঠিয়েছিলাম, তাদেরও আমি দুঃখ-কষ্ট ও বিপর্যয়ে(-র জালে) আটকে রেখেছিলাম, যাতে করে তারা বিনয়ের সাথে নতিস্বীকার করে |

৪৩. কিন্তু সত্যিই যখন তাদের ওপর আমার বিপর্যয় এসে আপতিত হলো, তখনও তারা কেন বিনীত হলো না, অধিকন্তু তাদের অন্তর এতে আরো শক্ত হয়ে গেলো এবং তারা যা করে যাচ্ছিলো, শয়তান তাদের কাছে তা শোভনীয় করে তুলে ধরলো ।

৪৪. অতপর তারা সে সব কিছুই ভুলে গেলো, যা তাদের (বার বার) স্মরণ করানো হয়েছিলো; তারপরও আমি তাদের ওপর (সচ্ছলতার) সব কয়টি দুয়ারই খুলে দিলাম; শেষ পর্যন্ত যখন তারা তাতেই মত্ত হয়ে গেলো যা তাদের দেয়া হয়েছিলো, তখন আমি তাদের হঠাৎ পাকড়াও করে নিলাম, ফলে তারা নিরাশ হয়ে পড়লো |

৪৫. (এভাবেই) যারাই (আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে) যুলুম করেছে, তাদেরই মূলোচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে; আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যেই, যিনি সৃষ্টিকুলের মালিক |

৪৬. (হে রসুল, তাদের) তুমি বলো, তোমরা কি একথা ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহ তায়ালা কখনো তোমাদের শোনার ও দেখার ক্ষমতা কেড়ে নেন এবং তোমাদের অন্তরসমূহের ওপর মোহর মেরে দেন, তবে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তোমাদের দ্বিতীয় কোনো ইলাহ আছে কি, যে তোমাদের এসব কিছু ফিরিয়ে দিতে পারবে; লক্ষ্য করো, কিভাবে আমার আয়াতসমূহ আমি খুলে খুলে বর্ণনা করছি, এ সত্ত্বেও অতপর তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

৪৭. তুমি বলো, তোমরা চিন্তা করে দেখেছো কি, যদি কখনো অকস্মাৎ (গোপনে) কিংবা প্রকাশ্যভাবে আল্লাহর আযাব তোমাদের ওপর আপতিত হয়, (তাতে) কতিপয় যালেম সম্প্রদায়ের লোক ব্যতীত অন্য কাউকে ধ্বংস করা হবে কি? 

৪৮. আমি তো রসুলদের (জান্নাতের) সুসংবাদবাহী ও (জাহান্নামের) সতর্ককারী ছাড়া অন্য কোনো হিসেবে পাঠাই না, অতপর যে ব্যক্তি (রসুলদের ওপর) ঈমান আনবে এবং (তাদের কথা মতো) নিজেকে সংশোধন করে নেবে, এমন লোকদের (পরকালে) কোনো ভয় নেই এবং তাদের (সেদিন) কোনোরকম চিন্তিতও হতে হবে না ।

৪৯. (অপরদিকে) যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, তাদের এই নাফরমানীর কারণে আমার আযাব তাদের ঘিরে ধরবে |

৫০. (হে মোহাম্মদ,) তুমি বলো, আমি তো তোমাদের (একথা) বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ তায়ালার বিপুল ধনভান্ডার রয়েছে, না (একথা বলি যে,) আমি গায়বের কোনো খবর রাখি! আর একথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা, (আসলে) আমি তো সেই ওহীরই অনুসরণ করি যা আমার ওপর নাযিল করা হয়, তুমি বলো, অন্ধ আর চক্ষুষ্মান ব্যক্তি কি (কখনো) এক হতে পারে? তোমরা কি মোটেই চিন্তাভাবনা করো না?

৫১. (হে মোহাম্মদ,) তুমি সে (কিতাবের) মাধ্যমে সেসব লোককে পরকালের (আযাবের) ব্যাপারে সতর্ক করে দাও, যারা এ ভয় করে যে, তাদেরকে (একদিন) তাদের মালিকের সামনে একত্র করা হবে, (সেদিন) তাদের জন্যে তিনি ছাড়া কোনো সাহায্যকারী বন্ধু কিংবা কোনো সুপারিশকারী থাকবে না, আশা করা যায় (এতে করে) তারা সাবধান হবে |

৫২. যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের মালিককেই ডাকে, তাঁরই সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদের তুমি (কখনো তোমার কাছ থেকে) সরিয়ে দিয়ো না, (কারণ) তাদের কাজকর্মের (জবাবদিহিতার) দায়িত্ব (যেমন) তোমার ওপর কিছুই নেই, (তেমনি) তোমার কাজকর্মের হিসাব-কিতাবের কোনো রকম দায়িত্বও তাদের ওপর নেই, (তারপরও) যদি তুমি তাদের তোমার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দাও, তাহলে তুমিও বাড়াবাড়ি করা লোকদের দলে শামিল হয়ে যাবে ।

৫৩. আর আমি এভাবেই তাদের একদল দ্বারা অন্য দলের পরীক্ষা নিয়েছি, যেন তারা (একদল) একথা বলতে পারে যে, এরাই কি হচ্ছে আমাদের মাঝে সে দলের লোক, যাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনুগ্রহ করেছেন; আল্লাহ তায়ালা কি (তাঁর) কৃতজ্ঞ বান্দাহদের ভালো করে জানেন না |

৫৪. যারা আমার আয়াতসমূহের ওপর ঈমান এনেছে তারা যখন তোমার কাছে আসবে, তখন তুমি তাদের বলো, (আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর) শান্তি বর্ষিত হোক- তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করাটা তোমাদের মালিক নিজের কর্তব্য বলে স্থির করে নিয়েছেন; তবে তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কখনো অজ্ঞতাবশত কোনো অন্যায় কাজ করে বসে এবং পরক্ষণেই তাওবা করে ও (নিজের জীবন) শুধরে নেয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা (তাকে ক্ষমা করে দেবেন, তিনি) একান্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

৫৫. আর এভাবেই আমি আমার আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে অপরাধীদের পথ পরিষ্কার হয়ে যায় |

৫৬. (হে মোহাম্মদ,) তুমি (তাদের) বলে দাও, (এক) আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে তোমরা আর যাদের গোলামী করছো, আমাকে তাদের গোলামী করতে নিষেধ করা হয়েছে; তুমি (তাদের এও বলে দাও, আমি কখনো তোমাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করি না, (তেমনটি করলে) আমি নিসন্দেহে গোমরাহ হয়ে যাবো এবং আমি আর সত্যের অনুসরণকারী দলের সাথে থাকবো না |

৫৭. তুমি বলো, আমি অবশ্যই আমার মালিকের এক উজ্জ্বল দলীল-প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তাই তোমরা অস্বীকার করছো; (এ অস্বীকার করার পরিণাম) যা তোমরা দ্রুত (দেখতে) চাও তা (ঘটানোর ক্ষমতা) আমার কাছে নেই! (সব কিছুর) চূড়ান্ত ক্ষমতা তো কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতেই রয়েছে; (আর এ মহা) সত্যটিই তিনি (তোমাদের কাছে) বর্ণনা করছেন, তিনিই হচ্ছেন উত্তম ফয়সালাকারী ।

৫৮. তুমি বলো, (আযাবের) যে বিষয়টার জন্যে তোমরা তাড়াহুড়ো করছো, তা (ঘটানো) যদি আমার ক্ষমতার মধ্যে থাকতো, তাহলে তোমাদের ও আমার মধ্যকার ফয়সালা (অনেক আগেই) হয়ে যেতো! যালেমদের (সাথে কি আচরণ করা উচিত তা) আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই জানেন।

৫৯. গায়বের চাবিগুলো সব তাঁর হাতেই নিবন্ধ রয়েছে, সে-ই (অদৃশ্য) খবর তো তিনি ছাড়া আর কারোই জানা নেই; জলে-স্থলে (যেখানে) যা কিছু আছে তা শুধু তিনিই জানেন; (এই সৃষ্টিরাজির মধ্যে) একটি পাতা কোথাও ঝরে না যার (খবর) তিনি ছাড়া অন্য কেউই জানে না, মাটির অন্ধকারে একটি শস্যকণাও নেই- নেই কোনো তাজা সবুজ, (কিংবা ক্ষয়)ি শুকনো (কিছু), যার (পূর্ণাংগ) বিবরণ একটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে মজুদ নেই |

৬০. তিনিই মহান আল্লাহ, যিনি রাতের বেলা তোমাকে মৃত (মানুষের মতো) করে ফেলেন, আবার দিনের বেলায় তোমরা যা কিছু (যমীনের বুকে) করে বেড়াও, তাও তিনি (পুংখানুপুংখ ) জানেন, পরিশেষে সেখানে তিনি তোমাদের (মৃতসম অবস্থা থেকে) আবার (জীবনের অবস্থায়) ফিরিয়ে আনেন, যাতে করে তোমাদের নির্দিষ্ট সময়কালটি এভাবে পূর্ণতা প্রাপ্ত হতে পারে, (আর এ মেয়াদ পুরণ করার পর) তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তন (একদিন) তাঁর দিকেই (সংঘটিত) হবে, অতপর তিনি তোমাদের (পুংখানুপুংখ ) বলে দেবেন তোমরা (দুনিয়ায়) কী কাজ করছিলে।

৬১. আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দাদের (যাবতীয় বিষয়ের) ওপর পূর্ণ মাত্রায় কর্তৃত্বশীল, (এ জন্যেই) তিনি তোমাদের ওপর পাহারাদার (ফেরেশতা) নিযুক্ত করেন; এমনকি (দেখতে দেখতে) তোমাদের কারো যখন মৃত্যু এসে হাযির হয়, তখন প্রেরিত ফেরেশতারা তার (জীবনের) সমাপ্তি ঘটিয়ে দেয়, (দায়িত্ব পালনে ফেরেশতারা) কখনো কোনো ভুল করে না ।

৬২. অতপর তাদের সবাইকে বিচারের জন্যে তাদের আসল মালিকের সামনে ফিরিয়ে নেয়া হবে; হুশিয়ার (থেকো, কারণ), যাবতীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব কিন্তু একা তাঁর এবং ত্বরিৎ হিসাব গ্রহণে তিনি অত্যন্ত তৎপর |

৬৩. তুমি (তাদের) বলো, যখন তোমরা স্থলভূমে ও সমুদ্রের অন্ধকারে (বিপদে) পড়ো, (যখন) তোমরা কাতর কন্ঠে এবং নীরবে তাঁকেই ডাকতে থাকো, তখন (কে) তোমাদের (সেসব থেকে) উদ্ধার করে? (কাকে তোমরা তখন) বলো (হে মালিক), আমাদের যদি তুমি এ থেকে বাঁচিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যাবো |

৬৪. তুমি বলে দাও, হাঁ, আল্লাহ তায়ালাই (তখন) তোমাদের সে (অবস্থা) থেকে এবং অন্যান্য যাবতীয় বিপদ- আপদ থেকে বাঁচিয়ে দেন, তারপরও তোমরা তাঁর সাথে অন্যদের শরীক করো!

৬৫. তুমি (আরো) বলো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আযাব পাঠাতে সক্ষম, অথবা তিনি তোমাদের দল-উপদলে বিভক্ত করে একদলকে আরেক দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সমপূর্ণরূপে সক্ষম; লক্ষ্য করো, কিভাবে আমি আমার আয়াতসমূহ (তাদের কাছে) বর্ণনা করি, যাতে করে তারা (সত্য) অনুধাবন করতে পারে |

৬৬. তোমার জাতির লোকেরা এ (কোরআন)কে অস্বীকার করেছে, অথচ তাই একমাত্র সত্য; তুমি (তাদের এটুকুই) বলে দাও যে, আমি তোমাদের ওপর কর্মবিধায়ক নই |

৬৭. প্রতিটি বার্তার (প্রমাণের) জন্যে একটি সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ মজুদ রয়েছে এবং তোমরা অচিরেই (তা) জানতে পারবে |

৬৮. তুমি যখন এমন সব লোককে দেখতে পাও যারা আমার আয়াতসমূহ নিয়ে হাসি-বিদ্রুপ করছে, তখন তুমি তাদের কাছ থেকে সরে এসো, যতোক্ষণ না তারা অন্য কথার দিকে মনোনিবেশ করে; যদি কখনো শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে (ওখানে বসিয়ে রাখে, তাহলে মনে পড়ার পর তুমি যালেম সম্প্রদায়ের সাথে আর বসে থেকো না ।

৬৯. তাদের (এসব) কার্যকলাপের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাকে যারা ভয় করে, তাদের ওপর হিসাবের কোনো দায়দায়িত্ব নেই, তবে উপদেশ তো দিয়েই যেতে হবে, হতে পারে তারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে |

৭০. সেসব লোকদের তুমি (আল্লাহর বিচারের জন্যে) ছেড়ে দাও, যারা তাদের দ্বীনকে নিছক খেল-তামাশায় পরিণত করে রেখেছে এবং এ পার্থিব জীবন যাদের প্রতারণার জালে আটকে রেখেছে, তুমি এ (কোরআন) দিয়ে (তাদের আমার কথা স্মরণ করাতে থাকো, যাতে করে কেউ নিজের অর্জিত কর্মকান্ডের ফলে ধ্বংস হয়ে যেতে না পারে, (মহাবিচারের দিন) তার জন্যে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোনো সাহায্যকারী বন্ধু এবং সুপারিশকারী থাকবে না | সে যদি নিজের সব কিছু দিয়েও দেয়, তবু তার কাছ থেকে (সেদিন তা) গ্রহণ করা হবে না; এরাই হচ্ছে সে (হতভাগ্য) মানুষ, যাদের নিজেদের অর্জিত গুনাহের কারণে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে, আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করার কারণে তাদের জন্যে (আরো থাকবে) ফুটন্ত পানি ও মর্মন্তুদ শাস্তি ।

৭১. তুমি (তাদের) বলো, আমরা কি আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকবো, যে- না আমাদের কোনো উপকার করতে পারে, না আমাদের কোনো অপকার করতে পারে, আল্লাহ তায়ালা যেখানে আমাদের (চলার জন্যে) সঠিক পথ বাতলে দিয়েছেন, সেখানে তাঁকে বাদ দিয়ে আমরা কি আবার উল্টো পথে ফিরে যাবো- ঠিক সে ব্যক্তিটির মতো, যাকে শয়তানরা যমীনের বুকে পথভ্রষ্ট করে দ্বারে দ্বারে ঠোকর খাওয়াচ্ছে, অথচ তার সংগী-সাথীরা তাকে ডাকছে, তুমি আমাদের কাছে এসো, আমাদের কাছে (মজুদ আল্লাহ তায়ালার) সহজ সরল পথের দিকে! তুমি বলে দাও, সত্যিকার অর্থে হেদায়াত তো তাই; যা আল্লাহর (পক্ষ থেকে এসেছে) এবং আমাদের এ আদেশ দেয়া হয়েছে যেন আমরা সৃষ্টিকূলের মালিকের সামনে আনুগত্যের মাথা নত করি,

৭২. আমরা যেন নামায প্রতিষ্ঠা করি এবং আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করি; (কেননা) তিনিই হচ্ছেন এমন সত্তা, যাঁর সামনে (একদিন) তোমাদের সবাইকে সমবেত করা হবে ।

৭৩. তিনিই যথাবিধি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন; যেদিন (আবার) তিনি বলবেন (সব কিছু বিলীন) হয়ে যাও, তখন (সাথে সাথেই) তা (বিলীন) হয়ে যাবে, তাঁর কথাই হচ্ছে চূড়ান্ত সত্য, যেদিন শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে (সেদিন) যাবতীয় কর্তৃত্ব ও বাদশাহী হবে একান্তই তাঁর; তিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত রয়েছেন; তিনি প্রজ্ঞাময়, তিনি সম্যক অবগত।

৭৪. (স্মরণ করো,) যখন ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বললো, তুমি কি (সত্যি সত্যিই এই) মূর্তিগুলোকে মাবুদ বানিয়ে নিয়েছো? আমি তো দেখতে পাচ্ছি, তুমি ও তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা স্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত রয়েছো |

৭৫. এভাবে আমি ইবরাহীমকে আকাশসমূহ ও যমীনের যাবতীয় পরিচালন ব্যবস্থা দেখাতে চেয়েছিলাম, যেন সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের দলে শামিল হয়ে যেতে পারে |

৭৬. যখন তার ওপর আঁধার ছেয়ে রাত এলো, তখন সে একটি তারকা দেখতে পেলো, (তারকাটি দেখেই) সে বলে উঠলো, এ (বুঝি) আমার মালিক, অতপর যখন তারকাটি ডুবে গেলো, তখন সে (কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে) বললো, যা ডুবে যায় তাকে তো আমি (আমার মালিক বলে) পছন্দ করতে পারি না!

৭৭. (এবার) যখন সে (আকাশে) একটি ঝলমলে চাঁদ দেখলো, তখন বললো (হাঁ), এই (মনে হয়) আমার মালিক, অতপর (এক পর্যায়ে) যখন তাও ডুবে গেলো তখন সে বললো, আমার 'রব' যদি আমাকে সঠিক পথ না দেখান, তাহলে আমি অবশ্যই গোমরাহ লোকদের দলে শামিল হয়ে যাবো |

৭৮. (এরপর দিনের বেলায়) সে যখন দেখলো একটি আলোকোজ্জ্বল সূর্য এবং (দেখেই) বলতে লাগলো, (মনে হচ্ছে) এই আমার মালিক, (কারণ এ যাবত যা দেখেছি) এটা তার সবগুলোর চাইতে বড়ো, (সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে) তাও যখন ডুবে গেলো, তখন ইবরাহীম (নতুন বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে) নিজের জাতিকে ডেকে বললো, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা, তোমরা যে সব কিছুকে আল্লাহ তায়ালার সাথে অংশীদার বানাও, আমি তা থেকে সমপূর্ণ মুক্ত।

৭৯. আমি নিষ্ঠার সাথে সেই মহান সার্বভৌম মালিকের দিকেই আমার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি, যিনি এই আসমানসমূহ ও যমীন (সহ চাঁদ-সুরুজ-গ্রহ-তারা সব কিছু) পয়দা করেছেন, আমি (এখন) আর মোশরেকদের দলভুক্ত নই ।

৮০. (এর পরই) তার জাতির লোকেরা তার সাথে (আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে) বিতর্ক শুরু করে দিলো; (জবাবে) সে বললো, তোমরা কি আমার সাথে স্বয়ং (কুল মাখলুকাতের মালিক) আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে তর্ক করছো, অথচ তিনিই আমাকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন; আমি (এখন আর) তোমাদের (মাবুদদের) ডরাই না- যাদের তোমরা আল্লাহ তায়ালার (কাজে) অংশীদার (মনে) করো। অবশ্য আমার মালিক যদি অন্য কিছু চান (সেটা আলাদা কথা); আমার মালিকের জ্ঞান সব কিছুর ওপর পরিব্যাপ্ত; (এরপরও) কি তোমরা সতর্ক হবে না?

৮১. তোমরা যাকে আল্লাহ তায়ালার সাথে অংশীদার বানাও, তাকে আমি কিভাবে ভয় করবো, অথচ তোমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্যদের শরীক করতে ভয় পাও না, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কোনো প্রমাণপত্র তোমাদের কাছে পাঠাননি; (এ অবস্থায় তোমরাই বলো,) আমাদের এ উভয় দলের মধ্যে কোন দলটি (দুনিয়া ও আখেরাতে) নিরাপত্তালাভের বেশী অধিকারী? (বলো!) যদি তোমাদের কিছু জানা থাকে!

৮২. যারা ঈমান এনেছে এবং যারা তাদের ঈমানকে যুলুম (-এর কালিমা) দিয়ে কলুষিত করেনি, তারাই (হচ্ছে দুনিয়া ও আখেরাতে) নিরাপত্তালাভের বেশী অধিকারী, (মূলত) তারাই হচ্ছে হেদায়াতপ্রাপ্ত |

৮৩. এ ছিলো (শেরেক সম্পর্কিত) আমার সেই (অকাট্য) যুক্তি, যা আমি ইবরাহীমকে তার জাতির ওপর দান করেছিলাম, (এভাবেই) আমি (আমার জ্ঞান দিয়ে) যাকে ইচ্ছা তাকে সমুন্নত করি; অবশ্যই তোমার মালিক প্রবল প্রজ্ঞাময়, কুশলী।

৮৪. অতপর আমি তাকে দান করেছি ইসহাক ও ইয়াকুব (-এর মতো দুই জন সুপুত্র); এদের সবাইকেই আমি সঠিক পথের দিশা দিয়েছিলাম, (এদের) আগে আমি নূহকেও হেদায়াতের পথ দেখিয়েছি, অতপর তার বংশের মাঝে দাউদ, সোলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মুসা এবং হারুনকেও (আমি হেদায়াত দান করেছি); আর এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি |

৮৫. যাকারিয়া, ইয়াহুইয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকেও (আমি সঠিক পথ দেখিয়েছিলাম); এরা সবাই ছিলো নেককারদের দলভুক্ত ।

৮৬. আমি (আরো সৎপথ দেখিয়েছিলাম) ইসমাঈল, ইয়াসা, ইউনুস এবং লূতকেও; এদের সবাইকেই আমি (নরওত দিয়ে) সৃষ্টিকূলের ওপর বিশেষ মর্যাদা দান করেছিলাম ।

৮৭. এদের পূর্বপুরুষ, এদের পরবর্তী বংশধর ও এদের ভাই বন্ধুদেরও আমি (নানাভাবে পুরস্কৃত করেছিলাম), আমি এদেরকে বাছাই করে নিয়েছিলাম এবং আমি এদের সবাইকে সরল পথে পরিচালিত করেছিলাম ।

৮৮. এ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার হেদায়াত, নিজ বান্দাদের মাঝে যাকে চান তিনি তাকেই এ হেদায়াত দান করেন; (কিন্তু) তারা যদি শেরেক করতো, তাহলে তাদের যাবতীয় কর্ম অবশ্যই নিষ্ফল হয়ে যেতো ।

৮৯. এরাই ছিলো সেসব লোক, যাদের আমি কেতাব, প্রজ্ঞা ও নবুওত দান করেছি, (এ সত্ত্বেও আজ) যদি তারা তা অস্বীকার করে (তাতে আমার কোনোই ক্ষতি নেই), আমি তো (অতীতে) এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছিলাম, যারা কখনো (এগুলো) প্রত্যাখ্যান করেনি ।

৯০. এরা হচ্ছে সে সব (সৌভাগ্যবান বান্দা)- আল্লাহ তায়ালা যাদের সৎপথে পরিচালিত করেছেন; অতএব (হে মোহাম্মদ), তুমিও এদের পথের অনুসরণ করো (এবং কাফেরদের) বলো, আমি এর ওপর তোমাদের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক চাই না; (আসলে) এ হচ্ছে (দুনিয়ার) মানুষের জন্যে একটি স্মরণিকা মাত্র |

৯১. তারা আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর যথাযোগ্য মর্যাদা দান করেনি, (বিশেষ করে) যখন তারা বললো, আল্লাহ তায়ালা কোনো মানুষের ওপর (গ্রন্থের) কোনো বস্তুই নাযিল করেননি; তুমি তাদের জিজ্ঞেস করো, (যদি তাই হয় তাহলে) মুসার আনীত কেতাব- যা মানুষের জন্যে ছিলো এক আলোকবর্তিকা ও পথনির্দেশ, যা তোমরা কাগজের (পাতায়) লিখে রাখতে, যার কিছু অংশ তোমরা মানুষের সামনে প্রকাশ করতে এবং অধিকাংশই গোপন করে রাখতে, (সর্বোপরি) সে কিতাব দ্বারা তোমাদের এমন সব জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হতো, যার কিছুই তোমরা জানতে না এবং তোমাদের পুর্বপুরুষরাও জানতো না- তা কে নাযিল করেছেন? তুমি বলো (হাঁ,) আল্লাহ তায়ালাই (তা নাযিল করেছেন), (হে নবী,) তুমি তাদের (এসব) নিরর্থক আলোচনায় মত্ত থাকতে দাও |

৯২. এটি এক বরকতপূর্ণ গ্রন্থ, যা আমি (তোমার কাছে) পাঠিয়েছি, এটি আগের কিতাবের পুরোপুরি সত্যায়ন করে এবং যাতে এ (কিতাব) দিয়ে তুমি মক্কা ও তার পার্শ্ববর্তী জনপদসমূহের মানুষকে সাবধান করবে; যারা আখেরাতের ওপর ঈমান আনে তারা এ কিতাবের ওপরও ঈমান আনে, আর তারা তাদের নামাযের হেফাযত করে ।

৯৩. সে ব্যক্তির চাইতে বড়ো যালেম আর কে আছে যে আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করে, অথবা বলে, আমার ওপর ওহী নাযিল হয়েছে, (যদিও) তার প্রতি কিছুই নাযিল করা হয়নি, (তার চাইতেই বা বড়ো যালেম কে,) যে বলে, আমি অচিরেই আল্লাহর নাযিল করা গ্রন্থের মতো কিছু নাযিল করে দেখাবো! যদি (সত্যি সত্যিই) যালেমদের মৃত্যু-যন্ত্রণা (উপস্থিত) হবার সময় (তাদের অবস্থাটা) তুমি দেখতে পেতে! যখন (মৃত্যুর) ফেরেশতারা তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণবায় বের করে দাও; তোমরা আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে যেসব অন্যায় কথা বলতে এবং আল্লাহর আয়াতের ব্যাপারে যে (ক্ষমাহীন) ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে, তার জন্যে আজ অত্যন্ত অবমাননাকর এক আযাব তোমাদের দেয়া হবে |

৯৪. (আজ সত্যি সত্যিই) তোমরা আমার সামনে (একাকী) নিসঙ্গ অবস্থায় এলে, যেমনি নিসঙ্গ অবস্থায় আমি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, অতপর তোমাদের আমি যা কিছু (বিষয় সম্পদ) দান করেছিলাম, তার সবটুকুই তোমরা পেছনে ফেলে (একান্ত খালি হাতে এখানে) এসেছো, তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারী ব্যক্তিদের- যাদের তোমরা মনে করতে তারা তোমাদের (কাজকর্মের) মাঝে অংশীদার, তাদের তো আজ তোমাদের মাঝে দেখতে পাচ্ছি না। বস্তুত তাদের এবং তোমাদের মধ্যকার সেই (মিথ্যা) সম্পর্ক আজ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের ব্যাপারে তোমরা যা ধারণা করতে তাও আজ নিষ্ফল (প্রমাণিত) হয়ে গেছে ।

৯৫. অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা শস্যবীজ ও আঁটিগুলো অংকুরিত করেন, তিনিই নির্জীব (কিছু) থেকে জীবন্ত (কিছু) বের করে আনেন, (আবার) তিনিই জীবন্ত (কিছু) থেকে প্রাণহীন কিছু নির্গত করেন; এই (সৃষ্টি েেকৗশলের মালিক) হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা, (এরপরও) তোমরা কোথায় কোথায় ঠোকর খাচ্ছো (বলো)!

৯৬. (রাতের আঁধার ভেদ করে) তিনিই ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনি রাতকে তোমাদের বিশ্রামের জন্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং (দিন তারিখের) হিসাব কিতাবের জন্যে তিনি চাঁদ ও সুরুজ বানিয়েছেন, এসব কিছুই হচ্ছে মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানী আল্লাহ তায়ালার নির্ধারণ করা (বিষয়) |

৯৭. তিনি তোমাদের জন্যে (অসংখ্য) তারকা বানিয়ে রেখেছেন যেন তোমরা জলে-স্থলের আঁধারে পথের দিশা পেতে পারো, যে সম্প্রদায়ের লোকেরা (এ সব কিছু জানে, তাদের জন্যে আমি আমার নিদর্শনসমূহ খুলে খুলে বর্ণনা করেছি।

৯৮. তিনি তোমাদের মাত্র একটি ব্যক্তিসত্তা থেকে পয়দা করেছেন, অতপর তিনি (তোমাদের) থাকার জায়গা ও মালসামান রাখার জায়গা (বানালেন), জ্ঞানী লোকদের জন্যে আমি আমার নিদর্শনগুলো (এভাবেই) বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে থাকি |

৯৯. তিনি আসমান থেকে পানি (-র ধারা) নাযিল করেন, অতপর সে পানি দিয়ে আমি সব রকমের উদ্ভিদ (ও গাছপালা) জন্মানোর ব্যবস্থা করি, তা থেকে সবুজ শ্যামল পাতা উদগত করি, পরে তা থেকে পরস্পর জড়ানো ঘন শস্যদানাও সৃষ্টি করি এবং (ফলের) ভারে নুয়ে পড়া খেজুরের গোছা বের করে আনি, আংগুরের উদ্যানমালা, জলপাই ও আনার পয়দা করি, এগুলো একে অন্যের সদৃশ হয়, আবার (একটার সাথে) আরেকটার গরমিলও থাকে; গাছ যখন সুশোভিত হয় তখন (এক সময়) তা ফলবান হয়, আবার যখন ফলগুলো পাকতে শুরু করে, তখন তোমরা এই সৃষ্টি-নৈপুণ্যের দিকে তাকিয়ে থাকো; অবশ্যই এতে ঈমানদার লোকদের জন্যে বহু নিদর্শন রয়েছে |

১০০. তারা জ্বিনকে আল্লাহর সাথে শরীক মনে করে, অথচ আল্লাহ তায়ালাই জ্বিনদের পয়দা করেছেন, অজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে তারা আল্লাহ তায়ালার ওপর পুত্র-কন্যা ধারণের অপবাদও আনয়ন করে, অথচ আল্লাহ তায়ালা মহিমান্বিত, এরা যা বলে তিনি তার চাইতে অনেক মহান ও পবিত্র ।

১০১. তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের (একক) উদ্ভাবক | (এদের তুমি বলো), তাঁর সন্তান হবে কি ভাবে, তাঁর তো জীবনসংগিনীই নেই, সব কিছু তিনিই পয়দা করেছেন এবং সব কিছু সম্পর্কে তিনি পুরোপুরিই ওয়াকেফহাল রয়েছেন।

১০২. তিনিই আল্লাহ তায়ালা - তোমাদের মালিক, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, সব কিছুর (একক) স্রষ্টা তিনি, সুতরাং তোমরা তাঁরই এবাদাত করো, সব কিছুর ওপর তিনি চূড়ান্ত তত্তাবধায়ক বটে |

১০৩. কোনো (সাধারণ) দৃষ্টি তাঁকে দেখতে পায় না, (অথচ) তিনি সব কিছুই দেখতে পান, তিনি সুক্ষ্মদর্শী, তিনি সব কিছু সম্পর্কেই খোঁজ-খবর রাখেন |

১০৪. তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে (এই) সুক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন জ্ঞান (-এর নিদর্শন) এসেছে, অতপর যদি কোনো ব্যক্তি (এসব নিদর্শন) দেখতে পায়, তাহলে সে তা দেখবে তার নিজের (কল্যাণের) জন্যেই, আবার যদি কেউ (তা না দেখে) অন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে তার দায়িত্ব তার ওপরই (বর্তাবে | তুমি বলো); আমি তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নই |
১০৫. আমি এভাবেই আমার আয়াতগুলো (তোমাদের কাছে) বিধৃত করি, যাতে করে তারা একথা বলতে পারে, তুমি (এসব কথা ভালো করেই) পড়ে এসেছো এবং যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে যেন আমি তাকে (আরো) সুস্পষ্ট করে দিতে পারি |

১০৬. (হে মোহাম্মদ,) তুমি শুধু তারই অনুসরণ করো- যা তোমার মালিকের কাছ থেকে তোমার কাছে নাযিল করা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, (এরপরও) যারা শেরেকে লিপ্ত, তাদের তুমি (পুরোপুরিই ) এড়িয়ে চলো |

১০৭. আল্লাহ তায়ালা যদি চাইতেন, তাহলে এরা কেউই তাঁর সাথে শেরেক করতো না; আর আমি (কিন্তু) তোমাকে তাদের ওপর পাহারাদার নিযুক্ত করে পাঠাইনি, (সত্যি কথা হচ্ছে,) তুমি তো তাদের ওপর কোনো অভিভাবকও নও|

১০৮. তারা আল্লাহ তায়ালার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি-গালাজ করো না, নইলে শত্রুতার বশবর্তী হয়ে না জেনে আল্লাহ তায়ালাকেও তারা গালি দেবে; আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের নিজেদের কার্যকলাপ সুশোভন করে রেখেছি, অতপর (সবাইকেই) তাদের মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, (তারপর) তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা (দুনিয়ার জীবনে) কি করে এসেছে।

১০৯. এরা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে, যদি তাদের কাছে কোনো নিদর্শন আসে, তাহলে অবশ্যই তারা তার ওপর ঈমান আনবে; তুমি বলো, নিদর্শন পাঠানো (সম্পূর্ণত) আল্লাহ তায়ালার ব্যাপার, তুমি কি জানো (এদের অবস্থা), নিদর্শন এলেও এরা কিন্তু কখনো ঈমান আনবে না |

১১০. আমি (অচিরেই) তাদের অন্তকরণ ও দৃষ্টিশক্তিকে (অন্যদিকে) ফিরিয়ে দেবো, যেমন তারা প্রথম বারেই এ (কোরআনের) ওপর ঈমান আনেনি এবং আমি (এবার) তাদের অবাধ্যতার আবর্তে ঘুরপাক খাওয়ার জন্যে ছেড়ে দেবো!

১১১. (এমনকি) আমি যদি তাদের কাছে (আমার) ফেরেশতাদেরও পাঠিয়ে দেই এবং (কবর থেকে) মৃত ব্যক্তিরাও যদি (উঠে এসে) তাদের সাথে কথা বলে, কিংবা আমি যদি (দুনিয়ার) সমৃদ্বয় বস্তুও এনে তাদের ওপর জড়ো করে দেই, তবু এরা (কখনো) ঈমান আনবে না, অবশ্য (এদের কারো ব্যাপারে) যদি আল্লাহ তায়ালা ( ভিন্ন কিছু) চান তা আলাদা কথা | আসলে, এদের অধিকাংশ ব্যক্তিই মূর্খের আচরণ করে।

১১২. আমি এভাবেই প্রত্যেক নবীর জন্যে (যুগে যুগে কিছু কিছু) দুশমন বানিয়ে রেখেছি মানুষের মাঝ থেকে, (কিছু আবার) জ্বিনদের মাঝ থেকে, যারা প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে একে অন্যকে চমকপ্রদ কথা বলে, তোমার মালিক চাইলে তারা (অবশ্য এটা) করতো না, অতএব তুমি তাদের ছেড়ে দাও, তারা যা পারে মিথ্যা রচনা করে বেড়াক!

১১৩. যারা শেষ বিচারের দিনের ওপর ঈমান রাখে না, তাদের মন এর ফলে শয়তানের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়ে, যাতে করে তারা তার ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকতে পারে, (সর্বোপরি ) তারা যেসব কুকর্ম চালিয়ে যেতে চায়, তাও এর ফলে নির্বিঘ্নে তারা চালিয়ে যেতে পারে |

১১৪. (তুমি বলো,) আমি কি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো ফয়সালাকারী সন্ধান করবো, অথচ তিনিই হচ্ছেন সেই মহান সত্তা, যিনি তোমাদের কাছে সবিস্তারে কিতাব নাযিল করেছেন; (আগে) যাদের আমি আমার কিতাব দান করেছিলাম তারা জানে, তোমার মালিকের পক্ষ থেকে সত্য বাণী নিয়েই এটা (আল কোরআন) নাযিল করা হয়েছে, অতএব তুমি কখনো সন্দিহানদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা |

১১৫. ন্যায় ও ইনসাফ (-এর আলোকে) তোমার মালিকের কথাগুলোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং তাঁর কথা পরিবর্তন করার কেউ নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ |

১১৬. (হে মোহাম্মদ,) দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষের কথা যদি তুমি মেনে চলো, তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহ তায়ালার পথ থেকে বিচ্যুত করে ছাড়বে; কেননা এরা নিছক অনুমানের ওপর ভিত্তি করেই চলে, (অধিকাংশ ব্যাপারে) এরা মিথ্যা ছাড়া অন্য কিছু বলেই না |

১১৭. তোমার মালিক নিঃসন্দেহে (এ কথা) ভালো করেই জানেন কে তাঁর পথ ছেড়ে বিপথগামী হচ্ছে, (আবার) কে সঠিক পথের অনুসারী তাও তিনি সম্যক অবগত রয়েছেন |

১১৮. যদি আল্লাহ তায়ালার আয়াতের ওপর তোমরা বিশ্বাস করো, তাহলে তোমরা (শুধু) সেসব (জন্তুর গোশত) খাবে, যার ওপর (যবাই করার সময়) আল্লাহ তায়ালার নাম নেয়া হয়েছে।

১১৯. তোমাদের এ কি হয়েছে! তোমরা সেসব (জন্তুর গোশত) কেন খাবে না, যার ওপর (যবাইর সময়) আল্লাহ তায়ালার নাম নেয়া হয়েছে, (বিশেষ করে যখন) আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে, তিনি তোমাদের ওপর কোন কোন বস্তু হারাম করেছেন সে কথা অবশ্যই আলাদা যখন তোমাদের তার কাছে একান্ত বাধ্য (ও নিরুপায়) করা হয়| অধিকাংশ মানুষ সুষ্ঠু জ্ঞান ছাড়াই নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো (মানুষকে) বিপথে চালিত করে; নিঃসন্দেহে তোমার মালিক সীমালংঘনকারীদের ভালো করেই জানেন |

১২০. তোমরা প্রকাশ্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো, (বেঁচে থাকো) তার গোপন অংশ থেকেও; নিঃসন্দেহে যারা কোনো গুনাহ অর্জন করবে, তাদের কৃতকর্মের যথাযথ ফল তাদের প্রদান করা হবে |

১২১. (যবাই এর সময়) যার ওপর আল্লাহ তায়ালার নাম নেয়া হয়নি, সে (জন্তুর গোশত) তোমরা কখনো খাবে না, (কেননা) তা হচ্ছে জঘন্য গুনাহের কাজ; শয়তানের (কাজই হচ্ছে) তার সংগী-সাথীদের মনে প্ররোচনা দেয়া, যেন তারা তোমাদের সাথে (এ নিয়ে) ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়, যদি তোমরা তাদের কথা মেনে চলো, তাহলে অবশ্যই তোমরা মোশরেক হয়ে পড়বে |

১২২. যে ব্যক্তি (এক সময়) ছিলো মৃত, অতঃপর আমি তাকে জীবিত করলাম, (তদুপরি) তার জন্যে এমন এক আলোকবর্তিকাও আমি বানিয়ে দিলাম, যার আলো দিয়ে মানুষের সমাজে সে চলার (দিশা) পাচ্ছে, সে কি কখনো সে ব্যক্তির মতো হতে পারে, যে এমন অন্ধকারে (পড়ে) আছে, যেখান থেকে সে (কোনোক্রমেই) বেরিয়ে আসতে পারছে না; এভাবেই কাফেরদের জন্যে তাদের কর্মকাণ্ডকে শোভনীয় (ও সুখকর) বানিয়ে রাখা হয়েছে |

১২৩. এভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে তার কিছু কিছু বড়ো অপরাধী নিযুক্ত করে রেখেছি, যেন তারা সেখানে (অন্যদের) ধোকা দিতে পারে, (আসলে) এসব কিছুর মাধ্যমে তারা তাদের নিজেদেরই প্রতারিত করছে, অথচ তারা নিজেরা এ কথাটা মোটেই উপলব্ধি করতে পারছে না |

১২৪. তাদের কাছে যখনি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো আয়াত আসে তখন তারা বলে উঠে, আমরা এর ওপর কখনো ঈমান আনবো না, যতোক্ষণ না আমাদেরও তাই দেয়া হয় যা আল্লাহর রসূলদের দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই জানেন তাঁর রেসালাত তিনি কোথায় রাখবেন; যারা এ অপরাধ করেছে তারা অচিরেই আল্লাহর পক্ষ থেকে অপমান ও কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে কেননা তারা আল্লাহ তায়ালার সাথে প্রতারণা করছিলো।

১২৫. আল্লাহ তায়ালা কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার হৃদয়কে ইসলামের জন্যে খুলে দেন, (আবার) যাকে তিনি বিপথগামী করতে চান তার হৃদয়কে অতিশয় সংকীর্ণ করে দেন, (তার পক্ষে ইসলামের অনুসরণ করা এমন কঠিন হয়) যেন কোনো একজন ব্যক্তি আকাশে চড়তে চাইছে, আর যারা (আল্লাহর ওপর) বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তায়ালা এভাবেই তাদের ওপর (অপমানজনক লাঞ্ছনা ও) নাপাকী ছেয়ে দেন ।

১২৬. (মুলত) এটিই হচ্ছে তোমার মালিকের (দেখানো) সহজ সরল পথ, আমি অবশ্যই আমার আয়াতসমূহ উপদেশ গ্রহণে আগ্রহীদের জন্যে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।

১২৭. তাদের মালিকের কাছে রয়েছে (তাদের) জন্যে শান্তির এক সুন্দর নিবাস, আল্লাহ তায়ালাই তাদের অভিভাবক, (দুনিয়ায়) তারা যা করতো এটা হচ্ছে তারই বিনিময় |

১২৮. (স্মরণ করো,) যেদিন আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন, (তখন তিনি শয়তানরূপী জ্বিনদের) বলবেন, হে জ্বিন সম্প্রদায়, তোমরা তো (বিভিন্ন সময়) অনেক মানুষকেই গোমরাহ করেছো, (এ সময় মানুষের ভেতর থেকে (যারা) তাদের বন্ধু (তারা) বলবে, হে আমাদের মালিক, আমাদের এক একজন এক একজনকে (ব্যবহার করে) দুনিয়ার জীবনে প্রচুর লাভ কামাচ্ছিলাম, আর এভাবেই আমরা চূরান্ত সময়ে এসে হাযির হয়েছি, যা তুমি আমাদের জন্যে নির্দিষ্ট করে রেখেছিলে, আল্লাহ তায়ালা বলবেন, (হ্যাঁ, আজ সে গোমরাহীর জন্যে) তোমাদের ঠিকানা (হবে জাহান্নামের) আগুন, সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে, অবশ্য আল্লাহ তায়ালা যা কিছু চাইবেন (তা আলাদা); তোমার মালিক অবশ্যই প্রজ্ঞাময় ও সম্যক অবহিত।

১২৯. আমি এভাবে একদল যালেমকে তাদেরই (অন্যায়) কার্যকলাপের দরুন আরেক দল যালেমের ওপর ক্ষমতাবান করে দেই।

১৩০. (আল্লাহ তায়ালা সেদিন আরো বলবেন,) হে জ্বিন ও মানুষ সম্প্রদায় (বলো), তোমাদের কাছে কি তোমাদেরই মধ্য থেকে আমার (এমন এমন) সব রসূল আসেনি, যারা আমার আয়াতগুলো তোমাদের কাছে বর্ণনা করতো, (উপরোন্ত) যারা তোমাদের ভয় দেখাতো যে, তোমাদের আজকের এ দিনের সম্মুখীন হতে হবে; (সেদিন) ওরা বলবে, হ্যাঁ (এসেছিলো, তবে আজ) আমরা আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দিচ্ছি, (মূলত) দুনিয়ার জীবন এদের প্রতারিত করে রেখেছিলো, তারা নিজেদের বিরুদ্ধেই একথার সাক্ষ্য দেবে যে, তারা (আসলেই) কাফের ছিলো |

১৩১. এটা এ জন্যে, তোমার মালিক অন্যায়ভাবে এমন কোনো জনপদের মানুষকে ধ্বংস করেন না, যার অধিবাসীরা (সত্য দ্বীন সম্পর্কে) সম্পূর্ন গাফেল থাকে ।

১৩২. তাদের নিজস্ব কর্ম অনুযায়ী প্রতিটি ব্যক্তির জন্যেই (তার) মর্যাদা রয়েছে, তোমার মালিক তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে মোটেই উদাসীন নন |

১৩৩. তোমার মালিক কারো মুখাপেক্ষী নন, দয়া ও অনুগ্রহের মালিক তিনি; তিনি যদি চান তাহলে তোমাদের (এই জনপদ থেকে) সরিয়ে নিতে পারেন, এবং তোমাদের পরে অন্য যাদের তিনি চান এখানে (তোমাদের জায়গায়) বসিয়েও দিতে পারেন, যেমনি করে তোমাদেরও তিনি অন্য সম্প্রদায়ের বংশধর থেকে উত্থান ঘটিয়েছেন |

১৩৪. তোমাদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে তা অবশ্যই আসবে, আর তোমরা (আল্লাহ তায়ালাকে) ব্যর্থ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখো না ।

১৩৫. (তাদের তুমি বলে দাও,) হে আমার জাতি, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় (যা যা করার) করে যাও, আমিও (আমার করণীয়) করে যাবো, অচিরেই তোমরা জানতে পারবে, কার জন্যে পরিণামের (সুন্দর) ঘরটি (নির্দিষ্ট ) রয়েছে, (এও জানতে পারবে যে) যালেমরা কখনো সাফল্য লাভ করতে পারে না ।

১৩৬. স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা যে শস্য উৎপাদন করেছেন ও গবাদিপশু সৃষ্টি করেছেন, এ (মূর্খ) ব্যক্তিরা তারই এক অংশ আল্লাহর জন্যে নির্দিষ্ট করে রাখে এবং নিজেদের খেয়ালখুশীমতো (একথা) বলে, এ অংশ হচ্ছে আল্লাহর জন্যে, আর এ অংশ হচ্ছে আমাদের দেবতাদের জন্যে, অতঃপর যা তাদের দেবতাদের জন্যে (রাখা হয়) তা (কখনো) আল্লাহর কাছ পর্যন্ত পৌছায় না, (যদিও) আল্লাহর (নামে) যা (রাখা হয় তা শেষতক) তাদের দেবতাদের কাছে গিয়েই পৌঁছেছে, কতো নিকৃষ্ট তাদের এ বিচার!

১৩৭. এভাবে বহু মোশরেকের ক্ষেত্রেই তাদের শরীক (দেবতা)রা তাদের আপন সন্তানদের হত্যা করার (জঘন্য) কাজটিকেও একান্ত শোভনীয় করে রেখেছে, এর উদ্দেশ্যে হচ্ছে তাদের ধ্বংস সাধন করা এবং তাদের গোটা জীবন বিধানকেই তাদের কাছে সন্দেহের বিষয়ে পরিণত করে দেয়া, অবশ্য আল্লাহ তায়ালা চাইলে তারা (কখনো) এ কাজ করতো না, অতএব তুমি তাদের ছেড়ে দাও, মিথ্যা রচনা নিয়ে (তাদের তুমি কিছুদিন ব্যস্ত থাকতে দাও |

১৩৮. তারা বলে, এসব গবাদিপশু এবং এ খাদ্যশস্য নিষদ্ধি (তালিকাভুক্ত), আমরা যাকে চাইবো সে ছাড়া অন্য কেউ তা খেতে পারবে না, এটা তাদের (মনগড়া একটা) ধারণা মাত্র (আবার তারা মনে করে), কিছু গবাদিপশু আছে যার পীঠ (আরোহণ কিংবা মাল সামান রাখার জন্যে) নিষদ্ধি, আবার কিছু গবাদিপশু আছে যার ওপর (যবাই করার সময়) তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে না, আল্লাহর ওপর মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যেই (তাদের) এসব অপচষ্টো; অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তাদের এ মিথ্যাচারের জন্যে তাদের (যথাযথ) প্রতিফল দান করবেন |

১৩৯. তারা বলে, এসব গবাদিপশুর পেটে যা কিছু আছে তা শুধু আমাদের পুরুষদের জন্যেই নির্দিষ্ট এবং আমাদের (মহিলা) সাথীদের জন্যে তা হারাম, তবে যদি এ (পশুর পেটে) মরা কিছু থাকে তাহলে তাতে তারা (নারী-পুরুষ) উভয়েই সমান অংশীদার; আল্লাহ তায়ালা অতি শীঘ্রই তাদের এ ধরনের উদ্ভট কথা বলার প্রতিফল দান করবেন; নিঃসন্দেহে তিনি হচ্ছেন প্রবল প্রজ্ঞাময়, তিনি সর্বজ্ঞ |

১৪০. অবশ্য যারা (নেহায়েত) নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে নিজেদের সন্তানদের হত্যা করলো এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের যে রেযেক দান করেছেন তা নিজেদের ওপর হারাম করে নিলো, আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে (নানা ধরনের) মিথ্যা (কথা) রচনা করলো, এসব কাজের মাধ্যমে এরা সবাই দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেলো, এরা কখনো সৎপথের অনুসারী ছিলো না।

১৪১. মহান আল্লাহ তায়ালা যিনি নানা প্রকারের উদ্যান বানিয়েছেন, কিছু লতা-গুল্ম, যা কোনো কান্ড ছাড়াই মাচানের ওপর তুলে রাখা হয়েছে, আবার কিছু গাছ), যা মাচানের ওপর তুলে রাখা হয়নি (স্বীয় কান্ডের ওপর তা এমনিই দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আরো সৃষ্টি করেছেন), খেজুর গাছ এবং বিভিন্ন (স্বাদ ও) প্রকার বিশষ্টি খাদ্যশস্য ও আনার (এগুলো স্বাদে গন্ধে এক রকমও হতে পারে), আবার তা ভিন্ন ধরনেরও হতে পারে, যখন তা ফলবান হয় তখন তোমরা তার ফল খাও, তোমরা ফসল তোলার দিনে (যে বঞ্চিত) তার হক আদায় করো, কখনো অপচয় করো না, কেননা, আল্লাহ তায়ালা অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না ।

১৪২. গবাদিপশুর মধ্যে (কিছু পশু হচ্ছে) ভারবাহী ও কিছু হচ্ছে খাবার উপযোগী, আল্লাহ তায়ালা যা তোমাদের দান করেছেন তা তোমরা খাও এবং (এ পর্যায়ে) কখনো শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন ।

১৪৩. (আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দিয়েছেন এই) আর্ট প্রকারের গৃহপালিত জন্তু, (প্রথমত ) তার দুটো মেষ, (দ্বিতীয়ত) তার দুটো ছাগল (হে মোহাম্মদ), তুমি (তাদের) জিজ্ঞেস করো, এর (নর দুটো কিংবা মাদি) অথবা তাদের মায়েরা যা কিছু পেটে রেখেছে তার কোনোটি (কি আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্যে) হারাম করেছেন? তোমরা আমাকে প্রমাণসহ বলো যদি তোমরা সত্যবাদী হও!

১৪৪. (তৃতীয়ত) দুটো উট, (চতুর্থত) দুটো গরু, এর (নর দুটো কিংবা মাদী) দুটো কি আল্লাহ তায়ালা হারাম করেছেন, অথবা এদের উভয়ের মায়েরা যা কিছু পেটে রেখেছে তা (কি তিনি তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন)? আল্লাহ তায়ালা যখন তোমাদের (হারামের) আদেশটি দিয়েছিলেন তখন তোমরা কি সেখানে উপস্থিত ছিলে? অতঃপর তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে হতে পারে যে মানুষকে গোমরাহ করার জন্যে অজ্ঞতাবশত আল্লাহর নামে মিথ্যা (কথা) রচনা করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।

১৪৫. (হে মোহাম্মদ,) তুমি (এদের) বলো, আমার কাছে যে ওহী পাঠানো হয়েছে তাতে একজন ভোজনকারী মানুষ (সাধারণত) যা খায় তার মধ্যে এমন কোনো জিনিস তো আমি পাচ্ছি না যাকে হারাম করা হয়েছে, (হ্যাঁ, তা যদি) মরা জন্তু, প্রবাহিত রক্ত এবং শুয়োরের গোশত (হয় তাহলে তা অবশ্যই হারাম), অতঃপর এসব হচ্ছে নাপাক, অথবা এমন (এক) অবৈধ (জন্তু) যা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো নামে যবাই করা হয়েছে, তবে যদি কাউকে নাফরমানী এবং সীমালংঘনজনিত অবস্থা ব্যতিরেকে (এর কোনো একটি জিনিস খেতে) বাধ্য করা হয়, তাহলে (তার ক্ষেত্রে) তোমার মালিক অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু |

১৪৬. আর আমি ইহুদীদের জন্যে নখযুক্ত সব পশুই হারাম করে দিয়েছি, গরু এবং ছাগলের চর্বিও আমি তাদের জন্যে হারাম করেছি, তবে (জন্তুর চর্বির) যা কিছু তাদের উভয়ের পিঠ, আঁত কিংবা হাড়ের সাথে জড়ানো থাকে তা (হারাম) নয়, এভাবেই এগুলোকে (হারাম করে) আমি তাদের অবাধ্যতার শাস্তি দিয়েছিলাম, নিঃসন্দেহে আমি সত্যবাদী |

১৪৭. (এরপরও) যদি তারা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে তাহলে তুমি বলো, অবশ্যই তোমাদের মালিক এক বিশাল দয়ার আধার, (তবে) অপরাধীদের ওপর থেকে তাঁর শাস্তি কেউই ফেরাতে পারবে না ।

১৪৮. অচিরেই এ মোশরেক লোকগুলো বলতে শুরু করবে, যদি আল্লাহ তায়ালা চাইতেন তাহলে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষরা তো শেরক করতাম না, না (এভাবে) আমরা কোনো জিনিস (নিজেদের ওপর) হারাম করে নিতাম, (তুমি তাদের বলো, এর) আগেও অনেকে (এভাবে আল্লাহর আয়াতকে) অস্বীকার করেছে, অবশেষে তারা আমার শাস্তির স্বাদ ভোগ করেছে, তুমি (তাদের) জিজ্ঞেস করো, তোমাদের কাছে কি সত্যিই (এমন) কোনো জ্ঞান (মজুদ) আছে? (থাকলে) অতঃপর তা বের করে আমার জন্যে নিয়ে এসো, তোমরা তো কল্পনার ওপর (নির্ভর করেই) কথা বলো এবং (হামেশাই) মিথ্যার অনুসরণ করো।

১৪৯. তুমি (আরো) বলো, (সব কিছুর) চুরান্ত প্রমাণ তো আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে, তিনি যদি চাইতেন তাহলে তিনি তোমাদের সবাইকেই সৎপথে পরিচালিত করে দিতেন |

১৫০. (হে মোহাম্মদ,) তুমি বলো (যাও), তোমাদের সেসব সাক্ষী নিয়ে এসো যারা একথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ তায়ালাই এসব জিনিস (তোমাদের ওপর) হারাম করেছেন। (তাদের মধ্যে) কিছু সাক্ষী যদি সাক্ষ্য দেয়ও, তবু তুমি তাদের সাথে কোনো সাক্ষ্য দিয়ো না, যারা আমার আয়াতকে অস্বীকার করেছে, যারা পরকালের ওপর ঈমান আনেনি, আসলে তারা অন্য কিছুকে তাদের মালিকের সমকক্ষ মনে করে, (তাদেরও তুমি কখনো অনুসরণ করো না ।)

১৫১. (হে মোহাম্মদ,) তুমি বলো, এসো আমিই (বরং) তোমাদের বলে দেই তোমাদের মালিক কোন কোন জিনিস তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন (সে জিনিসগুলো হচ্ছে), তোমরা তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবে না, পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করবে, দারিদ্রের আশংকায় কখনো তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কেননা আমিই তোমাদের ও তাদের উভয়েরই আহার যোগাই, প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক তোমরা অশ্লীলতার কাছেও যেয়োনা, আল্লাহ তায়ালা যে জীবনকে তোমাদের জন্যে মর্যাদাবান করেছেন তাকে কখনো যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে হত্যা করো না এ হচ্ছে তোমাদের (জন্যে কতিপয় নির্দেশ), আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে তোমাদের আদেশ দিয়েছেন, এগুলো যেন তোমরা মেনে চলো, আশা করা যায় তোমরা (তাঁর বাণীসমূহ) অনুধাবন করতে পারবে |

১৫২. তোমরা কখনো এতীমদের সম্পদের কাছেও যাবে না, তবে উদ্দেশ্য যদি নেক হয় তাহলে সে একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমায় পৌছা পর্যন্ত ( কোনো পদক্ষেপ নিলে তা ভিন্ন কথা), পরিমাপ ও ওযন (করার সময়) ন্যায্যভাবেই তা করবে, আমি (কখনো) কারো ওপর তার সাধ্যসীমার বাইরে কোনো দায়িত্ব চাপাই না, যখনি তোমরা কোনো ব্যাপারে কথা বলবে তখন ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে, যদি তা (তোমাদের একান্ত) আপনজনের (বিরুদ্ধে)-ও হয়, তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে দেয়া সব অংগীকার পুরণ করো এ হচ্ছে তোমাদের (জন্যে আরো কতিপয় বিধান); এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের আদেশ দিয়েছেন (তোমরা যেন এগুলো মেনে চলো), আশা করা যায় তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারবে ।

১৫৩. এটা হচ্ছে আমার (দেখানো) সহজ সরল পথ, অতএব একমাত্র এরই তোমরা অনুসরণ করো, কখনো ভিন্ন পথ অবলম্বন করো না, কেননা (ভিন্ন পথ অবলম্বন করলে) তা তোমাদের তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে এ হচ্ছে তোমাদের (জন্যে আরো কয়েকটি বিধান), আল্লাহ তায়ালা (এর মাধ্যমে) তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন (যেন তোমরা এগুলো মেনে চলো), আশা করা যায় তোমরা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করবে ।

১৫৪. অতঃপর আমি মুসাকে (হেদায়াত সম্বলিত) কিতাব দান করেছিলাম, (তা ছিলো) পরিপূর্ণ এবং বিশদ হেদায়াত ও রহমত, যাতে করে (বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের) লোকেরা এ কথার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে যে, (একদিন) তাদের (সবাইকে) তাদের মালিকের সমীপে হাযির হতে হবে |

১৫৫. এ কল্যাণময় কেতাব আমিই (তোমাদের জন্যে) নাযিল করেছি, অতএব তোমরা এর অনুসরণ করো এবং (কেতাবের শিক্ষানুযায়ী) তোমরা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করো, হয়তো তোমাদের ওপর (দয়া ও) অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হবে |

১৫৬. (এখন) তোমরা আর একথা বলতে পারবে না যে, (আল্লাহর) কিতাব তো আমাদের আগের (ইহুদী ও খৃষ্টান এ) দুটো সম্প্রদায়কেই দেয়া হয়েছিলো, (তাই) আমরা সেসব কিতাবের পাঠ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলাম।

১৫৭. অথবা একথা বলারও কোনো অস্ত্রহাত পাবে না যে, যদি (ইহুদী খৃস্টানদের মতো) আমাদেরও কোনো কিতাব দেয়া হতো, তা হলে আমরা তো তাদের চাইতে বেশী সৎপথের অনুসারী হতে পারতাম, (আজ) তোমাদের কাছে (সত্যিই) তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ, হেদায়াত ও রহমত (সর্বস্ব কিতাব) এসেছে (তোমরা এর অনুসরণ করো), তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে, যে আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করবে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে (জেনে রেখো), যারাই এভাবে আমার আয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অচিরেই আমি তাদের এ জঘন্য আচরণের জন্যে এক নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দেবো |

১৫৮. তারা কি (সে দিনের) প্রতীক্ষা করছে যে, তাদের কাছে (আসমান থেকে আল্লাহ তায়ালার) ফেরেশতা নাযিল হবে, কিংবা স্বয়ং তোমাদের মালিকই তাদের কাছে এসে (তাদের হাতে কিতাব দিয়ে) যাবেন, অথবা মালিকের পক্ষ থেকে কোনো নিদর্শনের কোনো অংশ এসে (তাদের জান্নাত-জাহান্নাম দেখিয়ে দিয়ে) যাবে, (অথচ) যেদিন সত্যিই তোমার মালিকের (পক্ষ থেকে এমন) কোনো নিদর্শন আসবে, সেদিন তো (হবে কেয়ামতের দিন, তখন) যে ব্যক্তি এর আগে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি তার ঈমান দিয়ে ভালো কিছু অর্জন করেনি, তার জন্যে এ ঈমান আনাটা কোনোই কাজে আসবে না, (হে মোহাম্মদ,) তুমি (তাদের) বলো, (ঠিক আছে,) তোমরাও প্রতীক্ষা করো, আমিও প্রতীক্ষা করছি ।

১৫৯. যারা নিজেদের দ্বীনকে টুকরো টুকরো করে নিজেরাই নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের কোনো দায়িত্বই তোমার ওপর নেই, তাদের (ফয়সালার) ব্যাপারটা আল্লাহ তায়ালার হাতে, (যেদিন তারা তাঁর কাছে ফিরে যাবে) তখন তিনি তাদের বিস্তারিত বলবেন, তারা কে কি করছিলো |

১৬০. তোমাদের মাঝে কেউ যদি একটা সৎকাজ নিয়ে (আল্লাহ তায়ালার সামনে) আসে, তাহলে তার জন্যে দশ গুণ বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকবে, (অপরদিকে) যদি কেউ একটা গুনাহের কাজ নিয়ে আসে, তাকে (তার) একটাই প্রতিফল দেয়া হবে, (সেদিন) তাদের কারো ওপরই যুলুম করা হবে না |

১৬১. (হে মোহাম্মদ,) তুমি (তাদের) বলো, অবশ্যই আমার মালিক আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন সুপ্রতিষ্ঠিত জীবন বিধান, এটাই হচ্ছে ইবরাহীমের একনিষ্ঠ পথ, সে কখনো মোশরেকদের দলভুক্ত ছিলো না |

১৬২. তুমি (একান্ত বিনয়ের সাথে) বলো, অবশ্যই আমার নামায, আমার (আনুষ্ঠানিক) কাজকর্ম, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সব কিছুই সৃষ্টিকূলের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্যে |
১৬৩. তাঁর শরীক (সমকক্ষ) কেউ নেই, আর একথা বলার জন্যেই) আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে, (আত্মসমর্পণকারী) মুসলমানদের মধ্যে আমিই হচ্ছি সর্বপ্রথম |

১৬৪. তুমি (আরো) বলো, (এরপরও) আমি কি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো মালিক সন্ধান করে বেড়াবো? অথচ (আমি জানি) তিনিই সব কিছুর (নিরংকুশ) মালিক, (তাঁর বিধান হচ্ছে) প্রতিটি ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্যে এককভাবে নিজেই দায়ী হবে এবং কেয়ামতের দিন কোনো বোঝা বহনকারী ব্যক্তিই অন্য কোনো লোকের (পাপের) বোঝা বহন করবে না, অতঃপর (একদিন) তোমাদের সবাইকে তোমাদের (আসল) মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, সেদিন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সেসব কিছুই জানিয়ে দেবেন, যা নিয়ে (দুনিয়ার জীবনে) তোমরা মতবিরোধ করতে |

১৬৫. তিনিই সেই (মহান) সত্তা, যিনি তোমাদের এ যমীনে তাঁর খলিফা বানিয়েছেন এবং (এ কারণে তিনি) তোমাদের একজনকে অন্য জনের ওপর (কিছু বেশী) মর্যাদা দান করেছেন, এর উদ্দেশ্যে হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সবাইকে যা কিছু দিয়েছেন তা দিয়েই তিনি তোমাদের কাছ থেকে ( কৃতজ্ঞতার) পরীক্ষা নিতে চান; (জেনে রেখো,) তোমার মালিক শাস্তি দানের ব্যাপারে অত্যন্ত (কঠোর ও) তৎপর, (আবার) তিনিই বড়ো ক্ষমাশীল ও পরম দয়াময় |


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url