আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সুরা আল আ'রাফ-এর বাংলা অনুবাদ | সুরা আল আ'রাফ | Surah Al A`râf | الأعراف


সুরা আল আরাফের বাংলা অনুবাদ


সুরা আল আ'রাফ, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ২০৬, রুকু ২৪

সুরা আল আ'রাফ


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. আলিফ লাম মীম ছোয়া-দ

২. (হে নবী,) এ (মহা) গ্রন্থ তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে যেন তুমি এর দ্বারা (কাফেরদের) ভয় দেখাতে পারো, ঈমানদারদের জন্যে (এটি হচ্ছে) একটি স্মরণিকা, অতএব (এ ব্যাপারে) তোমার মনে যেন কোনো প্রকারের সংকীর্ণতা না থাকে |

৩. (হে মানুষ, এ কিতাবে) তোমাদের মালিকের কাছ থেকে তোমাদের কাছে যা কিছু পাঠানো হয়েছে তোমরা তার (যথাযথ) অনুসরণ করো এবং তা বাদ দিয়ে তোমরা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুসরণ করো না, (আসলে) তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে চলো |

৪. এমন কতো জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি তাদের ওপর আমার আযাব আসতো যখন তারা রাতের বেলায় ঘুমিয়ে থাকতো, কিংবা (আযাব আসতো মধ্য দিনে,) যখন তারা (আহারের পর) বিশ্রাম করতো |

৫. (আর এভাবে) যখন তাদের কাছে আমার আযাব আসতো, তখন তারা এছাড়া আর কিছুই বলতোনা যে, অবশ্যই আমরা ছিলাম যালেম |

৬. যাদের কাছে নবী পাঠানো হয়েছিলো অবশ্যই আমি তাদের জিজ্ঞেস করবো, (একইভাবে) রসূলদেরও আমি প্রশ্ন করবো (মানুষরা তাদের সাথে কি আচরণ করেছে) ।

৭. অতঃপর আমি (আমার নিজস্ব) জ্ঞান দ্বারা তাদের (প্রত্যেকের) কাছে তাদের কার্যাবলী খুলে খুলে বর্ণনা করবো, (কারণ) আমি তো (সেখানে) অনুপস্থিত ছিলাম না!

৮. সেদিন (পাপ-পুণ্যের) পরিমাপ ঠিকভাবেই করা হবে, (সেদিন) যাদের ওযনের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফল হবে।


৯. আর যাদের পাল্লা সেদিন হালকা হবে, তারা (হচ্ছে এমন সব লোক, যারা) নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে, কারণ এরা (দুনিয়ার জীবনে) আমার আয়াতসমুহ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতো ।

১০. আমিই তোমাদের (এই) যমীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছি, (এ জন্যে) আমি তাতে তোমাদের জন্যে সব ধরনের জীবিকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি; কিন্তু তোমরা (আমার এ নেয়ামতের) খুব কমই শোকর আদায় করে থাকো |

১১. আমিই তোমাদের বানিয়েছি, তারপর আমিই তোমাদের (বিভিন্ন) আকার-অবয়ব দান করেছি, অতঃপর আমি ফেরেশতাদের বলেছি, (সম্মানের নিদর্শন হিসেবে তোমরা) আদমকে সাজদা করো, তখন (আমার আদেশে) সবাই (আদমকে) সাজদা করলো, একমাত্র ইবলীস ছাড়া, সে কিছুতেই সাজদাকারীদের মধ্যে শামিল হলো না ।

১২. আল্লাহ তায়ালা বললেন (হে ইবলীস), আমি যখন (নিজেই) তোমাকে সাজদা করার আদেশ দিলাম, তখন কোন জিনিস তোমাকে সাজদা করা থেকে বিরত রাখলো? ইবলীস বললো, (আমি কেন তাকে সাজদা করবো), আমি তো তার চাইতে উত্তম, (কারণ) তুমি আমাকে বানিয়েছো আগুন থেকে, আর তাকে বানিয়েছো মাটি থেকে |

১৩. আল্লাহ তায়ালা বললেন, তুমি এক্ষুণি এখান থেকে, নেমে যাও! এখানে (বসে) অহংকার করবে, এটা তোমার পক্ষে কখনো সাজে না | যাও, (এখান থেকে) বেরিয়ে যাও, (কেননা) তুমি অপমানিতদেরই একজন |

১৪. সে বললো (হে আল্লাহ তায়ালা), তুমি আমাকে সেদিন পর্যন্ত (শয়তানী করার) অবকাশ দাও, যেদিন এ (আদম সন্তান)-দের পুনরায় (কবর থেকে) উঠানো হবে ।

১৫. আল্লাহ তায়ালা বললেন (হয়ে, যাও), যাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমিও তাদের একজন।

১৬. সে বললো, যেহেতু তুমি (এ আদমের জন্যেই) আমাকে গোমরাহীতে নিমজ্জিত করলে, (তাই) আমিও এদের (গোমরাহ করার) জন্যে অবশ্যই তোমার (প্রদর্শিত প্রতিটি) সরল পথে (-র বাঁকে বাঁকে ওঁত্ পেতে) বসে থাকবো |

১৭. অতঃপর (পথভ্রষ্ট করার জন্যে) আমি তাদের কাছে অবশ্যই আসবো, আসবো তাদের সামনের দিক থেকে, তাদের পেছন দিক থেকে, তাদের ডান দিক থেকে, তাদের বাম দিক থেকে, ফলে তুমি এদের অধিকাংশ লোককেই (তোমার) কৃতজ্ঞতা আদায়কারী (হিসেবে দেখতে) পাবে না |

১৮. আল্লাহ তায়ালা বললেন, বের হয়ে যাও তুমি এখান থেকে অপমানিত ও বিতাড়িত অবস্থায়; (আদম সন্তানের) যারাই তোমার অনুসরণ করবে, (তাদের এবং) তোমাদের সবাইকে দিয়ে নিশ্চয়ই আমি জাহান্নাম পূর্ণ করে দেবো |

১৯. (আল্লাহ তায়ালা আদমকে বললেন,) তুমি এবং তোমার সাথী জান্নাতে বসবাস করতে থাকো এবং এর যেখান থেকে যা কিছু চাও তা তোমরা খাও, কিন্তু এ গাছটির কাছেও যেয়ো না, (গেলে) তোমরা উভয়েই যালেমদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে |

২০. অতঃপর শয়তান তাদের দু'জনকেই কুমন্ত্রণা দিলো যেন সে তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহ, যা তাদের পরস্পরের কাছ থেকে গোপন করে রাখা হয়েছিলো প্রকাশ করে দিতে পারে, সে (তাদের আরো) বললো, তোমাদের মালিক তোমাদের এ গাছটির (কাছে যাওয়া) থেকে তোমাদের যে বারণ করেছেন, তার উদ্দেশ্যে এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, (সেখানে গেলে) তোমরা উভয়েই ফেরেশতা হয়ে যাবে, অথবা (এর ফলে) তোমরা (জান্নাতে) চিরস্থায়ী হয়ে যাবে ।

২১. সে তাদের কাছে কসম করে বললো, আমি অবশ্যই তোমাদের উভয়ের জন্যে (তোমাদের) হিতাকাংখীদের একজন |

২২. এভাবে সে এদের দুজনকেই প্রতারণার জালে আটকে ফেললো, অতঃপর (এক সময়) যখন তারা উভয়েই সে গাছ (ও তার ফল) আস্বাদন করলো, তখন তাদের লজ্জাস্থানসমুহ তাদের উভয়ের সামনে খুলে গেলো, (সাথে সাথে) তারা জান্নাতের কিছু লতা পাতা নিজেদের ওপর জড়িয়ে (নিজেদের গোপন স্থানসমূহ) ঢাকতে শুরু করলো, তাদের মালিক (তখন) তাদের ডাক দিয়ে বললেন, আমি কি তোমাদের উভয়কে এ গাছটির ( কাছে যাওয়া) থেকে নিষেধ করিনি এবং আমি কি তোমাদের একথা বলে দেইনি যে, শয়তান হচ্ছে তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য দুশমন?

২৩. (নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে) তারা দুজনেই বলে উঠলো, হে আমাদের মালিক, আমরা আমাদের নিজেদের ওপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের মাফ না করো তাহলে অবশ্যই আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্থদের দলে শামিল হয়ে যাবো |

২৪. আল্লাহ তায়ালা বললেন, (এবার) তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও, (আজ থেকে) তোমরা (ও শয়তান চিরদিনের জন্যে) একে অপরের দুশমন, সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে থাকার উদ্দেশ্যে তোমাদের জন্যে সেখানে বসবাসের জায়গা ও জীবন-সামগ্রীর ব্যবস্থা থাকবে |

২৫. আল্লাহ তায়ালা (আরো) বললেন, তোমরা সেখানেই জীবন যাপন করবে, সেখানেই তোমরা মৃত্যুবরণ করবে এবং সেখান থেকেই তোমাদের (পুনরায়) বের করে আনা হবে|

২৬. হে আদম সন্তানরা, আমি তোমাদের ওপর পোশাক (সংক্রান্ত বিধান) পাঠিয়েছি, যাতে করে (এর দ্বারা) তোমরা তোমাদের গোপন স্থানসমূহ ঢেকে রাখতে পারো এবং (নিজেদের) সৌন্দর্য্যও ফুটিয়ে তুলতে পারো, (তবে আসল) পোশাক হচ্ছে (কিন্তু) তাকওয়ার (আল্লাহর ভয় জাগ্রতকারী) পোশাক, আর এটাই হচ্ছে উত্তম (পোশাক) এবং এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহেরও একটি (অংশ, এর উদ্দেশ্যে হচ্ছে), যাতে করে মানুষরা এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে |

২৭. হে আদমের সন্তানরা, শয়তান যেভাবে তোমাদের পিতা মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে, তেমনি করে তোমাদেরও সে যেন প্রতারিত করতে না পারে, শয়তান তাদের উভয়ের দেহ থেকে তাদের পোশাক খুলে ফেলেছিলো, যাতে করে তাদের উভয়ের গোপন স্থানসমূহ উভয়ের কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, (মুলত) সে নিজে এবং তার সংগী-সাথীরা তোমাদের এমন সব স্থান থেকে দেখতে পায়, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না, যারা (আমাকে) বিশ্বাস করে না তাদের জন্যে শয়তানকে আমি অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি |

২৮. (এদের অবস্থা হচ্ছে,) তারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে তখন তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরও এর ওপর পেয়েছি, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই আমাদের এর নির্দেশ দিয়েছেন; (হে নবী,) তুমি বলো, আল্লাহ তায়ালা কখনো অশ্লীল কিছুর হুকুম দেন না, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে এমন কিছু বলছো, যার ব্যাপারে তোমরা কিছুই জানো না |

২৯. তুমি (আরো) বলো, আমার মালিক তো শুধু ন্যায়-ইনসাফেরই আদেশ দেন, (তাঁর আদেশ হচ্ছে,) প্রতিটি ইবাদাতেই তোমরা তোমাদের লক্ষ্য স্থির রাখবে, তাঁকেই তোমরা ডাকো, নিজেদের জীবন বিধানকে একান্তভাবে তাঁর জন্যে খালেস করে, যেভাবে তিনি তোমাদের (সৃষ্টির) শুরু করেছেন সেভাবেই তোমরা (আবার তার কাছে) ফিরে যাবে।

৩০. (অতঃপর) একদল লোককে তিনি সঠিক পথ দেখিয়েছেন আর দ্বিতীয় দলটির ওপর গোমরাহী ও বিদ্রোহ ভালোভাবেই চেপে বসেছে; এরাই (পরবর্তী পর্যায়ে) আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে শয়তানদের নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে, (এ সত্ত্বেও) তারা নিজেদের সঠিক পথের ওপর মনে করে |

৩১. হে আদম সন্তানরা, তোমরা প্রতিটি ইবাদাতের সময়ই তোমাদের সৌন্দর্য্য-মণ্ডিত পোশার গ্রহণ করো, তোমরা খাও এবং পান করো, তবে কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ তায়ালা কখনো অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না |

৩২. (হে নবী,) তুমি বলো, আল্লাহ তায়ালার (দেয়া) সৌন্দর্য্য মণ্ডিত পোশাক এবং পবিত্র খাবার তোমাদের জন্যে কে হারাম করেছে? এগুলো তো আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নিজেই তাঁর বান্দাদের জন্যে উদ্ভাবন করে এনেছেন; তুমি বলো, এগুলো হচ্ছে যারা ঈমান এনেছে তাদের পার্থিব পাওনা, (অবশ্য) কেয়ামতের দিন ও এগুলো ঈমানদারদের জন্যেই (নির্দিষ্ট থাকবে), এভাবেই আমি জ্ঞানী সমাজের জন্যে আমার আয়াতসমূহ খুলে খুলে বর্ণনা করি ।

৩৩. তুমি (এদের আরো) বলো, হ্যাঁ, আমার মালিক যা কিছু হারাম করেছেন তা হচ্ছে যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল কাজ, গুনাহ ও অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করা, (তিনি আরো হারাম করেছেন) আল্লাহর সাথে (অন্য কাউকে) শরীক করা, যার ব্যাপারে তিনি কখনো কোনো সনদ নাযিল করেননি এবং আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে তোমাদের এমন সব (বাজে কথা বলা, যার ব্যাপারে তোমাদের কোনোই জ্ঞান নেই |

৩৪. প্রত্যেক জাতির জন্যেই (তার উত্থান-পতনের) একটি সুনির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে, যখন তাদের সে মেয়াদ আসবে তখন তারা একদন্ড বিলম্বও করবে না, তেমনি তারা এক মুহূর্ত এগিয়েও আসবে না |

৩৫. হে আদম সন্তানরা (শুরুতেই আমি তোমাদের বলেছিলাম), যখনি তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে রসুলরা আসবে, যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াত পড়ে শোনাবে, তখন যারা (সে অনুযায়ী) আমাকে ভয় করবে এবং (নিজেদের) সংশোধন করে নেবে, তাদের কোনোই ভয় থাকবে না, তারা কখনো দুশ্চিন্তাগ্রস্থও হবে না।

৩৬. আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং বড়াই করে এ (সত্য) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে।

৩৭. যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে মিথ্যা আরোপ করে কিংবা তাঁর আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে? এরা হচ্ছে সেসব ব্যক্তি, যারা কেতাবে (বর্ণিত দুর্ভাগ্য থেকে) তাদের নিজেদের অংশ পেতে থাকবে, এমনিভাবে (তাদের মৃত্যুর সময়) তাদের কাছে আমার ফেরেশতারা যখন এসে হাযির হবে, তখন তারা বলবে (বলো), তারা (এখন) কোথায় যাদের তোমরা আল্লাহ তায়ালার বদলে ডাকতে, তারা বলবে আজ সবাই (আমাদের ছেড়ে) সরে গেছে, তারা (সেদিন) সবাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা সত্যিই কাফের ছিলো |

৩৮. আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তোমাদের আগে যেসব মানুষের দল, জ্বিনের দল গত হয়ে গেছে, তাদের সাথে তোমরাও আজ সবাই জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করো, এমনি করে যখন এক একটি জনগোষ্ঠী (জাহান্নামে) দাখিল হতে থাকবে, তখন তারা তাদের (আদর্শগত ভাই) বোনদের ওপর লানত দিতে থাকবে, এভাবে (লানত দিতে দিতে) যখন সবাই সেখানে গিয়ে একত্র হবে, তখন তাদের শেষের দলটি পূর্ববর্তী দলের ব্যাপারে বলবে, হে আমাদের মালিক, এরাই হচ্ছে সেসব লোক যারা আমাদের গোমরাহ করেছিলো, তুমি এদের জাহান্নামের শাস্তি দ্বিগুণ করে দাও, আল্লাহ তায়ালা বলবেন, (আজ) তোমাদের প্রত্যেকের (শাস্তি ) হবে দ্বিগুণ, কিন্তু তোমরা তো বিষয়টি জানোই না |

৩৯. তাদের প্রথম দলটি তাদের শেষের দলটিকে বলবে, (হ্যাঁ, আমরা যদি অপরাধী হয়েই থাকি, তবে) তোমাদেরও আমাদের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব ছিলো না (এ সময়ই আল্লাহর ঘোষণা আসবে), এখন তোমরা সবাই নিজ নিজ কর্মফলের বিনিময়ে (জাহান্নামের) আযাবের স্বাদ গ্রহণ করতে থাকো ।

৪০. অবশ্যই যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং দম্ভভরে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের জন্যে কখনো (রহমতভরা) আসমানের দুয়ার খুলে দেয়া হবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত একটি সুঁচের ছিদ্রপথ দিয়ে একটি উট প্রবেশ করতে না পারবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত এরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আমি এভাবেই অপরাধীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি ।

৪১. (সেদিন) তাদের জন্যে (নীচের) বিছানাও হবে জাহান্নামের, (আবার এই জাহান্নামই হবে) তাদের ওপরের আচ্ছাদন, এভাবেই আমি যালেমদের প্রতিফল দিয়ে থাকি |

৪২. (অপরদিকে) যারা (আমার ওপর) ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, আমি (তাদের) কারো ওপর তাদের সাধ্যের বাইরে দায়িত্বভার অর্পণ করি না, এ (নেক) লোকেরাই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে |

৪৩. তাদের মনের ভেতর (পরস্পরের বিরুদ্ধে) যে ঘৃণা-বিদ্বেষ (লুকিয়ে) ছিলো তা আমি (সেদিন) বের করে ফেলে দেবো, তাদের (জন্যে নির্দিষ্ট জান্নাতের) পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, (এসব দেখে) তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি আমাদের এ (পুরস্কারের স্থান)-টি দেখিয়েছেন | আল্লাহ তায়ালা আমাদের (হেদায়াতের) পথ না দেখালে আমরা নিজেরা কিছুতেই হেদায়াত পেতাম না, আমাদের মালিকের রসূলরা এক সত্য বিধান নিয়ে এসেছিলো । (এ সময়) তাদের জন্যে ঘোষণা দেয়া হবে, আজ তোমাদের সে (জান্নাতের) উত্তরাধিকারী করে দেয়া হলো, (আর এটা হচ্ছে সেসব কার্যক্রমের প্রতিফল) যা তোমরা দুনিয়ার জীবনে করে এসেছো |

৪৪. (এরপর) জান্নাতের অধিবাসীরা জাহান্নামী লোকদের ডেকে বলবে, আমরা তো আমাদের মালিকের (জান্নাত সংক্রান্ত) ওয়াদা সত্য পেয়েছি, তোমরা কি তোমাদের মালিকের ওয়াদাসমূহ সঠিক পাওনি? তারা বলবে, হ্যাঁ, অতঃপর তাদের মাঝে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে, যালেমদের ওপর আল্লাহ তায়ালার লানত হোক |

৪৫. যারা মানুষদের আল্লাহ তায়ালার পথ থেকে বিরত রাখতে চাইতো এবং তাকে শুধু বাঁকা করতে চাইতো, আর তারা শেষ বিচারের দিনকেও অস্বীকার করতো ।

৪৬. (জান্নাত ও জাহান্নাম,) তাদের উভয়ের মাঝে একটি দেয়াল থাকবে, (এই দেয়ালের) উঁচু স্থানের ওপর থাকবে (আরেক দলের) কিছু লোক, যারা (সেখানে আনীত) প্রতিটি ব্যক্তিকে তাদের নিজ নিজ চিহ্ন অনুযায়ী চিনতে পারবে, তারা জান্নাতের অধিবাসীদের ডেকে বলবে, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক| এরা (যদিও) তখন পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু (প্রতি মুহূর্তে) এরা সেখানে প্রবেশ করার আগ্রহ পোষণ করছে।

৪৭. অতঃপর যখন তাদের দৃষ্টি জাহান্নামের অধিবাসীদের (আযাবের) দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, (তখন) তারা বলবে, হে আমাদের মালিক, (তুমি) আমাদের এ যালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না |

৪৮. অতঃপর (পার্থক্য নির্ণয়কারী নে দেয়ালের) উঁচু স্থানে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা (জাহান্নামের) কিছু লোককে যাদের তারা কোনো (বিশেষ) লক্ষণের ফলে চিনতে পারবে ডেকে বলবে, (কই) তোমাদের দলবল কোনোটাই তো (আজ) কাজে এলো না, না (কাজে এলো) তোমাদের অহংকার, যা তোমরা করতে!

৪৯. (অপরদিকে আজ চেয়ে দেখো মোমেনদের প্রতি,) এরা কি সে সব লোক নয়, যাদের ব্যাপারে তোমরা কসম করে বলতে, আল্লাহ তায়ালা এদের তাঁর রহমতের কোনো অংশই দান করবেন না, (অথচ আজ এদেরকেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,) তোমরা সবাই জান্নাতে প্রবেশ করো, তোমাদের কোনোই ভয় নেই, না তোমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবে |

৫০. (এবার) জাহান্নামের অধিবাসীরা জান্নাতের লোকদের ডেকে বলবে, আমাদের ওপর সামান্য কিছু পানি (অন্তত) ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যে রেযেক দান করেছেন তার কিয়দংশ (আমাদের দাও), তারা বলবে, আল্লাহ তায়ালা (আজ) এ দুটি জিনিস (সে সব) কাফেরদের জন্যে হারাম করেছেন ।

৫১. যারা দ্বীনকে খেল-তামাশায় পরিণত করে রেখেছিলো এবং পার্থিব জীবন তাদের প্রতারণা (-র জালে) আটকে রেখেছিলো, তাদের আজ আমি (ঠিক) সেভাবেই ভুলে যাবো যেভাবে তারা (আমার) সামনা সামনি হওয়ার এ দিনটিকে ভুলে গেছে এবং আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে |

৫২. আমি তাদের কাছে এমন একটি কিতাব নিয়ে এসেছিলাম, যা আমি (বিশদ) জ্ঞান দ্বারা (সমৃদ্ধ করে) বর্ণনা করেছি, যারা (এর ওপর) ঈমান আনবে, এ কিতাব (হবে) তাদের জন্যে (সুস্পষ্ট) হেদায়াত ও রহমত |

৫৩. এরা কি (চূড়ান্ত কোনো) পরিণামের জন্যে অপেক্ষা করছে? যেদিন (সত্যি সত্যিই) সে পরিণাম তাদের কাছে আসবে, সেদিন যারা ইতিপূর্বে এ (দিনটি) কে ভুলে গিয়েছিলো তারা বলবে, অবশ্যই আমাদের মালিকের পক্ষ থেকে আমাদের রসূলরা ( এ দিনের) সত্য (প্রতিশ্রুতি) নিয়েই এসেছিলো, আমাদের জন্যে (আজ) কোনো সুপারিশকারী কি আছে, যারা আমাদের পক্ষে (আল্লাহর কাছে) কিছু বলবে, অথবা (এমন কি হবে যে,) আমাদের পুনরায় (দুনিয়ায়) ফিরিয়ে দেয়া হবে, যাতে আমরা (সেখানে গিয়ে) আগে যা করতাম তার চাইতে ভিন্ন ধরনের কিছু করে আসতে পারি, (মূলত) এরাই (হচ্ছে সেসব লোক যারা) নিজেরা নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে এবং (আল্লাহর ওপর) যা কিছু তারা মিথ্যা আরোপ করতো, তাও তাদের কাছ থেকে (আজ) হারিয়ে গেছে।

৫৪. অবশ্যই তোমাদের মালিক আল্লাহ তায়ালা, যিনি ছয় দিনে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশের ওপর অধিষ্ঠিত হন। তিনি রাতের পর্দাকে দিনের ওপর ছেয়ে দেন, দ্রুতগতিতে তা একে অন্যকে অনুসরণ করে, (তিনিই সৃষ্টি করেছেন) সুরুজ, চাঁদ ও তারাসমূহ, (মূলত) এর সব কয়টিকেই আল্লাহ তায়ালার বিধানের অধীন করে রাখা হয়েছে; জেনে রেখো, সৃষ্টি (যেহেতু) তাঁর, (সুতরাং তার ওপর) ক্ষমতাও চলবে একমাত্র তাঁর, সৃষ্টিকূলের মালিক আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত দয়ালু ও বরকতময় |

৫৫. (অতএব) তোমরা (একান্ত) বিনয়ের সাথে ও চুপিসারে শুধু তোমাদের মালিক (আল্লাহ তায়ালা)-কেই ডাকো, অবশ্যই তিনি (তাঁর রাজত্বে) যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের পছন্দ করেন না।

৫৬. (আল্লাহর) যমীনে (একবার) তাঁর শান্তি স্থাপনের পর (তাতে) তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, তোমরা ভয় ও আশা নিয়ে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকেই ডাকো, অবশ্যই আল্লাহর রহমত নেক লোকদের অতি নিকটে রয়েছে ।

৫৭. তিনিই মহান আল্লাহ, যিনি বাতাসকে (বৃষ্টি ও) রহমতের (আগাম) সুসংবাদবাহী হিসেবে (জনপদের দিকে) পাঠান; শেষ পর্যন্ত যখন সে বাতাস (পানির) ভারী মেঘমালা বহন করে (চলতে থাকে), তখন আমি তাকে একটি মৃত জনপদের দিকে পাঠিয়ে দেই, অতঃপর (সে) মেঘ থেকেই আমি পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তা দিয়ে ( যমীন থেকে) আমি সব ধরনের ফলমূল বের করে আনি, এভাবে আমি মৃতকেও (জীবন থেকে) বের করে আনবো, সম্ভবত (এ থেকে) তোমরা কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে |

৫৮. উৎকৃষ্ট যমীন (তা থেকে) তার মালিকের আদেশে তার (উৎকৃষ্ট) ফসলই উৎপন্ন হয়, আর যে যমীন বিনষ্ট হয়ে গেছে তা কঠোর পরিশ্রম ব্যতীত কিছুই উৎপন্ন করে না, এভাবেই আমি আমার নিদর্শনসমূহ স্পষ্ট করে বর্ণনা করি এমন এক জাতির জন্যে, যারা (আমার এসব নেয়ামতের) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে |

৫৯. আমি নুহকে তার জাতির কাছে পাঠিয়েছি, অতঃপর সে তাদের বললো, হে আমার জাতির লোকেরা, তোমরা আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব কবুল করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই, আমি তোমাদের ওপর এক কঠিন দিনের আযাবের আশংকা করছি।

৬০. তার জাতির নেতারা বললো (হে নুহ), আমরা দেখতে পাচ্ছি তুমি এক সুস্পষ্ট গোমরাহীতে (নিমজ্জিত ) রয়েছো |

৬১. সে বললো, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা, আমার সাথে কোনো গোমরাহী নেই, আমি তো হচ্ছি সৃষ্টিকূলের মালিক আল্লাহর পক্ষ থেকে (আসা) একজন রসুল ।

৬২. (আমার কাজ হচ্ছে) আমি আমার মালিকের বাণীসমূহ তোমাদের কাছে পৌঁছে দেবো এবং (সে মতে) তোমাদের শুভ কামনা করবো, (কেননা আখেরাত সম্পর্কে) আমি আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে এমন কিছু কথা জানি যা তোমরা জানো না |

৬৩. তোমরা কি এতে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছো যে, তোমাদের কাছে তোমাদেরই (মতো) একজন মানুষের ওপর আল্লাহ তায়ালার বাণী এসেছে, যাতে করে সে তোমাদের (আযাব সম্পর্কে) সতর্ক করে দিতে পারে, ফলে তোমরা (সময় থাকতে) সাবধান হবে এবং আশা করা যায় এতে করে তোমাদের ওপর দয়া করা হবে |

৬৪. অতঃপর তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো, আমি তাকে এবং তার সাথে যারা নৌকায় (আরোহণ করে) ছিলো, তাদের সবাইকে ( আযাব থেকে) উদ্ধার করেছি, আর যারা আমার আযাবসমূহকে মিথ্যা বলেছে তাদের আমি (পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছি; এরা ছিলো (আসলেই গোঁড়া ও) অন্ধ |

৬৫. আমি আ'দ জাতির কাছে (পাঠিয়েছিলাম) তাদেরই এক ভাই হৃদকে, সে (তাদের) বললো, হে আমার জাতি, তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব স্বীকার করো, তিনি ছাড়া তোমাদের দ্বিতীয় কোনো ইলাহ নেই; তোমরা কি (তাঁকে) ভয় করবে না?

৬৬. তার জাতির সরদাররা, যারা (তাকে) অস্বীকার করেছে, তারা বললো, আমরা তো দেখছি তুমি নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত আছো এবং আমরা মনে করি তুমি মিথ্যাবাদীদেরই একজন। ৬৭. সে বললো, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা, আমার সাথে কোনোরকম নির্বুদ্ধিতা জড়িত নেই, বরং আমি (হচ্ছি) সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে (আগত) একজন রসুল |

৬৮. (আমার দায়িত্ব হচ্ছে) আমি আমার মালিকের কাছ থেকে আসা) বাণীসমূহ তোমাদের কাছে পৌছে দেবো, তোমাদের জন্যে আমি একজন বিশ্বস্ত শুভাকাংখী |

৬৯. তোমরা কি (এটা দেখে) বিস্মিত হচ্ছো যে, তোমাদের কাছে তোমাদেরই (মতো) একজন মানুষের ওপর তোমাদের মালিকের কাছ থেকে তোমাদের (আযাবের) ভয় দেখানোর জন্যে (সুস্পষ্ট কিছু) বাণী এসেছে, স্মরণ করো, কিভাবে আল্লাহ তায়ালা নুহের পর তোমাদের এই যমীনে খলীফা বানিয়েছেন এবং অন্যান্য সৃষ্টির চাইতে তিনি তোমাদের বেশী ক্ষমতা দান করেছেন, অতএব (হে আমার জাতি), তোমরা আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহগুলো স্মরণ করো, আশা করা যায় তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারবে |

৭০. তারা (হূদকে) বললো, তুমি কি আমাদের কাছে এ জন্যেই এসেছো যে, আমরা কেবল এক আল্লাহর ইবাদাত করবো এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা যাদের বন্দেগী করেছে তাদের বাদ দিয়ে দেবো (এটাই যদি হয়), তাহলে নিয়ে এসো আমাদের কাছে সে (আযাবের) বিষয়টি, যার ব্যাপারে তুমি আমাদের (এতো) ভয় দেখাচ্ছো, যদি তুমি সত্যবাদী হও!

৭১. সে বললো, তোমাদের ওপর তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে আযাব ও ক্রোধ তো নির্ধারিত হয়েই আছে, তোমরা কি আমার সাথে সে (মিথ্যা মাবুদদের) নামগুলোর ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা (এমনি এমনিই) রেখে দিয়েছো, যার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কোনো রকম সনদ নাযিল করেননি, (অতএব) তোমরা অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করতে থাকবো |

৭২. অতঃপর (যখন আযাব এলো, তখন) আমি তাকে এবং তার সাথে যেসব (ঈমানদার) ব্যক্তি ছিলো, তাদের আমার রহমত দ্বারা (আযাব থেকে) বাঁচিয়ে দিলাম, আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে আমি তাদের নির্মূল করে দিলাম, (কেননা) এরা ঈমানদার ছিলো না ।

৭৩. সামুদ জাতির কাছে আমি (পাঠিয়েছিলাম) তাদেরই (এক) ভাই সালেহকে | সে (এসে) বললো, হে আমার জাতি, তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই, তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের কাছ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন এসে হাযির হয়েছে, (আর তোমাদের জন্যে) এ (নিদর্শনটি) হচ্ছে আল্লাহর উষ্ট্রী, একে তোমরা ছেড়ে দাও যেন তা আল্লাহ তায়ালার যমীনে (বিচরণ করে) খেতে পারে, তোমরা তাকে কোনো খারাপ মতলবে স্পর্শ করো না, তাহলে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কঠোর আযাব এসে তোমাদের পাকড়াও করবে |

৭৪. স্মরণ করো, যখন আল্লাহ তায়ালা আ'দ জাতির পর তোমাদের (দুনিয়ার) খলীফা বানিয়েছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালার যমীনে তিনি তোমাদের প্রতিষ্ঠা দান করেছেন, (যার) ফলে তোমরা এর সমতল ভূমি থেকে (মাটি নিয়ে তা দিয়ে) প্রাসাদ বানাচ্ছো, আর পাহাড় কেটে কেটে নিজেদের ঘর-বাড়ি তৈরী করতে পারছো, অতএব তোমরা আল্লাহ তায়ালার এ সব (জ্ঞান ও প্রকৌশল সংক্রান্ত) নেয়ামত স্মরণ করো এবং কোনো অবস্থায়ই আল্লাহ তায়ালার যমীনে বিপর্যয় ঘটিয়ো না |

৭৫. তার জাতির সেসব নেতৃস্থানীয় লোক, যারা নিজেদের গৌরবের বড়াই করতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রেণীর লোকদের যারা তাদের মধ্য থেকে তার ওপর ঈমান এনেছে বললো, তোমরা কি সত্যিই জানো, সালেহ আল্লাহ তায়ালার পাঠানো একজন রসূল; তারা বললো (হ্যাঁ), তার ওপর যে বাণী পাঠানো হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি ।

৭৬. অতঃপর (সে) অহংকারী লোকেরা বললো, তোমরা যা কিছুতে বিশ্বাস করো আমরা তা অস্বীকার করি।

৭৭. অতঃপর, তারা উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেললো এবং (এর দ্বারা) তারা তাদের মালিকের নির্দেশের স্পষ্ট বিরোধিতা করলো এবং তারা বললো, হে সালেহ (আমরা তো উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেললাম), যদি তুমি (সত্যিই) রসুল হয়ে থাকো তাহলে সে (আযাবের) বিষয়টা নিয়ে এসো, যার ওয়াদা তুমি আমাদের দিচ্ছো।

৭৮. অতঃপর এক প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করে ফেললো, ফলে তারা নিজেদের ঘরেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকলো |

৭৯. তারপর সে তাদের কাছ থেকে অন্যদিকে চলে গেলো এবং সে নিজের জাতিকে বললো, আমি আমার মালিকের (সতর্ক) বাণী তোমাদের কাছে পৌছে দিয়েছিলাম এবং তোমাদের জন্যে কল্যাণও কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা তো কল্যাণকামীদের পছন্দই করো না |

৮০. (আমি) লুতকেও (পাঠিয়েছিলাম), যখন সে তার জাতিকে বলেছিলো, তোমরা এমন এক অশ্লীলতার কাজ করছো, যা তোমাদের আগে সৃষ্টিকূলের আর কেউ (কখনো) করেনি |

৮১. তোমরা যৌন তৃপ্তির জন্যে নারীদের বাদ দিয়ে পুরুষদের কাছে যাও, তোমরা বরং হচ্ছো এক সীমালংঘনকারী জাতি |

৮২. তার জাতির (তখন) এ কথা বলা ছাড়া আর কোনো জবাবই ছিলো না যে, (সবাই মিলে) তাদের তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও, (কেননা) এরা হচ্ছে কতিপয় পাক পবিত্র মানুষ!

৮৩. অতঃপর (যখন আমার আযাব এলো, তখন) আমি তাকে এবং তার পরিবার-পরিজনকে উদ্ধার করলাম, তার সঙ্গীকে ছাড়া সে (আযাব কবলিত হয়ে) পেছনের লোকদের মধ্যে শামিল থেকে গেলো ।

৮৪. আমি তাদের ওপর প্রচন্ড (আযাবের) বৃষ্টি বর্ষণ করলাম, (হ্যাঁ) অতঃপর তুমি (ভালো করে) চেয়ে দেখো, অপরাধী ব্যক্তিদের পরিণাম (সেদিন) কী ভয়াবহ হয়েছিলো ।

৮৫. আর মাদইয়ানবাসীদের কাছে (আমি পাঠিয়েছিলাম) তাদেরই ভাই শোয়ায়বকে, সে তাদের বললো, হে আমার জাতি, তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই, তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন এসে গেছে, অতঃপর তোমরা (সে মোতাবেক) ঠিক ঠিক মতো পরিমাপ ও ওযন করো, মানুষদের (দেয়ার সময়) কখনো (কম দিয়ে তাদের) ক্ষতিগ্রস্থ করো না, আল্লাহ তায়ালার এ যমীনে (শান্তি ও) সংস্কার স্থাপিত হওয়ার পর তাতে তোমরা (পুনরায়) বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, তোমরা যদি (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান আনো তাহলে এটাই (হবে) তোমাদের জন্যে কল্যাণকর |

৮৬. প্রতিটি রাস্তায় তোমরা এজন্যে বসে থেকো না যে, তোমরা লোকদের ধমক (দেবে ভীত সন্ত্রস্ত করবে) এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের তোমরা আল্লাহ তায়ালার পথ থেকে বিরত রাখবে, আর সব সময় (অহেতুক) বক্রতা (ও দোষত্রটি) খুঁজতে থাকব, স্মরণ করে দেখো, যখন তোমরা সংখ্যায় ছিলে নিতান্ত কম, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেন এবং তোমরা (পুনরায়) চেয়ে দেখো, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিলো |

৮৭. আমাকে যে বাণী দিয়ে পাঠানো হয়েছে তার ওপর কোনো একটি জনগোষ্ঠী যদি ঈমান আনে, আর একটি দল যদি তার ওপর আদৌ ঈমান না আনে, তারপরও তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, যতোক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা নিজেই আমাদের মাঝে একটা ফয়সালা করে দেন, তিনিই হচ্ছেন উত্তম ফয়সালাকারী ।

৮৮. তার সম্প্রদায়ের কিছু নেতৃস্থানীয় লোক যারা বড়াই অহংকার করছিলো বললো, হে শোয়ায়ব, আমরা অবশ্যই তোমাকে এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেবো, অথবা তোমাদের অবশ্যই আমাদের জাতিতে ফিরে আসতে হবে, সে বললো, যদি আমরা ইচ্ছুক না হই তাহলেও (কি তাই হবে)?"

৮৯. সেখান থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের (একবার) মুক্তি দেয়ার পর যদি আমরা আবার তোমাদের জীবনাদর্শে ফিরে আসি, তাহলে আমরা (এর মাধ্যমে) আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করবো আমাদের প ক্ষে এটা কখনো সম্ভব নয় যে, আমরা সেখানে ফিরে যাবো, হাঁ আমাদের মালিক যদি আমাদের ব্যাপারে অন্য কিছু চান (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা), অবশ্যই আমাদের মালিকের জ্ঞান সব কিছুর ওপর ছেয়ে আছে . আমরা একান্তভাবে আল্লাহ তায়ালার ওপর নির্ভর কর, (এবং আমরা বলি,) হে আমাদের মালিক, আমাদের এবং আমাদের জাতির মাঝে তুমি (সঠিক একটা) ফয়সালা করে দাও, কারণ তুমিই হচ্ছো সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।

৯০. তার জাতির নেতৃস্থানীয় লোক যারা (আল্লাহ তায়ালার নবীকে) অস্বীকার করেছে, তারা (সে জাতির সাধারণ মানুষদের) বললো, তোমরা যদি শোয়ায়বের অনুসরণ করো তাহলে তোমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

৯১. (নবীর কথা অমান্য করার কারণে) একটা প্রচন্ড ভূকম্পন এসে তাদের (এমনভাবে) আঘাত করলো যে, অতঃপর দেখতে দেখতে তারা সবাই তাদের নিজ নিজ ঘরেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকলো।

৯২. যারা শোয়ায়বকে অমান্য করলো, তারা এমন ( - ভাবে ধ্বংস) হয়ে গেলো (দেখে মনে হয়েছে), এখানে কোনোদিন কেউ বসবাসই করেনি, (বস্তুত) তারাই সেদিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যারা শোয়ায়বকে অস্বীকার করেছে।

৯৩. এরপর সে (শোয়ায়ব) তাদের কাছ থেকে চলে গেলো, (যাবার সময়) সে বললো, হে আমার জাতি, আমি তোমাদের কাছে আমার মালিকের বাণীসমূহ পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং আমি (আ ন্তরিকভাবেই) তোমাদের কল্যাণ কামনা করেছিলাম, আমি কেন এমন সব মানুষের জন্যে (আজ) আফসোস করবো যারা আল্লাহকেই অস্বীকার করে!

৯৪. আমি কোনো জনপদে কোনো নবী পাঠিয়েছি অথচ সেই জনপদে মানুষদের অভাব ও কষ্ট দিয়ে পাকড়াও করিনি, এমনটি কখনো হয়নি, আশা করা গিয়েছিলো), এর ফলে তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে বিনয়াবনত হবে।

৯৫. অতঃপর আমি তাদের দুঃখ-কষ্টের জায়গাকে সচ্ছল অবস্থার দ্বারা বদলে দিয়েছি, এমনকি যখন তারা (আমার নেয়ামত দ্বারা) প্রাচুর্য লাভ করলো, তখন তারা (আমাকেই ভুলে বসলো এবং) বললো, সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের ওপরও এসেছে, অতঃপর আমি তাদের এমন আকস্মিকভাবে পাকড়াও করলাম যে, তারা টেরও পেলো না।

৯৬. অথচ যদি সেই জনপদের মানুষগুলো (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান আনতো এবং (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করতো, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-যমীনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তা না করে) তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো, সুতরাং তাদের কর্মকান্ডের জন্যে আমি তাদের (ভীষণভাবে) পাকড়াও করলাম।

৯৭. (এ) লোকালয়ের মানুষগুলো কি এতোই নির্ভয় হয়ে গেছে (তারা মনে করে নিয়েছে), আমার আযাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে!

৯৮. অথবা জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে ধরে নিয়েছে যে, আমার আযাব তাদের ওপর মধ্য দিনে এসে পড়বে না— যখন তারা খেল-তামাশায় মত্ত থাকবে।

৯৯. কিংবা তারা কি আল্লাহ তায়ালার কলা-কৌশল থেকেও নির্ভয় হয়ে গেছে, অথচ আল্লাহ তায়ালার কলা--কৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ জাতি ছাড়া অন্য কেউই নিশ্চিন্ত হতে পারে না।

১০০. (আগের) লোকদের চলে যাওয়ার পর (তাদের জায়গায়) যারা পরে দুনিয়ার উত্তরাধিকারী হয়েছে, তাদের কি এ বিষয়টি কখনো হেদায়াতের পথ দেখায় না যে, আমি ইচ্ছা করলে (যে কোনো সময়ই) তাদের অপরাধের জন্যে তাদের পাকড়াও করতে পারি এবং (এমনভাবে) তাদের দিলের ওপর মোহর মেরে দিতে পারি যে, তারা (সত্যের ডাক) শুনতেই পাবে না।

১০১. এই যে জনপদসমূহ, যাদের কিছু কিছু কাহিনী আমি তোমাকে শোনাচ্ছি, তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে রসূলরা এসেছিলো, কিন্তুতারা যে বিষয়টি এর আগে অস্বীকার করেছিলো, তার ওপর ঈমান আনলো না, আর এভাবেই আল্লাহ তায়ালা অবিশ্বাসী কাফেরদের অন্তরে মোহর মেরে দেন।

১০২. আমি এদের বেশী সংখ্যক মানুষকেই (আমার সাথে সম্পাদিত) প্রতিশ্রুতির পালনকারী হিসেবে পাইনি, বরং এদের অধিকাংশকেই আমি (বড়ো বড়ো অপরাধে) অপরাধী পেয়েছি।

১০৩. এদের (ধ্বংসের) পর আমি মূসাকে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ দিয়ে ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গের কাছে পাঠিয়েছি, কিন্তুতারাও (আমার) নিদর্শনসমূহের সাথে বাড়াবাড়ি করেছে, (আজ) তুমি দেখে নাও, (আমার যমীনে) বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন ছিলো।

১০৪. মূসা বললো, হে ফেরাউন, আমি অবশ্যই সৃষ্টিকূলের মালিকের পক্ষ থেকে পাঠানো একজন রসুল।

১০৫. এটা নিশ্চিত, আমি আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলবো না, আমি অবশ্যই তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছি, অতএব তুমি বনী ইসরাঈলদের (মুক্তি দিয়ে) আমার সাথে যেতে দাও!

১০৬. ফেরাউন বললো, তুমি যদি (সত্যিই তেমন) কোনো নিদর্শন এনে থাকো এবং তুমি যদি (তোমার দাবীতে) সত্যবাদী হও, তাহলে তা (সামনে) নিয়ে এসো!

১০৭. অতঃপর সে তার হাতের লাঠিটি মাটিতে নি ক্ষেপ করলো, সাথে সাথেই তা প্রকাশ্য একটি অজগরে পরিণত হয়ে গেলো।

১০৮. অতঃপর সে (বগল থেকে) তার হাত বের করলো, সাথে সাথে তা (উৎসাহী) দর্শকদের জন্যে চমকাতে লাগলো।

১০৯. (অবস্থা দেখে) ফেরাউনের জাতির প্রধান ব্যক্তিরা বললো, এ তো (দেখছি আসলেই) একজন সুন্দ যাদুকর!

১১০. (আসলে) এ ব্যক্তি তোমাদের সবাইকে তোমাদের (নিজেদের) দেশ থেকেই বের করে দিতে চায়, (এ পরিস্থিতিতে) তোমরা (আমাকে) কি পরামর্শ দিচ্ছো?

১১১. (অতঃপর) তারা ফেরাউনকে বললো, আপাতত তাকে এবং তার ভাইকে কিছু দিনের জন্যে এমনিই থাকতে দাও এবং (এ সুযোগে) তোমরা শহরে-বন্দরে (সরকারী) সংগ্রাহক পাঠিয়ে দাও।

১১২. যেন তারা দেশের সকল দক্ষ যাদুকরদের (অবিলম্বে) তোমার কাছে নিয়ে আসে।

১১৩. (সিদ্ধান্ত মোতাবেক) যাদুকররা যখন ফেরাউনের কাছে এলো, তখন তারা বললো, আমরা যদি (আজ মূসার মোকাবেলায়) বিজয়ী হই, তবে আমাদের জন্যে নিশ্চিত পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে তো!

১১৪. সে বললো, হাঁ (তা তো অবশ্যই) এবং তোমরাই হবে (দরবারের) ঘনিষ্ঠতম ব্যক্তিদের অন্যতম।

১১৫. (এবার) যাদুকররা বললো, হে মূসা, (যাদুর বাণ) তুমি আগে নিক্ষেপ করবে না আমরা আগে তা নিক্ষেপ করবো।

১১৬. সে বললো, তোমরাই (বরং) আগে নিক্ষেপ করো, অতঃপর তারা (তাদের বাণ) নিক্ষেপ করে মানুষদের দৃষ্টিশক্তির ওপর যাদু করে ফেললো, (এতে করে) তারা মানুষদের ভীত-আতংকিত করে তুললো, তারা (সেদিন সত্য সত্যই) বড়ো যাদুমন নিয়ে হাযির হয়েছিলো।

১১৭. অতঃপর আমি মূসার কাছে ওহী পাঠালাম এবং তাকে বললাম, এবার তুমি (যমীনে) তোমার লাঠিটি নিক্ষেপ করো, (নিক্ষিপ্ত হবার সাথে সাথেই) তা যাদুকরদের অলীক বানোয়াটগুলোকে গ্রাস করে ফেললো।

১১৮. অতঃপর সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো, আর তারা যা কিছু বানিয়ে এনেছিলো তা মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো।

১১৯. সেখানে তারা সবাই পরাভূত হলো এবং তারা লাঞ্ছিত হয়ে (ফিরে) গেলো।

১২০. অতঃপর (সত্যের সামনে) যাদুকরদের অবনত করে দেয়া হলো।

১২১. তারা (সবাই সমস্বরে) বলে উঠলো, আমরা সৃষ্টিকুলের মালিকের ওপর ঈমান আনলাম,

১২২. (যিনি) মূসা ও হারুনের মালিক।

১২৩. (ঘটনার এই আকস্মিক মোড় পরিবর্তন দেখে) ফেরাউন বললো, (একি!) আমি তোমাদের কোনো রকম অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তার ওপর ঈমান আনলে! (আসলে আমি বুঝতে পারলাম,) এ ছিলো তোমাদের সবার নিশ্চিত একটা ষড়যন্ত্র! (এ) নগরে (বসেই) তোমরা তা পাকিয়েছো, যাতে করে তার অধিবাসীদের তোমরা সেখান থেকে বের করে দিতে পারো, অচিরেই তোমরা (এ বিদ্রোহের পরিণাম) জানতে পারবে।

১২৪. আমি অবশ্যই তোমাদের একদিকের হাত ও অন্যদিকের পাগুলো কেটে ফেলবো, এরপর আমি তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াবো।

১২৫. তারা বললো, আমরা তো (একদিন) আমাদের মালিকের কাছে ফিরে যাবোই (তাই আমরা তোমার শাস্তির পরোয়া করি না)।

১২৬. তুমি আমাদের কাছ থেকে এ কারণেই (এই) প্রতিশোধ নিচ্ছো যে, আমাদের মালিকের নিদর্শনসমূহ, যা তাঁর কাছ থেকে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে, আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি, (আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি,) হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দাও এবং (তোমার) অনুগত বান্দা হিসেবে তুমি আমাদের মৃত্যু দিয়ো।

১২৭. ফেরাউনের জাতির সরদাররা তাকে বললো, তুমি কি মূসা ও তার দলবলকে এ যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্যে এমনিই ছেড়ে দিয়ে রাখবে এবং তারা তোমাকে ও তোমার দেবতাদের (এভাবে) বর্জন করেই চলবে? সে বললো (না, তা কখনো হবে না), আমি (অচিরেই) তাদের ছেলেদের হত্যা করে ফেলবো এবং তাদের মেয়েদের আমি জীবিত রাখবো, (নিসন্দেহে) আমি তাদের ওপর বিপুল ক্ষমতায় ক্ষমতাবান।

১২৮. মূসা এবার তার জাতিকে বললো, (তোমরা) আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাও এবং ধৈর্য্য ধারণ করো (মনে রেখো), অবশ্যই এ যমীন (হচ্ছে) আল্লাহ তায়ালার, তিনি নিজ বান্দাদের মাঝে যাকে চান তাকেই এ যমীনের মতা দান করেন, চূড়ান্ত সাফল্য তাদের জন্যেই— যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে।

১২৯. তারা (মূসাকে) বললো, তুমি আমাদের কাছে (নবী হয়ে) আসার আগেও আমরা নির্যাতিত হয়েছি, আর (এখন) তুমি আমাদের কাছে আসার পরও আমরা একইভাবে নির্যাতিত হচ্ছি, (এর কি কোনো শেষ হবে না?) মূসা বললো (হাঁ, হবে), খুব তাড়াতাড়িই সম্ভবত তোমাদের মালিক তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করে দেবেন এবং (এ) দুনিয়ায় তিনি তোমাদের তার স্থলাভিষিক্ত করবেন, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা দেখবেন তোমরা কিভাবে (তাঁর) কাজ করো!

১৩০. ক্রমাগত বেশ কয়েক বছর ধরে আমি ফেরাউনের লোকজনদের দুর্ভিক্ষ ও ফসলের স্বল্পতা দিয়ে আক্রান্ত করে রেখেছিলাম, (ভাবছিলাম) সম্ভবত তারা (কিছুটা হলেও) বুঝতে পারবে।

১৩১. যখন তাদের ওপর ভালো সময় আসতো তখন তারা বলতো, এ তো ছিলো আমাদের নিজেদেরই (পাওনা), আবার যখন দুঃসময় তাদের পেয়ে বসতো, তখন নিজেদের দুর্ভাগ্যের ভার তারা মূসা এবং তার সংগী-সাথীদের ওপরই আরোপ করতো, হাঁ, তাদের দুর্ভাগ্যের যাবতীয় বিষয় তো আল্লাহ তায়ালার হাতেই রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই (এ সম্পর্কে) অবহিত নয়।

১৩২. তারা (মূসাকে আরো) বললো, আমাদের ওপর যাদুর প্রভাব বিস্তার করার জন্যে তুমি যতো নিদর্শনই নিয়ে আসো না কেন, আমরা কখনো তোমার ওপর ঈমান আনবো না।

১৩৩. (এ ধৃষ্টতার জন্যে) অতঃপর আমি তাদের ওপর ঝড়-তুফান (দিলাম), ( পঙ্গপাল (পাঠালাম), উকুন (ছড়ালাম), ব্যাঙ (ছেড়ে দিলাম) ও রক্ত (-পাতজনিত বিপর্যয়) নাযিল করলাম, এর সবকয়টিই (তাদের কাছে এসেছিলো আমার এক একটা) সুস্পষ্ট নিদর্শন (হিসেবে, কিন্তু এ সত্ত্বেও) তারা অহংকার বড়াই করতেই থাকলো, আসলেই তারা ছিলো একটি অপরাধী জাতি।

১৩৪. যখনি তাদের ওপর কোনো বিপর্যয় আসতো, তখন তারা বলতো হে মূসা! তোমার প্রতি প্রদত্ত তোমার মালিকের প্রতিশ্রুতি মতো তুমি আমাদের জন্যে তোমার মালিকের কাছে দোয়া করো, যদি (এবারের মতো) আমাদের ওপর থেকে এ বিপদ দূর করে দাও, তাহলে অবশ্যই আমরা তোমার ওপর ঈমান আনবো এবং বনী ইসরাঈলদেরও তোমার সাথে যেতে দেবো।

১৩৫. অতঃপর যখনি তাদের ওপর থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে যে সময়টুক্ সে জন্যে নির্ধারিত ছিলো_ সে বালা-মসিবত আমি অপসারণ করে নিতাম, তখন সাথে সাথেই তারা ওয়াদা ভংগ করে ফেলতো।

১৩৬. অতঃপর আমি তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিলাম, তাদের আমি সাগরে ডুবিয়ে দিলাম, কেননা, তারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলো এবং (আমার) এ (শাস্তি) থেকে তারা উদাসীন হয়ে গিয়েছিলো।

১৩৭. এবার আমি (সত্যি সত্যিই) তাদের ক্ষমতার আসনে বসিয়ে দিলাম, যাদের (এতোদিন) দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো, (তাদের আমি) এ রাজ্যের পূর্ব-পশ্চিম (সহ সব কয়টি) প্রান্তের অধিকারী বানিয়ে দিলাম, যাতে আমি আমার প্রভূত কল্যাণ ছড়িয়ে দিয়েছি, (এভাবেই) বনী ইসরাঈলের ওপর প্রদত্ত তোমার মালিকের (প্রতিশ্রুতির) সেই কল্যাণবাণী সত্যে পরিণত হলো, কেননা তারা ধৈর্য্য ধারণ করেছিলো , ফেরাউন ও তার জাতির যাবতীয় শিল্পকর্ম ও উঁচু প্রাসাদ_যা তারা নির্মাণ করেছিলো, আমি সব কিছুই ধ্বংস করে দিলাম।

১৩৮. (ফেরাউনকে ডুবিয়ে মারার পর) আমি বনী ইসরাঈলদের সমুদ্র পার করিয়ে দিয়েছি, অতঃপর (সমুদ্রের ওপারে) তারা এমন একটি জাতির কাছে এসে পৌছালো, যারা (সব সময়) তাদের মূর্তিদের ওপর পূজার অর্ঘ্য দেয়ার জন্যে বসে থাকতো, (এদের দেখে বনী ইসরাঈলের) লোকেরা বললো, হে মূসা, তুমি আমাদের জন্যেও (এ ধরনের) একটি দেবতা বানিয়ে দাও, যেমন দেবতা রয়েছে এদের, (এ কথা শুনে) সে তাদের বললো, তোমরা হচ্ছো আসলেই এক মূর্খ জাতি।

১৩৯. এ লোকেরা যেসব কাজে লিপ্ত রয়েছে, তা (একদিন) ধ্বংস করে দেয়া হবে এবং এরা যা করছে তাও সম্পূর্ণ বাতিল (বলে গণ্য) হবে।

১৪০. মূসা (আরো) বললো, আমি কি তোমাদের জন্যে আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে অন্য একজন মাবুদ তালাশ করতে যাবো অথচ এই আল্লাহ তায়ালাই তোমাদের দুনিয়ার সব কিছুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন।

১৪১. (তা ছাড়া তোমাদের সে সময়ের কথা স্মরণ করা উচিত,) যখন আমি তোমাদের ফেরাউনের লোকজনদের কাছ থেকে মুক্ত করেছিলাম, তারা তোমাদের মর্মান্তিক শাস্তি দিতো, তারা তোমাদের পুত্র-সন্তানদের হত্যা করতো, আর তোমাদের মেয়েদের তারা জীবিত ছেড়ে দিতো, এতে তোমাদের জন্যে তোমাদের পরোয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এক মহা পরীক্ষা নিহিত ছিলো।

১৪২. মূসাকে (আমার কাছে ডাকার জন্যে) আমি তিরিশটি রাত নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম, (পরে) তাতে আরো দশ মিলিয়ে তা পূর্ণ করেছি, এভাবেই তার জন্যে তার মালিকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাতের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে, (যাত্রার প্রাক্কালে) মূসা তার ভাই হারুনকে বললো, (আমার অবর্তমানে) আমার লোকদের মাঝে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, তাদের (প্রয়োজনীয়) সংশোধন করবে, কখনো বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের কথামতো চলবে না।

১৪৩. যখন মূসা আমার সাক্ষাতের জন্যে (নির্ধারিত স্থানে) এসে পৌঁছালো এবং তাঁর মালিক তার সাথে কথা বললেন, তখন সে বললো, হে আমার মালিক, আমাকে (তোমার কুদরত) দেখাও, আমি তোমার দিকে তাকাই তিনি বললেন (না), তুমি কখনো আমাকে দেখতে পাবে না, তুমি বরং (অনতিদূরের) পাহাড়টির দিকে তাকিয়ে দেখো, যদি (আমার নূর দেখার পর) পাহাড়টি স্বস্থানে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তাহলে তুমি অবশ্যই (সেখানে) আমায় দেখতে পাবে, অতঃপর যখন তার মালিক পাহাড়ের ওপর (স্বীয়) জ্যোতি নিক্ষেপ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলো, (সাথে সাথেই) মূসা বেহুশ হয়ে গেলো, পরে যখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেলো তখন সে বললো, মহাপবিত্রতা তোমার (হে আল্লাহ), আমি তোমার কাছে তাওবা করছি, আর তোমার ওপর ঈমান আনয়নকারীদের মধ্যে আমিই (হতে চাই) প্রথম।

১৪৪. আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে মূসা, আমি মানুষের মাঝ থেকে তোমাকে আমার নবুওত ও আমার সাথে বাক্যালাপের মর্যাদা দিয়ে বাছাই করে নিয়েছি, অতএব আমি তোমাকে (হেদায়াতের) যা কিছু (বাণী) দিয়েছি তা (নিষ্ঠার সাথে) গ্রহণ করো এবং (এ জন্যে তুমি আমার) কৃতজ্ঞতা আদায় করো।

১৪৫. এই ফলকের মধ্যে আমি তার জন্যে সর্ববিষয়ের উপদেশমালা ও সব কিছুর বিস্তারিত বিবরণ লিখে দিলাম, অতএব একে (শক্ত করে) আঁকড়ে ধরো এবং তোমার জাতির লোকদের বলো, তারা যেন এর উৎকৃষ্ট অংশ গ্রহণ করে, , অচিরেই আমি তোমাদের (সেসব ধ্বংসপ্রাপ্ত) পাপীদের আস্তানা দেখাবো।

১৪৬. অচিরেই আমি সেসব মানুষের দৃষ্টি আমার (এসব) নিদর্শন থেকে (ভিন্ন দিকে) ফিরিয়ে দেবো, যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বাহাদুরী করে বেড়ায় (আসলে) এ লোকেরা যদি (অতীত ধ্বংসাবশেষের) সব কয়টি চিহ্নও দেখতে পায়, তবু তারা তার ওপর ঈমান আনবে না, যদি তারা সঠিক পথ দেখতেও পায়, তবু তারা (পথকে) পথ বলে গ্রহণ করবে না, যদি এর কোথাও কোনো বাঁকা পথ তারা দেখতে পায়, তাহলে তাকেই (অনুসরণযোগ্য) পথ হিসেবে গ্রহণ করবে, এটা এ কারণে যে, তারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে, এবং তারা এ (আযাব) থেকেও উদাসীন ছিলো।

১৪৭. যারা আমার আয়াতসমূহ ও পরকালে আমার সামনা সামনি হওয়ার বিষয়কে অস্বীকার করবে, তাদের সব কার্যকলাপই বিনষ্ট হয়ে যাবে, আর তারা (এ দুনিয়ায়) যা কিছু করবে তাদের তেমনিই প্রতিফল দেয়া হবে।

১৪৮. মূসার জাতির লোকেরা তার (তুর পর্বতে গমনের) পর নিজেদের অলংকার দিয়ে একটি গোঁ-বাছুর বানিয়ে নিলো, (তা ছিলো জীবনবিহীন) একটি দেহমাত্র_ যার আওয়ায ছিলো শুধু (গরুর) হাম্বা রব এ লোকেরা কি দেখতে পায় না যে, সে (দেহ)-টি তাদের সাথে কোনো কথা বলে না, না সেটি তাদের কোনো পথের দিশা দেয়, কিন্তু এ সত্ত্বেও তারা সেটিকে (মাবুদ বলে) গ্রহণ করলো, তারা ছিলো (আসলেই) যালেম।

১৪৯. অতঃপর যখন তারা অনুতপ্ত হলো এবং (নিজেরা) এটা দেখতে পেলো যে, তারা গোমরাহ হয়ে গেছে, তখন তারা বললো, আমাদের মালিক যদি আমাদের ওপর দয়া না করেন এবং (গো-বাছুরকে মাবুদ বানানোর জন্যে ) যদি তিনি আমাদের ক্ষমা না করেন, তাহলে আমরা নিশ্চিত ধ্বংস হয়ে যাবো।"

১৫০. (কিছু দিন পর) মুসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের লোকজনের কাছে ফিরে এলো, তখন সে (এসব কথা শুনে) বললো, আমার (তূর পর্বতে যাওয়ার পর তোমরা কি জঘন্য কাজই না করেছো! তোমরা কি তোমাদের মালিকের কাছ থেকে (কোনো পরিষ্কার) আদেশ আসার আগেই (তোমরা আল্লাহর আদেশের ব্যাপারে) তাড়াহুড়া (শুরু) করলে! (রাগে ও ক্ষোভে) সে ফলকগুলো ফেলে দিলো এবং তার ভাইর মাথা (-র চুল) ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে আনলো, (মূসাকে লক্ষ্য করে) সে বললো, হে আমার মায়ের ছেলে (আমার সহোদর ভাই), এ জাতির লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে দিতে চেয়েছিলো, তারা (এক পর্যায়ে) আমাকে তো মেরেই ফেলতে চেয়েছিলো, তুমি (আজ) আমার সাথে এমন কোনো আচরণ করো না যা শত্রুদের আনন্দিত করবে, আর তুমি আমাকে কখনো যালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত করো না।

১৫১. সে (মুসা) বললো, হে আমার মালিক, আমাকে ও আমার ভাইকে তুমি মাফ করে দাও এবং তুমি আমাদের তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল করে নাও, তুমিই সবচাইতে বড়ো দয়াবান।

১৫২. (আল্লাহ তায়ালা মুসাকে বললেন, হাঁ,) যেসব লোক গরুর বাছুরকে মাবুদ বানিয়েছে, অচিরেই তাদের ওপর তাদের মালিকের পক্ষ থেকে 'গযব আসবে, আর দুনিয়ার জীবনেও (তাদের ওপর আসবে) অপমান এবং লাঞ্ছনা, আল্লাহ তায়ালার নামে মিথ্যা কথা রটনাকারীদের আমি এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি।

১৫৩. যেসব লোক অন্যায় কাজ করেছে, এরপর তারা তাওবা করেছে এবং (যথাযথ) ঈমান এনেছে, নিশ্চয়ই এ (যথার্থ) তাওবার পর তোমার মালিক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু (হিসেবে তাদের সাথে আচরণ করবেন)।

১৫৪. পরে যখন মূসার ক্রোধ (কিছুটা) প্রশমিত হলো, তখন সে (তাওরাতের) ফলকগুলো তুলে নিলো, তার পাতায় হেদায়াত ও রহমত (সম্বলিত কথাবার্তা লিখিত) ছিলো এমন সব লোকের জন্যে, যারা তাদের মালিককে ভয় করে।

১৫৫. মূসা তার সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে (এবার) সত্তর জন লোককে আমার নির্ধারিত সময়ে সমবেত হবার জন্যে বাছাই করে নিলো, যখন এক প্রচন্ড ভূকম্পন এসে তাদের আক্রমণ করলো (তখন) মূসা বললো, হে আমার মালিক, তুমি চাইলে তাদের সবাইকে ও আমাকে আগেই ধ্বংস করে দিতে পারতে (আজ) আমাদের মধ্যকার কয়েকটি নির্বোধ মানুষ যে আচরণ করেছে, (তার জন্যে) তুমি কি আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দেবে! অথচ এ ব্যাপারটা তোমার একটা পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়, এ (পরীক্ষা) দিয়ে যাকে চাও তাকে তুমি বিপথগামী করো, আবার যাকে চাও তাকে সঠিক পথও তো দেখাও! তুমি হচ্ছো আমাদের অভিভাবক, অতএব তুমি আমাদের মা ফ করে দাও, আমাদের ওপর তুমি দয়া করো, কেননা তুমিই হচ্ছো সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমার আধার।

১৫৬. তুমি আমাদের জন্যে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ লিখে দাও, হেদায়াতের জন্যে আমরা তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি, আল্লাহ তায়ালা বললেন (হাঁ), আমার শাস্তি আমি যাকে ইচ্ছা তাকেই দেই, আর আমার দয়া তো (আসমান-যমীনের) সবকয়টি জিনিসকেই পরিবেষ্টন করে রেখেছে, আমি অবশ্যই তা লিখে দেবো এমন লোকদের জন্যে, যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, যারা যাকাত আদায় করে, (সর্বোপরি) যারা আমার আয়াতসমূহের ওপর ঈমান আনে।

১৫৭. যারা এই বার্তাবাহক নিরক্ষর রসূলের অনুসরণ করে চলে- যার উল্লেখ তাদের (কিতাব) তাওরাত ও ইনজীলেও তারা দেখতে পায়, যে (নবী) তাদের ভালো কাজের আদেশ দেয়, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, যে তাদের জন্যে যাবতীয় পাক জিনিসকে হালাল ও নাপাক জিনিসসমূহকে তাদের ওপর হারাম ঘোষণা করে, তাদের ঘাড় থেকে (মানুষের গোলামীর) যে বোঝা ছিলো তা সে নামিয়ে দেয় এবং (মানুষের চাপানো) যেসব বন্ধন তাদের গলার ওপর (ঝুলানো) ছিলো তা সে খুলে ফেলে, অতঃপর যারা তাঁর ওপর ঈমান আনে, যারা তাকে সাহায্য সহযোগিতা করে, (সর্বোপরি) তার সাথে (কোরআনের) যে আলো পাঠানো হয়েছে তার অনুসরণ করে, তারাই হচ্ছে সফলকাম।

১৫৮. (হে মোহাম্মদ,) তুমি বলো, হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার কাছে আল্লাহ তায়ালার রসুল (হিসেবে এসেছি), আল্লাহ তায়ালা যিনি আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র মালিক, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, তিনিই জীবন দান করেন, তিনিই মৃত্যুঘটান, অতএব তোমরা (সেই) মহান আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনো, তাঁর বার্তাবাহক নিরক্ষর রসূলের ওপরও তোমরা ঈমান আনো, যে (রসূল নিজেও) আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর বাণীতে বিশ্বাস করে এবং তোমরা তাঁকে অনুসরণ করো, আশা করা যায় তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পাবে।

১৫৯. মূসার জাতির মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় আছে, যারা (অন্যদের) সত্যের পথ দেখায় এবং নিজেরাও সে অনুযায়ী ইনসাফ করে।

১৬০. আমি তাদের বারোটি গোত্রে ভাগ করে তাদের স্বতন্ত্র দলে পরিণত করে দিয়েছি, মূসার সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন তার কাছে পানি চাইলো, তখন আমি মূসার কাছে ওহী পাঠালাম, তুমি তোমার হাতের লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করো, অতঃপর তা থেকে বারোটি ঝর্ণাধারা উদ্ভূত হলো, প্রত্যেক দল তাদের (নিজেদের) পানি পান করার স্থান চিনে নিলো, আমি তাদের ওপর মেঘের ছায়াও বিস্তার করে দিলাম, তাদের কাছে 'মান' ও 'সালওয়া' (নামক উৎকৃষ্ট খাবার) পাঠালাম, (তাদের আমি এও বললাম,) তোমাদের আমি যেসব পবিত্র জিনিস দান করেছি তা তোমরা খাও, (আমার কৃতজ্ঞতা আদায় না করে) তারা আমার ওপর কোনো যুলুম করেনি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে।

১৬১. (সে সময়ের কথাও স্মরণ করো,) যখন তাদের বলা হয়েছিলো, তোমরা এই জনপদে গিয়ে বসবাস করো এবং সেখান থেকে যা কিছু চাও তোমরা আহার করো এবং বলো (হে মালিক), আমরা তোমার কাছে ক্ষমা চাই, আর (যখনি সেই) জনপদের দ্বারপথ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে, (তখন) সাজদাবনত অবস্থায় প্রবেশ করবে, আমি তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবো, আমি অচিরেই উত্তম লোকদের অতিরিক্ত দান করবো।

১৬২. কিন্তু তাদের মধ্যে যারা যালেম ছিলো, তারা তাদের যা (করতে) বলা হয়েছিলো তা সম্পূর্ণ বদলে দিয়ে ভিন্ন কথা বললো, তাই আমিও তাদের এ যুলুমের শাস্তি হিসেবে তাদের ওপর আসমান থেকে আযাব পাঠালাম।

১৬৩. তাদের কাছ থেকে সেই জনপদের কথা জিজ্ঞেস করো, যা ছিলো সাগরের পাড়ে (অবস্থিত)। যখন সেখানকার মানুষরা শনিবারে (আল্লাহ তায়ালার বেঁধে দেয়া) সীমালংঘন করতো, (আসলে) শনিবারেই (সাগরের) মাছগুলো তাদের কাছে উঁচু হয়ে পানির উপরিভাগে (ভেসে) আসতো এবং শনিবার ছাড়া অন্য কোনোদিন তা আসতো না, (বস্তুত) তাদের অবাধ্যতার কারণেই আমি তাদের অনুরূপ পরীক্ষা নিচ্ছিলাম।

১৬৪. (আরো স্মরণ করো,) যখন তাদের একদল লোক এও বলছিলো, তোমরা এমন একটি দলকে কেন উপদেশ দিতে যাচ্ছো, যাদের আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করতে, অথবা (গুনাহের জন্যে) যাদের কঠোর শাস্তি দিতে যাচ্ছেন, তারা বললো, এটা হচ্ছে তোমাদের মালিকের দরবারে (নিজেদের) একটা ওযর পেশ করা (যে, আমরা উপদেশ দিয়েছি)। হতে পারে, তারা এর ফলে সাবধান হবে।

১৬৫. অতঃপর যা তাদের (বার বার) স্মরণ করানো হচ্ছিলো তা তারা সম্পূর্ণ ভুলে গেলো, তখন আমি (সে দল থেকে) এমন লোকদের উদ্ধার করলাম, যারা নিজেরা গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকতো, আর কঠিন শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করলাম তাদের যারা যুলুম করেছে, তাদের নিজেদের গুনাহর জন্যে (আমি তাদের আযাব দিয়েছিলাম)।

১৬৬. তাদের যেসব (ঘৃণিত) কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছিলো, যখন তারা তা (ধৃষ্টতার সাথে) করে যাচ্ছিলো, তখন আমি তাদের বললাম, এবার তোমরা সবাই লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।

১৬৭. (স্মরণ করো,) যখন তোমার মালিক (ইহুদীদের উদ্দেশে) ঘোষণা দিলেন, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত এ জাতির ওপর এমন লোকদের (শক্তিধর করে) পাঠাতে থাকবেন, যারা তাদের নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দিতে থাকবে, (একথা) নিশ্চিত, তোমার মালিক (যেমন) সত্বর শাস্তি দান করেন, (তেমনি) তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

১৬৮. আমি তাদের দলে দলে বিভক্ত করে যমীনে ছড়িয়ে দিয়েছি, তাদের মধ্যে কিছু নেককার মানুষ (ছিলো), আবার তাদের কিছু (ছিলো) এর চাইতে ভিন্ন ধরনের, ভালো-মন্দ (উভয়) অবস্থার (সম্মুখীন) করে আমি তাদের পরীক্ষা নিয়েছি এ আশায় যে, হয়তো তারা (কখনো হেদায়াতের পথে) প্রত্যাবর্তন করবে।

১৬৯. (কিন্তু) তাদের (অযোগ্য) উত্তরসুরিরা (একের পর এক) এ যমীনে উত্তরাধিকারী হলো, তারা আল্লাহ তায়ালার কেতাবেরও উত্তরাধিকারী হলো, তারা এ দুনিয়ার ধন-সম্পদ করায়ত্ত করে নেয়, (অপরদিকে মূর্খের মতো) বলতে থাকে, আমাদের (শেষ বিচারের দিন) মাফ করে দেয়া হবে, কিন্তু (অর্জিত সম্পদের) অনুরূপ সম্পদ যদি তাদের কাছে এসে পড়ে, তারা সাথে সাথেই তা হস্তগত করে নেয়, (অথচ) তাদের কাছ থেকে আল্লাহ তায়ালার কেতাবের এ প্রতিশ্রুতি কি নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ তায়ালা সম্বন্ধে সত্য ছাড়া কিছু বলবে না! আল্লাহ তায়ালার সেই কেতাবে যা আছে তা তো তারা (নিজেরা বহুবার) অধ্যয়নও করেছে, আর পরকালীন ঘরবাড়ি! (হাঁ) যারা (আল্লাহকে) ভয় করে তাদের জন্যে তো তাই হচ্ছে উত্তম (নিবাস), তোমরা কি (এ বিষয়টি) অনুধাবন করো না ?

১৭০. অপরদিকে যারা আল্লাহর কেতাবকে (কঠোরভাবে) আঁকড়ে ধরে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে (তারা জানে), আমি কখনো সংশোধনকারীদের বিনিময় নষ্ট করি না।

১৭১. যখন আমি তাদের (মাথার) ওপর পাহাড়কে উঁচু করে রেখেছিলাম, মনে হচ্ছিলো তা যেন একটি ছায়া, তারা তো ধরেই নিয়েছিলো, তা বুঝি (এখনি) তাদের ওপর পড়ে যাবে (আমি তাদের বললাম,) তোমাদের আমি (হেদায়াত সম্বলিত) যে কিতাব দিয়েছি তা কঠোরভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তাতে যা কিছু আছে তা (বার বার ) স্মরণ করো, (এর ফলে) আশা করা যায় তোমরা বেঁচে থাকতে পারবে।

১৭২. (তোমরা স্মরণ করো,) যখন তোমাদের মালিক আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের (পরবর্তী) সন্তান- সন্ততিদের বের করে এনেছেন এবং তাদের নিজেদের ওপর (এ মর্মে আনুগত্যের) স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন যে, আমি কি তোমাদের মালিক নই? তারা (সবাই) বললো, হাঁ নিশ্চয়ই, আমরা (এর ওপর) সাক্ষ্য দিলাম, (এর উদ্দেশ্য ছিলো) যেন কেয়ামতের দিন তোমরা একথা বলতে না পারো যে, আমরা এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম।

১৭৩. কিংবা (একথাও যেন না) বলো যে, আল্লাহর সাথে শেরেক তো আমাদের বাপ-দাদারা আগে করেছে আর আমরা তো ছিলাম তাদের পরবর্তী বংশধর, বাতিলপন্থীদের কার্যক্রমের জন্যে কি তুমি আমাদের ধ্বংস করবে?

১৭৪. এভাবেই আমি (অতীতের) দৃষ্টান্তসমূহ তাদের কাছে খোলাখুলি বর্ণনা করি, সম্ভবত এরা (সোজা পথে) ফিরে আসবে।

১৭৫. (হে মোহাম্মদ,) তুমি তাদের কাছে (এমন) একটি মানুষের কাহিনী (পড়ে) শোনাও, যার কাছে আমি (নবীর মাধ্যমে) আমার আয়াতসমূহ নাযিল করেছিলাম, সে তা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, অতঃপর শয়তান তার পিছু নেয় এবং সে সম্পূর্ণ গোমরাহ লোকদের দলভুক্ত হয়ে পড়ে।

১৭৬. (অথচ) আমি চাইলে তাকে এ (আয়াতসমূহ) দ্বারা উচ্চ মর্যাদা দান করতে পারতাম, কিন্তুসে তো (ঊর্ধমুখী আসমানের বদলে) নিম্নমুখী যমীনের প্রতিই আসক্ত হয়ে পড়ে এবং (পার্থিব) কামনা-বাসনার অনুসরণ করে। তার উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের উদাহরণের মতো, যদি তুমি তাকে দৌড়াতে থাকো তবু সে (জিহ্বা বের করে) হাঁপাতে থাকে, আবার তোমরা সেটিকে ছেড়ে দিলেও সে (জিহ্বা ঝুলিয়ে) হাঁপাতে থাকে, এ হচ্ছে তাদের দৃষ্টান্ত যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে, এ কাহিনীগুলো (তাদের) তুমি পড়ে শোনাও, হয়তো বা তারা চিন্তা-গবেষণা করবে।

১৭৭. যে সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার নিদর্শনসমূহ মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে, তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করে আসছে, তাদের উদাহরণ কতোই না নিকৃষ্ট !

১৭৮. আল্লাহ তায়ালা যাকে পথ দেখান সে (সঠিক) পথ প্রাপ্ত হবে, আবার যাকে তিনি গোমরাহ করেন তারা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ (হয়ে পড়ে)।

১৭৯. বস্তুত বহু সংখ্যক মানুষ ও জ্বিন (আছে, যাদের) আমি জাহান্নামের জন্যেই পয়দা করেছি, তাদের কাছে যদিও (বুঝার মতো) দিল আছে, কিন্তুতা দিয়ে তারা চিন্তা করে না, তাদের কাছে (দেখার মতো) চোখ থাকলেও তারা তা দিয়ে (সত্য) দেখে না, আবার তাদের কাছে (শোনার মতো) কান আছে, কিন্তুতারা সে কান দিয়ে (সত্য কথা) শোনে না, (আসলে) এরা হচ্ছে কতিপয় জন্তু-জানোয়ারের মতো, বরং (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) তাদের চাইতেও এরা বেশী প্রথভ্রষ্ট, এসব লোকেরা (দারুণ) উদাসীন।

১৮০. আল্লাহ তায়ালার জন্যেই যাবতীয় সুন্দর নামসমূহ (নিবেদিত), অতএব তোমরা সে সব ভালো নামেই তাঁকে ডাকো এবং সেসব লোকের কথা ছেড়ে দাও যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়, যা কিছু তারা (দুনিয়ার জীবনে) করে এসেছে, অচিরেই তার যথাযথ ফল তারা পাবে।

১৮১. আমি যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের (মানুষ ও জ্বিনদের) মাঝে (আবার) এমন একটি দল আছে, যারা (মানুষকে) সঠিক পথের দিকে ডাকে এবং (সে মতে) নিজেরাও (নিজেদের জীবনে) ইনসাফ কায়েম করে।

১৮২. যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, ক্রমে ক্রমে আমি তাদের এমনভাবে (ধ্বংসের দিকে ঠেলে) নিয়ে যাবো, তারা (তা) টেরও পাবে না।

১৮৩. আমি তাদের (বিদ্রোহের) জন্যে অবকাশ দিয়ে রাখবো এবং (এ ব্যাপারে) আমার কৌশল (কিন্তু) অত্যন্ত শক্ত।

১৮৪. তারা কি কখনো চিন্তাকরে দেখে না! তাদের সাথী (মোহাম্মদ) কোনো পাগল নয়, সে তো হচ্ছে (আযাবের) একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।

১৮৫. তারা কি আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের (বিষয়টির) দিকে কখনো তাকিয়ে দেখে না এবং তাকিয়ে দেখে না আল্লাহ তায়ালা এখানে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন (তার প্রতি এবং এর প্রতিও যে,) তাদের (অবস্থানের) মেয়াদও হয়তো নিকটবর্তী হয়ে এসেছে, এর পর আর কোন্ কথা আছে যা বললে এরা ঈমান আনবে?

১৮৬. আল্লাহ তায়ালা যাকে পথহারা করে দেন তাকে পথে আনার আর (দ্বিতীয়) কেউই নেই, আল্লাহ তায়ালা তো তাদের (সবাইকেই) তাদের অবাধ্যতায় উদ্ভ্রান্ত মতো ঘুরে বেড়ানোর জন্যে ছেড়ে দেন।

১৮৭. তারা তোমার কাছে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, এ দিনটি কখন সংঘটিত হবে, তুমি (তাদের) বলো, এ জ্ঞান তো (রয়েছে) আমার মালিকের কাছে, এর সময় আসার আগে তিনি তা প্রকাশ করবেন না, (তবে) আকাশমন্ডল ও যমীনের জন্যে সেদিন তা হবে একটি ভয়াবহ ঘটনা, এটি তোমাদের কাছে একান্ত আকস্মিকভাবেই, তারা (এ প্রশ্নটি এমনভাবে) জিজ্ঞেস করে যে, মনে হয় তুমি বুঝি বিষয়টি সম্পর্কে সব কিছু জানো, (তাদের) বলো, কেয়ামতের জ্ঞান তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই (এ সত্যটুক) জানে না।

১৮৮. তুমি (আরো) বলো, আমার নিজের ভালো-মন্দের মালিকও তো আমি নই, তবে আল্লাহ তায়ালা যা চান তাই হয়, যদি আমি অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতাম, তাহলে আমি (নিজের জন্যে সে জ্ঞানের জোরে) অনেক ফায়দাই হাসিল করে নিতে পারতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না, আমি তো শুধু (একজন নবী, জাহান্নামের) সতর্ককারী ও (জান্নাতের) সুসংবাদবাহী মাত্র, শুধু সে জাতির জন্যে যারা আমার ওপর ঈমান আনে।

১৮৯. তিনিই আল্লাহ তায়ালা, যিনি তোমাদের একটি প্রাণ থেকে পয়দা করেছেন এবং (পরবর্তী পর্যায়ে) তার থেকে তিনি তার জুড়ি বানিয়েছেন, যেন তার (জড়ির) কাছে (গিয়ে) সে পরম শান্তি লাভ করতে পারে, অতঃপর যখন (পুরুষ) সাথীটি (তার) মহিলা সাথীটিকে (দৈহিক প্রয়োজনের জন্যে) ঢেকে দিলো, তখন মহিলা সাথীটি এক লঘু গর্ভ ধারণ করলো (এবং প্রথম দিকে) সে এ নিয়েই চলাফেরা করলো, পরে যখন সে (গর্ভের কারণে ওযনে) ভারী হয়ে এলো, তখন তারা (পুরুষ-মহিলা) উভয়েই তাদের মালিককে ডেকে বললো, হে আল্লাহ তায়ালা, যদি তুমি আমাদের একটি সুস্থ ও পূর্ণাংগ সন্তান দান করো, তাহলে আমরা অবশ্যই তোমার কৃতজ্ঞতা আদায়কারীদের দলে শামিল হবো।

১৯০. পরে (সত্যিই) যখন তিনি তাদের উভয়কে একটি (নিখুঁত) ও ভালো সন্তান দান করলেন, তখন তারা যা কিছু (সন্তানদের আকারে আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাদের দেয়া হয়েছে (সে ব্যাপারেই) অন্যদের শরীক বানিয়ে নিলো, আল্লাহ তায়ালা কিন্তু তাদের এ শরীক বানানো থেকে অনেক পবিত্র।

১৯১. এরা কি আল্লাহ তায়ালার সাথে এমন কিছুকে শরীক (মনে) করে, যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদের নিজেদেরই সৃষ্টি করা হয়।

১৯২. তারা তাদের কাউকে কোনো রকম সাহায্য করতে সক্ষম নয় এবং তারা নিজেদেরও কোনো রকম সাহায্য করতে পারে না।

১৯৩. তোমরা যদি এ (মূর্খ) লোকদের হেদায়াতের পথের দিকে আহবান করো, তারা তোমাদের কথা শুনবে না, (তাই) তোমরা তাদের হেদায়াতের পথে ডাকো কিংবা চুপ করে থাকো— উভয়টাই তোমাদের জন্যে সমান কথা।

১৯৪. আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের (সাহায্যের জন্যে) ডাকো, তারা তো তোমাদের মতোই কতিপয় বান্দা, তোমরা তাদের ডেকেই দেখো না, তোমরা (তোমাদের দাবীতে) সত্যবাদী হলে তাদের উচিত তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়া।

১৯৫. তাদের কি কোনো পা আছে যার (ওপর ভর) দিয়ে তারা চলতে পারে, অথবা তাদের কি কোনো (ক্ষমতাধর) হাত আছে যা দিয়ে তারা সব কিছু ধরতে পারে, কিংবা তাদের কি কোনো চোখ আছে যা দিয়ে তারা (সব কিছু ) দেখতে পারে, কিংবা আছে তাদের কোনো কান যা দিয়ে তারা শুনতে পারে! তুমি বলো, তোমরা ডাকো তোমাদের শরীকদের, এরপর তোমরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো, (ষড়যন্ত্র করার সময়) আমাকে কোনো অবকাশও দিয়ো না।

১৯৬. (তুমি তাদের বলো,) নিশ্চয়ই আমার অভিভাবক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, যিনি কিতাব নাযিল করেছেন, তিনি হামেশাই ভালো লোকদের অভিভাবকত্ব করেন।

১৯৭. আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে যাদের তোমরা ডাকো, তারা তোমাদের কোনো রকম সাহায্য করতে সক্ষম নয়, (এমন কি) তারা নিজেদেরও কোনো রকম সাহায্য করতে পারে না।

১৯৮. তোমরা যদি (কখনো) তাদের হেদায়াতের পথে আসার আহ্বান জানাও, তবে তারা শুনতেই পাবে না, (কথা বলার সময়) যদিও তুমি দেখছো, তারা তোমার দিকেই চেয়ে আছে, কিন্তু এরা (সত্য) দেখতেই পায় না।

১৯৯. (হে মোহাম্মদ, এদের সাথে) তুমি ক্ষমার নীতি অবলম্বন করো, নেক কাজের আদেশ দাও এবং মূর্খ লোকদের তুমি এড়িয়ে চলো।

২০০. কখনো যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, সাথে সাথেই তুমি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চাও, অবশ্যই তিনি (সব কিছু) শোনেন এবং (সব কিছু জানেন।

২০১. আল্লাহ তায়ালাকে যারা ভয় করে তাদের যদি কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে, তবে তারা (সাথে সাথেই) আত্মসচেতন হয়ে পড়ে, তৎক্ষণাৎ তাদের চোখ খুলে যায়।

২০২. তাদের (কাফের) ভাই-বন্ধুরা তাদের বিদ্রোহের পথেই টেনে নিয়ে যেতে চায়, অতঃপর তারা (চেষ্টার) কোনো ত্রুটি করে না।

২০৩. (আবার) যখন তুমি (কিছু দিন) তাদের কাছে কোনো আয়াত এনে হাযির না করো, তখন তারা বলে, ভালো হতো যদি তুমি নিজেই তেমন কিছু বেছে না নিতে! তুমি বলো, আমি তো তাই অনুসরণ করি যা আমার মালিকের কাছ থেকে আমার কাছে নাযিল হয়, আর এ (কোরআন) হচ্ছে তোমাদের মালিকের কাছ থেকে নাযিল করা (অন্তদৃষ্টিসম্পন্ন) নিদর্শন, যারা ঈমান এনেছে (এ কিতাব) তাদের জন্যে হেদায়াত ও রহমত।

২০৪. যখন (তোমার সামনে) কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন (মনোযোগের সাথে) তা শোনো এবং নিশ্চুপ থাকো, আশা করা যায় (এর ফলে) তোমাদের ওপর দয়া করা হবে।

২০৫. (হে নবী,) তোমার মালিককে স্মরণ করো মনে মনে, সকাল-সন্ধ্যায় সবিনয়ে ও সশংক চিত্তে, অনুচ্চ স্বরের কথাবার্তা দিয়েও (তাঁকে তুমি স্মরণ করো), কখনো গাফেলদের দলে শামিল হয়ো না।

২০৬. নিসন্দেহে যারা তোমার মালিকের একান্ত সান্নিধ্যে আছে, তারা কখনো অহংকার করে তাঁর ইবাদাত থেকে বিরত থাকে না, তারা তাঁর তাসবীহ করে এবং তাঁর জন্যে সাজদা করে।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url