আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আলে ইমরান-এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আলে ইমরান | Al-Imran | سورة آل عمران



সূরা আলে ইমরানের বাংলা অনুবাদ 


সূরা আলে ইমরান, মদীনায় অবতীর্ণ, আয়াত ২০০, রুকু ২০

সূরা আলে ইমরান



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

* আলিফ-লাম-মীম। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১

* মহান আল্লাহ তায়ালা, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, (তিনি) চিরঞ্জীব, (তিনি) চিরস্থায়ী। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২

* তিনি সত্য (দ্বীন) সহকারে তোমার ওপর (এই) কেতাব নাযিল করেছেন, যা তোমার আগে নাযিল করা যাবতীয় কেতাবের সত্যতা স্বীকার করে। তিনি তাওরাত ও ইনজীলও নাযিল করেছেন; - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩

* মানব জাতিকে (সঠিক) পথ প্রদর্শনের জন্যে ইতিপূর্বে (আল্লাহ তায়ালা আরো কেতাব নাযিল করেছেন), তিনি (হক ও বাতিলের মধ্যে) ফয়সালা করার মানদন্ড হিসেবে কোরআন) অবতীর্ণ করেছেন; (তা সত্ত্বেও) যারা আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করবে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি; আল্লাহ তায়ালা অসীম মতার মালিক, তিনি চরম প্রতিশোধ গ্রহণকারীও বটে! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪

* আল্লাহ তায়ালার কাছে আকাশমালা ও ভূখন্ডের কোনো তথ্যই গোপন নেই। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫

* তিনি তো সেই মহান সত্তা যিনি (মায়ের পেটে) শুক্রকীটে (থাকতেই) তাঁর ইচ্ছামতো তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন; (আসলেই) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মা'বুদ নেই, তিনি প্রচন্ড মতাশালী এবং প্রবল প্রজ্ঞাময়। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬

* তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি তোমার ওপর এ কেতাব নাযিল করেছেন। (এই কেতাবে দু'ধরনের আয়াত রয়েছে), এর কিছু হচ্ছে (সুস্পষ্ট) দ্ব্যর্থহীন আয়াত, সেগুলোই হচ্ছে কেতাবের মৌলিক অংশ, (এ ছাড়া) বাকী আয়াতগুলো হচ্ছে রূপক (বর্ণনায় বর্ণিত, মানুষের মাঝে) যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, তারা (এগুলোকে কেন্দ্র করেই নানা ধরনের) ফেতনা ফাসাদ (সৃষ্টি করে) এবং আল্লাহর কেতাবের (অপ-) ব্যাখ্যা করার উদ্দেশে এসব (রূপক) আয়াত থেকে কিছু অংশের অনুসরণ করে, (মূলত) এসব (রূপক) বিষয়ের ব্যাখ্যা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউই জানে না। (এ কারণেই) যাদের মধ্যে জ্ঞানের গভীরতা আছে তারা (এসব আয়াত সম্পর্কে) বলে, আমরা এর ওপর ঈমান এনেছি, এগুলো সবই তো আমাদের মালিকের পক্ষ থেকে (আমাদের দেয়া হয়েছে। সত্য কথা হচ্ছে, আল্লাহর হেদায়াতে) প্রজ্ঞাসমা লোকেরাই কেবল শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭

* (তারা আরো বলে,) হে আমাদের মালিক, (একবার যখন) তুমি আমাদের (সঠিক) পথের দিশা দিয়েছো, (তখন আর) তুমি আমাদের মনকে বাঁকা করে দিয়ো না, একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাদের প্রতি দয়া করো, কেননা যাবতীয় দয়ার মালিক তো তুমিই। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮


* হে আমাদের মালিক, তুমি অবশ্যই সমগ্র মানব জাতিকে তোমার সামনে (হিসাব-নিকাশের জন্যে) একদিন একত্রিত করবে, এতে কোন রকম সন্দেহ নেই; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা (কখনোই) ওয়াদা ভংগ করেন না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯

* যারা (আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর বিধান) অস্বীকার করেছে তাদের ধন-সমদ ও সন্তান সন্ততি আল্লাহর (আযাব) থেকে (তাদের বাঁচানোর ব্যাপারে) কোনোই উপকারে আসবে না; (প্রকারান্তরে) তারাই জাহান্নামের ইন্ধন হবে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০

* (তাদের পরিণতি হবে) ফেরাউন ও তাদের পূর্ববর্তী (না-ফরমান) জাতিসমূহের মতো; তারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলো, অতএব তাদের অপরাধের কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের (শক্ত করে) পাকড়াও করলেন; (বস্তুত) শাস্তি প্রয়োগে আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত কঠোর। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১

* (হে নবী,) যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে সেসব (বিদ্রোহী) কাফেরদের তুমি বলে দাও, অচিরেই তোমরা (এ দুনিয়ায় লাঞ্ছিত) পরাজিত হবে এবং (পরকালে) তোমাদের জাহান্নামের (আগুনের) কাছে জড়ো করা হবে; (আর জাহান্নাম!) তা তো হচ্ছে অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থান! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২

* সে দল দু'টোর মধ্যে তোমাদের জন্যে (শিক্ষণীয়) কিছু নিদর্শন (মজুদ) ছিলো, যারা (বদরের) সম্মুখসমরে একে অপরের সামনাসামনি হয়েছিলো; (এদের মধ্যে) এক বাহিনী লড়ছিলো আল্লাহর (দ্বীনের) পথে, আর অপর বাহিনীটি ছিলো (অবিশ্বাসী) কাফেরদের, (এ সম্মুখসমরে) তারা চর্মচক্ষু দিয়ে তাদের (প্রতিপক্ষকে) তাদের দ্বিগুণ দেখতে পাচ্ছিলো, (তারপরও) আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে সাহায্য (ও বিজয়) দান করেন; এ (সব ঘটনার) মাঝে সেসব লোকের জন্যে অনেক কিছু শেখার আছে যারা অন্তর্দৃষ্টিসমঙ্গ। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩

* নারী জাতির প্রতি ভালোবাসা, সন্তান সন্ততি, কাঁড়ি কাঁড়ি সোনা রূপা, পছন্দসই ঘোড়া, গৃহপালিত জন্তু ও যমীনের ফসল (সব সময়ই) মানব সন্তানের জন্যে লোভনীয় করে রাখা হয়েছে; (অথচ) এ সব হচ্ছে পার্থিব জীবনের কিছু ভোগের সামগ্রী (মাত্র! স্থায়ী জীবনের) উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪

* (হে নবী,) তুমি (তাদের) বলো, আমি কি তোমাদের এগুলোর চাইতে উৎকৃষ্ট কোনো বস্তুর কথা বলবো? (হ্যাঁ, সে উৎকৃষ্ট বস্তু হচ্ছে তাদের জন্যে,) যারা আল্লাহকে ভয় করে এমন সব লোকদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে রয়েছে (মনোরম) জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে প্রবাহমান থাকবে (অগণিত) ঝর্ণাধারা এবং তারা সেখানে অনাদিকাল থাকবে, আরো থাকবে (তাদের) পূত পবিত্র সংগী ও সংগিনীরা (সর্বোপরি) থাকবে আল্লাহ তায়ালার (অনাবিল) সন্তুষ্টি; আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দাদের (কার্যকলাপের) ওপর সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫

* যারা বলে, হে আমাদের মালিক, আমরা অবশ্যই তোমার ওপর ঈমান এনেছি, অতপর আমাদের (যা) গুনাহখাতা (আছে তা) তুমি মাফ করে দাও এবং (শেষ বিচারের দিন) তুমি আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে দিয়ো৷ - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬

* এরা হচ্ছে ধৈর্যশীল এবং সত্যাশ্রয়ী, (এরা) অনুগত এবং দানশীল, (সর্বোপরি) এরা হচ্ছে শেষরাতে কিংবা ঊষালগ্নের পূর্বে মা প্রার্থনাকারী। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭

* আল্লাহ তায়ালা (স্বয়ং) সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, ফেরেশতারা এবং জ্ঞানবান মানুষরাও (এই একই সাক্ষ্য দিচ্ছে), আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র ন্যায় ও ইনসাফ কার্যকর করেন, তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মা'বুদ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, তিনি প্রজ্ঞাময়। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮

* নিসন্দেহে (মানুষের) জীবন বিধান হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে ইসলামই একমাত্র (গ্রহণযোগ্য) ব্যবস্থা। যাদের আল্লাহর প থেকে কেতাব দেয়া হয়েছিলো, তারা (এ জীবন বিধান থেকে বিচ্যুত হয়ে) নিজেরা একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসার বশবর্তী হয়ে (বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে) মতানৈক্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলো, (তাও আবার) তাদের কাছে (আল্লাহর প থেকে) সঠিক জ্ঞান আসার পর। যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান অস্বীকার করবে (তার জানা উচিত), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯

* যদি এরা তোমার সাথে (এ ব্যাপারে) কোনোরূপ বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাহলে (তুমি তাদের) বলে দাও, আমি এবং আমার অনুসারীরা (সবাই) আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে নিয়েছি; অতপর যাদের (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কেতাব দেয়া হয়েছে এবং যারা (কোনো কেতাব না পেয়ে) মূর্খ (থেকে গেছে), তাদের (সবাইকেই) জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি সবাই আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছো? (হ্যাঁ,) তারা যদি (জীবনের সর্বক্ষেত্রে) আল্লাহর আনুগত্য মেনে নেয় তাহলে তারা তো সঠিক পথ পেয়েই গেলো, কিন্তু তারা যদি (ঈমান থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে মনে রেখো, তোমার দায়িত্ব হচ্ছে কেবল (আমার কথা) পৌঁছে দেয়া; আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের (কর্মকান্ড নিজেই) পর্যবেণ করছেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২০

* নিসন্দেহে যারা আল্লাহর (নাযিল করা) নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে, যারা অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করে— হত্যা করে মানব জাতিকে যারা ন্যায় ও ইনসাফ মেনে চলার আদেশ দেয় তাদেরও, এদের তুমি এক কঠোর শাস্তির সুসংবাদ দাও। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২১

* (এদের অবস্থা হচ্ছে,) দুনিয়া আখেরাত উভয় স্থানেই এদের কর্ম ব্যর্থ (ও নিষ্ফল) হয়ে গেছে, (আর এ কারণেই) এদের কোথাও কোনো সাহায্যকারী নাই। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২২

* (হে নবী,) তুমি তাদের সম্পর্কে চিন্তা করে দেখেছো কি, যাদের আমার কেতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছিলো, অতপর তাদের যখন আল্লাহর কেতাবের (সে অংশের) দিকে ডাকা হলো যা তাদের মধ্যকার অমীমাংসিত বিষয়সমূহের মীমাংসা করে দেবে, তখন তাদের একদল লোক (এ হেদায়াত থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলো, (মূলত) এরাই হচ্ছে সেসব লোক যারা (আল্লাহর ফয়সালা থেকে) মুখ ফিরিয়ে রাখে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২৩

* এটা এ কারণে যে, এ (নির্বোধ) লোকেরা বলে, (দোযখের আগুন আমাদের (শরীর) কখনো সুড়ঙ্গ করবে না, (আর যদি একান্ত করেও তা হবে) হাতেগনা কয়েকটি দিনের ব্যাপার মাত্র, (মূলত) তাদের নিজেদের ধর্ম বিশ্বাসের মাঝে নিজেদের মনগড়া ধারণাই তাদের প্রতারিত করে রেখেছে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২৪

* অতপর (সেদিন) অবস্থাটা হবে, যেদিন আমি সমগ্র মানব সন্তানকে একত্রিত করবো, যেদিন সম্পর্কে কোনো দ্বিধা সন্দেহের অবকাশ নেই সেদিন প্রত্যেক মানব সন্তানকেই তার নিজস্ব অর্জিত বিনিময় পুরোপুরি দিয়ে দেয়া হবে এবং (সেদিন) তাদের ওপর বিন্দুমাত্রও যুলুম করা হবে না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২৫

* (হে নবী), তুমি বলো, হে রাজাধিরাজ (মহান আল্লাহ), তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে সাম্রাজ্য দান করো, আবার যার কাছ থেকে চাও তা কেড়েও নিয়ে যাও, যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মানিত করো, যাকে ইচ্ছা তুমি অপমানিত করো; সব রকমের কল্যাণ তো তোমার হাতেই নিবন্ধ; নিশ্চয়ই তুমি সবকিছুর ওপর একক মতাবান। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২৬

* তুমিই রাতকে দিনের মাঝে শামিল করো, আবার দিনকে রাতের ভেতর শামিল করো; প্রাণহীন (বস্তু) থেকে তুমি (যেমন) প্রাণের আবির্ভাব ঘটাও, (আবার) প্রাণহীন (অসাড় ) বস্তু বের করে আনো প্রাণসর্বস্ব (জীব) থেকে এবং যাকে ইচ্ছা তুমি বিনা হিসেবে রেযেক দান করো। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২৭

* ঈমানদার ব্যক্তিরা কখনো ঈমানদারদের বদলে অবিশ্বাসী কাফেরদের নিজেদের বন্ধু বানাবে না, যদি তোমাদের কেউ তা করে তবে আল্লাহর সাথে তার কোনো সম্পর্কই থাকবে না, হাঁ তাদের কাছ থেকে কোনো আশংকা (থাকলে) তোমরা নিজেদের বাঁচানোর প্রয়োজন হলে তা ভিন্ন কথা; আল্লাহ তায়ালা তো বরং তাঁর নিজের ব্যাপারেই তোমাদের ভয় দেখাচ্ছেন (বেশী, কারণ তোমাদের) আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২৮

* (হে নবী,) তুমি বলো, তোমরা তোমাদের মনের ভেতর কিছু গোপন করে রাখো, কিংবা তা (সবার সামনে) প্রকাশ করে দাও, তা আল্লাহ তায়ালা (ভালোভাবে) অবগত হন; আসমান যমীন ও এর (আভ্যন্তরীণ) সবকিছুও তিনি জানেন, সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালা (সৃষ্টিলোকের) সব কিছুর ওপর মতাবান, তিনিই সকল শক্তির আধার। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২৯

* যেদিন প্রত্যেকেই তার ভালো কাজ সামনে হাযির দেখতে পাবে, যে ব্যক্তির কৃতকর্ম খারাপ থাকবে সে সেদিন কামনা করতে থাকবে যে, তার এবং তার (কাজের) মাঝে যদি দুস্তর একটা তফাৎ থাকতো! আল্লাহ তায়ালা তো তোমাদের তাঁর (মতা ও শাস্তি) থেকে ভয় দেখাচ্ছেন, কারণ আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের সাথে অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩০

* (হে নবী,) তুমি বলো, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসো, তাহলে আমার কথা মেনে চলো, (আমাকে ভালোবাসলে) আল্লাহ তায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন; আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত মাশীল ও দয়াবান। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩১

* তুমি (আরো) বলো, (তোমরা) আল্লাহ তায়ালা ও (তাঁর) রসূলের কথা মেনে চলো, (এ আহ্বান সত্ত্বেও) তারা যদি (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় (তাহলে তুমি জেনে রেখো), আল্লাহ তায়ালা কখনো কাফেরদের পছন্দ করেন না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩২

* অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা আদম, ন হ এবং ইবরাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদের সৃষ্টিকুলের ওপর (নেতৃত্ব করার জন্যে) বাছাই করে নিয়েছেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩৩

* (নেতৃত্বে সমাসীন) এদের সন্তানরা বংশানুক্রমে পরস্পর পরস্পরের বংশধর। আল্লাহ তায়ালা (সবার কথাবার্তা) শুনতে পান এবং (সব কথা তিনি) জানেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩৪

* (স্মরণ করো,) যখন ইমরানের স্ত্রী বললো, হে আমার মালিক, আমার গর্ভে যা আছে তাকে আমি স্বাধীনভাবে তোমার (দ্বীনের কাজ করার) জন্যে উৎসর্গ করলাম, তুমি আমার প থেকে এ সন্তানটিকে কবুল করে নাও, অবশ্যই তুমি (সব কথা শোনো এবং (সব বিষয়) জানো। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩৫

* অতপর (এক সময়) যখন ইমরানের স্ত্রী তাকে জন্ম দিলো, (তখন) সে বললো, হে আমার মালিক, (একি!) আমি তো (দেখছি) একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছি (একটা মেয়েকে কিভাবে আমি তোমার পথে উৎসর্গ করবো ); আল্লাহ তায়ালা তো ভালোভাবেই জানতেন, ইমরানের স্ত্রী কি জন্ম দিয়েছে, (আসলে) ছেলে কখনো মেয়ের মতো (সব কাজ আঞ্জাম দিতে সম) হয়না, (ইমরানের স্ত্রী বললো), আমি এ শিশুর নাম রাখলাম মারইয়াম এবং আমি এ শিশু ও তার (অনাগত) সন্তানকে অভিশপ্ত শয়তানের (অনিষ্ট) থেকে রার জন্যে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩৬

* আল্লাহ তায়ালা (ইমরানের স্ত্রীর দোয়া কবুল করলেন এবং) তাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবেই গ্রহণ করে নিলেন এবং (ধীরে ধীরে) তাকে তিনি ভালোভাবেই গড়ে তুললেন, (আর সে জন্যেই) আল্লাহ তায়ালা তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রাখলেন, (বড়ো হবার পর) যখনি যাকারিয়া তার কাছে (তার নিজস্ব) এবাদাতের কক্ষে যেতো, (তখনি সে দেখতে) পেতো সেখানে কিছু খাবার (মজুদ রয়েছে, খাবার দেখে) যাকারিয়া জিজ্ঞেস করতো, হে মারইয়াম, এসব (খাবার) তোমার কাছে কোত্থেকে আসে? মারইয়াম জবাব দিতো, এ সব (আসে আমার মালিক) আল্লাহর কাছ থেকে; (আর) অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে বিনা হিসেবে রেযেক দান করেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩৭

* সেখানে (দাঁড়িয়েই) যাকারিয়া তার মালিকের কাছে দোয়া করলো, হে আমার মালিক, তুমি তোমার কাছ থেকে আমাকে (তোমার অনুগ্রহের প্রতীক হিসেবে) একটি নেক সন্তান দান করো, নিশ্চয়ই তুমি (মানুষের) ডাক শোনো। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩৮

* অতপর ফেরেশতারা তাকে ডাক দিলো এমন এক সময়ে যখন সে এবাদাতের নামায আদায় করছিলো (ফেরেশতারা বললো, হে যাকারিয়া, আল্লাহ তায়ালা তোমার ডাক শুনেছেন), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাকে ইয়াহইয়ার (জন্ম সম্পর্কে) সুসংবাদ দিচ্ছেন, (তোমার সে সন্তান) আল্লাহর প থেকে তাঁর বাণীর সত্যায়ন করবে, সে হবে (সমাজের) নেতা, (সে হবে) সচ্চরিত্রবান, (সে হবে) নবী, (সর্বোপরি সে হবে) সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের একজন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩৯

* (এ কথা শুনে) যাকারিয়া বললো, হে আমার মালিক, আমার (ঘরে) ছেলে হবে কিভাবে, (একে তো) আমি নিজে বার্ধক্যে উপনীত হয়ে গেছি, (তদুপরি) আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা (সন্তান ধারণে সম্পূর্ণ অ ক্ষম); আল্লাহ তায়ালা বললেন, হাঁ এভাবেই আল্লাহ তায়ালা যা চান তা তিনি করেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪০

* যাকারিয়া নিবেদন করলো, হে মালিক, তুমি আমার জন্যে (এর) কিছু (পূর্ব) লক্ষণ ঠিক করে দাও; আল্লাহ তায়ালা বললেন (হাঁ), তোমার (সে) লক্ষণ হবে এই যে, তুমি তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা ইংগিত ছাড়া কথাবার্তা বলবে না; (এ অবস্থায়) তুমি তোমার মালিককে বেশী বেশী স্মরণ করবে এবং সকাল সন্ধ্যায় (তাঁর পবিত্র নামসমূহের) তাসবীহ পাঠ করতে থাকবে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪১

* (অতপর মারইয়াম বয়োপ্রাপ্ত হলে) আল্লাহর ফেরেশতারা যখন বললো, হে মারইয়াম, আল্লাহ তায়ালা নিসন্দেহে তোমাকে (একটি বিশেষ কাজের জন্যে) বাছাই করেছেন এবং (সে জন্যে) তোমাকে তিনি পবিত্র করেছেন এবং বিশ্বের নারীকূলের ওপর তিনি তোমাকে বাছাই করেছেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪২

* হে মারইয়াম, (এর যোগ্য হওয়ার জন্যে) তুমি সর্বদা তোমার মালিকের অনুগত হও, তাঁর কাছে (আনুগত্যের) মাথা নত করো এবং এবাদাতকারীদের সাথে তুমিও (তার) এবাদাত করো। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪৩

* (হে নবী,) এ সবই তো (ছিলো তোমার জন্যে) অদৃশ্যলোকের সংবাদ, আমিই এগুলো তোমাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছি; (নতুবা) তুমি তো সেখানে তাদের পাশে হাযির ছিলে না (বিশেষ করে) যখন (এবাদাতখানার পুরোহিতরা) মারইয়ামের পৃষ্ঠপোষক কে হবে এটা নির্বাচনের জন্যে কলম নিক্ষেপ (করে নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা) করছিলো, আর তুমি তাদের ওখানেও উপস্থিত ছিলে না যখন তারা (এ নিয়ে) বিতর্ক করছিলো! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪৪

* অতপর ফেরেশতারা বললো, হে মারইয়াম, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাকে (একটি পুত্র সন্তানের জন্ম সংক্রান্ত) নিজস্ব এক বাণীর দ্বারা সুসংবাদ দিচ্ছেন, তার নাম মাসীহ (সে পরিচিত হবে) মারইয়ামের পুত্র ঈসা, দুনিয়া আখেরাতের উভয় স্থানেই সে সম্মানিত হবে, সে হবে (আল্লাহর) সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্যতম। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪৫

* সে দোলনায় থাকা অবস্থায় (যেমন) মানুষের সাথে কথা বলতে পারবে, পরিণত বয়সেও (তেমনিভাবে তাদের সাথে) কথা বলবে, (বস্তুত) সে হবে নেককার মানুষদের একজন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪৬

* মারইয়াম বললো, হে আমার মালিক, আমার (গর্ভে) সন্তান আসবে কোত্থেকে? আমাকে তো কখনো কোনো মানব সন্তান সড়শ পর্যন্ত করেনি; আল্লাহ তায়ালা বললেন, এভাবেই আল্লাহ তায়ালা যাকে চান (চিরাচরিত নিয়ম ছাড়াই) তাকে পয়দা করেন; তিনি যখন কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন শুধু তাকে বলেন, 'হও', অতপর (সাথে সাথে) তা (সংঘটিত) হয়ে যায়। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪৭

* (ফেরেশতারা মারইয়ামকে বললো,) তোমার সন্তানকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর কেতাব ও প্রজ্ঞার বিষয়গুলো শেখাবেন, (সাথে সাথে তিনি তাকে) তাওরাত এবং ইনজীলও শিক্ষা দেবেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪৮

* (আল্লাহ তায়ালা তাকে) বনী ইসরাঈলদের কাছে রসূল করে পাঠালেন (অতপর সে আল্লাহর রসূল হয়ে তাদের কাছে এসে বললো), আমি নিসন্দেহে তোমাদের মালিকের কাছ থেকে (নরওতের কিছু) নিদর্শন নিয়ে এসেছি (এবং সে নিদর্শনগুলো হচ্ছে), আমি তোমাদের জন্যে মাটি দ্বারা পাখীর মতো করে একটি আকৃতি বানাবো এবং পরে তাতে ফুঁ দেবো, অতপর (তোমরা দেখবে এই) আকৃতিটি আল্লাহর ইচ্ছায় (জীবন্ত ) পাখী হয়ে যাবে, আর জন্মান্ধ এবং কুষ্ঠ রোগীকেও সুস্থ করে দেবো, (আল্লাহর ইচ্ছায় এভাবে) আমি মৃতকেও জীবিত করে দেবো, আমি তোমাদের আরো বলে দেবো, তোমরা তোমাদের ঘরে কি কি জিনিস খাও, আবার কি জিনিস (না খেয়ে) জমা করে রাখো; (মূলত) তোমরা যদি আল্লাহর ওপর ঈমান আনো তাহলে (নিসন্দেহে) এতে তোমাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪৯

* (মাসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম আরও বলবে,) তাওরাতের যে বাণী আমার কাছে রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী, (তা ছাড়া) তোমাদের ওপর হারাম করে রাখা হয়েছে এমন কতিপয় জিনিসও আমি তোমাদের জন্যে হালাল করে দেবো এবং আমি তোমাদের মালিকের প থেকে (এই) নিদর্শন নিয়েই এসেছি, অতএব তোমরা আল্লাহকেই ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫০

* নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমার মালিক, তোমাদেরও মালিক, অতএব তোমরা তাঁরই এবাদাত করো; (আর) এটাই হচ্ছে একমাত্র সঠিক ও সোজা পথ। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫১

* অতপর ঈসা যখন তাদের থেকে কুফরী আঁচ করতে পারলো, তখন সে (সাথীদের ডেকে) বললো, কে (আছো তোমরা) আল্লাহ তায়ালার (পথের) দিকে (চলার সময়) আমার সাহায্যকারী হবে! হাওয়ারীরা বললো, (হ্যাঁ) আমরাই (হবো) আল্লাহর সাহায্যকারী; আমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি (হে ঈসা), তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা সবাই আল্লাহর এক একজন অনুগত বান্দা। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫২

* (হাওয়ারীরা বললো,) হে আল্লাহ, তুমি যা কিছু নাযিল করেছো আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি এবং আমরা রসূলের কথাও মেনে নিয়েছি, সুতরাং তুমি (সত্যের পক্ষে সাক্ষ্যদাতাদের সাথে আমাদের (নাম) লিখে দাও। সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫৩

* বনী ইসরাঈলের লোকেরা (আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধে দারুণ) শঠতা করলো, তাই আল্লাহও কৌশলের পন্থা গ্রহণ করলেন; (বস্তুত) আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন সর্বোত্তম কৌশলী ! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫৪

* যখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে ঈসা, আমি তোমার এ দুনিয়ার (জীবন কাটানোর) কাল শেষ করতে যাচ্ছি এবং (অচিরেই) আমি তোমাকে আমার কাছে তুলে আনবো, যারা (তোমাকে মেনে নিতে) অস্বীকার করছে তাদের (যাবতীয় পাপ) থেকেও আমি তোমাকে পবিত্র করে নেবো, আর যারা তোমাকে অনুসরণ করছে তাদের আমি কেয়ামত পর্যন্ত এই অস্বীকারকারীদের ওপর (বিজয়ী করে) রাখবো, অতপর তোমাদের সবাইকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে, সেদিন (ঈসা সমড্রিঙ্কত) যেসব বিষয়ে তোমরা মতবিরোধে লিপ্ত ছিলে তার সব কয়টি বিষয়ই আমি তোমাদের মাঝে মীমাংসা করে দেবো। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫৫

* যারা (আমার বিধান) অস্বীকার করেছে আমি তাদের এ দুনিয়ায় (অপমান) ও আখেরাতে (আগুনে দগ্ধ হওয়ার) কঠোরতর শাস্তি দেবো, (এ থেকে বাঁচানোর মতো সেদিন) তাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবে না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫৬

* অপরদিকে যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, অতপর আল্লাহ তাদের (সবাই)-কে তাদের পাওনা পুরোপুরিই আদায় করে দেবেন; আল্লাহ তায়ালা যালেমদের কখনো ভালোবাসেন না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫৭

* এই (কেতাব) যা আমি তোমাকে পড়ে শোনাচ্ছি, তা হচ্ছে আল্লাহর নিদর্শন ও জ্ঞানপূর্ণ উপদেশ বিশেষ। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫৮

* আল্লাহ তায়ালার কাছে ঈসার উদাহরণ হচ্ছে (প্রথম মানুষ) আদমের মতো; তাকেও আল্লাহ তায়ালা (মাতা- পিতা ছাড়া সরাসরি) মাটি থেকে পয়দা করেছেন, তারপর তাকে বললেন, (এবার তুমি) হয়ে যাও, সাথে সাথে তা (মানুষে পরিণত) হয়ে গেলো। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫৯

* (এ হচ্ছে) তোমার মালিক (আল্লাহ)-এর প থেকে (আসা) সত্য (প্রতিবেদন), অতপর তোমরা কখনো সেসব দলে শামিল হয়ো না যারা (ঈসার ব্যাপারে নানারকম) সন্দেহ পোষণ করে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬০

* এ বিষয়ে আল্লাহর কাছ থেকে (সঠিক) জ্ঞান আসার পরও যদি কেউ তোমার সাথে (খামাখা) ঝগড়া-বিবাদ ও তর্কর করতে চায় তাহলে তুমি তাদের বলে দাও, এসো (আমরা সবাই এ ব্যাপারে একমত হই), আমরা আমাদের ছেলেদের ডাকবো এবং তোমাদের ছেলেদেরও ডাকবো, (একইভাবে আমরা ডাকবো) আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদেরও, (সাথে সাথে) আমরা আমাদের নিজেদের এবং তোমাদেরও (এক সাথে জড়ো হওয়ার জন্যে) ডাক দেবো, অতপর (সবাই এক জায়গায় জড়ো হলে) আমরা বিনীতভাবে দোয়া করবো, (আমাদের মধ্যে) যে মিথ্যাবাদী তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬১

* এ হচ্ছে সঠিক (ও নিভর্ল) ঘটনা। আল্লাহ তায়ালা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মা'বুদ নেই; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা পরম শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬২

* অতপর তারা যদি (এ চ্যালেঞ্জ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে (তারা যেন জেনে রাখে,) আল্লাহ তায়ালা কলহ সৃষ্টিকারীদের (ভালো করেই জানেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬৩

* (হে নবী,) তুমি বলো, হে কেতাবধারীরা, এসো আমরা এমন এক কথায় (উভয়ে একমত হই) যা আমাদের কাছে এক (ও অভিন্ন এবং সে কথাটি হচ্ছে), আমরা উভয়েই আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো এবাদাত করবো না এবং তাঁর সাথে অন্য কিছুকে অংশীদার বানাবো না, (সর্বোপরি) এক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আমরা আমাদের মাঝেও একে অপরকে প্রভু বলে মেনে নেবো না; অতপর তারা যদি (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তাদের তুমি বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থেকো, আমরা আল্লাহর সামনে আনুগত্যের মাথা নত করে দিয়েছি। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬৪

* (তুমি আরো বলো,) হে কেতাবধারীরা, তোমরা ইবরাহীম সম্পর্কে (আমাদের সাথে অযথা) কেন তর্ক করো, অথচ (তোমরা জানো) তাওরাত ও ইনজীল তার (অনেক) পরে নাযিল করা হয়েছে; তোমরা কি (এ কথা) বুঝতে পারছো না? - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬৫

* হ্যাঁ, এর কয়েকটি বিষয়ে তোমাদের (হয়তো) কিছু কিছু জানাশোনা ছিলো এবং সে বিষয়ে তো তোমরা তর্ক বিতর্কও করলে, কিন্তু যেসব বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞানই নেই সেসব বিষয়ে তোমরা বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছো কেন? আল্লাহ তায়ালাই (সব কিছু) জানেন, তোমরা কিছুই জানো না, - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬৬

* (সঠিক ঘটনা হচ্ছে,) ইবরাহীম না ছিলো ইহুদী–না ছিলো খৃস্টান; বরং সে ছিলো একজন একনিষ্ঠ মুসলিম; সে কখনো মোশরেকদের দলভুক্ত ছিলো না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬৭

* মানুষদের ভেতর ইবরাহীমের সাথে (ঘনিষ্ঠতম) সম্পর্কের বেশী অধিকার তো আছে সেসব লোকের, যারা তার অনুসরণ করেছে, এ নবী ও (তার ওপর) ঈমান আনয়নকারীরাই (হচ্ছে) ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠতম ব্যক্তি; (মূলত) আল্লাহ তায়ালা একমাত্র তাদেরই সাহায্যকারী (পৃষ্ঠপোষক) যারা তাঁর ওপর ঈমান আনে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬৮

* এ কেতাবধারীদের একটি দল (বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে) তোমাদের কোনো না কোনোভাবে পথভ্রষ্ট করে দিতে চায়; যদিও তাদের এ বোধটুক্ নেই যে, (তাদের এসব কর্মপন্থা) তাদের নিজেদের ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকেই পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬৯

* হে কেতাবধারীরা, তোমরা (জেনে বুঝে) কেন আল্লাহর আয়াত (ও তাঁর বিধান) অস্বীকার করছো, অথচ (এই ঘটনাসমূহের সত্যতার) সাক্ষ্য তো তোমরা নিজেরাই বহন করছো। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭০

* হে কেতাবধারীরা, কেন তোমরা 'হক'-কে বাতিলের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছো, (এতে করে) তোমরা তো সত্যকেই গোপন করে দিচ্ছো, অথচ (এটা যে সত্যের একান্ত পরিপন্থী) তা তোমরা ভালো করেই জানো। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭১

* আহলে কেতাবদের (মধ্য থেকে) একদল (নির্বোধ) তাদের নিজেদের লোকদের বলে, মুসলমানদের ওপর যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা সকাল বেলায় তার ওপর ঈমান আনো এবং বিকেল বেলায় (গিয়ে) তা অস্বীকার করো, (এর ফলে) তারা সম্ভবত (ঈমান থেকে) ফিরে আসবে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭২

* যারা তোমাদের জীবন বিধানের অনুসরণ করে, এমন সব লোকজন ছাড়া অন্য কারো কথাই তোমরা মেনে নিয়ো না; (হে নবী,) তুমি বলে দাও, একমাত্র হেদায়াত হচ্ছে আল্লাহর হেদায়াত (তোমরা একথা মনে করো না যে), তোমাদের যে ধরনের (ব্যবস্থা) দেয়া হয়েছে তেমন ধরনের কিছু অন্য কাউকেও দেয়া হবে এবং (সে সূত্র ধরে) অন্য লোকেরা তোমাদের মালিকের দরবারে তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম যুক্তিতর্ক খাড়া করবে, (হে নবী); তুমি তাদের বলে দাও, (হেদায়াতের এ) অনুগ্রহ অবশ্যই আল্লাহর হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই তা দান করেন; আল্লাহ তায়ালা বিশাল, প্রজ্ঞাসম্পন্ন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭৩

* নিজের দয়া দিয়ে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই (হেদায়াতের জন্যে) খাস করে নেন; (বস্তুত) আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন অসীম দয়া ও অনুগ্রহের মালিক। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭৪

* আহলে কেতাবদের মধ্যে এমন লোকও আছে, তুমি যদি তার কাছে ধন সমদের এক স্ত পও আমানত রাখো, সে (চাওয়ামাত্রই) তা তোমাকে ফেরত দেবে, আবার এদের মধ্যে এমন কিছু (লোকও) আছে যার কাছে যদি একটি দীনারও তুমি রাখো, সে তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবে না, হ্যাঁ, যদি (এ জন্যে) তুমি তার ওপর চেপে বসতে পারো তাহলে (সেটা ভিন্ন), এটা এই কারণে যে, এরা বলে, এই (অ-ইহুদী) অশিতি লোকদের ব্যাপারে আমাদের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, (এভাবেই) এরা বুঝে শুনে আল্লাহর ওপর মিথ্যা কথা বলে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭৫

* অবশ্য যে ব্যক্তি (আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত) প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলে এবং (সে ব্যাপারে) সাবধানতা অবলম্বন করে, (তাদের জন্যে সুখবর হচ্ছে) আল্লাহ তায়ালা সাবধানী লোকদের খুব ভালোবাসেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭৬

* (যারা নিজেদের আল্লাহর সাথে সমাদিত) প্রতিশ্রুতি ও শপথসমূহ সামান্য (বৈষয়িক) মূল্যে বিক্রি করে দেয়, পরকালে তাদের জন্যে (আল্লাহর পুরস্কারের) কোনো অংশই থাকবে না, সেদিন এদের সাথে আল্লাহ তায়ালা কোনো কথাবার্তা বলবেন না, (এমনকি সেদিন) আল্লাহ তায়ালা তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের পাক পবিত্রও করবেন না, (সত্যিই) এদের জন্যে রয়েছে কঠোর পীড়াদায়ক আযাব। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭৭

* এদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে, যারা কেতাবের কোনো অংশ যখন পড়ে তখন নিজেদের জিহ্বাকে এমনভাবে এদিক-সেদিক করে নেয়, যাতে তোমরা মনে করতে পারো যে, সত্যি বুঝি তা কেতাবের কোনো অংশ, কিন্তু (আসলে) তা কেতাবের কোনো অংশই নয়, তারা আরো বলে, এটা আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে, কিন্তু তা আল্লাহর কাছ থেকে আসা কিছু নয়, এরা জেনে শুনে আল্লাহর ওপর মিথ্যা কথা বলে চলেছে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭৮

* কোনো মানব সন্তানের পইে এটা (সম্ভব) নয় যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তাঁর কেতাব, প্রজ্ঞা ও নরওত দান করবেন, অতপর সে লোকদের (ডেকে) বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে (এখন) সবাই আমার বান্দা হয়ে যাও, বরং সে (তো নবুওতপ্রাপ্তির পর এ কথাই) বলবে, তোমরা সবাই তোমাদের মালিকের বান্দা হয়ে যাও, এটা এই কারণে যে, তোমরাই মানুষদের (এই) কেতাব শেখাচ্ছিলে এবং তোমরা নিজেরাও (তাই) অধ্যয়ন করছিলে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭৯

* আল্লাহর ফেরেশতা ও তাঁর নবীদের প্রতিপালকরূপে স্বীকার করে নিতে এ ব্যক্তি তোমাদের কখনো আদেশ দেবে না; একবার আল্লাহর অনুগত মুসলমান হবার পর সে কিভাবে তোমাদের পুনরায় কুফরীর আদেশ দিতে পারে? - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮০

* আল্লাহ তায়ালা যখন তাঁর নবীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন (তখন তিনি বলেছিলেন, এ হচ্ছে) কেতাব ও (তার ব্যবহারিক) জ্ঞান কৌশল, যা আমি তোমাদের দান করলাম, অতপর তোমাদের কাছে যখন (আমার কোনো) রসূল আসবে, যে তোমাদের কাছে রতি (আগের) কেতাবের সত্যায়ন করবে, তখন তোমরা অবশ্যই তার (আনীত বিধানের) ওপর ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে; আল্লাহ তায়ালা জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি এ (কথার) ওপর এ অংগীকার গ্রহণ করছো? তারা বললো, হ্যাঁ আমরা (মেনে চলার) অংগীকার করছি; আল্লাহ তায়ালা বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো এবং আমিও তোমাদের সাথে (এ অংগীকারে) সাক্ষী হয়ে রইলাম। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮১

* অতপর যারা তা ভংগ করে (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেবে, তারা অবশ্যই বিদ্রোহী (বলে পরিগণিত) হবে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮২

* তারা কি আল্লাহর (দেয়া জীবন) ব্যবস্থার বদলে অন্য কোনো বিধানের সন্ধান করছে? অথচ আসমান যমীনে যা কিছু আছে ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক, আল্লাহ তায়ালার (বিধানের) সামনে আত্মসমর্পণ করে আছে এবং প্রত্যেককে তো তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮৩

* (হে নবী) তুমি বলো, আমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি, ঈমান এনেছি আমাদের ওপর যা নাযিল করা হয়েছে তার ওপর, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের অন্যান্য বংশধরদের প্রতি যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার ওপরও (আমরা ঈমান এনেছি), আমরা আরো ঈমান এনেছি, মূসা, ঈসা এবং অন্য নবীদের তাদের মালিকের প থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তার ওপরও, (আল্লাহর) এ নবীদের কারো মাঝেই আমরা কোনো ধরনের তারতম্য করি না, (মূলত) আমরা সবাই হচ্ছি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী (মুসলমান)। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮৪

* যদি কেউ ইসলাম ছাড়া (নিজের জন্যে) অন্য কোনো জীবন বিধান অনুসন্ধান করে তবে তার কাছ থেকে সে (উদ্ভাবিত) ব্যবস্থা কখনো গ্রহণ করা হবে না, পরকালে সে চরম ব্যর্থ হবে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮৫

* (বলো,) যারা ঈমানের (আলো পাওয়ার) পর কুফরী করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের কিভাবে (আবার আলোর) পথ প্রদর্শন করবেন, অথচ (এর আগে) এরাই সাক্ষ্য দিয়েছিলো যে, আল্লাহর রসূল সত্য এবং (এ রসূলের মাধ্যমেই) এদের কাছে উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ এসেছিলো; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা কখনো সীমালংঘনকারী ব্যক্তিদের সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮৬

* এসব (সীমালংঘনজনিত) কার্যকলাপের একমাত্র প্রতিদান হিসেবে তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা, তাঁর ফেরেশতা ও অন্য সব মানুষের অভিশাপ (বর্ষিত হবে)। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮৭

* (সে অভিশপ্ত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম) সেখানে তারা অনাদিকাল ধরে পড়ে থাকবে, (এক মুহূর্তের জন্যেও) তাদের ওপর শাস্তির মাত্রা কমানো হবে না, না আযাব থেকে তাদের (একটুখানি) বিরাম দেয়া হবে! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮৮

* (তবে) তাদের কথা আলাদা, যারা (এসব কিছুর পর) তাওবা করেছে এবং (তারপর) নিজেদের সংশোধন করে নিয়েছে, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই মাশীল ও পরম দয়ালু। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮৯

* কিন্তু যারা একবার ঈমান আনার পর কুফরীর (পথ) অবলম্বন করেছে, অতপর তারা এই বেঈমানী (কার্যকলাপ) দিন দিন বাড়াতেই থেকেছে, (আল্লাহর দরবারে) তাদের তাওবা কখনো কবুল হবে না, কারণ এ ধরনের লোকেরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯০

* (এটা সুনিশ্চিত,) যারা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করেছে এবং কুফরী অবস্থায়ই তাদের মৃত্যু হয়েছে, তারা যদি নিজেদের (আল্লাহর আযাব থেকে) বাঁচানোর জন্যে এক পৃথিবীপূর্ণ স্বর্ণও মুক্তিপণ হিসেবে খরচ করে, তবু তাদের কারো কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না; বস্তুত এরাই হচ্ছে সে সব (হতভাগ্য) ব্যক্তি যাদের জন্যে রয়েছে মর্মনদ্রদ আযাব, আর সেদিন তাদের কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯১

* তোমরা কখনো (যথার্থ) নেকী অর্জন করতে পারবে না, যতোক্ষণ না তোমরা তোমাদের ভালোবাসার জিনিস আল্লাহ্র পথে ব্যয় করবে; (মূলত) তোমরা যা কিছুই ব্যয় করো, আল্লাহ্ তায়ালা তা জানেন । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯২

* (আজ তোমাদের জন্যে যে) সব খাবার (হালাল করা হয়েছে তা এক সময়) বনী ইসরাঈলদের জন্যেও হালাল ছিলো, (অবশ্য) এমন (দু'একটা) জিনিস বাদে, যা তাওরাত নাযিল হওয়ার আগেই ইসরাঈল তার নিজের ওপর হারাম করে রেখেছিলো; তুমি বলো (সন্দেহ থাকলে যাও), তোমরা গিয়ে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তা পড়ে শোনাও, যদি (তোমরা তোমাদের দাবীর ব্যাপারে) সত্যবাদী হও! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯৩

* যারা এরপরও আল্লাহ্র ওপর মিথ্যা আরোপ করে, নিসন্দেহে তারা (বড়ো) যালেম | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯৪

* তুমি বলো, আল্লাহ্ তায়ালা সত্য কথা বলেছেন, অতএব তোমরা সবাই নিষ্ঠার সাথে ইবরাহীমের মতাদর্শ অনুসরণ করো, আর ইবরাহীম কখনো (আল্লাহ্র সাথে) মোশরেকদের (দলে) শামিল ছিলো না । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯৫

* নিশ্চয়ই গোটা মানব জাতির জন্যে সর্বপ্রথম যে ঘরটি বানিয়ে রাখা হয়েছিলো তা ছিলো বাক্কায় (তথা মক্কা নগরীতে,) এ ঘরকে কল্যাণ মঙ্গলময় এবং (মানবকুলের) দিশারীটি বানানো হয়েছিলো । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯৬

* এখানে রয়েছে (আল্লাহ্ তায়ালার) সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, (আরো) রয়েছে (এবাদাতের জন্যে) ইবরাহীমের দাড়ানোর স্থান (এই ঘরের বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে), যে এখানে প্রবেশ করবে সে (দুনিয়া আখেরাত উভয় স্থানেই) নিরাপদ (হয়ে যাবে; দ্বিতীয় মর্যাদা হচ্ছে) মানব জাতির ওপর আল্লাহ্র জন্যে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তিরই এ ঘর পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ থাকবে, সে যেন এই ঘরের হজ্জ আদায় করে, আর যদি কেউ (এ বিধান) অস্বীকার করে (তার জেনে রাখা উচিত), আল্লাহ্ তায়ালা সৃষ্টিকুলের মোটেই মুখাপেক্ষী নন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯৭

* (হে নবী!) তুমি বলো, হে আহলে কেতাবরা, তোমরা কেন (জেনে বুঝে) আল্লাহ্র আয়াত অস্বীকার করো, অথচ তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ্ তায়ালাই তার ওপর সাক্ষী | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯৮

* তুমি (আরো) বলো, হে আহলে কেতাবরা, যারা ঈমান এনেছে তোমরা কেন তাদের আল্লাহ্র পথ থেকে ফেরাতে চষ্টো করছো (এভাবেই) তোমরা (আল্লাহর) পথকে বাকা করতে চাও, অথচ (এই লোকদের সত্যপন্থী হবার ব্যাপারে) তোমরাই তো সাক্ষী; আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের এই সব (বিদ্রোহমূলক) আচরণ সম্পর্কে মোটেই উদাসীন নন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৯৯

* হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো (আগে) যাদের কেতাব দেয়া হয়েছে তোমরা যদি তাদের কোনো একটি দলের কথা মেনে চলো, তাহলে (মনে রেখো), এরা ঈমান আনার পরও (ধীরে ধীরে) তোমাদের কাফের বানিয়ে দেবে | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০০

* আর তোমরা কিভাবে কুফরী করবে, যখন তোমাদের সামনে (বার বার) আল্লাহ্র আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হচ্ছে, তাছাড়া (এ আয়াতের বাহক স্বয়ং) আল্লাহ্র রসুল যখন তোমাদের মাঝেই মজুদ রয়েছে, যে ব্যক্তিই আল্লাহ্ (ও তাঁর বিধান)-কে শক্ত করে আঁকড়ে ধরবে, সে অবশ্যই সোজা পথে পরিচালিত হবে । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০১

* হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহকে ভয় করো, ঠিক যতোটুকু ভয় তাঁকে করা উচিত, (আল্লাহ্র কাছে সম্পূর্ণ) আত্মসমর্পণকারী না হয়ে তোমরা কখনো মৃত্যু বরণ করো না। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০২

* তোমরা সবাই মিলে আল্লাহ্র রশিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না, তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহ্র (সেই) নেয়ামতের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা একে অপরের দুশমন ছিলে, অতপর আল্লাহ্ তায়ালা (তাঁর দ্বীনের বন্ধন দিয়ে) তোমাদের একের জন্যে অপরের মনে ভালোবাসার সঞ্চার করে দিলেন, অতপর (যুগ যুগান্তরের শত্রুতা ভুলে) তোমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহে একে অপরের ‘ভাই' হয়ে গেলে, অথচ তোমরা ছিলে (হানাহানির) অগ্নিকুন্ডের প্রান্তসীমায়, অতপর সেখান থেকে আল্লাহ্ তায়ালা (তাঁর রহমত দিয়ে) তোমাদের উদ্ধার করলেন; আল্লাহ্ তায়ালা এভাবেই তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের কাছে স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারো । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০৩

* তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (মানুষদের কল্যাণের দিকে ডাকবে, সত্য ও) ন্যায়ের আদেশ দেবে, আর (অসত্য ও) অন্যায় কাজ থেকে (তাদের) বিরত রাখবে; (সত্যিকার অর্থে) এরাই হচ্ছে সাফল্যমন্ডিত | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০৪

* তোমরা (কখনো) তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যাদের কাছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং (নিজেদের মধ্যে) নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে; এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ যাদের জন্যে কঠোর শাস্তি রয়েছে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০৫

* সে (কেয়ামতের) দিন (নিজেদের নেক আমল দেখে) কিছু সংখ্যক চেহারা শুভ্র সমুজ্জ্বল হয়ে যাবে, (আবার) কিছু সংখ্যক মানুষের চেহারা (ব্যর্থতার নথিপত্র দেখার পর) কালো (ও বিশ্রী) হয়ে পড়বে, (হ্যাঁ) যাদের মুখ (সেদিন) কালো হয়ে যাবে (জাহান্নামের প্রহরীরা তাদের জিজ্ঞেস করবে), ঈমানের (নেয়ামত পাওয়ার) পরও কি তোমরা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছিলে? অতপর তোমরা নিজেদের কুফরীর প্রতিফল (হিসেবে) এ আযাব উপভোগ করতে থাকো! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০৬

* আর যাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল হবে, তারা (সেদিন) আল্লাহ্ তায়ালার (অফুরন্ত) দয়ার আশ্রয়ে থাকবে, তারা সেখানে থাকবে চিরদিন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০৭

* এর সব কিছুই হচ্ছে আল্লাহ্র নিদর্শন, যথাযথভাবে আমি সেগুলো তোমাকে পড়ে শোনাচ্ছি; কেননা আল্লাহ্ তায়ালা (তাঁর আয়াতসমুহ গোপন রেখে এবং পরে সে জন্যে শাস্তির বিধান করে) সৃষ্টিকুলের ওপর কোনো যুলুম করতে চান না | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০৮

* (মূলত) আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্র জন্যে; সব কিছুকে একদিন আল্লাহ্র দিকেই ফিরিয়ে দেয়া হবে | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ  ১০৯

* তোমরাই (হচ্ছো দুনিয়ার) সর্বোত্তম জাতি, সমগ্র মানব জাতির (কল্যাণের) জন্যেই তোমাদের বের করে আনা হয়েছে, (তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে) তোমরা দুনিয়ার মানুষদের সত্ কাজের আদেশ দেবে এবং অসত্ কাজ থেকে বিরত রাখবে, আর তোমরা নিজেরাও আল্লাহ্র ওপর (পুরোপুরি) ঈমান আনবে, আহলে কেতাবরা যদি (সত্যি সত্যিই) ঈমান আনতো তাহলে এটা তাদের জন্যে কতোই না ভালো হতো; তাদের মধ্যে কিছু কিছু ঈমানদার ব্যক্তিও রয়েছে, তবে তাদের অধিকাংশই হচ্ছে সত্যত্যাগী লোক | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১০

* সামান্য কিছু দুঃখ কষ্ট দেয়া ছাড়া তারা তোমাদের কখনো কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, তারা যদি কোনো সময় তোমাদের সাথে সম্মুখসমরে লপ্তি হয়, তাহলে তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, অতপর তাদের কোনো রকম সাহায্য করা হবে না | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১১

* যেখানেই এদের পাওয়া যাবে সেখানেই এদের অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে রাখা হবে, তবে আল্লাহ্ তায়ালার নিজের প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতি (-র মাধ্যমে কিছুটা নিরাপত্তা পাওয়া গেলে সেটা) ভিন্ন, এরা (আল্লাহ্র ক্রোধ ও) গযবের পাত্র হয়েছে, এদের ওপর দারিদ্র ও লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এর কারণ ছিলো, এরা আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর বিধানকে অস্বীকার করেছে, (আল্লাহ্র) নবীদের এরা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে; (মূলত) এ হচ্ছে তাদের বিদ্রোহ ও সীমালংঘনের ফল | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১২

* তারা (আহলে কেতাব) আবার সবাই এক রকম নয়, তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে; যারা (সত্য ও ন্যায়ের ওপর অবিচল হয়ে) দাড়িয়ে আছে, যারা সারা রাত আল্লাহ্র কেতাব পাঠ করে এবং নামায পড়ে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১৩

* তারা আল্লাহ্ তায়ালা ও শেষ বিচার দিনের ওপর ঈমান রাখে এবং (মানুষদের) তারা ন্যায় কাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, সৎকাজে এরা প্রতিযোগিতা করে, এ (ধরনের) মানুষরাই হচ্ছে (মূলত) নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১৪

* তারা যা কিছু ভালো কাজ করবে (প্রতিদান দেয়ার সময়) তা কখনো অস্বীকার করা হবে না; (কারণ) আল্লাহ্ তায়ালা পরহেযগার লোকদের ভালো করেই জানেন । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১৫

* (একথা) সুনিশ্চিত, যারা আল্লাহ্ তায়ালাকে অস্বীকার করে, তাদের ধন সম্পদ, সন্তান সন্ততি আল্লাহ্ তায়ালার মোকাবেলায় তাদের কোনোই উপকারে আসবে না; বরং তারা হবে (নিশ্চিত) জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে অনন্তকাল তারা পড়ে থাকবে । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১৬

* এ (ধরনের) লোকেরা এ দুনিয়ার জীবনে যা খরচ করে, তার উদাহরণ হচ্ছে, যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছে সেই দলের শস্যক্ষেত্রের ওপর দিয়ে প্রবাহমান হীমশীতল (তীব্র) বাতাসের মতো, যা (তাদের শস্যক্ষেত) বরবাদ করে দিয়ে গেলো; (মূলত) আল্লাহ্ তায়ালা তাদের ওপর কোনোই অবিচার করেননি; বরং (কুফরীর পন্থা অবলম্বন করে) এরা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১৭

* হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা কখনো নিজেদের (দলভুক্ত) লোকজন ছাড়া অন্য কাউকে নিজেদের (অন্তরংগ) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, কেননা এরা তোমাদের অনষ্টি সাধনের কোনো পথই অনুসরণ করতে দ্বিধা করবে না, তারা তো তোমাদের ক্ষতি (ও ধ্বংস)-ই কামনা করে, তাদের (জঘন্য) প্রতিহিংসা ও (বিদ্বেষ) তাদের মুখ থেকেই (এখন) প্রকাশ পেতে শুরু করেছে, অবশ্য তাদের অন্তরে লুকানো হিংসা ও বিদ্বেষ) বাইরের অবস্থার চাইতেও মারাত্মক, আমি সব ধরনের নিদর্শনই তোমাদের সামনে খোলাখুলি বলে দিচ্ছি, তোমাদের যদি সত্যিই জ্ঞানবুদ্ধি থাকে (তাহলে তোমরা এ সম্পর্কে সতর্ক হতে পারবে) | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১৮

* এরা হচ্ছে সেসব মানুষ, যাদের তোমরা ভালোবাসো; কিন্তু তারা তোমাদের (মোটেই) ভালোবাসে না, তোমরা তো (তোমাদের আগে আমার নাযিল করা) সব কয়টি কেতাবের ওপরও ঈমান আনো (আর তারা তো তোমাদের কেতাবকে বিশ্বাসই করে না), এ (মোনাফেক) লোকগুলো যখন তোমাদের সাথে সাক্ষাত করে তখন বলে, হ্যাঁ, আমরা (তোমাদের কেতাবকে) মানি, আবার যখন এরা একানেত্ম (নিজেদের লোকদের কাছে) চলে যায়, তখন নিজেদের ক্রোধের বশবর্তী হয়ে এরা তোমাদের (সাফল্যের) ওপর (নিজেদের) আংগুল কামড়াতে শুরু করে; তুমি (তাদের) বলো, যাও, নিজেদের ক্রোধের (আগুনে) নিজেরাই (পুড়ে) মরো, অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা (এ মোনাফেকদের) মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা যাবতীয় (চক্রান্তমূলক) বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১৯

* (তাদের অবস্থা হচ্ছে,) তোমাদের কোনো কল্যাণ হলে (তার কারণে) তাদের খারাপ লাগে, আবার তোমাদের কোনো অকল্যাণ দেখলে তারা আনন্দে ফেটে পড়ে; (এ প্রতিকূল অবস্থায়) যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করতে পারো এবং নিজেরা সাবধান হয়ে চলতে পারো, তাহলে তাদের চক্রান্ত (ও ষড়যন2) তোমাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা তাদের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিবষ্টেন করে আছেন । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২০

* (হে নবী, স্মরণ করো,) যখন তুমি (খুব) ভোরবেলায় তোমার আপনজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মোমেনদের যুদ্ধের ঘাটিসমূহে মোতায়েন করছিলে (তখন তুমি জানতে), আল্লাহ্ তায়ালা সব কিছু শোনেন এবং (তাঁর বান্দাদের) তিনি ভালো করেই জানেন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২১

* (বিশেষ করে সেই নায়ক পরিস্থিতিতে) যখন তোমাদের দু'টো দল মনোবল হারিয়ে ফেলার উপক্রম করে ফেলেছিলো, (তখন) আল্লাহ্ তায়ালাই তাদের উভয় দলের (সেই ভগ্ন মনোবল জোড়া লাগাবার কাজে) অভিভাবক হিসেবে মজুদ ছিলেন, আর আল্লাহ্র ওপর যারা ঈমান আনে তাদের তো (সর্বাবস্থায়) তাঁর ওপরই ভরসা করা উচিত | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২২

* (এই ভরসা করার কারণেই) বদরের (যুদ্ধে) আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের বিজয় ও সাহায্য দান করেছিলেন, অথচ (তোমরা জানো) তোমরা কতো দুর্বল ছিলে; অতএব আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা (আল্লাহর) কৃতজ্ঞতা আদায় করতে সক্ষম হবে | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২৩

* (সে মুহূর্তের কথাও স্মরণ করো,) যখন তুমি মোমেনদের বলছিলে, (যুদ্ধে বিজয় লাভ করার জন্যে ) তোমাদের মালিক যদি আসমান থেকে তিন হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে তোমাদের সাহায্য করেন, তাহলে তোমাদের (বিজয়ের জন্যে তা কি) যথষ্টে হবে না? - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২৪

* অবশ্যই তোমরা যদি ধৈর্য ধারণ করো এবং (শয়তানের চক্রান্ত থেকে) বেঁচে থাকতে পারো, এ অবস্থায় তারা (শত্রবাহিনী) যদি তোমাদের ওপর দ্রুত গতিতে আক্রমণ করে বসে তাহলে তোমাদের মালিক (প্রয়োজনে) পাচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দিয়েও তোমাদের সাহায্য করবেন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২৫

* (আসলে) এ সংখ্যাটা (বলে) আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের জন্যে একটি সুসংবাদ দিয়েছেন, (নতুবা বিজয়ের জন্যে তো তিনি একাই যথষ্টে, আল্লাহ্ তায়ালা চেয়েছেন) যেন এর ফলে তোমাদের মন (কিছুটা) প্রশান্ত (ও আশ্বসত্ম) হতে পারে, আর সাহায্য ও বিজয়! তা তো পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকেই আসে, তিনিই সর্বজ্ঞ। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২৬

* আল্লাহ্ তায়ালা এর দ্বারা কাফেরদের এক দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চান, অথবা তাদের একাংশকে তিনি এর মাধ্যমে লাঞ্ছিত করে দিতে চান, যেন তারা ব্যর্থ হয়ে (যুদ্ধের ময়দান থেকে) ফিরে যায় | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২৭

* (হে নবী), এ ব্যাপারে তোমার কিছুই করার নেই, আল্লাহ্ তায়ালা চাইলে তাদের ওপর দয়াপরবশ হবেন কিংবা তিনি চাইলে তাদের কঠোর শাস্তি দেবেন, কেননা এরা ছিলো (স্পষ্টত) যালেম | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২৮

* আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তার সব হচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন, যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন; আল্লাহ্ তায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১২৯

* হে মানুষ, তোমরা যারা (ইসলামকে একটি পূর্ণাংগ বিধান হিসেবে) বিশ্বাস করেছো, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং তোমরা আল্লাহ্ তায়ালাকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩০

* (জাহান্নামের) আগুনকে তোমরা ভয় করো, যা তৈরী করে রাখা হয়েছে তাদের জন্যে[] যারা (একে) অস্বীকার করেছে, - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩১

* তোমরা আল্লাহ্ তায়ালা ও (তাঁর) রসুলের কথা মেনে চলো, আশা করা যায় তোমাদের ওপর দয়া করা হবে| - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩২

* তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়ার কাজে প্রতিযোগিতা করো, আর সেই জান্নাতের জন্যেও (প্রতিযোগিতা করো) যার প্রশসত্ত্বতা আকাশ ও পৃথিবী সমান, আর এই (বিশাল) জান্নাত প্রসত্মত করে রাখা হয়েছে সে সব (ভাগ্যবান) লোকদের জন্যে, যারা আল্লাহকে ভয় করে, - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩৩

* সচ্ছল হোক কিংবা অসচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা (আল্লাহ্র পথে) নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধসমূহ যারা ক্ষমা করে দেয়; (আসলে) ভালো মানুষদের আল্লাহ্ তায়ালা (হামেশাই) ভালোবাসেন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩৪

* (ভালো মানুষ হচ্ছে তারা,) যারা[] যখন কোনো অশীল কাজ করে ফেলে কিংবা (এর দ্বারা) নিজেদের ওপর নিজেরা যুলুম করে ফেলে (সাথে সাথেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহ্র) ক্ষমা প্রার্থনা করে| কেননা আল্লাহ্ তায়ালা ছাড়া আর কে আছে যে তাদের গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর অটল হয়েও বসে থাকে না | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩৫

* এই (সে বৈশষ্ট্যিমন্ডিত) মানুষগুলো! মালিকের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিদান হবে, আল্লাহ্ তায়ালা তাদের ক্ষমা করে দেবেন, আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দেবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে। (সত্) কর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহ্র পক্ষ থেকে) কতো সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩৬. 

* তোমাদের আগেও (বহু জাতির) বহু উদাহরণ (ছিলো যা এখন) অতীত হয়ে গেছে, সুতরাং (এদের পরিণতি দেখার জন্যে) তোমরা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াও এবং দেখো, (আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর বিধান) মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের পরিণতি কি হয়েছিলো! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩৭

* (বসত্মত) এটি হচ্ছে মানব জাতির জন্যে একটি (সুস্পষ্ট) ব্যাখ্যা এবং আল্লাহ্ তায়ালাকে যারা ভয় করে এটি তাদের জন্যে একটি সুস্পষ্ট পথনির্দেশ ও সদুপদেশ (বৈ কিছুই নয়) | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩৮

* তোমরা হতোদ্যম হয়ো না, চিনিত্মত হয়ো না, তোমরা যদি (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও তাহলে তোমরাই বিজয়ী হবে | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৩৯

* তোমাদের ওপর যদি (কোনো সাময়িক) আঘাত আসে (এতে মনোক্ষুন্ন হবার কি আছে), এ ধরনের আঘাত তো (সে) দলের ওপরও এসেছে, আর (এভাবেই) আমি মানুষের মাঝে (তাদের উত্থান পতনের) দিনগুলোকে পালাক্রমে অদল-বদল করাতে থাকি, যাতে করে আল্লাহ্ তায়ালা (এ কথাটা) জেনে নিতে পারেন যে, কে (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহ্র ওপর ঈমান রাখে এবং (এর মাধ্যমে) তোমাদের মাঝখান থেকে কিছু 'শহীদ ও আল্লাহ্ তায়ালা তুলে নিতে চান, (মূলত) আল্লাহ্ তায়ালা কখনো যালেমদের পছন্দ করেন না | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪০

* (এর মাধ্যমে তিনি মূলত) ঈমানদার বান্দাদের পরিশুদ্ধ করে কাফেরদের নাসত্মানাবুদ করে দিতে চান । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪১

* তোমরা কি মনে করো তোমরা (এমনি এমনি) বেহেশতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ আল্লাহ্ তায়ালা (পরীক্ষার মাধ্যমে) এ কথা জেনে নেবেন না যে, কে (তাঁর পথে) জেহাদ করতে প্রসত্মত হয়েছে এবং কে (বিপদে) কঠোর ধৈর্য ধারণ করতে পেরেছে! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪২

* তোমরা মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার আগে থেকেই তা কামনা করছিলে, আর (এখন) তো তা দেখতেই পাচ্ছো, দেখতে পাচ্ছো তোমরা নিজেদের (চর্ম) চোখে | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪৩

* মোহাম্মদ একজন রসুল ছাড়া (অতিরিক্ত) কিছুই নয়, তার আগেও বহু রসুল গত হয়ে গেছে (এবং তারা সবাই মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে); তাই সে যদি (আজ) মরে যায় অথবা তাকে যদি কেউ মেরে ফেলে, তাহলে তোমরা কি (তার আনীত হেদায়াত থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেবে? আর যে ব্যক্তিই (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে কখনো আল্লাহ্র (দ্বীনের) কোনোরকম ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, আল্লাহ্ তায়ালা অচিরেই কৃতজ্ঞ বান্দাদের প্রতিফল দান করবেন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪৪

* কোনো প্রাণীই আল্লাহ্র ( সদ্ধিান্ত ও) অনুমতি ছাড়া মরবে না, (আল্লাহ্ তায়ালার কাছে প্রত্যেকটি প্রাণীরই মৃত্যুর) দিনক্ষণ সুনির্দষ্টি (হয়ে আছে,) যে ব্যক্তি পার্থিব পুরস্কারের প্রত্যাশা করে আমি তাকে (এ দুনিয়াতেই) তার কিছু অংশ দান করবো, আর যে ব্যক্তি আখেরাতের পুরস্কারের ইচ্ছা পোষণ করবে আমি তাকে সে (চিরন্তন পাওনা) থেকেই এর প্রতিফল দান করবো এবং অচিরেই আমি (আমার প্রতি) কৃতজ্ঞদের (যথার্থ) প্রতিফল দান করবো | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪৫

* (আল্লাহর) আরো অনেক নবীই (এখানে এসে) ছিলো, সে নবী (আল্লাহ্র পথে) যুদ্ধ করেছে, তার সাথে (আরো যুদ্ধ করেছে) অনেক সাধক (ও জ্ঞানবান) ব্যক্তি, আল্লাহ্র পথে তাদের ওপর যতো বিপদ-মসিবতই এসেছে তাতে (কোনোদিনই) তারা হতাশ হয়ে পড়েনি, তারা দুর্বলও হয়নি, (বাতিলের সামনে তারা) মাথাও নত করেনি, (এ ধরনের) ধৈর্যশীল ব্যক্তিদেরই আল্লাহ্ তায়ালা ভালোবাসেন । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪৬

* তাদের (মুখে) এছাড়া অন্য কথা ছিলো না যে, তারা বলছিলো, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের যাবতীয় গুনাহখাতা মাফ করে দাও, আমাদের কাজকর্মের সব বাড়াবাড়ি তুমি ক্ষমা করে দাও এবং (বাতিলের মোকাবেলায়) তুমি আমাদের কদমগুলোকে মযবুত রাখো, হক ও বাতিলের (সম্মুখসমরে) কাফেরদের ওপর তুমি আমাদের বিজয় দাও | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪৭

* অতপর আল্লাহ্ তায়ালা এই (নেক) বান্দাদের দুনিয়ার জীবনেও (ভালো) প্রতিফল দিয়েছেন এবং পরকালীন জীবনেও তিনি তাদের উত্তম পুরস্কার দিয়েছেন; আল্লাহ্ তায়ালা নেককার বান্দাদের ভালোবাসেন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪৮

* হে মানুষ, তোমরা যারা (আল্লাহ্র ওপর) ঈমান এনেছো, তোমরা যদি (কথায় কথায়) এ কাফেরদের অনুসরণ করতে শুরু করো, তাহলে এরা তোমাদের (ঈমান) পূর্ববর্তী (জাহেলিয়াতের) অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, ফলে তোমরা নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রসত্ম হয়ে পড়বে । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪৯

* আল্লাহ্ তায়ালাই হচ্ছেন তোমাদের একমাত্র (রক্ষক ও অভিভাবক এবং তিনিই হচ্ছেন তোমাদের উত্তম সাহায্যকারী । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫০

* অচিরেই আমি এ কাফেরদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করে দেবো, কারণ তারা আল্লাহ্র সাথে অন্যদের শরীক (বানিয়ে তাদের অনুসরণ) করেছে, অথচ তাদের এ কাজের সপক্ষে আল্লাহ্ তায়ালা কোনো দলীল-প্রমাণ (তাদের কাছে) পাঠাননি, এদের শেষ গন্তব্যস্থল হচ্ছে (জাহান্নামের) আগুন; যালেমদের বাসস্থান (এই) জাহান্নাম কতো নিকৃষ্ট ! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫১

* (ওহুদের ময়দানে) আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের যে (সাহায্য দেয়ার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা তিনি পালন করেছেন, (যুদ্ধের প্রথম দিকে) তোমরা আল্লাহ্র অনুমতি (ও সাহায্য) নিয়ে তাদের নিমরল করে যাচ্ছিলে! পরে যখন তোমরা সাহস ও মনোবল) হারিয়ে ফেললে এবং (আল্লাহ্র রসুলের বিশেষ একটি) আদেশ পালনের ব্যাপারে মতপার্থক্য শুরু করে দিলে, এমনকি আল্লাহর রসুল যখন তোমাদের ভালোবাসার সেই জিনিস (তথা আসন্ন বিজয়) দেখিয়ে দিলেন, তারপরও তোমরা তার কথা অমান্য করে (তার বলে দেয়া স্থান ছেড়ে) চলে গেলে, তোমাদের কিছু লোক (ঠিক তখন) বৈষয়িক ফায়দা হাসিলে ব্যসত্ম হয়ে পড়লো, (অপর দিকে) তখনও তোমাদের কিছু লোক পরকালের কল্যাণই চাইতে থাকলো, অতপর আল্লাহ্ তায়ালা (এর দ্বারা তোমাদের ঈমানের) পরীক্ষা নিতে চাইলেন এবং তা থেকে তোমাদের অন্য দিকে ফিরিয়ে দিলেন, অতপর আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের মাফ করে দিলেন, আল্লাহ্ তায়ালা (হামেশাই) ঈমানদারদের ওপর দয়াবান | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫২

* (ওহুদের সম্মুখসমরে বিপর্যয় দেখে) তোমরা যখন (ময়দান ছেড়ে পাহাড়ের) ওপরের দিকে ওঠে যাচ্ছিলে এবং তোমরা তোমাদের কোনো লোকের প্রতি লক্ষ্য রাখছিলে না, অথচ আল্লাহ্র রসুল তোমাদের (তখনও) পেছন থেকে ডাকছিলো (কিন্তু তোমরা শুনলে না), তাই আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের দুঃখের পর দুঃখ দিলেন, যেন তোমাদের কাছ থেকে যা হারিয়ে গেছে এবং যা কিছু বিপদ তোমাদের ওপর পতিত হয়েছে এর (কোনোটার) ব্যাপারে তোমরা উদ্বিগ্ন (ও মর্মাহত) না হও, আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের সব ধরনের কর্মকান্ড সম্পর্কেই ওয়াকেফহাল রয়েছেন । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৩

* এর পর আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের ওপর এমন সনেত্মাষ (-জনক পরিস্থিতি) নাযিল করে দিলেন যে, তা তোমাদের একদল লোককে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে দেয়, আর আরেক দল, যারা নিজেরাই নিজেদের উদ্বিগ্ন করে রেখেছিলো, তারা তাদের জাহেলী যুগের) ধারণা অনুযায়ী আল্লাহ্ তায়ালা সম্পর্কে অন্যায় ধারণা করতে থাকে, (এক পর্যায়ে) তারা এও বলতে শুরু করে, (যুদ্ধ পরিচালনার) এ কাজে কি আমাদের কোনো ভূমিকা আছে? (হে নবী,) তুমি (তাদের) বলো, (এ ব্যাপারে আমারও কোনো ভূমিকা নেই, ক্ষমতা ও) কতরত্বের সবটুকই আল্লাহর হাতে, (এই দলের) লোকেরা তাদের মনের ভেতর যেসব কথাবার্তা গোপন করে রেখেছে তা তোমার সামনে (খোলাখুলি) প্রকশ করে না; তারা বলে, এ (যুদ্ধ পরিচালনার) কাজে যদি আমাদের কোনো ভূমিকা থাকতো, তাহলে আজ আমরা এখানে নিহত হতাম না; তুমি তাদের বলে দাও, যদি আজ তোমরা সবাই ঘরের ভেতরেও থাকতে তবুও নিহত হওয়া যাদের অবধারিত ছিলো তারা (তাদের মরণের) বিছানার দিকে বের হয়ে আসতো, আর এভাবেই তোমাদের মনের (ভেতর লুকিয়ে রাখা) বিষয়সমূহের ব্যাপারে আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের পরীক্ষা করেন এবং এ (ঘটনার মাঝ) দিয়ে তিনি তোমাদের অন্তরে যা কিছু আছে তাও পরিশুদ্ধ করে দেন, তোমাদের মনের কথা সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা সম্যক ওয়াকেফহাল রয়েছেন । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৪

* দু'টি বাহিনী যেদিন (সম্মুখসমরে) একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলো, সেদিন যারা (ময়দান থেকে) পালিয়ে গিয়েছিলো তাদের একাংশের অর্জিত কাজের জন্যে শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়ে দিয়েছিলো, অতপর (তারা অনুতপ্ত হলে) আল্লাহ্ তায়ালা তাদের ক্ষমা করে দিলেন; আল্লাহ্ তায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম ধৈর্যশীল | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৫

* হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা কাফেরদের মতো হয়ো না (তাদের অবস্থা ছিলো এমন), এ কাফেরদের কোনো ভাই (বন্ধু) যখন বিদেশ (বিভূঁইয়ে) মারা যেতো, কিংবা কোনো যুদ্ধে লপ্তি হতো, তখন এরা (তাদের সম্পর্কে) বলতো, এরা যদি (বাইরে না গিয়ে) আমাদের কাছে থাকতো, তাহলে এরা কিছুতেই মরতো না এবং এরা নিহতও হতো না, এভাবেই এ (মানসিকতা)-কে আল্লাহ্ তায়ালা তাদের মনের আক্ষেপে পরিণত করে দেন, (আসলে) আল্লাহ্ই মানুষের জীবন দেন, আল্লাহ্ই মানুষের মৃত্যু ঘটান এবং তোমরা (এই দুনিয়ায়) যা করে যাচ্ছো আল্লাহ্ তায়ালা তার সব কিছুই দেখেন। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৬

* তোমরা যদি আল্লাহ্র পথে নিহত হও অথবা (সে পথে থেকেই) তোমরা মৃত্যুবরণ করো, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে (যে) রহমত ও ক্ষমা (লাভ করবে), তা হবে (কাফেরদের) সঞ্চিত অর্থ সামগ্রীর চাইতে অনেক বেশী উত্তম! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৭

* (আল্লাহ্র পথে) যদি তোমরা জীবন বিলিয়ে দাও, অথবা (তাঁরই পথে) তোমাদের মৃত্যু হয়, (তাহলেই তোমাদের কি করার থাকবে? কারণ,) তোমাদের তো একদিন আল্লাহ্ তায়ালার সমীপে (এমনিই) একত্রিত করা হবে | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৮

* এটা আল্লাহ্র এক (অসীম) দয়া যে, তুমি এদের সাথে ছিলে কোমল প্রকৃতির (মানুষ, এর বিপরীতে) যদি তুমি নিষ্ঠুর ও পাষাণ হৃদয়ের (মানুষ) হতে, তাহলে এসব লোক তোমার আশপাশ থেকে সরে যেতো, অতএব তুমি এদের (অপরাধসমূহ) মাফ করে দাও, এদের জন্যে (আল্লাহ্র কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং কাজকর্মের ব্যাপারে এদের সাথে পরামর্শ করো, অতপর (সে পরামর্শের ভিত্তিতে) সংকল্প একবার যখন তুমি করে নেবে তখন (তার সফলতার জন্যে) আল্লাহ্র ওপর ভরসা করো; অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা (তাঁর ওপর) নির্ভরশীল মানুষদের ভালোবাসেন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৯

* যদি আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের সাহায্য করেন তাহলে কোনো শক্তিই তোমাদের পরাজিত করতে পারবে না, আর তিনিই যদি তোমাদের পরিত্যাগ করেন তাহলে (এখানে) এমন কোন শক্তি আছে যে অতপর তোমাদের কোনোরকম সাহায্য করতে পারে! কাজেই আল্লাহ্র ওপর যারা ঈমান আনে তাদের আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬০

* (কোনো) নবীর পক্ষেই (কোনো বসার) খেয়ানত করা সম্ভব নয়; (হ্যাঁ মানুষের মধ্যে) কেউ যদি কিছু খেয়ানত করে তাহলে কেয়ামতের দিন সে ব্যক্তিকে তার (খেয়ানতের) সে বসত্মসহ (আল্লাহ্র দরবারে) হাযির হতে হবে, অতপর প্রত্যেককেই তার অর্জিত (ভালো মন্দের) পাওনা সঠিকভাবে আদায় করে দেয়া হবে, (সেদিন) তাদের কারো ওপর অবিচার করা হবে না | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬১

* যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করে, তার সাথে কিভাবে সে ব্যক্তির তুলনা করা যায়, যে আল্লাহ্র বিরোধী পথে চলে শুধু তাঁর ক্রোধই অর্জন করেছে, তার (এমন ব্যক্তির) জন্যে জাহান্নামের আগুন হবে একমাত্র বাসস্থান; আর তা (হবে সত্যিই) একটি নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬২

* এরা নিজ নিজ আমল অনুযায়ী আল্লাহ্র কাছে বিভিন্ন সত্ত্বরে (বিভক্ত) হবে, আল্লাহ্ তায়ালা এদের সব ধরনের কার্যকলাপের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬৩

* আল্লাহ্ তায়ালা অবশ্যই তাঁর ঈমানদার বান্দাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝ থেকে একজন ব্যক্তিকে রসুল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে আল্লাহ্ কেতাবের আয়াতসমূহ পড়ে শোনায় এবং (সে অনুযায়ী) সে তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে, (সর্বোপরি) সে (নবী) তাদের আল্লাহ্র কেতাব ও (তাঁর গ্রন্থলব্ধ) জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, অথচ এরা সবাই ইতিপূর্বে স্পষ্ট ভ্রানিত্মতে নিমজ্জিত ছিলো | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬৪

* যখনি তোমাদের ওপর (ওহুদ যুদ্ধের) বিপদ নেমে এলো তখনি তোমরা বলতে শুরু করলে, (পরাজয়ের) এ বিপদ কিভাবে এলো (কার দোষে এলো )? অথচ (বদরের যুদ্ধে) এর চাইতে দ্বিগুণ (পরাজয়ের) বিপদ তো তোমরাই তাদের ঘটিয়েছিলে; (হে নবী,) তুমি বলো, এটা এসেছে তোমাদের নিজেদের কারণেই; আল্লাহ্ তায়ালা সর্ববিষয়ের ওপর (অসীম ক্ষমতায়) ক্ষমতাবান | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬৫

* (ওহুদের ময়দানে) দু'দলের সম্মুখ লড়াইয়ের দিনে যে (সাময়িক বিপর্যয় তোমাদের ওপর এসেছিলো, তা (এসেছে) আল্লাহ্র ইচ্ছায়, এ (বিপর্যয়) দিয়ে আল্লাহ্ তায়ালা (এ কথাটা) জেনে নিতে চান, কারা তাঁর ওপর (সঠিক অর্থে) ঈমান এনেছে | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬৬

* (এর মাধ্যমে) তাদের (পরিচয়ও) তিনি জেনে নেবেন, যারা (এই চরম মুহূর্তে) মোনাফেকী) করেছে, এ মোনাফেকদের যখন বলা হয়েছিলো যে, (সবাই এক সাথে) আল্লাহ্র পথে লড়াই করো, অথবা (কমপক্ষে নিজেদের শহরের) প্রতিরক্ষাটুকু তোমরা করো, তখন তারা বললো, যদি আমরা জানতাম আজ (সত্যি সত্যিই) যুদ্ধ হবে, তাহলে অবশ্যই আমরা তোমাদের অনুসরণ করতাম, (এ সময়) তারা ঈমানের চাইতে কুফরীরই বেশী কাছাকাছি অবস্থান করছিলো, এরা মুখে এমন সব কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই; আর এরা যা কিছু গোপন করে আল্লাহ্ তায়ালা তা সম্যক অবগত আছেন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬৭

* (এরা হচ্ছে সেসব মোনাফেক), যারা (যুদ্ধে শরীক না হয়ে ঘরে) বসে থাকলো (এবং) ভাইদের সম্পর্কে বললো, তারা যদি (তাদের মতো ঘরে বসে থাকতো এবং) তাদের কথা শুনতো, তাহলে তারা (আজ এভাবে) মারা পড়তো না; (হে নবী,) তুমি (এ মোনাফেকদের) বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে তোমাদের থেকে মৃত্যু সরিয়ে দাও । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬৮

* যারা আল্লাহ্র পথে নিহত হয়েছে তাদের তোমরা কোনো অবস্থাতেই 'মৃত বলো না, তারা তো জীবিত, তাদের মালিকের পক্ষ থেকে (জীবিত লোকদের মতোই) তাদের রেযেক দেয়া হচ্ছে| - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬৯

* আল্লাহ্ তায়ালা নিজ অনুগ্রহ দিয়ে তাদের যা কিছু দান করেছেন তাতেই তারা পরিতৃপ্ত এবং যারা এখনো তাদের পেছনে রয়ে গেছে, যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হতে পারেনি, তাদের ব্যাপারেও এরা খুশী, কেননা এমন ধরনের লোকদের জন্যে (এখানে) কোনো ভয় নেই এবং তারা (সে দিন কোনোরকম) চিন্তাও করবে না | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭০

* এ (ভাগ্যবান) মানুষরা আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত নেয়ামত ও অনুগ্রহে উৎফুল আনন্দিত হয়, (কারণ) আল্লাহ্ তায়ালা ঈমানদার বান্দাদের পাওনা কখনো বিনষ্ট করেন না । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭১

* (ওহুদের এতো বড়ো) আঘাত আসার পরও যারা (আবার) আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর রসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে আরো যারা নেক কাজ করেছে, (সর্বোপরি) সর্বদা যারা আল্লাহকে ভয় করে চলেছে, এদের সবার জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭২

* [যাদের] মানুষরা যখন বললো, তোমাদের বিরুদ্ধে (কাফেরদের) এক বিশাল বাহিনী জমায়েত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদের ভয় করো, (এ বিষয়টাই যারা যথার্থ ঈমানদার) তাদের ঈমানকে আরো বাড়িয়ে দিলো, তারা বললো, আল্লাহ্ তায়ালাই আমাদের জন্যে যথষ্টে এবং তিনিই হলেন উত্তম কর্মবিধায়ক | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭৩

* অতপর আল্লাহ্র নেয়ামত ও অনুগ্রহ নিয়ে এরা (এমনভাবে) ফিরে এলো যে, কোনো প্রকার অনষ্টিই তাদের সস্পর্শ করতে পারলো না, এরা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির পথই অনুসরণ করলো; (বসত্মত) আল্লাহ্ তায়ালা মহা অনুগ্রহশীল। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭৪

* এই হচ্ছে তোমাদের (প্ররোচনাদানকারী) শয়তান, তারা (শত্রুপক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তাদের আপনজনদের ভয় দেখাচ্ছিলো, তোমরা কোনো অবস্থায়ই তাদের (এ হুমকিকে) ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭৫

* (হে নবী,) যারা দ্রুতগতিতে কুফরীর পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের কর্মকান্ড যেন তোমাকে চিন্তান্বিত না করে, তারা কখনো আল্লাহ্র বিন্দুমাত্র কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না; (মূলত) আল্লাহ্ তায়ালা এদের জন্যে পরকালে (পুরস্কারের) কোনো অংশই রাখতে চান না, তাদের জন্যে অবশ্যই কঠিন আযাব রয়েছে । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭৬

* যারা ঈমানের বদলে কুফরী খরিদ করে নিয়েছে, তারা আল্লাহ্র (কোনোই) ক্ষতি করতে পারবে না, এদের জন্যে মর্মানিত্মক শাস্তির বিধান রয়েছে । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭৭

* কাফেররা যেন এটা কখনো মনে না করে, আমি যে তাদের ঢিল দিয়ে রেখেছি এটা তাদের জন্যে কল্যাণকর হবে, (আসলে) আমি তো তাদের অবকাশ দিচ্ছি যেন, তারা তাদের গুনাহ (-এর বোঝা) আরো বাড়িয়ে নিতে পারে, আর (তোমাদের মধ্যে) তাদের জন্যেই (প্রসত্মত) রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক আযাব | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭৮

* আল্লাহ্ তায়ালা কখনো তাঁর ঈমানদার বান্দাদের[] তোমরা বর্তমানে যে (ভালো মন্দে মিশানো) অবস্থার ওপর আছো এর ওপর ছেড়ে দিতে চান না, যতোক্ষণ না তিনি সত্বোকদের অসত্ লোকদের থেকে আলাদা করে দেবেন; (একইভাবে) এটা আল্লাহ্ তায়ালার কাজ নয় যে, তিনি তোমাদের অদৃশ্য জগতের (খাজ খবরের ওপর) কিছু অবহিত করবেন, তবে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর রসুলদের মাঝ থেকে যাকে চান তাকে (বিশেষ কোনো কাজের জন্যে) বাছাই করে নেন, অতপর তোমরা আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর রসুলদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো, তোমরা যদি আল্লাহ্র ওপর যথাযথভাবে ঈমান আনো এবং নিজেরা সাবধান হয়ে চলতে পারো, তাহলে তোমাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৭৯

* আল্লাহ্ তায়ালা নিজের অনুগ্রহ দিয়ে তাদের যে প্রাচুর্য দিয়েছেন যারা তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করতে কার্পণ্য করে | তারা যেন কখনো এটা মনে না করে, এটা তাদের জন্যে কোনো কল্যাণকর কিছু হবে; না, এ কৃপণতা (আসলে) তাদের জন্যে খুবই অকল্যাণকর। কার্পণ্য করে তারা যা জমা করেছে, অচিরেই কেয়ামতের দিন তা দিয়ে তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে, আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার তো আল্লাহ্ তায়ালার জন্যেই, আর তোমাদের প্রতিটি কার্যকলাপ সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা বিশেষভাবে অবগত রয়েছেন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮০

* আল্লাহ্ তায়ালা সেই (ইহুদী) লোকদের কথা (ভালো করেই) শুনেছেন, যখন তারা (বিদ্রূপ করে) বলেছিলো (হ্যাঁ), আল্লাহ্ তায়ালা অবশ্যই গরীব, আর আমরা হচ্ছি ধনী, তারা যা কিছু বলে তা আমি (তাদের হিসেবের খাতায় লিখে রাখবো, (আমি আরো লিখে রাখবো) অন্যায়ভাবে তাদের নবীদের হত্যা করার বিষয়টিও, (সেদিন) আমি তাদের বলবো, এবার এই জাহান্নামের স্বাদ উপভোগ করো | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮১

* এ (আযাব) হচ্ছে তোমাদের নিজেদেরই হাতের কামাই, যা তোমরা (আগেই এখানে) পাঠিয়েছো, আল্লাহ্ তায়ালা কখনো তাঁর নিজ বান্দাদের প্রতি অবিচারক নন | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮২

* যারা বলে, (স্বয়ং) আল্লাহ্ তায়ালাই তো আমাদের আদেশ দিয়েছেন যেন আমরা কোনো রসুলের ওপর ঈমান না আনি, যতোক্ষণ না সে আমাদের কাছে এমন একটা কোরবানী এনে হাযির করবে, যাকে (গায়ব থেকে এক) আগুন এসে খেয়ে ফেলবে; (হে মোহাম্মদ,) তুমি (তাদের বলো, হ্যাঁ আমার আগেও তোমাদের কাছে বহু নবী রসুল এসেছে, তারা সবাই উজ্জ্বল নিদর্শন নিয়েই এসেছিলো, তোমরা (আজ) যে কথা বলছো তা সহই তো তারা এসেছিলো, তা সত্ত্বেও তোমরা তাদের হত্যা করলে কেন? আজ যদি তোমরা এতোই সত্যবাদী হও (তাহলে কেন এসব আচরণ করলে?) - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮৩

* (হে মোহাম্মদ,) এরা যদি তোমাকে অস্বীকার করে (তাহলে এ নিয়ে তুমি উদ্বিগ্ন হয়ো না, কারণ), তোমার আগেও এমন বহু নবী রসুল (নবুওতের) সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ ও আল্লাহ্র কাছ থেকে নাযিল করা হেদায়াতের দীপ্তিমান গ্রন্থমালা নিয়ে এসেছিলো, তাদেরও (এমনিভাবেই) অস্বীকার করা হয়েছিলো | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮৪

* প্রত্যেক প্রাণীই মরণের স্বাদ ভোগ করবে; (অতপর) তোমাদের (জীবনভর) কামাইর প্রতিফল কেয়ামতের দিন আদায় করে দেয়া হবে, যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে বাচিয়ে দেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফল ব্যক্তি | (মনে রেখো,) এই পার্থিব জীবন কিছু বাহ্যিক ছলনার মাল সামানা ছাড়া আর কিছুই নয় | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮৫

* (হে ঈমানদার ব্যক্তিরা,) নিশ্চয়ই জান মালের (ক্ষতি সাধনের) মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা নেয়া হবে । (এ পরীক্ষা দিতে গিয়ে) তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায় যাদের কাছে আল্লাহর কেতাব নাযিল হয়েছিলো এবং যারা আল্লাহ্র সাথে অন্যদের শরীক করেছে, তাদের (উভয়ের) কাছ থেকে অনেক (কষ্টদায়ক) কথাবার্তা শুনবে; এ অবস্থায় তোমরা যদি ধৈর্য ধারণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করে চলো, তাহলে তা হবে অত্যন্ত বড়ো ধরনের এক সাহসিকতার ব্যাপার । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮৬

* (স্মরণ করো,) যখন আল্লাহ্ তায়ালা এই কেতাবধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলেন, (তিনি তাদের বলেছিলেন) তোমরা একে মানুষদের কাছে বর্ণনা করবে এবং একে তোমরা গোপন করবে না, কিন্তু তারা এ প্রতিশ্রুতি নিজেদের পেছনে ফেলে রাখলো এবং অত্যন্ত অল্প মুল্যে তা বিক্রি করে দিলো; বড়োই নিকৃষ্ট ছিলো (যেভাবে) তারা সে বেচাকেনার কাজটি করলো! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮৭

* এমন সব লোকদের ব্যাপারে তুমি কখনো ভেবো না যারা নিজেরা যা করে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে, আবার নিজেরা যা কখনো করেনি তার জন্যেও প্রশংসিত হতে ভালোবাসে, তুমি কখনো ভেবো না যে, এরা (বুঝি) আল্লাহ্র আযাব থেকে অব্যাহতি পেয়ে গেছে, (মূলত) এদের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮৮

* আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বেেভৗমত্ব এককভাবে আল্লাহ্র জন্যে; আল্লাহ্ তায়ালাই সবকিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৮৯

* নিসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমীনের (নিখুঁত) সৃষ্টি এবং দিবা রাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবান লোকদের জন্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে। - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯০

* (এই জ্ঞানবান লোক হচ্ছে তারা) যারা দাড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তায়ালাকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের এই সৃষ্টি (নৈপুণ্য) সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করে (এবং স্বতস্ফূর্তভাবে তারা বলে ওঠে), হে আমাদের মালিক, (সৃষ্টি জগত)-এর কোনো কিছুই তুমি অযথা বানিয়ে রাখোনি, তোমার সত্তা অনেক পবিত্র, অতএব তুমি আমাদের জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে নিষ্কৃতি দাও | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯১

* হে আমাদের মালিক, যাকেই তুমি জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমানিত করবে, (আর সেই অপমানের দিনে) যালেমদের জন্যে কোনোরকম সাহায্যকারীই থাকবে না | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯২

* হে আমাদের মালিক, আমরা শুনতে পেয়েছি একজন আহ্বানকারী (নবী মানুষদের) ঈমানের দিকে ডাকছে (সে বলছিলো, হে মানুষরা), তোমরা তোমাদের মালিক আল্লাহর ওপর ঈমান আনো, (হে মালিক, সেই আহ্বানকারীর কথায়) অতপর আমরা ঈমান এনেছি, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দাও, (হিসাবের খাতা থেকে) আমাদের দোষত্রুটি ও গুনাহসমূহ মুছে দাও, (সর্বশেষে তোমার) নেক লোকদের সাথে তুমি আমাদের মৃত্যু দাও | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯৩

* হে আমাদের মালিক, তুমি তোমার নবী রসুলদের মাধ্যমে যেসব ( পুরস্কারের) প্রতিশ্রুতি দিয়েছো তা আমাদের দান করো এবং কেয়ামতের দিন তুমি আমাদের অপমানিত করো না; নিশ্চয়ই তুমি কখনো ওয়াদার বরখেলাপ করো না । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯৪

* অতএব তাদের মালিক (এই বলে) তাদের আহ্বানে সাড়া দিলেন যে, আমি নর-নারী নির্বিশেষে তোমাদের কোনো কাজ কখনো বিনষ্ট করবো না, (আমি সবার কাজের বিনিময়ই দেবো) এবং তোমরা তো একে অপরেরই অংশ, অতএব (তোমাদের মাঝে) যারা (নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে) হিজরত করেছে এবং যারা নিজেদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছে, আমারই পথে যারা নির্যাতিত হয়েছে, (সর্বোপরি) যারা (আমার জন্যে) লড়াই করেছে এবং (আমারই জন্যে) জীবন দিয়েছে, আমি তাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবো, অবশ্যই আমি এদের (এমন) জান্নাতে প্রবেশ করাবো, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, এ হচ্ছে (তাদের জন্যে) আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে পুরস্কার, আর উত্তম পুরস্কার তো আল্লাহ্ তায়ালার কাছেই রয়েছে! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯৫

* (হে মোহাম্মদ,) জনপদসমূহে যারা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করেছে, তাদের (দাম্ভিক) পদচারণা যেন কোনোভাবেই তোমাকে বিভ্রান্ত করতে না পারে | - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯৬

* (কেননা এসব কিছু হচ্ছে) সামান্য (কয়দিনের) সামগ্রী মাত্র, অতপর তাদের (সবারই অনন্ত ) নিবাস (হবে) জাহান্নাম; আর জাহান্নাম হচ্ছে নিকৃষ্টতম আবাসস্থল! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯৭

* তবে যারা নিজেদের মালিককে ভয় করে চলে, তাদের জন্যে নির্দষ্টি হয়ে আছে (সুরমা) উদ্যানমালা, যার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হবে ঝর্ণাধারা, সেখানে তারা অনাদিকাল থাকবে, এ হবে আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে (তাদের জন্যে) আতিথেয়তা, আর আল্লাহ্ তায়ালার কাছে যা (পুরস্কার সংরক্ষিত) আছে, তা অবশ্যই নেককার লোকদের জন্যে অতি উত্তম জিনিস! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯৮

* (ইতিপূর্বে) আমি যাদের কাছে কেতাব পাঠিয়েছি, সেসব কেতাবধারী লোকদের মাঝে এমন লোক অবশ্যই আছে, যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তোমাদের এই কেতাবের ওপর তারা (যেমনি) বিশ্বাস করে (তেমনি) তারা বিশ্বাস করে তাদের ওপর প্রেরিত কেতাবের ওপরও, এরা আল্লাহ্র জন্যে ভীত সন্ত্রসত্ম ও বিনয়ী বান্দা, এরা আল্লাহ্র আয়াতকে (স্বার্থের বিনিময়ে) সামান্য মূল্যে বিক্রি করে না, এরাই হচ্ছে সেসব ব্যক্তি, যাদের জন্যে তাদের মালিকের কাছ থেকে অগাধ পুরস্কার রয়েছে, নিসন্দেহে আল্লাহ্ তায়ালা হচ্ছেন দ্রুত হিসাব সম্পন্নকারী । - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯৯

* হে মোমেনরা, তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, (ধৈয্যের এ কাজে) একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করো, (শত্রুর মোকাবেলায়) সুদৃঢ় থেকো, একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করো, (এভাবেই) আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হতে পারবে! - সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ২০০


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url