আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল বাক্বারা বাংলা অনুবাদ | সূরা আল বাক্বারা | Surah Al Baqarah | سورة البقرة




সূরা আল বাক্বারা বাংলা অনুবাদ


সূরা আল বাক্বারা, মদীনায় অবতীর্ণ, আয়াত ২৮৬, রুকু ৪০

সূরা আল বাক্বারা


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে,


আলিফ লাম মীম। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১

(এই) সেই (মহা) গ্রন্থ (আল কোরআন), তাতে (কোনো) সন্দেহ নেই, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে (এই কিতাব কেবল) তাদের জন্যেই পথপ্রদর্শক, -সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২

যারা গায়বের ওপর ঈমান আনে, যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, তাদের আমি যা কিছু দান করেছি তারা তা থেকে (আমারই নিদের্শিত পথে) ব্যয় করে, - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩

যারা তোমার ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার ওপর ঈমান আনে (ঈমান আনে) তোমার আগে (নবীদের ওপর) যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার ওপর, (সর্বোপরি) তারা পরকালের ওপরও দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪

(সত্যিকার অর্থে) এ লোকগুলোই তাদের মালিকের (দেখানো) সঠিক পথের ওপর রয়েছে এবং এরাই হচ্ছে সফলকাম, - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫

যারা (এ বিষয়গুলো) অস্বীকার করে, তাদের তুমি (পরকালের কথা বলে) সাবধান করো আর না করো, (কার্যত) উভয়টাই (তাদের জন্যে) সমান (কথা), এরা কখনো ঈমান আনবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬

(ক্রমাগত কুফরী করার কারণে) আল্লাহ তায়ালা তাদের মন মগ্য ও শোনার ওপর মোহর মেরে দিয়েছেন, এদের দেখার ওপরও (এক ধরনের) আবরণ পড়ে আছে এবং তাদের জন্যে (পরকালের) কষ্টদায়ক শাস্তি রয়েছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭

মানুষদের মাঝে কিছু (লোক এমনও) আছে যারা (মুখে) বলে, আমরা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর ঈমান এনেছি, কিন্তু (এদের কর্মকান্ড দেখলে তুমি বুঝতে পারবে) এরা (মোটেই) ঈমানদার নয়। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮

(মুখে ঈমানের দাবী করে) এরা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর নেক বান্দাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে, (মূলত এ কাজের মাধ্যমে) তারা অন্য কাউকে নয়, নিজেদেরই ধোকা দিয়ে যাচ্ছে, যদিও (এ ব্যাপারে) তাদের কোনো প্রকারের চৈতন্য নেই। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯

(আসলে) এদের মনের ভেতর রয়েছে মারাত্বক ব্যাধি, (প্রতারণার কারণে) অতপর আল্লাহ তায়ালা (এদের সে) ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের জন্যে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পীড়াদায়ক আযাব, কেননা, তারা মিথ্যা বলছিলো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০

তাদের যখন বলা হয়, তোমরা (এই শান্তিপূর্ণ) যমীনে অশান্তি (ও বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, না, আমরাই তো হচ্ছি বরং সংশোধনকারী। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১

(অথচ) এরাই হচ্ছে (যমীনে যাবতীয়) বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, যদিও তারা (এ ব্যাপারে) কোনো চৈতন্য রাখে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২

তাদের যখন বলা হয়, অন্য লোকেরা যেমন ঈমান এনেছে তোমরাও তেমনিভাবে ঈমান আনো, তারা বলে (হে নবী, তুমি কি চাও), আমরাও নির্বোধ লোকদের মতো ঈমান আনি? (আসলে) নির্বোধ তো হচ্ছে এরা নিজেরাই, যদিও তারা (এ কথাটা) জানে না! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩

(মোনাফেকদের অবস্থা হচ্ছে,) তারা যখন ঈমানদার লোকদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, (আবার) যখন একাকী তাদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি, (ঈমানের কথা বলে ওদের সাথে) আমরা ঠাট্টা করছিলাম মাত্র! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪

(মূলত) আল্লাহ তায়ালাই তাদের সাথে ঠাট্টা করে যাচ্ছেন, আল্লাহ তায়ালা তাদের অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, তারা তাদের বিদ্রোহে উদ্ভ্রান্তের ন্যায়ই ঘুরে বেড়াচ্ছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫

এরা (জেনে বুঝে) হেদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহী কিনে নিয়েছে, তাদের এ ব্যবসাটা (কিন্তু) মোটেই লাভজনক হয়নি এবং এরা সঠিক পথের অনুসারীও নয়। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬

এদের উদাহরণ হচ্ছে সে (হতভাগ্য) ব্যক্তির মতো, যে (অন্ধকারে) আগুন জ্বালাতে চাইলো, যখন তা তার গোটা পরিবেশটাকে আলোকোজ্জ্বল করে দিলো, তখন (হঠাৎ করে) আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছ থেকে) আলোটুক ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদের (এমন) অন্ধকারে ফেলে রাখলেন যে, তারা কিছুই দেখতে পেলো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭

(এদের অবস্থা হচ্ছে,) এরা (কানেও) শোনে না, ( চোখেও) দেখে না, (মুখ দিয়ে) কথাও বলতে পারে না, অতএব এসব লোক (সঠিক পথের দিকে) ফিরে আসবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮

অথবা (এদের উদাহরণ হচ্ছে), আসমান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির মতো, এর মাঝে রয়েছে (আবার) অন্ধকার, মেঘের গর্জন ও বিদ্যুতের চমক, বিদ্যুতের গর্জন ও মৃত্যুর ভয়ে এরা নিজেদের কানে নিজেদের আংগুল ঢুকিয়ে রাখে (এরা জানে না), আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের (সকল দিক থেকেই) ঘিরে রেখেছেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯

মনে হয় এখনই বিদ্যুত এদের চোখকে নিসপ্রভ করে দেবে; (এ আতংকজনক অবস্থায়) আল্লাহ তায়ালা যখন এদের জন্যে একটু আলো জ্বালিয়ে দেন তখন এরা তার মধ্যে চলতে থাকে, আবার যখন তিনি তাদের ওপর অন্ধকার চাপিয়ে দেন তখন এরা (একটু থমকে) দাঁড়ায়; অথচ আল্লাহ তায়ালা চাইলে (সহজেই) তাদের শোনার ও দেখার (মতা) ছিনিয়ে নিতে পারতেন; নিশ্চয়ই তিনি সর্বশক্তিমান। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০

হে মানুষ, তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব (স্বীকার) করো, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের আগে যারা ছিলো তাদের (সবাইকে) পয়দা করেছেন, আশা করা যায় (এর ফলে) তোমরা (যাবতীয় সংকট থেকে) বেঁচে থাকতে পারবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১

তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি যমীনকে তোমাদের জন্যে শয্যা বানালেন, আসমানকে বানালেন ছাদ এবং আসমান থেকে পানি পাঠালেন, তার সাহায্যে তিনি নানা প্রকারের ফল মূল উৎপাদন করে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থা করলেন, অতপর তোমরা জেনে বুঝে (এ সব কাজে) আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে শরীক করো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২

আমি আমার বান্দার ওপর যে কিতাব নাযিল করেছি, তার (সত্যতার) ব্যাপারে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে যাও_ তার মতো (করে) একটি সূরা তোমরাও (রচনা করে) নিয়ে এসো, এক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তোমাদের আর যেসব বন্ধুবান্ধব রয়েছে তাদেরও (প্রয়োজনে সহযোগিতার জন্যে) ডাকো, যদি তোমরা তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩

কিন্তু তোমরা যদি তা না করতে পারো (এবং আমি জানি), তোমরা তা কখনোই করতে পারবে না, তাহলে তোমরা (দোযখের) সেই কঠিন আগুনকে ভয় করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, (আল্লাহ তায়ালাকে) যারা অস্বীকার করে তাদের জন্যেই (এটা) প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪

অতপর যারা (এ কিতাবের ওপর) ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, তাদের তুমি (হে নবী) সুসংবাদ দাও এমন এক জান্নাতের, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে; যখনি তাদের (এ জান্নাতের) কোনো একটি ফল দেয়া হবে তখনি তারা বলবে, এ ধরনের (ফল) তো ইতিপূর্বেও আমাদের দেয়া হয়েছিলো, তাদের (মূলত) এ ধরনের জিনিসই সেখানে দেয়া হবে; তাদের জন্যে (আরো) সেখানে থাকবে পবিত্র সহধর্মী ও সহধর্মিনী এবং তারা সেখানে অনন কাল ধরে অবস্থান করবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫


(সত্য প্রমাণের জন্যে) আল্লাহ তায়ালা মশা কিংবা তার চাইতে ওপরে যা কিছু আছে তার উদাহরণ দিতেও লজ্জাবোধ করেন না; যারা (আল্লাহর বাণীতে) বিশ্বাস স্থাপন করে তারা জানে, এ সত্য আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে, আর যারা (আগেই) সত্য অস্বীকার করেছে তারা (একে না মানার অজুহাত দিতে গিয়ে) বলে, আল্লাহ তায়ালা এ উদাহরণ দ্বারা কি বুঝাতে চান? (আসলে) একই ঘটনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা অনেক লোককে গোমরাহীতে নিমজ্জিত করলেও বহু লোককে তিনি (আবার) এ দিয়ে হেদায়াতের পথও দেখান, আর কতিপয় পাপাচারী ব্যক্তি ছাড়া তিনি তা দিয়ে অন্য কাউকে গোমরাহীতে নিমজ্জিত করেন না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬

(এরা হচ্ছে সে সব লোক) যারা আল্লাহর ফরমান মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তা ভংগ করে, (ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে) আল্লাহ তায়ালা যেসব সম্পর্ক (-এর ভিত) মযবুত করতে বলেছেন তা তারা ছিন্ন করে, (সর্বোপরি ) যমীনে অহেতুক বিপর্যয় সৃষ্টি করে; এরাই হচ্ছে (আসল) ক্ষতিগ্রস্থ। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭

তোমরা আল্লাহকে কিভাবে অস্বীকার করবে? অথচ তোমরা ছিলে মৃত, তিনিই তোমাদের জীবন দিয়েছেন, পুনরায় তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন, অতপর (সর্বশেষে) তিনিই আবার তোমাদের জীবন দান করবেন এবং (এভাবেই) তোমাদের একদিন তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮

তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি এ পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের (ব্যবহারের) জন্যে তৈরী করেছেন, অতপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং তাকে সাত আসমানে বিন্যস্ত করলেন, তিনি সবকিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত আছেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৯

(হে নবী, স্মরণ করো,) যখন তোমার মালিক (তাঁর) ফেরেশতাদের (সম্বোধন করে) বললেন, আমি পৃথিবীতে (আমার) খলীফা বানাতে চাই; তারা বললো, তুমি কি এমন কাউকে (খলীফা) বানাতে চাও যে (তোমার) যমীনে (বিশৃংখলা ও) বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং (স্বার্থের জন্যে) তারা রক্তপাত করবে, আমরাই তো তোমার প্রশংসা সহকারে তোমার তাসবীহ পড়ছি এবং (প্রতিনিয়ত) তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি; আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩০

আল্লাহ তায়ালা অতপর (তাঁর খলীফা) আদমকে (প্রয়োজনীয়) সব জিনিসের নাম শিখিয়ে দিলেন, পরে তিনি সেগুলো ফেরেশতাদের কাছে পেশ করে বললেন, (তোমাদের আশংকার ব্যাপারে) তোমরা যদি সত্যবাদী হও (তাহলে) তোমরা আমাকে এ নামগুলো বলো তো? - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩১

ফেরেশতারা বললো (হে আল্লাহ তায়ালা), তুমি পবিত্র, আমাদের তো (এর বাইরে আর) কিছুই জানা নেই যা তুমি আমাদের শিক্ষা দিয়েছো; তুমিই একমাত্র জ্ঞানী, একমাত্র কুশলী। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩২

আল্লাহ তায়ালা (এবার) আদমকে বললেন, তুমি তাদের কাছে তাদের নামগুলো বলে দাও, অতএব আদম (আল্লাহর নির্দেশে) তাদের (সামনে) তাদের নামগুলো যখন (সুন্দরভাবে) বলে দিলো, তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আমি আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় না দেখা বস্তুত জানি এবং তোমরা যা কিছু প্রকাশ করো আর যা কিছু গোপন করো আমি তাও ভালোভাবে জানি। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩৩

আল্লাহ তায়ালা যখন ফেরেশতাদের বললেন, তোমরা (সম্মানের প্রতীক হিসেবে) আদমের জন্যে সাজদা করো, অতপর তারা (আল্লাহর আদেশে) আদমের সামনে সাজদা করলো— শুধু ইবলীস ছাড়া; সে সাজদা করতে অস্বীকার করলো এবং অহংকার করলো এবং সে না-ফরমানদের দলে শামিল থেকে গেলো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩৪

আমি বললাম, হে আদম, তুমি এবং তোমার স্ত্রী (পরম সুখে) এই বেহেশতে বসবাস করতে থাকো এবং এ (নেয়ামত) থেকে যা তোমাদের মন চায় তাই তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে আহার করো, তোমরা এ গাছটির পাশেও যেও না, তা (না) হলে তোমরা (দুজনই) সীমালংঘনকারীদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩৫

(কিন্তু) শয়তান (শেষ পর্যন্ত) সেখান থেকে তাদের উভয়ের পদস্খলন ঘটালো, তারা উভয়ে (বেহেশতের) যেখানে ছিলো সেখান থেকে সে তাদের বের করেই ছাড়লো, আর আমি তাদের বললাম, তোমরা একজন আরেক জনের দুশমন হিসেবে এখান থেকে নেমে পড়ো, তোমাদের (পরবর্তী) বাসস্থান (হবে) পৃথিবী, সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের জন্যে জীবনের (যাবতীয়) উপকরণ থাকবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩৬

অতপর আদম তার মালিকের কাছ থেকে (হেদায়াত সম্বলিত) কিছু বাণী পেলো, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ক্ষমাপরবশ হলেন, অবশ্যই তিনি বড়ো মেহেরবান ও ক্ষমাশীল। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩৭

আমি (তাদের) বললাম, তোমরা সবাই (এবার) এখান থেকে নেমে যাও, তবে (যেখানে যাবে অবশ্যই সেখানে) আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে (জীবন বিধান সম্পর্কিত) হেদায়াত আসবে, অতপর যে আমার (সেই) বিধান মেনে চলবে তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো প্রকার উৎকণ্ঠাও করবেনা। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩৮

আর যারা (আমার বিধান) অস্বীকার করবে এবং আমার আয়াতসমূহ মিথ্যা প্রতিপন্ন (করে লাগামহীন জীবন যাপন) করবে, তারা জাহান্নামের বাসিন্দা হবে, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩৯

হে বনী ইসরাঈল (জাতি), তোমাদের ওপর আমি যেসব নেয়ামত দিয়েছি তোমরা সেগুলো স্মরণ করো, আমার (আনুগত্যের) প্রতিশ্রুতি তোমরা পূর্ণ করো, আমিও (এর বিনিময়ে) তোমাদের (দুনিয়া ও আখেরাতের পুরস্কারের) প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবো এবং তোমরা একমাত্র আমাকেই ভয় করো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪০

আমি (মোহাম্মদের কাছে) যা (কোরআন) নাযিল করেছি, তোমরা এর ওপর ঈমান আনো, যা তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তার সত্যায়নকারী, তোমরা কিছুতেই এর প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং (বৈষয়িক স্বার্থে) সামান্য মূল্যে আমার আয়াতস মূহকে বিক্রি করো না এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪১

তোমরা মিথ্যা দিয়ে সত্যকে পোশাক পরিয়ে দিয়ো না এবং সত্যকে জেনে বুঝে লুকিয়েও রেখো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪২

তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত আদায় করো, যারা আমার সামনে অবনত হয় তাদের সাথে মিলে তোমরাও আমার আনুগত্য স্বীকার করো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪৩

তোমরা কি মানুষদের ভালো কাজের আদেশ করো এবং নিজেদের (জীবনে তা বাস বায়নের) কথা ভুলে যাও, অথচ তোমরা সবাই আল্লাহর কিতাব পড়ো; কিন্তু (কিতাবের এ কথাটি) তোমরা কি বুঝো না? - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪৪

(হে ঈমানদার ব্যক্তিরা,) তোমরা সবর ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও; (যাবতীয় হক আদায় করে) নামায প্রতিষ্ঠা করা (অবশ্যই একটা) কঠিন কাজ, কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের কথা আলাদা। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪৫

যারা জানে, একদিন তাদের সবাইকে তাদের মালিকের সামনাসামনি হতে হবে এবং তাদের (সবাইকে) তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে (তার জন্যে এটা কঠিন কিছু নয়)। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪৬

হে বনী ইসরাঈল (জাতি), তোমরা আমার সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাদের দান করেছি (সেই নেয়ামতের মধ্যে একটি ছিলো), আমি তোমাদের সৃষ্টিকূলের ওপর প্রাধান্য দিয়েছিলাম। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪৭

(হে ঈমানদার ব্যক্তিরা,) তোমরা সে দিনটিকে ভয় করো যেদিন একজন আরেক জনের কোনোই কাজে আসবে না, একজনের কাছ থেকে আরেকজনের (প ক্ষেসেদিন) কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, (কাউকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে) কারো কাছ থেকে কোনো মুক্তিপণ নেয়া হবে না না তাদের (সেদিন) কোনো রকম সাহায্য করা হবে! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪৮

(স্মরণ করো,) যখন আমি তোমাদের ফেরাউনের লোকদের (গোলামী) থেকে মুক্তি দিয়েছিলাম, তারা তোমাদের ওপর ভীষণ অত্যাচার করতো, তারা নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দ্বারা তোমাদের যন্ত্রণা দিতো, তারা তোমাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করতো এবং তোমাদের মেয়েদের (তারা) জীবিত রেখে দিতো; তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে এতে তোমাদের জন্যে বড়ো একটা পরীক্ষা (নিহিত) ছিলো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪৯

(আরো স্মরণ করো,) যখন আমি তোমাদের জন্যে সমুদ্রকে দ্বিধাবিভক্ত করে দিয়েছিলাম, অতপর আমি তোমাদের (সমূহ মৃত্যুর হাত থেকে) বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি ফেরাউন ও তার দলবলকে (সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, আর তোমরা তা তো (নিজেরাই) প্রত্য করছিলে! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫০

(আরো স্মরণ করো,) যখন মূসাকে আমি (বিশেষ একটি কাজের জন্যে) চল্লিশ রাত নির্ধারণ করে দিলাম, তার (যাওয়ার) পর তোমরা একটি বাছুরকে (মারদরূপে) গ্রহণ করে নিলে, তোমরা (নিজেদের ওপর) ভীষণ যুলম করেছিলে! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫১

অতপর (এ অপরাধ সত্ত্বেও) আমি (পুনরায়) তোমাদের মা করে দিয়েছি এ আশায় যে, তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫২

(সে কথাও স্মরণ করো,) যখন আমি মূসাকে কেতাব ও ন্যায় অন্যায়ের পরখকারী (একটি মানদণ্ড) দান করেছি, যাতে করে তোমরা হেদায়াতের পথে চলতে পারো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫৩

(আরো স্মরণ করো,) মূসা যখন তার নিজ লোকদের (কাছে এসে) বললো, হে আমার জাতি, তোমরা (আমার অবর্তমানে) বাছুরকে মাবুদ হিসেবে গ্রহণ করে যে (বড়ো রকমের) যুলুম করেছো, তার জন্যে অবিলম্বে আল্লাহর দরবারে তাওবা করো এবং তোমরা তোমাদের নিজেদের (শেরেকে অভিশপ্ত) নফসস মূহকে হত্যা করো, এর মাঝেই আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্যে কল্যাণ রয়েছে; অতপর আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর মাপরবশ হবেন, (কারণ) তিনি বড়োই মাশীল ও অনুগ্রহকারী। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫৪

তোমরা যখন বলেছিলো, হে মুসা, আমরা আল্লাহকে প্রত্যভাবে না দেখলে কখনো তার ওপর ঈমান আনবো না, তখন (এ ধৃষ্টতার শাস্তি হিসেবে) মূহুর্তের মধ্যেই বজ্র (—সম এক গযব) তোমাদের ওপর নিপতিত হলো, আর তোমরা তার দিকে চেয়েই থাকলে (কিছুই করতে পারলে না)। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫৫

অতপর (এই ধ্বংসকর) মৃত্যুর পর তোমাদের আমি পুনরায় জীবন দান করলাম, যাতে করে তোমরা (আমার) কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫৬

আমি তোমাদের ওপর মেঘের ছায়া দান করেছিলাম, 'মান্না' এবং 'সালওয়া' (নামক খাবারও) তোমাদের জন্যে পাঠিয়েছিলাম; (আমি তোমাদের বলেছিলাম, সে সব পবিত্র খাবার খাও, যা আমি তোমাদের দিয়েছি, তা তোমরা উপভোগ করো, (নেয়ামত অবজ্ঞা করে) তারা আমার ওপর কোনো অবিচার করেনি, (বরং এর দ্বারা) তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫৭

(স্মরণ করো,) আমি যখন তোমাদের বলেছিলাম, তোমরা এই জনপদে ঢুকে পড়ো এবং তোমরা তার যেখান থেকেই ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দ্যে আহার করো, (দন্ত সহকারে প্রবেশ না করে) মাথানত করে ঢোকো, তোমরা মার কথা বলবে, আমিও তোমাদের ভুল ত্রুটিস মূহ মা করে দেবো এবং যারা ভালো কাজ করে আমি (এভাবেই) তাদের (পাওনার অংক) বাড়িয়ে দেই। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫৮

(সুস্পষ্ট হেদায়াত সত্ত্বেও) অতপর যালেমরা এমন কিছু ব্যাপার রদবদল করে ফেললো, যা না করার জন্যেই তাদের বলা হয়েছিলো, আমিও এরপর যারা যুলুম করলো তাদের ওপর আসমান থেকে গযব নাযিল করলাম, ( মূলত) এটা ছিলো তাদের গুনাহর ফল। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৫৯

(স্মরণ করো,) যখন মূসা (আমার কাছে) তার জাতির লোকদের জন্যে পানি চাইলো, আমি (তাকে) বললাম, তোমার হাতের লাঠি দিয়ে তুমি (এই) পাথরে আঘাত করো, (আঘাত করা মাত্রই) সে পাথর থেকে বারোটি (পানির) নহর উৎপন্ন হয়ে গেলো; প্রত্যেক গোত্রই নিজেদের (পানি পানের) ঘাট চিনে নিলো; (আমি বললাম) আল্লাহর দেয়া রেযেক থেকে তোমরা পানাহার করো, তবে (কিছুতেই আমার) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬০

(স্মরণ করো,) তোমরা যখন মূসাকে বলেছিলে, হে মূসা, (প্রতিদিন) একই ধরনের খাবারের ওপর আমরা কিছুতেই (আর) ধৈর্য ধরতে পারবো না, তুমি তোমার মালিকের কাছে বলো যেন তিনি কিছু ভূমিজাত দ্রব্য তরিতরকারি, পেয়াজ, রসুন, ভুট্টা, ডাল উৎপাদন করেন, সে বললো, তোমরা কি (আল্লাহর পাঠানো) এ উৎকৃষ্ট জিনিসের সাথে একটি তুচ্ছ (ধরনের) জিনিসকে বদলে নিতে চাও? (যদি তাই হয়) তাহলে তোমরা অন্য কোনো শহরে সরে পড়ো, যেখানে তোমাদের এসব জিনিস যা তোমরা চাইবে, তা অবশ্যই পাওয়া যাবে, (আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করার ফলে) শেষ পর্যন্ত অপমান ও দারিদ্র তাদের ওপর ছেয়ে গেলো; আল্লাহর গযব দ্বারা তারা আক্রান্ত হয়ে গেলো, এটা এ কারণে (যে), এরা (ক্রমাগত) আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করতে থাকলো এবং আল্লাহর নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতে থাকলো, আর এসব কিছু এজন্যই ছিলো যে, তারা আল্লাহর সাথে না-ফরমানী ও সীমালংঘন করছিলো! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬১

নিসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে, যারা ইহুদী হয়ে গেছে, যারা খৃষ্টান এবং 'সাবী\'— এদের যে কেউই আল্লাহর ওপর যথাযথ ঈমান আনবে, ঈমান আনবে পরকালের ওপর এবং ভালো কাজ করবে, তাদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে পুরস্কার রয়েছে এবং এসব লোকের (যেমন) কোনো ভয় নেই, (তেমনি) তারা চিন্তিতও হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬২

(স্মরণ করো,) যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম (যে, তোমরা তাওরাত মেনে চলবে) এবং তুর পাহাড়কে আমি তোমাদের ওপর তুলে ধরে (বলে) ছিলাম; যে কিতাব তোমাদের আমি দান করেছি তা শক্তভাবে অা ঁকড়ে ধরো এবং তাতে যা কিছু আছে তা স্মরণ রেখো, (এ উপায়ে) তোমরা হয়তো (শয়তান থেকে) নিজেদের বাঁচাতে পারবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬৩

অতপর তোমরা এ (ওয়াদা) থেকে ফিরে গেলে, (কিন্তু তা সত্ত্বেও) আমার অনুদান ও রহমত যদি তোমাদের ওপর না থাকতো তাহলে তোমরা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যেতে! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬৪

তোমরা তো ভালো করেই তাদের জানো, যারা তোমাদের মধ্যে শনিবারে (আল্লাহর আদেশের সীমা) লংঘন করেছে, অতপর আমি তাদের (শুধু এটুকুই) বলেছি, যাও (এবার) তোমরা সবাই অপমানিত বানর (এ পরিণত) হয়ে যাও। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬৫

এ (ঘটনা)-কে আমি সে সব মানুষদের যারা তখন সেখানে (মজুদ) ছিলো_ আরো যারা পরে আসবে, তাদের (সবার) জন্যে একটি দৃষ্টান্ত মূলক (ঘটনা) বানিয়ে দিয়েছি, যারা আল্লাহকে ভয় করে এমন লোকদের জন্যেও এ ঘটনা (ছিলো) একটি উপদেশ। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬৬

(আরো স্মরণ করো,) যখন মূসা তার জাতিকে বললো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (তাঁর নামে) তোমাদের একটি গাভী যবাই করার আদেশ দিচ্ছেন; তারা (এ কথা শুনে) বললো (হে মূসা), তুমি কি আমাদের সাথে তামাশা করছো? সে বললো, আমি (তামাশা করে) জাহেলদের দলে শামিল হওয়া থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাই! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬৭

তারা (মূসাকে) বললো, তুমি তোমার মালিককে বলো, আমাদের তিনি যেন সুস্পষ্টভাবে বলে দেন— তা কেমন (হবে)? সে বললো, অবশ্যই তা হবে এমন যা বৃদ্ধ হবে না, আবার (একেবারে) বাচ্চাও হবে না; (বরং তা হবে) এর মাঝামাঝি বয়সের (যাও, এখন) যা কিছু তোমাদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে তাই করো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬৮

তারা ( মূসাকে) বললো, তুমি তোমার মালিককে জিজ্ঞেস করে নাও, তিনি আমাদের যেন বলে দেন তার রং কেমন হবে? সে বললো, তা হবে হলুদ রংয়ের, তার রং এতো আকর্ষণীয় হবে যে, যারা তাকাবে তা তাদেরই পরিতৃপ্ত করবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৬৯

তারা বললো (হে মূসা), তুমি তোমার মালিককে (আবার) জিজ্ঞেস করে নাও, (আসলে) তা কি ধরনের হবে, (আমরা তো সঠিক গাভী বাছাই করতে পারছি না,) আমাদের কাছে (তো সব) গাভী দেখতে একই ধরনের মনে হয়; আল্লাহ তায়ালা চাইলে (এবার) অবশ্যই আমরা সঠিক পথে চলতে পারবো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭০

সে বললো, (তাহলে শুনো, আল্লাহর ঈ#ি৮৭৭৬;ত) সে (গাভী) হবে এমন যে, সেটি কোনো চাষাবাদের কাজ করে না, যমীনে পানি সেচের কাজও করে না, (অর্থাৎ তা হবে) সম্পূর্ণ নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত, (একথা শুনে) তারা বললো, এতোণে তুমি (আমাদের সামনে) সত্য কথাটা নিয়ে এসেছো! অতপর তারা (এ ধরনের একটি গাভী) যবাই করলো, যদিও (ইতিপূর্বে) মনে হয়নি যে, তারা এ কাজটি আদৌ করতে চায়। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭১

(স্মরণ করো,) যখন তোমরা একজন লোককে হত্যা করেছিলে, অতপর সে ব্যাপারে তোমরা একে অপরের ওপর (হত্যার) অভিযোগ আরোপ করতে শুরু করলে, (অথচ) আল্লাহ তায়ালা সে বিষয়ই (মানুষের সামনে) বের করে আনতে চাইলেন, যা তোমরা লুকোবার চেষ্টা করছিলে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭২

(হত্যাকারীকে খোজার জন্যে) আমি তোমাদের বললাম, (কোরবানী করা) সেই (গাভীর শরীরের একাংশ দিয়ে তোমরা একে (মৃদু) আঘাত করো, এভাবেই আল্লাহ তায়ালা মৃত ব্যক্তিকে জীবন দান করবেন এবং (এ ঘটনা দ্বারা) তিনি তোমাদের কাছে তাঁর (জ্ঞানের) নিদর্শনসমূহ তুলে ধরেন, আশা করা যায় তোমরা (সত্য) অনুধাবন করবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭৩

(কিন্তু এতো বড়ো একটি নিদর্শন সত্ত্বেও) অতপর তোমাদের মন কঠিন হয়ে গেলো, (এমন কঠিন) যেন তা (শক্ত) পাথর, (বরং মাঝে মাঝে মনে হয়) পাথরের চেয়েও (বুঝি তা) বেশী কঠিন; (কেননা) কিছু পাথর এমন আছে যা থেকে (মাঝে মাঝে) ঝর্ণাধারা নির্গত হয়, আবার কোনো কোনো সময় তা বিদীর্ণ হয়ে ফেটেও যায় এবং তা থেকে পানিও (বেরিয়ে আসে, (অবশ্য) এর মধ্য থেকে (এমন কিছু পাথর আছে) যা আল্লাহর ভয়ে ধসে পড়ে; আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কার্যকলাপ সমকে মোটেই গাফেল নন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭৪

(হে ঈমানদার লোকেরা, এরপরও) তোমরা কি এই আশা পোষণ করো যে, এরা তোমাদের (সাথে তোমাদের দ্বীনের) জন্যে ঈমান আনবে? এদের একাংশ তো (যুগ যুগ ধরে) আল্লাহর কেতাব শুনে আসছে, অতপর তারা তাকে বিকৃত করছে, অথচ এরা ভালো করেই তা জানে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭৫

(এদের অবস্থা হচ্ছে,) এরা যখন ঈমানদারদের সাথে সাক্ষাত করে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, কিন্তু এরাই (আবার) যখন গোপনে একে অপরের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, তোমরা কি মুসলমানদের কাছে সে সব কথা প্রকাশ করে দাও যা আল্লাহ তায়ালা (মোহাম্মদের নবুওত সমড়েক আগেই তাওরাতে) তোমাদের ওপর ব্যক্ত করেছেন; (খবরদার, তোমরা এমনটি কখনো করো না), তাহলে তারা (একদিন) তোমাদের মালিকের সামনে এটা দিয়েই তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য উত্থাপন করবে, তোমরা কি (এটুকু কথাও) বুঝতে পারো না? - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭৬

এরা কি জানে না, (আল্লাহর কেতাবের) যা কিছু এরা গোপন করে (আবার নিজেদের স্বার্থে তারা) যা প্রকাশ করে, তা (সবই) আল্লাহ তায়ালা জানেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭৭

এদের আরেকটি দল, যারা (একান্ত) অশিতি (নিরর), এরা (আল্লাহর) কেতাব সময়ের কিছুই জানে না, (আল্লাহর কেতাব যেন এদের কাছে) একটি নিছক ধ্যান ধারণা (সর্বস্ব পুস্পক) মাত্র, এরা শুধু অমূলক ধারণাই করে থাকে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭৮

সে সব লোকের জন্যে ধ্বংস (অনিবার্য), যারা হাত দিয়ে কিতাব লেখে নেয়, তারপর (দুনিয়ার সামনে) বলে, এগুলো হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার প থেকে (অবতীর্ণ শরীয়তের বিধান), তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেন তা দিয়ে (দুনিয়ার) কিছু (স্বার্থ) তারা কিনে নিতে পারে; অতপর তাদের হাত যা কিছু রচনা করেছে তার জন্যে তাদের ধ্বংস ও দুর্ভোগ, যা কিছু তারা উপার্জন করেছে তার জন্যেও তাদের দুর্ভোগ। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৭৯

এ সব (নির্বোধ) লোকেরা বলে, জাহান্নামের আগুন কখনোই আমাদের স্পর্শ করবে না, একান্ত (যদি করেও) তা হবে নির্দিষ্ট কয়েকটা দিনের (জন্যে) মাত্র, (হে নবী,) তুমি তাদের বলো, তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে (এমন) কোনো প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছো? আল্লাহ তায়ালা তো কখনো তাঁর প্রতিশ্রুতি ভংগ করেন না, না তোমরা জেনে বুঝেই আল্লাহ তায়ালা সমড়েক এমন সব কথা বলে বেড়াচ্ছো যা তোমরা নিজেরাই জানো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮০

হাঁ, যে কোনো ব্যক্তি পাপ কামিয়েছে এবং যাকে তার পাপ ঘিরে রেখেছে, এমন লোকেরাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী এবং সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮১

(আবার) যারাই (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান আনবে এবং ভালো কাজ করবে, তারা বেহেশতবাসী হবে, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮২

যখন আমি বনী ইসরাঈলদের কাছ থেকে (এ মর্মে) প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো এবাদাত করবে না এবং মাতা পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে, আত্মীয় স্বজন, এতীম-মেসকীনদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, মানুষদের সুন্দর কথা বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে; (কিন্তু এ সত্ত্বেও) তোমাদের মধ্যে সামান্য কিছুসংখ্যক লোক ছাড়া অধিকাংশই অতপর ফিরে গেছো, এভাবেই তোমরা (প্রতিশ্রুতি থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮৩

তোমাদের (কাছ থেকে) আমি এ প্রতিশ্রুতিও নিয়েছিলাম যে, তোমরা কেউ কারো রক্তপাত করবে না এবং নিজেদের লোকদের তাদের ঘর বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করবে না, অতপর তোমরা তা স্বীকার করে নিয়েছিলে, তোমরা তো নিজেরাই (এ) সাক্ষ দিচ্ছো! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮৪

তারপর এই তো হচ্ছো তোমরা! একে অপরকে তোমরা হত্যা করতে লাগলে, তোমাদের এক দলকে তোমরা তাদের ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত করে দিতে লাগলে, অন্যায় এবং যুলুম দ্বারা যালেমদের তোমরা তাদের ওপর পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকলে (শুধু তাই নয়), কোনো লোক (যুদ্ধ) বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে এলে তোমরা তাদের জন্যে মুক্তিপণ দাবী করো, (অথচ) তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করাটাই ছিলো তোমাদের ওপর অবৈধ কাজ (এবং আল্লাহ তায়ালাকে দেয়া প্রতিশ্রুতির সুস্পষ্ট লংঘন); তোমরা কি (তাহলে) আল্লাহর কিতাবের একাংশ বিশ্বাস করো এবং আরেক অংশ অবিশ্বাস করো? (সাবধান!) কখনো যদি কোনো (জাতি কিংবা) ব্যক্তি (দ্বীনের অংশবিশেষের ওপর ঈমান আনয়নের) এ আচরণ করে, তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হবে যে, পার্থিব জীবনে তাদের লাঞ্ছনা ভোগ করতে হবে, তাদের পরকালেও কঠিনতম আযাবের দিকে নিপে করা হবে; তোমরা (প্রতিনিয়ত) যা করছো, আল্লাহ তায়ালা সে সব কিছু থেকে মোটেও উদাসীন নন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮৫

(বস্তু) এ লোকেরা আখেরাতের (স্থায়ী জীবনের) বিনিময়ে দুনিয়ার (অস্থায়ী) জীবন খরিদ করে নিয়েছে (এরা যেহেতু আযাব বিশ্বাসই করেনি), তাই (আল্লাহ তায়ালার প থেকে) তাদের আযাব কিঞ্চিৎ পরিমাণও হালকা করা হবে না, আর না তাদের (কোনোদিক থেকে কোনো রকম) সাহায্য করা হবে! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮৬

আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি, তারপর একে একে আমি আরো অনেক নবীই পাঠিয়েছি এবং (বাপ ছাড়া সন্তান পয়দা করার মতো) সুস্পষ্ট নিদর্শন দিয়ে আমি মারইয়াম পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি এবং (আমার বাণী ও ) পবিত্র আদার মাধ্যমে তাকে আমি সাহায্য করেছি; (অথচ) যখনি তোমাদের কাছে আল্লাহর কোনো নবী আসতো, তোমাদের মনোপূত না হলে তোমরা অহংকারের বশবর্তী হয়ে তাদের অস্বীকার করেছো, তাদের কাউকে তোমরা মিথ্যাবাদী বলেছো, (আবার) তাদের একদলকে তোমরা হত্যাও করেছো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮৭

তারা বলে, (হেদায়াতের জন্যে) আমাদের মন (ও তার দরজা) বন্ধ হয়ে আছে, (আসলে) আল্লাহ তায়ালাকে তাদের (ক্রমাগত) অস্বীকার করার কারণে তিনি তাদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন, অতপর তাদের সামান্য পরিমাণ লোকই আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮৮

যখনি তাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে কিতাব নাযিল হলো যা তাদের কাছে মজুদ কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে, (তা ছাড়া) এর আগে তারা নিজেরাই (সমাজের) অন্যান্য কাফেরদের ওপর বিজয়ী হওয়ার জন্যে (এ কিতাব ও তার বাহকের আগমন) কামনা করছিলো, কিন্তু আজ যখন তা তাদের কাছে এলো এবং যা তারা যথাযথ চিনতেও পারলো_ তাই তারা অস্বীকার করলো, যারা (আল্লাহর কিতাব) অস্বীকার করে তাদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত নাযিল হোক। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৮৯

কতো নিকৃষ্ট (বস্তু) সেটি, যার বিনিময়ে তারা তাদের নিজেদের মন প্রাণ বিক্রয় করে দিয়েছে, শুধু গোঁড়ামির বশবর্তী হয়েই তারা আল্লাহর নাযিল করা বিধান অস্বীকার করেছে (শুধু এ কারণে যে), আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান তাকেই নবুওত দিয়ে অনুগ্রহ করেন, (তাদের এ কুফরীর ফলে) তারা ক্রোধের ওপর ক্রোধে আক্রান্ত হলো; আর কাফেরদের জন্যে তো (এমনিই) অপমানজনক শাস্তি রয়েছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯০

যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা যা কিছু নাযিল করেছেন তার ওপর ঈমান আনো, তারা বলে, আমরা তো শুধু সেসব কিছুর ওপরই ঈমান আনি যা আমাদের (বনী ইসরাঈল জাতির) ওপর নাযিল করা হয়েছে, এর বাইরে যা তা তারা অস্বীকার করে, (অথচ) তা একান্ত সত্য, তা তাদের কাছে নাযিল করা আল্লাহর কথাগুলোকেও সত্য বলে স্বীকার করে; (হে নবী) তুমি বলো, তোমরা যদি বিশ্বাসীই হও তাহলে আল্লাহর নবীদের ইতিপূর্বে তোমরা কেন হত্যা করেছিলে? - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯১

তোমাদের কাছে তো (এক সময়) সুস্পষ্ট নিদর্শন সহকারে মুসাও (নবী হয়ে) এসেছিলো, অতপর তার (সামান্য কয়দিনের অনুপস্থিতির) পরই তোমরা একটি বাছুরকে (মারুদ হিসেবে) গ্রহণ করে নিলে! কতো (বড়ো) যালেম ছিলে তোমরা! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯২

(আরো স্মরণ করো,) যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলাম তোমাদের মাথার ওপর তুর পাহাড় তুলে ধরে (আমি বলেছিলাম), যা কিছু বিধি বিধান আমি তোমাদের দিয়েছি তা শক্ত করে অা ঁকড়ে ধরো এবং (আমার কথাগুলো) শুনো, (এর জবাবে) তারা (মুখে তো) বললো হ্যাঁ, আমরা (তোমার কথা শুনেছি, কিন্তু (বাসত্দব জীবনে তা অস্বীকার করে বললো,) আমরা তা অমান্য করলাম, (আসলে) আল্লাহ তায়ালাকে তাদের অস্বীকার করার কারণে সেই বাছুরকে মাবুদ বানানো (-এর নেশা দ্বারা তখনো) তাদের মনকে আকৃষ্ট করে রাখা হয়েছিলো, তুমি (তাদের) বলো, যদি তোমরা সত্যিই মোমেন হও তাহলে বলতে পারো, এটা কতো খারাপ ঈমান যা একজন ব্যক্তিকে এ ধরনের কাজের আদেশ দেয়? - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯৩

যদি (তোমরা মনে করো,) অন্যদের বদলে পরকালের নিবাস আল্লাহর কাছে শুধু তোমাদের জন্যেই নির্দিষ্ট_ তাহলে (যাও_ তা পাওয়ার জন্যে) তোমরা মৃত্যু কামনা করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯৪

(হে নবী, তুমি জেনে রাখো,) তা (আল্লাহর সাথে নিকৃষ্ট আচরণ করে) নিজেদের হাত দিয়ে এরা যা কিছু অর্জন করেছে (তার পরিণাম) জানার পর এরা কখনো তা কামনা করবে না, আল্লাহ তায়ালা যালেমদের ভালো করেই জানেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯৫

(সত্যি কথা হচ্ছে,) তাদেরকেই বরং তুমি দেখতে পাবে বেঁচে থাকার ব্যাপারে বেশী লোভী, আল্লাহ তায়ালার সাথে যারা শেরেক করে_ এ (বনী ইসরাঈলের) লোকেরা তাদের চেয়েও (এক কদম) অগ্রসর, এদের প্রত্যেক ব্যক্তিই হাজার বছর জীবিত থাকতে চায়, কিন্তু যতো দীর্ঘ জীবনই এদের দেয়া হোক না কেন, তা কখনো (এদের) তাঁর (অবশ্যম্ভাবী) আযাব থেকে বাঁচাতে পারবে না; আল্লাহ তায়ালা এদের (যাবতীয় কাজকর্ম (পুংখানুপুংখ পর্যবেণ করেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯৬

(হে নবী,) তুমি বলো, কে সে ব্যক্তি যে জিবরাঈলের শত্রুহতে পারে? (অথচ) সে তো আল্লাহর আদেশে (আল্লাহর) বাণীসমূহ তোমার অন্তকরণে নাযিল করে দেয়, (তাও এমন এক বাণী) যা তাদের কাছে মজুদ বিষয়স মূহের সত্যতা স্বীকার করে, সর্বোপরি এ হচ্ছে মোমেনদের জন্যে সুসংবাদ (-বাহী গ্রন্থ)। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯৭

যারা আল্লাহর শত্রু, শত্রুতাঁর (বাণীবাহক) ফেরেশতার ও নবী রসূলের (শত্রু) জিবরাঈলের ও মীকাঈলের, (তারা একদিন একথাটা বুঝতে পারবে,) স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন কাফেরদের (বড়ো) শত্রু। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯৮

অবশ্যই আমি তোমার কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন পাঠিয়েছি; পাপী ব্যক্তিরা ছাড়া এসব কিছু কেউই অস্বীকার করতে পারে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৯৯

কিংবা যখনি তারা আল্লাহর সাথে কোনো ওয়াদা করেছে তখনই তাদের এক দল তা ভংগ করেছে; (আসলে) তাদের অধিকাংশই ঈমানদার ছিলো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০০

যখনি তাদের কাছে আল্লাহর প থেকে কোনো নবী আসে এবং যে তাদের কাছে (আগের কিতাবে) যেসব কথা মজুদ রয়েছে তার সত্যতা স্বীকার করে, তখনি সেই আগের কিতাবের ধারকদের একটি দল (পরববর্তী কেতাবের) কথাগুলো এমনভাবে তাদের পেছনের দিকে ফেলে দিলো, যেন তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০১

(আল্লাহর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেই এরা ক্ষান্ত হয়নি, যাদুমন্ত্রের) এমন কিছু জিনিসও এরা অনুসরণ করতে শুরু করলো, (যা) শয়তান কতর্ ক সোলায়মান (নবী)-এর রাজত্বের সময় (সমাজে) চালু করা হয়েছিলো, (সত্যি কথা হচ্ছে) সোলায়মান কখনো (যাদুকে আল্লাহবিরোধী কাজে ব্যবহার করে) আল্লাহকে অস্বীকার করেনি, আল্লাহকে তো অস্বীকার করেছে সে সব অভিশপ্ত শয়তান, যারা মানুষকে যাদুমন্ত্র শিক্ষা দিয়েছে; (যাদুপাগল কিছু মানুষদের পরীক্ষার উদ্দেশে) আল্লাহ তায়ালা হারুত মারুত (নামে যে দু,জন) ফেরেশতাকে ব্যাবিলনে পাঠিয়েছেন, (আল্লাহর) সেই দু'জন ফেরেশতা (কাউকে) যখনই এ বিষয়ের শিক্ষা দিতো, (প্রথমেই) তারা (একথাটা) তাদের বলে দিতো, আমরা তো হচ্ছি (আল্লাহর) পরীক্ষামাত্র, অতএব (কোনো অবস্থায়ই) তুমি (এ বিদ্যা দিয়ে আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করো না, (এ সত্ত্বেও) তারা তাদের কাছ থেকে এমন কিছু বিদ্যা শিখে নিয়েছিলো, যা দিয়ে এরা স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদের সৃষ্টি করতো, (যদিও) আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোনো দিনই কেউ কারো সামান্যতম তিও সাধন করতে পারবে না; তারা (মূলত) এমন কিছু শিখে যা তাদের কোনো উপকার যেমন করতে পারে না, তেমনি তা তাদের কোনো তিও করতে পারে না; তারা যদি জানতো, (শ্রম ও অর্থ দিয়ে) যা তারা কিনে নিয়েছে পরকালে তার কোনো মূল্য নেই; তারা নিজেদের জীবনের পরিবর্তে যা ক্রয় করে নিয়েছে তা সত্যিই নিকৃষ্ট, (কতো ভালো হতো) যদি তারা (কথাটা) জানতো! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০২

তারা যদি (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনতো এবং (তাঁকেই) ভয় করতো, তাহলে আল্লাহর প থেকে তারা উৎকৃষ্টতম পুরস্কার পেতো; (কতো ভালো হতো) যদি তারা (এটা) অনুধাবন করতো! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০৩

হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, (ধৃষ্টতার সাথে কখনো) বলো না (হে নবী), তুমি আমাদের কথা শোনো', বরং (তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে) বলো (হে নবী), 'আমাদের প্রতি ল্য করো'। তোমরা সর্বদা তার কথা শুনবে (মনে রাখবে), যারা (তার কথা) অমান্য করে তাদের জন্যে অত্যন্ত বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০৪

(আসলে) এই আহলে কিতাব কিংবা যারা আল্লাহর সাথে প্রকাশ্য শেরেক করে তারা কেউই এটা পছন্দ করে না যে, তোমার কাছে তোমার মালিকের প থেকে (নবুওতের মতো) কোনো ভালো কিছু নাযিল হোক, কিন্তু (তারা জানে না,) আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকেই তাঁর অনুগ্রেহ বিশেষভাবে বেছে নেন; আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০৫

আমি যখন কোনো আয়াত বাতিল করে দেই বা (বিশেষ কারণে মানুষদের) তা ভুলিয়ে দিতে চাই, তখন তার জায়গায় তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিংবা তারই মতো কোনো আয়াত এনে হাযির করি, তুমি কি জানো না, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর মতাবান। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০৬

তুমি কি জানো না, আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যেই নির্দিষ্ট; তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো বন্ধু নেই, নেই কোনো সাহায্যকারীও। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০৭

তোমরা কি তোমাদের নবীর কাছে সে ধরনের (উদ্ভট) প্রশ্ন করতে চাও যেমনি তোমাদের আগে মূসাকে করা হয়েছিলো; কেউ যদি ঈমানকে কুফরীর সাথে বদল করে নেয়, অবশ্যই সে ব্যক্তি সোজা পথ থেকে গোমরাহ হয়ে যাবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০৮

আহলে কিতাবদের অনেকেই বিদ্বেষের কারণে চাইবে তোমাদের ঈমানের বদলে আবার সেই কুফরীতে ফিরিয়ে নিতে, (এমনকি সত্য তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও (তারা এপথ থেকে বিরত হবে না), অতএব তাদের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত তোমরা ক্ষমার নীতি অবলম্বন করো এবং তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর মতাশালী। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০৯

তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত আদায় করো; (এর মাধ্যমে) যে সব নেকী তোমরা আল্লাহর কাছে অগ্রিম পাঠাবে তাঁর কাছে (এর সবই) তোমরা (মজুদ) পাবে; তোমরা যা কিছুই করো আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই এর সব কিছু দেখতে পান। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১০

তারা বলে, ইহুদী ও খৃস্টান ছাড়া আর কেউই বেহেশতে যাবে না, (আসলে) এটা হচ্ছে তাদের একটা মিথ্যা কল্পনা; তুমি (হে নবী,) বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও (তাহলে) তোমাদের দলিল প্রমাণ নিয়ে এসো! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১১

(তবে হ্যাঁ,) যে কোনো ব্যক্তিই (আল্লাহর সামনে) নিজের সত্তাকে সমর্পণ করে দেবে এবং সে হবে অবশ্যই একজন নেককার মানুষ, তার জন্যে তার মালিকের কাছে (এর) বিনিময় রয়েছে, তাদের কোনো ভয় ভীতি নেই, আর না তারা (সেদিন) চিন্তান্বিতও হবে! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১২

ইহুদীরা বলে, খৃস্টানরা (সত্য জাতির) কোনো কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, খৃস্টানরা বলে ইহুদীরা কোনো কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, অথচ এরা (উভয়েই আল্লাহর) কিতাব পাঠ করে, আদৌ আল্লাহর কেতাবের কোনো কিছুই জানে না এমন লোকেরা (আবার এদের উভয়ের সমঙ্কে) তাদের কথার মতো একই ধরনের কথা বলে, তারা যে বিষয়ে মতবিরোধ করছে আল্লাহ তায়ালা শেষ বিচারের দিনে সে বিষয়ে তাদের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১৩

সে ব্যক্তির চেয়ে বড়ো যালেম আর কে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর (ঘর) মাসজিদে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং তার ধ্বংস সাধনে সচেষ্ট হয়, এ ধরনের লোকদের (বস্তুত) তাতে ঢোকার কোনো যোগ্যতাই নেই, তবে একান্ত ভীত সন্ত্রস্তভাবে (ঢুকলে তা ভিন্ন কথা), তাদের জন্যে পৃথিবীতে যেমন অপমান লাঞ্ছনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে পরকালে কঠিনতম শাস্তি। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১৪

(এরা কেবলা বদলের ব্যাপারেও মতবিরোধ করেছিলো, অথচ) পূর্ব পশ্চিম সবই তো আল্লাহ তায়ালার, (তাছাড়া) তোমরা যে দিকেই মুখ ফেরাবে সেদিকেই তো আল্লাহ তায়ালা রয়েছেন; আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী এবং জ্ঞানী। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১৫

(খৃস্টান) লোকেরা বলে, আল্লাহ তায়ালা (অমুককে) নিজের সম্মান (-রূপে) গ্রহণ করেছেন, পবিত্রতা একান্ত ভাবে তাঁর, (তিনি এসব কিছুর অনেক উরদধে); আসমানসমূহ ও যমীনের সব কিছুই তাঁর জন্যে, এর প্রতিটি বস্তুত তাঁর একান্ত অনুগত। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১৬

আসমানসমূহ ও যমীনের তিনিই স্রষ্টা, যখন তিনি কোনো একটি বিষয়ের সিদ্ধান্ত করেন, সে ব্যাপারে শুধু (এটুকুই) বলেন 'হও', আর সাথে সাথেই তা হয়ে যায়। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১৭

যারা (সঠিক কথা) জানে না তারা বলে, আল্লাহ তায়ালা নিজে আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন, অথবা এমন কোনো নিদর্শন আমাদের কাছে কেন পাঠান না (যার মাধ্যমে আমরা তাঁকে দেখতে পারবো); এদের আগের লোকেরাও এদের মতো করেই কথা বলতো; এদের সবার মন (আসলে) একই ধরনের; (আল্লাহকে) যারা (দৃঢ়ভাবে) বিশ্বাস করে আমি তাদের জন্যে আমার নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্ট করে পেশ করে দিয়েছি। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১৮

অবশ্যই আমি তোমাকে সত্য (দ্বীন)-সহ পাঠিয়েছি, পাঠিয়েছি আযাবের ভীতি প্রদর্শনকারী ও (জান্নাতের) সুসংবাদবাহী হিসেবে। (জেনে রেখো), তোমাকে জাহান্নামের অধিবাসীদের (দায় দায়িত্বের) ব্যাপারে কোনোরকম প্রশ্ন করা হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১১৯

ইহুদী ও খৃস্টানরা কখনো তোমার ওপর খুশী হবে না, হাঁ, তুমি যদি (কখনো) তাদের দলের অনুসরণ করতে শুরু করো (তখনই এরা খুশী হবে), তুমি তাদের বলে দাও, আল্লাহ তায়ালার হেদায়াতই হচ্ছে একমাত্র পথ; (সাবধান,) তোমার কাছে সঠিক জ্ঞান আসার পরও যদি তুমি তাদের ইচ্ছানুসারে চলতে থাকো, তাহলে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তুমি কোনো বন্ধু ও সাহায্যকারী পাবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২০

যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি তাদের মাঝে এমন কিছু লোকও আছে যারা এ (কোরআন)-কে যেভাবে (নিষ্ঠার সাথে) পড়া দরকার সেভাবেই পড়ে; তারা তার ওপর ঈমানও আনে; যারা (একে) অস্বীকার করে তারাই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ লোক। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২১

হে বনী ইসরাঈল (জাতি), তোমরা আমার সে নেয়ামত স্মরণ করো যা আমি তোমাদের দান করেছি, (সে নেয়ামতের অংশ হিসেবে) আমি তোমাদের দুনিয়ার অন্যান্য জাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২২

তোমরা সে দিনটিকে ভয় করো, যেদিন একজন মানুষ আরেকজনের কোনোই কাজে আসবে না, (সেদিন) তার কাছ থেকে কোনোরকম বিনিময়ও নেয়া হবে না, আবার (একের পক্ষে অন্যের) সুপারিশও সেদিন কোনো উপকারে আসবে না, (সেদিন) এসব লোকেরা কোনোরকম সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২৩

(আরো স্মরণ করো,) যখন ইবরাহীমকে তার 'রব\' কতিপয় বিষয়ে (তার আনুগত্যের) পরীক্ষা নিলেন, অতপর তা পুরোপুরি সে পুরন করলো, আল্লাহ তায়ালা বললেন, (এবার) আমি তোমাকে মানব জাতির জন্যে নেতা বানাতে চাই; সে বললো, আমার ভবিষ্যত বংশধররাও (কি নেতা হিসেবে বিবেচিত হবে)? আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমার এ প্রতিশ্রুতি যালেমদের কাছে পৌঁছবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২৪

(স্মরণ করো,) আমি যখন মানুষদের মিলনস্থল ও নিরাপত্তার কেন্দ্র হিসেবে (এ কাবা ঘরটি নির্মাণ করেছিলাম; (আমি তাদের আদেশ দিয়েছিলাম,) তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানটিকে নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো; আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম যেন তারা আমার ঘর (কাবা)-কে (হজ্জ ও ওমরার) তাওয়াফকারীদের জন্যে, আল্লাহর এবাদাতে আদনিয়োগকারীদের জন্যে, (সর্বোপরি তাঁর নামে) রুকু সাজদাকারীদের জন্যে পবিত্র করে রাখে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২৫

ইবরাহীম যখন বলেছিলো, হে মালিক, এ শহরকে তুমি (শান্তি ও) নিরাপত্তার শহর বানিয়ে দাও এবং এখানকার অধিবাসীদের মাঝে যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা এবং পরকালে বিশ্বাস করে, তুমি তাদের ফল মূল দিয়ে আহারের যোগান দাও; আল্লাহ তায়ালা বললেন (হ্যাঁ), যে ব্যক্তি (আমাকে) অস্বীকার করবে তাকেও আমি অল্প কয়েকদিন জীবনের উপায় উপকরণ সরবরাহ করতে থাকবো, অতপর অচিরেই আমি তাদের আগুনের আযাব ভোগ করতে বাধ্য করবো, যা সত্যিই বড়ো নিকৃষ্টতম স্থান। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২৬

ইবরাহীম ও ইসমাঈল যখন এই ঘরের ভিত্তি উঠাচ্ছিলো (তখন তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করলো), হে আমাদের মালিক, (আমরা যে উদ্দেশ্যে এ ঘর নির্মাণ করেছি, তা) তুমি আমাদের কাছ থেকে কবুল করো, একমাত্র তুমিই সব কিছু জানো এবং সব কিছু শোনো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২৭

(তারা আরো বললো,) হে আমাদের মালিক, আমাদের উভয়কে তুমি তোমার (অনুগত) মুসলিম বান্দা বানাও এবং আমাদের (পরবর্তী) বংশধরদের মাঝ থেকেও তুমি তোমার একদল অনুগত (বান্দা) বানিয়ে দাও, (হে মালিক,) তুমি আমাদের (তোমার এবাদাতের) আনুষ্ঠানিকতাস মূহ দেখিয়ে দাও এবং তুমি আমাদের ওপর দয়াপরবশ হও, কারণ অবশ্যই তুমি তাওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২৮

হে আমাদের মালিক, তাদের (বংশের) মধ্যে তাদের নিজেদের মাঝ থেকে তুমি (এমন) একজন রস ল পাঠাও, যে তাদের কাছে তোমার আয়াতস মূহ পড়ে শোনাবে, তাদের তোমার কেতাবের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে, উপরন্তু সে তাদের পবিত্র করে দেবে (হে আল্লাহ, তুমি আমাদের এই দোয়া কবুল করো); কারণ তুমিই মহাপরাক্রমশালী ও পরম কুশলী। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১২৯

(জেনে বুঝে) যে নিজেকে মূর্খ বানিয়ে রেখেছে সে ব্যক্তি ছাড়া আর কে এমন হবে, যে ইবরাহীমের (আনীত) জীবন বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে? (অথচ তাকে আমি দুনিয়ায় নবুওতের জন্যে) বাছাই করে নিয়েছি, শেষ বিচারের দিনেও সে (আমার) নেক লোকদের মধ্যে শামিল হবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩০

যখন আমি তাকে বললাম, তুমি (আমার অনুগত) মুসলিম হয়ে যাও, সে বললো, আমি সৃষ্টিকুলের মালিক (আল্লাহ তায়ালা)-এর পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করে নিলাম। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩১

(যে পথ ইবরাহীম নিজের জন্যে বেছে নিলো,) সে পথে চলার জন্যে সে তার সন্তান সন্তুতিকেও ওসিয়ত করে গেলো, ইয়াকুবও (তার সন্তানদের ওসিয়ত করে বললো); হে আমার সন্তানরা, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্যে এই দ্বীন (ইসলাম) মনোনীত করে দিয়েছেন, অতএব কোনো অবস্থায়ই এ (জীবন) বিধানের আনুগত্য স্বীকার ব্যতিরেকে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩২

(হে ইহুদী জাতি,) তোমরা কি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলে যখন ইয়াকুবের সামনে (তার) মৃত্যু এসে হাযির হলো এবং সে যখন তার ছেলেমেয়েদের বললো (বলো), আমার মৃত্যুর পর তোমরা কার এবাদাত করবে? তারা বললো, আমরা (অবশ্যই) তোমার মারদ (তোমার পূর্বপুরুষ) ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মাবুদের এবাদাত করবো, (এ) মাবুদ হচ্ছেন একক, আমরা তাঁর আত্দসমর্পণকারী বান্দা হয়েই থাকবো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩৩

এরা ছিলো এক (ধরনের) জাতি, যারা (আজ) গত হয়ে গেছে, তারা যা করে গেছে তা তাদের নিজেদের জন্যে, (আবার) তোমরা যা করবে তা হবে তোমাদের নিজেদের জন্যে, তারা যা কিছু করছিলো সে ব্যাপারে তোমাদের (কিছু) জিজ্ঞেস করা হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩৪

এরা বলে, তোমরা ইহুদী কিংবা খৃস্টান হয়ে যাও, তাহলে তোমরা সঠিক পথে পরিচালিত হবে; (হে নবী,) তুমি বলো, (আমাদের কাছে তো) বরং ইবরাহীমের একনিষ্ঠ মতাদর্শই রয়েছে; আর সে কখনো মোশরেকদের অন্তভুক্ত ছিলো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩৫

তোমরা বলো, আমরা তো আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি এবং ঈমান এনেছি আল্লাহ তায়ালা আমাদের কাছে যা কিছু নাযিল করেছেন তার ওপর, (আমাদের আগে) ইবরাহীম, ইসমাঈল ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের (পরবর্তী) সন্তানদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তাও (আমরা মানি, তাছাড়া), মূসা, ঈসা সহ সব নবীকে তাদের মালিকের প থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তার ওপরও আমরা ঈমান এনেছি, আমরা এদের কারো মধ্যেই কোনো তারতম্য করি না, আমরা তো হচ্ছি আল্লাহরই অনুগত (বান্দা)। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩৬

আর এরা যদি তোমাদের মতোই আল্লাহর ওপর ঈমান আনতো তাহলে তারাও সঠিক পথ পেতো, তারা যদি (সে পথ থেকে) ফিরে আসে তাহলে তারা অবশ্যই (উপদলীয়) অনৈক্যের মাঝে পড়ে যাবে, আল্লাহ তায়ালাই তোমার জন্যে যথেষ্ট (প্রমানিত) হবেন, তিনিই শোনেন, তিনিই জানেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩৭

(হে নবী, তাদের তুমি) বলো, আসল রং হচ্ছে আল্লাহ তায়ালারই, এমন কে আছে যার রং তাঁর রঙের চেয়ে উৎকৃষ্ট হতে পারে? (আমরা ঘোষণা করছি, আমরা তাঁরই এবাদাত করি । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩৮

(হে নবী,) তুমি তাদের বলো, তোমরা কি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারেই আমাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও? অথচ তিনি (যেমন) আমাদের মালিক, (তেমনি) তিনি তোমাদেরও মালিক, আমাদের কাজ আমাদের জন্যে আর তোমাদের কাজ তোমাদের জন্যে, আমরা সবাই তাঁর আনুগত্যের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৩৯

অথবা তোমরা কি একথা বলতে চাও যে, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের বংশধররা সবাই ছিলো ইহুদী কিংবা খৃস্টান? (হে নবী) তুমি বলে দাও, এ ব্যাপারে তোমরা বেশী জানো না আল্লাহ তায়ালা বেশী জানেন? যদি কোনো ব্যক্তি তার কাছে মজুদ আল্লাহর কাছ থেকে (আগত) সাক্ষ্য প্রমাণ গোপন করে, তাহলে তার চেয়ে বড়ো যালেম আর কে হতে পারে? আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কাজকর্মের ব্যাপারে মোটেই গাফেল নন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪০

এরাও ছিলো এক (ধরনের) সমপ্রদায়, যারা (আজ) গত হয়ে গেছে, তারা যা করে গেছে তা তাদের জন্যে, আর তোমাদের কর্মফল হবে তোমাদের জন্যে, তারা যা কিছু করছিলো সে ব্যাপারে তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করা হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪১

(কেবলা বদলের ব্যাপারে) মানুষদের ভেতর থেকে কিছু মূর্খ লোক অচিরেই বলতে শুরু করবে (এ কি হলো), এতোদিন যে কেবলার ওপর তারা প্রতিষ্ঠিত ছিলো, (আজ) কিসে তাদের সে দিক থেকে ফিরিয়ে দিলো? (হে নবী,) তুমি (তাদের) বলে দাও, পূর্ব পশ্চিম (সবই) আল্লাহ তায়ালার জন্যে; আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪২

এভাবেই আমি তোমাদের এক মধ্যপন্থী মানব দলে পরিণত করেছি, যেন তোমরা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষদের ওপর (হেদায়াতের) সাক্ষী হয়ে থাকতে পারো (এবং একইভাবে) রসুলও তোমাদের ওপর সাক্ষী হয়ে থাকতে পারে, যে কেবলার ওপর তোমরা (এতোদিন) প্রতিষ্ঠিত ছিলে, আমি তা এ উদ্দেশেই নির্ধারণ করেছিলাম, যাতে করে আমি এ কথাটা জেনে নিতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কে রসলের অনুসরণ করে আর কে তার কথা থেকে ফিরে যায়, তাদের ওপর এটা ছিলো কঠিন (পরীক্ষা), অবশ্য আল্লাহ তায়ালা যাদের হেদায়াত দান করেছেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪৩

(কেবলা পরিবর্তনের জন্যে) তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে (যেভাবে আমার আদেশের অপেক্ষায়) থাকতে, তা আমি অবশ্যই দেখতে পেয়েছি, তাই আমি তোমার পছন্দমতো (দিককেই) কেবলা বানিয়ে দিচ্ছি, (এখন থেকে তোমরা এই মর্যাদাসম্পন্ন মাসজিদের দিকে ফিরে (নামায আদায় করতে) থাকবে; তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমাদের মুখমন্ডল সে দিকেই ফিরিয়ে দেবে; এসব লোক [] যাদের কাছে আগেই কেতাব নাযিল করা হয়েছিলো, তারা ভালো করেই জানে; এ ব্যাপারটা তোমার মালিকের পক্ষ থেকে আসা সমস্লর্ণ একটি সত্য (ঘটনা, এ সত্ত্বেও) তারা (এর সাথে) যে আচরণ করে যাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা তা থেকে মোটেই অনবহিত নন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪৪

যাদের ইতি পূর্বে কেতাব দেয়া হয়েছে তাদের সামনে যদি তুমি (দুনিয়ার) সব কয়টি প্রমাণও এনে হাযির করো, (তারপরও) এরা তোমার কেবলার অনুসরণ করবে না, আর (এর পর) তুমিও তাদের কেবলার অনুসরণকারী হতে পারো না, (তাছাড়া) এদের এক দলও তো আরেক দলের কেবলার অনুসরণ করে না; আমার পক্ষ থেকে এ জ্ঞান তোমাদের কাছে পৌঁছার পর তুমি যদি তাদের ইচ্ছা আকাংখার অনুসরণ করো, তাহলে অবশ্যই তুমি যালেমদের দলে শামিল হয়ে যাবে | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪৫

যাদের আমি কেতাব দান করেছি এরা তাকে এতো ভালো করে চেনে, যেমনি এরা চেনে আপন ছেলেদের; এদের একদল সত্য গোপন করার চষ্টো করছে, অথচ এরা তো সব কিছুই জানে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪৬

(হে নবী, তুমি তাদের বলো,) তোমার মালিকের পক্ষ থেকে (এ হচ্ছে) একমাত্র সত্য, সুতরাং কোনো অবস্থায়ই তোমরা সন্দেহ পোষণকারীদের দলে শামিল হয়ো না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪৭

প্রত্যেক (জাতির) জন্যে (এবাদাতের) একটা দিক (নির্দষ্টি) থাকে, যে দিকে সে (জাতি) মুখ করে (দাঁড়ায়), অতএব তোমরা (আসল) কল্যাণের দিকে অগ্রসর হবার কাজে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করো; তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সবাইকে (একই স্থানে) এনে হাযির করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪৮

তুমি যে কোনো স্থান থেকেই বেরিয়ে আসো না কেন, (নামাযের জন্যে) মাসজিদে হারামের দিকে মুখ ফেরাও, কেননা এটাই হচ্ছে তোমার মালিকের কাছ থেকে (কেবলা সংক্রানত্ম) সঠিক (সিদ্ধান্ত); আর আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কার্যাবলী সম্পর্কে মোটেই উদাসীন নন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৪৯

(হে নবী,) যে দিক থেকেই তুমি বেরিয়ে আসবে, (নামাযের জন্যে সেখান থেকেই) মাসজিদে হারামের দিকে মুখ ফিরিয়ে (দাঁড়িয়ে) যেও; (এ সময়) যেখানেই তুমি থাকো না কেন সে (কাবার) দিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তাহলে (প্রতিপক্ষের) লোকদের কাছে তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর মতো কোনো যুক্তি অবশষ্টি থাকবে না, তাদের মধ্য থেকে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের কথা অবশ্য আলাদা, তোমরা এসব ব্যক্তিদের ভয় করো না, তোমরা বরং ভয় করো আমাকে, যাতে করে আমি তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিতে পারি, এর ফলে তোমরাও সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারো, - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫০

(এই সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্যেই) আমি এভাবে তোমাদের কাছে তোমাদের মাঝ থেকেই একজনকে রসুল করে পাঠিয়েছি, যে ব্যক্তি (প্রথমত) তোমাদের কাছে আমার আয়াত পড়ে শোনাবে, (দ্বিতীয়ত) সে তোমাদের (জীবন) পরিশুদ্ধ করে দেবে এবং (তৃতীয়ত) সে তোমাদের আমার কেতাব ও (তার অনত্মর্নিহিত) জ্ঞান শিক্ষা দেবে, (সর্বোপরি) নে তোমাদের এমন বিষয়সমূহের জ্ঞানও শেখাবে, যা তোমরা কখনো জানতে না । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫১

অতএব (এসব অনুগ্রহের জন্যে) তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, (তাহলে) আমিও তোমাদের স্মরণ করবো, তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করো এবং কখনো তোমরা আমার অকৃতজ্ঞ হয়ো না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫২

হে (মানুষ,) তোমরা যারা ঈমান এনেছো, (পরম) ধৈর্য ও (খালেস) নামাযের মাধ্যমে তোমরা (আমার কাছে) সাহায্য প্রার্থনা করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীল মানুষদের সাথে আছেন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৩

যারা আল্লাহ তায়ালার পথে নিহত হয়েছে তাদের তোমরা (কখনো) মৃত বলো না; বরং তারাই হচ্ছে (আসল) জীবিত (মানুষ), কিন্তু (এ বিষয়টির) কিছুই তোমরা জানো না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৪

আমি অবশ্যই (ঈমানের দাবীতে) তোমাদের পরীক্ষা করবো, (কখনো) ভয়-ভীতি, (কখনো) ক্ষুধা-অনাহার, (কখনো) তোমাদের জান মাল ও ফসলাদির ক্ষতি সাধন করে (তোমাদের পরীক্ষা করা হবে| যারা ধৈর্যের সাথে এর মোকাবেলা করে); তুমি (সে) ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করো, - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৫

যখনি তাদের সামনে (কোনো) পরীক্ষা এসে হাযির হয় তখনি তারা বলে, আমরা তো আল্লাহর জন্যেই, আমাদের তো (একদিন) আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৬

(বস্তুত) এরা হচ্ছে সে সব ব্যক্তি, যাদের ওপর রয়েছে তাদের মালিকের পক্ষ থেকে অবারিত রহমত ও অপার করুণা; আর এরাই সঠিক পথপ্রাপ্ত | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৭

অবশ্যই ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ (পাহাড় দুটো) আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন সমুহের অন্যতম, অতএব যদি তোমাদের মধ্যে কোনো লোক হজ্জ কিংবা ওমরা আদায় করার এরাদা) করে, তার জন্যে এই উভয় (পাহাড়ের) মাঝে তাওয়াফ করাতে দোষের কিছু নেই; (কেননা) যদি কোনো ব্যক্তি (অনত্মরের) নিষ্ঠার সাথে কোনো ভালো কাজ করে তাহলে (তারা যেন জেনে রাখে), নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা কৃতজ্ঞতাপরায়ণ ও প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৮

মানুষের জন্যে যেসব (বিধান) আমি আমার কেতাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, তারপর যারা আমার নাযিল করা (সেসব) সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও পরিষ্কার পথনির্দেশ গোপন করে, এরাই হচ্ছে সেসব লোক যাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা অভিসম্পাত করেন, অভিশাপ বর্ষণ করে অন্যান্য অভিশাপকারীরাও, - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৯

তবে যারা (এ কাজ থেকে) ফিরে আসবে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেবে, খোলাখুলিভাবে তারা (সেসব সত্য) কথা প্রকাশ করবে (যা এতোদিন আহলে কেতাবরা গোপন করে আসছিলো), এরাই হবে সেসব লোক যাদের ওপর আমি দয়াপরবশ হবো, আমি পরম ক্ষমাকারী, দয়ালু | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬০

যারা কুফরী করেছে এবং এই কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, ফেরেশতাদের অভিশাপ, (সর্বোপরি) অভিশাপ সমগ্র মানবকুলের, - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬১

(এই অভিশপ্ত অবস্থা নিয়েই) এরা সেখানে চিরদিন থাকবে, শাসিত্মর মাত্রা এদের ওপর থেকে (বিন্দুমাত্রও) কম করা হবে না, তাদের কোনো রকম অবকাশও দেয়া হবে না |- সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬২

তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন, তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই, তিনি দয়ালু, তিনি মেহেরবান | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬৩

নিসন্দেহে আসমান যমীনের সৃষ্টির মাঝে, রাত দিনের এই আবর্তনের মাঝে, সাগরে ভাসমান জাহাজসমূহে[ ] যা মানুষের জন্যে কল্যাণকর দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, (এর সব কয়টিতে) আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন মজুদ রয়েছে, (আরো রয়েছে) আল্লাহ তায়ালা আকাশ থেকে (বৃষ্টি আকারে) যা কিছু নাযিল করেন (সেই বৃষ্টির) পানির মাঝে, ভূমির নিজীব হওয়ার পর তিনি এ পানি দ্বারা তাতে নতুন জীবন দান করেন, অতপর এই ভূখন্ডে সব ধরনের প্রাণীর তিনি আবির্ভাব ঘটান, অবশ্যই বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টি করার মাঝে এবং সে মেঘমালা || যা আসমান যমীনের মাঝে বশীভূত করে রাখা হয়েছে, তার মাঝে সুস্থ বিবেকবান সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬৪

মানুষদের মাঝে কিছু সংখ্যক এমনও রয়েছে, যে আল্লাহর বদলে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ মনে করে, তারা তাদের তেমনি ভালোবাসে যেমনটি শুধু আল্লাহ তায়ালাকেই তাদের ভালোবাসা উচিত; আর যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে তারা তো তাঁকেই সর্বাধিক পরিমাণে ভালোবাসবে; যারা (আল্লাহর আনুগত্য না করে) বাড়াবাড়ি করছে তারা যদি আযাব স্বচক্ষে দেখতে পেতো (তাহলে এরা বুঝতে পারতো), আসমান যমীনের সমুদয় শক্তি একমাত্র আল্লাহর জন্যেই, শাসিত্ম দেয়ার ব্যাপারে তিনি অত্যনত্ম কঠোর। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬৫

(সেদিন) ভয়াবহ শাসিত্ম দেখে (হতভাগ্য) লোকেরা (দুনিয়ায়) যাদের তারা মেনে চলতো, তাদের অনুসারীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলবে (বলবে, আমরা তো এদের চিনিই না), এদের উভয়ের মধ্যকার (ভংগুর) সব সম্পর্ক সেদিন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬৬

এ (হতাশাগ্রসত্ম) অনুসারীরা সেদিন বলবে, আবার যদি একবার আমাদের জন্যে (পৃথিবীতে) ফিরে যাবার (সুযোগ) থাকতো, তাহলে আজ যেমনি করে (তারা) আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, আমরা (সেখানে গিয়ে) তাদের সাথে (যাবতীয়) সম্পর্কচ্ছেদ করে আসতাম, এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাদের সমগ্র জীবনের কর্মকান্ডগুলো তাদের সামনে একরাশ (লজ্জা ও) আক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরবেন; তাদের জন্যে যে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে আছে, এরা (কখনো সেই) জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬৭

হে মানুষ, তোমরা (আল্লাহর) যমীনে যা কিছু হালাল ও পবিত্র জিনিস আছে তা খাও এবং (হালাল হারামের ব্যাপারে) শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না; অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬৮

(শয়তানের কাজ হচ্ছে,) সে তোমাদের (সব সময়) পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়, যাতে করে আল্লাহ তায়ালার নামে তোমরা এমন সব কথা বলতে শুরু করো যা সম্পর্কে তোমরা কিছুই জানো না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬৯

তাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা যা কিছু নাযিল করেছেন তোমরা তা মেনে চলো, তারা বলে, আমরা তো শুধু সে পথেরই অনুসরণ করবো যে পথের ওপর আমরা আমাদের বাপ দাদাদের পেয়েছি; তাদের বাপ- দাদারা যদি (এ ব্যাপারে) কোনো জ্ঞান বুদ্ধির পরিচয় নাও দিয়ে থাকে, কিংবা তারা যদি হেদায়াত নাও পেয়ে থাকে (তবুও কি তারা তাদের অনুসরণ করবে)? - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭০

এভাবে যারা (হেদায়াত) অস্বীকার করে, তাদের উদাহরণ হচ্ছে এমন (জন্তু মতো), যে (তার পালের আরেকটি জনত্মকে) যখন ডাক দেয়, তখন (পেছনের সেই জনাটি তার) চীৎকার ও কান্নার আওয়ায ছাড়া আর কিছুই শুনতে পায় না; (মূলত) এরা (কানেও) শোনে না, (কথাও) বলতে পারে না, (চোখেও) দেখে না, (এ কারণে হেদায়াতের কথাও) এরা বুঝে না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭১

হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আমি যেসব পাক পবিত্র জিনিস তোমাদের দান করেছি (নিসংকোচে) তা তোমরা খাও এবং (এ নেয়ামতের জন্যে) আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করো, (অবশ্য) যদি তোমরা (হালাল হারামের ব্যাপারে) একান্তভাবে শুধু তাঁরই দাসত্ব করো । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭২

অবশ্যই তিনি মৃত (জন্তু গোশত), সব ধরনের রক্ত ও শূকরের গোশত হারাম (ঘোষণা) করেছেন এবং (এমন সব জন্তুও হারাম করছেন) যা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো নামে যবাই (কিংবা উৎসর্গ) করা হয়েছে, তবে (সে ব্যক্তির কথা আলাদা) যাকে (এজন্যে) বাধ্য করা হয়েছে, যদি সে ব্যক্তি এমন হয় যে, সে (আল্লাহর আইনের) সীমালংঘনকারী হয় না, অথবা (যেটুকু হলে জীবনটা বাঁচে তার চাইতে বেশী ভোগ করে) অভ্যসত্ম হয়ে পড়ে না, তাহলে (এই অপারগতার সময়ে হারাম খেলে) তার ওপর কোনো গুনাহ নেই; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, তিনি অনেক মেহেরবান | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭৩

(এ সত্ত্বেও) যারা আল্লাহর নাযিল করা (তাঁর) কেতাবের অংশবিশেষ গোপন করে রাখে এবং সামান্য (বৈষয়িক) মুল্যে তা বিক্রি করে দেয়, তারা এটা দিয়ে যা হাসিল করে এবং যা দিয়ে তারা নিজেদের পেট ভর্তি করে রাখে তা (মূলত) আগুন ছাড়া আর কিছুই নয়, (শেষ বিচারের দিনে) আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে কথা বলবেন না, তিনি তাদের (সেদিন) পবিত্রও করবেন না, ভয়াবহ আযাব এদের জন্যেই নির্দষ্টি | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭৪

এরা হেদায়াতের বদলে গোমরাহীর পথ কিনে নিয়েছে, ক্ষমার বদলে তারা আযাব (বেছে) নিয়েছে, এরা ধৈর্যের সাথে (ধীরে ধীরে) জাহান্নামের আগুনের ওপর গিয়ে পড়েছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭৫

এটা এই জন্যে, আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির জন্যে আগে থেকেই সত্য (দ্বীন) সহকারে কেতাব নাযিল করে দিয়েছেন; যারা এই কেতাবে মতবিরোধে লপ্তি হয়েছে, তারা সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে অনেক দুরে নিক্ষপ্তি হয়ে গেছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭৬

তোমরা তোমাদের মুখ পূর্ব দিকে ফেরাও বা পশ্চিম দিকে ফেরাও, এতেই কিন্তু সব নেকী নিহিত নেই, তবে আসল কল্যাণ হচ্ছে একজন মানুষ ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, পরকালের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর, (আল্লাহর) কেতাবের ওপর, (কেতাবের বাহক) নবী রসুলদের ওপর এবং আল্লাহর দেয়া মাল সম্পদ তাঁরই ভালোবাসা পাবার মানসে আত্মীয় স্বজন, এতীম মেসকীন ও পথিক মোসাফেরের জন্যে ব্যয় করবে, সাহায্যপ্রার্থী (দুস্থ মানুষ, সর্বোপরি) মানুষদের (কয়েদ ও দাসত্বের) বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার কাজে অর্থ ব্যয় করবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, (দারিদ্র বিমোচনের জন্যে) যাকাত আদায় করবে || (তাছাড়াও রয়েছে সেসব পুণ্যবান মানুষ); যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করে, ক্ষুধা দারিদ্রের সময় ও দুর্দিনে ধৈর্য ধারণ করে, (মূলত) এরাই হচ্ছে সত্যবাদী এবং এরাই হচ্ছে প্রকৃত আল্লাহভীরু মানুষ | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭৭

হে মানুষ, যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের জন্যে নরহত্যার 'কেসাস' (তথা প্রতিশোধের নীতি) নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে (এবং তা এই, মৃত) স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি (দন্ডাজ্ঞা পাবে), দাসের বদলে (পাবে) দাস, নারীর বদলে নারীর ওপর (দন্ড প্রযোজ্য হবে), অবশ্য যে হত্যাকারীকে (যাকে হত্যা করা হয়েছে তার পরিবারের লোকেরা কিংবা) তার ভাইর পক্ষ থেকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, তার ক্ষেত্রে কোনো ন্যায়ানুগ পন্থা অনুসরণ করে তা সম্পন্ন) করতে হবে, এটা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে দন্ড হ্রাস (করার উপায়)ও তাঁর একটি অনুগ্রহ মাত্র; যদি কেউ এরপরও বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তার জন্যে কঠোর শাসিত্ম রয়েছে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭৮

হে বিবেকবান লোকেরা, (আল্লাহর নির্ধারিত) এই 'কেসাস' এর মাঝেই (সত্যিকার অর্থে) তোমাদের (সমাজ ও জাতির) ‘জীবন' (নিহিত) রয়েছে, আশা করা যায় (অতপর) তোমরা সতর্ক হয়ে চলবে | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৭৯

(হে ঈমানদার লোকেরা,) তোমাদের জন্যে এই আদেশ জারি করা হয়েছে যে, যদি তোমাদের মাঝে কোনো লোকের মৃত্যু এসে হাযির হয় এবং সে যদি কিছু সম্পদ রেখে যায়, (তাহলে) ন্যায়ানুগ পন্থায় (তা বন্টনের কাজে) তার পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের জন্যে ওনিয়তের ব্যবস্থা রয়েছে, এটা পরহেযগার লোকদের ওপর (একান্ত) করণীয় | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮০

যারা তার (এই) ওসিয়ত শুনে নেয়ার পর (নিজেদের স্বার্থে) তা পাল্টে নিলো (তাদের জানা উচিত); এটা বদলানোর অপরাধের দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুই শোনেন এবং সব কিছুই তাঁর জানা | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮১

(অবশ্য) কারো যদি অসিয়তকারীর কাছ থেকে (এ ধরনের) আশংকা থাকে যে, (সে পক্ষপাতিত্ব করে) কারো প্রতি অবিচার করে গেছে, কিংবা (কারো সাথে এর ফলে) না-ইনসাফী করা হয়েছে, তাহলে (যদি সদিচ্ছা নিয়ে) মুল বিষয়টির সংশোধন করে দেয়, এতে তার কোনো দোষ হবে না; আল্লাহ তায়ালা বড়োই ক্ষমাশীল, মেহেরবান | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮২

হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেমনি করে ফরয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা (এর মাধ্যমে আল্লাহকে) ভয় করতে পারো; - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮৩

(রোযা ফরয করা হয়েছে) কয়েকটি নির্দষ্টি দিনের জন্যে; (তারপরও) কেউ যদি সে (দিনগুলোতে) অসুস্থ হয়ে যায় কিংবা কেউ যদি (তখন) সফরে থাকে, সে ব্যক্তি সমপরিমাণ দিনের রোযা (সুস্থ হয়ে অথবা সফর থেকে ফিরে এসে) আদায় করে নেবে; (এরপরও) যাদের ওপর (রোযা) একান্ত কষ্টকর হবে, তাদের জন্যে এর বিনিময়ে ফেদিয়া থাকবে (এবং তা) হচ্ছে একজন গরীব ব্যক্তিকে (তৃপ্তিভরে) খাবার দেয়া; অবশ্য যদি কোনো ব্যক্তি (এর চাইতে বেশী দিয়ে) ভালো কাজ করতে চায়, তাহলে এ (অতিরিক্ত) কাজ তার জন্যে হবে একান্ত কল্যাণকর; তবে (এ সময়) তোমরা যদি রোযা রাখতে পারো তাই তোমাদের জন্যে ভালো; তোমরা যদি রোযার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে (যে, এতে কি পরিমাণ কল্যাণ রয়েছে!) - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮৪

রোযার মাস (এমন একটি মাস) যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে, আর এই কোরআন (হচ্ছে) মানব জাতির জন্যে পথের দিশা, সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন, (মানুষদের জন্যে হক বাতিলের) পার্থক্যকারী, অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে এতে রোযা রাখবে; (তবে) যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, সে পরবতর্ী (কোনো সময়ে) গুনে গুনে সেই পরিমাণ দিন পুরণ করে নেবে; (এ সুযোগ দিয়ে) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের (জীবন) আসান করে দিতে চান, আল্লাহ তায়ালা কখনোই তোমাদের (জীবন) কঠোর করে দিতে চান না। আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা যেন গুনে গুনে (রোযার) সংখ্যাগুলো পুরণ করতে পারো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের (কোরআনের মাধ্যমে জীবন যাপনের) যে পদ্ধতি শিখিয়েছেন তার জন্যে তোমরা তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারো | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮৫

(হে নবী,) আমার কোনো বান্দা যখন তোমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে (তাকে তুমি বলে দিয়ো), আমি (তার একান্ত) কাছেই আছি; আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে, তাই তাদেরও উচিত আমার আহ্বানে সাড়া দেয়া এবং (সমসুর্ণভাবে) আমার ওপরই ঈমান আনা, আশা করা যায় এতে করে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮৬

রোযার (মাসের) রাতের বেলায় তোমাদের স্ত্রীদের কাছে যৌন মিলনের জন্যে যাওয়া তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে; (কারণ, তোমাদের) নারীরা যেমনি তোমাদের জন্যে পোশাক (স্বরূপ, ঠিক) তোমরাও তাদের জন্যে পোশাক ( সমতুল্য); আল্লাহ তায়ালা এটা জানেন, (রোযার মাসে রাতের বেলায় স্ত্রী সহবাসের ব্যাপারে) তোমরা (নানা ধরনের) আত্মপ্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছিলে, তাই তিনি (তোমাদের ওপর থেকে কড়াকড়ি শিথিল করে) তোমাদের ওপর দয়া করলেন এবং তোমাদের মাফ করে দিলেন, এখন তোমরা চাইলে তাদের সাথে সহবাস করতে পারো এবং (এ ব্যাপারে) আল্লাহ পাক তোমাদের জন্যে যা (বিধি বিধান কিংবা সন্তান সন্তুতি) লিখে রেখেছেন তা সন্ধান করো | (রোযার সময় পানাহারের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে), তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পারো যতোক্ষণ পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভেতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোক রেখা তোমাদের জন্যে পরিষ্কার প্রতিভাত না হয়, অতপর তোমরা রাতের আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করে নাও, (তবে) মাসজিদে যখন তোমরা এতেকাফ অবস্থায় থাকবে তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থেকো; এই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত সীমারেখা, অতএব তোমরা কখনো এর কাছেও যেয়ো না; এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর যাবতীয় নিদর্শন মানুষদের জন্যে বলে দিয়েছেন, যাতে করে তারা (এ আলোকে) আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে পারে | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮৭

তোমরা একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায় অবৈধভাবে আত্মসাত করো না, (আবার) জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করার জন্যে এর একাংশ বিচারকদের সামনে ঘুষ (কিংবা উপঢৌকন) হিসেবেও পেশ করো না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮৮

(হে নবী,) তারা তোমাকে নতুন চাদগুলো (ও তাদের বাড়া কমা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তুমি তাদের বলে দাও, (মূলত) এগুলো হচ্ছে মানব জাতির জন্যে (একটি স্থায়ী) সময় নির্ঘন্ট ([] যার মাধ্যমে মানুষরা দিন তারিখ সম্পর্কে জানতে পারে), তাছাড়া (এর মাধ্যমে লোকেরা) হজ্জের সময়সূচীও (জেনে নিতে পারে| এহরাম বাধার পর) পেছন দরজা দিয়ে (ঘরে) প্রবেশ করার মাঝে কোনো সওয়াব নেই, আসল সওয়ার হচ্ছে কে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করলো (তা দেখা, এখন থেকে) ঘরে ঢোকার সময় (সামনের) দুয়ার দিয়েই তোমরা আসা যাওয়া করো, তোমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে, আশা করা যায় তোমরা কামিয়াব হতে পারবে । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৮৯

তোমরা আল্লাহ তায়ালার পথে সেসব লোকের সাথে লড়াই করো যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, (কিন্তু কোনো অবস্থায়ই) সীমালংঘন করো না; কারণ আল্লাহ তায়ালা কখনো সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯০

(সীমালংঘনের পর অতপর) যেখানেই তোমরা তাদের পাও সেখানেই তোমরা তাদের হত্যা করো, যে সব স্থান থেকে তারা তোমাদের বহিষ্কার করে দিয়েছে তোমরাও তাদের সেসব স্থান থেকে বের করে দাও (জেনে রেখো), ফেতনা ফাসাদ (দাঙ্গা হাঙ্গামা) নরহত্যার চাইতেও বড়ো অপরাধ, তোমরা কাবা ঘরের পাশে কখনো তাদের সাথে যুদ্ধে লপ্তি হয়ো না, যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা সেখানে তোমাদের আক্রমণ না করে, তারা যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তাহলে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করো; (মূলত) এভাবেই কাফেরদের শাসিত্ম (নির্ধারণ করা হয়েছে) | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯১

তবে তারা যদি (যুদ্ধবিগ্রহ থেকে) ফিরে আসে তাহলে (মনে রেখো), আল্লাহ তায়ালা বড়োই ক্ষমাশীল ও দয়ার আধার | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯২

তোমরা তাদের সাথে লড়াই করতে থাকো, যতোক্ষণ না (যমীনে) ফেতনা অবশষ্টি থাকে এবং (আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দেয়া) জীবন ব্যবস্থা ( পূর্ণাংগভাবে) আল্লাহর জন্যে নির্দষ্টি হয়ে যায়; যদি তারা (যুদ্ধ থেকে) ফিরে আসে তবে তাদের সাথে আর কোনো বাড়াবাড়ি নয়, (তবে) যালেমদের ওপর (এটা প্রযোজ্য নয়) | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯৩

একটি সম্মানিত মানের বদলেই একটি সম্মানিত মাস (আশা করা যাবে, প্রয়োজনে) এ সম্মানিত মাসসমূহেও প্রতিশোধ ( ব্যবস্থা) বৈধ হবে; (এ সময়) যদি কেউ তোমাদের ওপর হ সত্ত্ব প্রসারিত করে তাহলে তোমরাও তাদের ওপর তেমনি হ সত্ত্ব প্রসারিত করে (জবাব) দাও, তবে (সর্বদাই) আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, মনে রেখো, যারা (সীমালংঘন থেকে) বঁচে থাকে আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে রয়েছেন| - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯৪

আল্লাহর পথে অর্থ সম্পদ ব্যয় করো, (অর্থ সম্পদ আঁকড়ে ধরে) নিজেদের হাতেই নিজেদের ধ্বংসের অতলে নিক্ষেপ করো না এবং তোমরা (অন্য মানুষদের সাথে দয়া) অনুগ্রহ করো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহকারী ব্যক্তিদের ভালোবাসেন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯৫

আল্লাহ তায়ালার (সন্তুষ্টির) জন্যে হজ্জ ও ওমরা সম্পন্ন করো; (পথে) যদি তোমাদের কোথাও আটকে দেয়া হয় তাহলে সে স্থানেই কোরবানীর জন্যে যা কিছু সহজভাবে (হাতের কাছে) পাওয়া যায় তা দিয়েই কোরবানী আদায় করে নাও, (তবে) কোরবানীর পশু তার নির্দষ্টি গন্তব্যস্থলে পৌঁছার আগ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের মাথা মুন্ডন করো না; যদি তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে, অথবা যদি তার মাথায় কোনো রোগ থাকে (যে কারণে আগেই তার মাথা মুন্ডন করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে), তাহলে সে যেন এর বিনিময় (ফেদিয়া আদায় করে, এবং তা) হচ্ছে কিছু রোযা (রাখা) অথবা অর্থ দান করা, কিংবা কোরবানী আদায় করা, অতপর তোমরা যখন নিরাপদ হয়ে যাবে তখন তোমাদের কেউ যদি এক সাথে হজ্জ ও ওমরা আদায় করতে চায়, তার উচিত ( তার জন্যে) যা সহজলভ্য তা দিয়ে কোরবানী আদায় করা, যদি কোরবানী করার মতো কোনো পশু সে না পায় (তাহলে) সে যেন হজ্জের সময়কালে তিনটি এবং তোমরা যখন বাড়ি ফিরে আসবে তখন সাতটি[] (সর্বমোট) পূর্ণ দশটি রোযা রাখবে, এই (সুবিধা)-টুকু শুধু তাদের জন্যে, যাদের পরিবার পরিজন আল্লাহর ঘরের আশেপাশে বর্তমান নেই; তোমরা আল্লাহকেই ভয় করো, জেনে রাখো, আল্লাহ তায়ালা কঠোর আযাব প্রদানকারী বটে! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯৬

হজ্জের মাসসমূহ (একান্ত) সুপরিচিত, সে সময়গুলোর মধ্যে যে ব্যক্তি হজ্জ (আদায়) করার মনস্থ করবে (সে যেন জেনে রাখে), হজ্জের ভেতর (কোনো) যৌনসম্ভোগ নেই, নেই কোনো অশ্লীল গালিগালাজ ও ঝগড়াঝাটি, আর যতো ভালো কাজ তোমরা আদায় করো আল্লাহ তায়ালা (অবশ্যই) তা জানেন; (হজ্জের নিয়ত করলে) এর জন্যে তোমরা পাথেয় যোগাড় করে নেবে, যদিও আল্লাহর ভয়টাই হচ্ছে (মানুষের) সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয়, অতএব হে বুদ্ধিমান মানুষরা, তোমরা আমাকেই ভয় করো | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯৭

(হজ্জের এ সময়গুলোতে) যদি তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করতে (গিয়ে কোনো অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে) চাও তাতে তোমাদের কোনোই দোষ নেই, অতপর তোমরা যখন আরাফাতের ময়দান থেকে ফিরে আসবে তখন (মোযদালাফায়) মাশয়ারে হারাম'-এর কাছে এসে আল্লাহকে স্মরণ করবে, (ঠিক যেমনি করে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের (তাঁকে ডাকার) পথ বলে দিয়েছেন, তেমনি করে তাঁকে স্মরণ করবে, ইতি পূর্বে তোমরা (আসলেই) পথভ্রষ্টদের দলে শামিল ছিলে | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯৮

তারপর তোমরা সে স্থান থেকে ফিরে এসো, যেখান থেকে অন্য (হজ্জ পালনকারী) ব্যক্তিরা ফিরে আসে, (নিজেদের ভুল ভ্রান্তির জন্যে) আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা (গুনাহ খাতা) মাফ করে দেন, তিনি বড়োই দয়ালু ! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৯৯

যখন তোমরা তোমাদের (হজ্জের যাবতীয়) আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নেবে তখন (এখানে বসে আগের দিনে) যেভাবে তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের (গৌরবের কথা) স্মরণ করতে, তেমনি করে [] বরং তার চাইতে বেশী পরিমাণে (এখন) আল্লাহকে স্মরণ করো; অতপর মানুষদের ভেতর থেকে একদল লোক বলে, হে আমাদের মালিক, (সব) ভালো জিনিস তুমি আমাদের এ দুনিয়াতেই দিয়ে দাও, ব সত্ত্বত (যারা এ ধরনের কথা বলে) তাদের জন্যে পরকালে আর কোনো পাওনাই (বাকী) থাকে না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০০

(আবার) এ মানুষদেরই আরেক দল বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, এ দুনিয়ায়ও তুমি আমাদের কল্যাণ দান করো, পরকালেও তুমি আমাদের কল্যাণ দান করো; (সর্বোপরি ) তুমি আমাদের আগুনের আযাব থেকে নিষ্কৃতি দাও । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০১

এ ধরনের লোকদের তাদের নিজ নিজ উপার্জন মোতাবেক তাদের যথার্থ হিস্যা রয়েছে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০২

হাতেগনা (হজ্জের) এ কয়টি দিনে (বেশী পরিমাণে) আল্লাহকে স্মরণ করো; (হজ্জের পর) যদি কেউ তাড়াহুড়ো করে দু'দিনের মধ্যে (মিনা থেকে মক্কায় ফিরে আসে) তাতে (যেমন) কোনো দোষ নেই, (তেমনি) যদি কোনো ব্যক্তি সেখানে আরো বেশী অপেক্ষা করতে চায় তাতেও কোনো দোষ নেই, (এ নিয়ম হচ্ছে) তার জন্যে, যে আল্লাহকে ভয় করেছে, তোমরা শুধু আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করো এবং জেনে রাখো, একদিন তোমাদের তাঁর কাছেই জড়ো করা হবে । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০৩

মানুষদের মাঝে এমন লোকও আছে, পার্থিব জীবনে যার কথা তোমাকে খুবই উৎফুল্ল করবে, তার মনে যা কিছু আছে তার ওপর সে আল্লাহ তায়ালাকে সাক্ষী বানায়, কিন্তু (এর প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে) সে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০৪

সে যখন (আল্লাহর যমীনের কোথাও) ক্ষমতার আসনে বসতে পারে, তখন সে নানা প্রকারে অশান্তি সৃষ্টি করতে শুরু করে, (যমীনের) শস্য ক্ষেত্র বিনাশ করে, (জীবজন্তু) বংশ নির্মূল করে; (মূলত) আল্লাহ তায়ালা কখনো বিপর্যয় (সৃষ্টিকারী মানুষদের) পছন্দ করেন না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০৫

যখন তাকে বলা হয়, (ফেতনা ফাসাদ সৃষ্টি না করে) তুমি আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, তখন তাকে (মিথ্যা) অহংকারে পেয়ে বসে যা গুনাহের সাথে (মেশানো থাকে, মুলত) এ (চরিত্রের) লোকের জন্যে জাহান্নামই যথষ্টে; আর তা হচ্ছে একান্ত নিকৃষ্টতম ঠিকানা ! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০৬

এ মানুষদের ভেতর (আবার) এমন কিছু লোকও রয়েছে, যারা আল্লাহ তায়ালার (এতোটুকু) সন্তুষ্টি লাভের জন্যে নিজের জীবন (পর্যন্ত) বিক্রি করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা (এ ধরনের) বান্দাদের প্রতি সত্যিই অনুগ্রহশীল! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০৭

হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা পুরোপুরিই ইসলামে (-র ছায়াতলে) এসে যাও এবং কোনো অবস্থায়ই (অভিশপ্ত) শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না; কেননা শয়তান হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্যতম দুশমন! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০৮

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন তোমাদের কাছে এসে যাওয়ার পরও যদি তোমাদের পদস্খলন হয়, তাহলে নিশ্চিত জেনে রাখো, আল্লাহ তায়ালা মহা বিজ্ঞ ও পরাক্রমশালী । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২০৯

তারা কি (সেদিনের) অপেক্ষা করছে, যখন আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তাঁর ফেরেশতাসহ মেঘের ছায়া দিয়ে (এখানে) আসবেন এবং (তখন তাদের ভাগ্যের চূড়ান্ত) ফয়সালা হয়ে যাবে; (তাছাড়া) সব কয়টি ব্যাপার তো (সর্বশেষে) তাঁর কাছেই উপনীত হবে । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১০

তুমি বনী ইসরাঈলদের জিজ্ঞেস করো, কি পরিমাণ সুস্পষ্ট নিদর্শন আমি তাদের দান করেছি; (আমি তাদের বলেছি,) যার কাছে (হেদায়াতের) নেয়ামত আসার পর সে নিজে তা বদলে ফেলে, (তার জন্যে) আল্লাহ তায়ালা (কিন্তু) কঠোর শাসিত্মদানকারী | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১১

যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করেছে, তাদের জন্যে তাদের এ পার্থিব জীবনটা খুব লোভনীয় করে (সাজিয়ে) রাখা হয়েছে, এরা ঈমানদার ব্যক্তিদের বিদ্রূপ করে, (অথচ) এ ঈমানদার ব্যক্তি[] যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করেছে, শেষ বিচারের দিন তাদের মর্যাদা (এদের তুলনায়) অনেক বেশী হবে; আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে অপরিমিত রেযেক দান করেন । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১২

(এক সময়) সব মানুষ একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত ছিলো (পরে এরা নানা দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে তাদের স্রষ্টাকেই ভুলে গেলো) | তখন আল্লাহ তায়ালা (সঠিক পথের অনুসারীদের) সুসংবাদবাহী আর গুনাহগারদের জন্যে আযাবের সতর্ককারী হিসেবে নবীদের পাঠালেন, তিনি সত্যসহ গ্রন্থও নাযিল করলেন, যেন তা মানুষদের এমন পারস্পরিক বিরোধসমূহের চূড়ান্ত ফয়সালা করতে পারে, যে ব্যাপারে তারা মতবিরোধ করে; তাদের কাছে সুস্পষ্ট হেদায়াত পাঠানো সত্ত্বেও তারা পারস্পরিক (বিদ্রোহ ও) বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্যে মতবিরোধ করেছে, অতপর আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে স্বীয় ইচ্ছায় সেই সঠিক পথ দেখালেন, যার ব্যাপারে ইতি পূর্বে তাদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছিলো; আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে সঠিক পথ দেখান | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১৩

তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে, তোমরা (এমনি এমনিই) বেহেশতে চলে যাবে? (অথচ) পূর্ববতর্ী নবীদের অনুসারীদের (বিপদের) মতো কিছুই তোমাদের ওপর এখনো নাযিল হয়নি, তাদের ওপর (বহু ধরনের) বিপর্যয় ও সংকট এসেছে, কঠোর নির্যাতনে তারা নির্যাতিত হয়েছে, (কঠিন) নিপীড়নে তারা শিহরিত হয়ে ওঠেছে, এমন কি স্বয়ং আল্লাহর নবী ও তার সংগী সাথীরা (অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে) এই বলে (আর্তনাদ করে) উঠেছে, আল্লাহ তায়ালার সাহায্য করে (আসবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয়জনদের সান্তুবনা দিয়ে বললেন), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার সাহায্য অতি নিকটে । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১৪

২১৫. তারা তোমার কাছে জানতে চাইবে তারা কি (কি খাতে) খরচ করবে, তুমি (তাদের) বলে দাও, যা কিছুই তোমরা তোমাদের পিতামাতার জন্যে, আত্মীয় স্বজনদের জন্যে, এতীম অসহায় মেসকীনদের জন্যে এবং মোসাফেরের জন্যে খরচ করবে (তাই আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করবেন); যা ভালো কাজ তোমরা করবে আল্লাহ তায়ালা তা অবশ্যই জানতে পারবেন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১৫

(ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় নির্মূল করার জন্যে) যুদ্ধ তোমাদের ওপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, আর এটাই তোমাদের ভালো লাগে না, কিন্তু (তোমাদের জেনে রাখা উচিত,) এমনও তো হতে পারে যা তোমাদের ভালো লাগে না, তাই তোমাদের জন্যে কল্যাণকর, আবার (একইভাবে) এমন কোনো জিনিস, যা তোমাদের খুবই ভালো লাগবে, কিন্তু (পরিণামে) তা হবে তোমাদের জন্যে (খুবই) ক্ষতিকর; আল্লাহ তায়ালাই সবচাইতে ভালো জানেন, তোমরা কিছুই জানো না । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১৬

সম্মানিত মাস ও তাতে যুদ্ধ করা সম্পর্কে তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি তাদের বলে দাও, এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ করা অনেক বড়ো গুনাহর কথা; (কিন্তু আল্লাহর কাছে এর চাইতেও বড়ো গুনাহ হচ্ছে), আল্লাহর পথ থেকে মানুষদের ফিরিয়ে রাখা, আল্লাহকে অস্বীকার করা, খানায়ে কাবার দিকে যাওয়ার পথ রোধ করা ও সেখানকার অধিবাসীদের সেখান থেকে বের করে দেয়া, আর (আল্লাহদ্রোহিতার) ফেতনা ফাসাদ হত্যাকান্ডের চাইতেও অনেক বড়ো (অন্যায়; এ কারণেই) এরা তোমাদের সাথে (এ মাসসমূহে) লড়াই বন্ধ করে দেবে বলে (তুমি) ভেবো না, তারা তো পারলে (বরং) তোমাদের সবাইকে তোমাদের (ইসলামী) জীবন বিধান থেকেও ফিরিয়ে নিতে চাইবে; যদি তোমাদের কোনো ব্যক্তি তার দ্বীন থেকে ফিরে যায়, অতপর সে মৃত্যুমুখে পতিত হয় এমন অবস্থায় যে, সে (সুস্পষ্ট) কাফের ছিলো, তাহলে তারাই হবে সে লোক যাদের যাবতীয় কর্মকান্ড দুনিয়া আখেরাতে বিফলে যাবে, আর এরাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১৭

যারা ঈমান এনেছে, যারা হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জেহাদ করেছে, তারাই আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ লাভের আশা করতে পারে; আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১৮

(হে নবী,) এরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে; তুমি (তাদের) বলে দাও, এ দুটো জিনিসের মধ্যে অনেক বড়ো ধরনের পাপ রয়েছে, (যদিও) মানুষের জন্যে (এতে) কিছু (ব্যবসায়িক) উপকারিতাও রয়েছে; কিন্তু এ উভয়ের (ধ্বংসকারী) গুনাহ তার (ব্যবসায়িক) উপকারিতার চাইতে অনেক বেশী; তারা তোমাকে (এও) জিজ্ঞেস করে, তারা (নেক কাজে) কি কি খরচ করবে; তুমি তাদের বলো, (দৈনন্দিন প্রয়োজন পুরণের পর) যা অতিরিক্ত (তাই); আল্লাহ তায়ালা এভাবে তোমাদের জন্যে (তাঁর) আয়াতসমূহ খুলে খুলে বলে দেন, যাতে করে তোমরা এ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে পারো, - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১৯

(এ নির্দেশ তোমাদের) ইহকাল ও পরকালের (কল্যাণের) জন্যেই; তোমাকে তারা এতীমদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে; তুমি বলো, তাদের জন্যে (গৃহীত সব পন্থাই) উত্তম; যদি তোমরা (তোমাদের ধন সম্পদ) তাদের সাথে মিশিয়ে ফেলো (তাতে কোনো দোষ নেই, কারণ), তারা তো তোমাদেরই ভাই; আর আল্লাহ তায়ালা (এটা) ভালো করেই জানেন, (কে) ন্যায়ানুগ (পন্থায় আছে আর কে) ফাসাদী (স্বভাবের লোক ), আল্লাহ তায়ালা চাইলে (এ ব্যাপারে) আরো অধিক কড়াকড়ি আরোপ করতে পারতেন; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মহান ক্ষমতাবান কুশলী | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২০

তোমরা (কখনো) কোনো মোশরেক নারীকে বিয়ে করো না, যতোক্ষণ না তারা ঈমান আনে, মনে রেখো, একজন মুসলমান দাসীও একজন (ঐতিহ্যবাহী) মোশরেক নারীর চাইতে উত্তম, যদিও এ (মোশরেক) নারীটি তোমাদের বেশী ভালো লাগে, (হে মুসলিম মহিলারা), তোমরা কখনো কোনো মোশরেক পুরুষদের বিয়ে করো না যতোক্ষণ না তারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে; (কেননা) একজন ঈমানদার দাসও (একজন উঁচু খান্দানের) মোশরেক ব্যক্তির চাইতে ভালো, যদিও এ মোশরেক ব্যক্তিটি তোমাদের ভালো লাগে; (আসলে) এরা তোমাদের জাহান্নামের (আগুনের) দিকেই ডাকবে, আর আল্লাহ তায়ালা হামেশাই তাঁর মোমেন বান্দাদের তাঁর আদেশবলে জান্নাত ও ক্ষমার দিকেই আহ্বান জানান এবং (এ জন্যে) তিনি তাঁর আয়াতসমূহ মানুষদের কাছে স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন, যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২১

(হে নবী,) তারা তোমার কাছ থেকে (মহিলাদের মাসিক) ঋতুকাল (ও এ সময় তাদের সাথে দৈহিক মিলন) সম্পর্কে জানতে চাইবে; তুমি (তাদের) বলো, (আসলে মহিলাদের) এ (সময়টা) হচ্ছে একটা (অপবিত্র ও) কষ্টকর অবস্থা, কাজেই ঋতুস্রাবকালে তাদের সংগ বর্জন করবে এবং তোমরা (দৈহিক মিলনের জন্যে) তাদের কাছে যেও না, যতোক্ষণ না তারা (পুনরায়) পবিত্র হয়, অতপর তারা যখন পুরো পাক সাফ হয়ে যায় তখন তোমরা তাদের কাছে যাও[] (দৈহিক মিলনের) যে পদ্ধতি আল্লাহ তায়ালা শিখিয়ে দিয়েছেন সেভাবে; আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সেসব লোকদের ভালোবাসেন যারা আল্লাহর দিকেই ফিরে আসে এবং যারা পাক পবিত্রতা অবলম্বন করে | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২২

তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্যে (সন্তান উৎপাদনের) ফসল ক্ষেত্র, তোমরা তোমাদের এই ফসল ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই গমন করো, তোমরা (সময় থাকতে) নিজেদের জন্যে কিছু অগ্রিম নেক আমল পাঠিয়ে দাও; তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, জেনে রেখো, একদিন অবশ্যই তোমাদের সবাইকে তাঁর সামনাসামনি হতে হবে | মোমেনদের তুমি (পুরস্কারের) সুসংবাদ দান করো | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২৩

তোমরা তোমাদের (এমন) শপথের জন্যে আল্লাহর নামকে কখনো ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে না, (যার মাধ্যমে) ভালো কাজ করা, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা এবং মানুষদের মাঝে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করার কাজ থেকে তোমরা দূরে থাকবে, কারণ আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সব কিছুই শোনেন এবং সব কথাই তিনি জানেন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২৪

আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্যে কখনো পাকড়াও করবেন না, তবে তিনি অবশ্যই সে সব শপথের ব্যাপারে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, যা তোমরা মনের সংকল্পের সাথে সম্পন্ন করো; (ব সত্ত্বত) আল্লাহ তায়ালা বড়ো ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২৫

যেসব লোক নিজ স্ত্রীদের কাছে যাবে না বলে কসম করেছে, তাদের (এ ব্যাপারে মনস্থির করার জন্যে) চার মাসের অবকাশ রয়েছে, (এ সময়ের ভেতর) যদি তারা (তাদের কসম থেকে) ফিরে আসে (তাহলে জেনে রেখো), আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়াবান! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২৬

(আর) তারা যদি (এ সময়ের ভেতর) তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত করে, তাহলে (তারা যেন জেনে রাখে) আল্লাহ তায়ালা সব শোনেন জানেন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২৭

তালাকপ্রাপ্তা মহিলারা যেন তিনটি মাসিক ঋতু (অথবা ঋতু থেকে পবিত্র থাকার তিনটি মুদ্দত) পর্যন্ত নিজেদের (পুনরায় বিয়ের বন্ধন) থেকে দুরে রাখে; তাদের গর্ভাশয়ে আল্লাহ তায়ালা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা গৌপন করা কোনো অবস্থায়ই তাদের পক্ষে ন্যায়সংগত হবে না, যদি তারা আল্লাহর ওপর এবং পরকালের ওপর ঈমান আনে; এ সময়ের ভেতর তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তাদের স্বামীরা অবশ্য বেশী অধিকারী, যদি তারা উভয়ে পরস্পর মিলে মিশে চলতে চায়; পুরুষদের ওপর নারীদের যেমন ন্যায়ানুগ অধিকার রয়েছে, তেমনি রয়েছে নারীদের ওপর পুরুষের অধিকার, (পারিবারিক ভরণ পোষণের দায়িত্বের কারণে) তাদের ওপর পুরুষের মর্যাদা এক মাত্রা বেশী রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বিপুল ক্ষমতার মালিক, (তিনি পরম) কুশলী | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২৮

তালাক দু'বার (মাত্র উচ্চারণ করা যেতে পারে, তৃতীয় বারের আগেই) হয় সম্মান মর্যাদার সাথে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, অথবা সহৃদয়তার সাথে তাকে চলে যেতে দেবে; তোমাদের জন্যে এটা কোনো অবস্থায়ই ন্যায়সংগত নয় যে, (বিয়ের আগে) যা কিছু তোমরা তাদের দিয়েছো তা তাদের থেকে ফিরিয়ে নেবে, তবে আল্লাহর নির্দষ্টি সীমারেখার ভেতরে থেকে স্বামী স্ত্রী একত্রে জীবন কাটাতে পারবে না এমন আশংকা যদি দেখা দেয় (তখন আলাদা হয়ে যাওয়াটাই উত্তম, এমন অবস্থায়) যদি তোমাদের ভয় হয় যে, এরা আল্লাহর বিধানের গন্ডির ভেতর থাকতে পারবে না; তাহলে স্ত্রী যদি স্বামীকে কিছু বিনিময় দেয় (এবং তা দিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নেয়), তাহলে তাদের উভয়ের ওপর এটা কোন দুষণীয় (বিষয়) হবে না, (জেনে রাখো) এটা হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা, তা কখনো অতিক্রম করো না, আর যারা আল্লাহর দেয়া সীমারেখা লংঘন করে, তারা হচ্ছে সুস্পষ্ট যালেম। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২২৯

যদি সে তাকে তালাক দিয়েই দেয়, তাহলে তারপর (এ) স্ত্রী তার জন্যে (আর) বৈধ হবে না, (হা) যদি তাকে অপর কোনো স্বামী বিয়ে করে এবং (নিয়মমাফিক তাকে) তালাক দেয় এবং (পরবর্তী পর্যায়ে) তারা যদি (সত্যিই) মনে করে, তারা (এখন স্বামী স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে) আল্লাহর সীমারেখা মেনে চলতে পারবে, তাহলে পুনরায় (বিয়ে বন্ধনে) ফিরে আসাতে তাদের ওপর কোন দোষ নেই; এটা হচ্ছে আল্লাহর (বঁধে দেয়া) সীমারেখা, যারা (এ সম্পর্কে) অবগত আছে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে এ নির্দেশ সুস্পষ্ট করে পেশ করেন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩০

যখন তোমরা স্ত্রীদের তালাক দাও এবং তারা যখন তাদের অপেক্ষার সময় (ইদ্দত) পূর্ণ করে নেয়, তখন (হয়) মর্যাদার সাথে তাদের ফিরিয়ে আনো, নতুবা ভালোভাবে তাদের বিদায় করে দাও, শুধু কষ্ট দেয়ার উদ্দেশে কখনো তাদের আটকে রেখো না, এতে তোমরা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখাই লংঘন করবে, আর যে ব্যক্তি এমন কাজ করে সে (প্রকারান্তরে) নিজের ওপরই যুলুম করে; (সাবধান) আল্লাহর নির্দেশসমূহকে কখনো হাসি তামাশার ব সত্ত্ব মনে করো না, স্মরণ করো (তোমরা ছিলে অজ্ঞ), আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর (হেদায়াতের বাণী পাঠিয়ে) নেয়ামত দান করেছেন, (শুধু তাই নয়) তিনি তোমাদের জন্যে জ্ঞান ও যুক্তি পূর্ণ কেতাব নাযিল করেছেন, যা তোমাদের (দৈনন্দিন জীবনের) নিয়ম (কানুন) বাতলে দেয়; (অতএব) তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রাখো, তিনি তোমাদের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পর্কে সমক্ষর্ণ ওয়াকেফহাল রয়েছেন । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩১

যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিয়ে দাও, অতপর (তালাকপ্রাপ্ত) স্ত্রীরাও তাদের নির্ধারিত অপেক্ষার সময় (ইদ্দত পালন) শেষ করে নেয়, তখন তোমরা তাদের (পছন্দমতো) স্বামীদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে বাধা দিয়ো না, যদি তারা (বিয়ের জন্যে) সম্মানজনকভাবে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছে থাকে; তোমাদের ভেতর যারা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালীন জীবনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের এ আদেশই দেয়া যাচ্ছে; (মূলত) এটা তোমাদের জন্যে অধিক সম্মানের এবং অনেক পবিত্র (কর্মধারা, কারণ); আল্লাহ তায়ালা জানেন, তোমরা কিছুই জানো না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩২

মায়েরা পুরো দুটো বছরই (সন্তানকে) বুকের দুধ খাওয়াবে (এ নিয়ম তার জন্যে), যে ব্যক্তি চায় (সন্তানের) দুধ খাওয়ানোটা পুরোপুরি আদায় করুক; সন্তানের পিতা (দুধ খাওয়ানোর জন্যে মায়েদের (সম্মানজনক) ভরণ পোষণ (সুনিশ্চিত) করবে; কোনো ব্যক্তির ওপর তার সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দেয়া যাবে না, (পিতার সংগতির কথা ভাবতে গিয়ে দেখতে হবে,) মায়েরাও যেন (আবার) নিজ সন্তান নিয়ে (বেশী) কষ্টে না পড়ে যায় এবং পিতাকেও যেন সন্তান (জন্ম দেয়ার) কারণে (অযথা) কষ্টে পড়ে যেতে না হয়, (সেটাও খেয়াল রাখতে হবে, সন্তানের পিতার অবর্তমানে) তার উত্তরাধিকারীদের ওপর সন্তানের জন্মদাত্রী মায়ের অধিকার এভাবেই বহাল থাকবে, (তবে কোনো পর্যায়ে) পিতামাতা যদি পারস্পরিক সম্মতি ও পরামর্শের ভিত্তিতে আগে ভাগেই সন্তানের দুধ ছাড়িয়ে নিতে চায় তাতেও তাদের ওপর কোনো দোষের কিছু নেই; তোমরা যদি নিজেদের বদলে অন্য কাউকে সন্তানের দুধ খাওয়ানোর জন্যে নিয়োগ করতে চাও এবং যদি দুগ্ধদাত্রীর পাওনা যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়, তাতেও কোনো গুনাহ নেই; (সর্বাবস্থায়) আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং জেনে রেখো, তোমরা যা কিছুই করো আল্লাহ তায়ালা তার সব কিছুই দেখতে পান | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩৩

তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তারা (যদি তাদের) স্ত্রীদের (জীবিত) রেখে যায় (সে অবস্থায় স্ত্রীরা যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে), তারা তাদের নিজেদের চার মাস দশ দিন পর্যন্ত সময় বিয়ে থেকে বিরত রাখবে, (অপেক্ষার) এ সময়টুকু যখন তারা পুরণ করে নেবে, তখন নিজেদের বিয়ের ব্যাপারে তারা ন্যায়ানুগ পন্থায় (যা ইচ্ছা তাই) করতে পারবে এবং এ বিষয়টিতে তাদের ওপর কোনো গুনাহ নেই; (মূলত) তোমরা যে যাই করো না কেন, আল্লাহ তায়ালা (তার পুরোপুরি) খবর রাখেন । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩৪

২৩৫. (এমন কি সে অপেক্ষার সময় শেষ হওয়ার আগেও) তোমরা কেউ যদি তাকে বিয়ে করার (জন্যে) পয়গাম পাঠাও, কিংবা তেমন কোনো ইচ্ছা যদি তোমরা নিজেদের মনের ভেতর লুকিয়েও রাখো, (তাতেও) তোমাদের ওপর কোনো দোষ নেই; কেননা আল্লাহ তায়ালা এটা ভালো করেই জানেন, তাদের কথা অবশ্যই তোমরা বার বার মনে করবে, কিন্তু (সাবধান আড়ালে আবডালে থেকে) গোপনে তাদের বিয়ের কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ো না, তাদের সাথে কখনো তোমাদের কথা বলতে হলে তা বলবে সম্মানজনক পন্থায়; তার ইদ্দত (অপেক্ষার শরীয়তসম্মত সময়) শেষ হবার আগে কখনো তার সাথে বিয়ের সংকল্প করো না; জেনে রেখো, তোমাদের মনের সব (ইচ্ছা অভিসন্ধির) কথা কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই জানেন, অতএব তোমরা একমাত্র তাঁর থেকেই সতর্ক হও (এবং একথাও জেনে রেখো), আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ধৈর্যশীল, মহান ক্ষমাশীল! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩৪

স্ত্রীদের (শারীরিকভাবে) স্পর্শ করা কিংবা তাদের জন্যে মোহরের কোনো অংক নির্ধারণের আগেই যদি তোমরা তাদের তালাক দাও, তাতে (শরীয়তের দৃষ্টিতে) তোমাদের ওপর কোনো গুনাহ নেই, (এ পরিস্থিতিতে মোহরের কোনো অংক নির্ধারিত না হলেও) তাদের ন্যায়ানুগ পন্থায় কিছু পরিমাণ (অর্থ) আদায় করে দেবে, ধনী ব্যক্তির ওপর (এটা হবে তার) নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী এবং গরীব ব্যক্তির ওপর (হবে) তার সংগতি অনুযায়ী, (এটা) নেককার লোকদের ওপর (আরোপিত) স্ত্রীদের একটি অধিকার বটে | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩৬

যদি (এমন হয়,) তোমরা তাদের (শারীরিকভাবে) স্পর্শ করোনি, কিন্তু মোহরের অংক নির্ধারিত করে নিয়েছো, এমতাবস্থায় যদি তোমরা তাদের তালাক দাও, তাহলে তাদের জন্যে (থাকবে) নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক পরিমাণ, (যা) আদায় করে দিতে হবে, (হা) তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী নিজের থেকে যদি তোমাদের তা মাফ করে দেয় কিংবা যে (স্বামীর) হাতে বিয়ের বন্ধন রয়েছে সে যদি ( স্ত্রীকে নির্দষ্টি পরিমাণের বেশী দিয়ে) অনুগ্রহ দেখাতে চায় (সেটা ভিন্ন কথা) | (তবে) তোমরা যদি অনুগ্রহ করো (তাহলে) তা হবে আল্লাহভীতির একান্ত কাছাকাছি; কখনো একে অপরের প্রতি দয়া ও সহৃদয়তা দেখাতে ভুলো না; কারণ তোমরা (কে) কি কাজ করো, তার সব কিছুই আল্লাহ তায়ালা পর্যবেক্ষণ করছেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩৭

তোমরা নামাযসমূহের ওপর (গভীরভাবে) যত্নবান হও, (বিশেষ করে) মধ্যবর্তী নামায এবং তোমরা আল্লাহর জন্যে বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে যেও | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩৮

অতপর যদি তোমরা ভীতিপ্রদ কোনো অবস্থার সম্মুখীন হও (তখন প্রয়োজনে তোমরা নামায পড়বে) পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে কিংবা সওয়ারীর ওপর থাকা অবস্থায়, তারপর তোমরা যখন নিরাপদ হয়ে যাবে (স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে), তখন আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করো, যেভাবে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে স্মরণ করার ( নিয়ম) শিখিয়েছেন, যার কিছুই তোমরা ইতি পুর্বে জানতে না | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৩৯

তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং সে বিধবা স্ত্রীদের রেখে যায়, (তার উত্তরসুরিদের জন্যে তার) ওসিয়ত থাকবে যেন তারা এক বছর পর্যন্ত তাদের স্ত্রীদের ব্যয়ভার বহন করে, (কোনো অবস্থায় যেন তার ভিটেমাটি থেকে) তাকে বের করে না দেয়, (এ সময় পুরণ হবার আগে) যদি তারা নিজেরাই বের হয়ে যায় এবং তারা নিজেদের ব্যাপারে কোনো ভিন্ন সিদ্ধান্ত করে কোনো সম্মানজনক ব্যবস্থা করে নেয়; তাহলে এ জন্যে তোমাদের ওপর কোনো দোষ পড়বে না; আল্লাহ তায়ালা (সবার ওপর) পরাক্রমশালী, তিনি বিজ্ঞ কুশলীও! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪০

(স্বামীদের ওপর) তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের জন্যে ন্যায়সংগত ভরণ পোষণ পাবার অধিকার থাকবে; আল্লাহ তায়ালাকে যারা ভয় করে এটা তাদের ওপর (আরোপিত) (মহিলাদের) অধিকার | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪১

এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর আয়াতগুলো তোমাদের জন্যে সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা বুঝতে পারো | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪২

তুমি কি (তাদের পরিণতি) দেখোনি যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলো, অথচ তারা (সংখ্যায়) ছিলো হাজার হাজার, তাদের (এ কাপুরুষোচিত আচরণে রুষ্ট হয়ে) আল্লাহ তায়ালা তাদের বললেন, তোমরা নিপাত হয়ে যাও, (এক সময় তাদের বংশধররা সাহসিকতার সাথে যালেমের মোকাবেলা করলো) | আল্লাহ তায়ালাও এর পর তাদের (সামাজিক ও রাজনৈতিক) জীবন দান করলেন; আল্লাহ তায়ালা (এ ধরনের সাহসী) মানুষদের ওপর (সর্বদাই) অনুগ্রহশীল; কিন্তু মানুষদের অধিকাংশই (এ জন্যে) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪৩

(অতএব হে মুসলমানরা, কাপুরুষতা না দেখিয়ে) তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করো এবং (এ কথা) ভালো করে জেনে রাখো, আল্লাহ তায়ালা (যেমন সব) শোনেন, (তেমনি) তিনি সব কিছু জানেনও | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪৪

(তোমাদের মধ্য থেকে) কে (এমন) হবে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, (যে কেউই আল্লাহকে ঋণ দেবে সে যেন জেনে রাখে), আল্লাহ তায়ালা (ঋণের সে অংক) তার জন্যে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন; আল্লাহ তায়ালা কাউকে ধনী আবার কাউকে গরীব করেন, (আর সব শেষে) তোমাদের (ধনী গরীব) সবাইকে তো একদিন তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪৫

তুমি কি বনী ইসরাঈল দলের কতিপয় নেতা সম্পর্কে চিন্তা করোনি? যখন তারা মুসার আগমনের পর নবীর কাছে বলেছিলো, আমাদের জন্যে একজন বাদশাহ ঠিক করে দাও, যেন (তার সাথে) আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করতে পারি; (আল্লাহর) সে নবী (তাদের) বললো, তোমাদের অবস্থা আগের লোকদের মতো এমন হবে না তো যে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের লড়াইর আদেশ দেবেন এবং তোমরা লড়াই করবে না, তারা বললো, আমরা কেন আল্লাহর পথে লড়বো না, (বিশেষ করে যখন) আমাদের নিজেদের বাড়ি ঘর থেকে আমাদের বের করে দেয়া হয়েছে, (বের করে দেয়া হয়েছে) আমাদের ছেলে মেয়েদেরও, অতপর যখন (সত্যি সত্যিই) তাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হলো তখন তাদের মধ্য থেকে কতিপয় (সাহসী) বান্দা ছাড়া অধিকাংশই ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গেছে; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যালেমদের ভালো করেই জানেন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪৬

তাদের নবী তাদের বললো, আল্লাহ তায়ালা তালুতকে তোমাদের ওপর বাদশাহ (নিযুক্ত) করে পাঠিয়েছেন; (এ কথা শুনে) তারা বললো, তার কি অধিকার আছে আমাদের ওপর রাজত্ব করার? বাদশাহীর অধিকার (বরং) তার চাইতে আমাদেরই বেশী রয়েছে, (তাছাড়া) অর্থ প্রাচুর্যও তো তার বেশী নেই; আল্লাহর নবী বললো, (শাসন ক্ষমতার জন্যে) আল্লাহ তায়ালা তাকেই বাছাই করেছেন এবং (এ কাজের জন্যে) তার শারীরিক যোগ্যতা ও জ্ঞান (প্রতিভা) আল্লাহ তায়ালা বাড়িয়ে দিয়েছেন; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকেই তাঁর রাজক্ষমতা দান করেন; তাঁর ভান্ডার অনেক প্রশ্ন সত্ম, আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকেই রাজত্ব দেন, আল্লাহ তায়ালা প্রাচুর্যময় ও মহাবিজ্ঞ | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪৭

তাদের নবী তাদের (আরো) বললো, (আল্লাহ তায়ালা যাকে পাঠাচ্ছেন) তার বাদশাহীর অবশ্যই একটা চিহ্ন থাকবে এবং তা হচ্ছে, সে তোমাদের সামনে (হারানো) সিন্দুকটি এনে হাযির করবে, এতে তোমাদের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে (সাম্ভবনা ও) প্রশান্তির বিষয় থাকবে, (তাছাড়া) এ (অমূল্য) সিন্দুকে মুসা ও হারূনের পরিবার পরিজনের কিছু রেখে যাওয়া (জিনিসপত্রও) থাকবে, (আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে) তাঁর ফেরেশতারা এ সিন্দুক তোমাদের জন্যে বহন করে আনবে, যদি তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো তাহলে (তোমরা দেখবে), এসব কিছুতে তোমাদের জন্যে (এক ধরনের) নিদর্শন রয়েছে । - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪৮

(রাজত্ব পেয়ে) তালুত যখন নিজ বাহিনী নিয়ে এগিয়ে গেলো, তখন সে (তার লোকদের) বললো, আল্লাহ তায়ালা একটি নদী (-র পানি) দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করবেন, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ এর পানি পান করে তাহলে সে আর আমার দলভুক্ত থাকবে না, আর যে ব্যক্তি তা খাবে না সে অবশ্যই আমার দলভুক্ত থাকবে, তবে কেউ যদি তার হাত দিয়ে সামান্য এক আঁজলা (পানি খেয়ে) নেয় তা ভিন্ন কথা, অতপর (সেখানে গিয়ে) হাতেগোনা কয়জন লোক ছাড়া আর সবাই তৃপ্তিভরে পানি পান করে নিলো; এ কয়জন লোক[] যারা তার কথায় তার সাথে ঈমান এনেছিলো, তারা এবং তালুত যখন নদী পার হয়ে এগিয়ে গেলো, তখন তারা (নিজেদের দীনতা দেখে) বলে উঠলো, হে আল্লাহ, আজ জালুত এবং তার বিশাল বাহিনীর মোকাবেলা করার শক্তি আমাদের নেই; (এ সময় তাদেরই সাথী বন্ধুরা) যারা জানতো তাদের আল্লাহর সামনে হাযির হতে হবে, তারা বললো, (ইতিহাসে এমন) অনেকবারই দেখা গেছে, আল্লাহর সাহায্য নিয়ে একটি ক্ষুদ্র দলও বিশাল বাহিনীর ওপর জয়ী হয়েছে; (কেননা) আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন | - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৪৯

তারপর (যখন) সে তার সৈন্য নিয়ে (মোকাবেলা করার জন্যে) দাঁড়ালো, তখন তারা (আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে) বললো, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের সবরের তাওফীক দান করো, দুশমনের মোকাবেলায় আমাদের কদম অটল রাখো এবং অবিশ্বাসী কাফেরদের মোকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো; - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫০

লড়াইয়ের ময়দানে তারা তাদের পর্যুদ সত্ত্ব (লাঞ্ছিত) করে দিলো এবং দাউদ আল্লাহর সাহায্য নিয়ে জালুতকে হত্যা করলো, আল্লাহ তায়ালা তাকে দুনিয়ার রাজত্ব দান করলেন এবং তাকে (রাজক্ষমতা চালানোর) কৌশলও শিক্ষা দিলেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজ ইচ্ছামতো আরো (বহু) বিষয়ের জ্ঞান দান করেন; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যদি (যুগে যুগে) একদল লোককে দিয়ে আরেকদল লোককে শায়ে সত্ত্বা না করতেন, তাহলে এই ভূখন্ড ফেতনা ফাসাদে ভরে যেতো, কিন্তু (আল্লাহ তায়ালা তা চাননি, কেননা) আল্লাহ তায়ালা এ সৃষ্টিকুলের ওপর বড়োই অনুগ্রহশীল! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫১

(এ কেতাবে বর্ণিত) এসব ঘটনা হচ্ছে আল্লাহর এক একটা নিদর্শন (মাত্র), যা যথাযথভাবে আমি তোমাকে শুনিয়েছি (এর কোনো ঘটনাই তো তুমি জানতে না); তুমি অবশ্যই আমার পাঠানো (নবী) রসুলদের একজন! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫২

এই (যে) নবী রসূলরা (রয়েছে)— এদের কাউকে কারো ওপর আমি বেশী মর্যাদা দান করেছি। এদের মধ্যে এমনও (কেউ) ছিলো যার সাথে আল্লাহ তায়ালা কথা বলেছেন এবং (এর মাধ্যমে) কারো মর্যাদা তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন; আমি মারইয়ামের ছেলে ঈসাকে (কতিপয়) উজ্জ্বল নিদর্শন দিয়েছিলাম, অতপর পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে আমি সাহায্য করেছি; আল্লাহ তায়ালা চাইলে তাদের (আগমনের) পর যাদের কাছে এসব উজ্জ্বল নিদর্শন এসেছে তারা কখনো মারামারিতে লিপ্ত হতো না, কিন্তু (রসূলদের পর) তারা (দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে গেলো, অতপর তাদের মধ্যে কিছু লোক ঈমান আনলো আবার তাদের কিছু লোক (আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর নবীকে) অস্বীকার করলো, (অথচ) আল্লাহ পাক চাইলে এরা কেউই যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতো না, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাই করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৩

হে ঈমানদাররা, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আমার দেয়া ধন সমদ থেকে (আমার পথে) ব্যয় করো— সে দিনটি আসার আগে, যেদিন কোনো রকম বেচাকেনা, বন্ধুত্ব ভালোবাসা থাকবেনা_ থাকবেনা কোনো রকমের সুপারিশ। (এ দিনের) অস্বীকারকারীরাই হচ্ছে যালেম। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৪

মহান আল্লাহ তায়ালা, তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, তিনি অনাদি এক সত্তা, ঘুম (তো দূরের কথা, সামান্য) তন্দ্রাও তাঁকে আচ্ছন্ন করে না; আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তার সব কিছুরই একচ্ছত্র মালিকানা তাঁর; কে এমন আছে যে তাঁর দরবারে বিনা অনুমতিতে কিছু সুপারিশ পেশ করবে? তাদের বর্তমান ভবিষ্যতের সব কিছুই তিনি জানেন, তাঁর জানা বিষয়সমূহের কোনো কিছুই (তাঁর সৃষ্টির) কারো জ্ঞানের সীমা পরিসীমার আয়ত্তাধীন হতে পারে না, তবে কিছু জ্ঞান যদি তিনি কাউকে দান করেন (তবে তা ভিন্ন কথা), তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য আসমান যমীনের সব কিছুই পরিবেষ্টন করে আছে, এ উভয়টির হেফাযত করার কাজ কখনো তাঁকে পরিশ্রান্ত করে না, তিনি পরাক্রমশালী ও অসীম মর্যাদাবান। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৫

(আল্লাহর) দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই, (কারণ) সত্য (এখানে) মিথ্যা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে, তোমাদের মধ্যে যদি কোনো ব্যক্তি বাতিল (মতাদর্শ)-কে অস্বীকার করে, আল্লাহর (দেয়া জীবনাদর্শের ওপর ঈমান আনে, সে যেন এর মাধ্যমে এমন এক শক্তিশালী রশি ধরলো, যা কোনোদিনই ছিঁড়ে যাবার নয়; আল্লাহ তায়ালা (সব কিছুই শোনেন) এবং (সবকিছুই) জানেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৬

যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন তাদের সাহায্যকারী (বন্ধু), তিনি (জাহেলিয়াতের) অন্ধকার থেকে তাদের (ঈমানের) আলোতে বের করে নিয়ে আসেন, (অপরদিকে) যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, বাতিল (শক্তিসমূহ)-ই হয়ে থাকে তাদের সাহায্যকারী, তা তাদের (দ্বীনের) আলোক থেকে (কুফরীর) অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়; এরাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৭

তুমি কি সে ব্যক্তির অবস্থা দেখোনি যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা (দুনিয়ার) রাষ্ট্র মতা দেয়ার পর সে ইবরাহীমের সাথে স্বয়ং মালিকের ব্যাপারেই বিতর্কে লিপ্ত হলো, (বিতর্কের এক পর্যায়ে) ইবরাহীম বললো, আমার মালিক তিনি, যিনি (সৃষ্টিকুলকে) জীবন দান করেন, মৃত্যু দান করেন, সে বললো, জীবন মৃত্যু তো আমিও দিয়ে থাকি, ইবরাহীম বললো, (আমার) আল্লাহ তায়ালা পূর্ব দিক থেকে (প্রতিদিন) সূর্যের উদয়ন ঘটান, (একবার) তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে বের করে দেখাও তো! (এতে সত্য) অস্বীকারকারী ব্যক্তিটি হতভম্ব হয়ে গেলো, (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যালেম জাতিকে কখনো পথের দিশা দেন না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৮

অথবা (ঘটনাটি) কি সেই ব্যক্তির মতো যে একটি বস্তির পাশ দিয়ে যাবার সময় যখন দেখলো, তা (বিধ্বস্ত হয়ে) আপন অস্তিত্বের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, (তখন) সে ব্যক্তি বললো, এ মৃত জনপদকে কিভাবে আল্লাহ তায়ালা আবার পুনর্জীবন দান করবেন, এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা (সত্যি সত্যিই) তাকে মৃত্যু দান করলেন এবং (এভাবেই তাকে) একশ বছর ধরে মৃত (ফেলে) রাখলেন, অতপর তাকে পুনরায় জীবিত করলেন; এবার জিজ্ঞেস করলেন, (বলতে পারো) তুমি কতোকাল (মৃত অবস্থায়) কাটিয়েছো? সে বললো, আমি একদিন কিংবা একদিনের কিছু অংশ (মৃত অবস্থায়) কাটিয়েছি, আল্লাহ তায়ালা বললেন, বরং এমনি অবস্থায় তুমি একশ বছর কাটিয়ে দিয়েছো, তাকিয়ে দেখো তোমার নিজস্ব খাবার ও পানীয়ের দিকে, (দেখবে) তা বিন্দুমাত্র পচেনি, তোমার গাধাটির দিকেও দেখো, (তাও একই অবস্থায় আছে, আমি এসব এ জন্যেই দেখালাম), যেন আমি তোমাকে মানুষদের জন্যে (পরকালীন জীবনের) একটি (জীবন্ত) প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি, এ (মৃত জীবের) হাড় পাঁজরগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখো, (তুমি নিজেই দেখতে পাবে) আমি কিভাবে তা একটার সাথে আরেকটার জোড়া লাগিয়ে (নতুন জীবন) দিয়েছি, অতপর কিভাবে তাকে আমি গোশতের পোশাক পরিয়ে দিয়েছি, অতএব (এভাবে আল্লাহর দেখানো) এ বিষয়টি যখন তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো তখন সে বলে উঠলো, আমি জানি, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর মতাবান। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৯

(আরো স্মরণ করো,) যখন ইবরাহীম বললো, হে মালিক, মৃতকে তুমি কিভাবে (পুনরায়) জীবন দাও তা আমাকে একটু দেখিয়ে দাও; আল্লাহ তায়ালা বললেন, কেন, তুমি কি (না দেখে) বিশ্বাস করো না? ইবরাহীম বললো, হাঁ (প্রভু, আমি বিশ্বাস করি), কিন্তু (এর দ্বারা) আমার মন একটু সানত্‍দ্রনা পাবে (এই যা); আল্লাহ তায়ালা বললেন (তুমি বরং এক কাজ করো), চারটি পাখী ধরে আনো, অতপর (আসদে আসত্দে) এই পাখীগুলোকে তোমার কাছে পোষ মানিয়ে নাও (যাতে ওদের নাম তোমার কাছে পরিচিত হয়ে যায়), তারপর (তাদের কেটে কয়েক টুকরায় ভাগ করো,) তাদের (কাটা) এক একটি টুকরো এক একটি পাহাড়ের ওপর রেখে এসো, অতপর ওদের (সবার নাম ধরে) তুমি ডাকো, (দেখবে জীবন্ত পাখীতে পরিণত হয়ে) ওরা তোমার কাছে দৌড়ে আসবে; তুমি জেনে রাখো, আল্লাহ তায়ালা মহাশক্তিশালী, বিজ্ঞ কুশলী। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬০

যারা নিজেদের ধন সমদ আল্লাহ তায়ালার পথে খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি বীজের মতো, যে বীজটি বপন করার পর তা থেকে (একে একে) সাতটি শীষ বেরুলো, আবার এর প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ শস্য দানা; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন; আল্লাহ তায়ালা অনেক প্রশস্ত, অনেক বিজ্ঞ। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬১

যারা আল্লাহ তায়ালার পথে নিজেদের ধন সমদ ব্যয় করে এবং ব্যয় করে তা প্রচার করে বেড়ায় না, প্রতিদান চেয়ে তাকে কষ্ট দেয় না, (এ ধরণের লোকদের জন্যে) তাদের মালিকের কাছে তাদের জন্যে পুরস্কার (সংরতি) রয়েছে, (শেষ বিচারের দিন) এদের কোনো ভয় নেই, তারা (সেদিন) দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬২

(একটুখানি) সুন্দর কথা বলা এবং (উদারতা দেখিয়ে) মা করে দেয়া সেই দানের চাইতে অনেক ভালো, যে দানের পরিণামে কষ্টই আসে; আল্লাহ তায়ালা কারোই মুখাপেক্ষী নন, তিনি পরম ধৈর্যশীলও বটে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬৩

হে ঈমানদাররা, তোমরা (উপকারের) খোঁটা দিয়ে এবং (অনুগৃহীত ব্যক্তিকে) কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদকা বরবাদ করে দিয়ো না ঠিক সেই (হতভাগ্য) ব্যক্তির মতো, যে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশেই দান করে, সে আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর বিশ্বাস করে না; তার (দানের) উদাহরণ হচ্ছে, যেন একটি মসৃণ শিলাখন্ডের ওপর কিছু মাটি(-র আস্তরণ), সেখানে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলো, অতপর পাথর শক্ত হয়েই পড়ে থাকলো। (দান খয়রাত করেও) তারা (মূলত) এই অর্জনের ওপর থেকে কিছুই করতে পারলো না, আর যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তায়ালা তাদের কখনো সঠিক পথ দেখান না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬৪

(অপরদিকে) যারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যে এবং নিজেদের মানসিক অবস্থা (আল্লাহর পথে) সুদৃঢ় রাখার জন্যে নিজেদের ধন সমঙ্গ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ হচ্ছে, যেন তা কোনো উঁচু পাহাড়ের উপত্যকায় একটি (সুসজ্জিত) ফসলের বাগান, যদি সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় তাহলে ফসলের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়, আর প্রবল বৃষ্টিপাত না হলেও শিশির বিন্দুগুলোই (ফসলের জন্য) যথেষ্ট হয়, আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই পর্যবেণ করেন তোমরা কে কি কাজ করো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬৫

তোমাদের কেউ কি চাইবে যে, তার কাছে (ফলে ফুলে সুশোভিত) একটি বাগান থাকুক, যাতে খেজুর ও আংগুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফলমূল থাকবে, তার তলদেশ দিয়ে আবার প্রবাহমান থাকবে কতিপয় ঝর্ণাধারা, আর (এর ফল ভোগ করার আগেই) বাগানের মালিক বয়সের ভারে নুয়ে পড়বে এবং তার কিছু দুর্বল সন্তান থাকবে, (এ অবস্থায় হঠাৎ করে) এক আগুনের ঘূর্ণিবায় এসে তার সব (স্বপ্ন) জ্বালিয়ে দিয়ে যাবে; এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিদর্শনগুলো তোমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা (আল্লাহ তায়ালার এসব কথার ওপর ) চিন্তা গবেষণা করতে পারো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬৬

হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা নিজেরা যা অর্জন করেছো, সে পবিত্র (সমদ) এবং যা আমি যমীনের ভেতর থেকে তোমাদের জন্যে বের করে এনেছি, তার থেকে (একটি) উৎকৃষ্ট অংশ (আল্লাহর পথে) ব্যয় করো, (আল্লাহর জন্যে এমন) নিকৃষ্টতম জিনিসগুলো বেছে রেখে তার থেকে ব্যয় করো না, যা অন্যরা তোমাদের দিলে তোমরা তা গ্রহণ করবে না, অবশ্য যা কিছু তোমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্রহণ করো তা আলাদা, তোমরা জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা (তোমাদের দানের) মুখাপেক্ষী নন, সব প্রশংসার মালিক তো তিনিই! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬৭

শয়তান সব সময়ই তোমাদের অভাব অনটনের ভয় দেখাবে এবং সে (নানাবিধ) অশ্লীল কর্মকান্ডের আদেশ দেবে, আর আল্লাহ তায়ালা তোমাদের তাঁর কাছ থেকে অসীম বরকত ও মার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন (এবং সে দিকেই তিনি তোমাদের ডাকছেন), আল্লাহ তায়ালা প্রাচুর্যময় ও সম্যক অবগত। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬৮

আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে (একান্তভাবে) তাঁর প থেকে (বিশেষ) জ্ঞান দান করেন, আর যে ব্যক্তিকে (আল্লাহ তায়ালার সেই) বিশেষ জ্ঞান দেয়া হলো (সে যেন মনে করে), তাকে (সত্যিকার অর্থেই) প্রচুর কল্যাণ দান করা হয়েছে, আর প্রজ্ঞাসমজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া (আল্লাহর এসব কথা থেকে) অন্য কেউ কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করতে পারে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬৯

তোমরা যা কিছু খরচ করো আর যা কিছু (খরচ করার জন্যে) মানত করো, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা জানেন; যালেমদের (আসলেই) কোনো সাহায্যকারী নেই। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭০

(আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যে) তোমরা যা কিছু দান করো, তা যদি প্রকাশ্যভাবে (মানুষদের সামনে) করো তা ভালো কথা (তাতে কোনো দোষ নেই), তবে যদি তোমরা তা (মানুষদের কাছে) গোপন রাখো এবং (চপে চুপে) অসহায়দের দিয়ে দাও, তা হবে তোমাদের জন্যে উত্তম; (এ দানের কারণে) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বহুবিধ গুনাহ খাতা মুছে দেবেন, আর তোমরা যাই করো না কেন, আল্লাহ তায়ালা সব কিছু সম্পর্কেই ওয়াকেফহাল রয়েছেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭১

(যারা তোমার কথা শোনে না,) তাদের হেদায়াতের দায়িত্ব তোমার ওপর নয়, তবে আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকেই সঠিক পথ দেখান, তোমরা যা দান সদকা করো এটা তোমাদের জন্যেই কল্যাণকর, (কারণ) তোমরা তো এ জন্যেই খরচ করো যেনো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারো; (তোমরা আজ) যা কিছু দান করবে (আগামীকাল) তার পুরোপুরি পুরস্কার তোমাদের আদায় করে দেয়া হবে, (সেদিন) তোমাদের ওপর কোনো রকম যুলুম করা হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭২

দান সদকা তো (তোমাদের মাঝে এমন) কিছু গরীব মানুষের জন্যে, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত, তারা (নিজেদের জন্যে) যমীনের বুকে চেষ্টা সাধনা করতে পারে না, আত্মসম্মানবোধের কারণে কিছু চায় না বলে অজ্ঞ (মূর্খ) লোকেরা এদের মনে করে এরা (বুঝি আসলেই) সচ্ছল, কিন্তু তুমি এদের (বাহ্যিক) চেহারা দেখেই এদের (সঠিক অবস্থা) বুঝে নিতে পারো, এরা মানুষদের কাছ থেকে কাকুতি মিনতি করে ভিক্ষা করতে পারে না; তোমরা যা কিছুই খরচ করবে আল্লাহ তায়ালা তার (যথার্থ) বিনিময় দেবেন, কারণ তিনি সব কিছুই দেখেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭৩

যারা দিন রাত প্রকাশ্যে ও সংগোপনে নিজেদের মাল সমদ ব্যয় করে, তাদের মালিকের দরবারে তাদের এ দানের প্রতিফল (সুরতি) রয়েছে, তাদের ওপর কোনো রকম ভয় ভীতি থাকবে না, তারা (সেদিন) চিন্তিতও হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭৪

যারা সূদ খায় তারা (মাথা উঁচু করে) দাঁড়াতে পারবে না, (দাঁড়ালেও) তার দাঁড়ানো হবে সে ব্যক্তির মতো, যাকে শয়তান নিজস্ব পরশ দিয়ে (দুনিয়ার লোভ লালসায়) মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে; এটা এ কারণে, যেহেতু এরা বলে, ব্যবসা বাণিজ্য তো সুদের মতোই (একটা কারবারের নাম), অথচ আল্লাহ তায়ালা ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন, তাই তোমাদের যার (যার) কাছে তার মালিকের প থেকে (সুদ সংক্রান্ত) এ উপদেশ পৌঁছেছে, সে অতপর সূদের কারবার থেকে বিরত থাকবে, আগে (এ আদেশ আসা পর্যন্ত) যে সূদ সে খেয়েছে তা তো তার জন্যে অতিবাহিত হয়েই গেছে, তার ব্যাপার একান্তই আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধানদের ওপর; কিন্তু (এরপর) যে ব্যক্তি (আবার সুদী কারবারে) ফিরে আসবে, তারা অবশ্যই জাহান্নামের অধিবাসী হবে, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭৫

আল্লাহ তায়ালা সূদ নিশ্চিহ্ন করেন, (অপর দিকে) দান সদকা (-র পবিত্র কাজ)-কে তিনি (উত্তরোত্তর) বৃদ্ধি করেন; আল্লাহ তায়ালা (তাঁর নেয়ামতের প্রতি) অকৃতজ্ঞ পাপিষ্ঠ ব্যক্তিদের কখনো পছন্দ করেন না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭৬

তবে যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠা করেছে, যাকাত আদায় করেছে, তাদের ওপর কোনো ভয় থাকবে না, তারা সেদিন চিন্তিতও হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭৭

হে ঈমনদার লোকেরা, তোমরা (সুদের ব্যাপারে) আল্লাহকে ভয় করো, আগের (সূদী কারবারের) যে সব বকেয়া আছে তোমরা তা ছেড়ে দাও, যদি সত্যিই তোমরা আল্লাহর ওপর ঈমান আনো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭৮

যদি তোমরা এমনটি না করো, তাহলে অতপর আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূলের প থেকে (তোমাদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধের (ঘোষণা থাকবে), আর যদি (এখনো) তোমরা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসো তাহলে তোমরা তোমাদের মূলধন ফিরে পাবার অধিকারী হবে, (সুদী কারবার দ্বারা) অন্যের ওপর যুলুম করো না, তোমাদের ওপরও অতপর (সুদের) যুলুম করা হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭৯

সে (ঋণ গ্রহীতা) ব্যক্তি কখনো যদি অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাহলে (তার ওপর চাপ দিয়ো না, বরং) তার সচ্ছলতা ফিরে আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও; আর যদি তা মাফ করে দাও, তাহলে তা হবে তোমাদের জন্যে অতি উত্তম কাজ, যদি তোমরা (ভালোভাবে) জানো (তাহলে এটাই তোমাদের করা উচিৎ)! - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮০

সে দিনটিকে ভয় করো, যেদিন তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে, সেদিন প্রত্যেক মানব সন্তানকে (জীবনভর) কামাই করা পাপপুণ্যের পুরোপুরি ফলাফল দিয়ে দেয়া হবে, (কারো ওপর সেদিন ) কোনো ধরনের যুলুম করা হবে না। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮১

হে ঈমানদার বান্দারা, তোমরা যখন পরস্পরের সাথে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্যে ঋণের চুক্তি করো তখন তা লিখে রাখো; তোমাদের মধ্যকার যে কোনো একজন লেখক সুবিচারের ভিত্তিতে (এ চুক্তিনামা) লিখে দেবে, যাকে আল্লাহ তায়ালা লেখা শিখিয়েছেন সে যেন কখনো লিখতে অস্বীকৃতি না জানায়, (লেখার সময়) ঋণ গ্রহীতা (লেখককে) বলে দেবে কি (কি শর্ত সেখানে) লিখতে হবে, (এ পর্যায়ে) লেখক অবশ্যই তার মালিক আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা উচিত, (চুক্তিনামা লেখার সময় ল্য রাখতে হবে) তার কিছুই যেন বাদ না পড়ে; যদি সে ঋণ গ্রহীতা অজ্ঞ মূর্খ এবং (সব দিক থেকে) দুর্বল হয়, অথবা (চুক্তিনামার কথাবার্তা বলে দেয়ার) মতাই তার না থাকে, তাহলে তার প থেকে তার কোনো অভিভাবক ন্যায়ানুগ পন্থায় বলে দেবে কি কি কথা লিখতে হবে; (তদুপরি) তোমাদের মধ্য থেকে দুই জন পুরুষকে (এ চুক্তিপত্রে) সাক্ষী বানিয়ে নিয়ো, যদি দুই জন পুরুষ (একত্রে) পাওয়া না যায় তাহলে একজন পুরুষ এবং দুজন মহিলা (সাক্ষী হবে), যাতে করে তাদের একজন ভুলে গেলে দ্বিতীয় জন তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে; এমন সব লোকদের মধ্য থেকে সাক্ষী নিতে হবে যাদেরকে উভয় পই পছন্দ করবে, (সাক্ষীদের) যখন (সাক্ষ্য প্রদানের জন্যে) ডাকা হবে তখন তারা তা অস্বীকার করবে না; (লেনদেনের সময়) পরিমাণ ছোট হোক কিংবা বড়ো হোক, তার দিন ণসহ (লিখে রাখতে) অবহেলা করো না; এটা আল্লাহর কাছে ন্যায্যতর ও সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে অধিক মযবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং (পরবর্তীকালে) যাতে তোমরা সন্দিগ্ধ না হও, তার সমাধানের জন্যেও এটা নিকটতর (পন্থা), যা কিছু তোমরা নগদ (হাতে হাতে) আদান প্রদান করো তা (সব সময়) না লিখলেও তোমাদের কোনো তি নেই, তবে ব্যবসায়িক লেনদেনের সময় অবশ্যই সাক্ষী রাখবে, (দলিলের) লেখক ও (চুক্তিনামার) সাক্ষীদের কখনো (তাদের মত বদলানোর জন্যে) কষ্ট দেয়া যাবে না; তারপরও তোমরা যদি তাদের এ ধরনের যাতনা প্রদান করো তাহলে (জেনে রেখো), তা হবে (তোমাদের জন্যে) একটি মারাত্বক গুনাহ, (এ ব্যাপারে) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সবকিছুই শিখিয়ে দিচ্ছেন, (কেননা) আল্লাহ তায়ালা সবকিছুই জানেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮২

যদি তোমরা কখনো সফরে থাকো এবং (এ কারণে ঋণের চুক্তি লেখার মতো) কোনো লেখক না পাও, তাহলে (চুক্তি লেখার বদলে) কোনো জিনিস বন্ধক রেখে দাও, যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কোনো বন্ধকী জিনিসের ব্যাপারে বিশ্বাস করে, এমতাবস্থায় যে ব্যক্তিকে বিশ্বাস করা হয়েছে তার উচিত সেই আমানত যথাযথ ফেরত দেয়া এবং (আমানতের ব্যাপারে) আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা, যিনি তার মালিক; তোমরা কখনো সাক্ষ্য গোপন করো না, যে ব্যক্তি তা গোপন করে সে অবশ্যই অন্তরের দিক থেকে পাপিষ্ঠ (সাব্যস্ত হয়); বস্তুত আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যাবতীয় কাজকর্মের ব্যাপারেই সম্যক অবগত রয়েছেন। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮৩

আসমান যমীনে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহ তায়ালার জন্যে, তোমরা তোমাদের মনের ভেতর যা কিছু আছে তা যদি প্রকাশ করো কিংবা তা গোপন করো, আল্লাহ তায়ালা (একদিন) তোমাদের কাছ থেকে এর (পুরোপুরিই হিসাব গ্রহণ করবেন; (এরপর) তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে মাফ করে দেবেন, (আবার) যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি শাস্তি দেবেন; আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ওপর মতাবান। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮৪

(আল্লাহর) রসূল সে বিষয়ের ওপর ঈমান এনেছে যা তার ওপর তার মালিকের প থেকে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা (সে রসূলের ওপর) বিশ্বাস স্থাপন করেছে তারাও (সে একই বিষয়ের ওপর) ঈমান এনেছে; এরা সবাই ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাদের ওপর, তাঁর কেতাবসমূহের ওপর, তাঁর রসুলদের ওপর। (তারা বলে,) আমরা তাঁর (পাঠানো) নবী রসুলদের কারো মাঝে কোনো রকম পার্থক্য করি ন; আর তারা বলে, আমরা তো (আল্লাহর নির্দেশ) শুনেছি এবং (তা) মেনেও নিয়েছি, হে আমাদের মালিক, (আমরা) তোমার মা চাই এবং (আমরা জানি,) আমাদের (একদিন) তোমার কাছেই ফিরে যেতে হবে। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮৫

আল্লাহ তায়ালা কখনো কাউকেই তার শক্তি সামর্থের বাইরে কোনো কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না; সে ব্যক্তির জন্যে ততোটুকুই বিনিময় রয়েছে যতোটুকু সে (এ দুনিয়ায়) সময় করবে, আবার সে যতোটুকু (মন্দ দুনিয়ায়) অর্জন করেছে তার ওপর তার (ততোটুকু শাস্তিই) পতিত হবে; (অতএব, হে মোমেন ব্যক্তিরা, তোমরা এই বলে দোয়া করো,) হে আমাদের মালিক, যদি আমরা কিছু ভুলে যাই, (কোথাও) যদি আমরা কোনো ভুল করে বসি, তার জন্যে তুমি আমাদের পাকড়াও করো না, হে আমাদের মালিক, আমাদের পূর্ববর্তী (জাতিদের) ওপর যে ধরনের বোঝা তুমি চাপিয়েছিলে তা আমাদের ওপর চাপিয়ো না, হে আমাদের মালিক, যে বোঝা বইবার সামর্থ আমাদের নেই তা তুমি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না, তুমি আমাদের ওপর মেহেরবানী করো। তুমি আমাদের মাফ করে দাও। আমাদের ওপর তুমি দয়া করো। তুমিই আমাদের (একমাত্র আশ্রয়দাতা) বন্ধু, অতএব কাফেরদের মোকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো। - সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮৬


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url