হযরত ছালেহ (আঃ)-এর আগমন ও তাঁর উটনীর কাহিনী


হযরত ছালেহ (আঃ)-এর আগমন


হযরত হুদ (আঃ)-এর অনুসারীগণও পূর্বেকার প্রচলিত রীতি অনুসারে কিছুদিন ধর্মপথে স্থির থাকার পর অবশেষে শয়তানের প্ররোচনায় পথভ্রষ্ট হয়ে গেল ও মূর্তিপূজায় আত্মনিয়োগ করল। আদ বংশীয় লোকেরা তো এ সময় ধ্বংসের কোলে বিলীন হয়ে গিয়েছিল।

ঠিক এমনি সময় শাম নবীর বংশীয় সামুদ এক প্রভাবশালী ব্যক্তি যে শাম এবং হেজাজের মধ্যবর্তী স্থানের অধিবাসী ছিল। সে আদ বংশের ধ্বংসের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করিয়া তাহাদের রাজ্যে আগমন করতঃ বাদশাহী তখতে উপবেশন করল এবং দেশকে পুনর্গঠন করার কাজে মনোযোগ দিল। তাহার শক্তি-সামর্থ, তেজ-বীর্জ এবং বিচক্ষণতার গুণে দেশে শীঘ্রই সুখ-শান্তি এবং প্রাচুর্যে পূর্ণ হয়ে উঠল। দেশের লোকগণ যথেষ্ট সচ্ছল এবং সম্পদশালী হল। ফলে ক্রমেই তাহারা আল্লাহর পথ ভুলে অন্য পথে চলতে শুরু করলো ।


বাদশাহ সামুদের বংশীয় লোকদের সংখ্যাও অতি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে লাগলো; কিন্তু তাহারা ধনৈশ্বর্য ও অধিক সচ্ছলতার কারণে গর্ব করতে শুরু করলো। আর সাথে সাথে সত্যধর্মের রীতিনীতিগুলি পরিত্যাগ করে হুদ নবীর অনুসারীগণ পরবর্তী পর্যায়ে যেরূপ মূর্তি পূজায় অভ্যস্ত হইয়া পড়িয়াছিল, ইহারাও দেখাদেখি তাহাদেরই পথ অবলম্বন করল বরং তাদের অপেক্ষাও অধিক অসদাচারী হয়ে উঠল।

এমতাবস্থায় আল্লাহ তা'আলা সামুদ জাতিকে সৎপথ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করলেন। এই সম্পর্কে স্বয়ং তিনি কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন: 'অ ইলা ছামুদা আখহুম ছালিহান জ্বালা ইয়া কাওমি কুলুল্লাহ মা লাকুম মিন ইলাহিন গাইরুহু।' অর্থাৎ পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলা সামুদ জাতিকে হেদায়াত করবার উদ্দেশ্যে হযরত ছালেহ (আঃ)-কে নবীরূপে প্রেরণ করলেন। তিনি তাঁর স্বজাতীয়গণকে বললেন, 'হে আমার কাওম! তোমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা'আলারই ইবাদত কর। কেননা তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য আর কোন উপাস্য নাই। আর আমাকে তিনি রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন, সুতরাং তোমরা সকলে আমার কথা মেনে চল। পূর্ববর্তী কওমে আদের ঘটনা তো তোমরা চোখের উপরই দেখলে যে, আল্লাহর অবাধ্য হলে কি ঘটনা ঘটতে পারে।

হযরত ছালেহ (আঃ)-এর উটনী


হযরত ছালেহ (আঃ)-এর আহ্বানের জবাবে সামুদ জাতি বললঃ

مَا أَنْتَ الأَبْشَرٌ مِثْلُنَا فَاتِى بِايَةٍ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ *

অর্থাৎ, তুমি আমাদেরই মত একজন (সাধারণ) মানুষ ছাড়া আর অন্য কিছুই নও; এবং মানুষ কখনও নবী-রাসূল হতে পারে না। অতএব তুমি কোন না কোন একটি মা'জেযা প্রদর্শন কর, যদি তুমি সত্যবাদী থাক।

হযরত ছালেহ (আঃ) বললেন, তোমরা কিরূপ মা'জেযা দেখতে ইচ্ছা কর? তারা বলল, ঐ পাহাড়টির মধ্য হইতে একটি উটনী বাহির হয়ে আসবে আর ওটা তখনই একটি বাচ্চা প্রসব করবে এবং রীতিমত তাকে দুগ্ধপান করাবে । এইরূপ ঘটনা দেখাতে পারলে তবেই বুঝব যে, তুমি আল্লাহর নবী।

এমন মুহূর্তে ফেরেশতা জিব্রাইল আসলেন এবং তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি তাদের নিকট হতে একটি ওয়াদা আদায় করুন যে, তারা যেন ঐ উটনীকে প্রহার না করে। বস্তুতঃ হযরত ছালেহ (আঃ) তাদের নিকট হতে ঐরূপ ওয়াদা গ্রহণ করলেন।

ঠিক এই মুহূর্তে আল্লাহ তা'য়ালার দরবার হতে পুনরায় নির্দেশ আসল যে, হে ছালেহ! তুমি আমার নিকট প্রার্থনা কর- আমি চার হাজার বৎসর পূর্বেই ঐ পাহাড়ের মধ্যে একটি উষ্ট্রী পয়দা করে রেখেছি, যেন যথাসময়ে তোমার মা'জেযা প্রদর্শিত হতে পারে এবং তোমার নবুয়তের দলীল আরও সুদৃঢ় হয়। উটটি বাহির হওয়ামাত্র একটি অতি সুন্দর বাচ্চা প্রসব করল এবং সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী চারণ ভূমিতে ঘাস খেতে আরম্ভ করল।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url