আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সুরা আল মোজাদালাহ’এর বাংলা অনুবাদ | সুরা আল মোজাদালাহ | Surah Al Mujadalah | المجادلة



সুরা আল মোজাদালাহ’এর বাংলা অনুবাদ

সুরা আল মোজাদালাহ, মদীনায় অবতীর্ণ আয়াত ২২, রুকু ৩

সুরা আল মোজাদালাহ


রহমান রহীম আল্লাহ তা'আলা র নামে


১. (হে রসূল,) তার কথা আল্লাহ তা'আলা (যথার্থই) শুনেছেন, যে (মহিলা) তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছিলো এবং (নিজের অসুবিধার জন্যে) আল্লাহর কাছেই ফরিয়াদ করে যাচ্ছিলো, (আসলে) আল্লাহ তা'আলা তোমাদের উভয়ের কথাবার্তাই শুনছেন; নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু দেখেন।

২. তোমাদের মধ্যে যারা (তাদের মায়েদের শরীরের কোনো অংশের সাথে তুলনা করে) নিজ স্ত্রীদের সাথে যেহার' করে (তাদের জেনে রাখা উচিত), তাদের স্ত্রীরা কিন্তু কখনো তাদের মা নয়; মা তো হচ্ছে তারা, যারা তাদের জন্ম দিয়েছে; (এ কাজ করে) তারা মূলত) অন্যায় ও মিথ্যা কথাই বলে; (তারপরও) আল্লাহ তা'আলা হচ্ছেন (মানুষের) গুনাহ মোচনকারী ও পরম ক্ষমাশীল।

৩.যারা (এভাবে) তাদের স্ত্রীদের সাথে যেহার করে, অতঃপর (অনুতপ্ত হয়ে) যা কিছু বলে ফেলেছে তা থেকে ফিরে আসতে চায় (তাদের জন্যে বিধান হচ্ছে), তাদের একে অপরকে স্পর্শ করার পুর্বে একটি দাসের মুক্তি দান করা; এ (বিধানে)-র মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের করণীয় কি তা বলে দিচ্ছেন, (কেননা) তোমরা যা করো আল্লাহ তা'আলা সে সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত রয়েছেন।

৪. যে ব্যক্তি (মুক্তিদানের জন্যে কোনো দাস) পাবে না (তার বিধান হচ্ছে), তাদের একে অপরকে স্পর্শ করার আগে একাধারে দু'মাসের রোযা পালন (করা, স্বাস্থ্যগত কারণে) যে ব্যক্তি (রোযা রাখার) সামর্থ রাখবে না (তার বিধান হচ্ছে), ষাট জন মেসকীনকে (পেট ভরে) খাওয়ানো; এ বিধান এ জন্যেই (তোমাদের দেয়া হচ্ছে) যেন তোমরা আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান আনো; (মনে রাখবে, যেহারের ব্যাপারে) এ হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা, যারা (এ সীমা) অস্বীকার করে তাদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

৫. যারা আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের তেমনিভাবে অপদস্থ করা হবে, যেমনি করে তাদের আগে (বিদ্রোহী) লোকদের অপদস্থ করা হয়েছিলো, আমি তো আমার সুস্পষ্ট আয়াত নাযিল করে দিয়েছি; যারা (এসব আয়াত) অস্বীকার করে তাদের জন্যে অবশ্যই অপমানকর শাস্তি থাকবে,

৬. যেদিন আল্লাহ তা'আলা এদের সবাইকে পুনরায় জীবন দান করবেন তখন তাদের সবাইকে তিনি বলে দেবেন তারা কি করে এসেছে; আল্লাহ তা'আলা সে কর্মকান্ডের পুংখানুপুংখ হিসাব রেখেছেন, অথচ তারা নিজেরা সে কথা ভুলে গেছে; (সেদিন) আল্লাহ তা'আলা নিজেই তাদের সব কয়টি কাজের সাক্ষ্য প্রদান করবেন।

৭. তুমি কি কখনো এটা অনুধাবন করো না যে, আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে আল্লাহ তা'আলা তা সবই জানেন; কখনো এমন হয় না যে, তিন ব্যক্তির মধ্যে কোনো গোপন সলাপরামর্শ হয় এবং (সেখানে) চতুর্থ' হিসেবে আল্লাহ তা'আলা উপস্থিত থাকেন না এবং পাঁচ জনের মধ্যে (কোনো গোপন পরামর্শ হয় না, যেখানে) ষষ্ঠ' হিসেবে তিনি থাকেন না, (এ সলা পরামর্শকারীদের সংখ্যা) তার চাইতে কম হোক কিংবা বেশী, তারা যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ তা'আলা সব সময়ই তাদের সাথে আছেন, অতঃপর কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাদের (সবাইকে) বলে দেবেন তারা কি কাজ করে এসেছে; আল্লাহ তা'আলা সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত রয়েছেন।

৮. তুমি কি তাদের লক্ষ্য করো না, যাদের (আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসূল সম্পর্কে কোনো) গোপন কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছিলো; (কিন্তু) তারা (ঠিক) তারই পুনরাবৃত্তি করলো যা করতে তাদের বারণ করা হয়েছিলো, তারা একে অপরের সাথে সুস্পষ্ট গুনাহের কাজ, মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ও রসূলের নাফরমানীর ব্যাপারে কানাঘুষা করতে লাগলো, (অথচ) এরা যখন তোমার সামনে আসে তখন তোমাকে এমনভাবে অভিবাদন জানায়, যা দিয়ে আল্লাহ তা'আলা ও তোমাকে অভিবাদন জানান না, (আর এ সব প্রতারণার সময়) ওরা মনে মনে বলে, আমরা যা বলছি তার জন্যে আল্লাহ তা'আলা আমাদের কোনো প্রকার শাস্তি দিচ্ছেন না কেন?(তুমি তাদের বলো,) জাহান্নাম তাদের (শাস্তির) জন্যে যথষ্টে, তার আগুনে পুড়ে) তারাই দগ্ধ হবে, কতো নিকৃষ্ট (হবে সেই) বাসস্থান।

৯. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা যখন একে অপরের সাথে গোপনে কোনো কথা বলো, তখন কখনো কোনো পাপাচার, সীমালংঘন ও রসূলের বিরোধিতা সম্পর্কিত কথা বলো না; বরং গোপনে কিছু বলতে হলে (সেখানে) একে অপরকে ভালো কাজ ও (আল্লাহকে) ভয় করার কথাই বলো; (সর্বোপরি) সে সর্বময় ক্ষমতার মালিক আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর সামনে (একদিন) তোমাদের (সবাইকে) সমবেত করা হবে।

১০. (আসলে এদের) গোপন সলাপরামর্শ তো হচ্ছে একটা শয়তানী প্ররোচনা, যার (একমাত্র) উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানদার লোকদের কষ্ট দেয়া (অথচ এরা জানে না), আল্লাহ তা'আলা র ইচ্ছা ব্যতিরেকে তারা ঈমানদারদের বিন্দুমাত্রও কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না; (তাই) ঈমানদারদের উচিত (হামেশা) আল্লাহর ওপরই নির্ভর করা।

১১. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, যখন মজলিসসমুহে (একটু নড়েচড়ে) জায়গা প্রশস্ত করে দিতে তোমাদের বলা হয়, তখন তোমরা জায়গা প্রশস্ত করে দিও, (তাহলে) আল্লাহ তা'আলা ও তোমাদের জন্যে (জান্নাতে) এভাবে জায়গা প্রশস্ত করে দেবেন, (আবার) কখনো যদি (জায়গা ছেড়ে) ওঠে দাঁড়াতে বলা হয়, তাহলে ওঠে দাঁড়িয়ে যেও, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই কেয়ামতের দিন তাদের মহামর্যাদা দান করবেন; তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা'আলা সে ব্যাপারে পূর্ণ খবর রাখেন ।

১২. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা যদি কখনো রসূলের সাথে একাকী কোনো কথা বলতে চাও, তাহলে (অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা নিয়ন্ত্রনের েেকৗশল হিসেবে) তোমরা কিছু দান (সাদাকা) আদায় করে নেবে; এটা তোমাদের (সবার) জন্যে মংগলজনক ও (রসূলের মজলিসের পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে রাখার একটি) পবিত্রতম পন্থা, অবশ্য সাদাকা আদায় করার মতো তোমরা যদি কিছু না পাও তাহলে (দুশ্চিন্তা করো না, কেননা,) আল্লাহ তা'আলা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

১৩. তোমরা কি তোমাদের একাকী কথা বলার আগে সাদাকা আদায় করার আদেশে ভয় পেয়ে গেলে? যদি তোমরা তা করতে না পারো এবং আল্লাহ তা'আলা স্বীয় করুণা দ্বারা তোমাদের ক্ষমা করে দেন, তবে তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করতে থাকো, যাকাত আদায় করতে থাকো এবং (সর্বকাজে সর্ববিষয়ে) আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করতে থাকো; তোমরা যা করছো আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই সে সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকেফহাল রয়েছেন ।

১৪. (হে নবী,) তুমি কি সে সম্প্রদায়ের অবস্থা কখনো লক্ষ্য করোনি, যারা এমন জাতির সাথে বন্ধুত্ব পাতায় যাদের ওপর আল্লাহ তা'আলা অভিশাপ দিয়েছেন; এ (সুযোগসন্ধানী) লোকেরা যেমন তোমাদের আপন নয়, (তেমনি) তারাও ওদের আপন নয়, এরা জেনে শুনে আল্লাহর ওপর মিথ্যা শপথ করে।

১৫. আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্যে (জাহান্নামের) কঠোর আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন; তারা যে কাজ করছে তা সত্যিই এক (জঘন্য) অপরাধের কাজ।

১৬. তারা তাদের (মিথ্যা) শপথগুলোকে (নিজেদের স্বার্থ রক্ষায়) ঢাল বানিয়ে নিতো, অতঃপর তারা মানুষদের আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখতো, অতএব তাদের জন্যে (রয়েছে) এক লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি ।

১৭. আল্লাহ তা'আলা র (শাস্তির) কাছ থেকে (তাদের বাঁচানোর জন্যে) সেদিন তাদের ধন সম্পদ, সন্তান সন্ততি কোনোটাই কোনো কাজে আসবে না; তারা তো দোযখেরই বাসিন্দা, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।

১৮. যেদিন আল্লাহ তা'আলা তাদের সবাইকে পুনরুজ্জীবিত করবেন (আশ্চর্য! সেদিনও) তারা তাঁর সামনে (এ মিথ্যা) শপথ করে দায়িত্বমুক্তির চেষ্টা) করবে, যেমনি করে তারা (আজ স্বার্থসিদ্ধির জন্যে) তোমাদের সাথে মিথ্যা শপথ করছে, তারা ভাববে, (দুনিয়ার মতো সেখানেও বুঝি এর মাধ্যমে) কিছু উপকার পাওয়া যাবে; (হে রসূল,) তুমি (এদের থেকে) সাবধান থেকো, এরা কিন্তু মিথ্যাচারী।

১৯. (আসলে) শয়তান এদের ওপর পুরোপুরি প্রভাব বিস্তার করে নিয়েছে, শয়তান এদের আল্লাহর স্মরণ (সম্পূর্ণ) ভুলিয়ে দিয়েছে; এরা হচ্ছে শয়তানের দল; (হে রসূল,) তুমি জেনে রাখো, শয়তানের দলের ধ্বংস অনিবার্য ।

২০. যারা আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা অবশ্যই সেদিন চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

২১. আল্লাহ তা'আলা তো (এ) সিদ্ধান্ত (জানিয়েই) দিয়েছেন যে, আমি এবং আমার রসূল অবশ্যই জয়ী 'হবো, ' 'নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা শক্তিমান ও পরাক্রমশালী।

২২. (হে রসূল,) আল্লাহ তা'আলা ও পরকালের ওপর ঈমান এনেছে এমন কোনো সম্প্রদায়কে তুমি কখনো পাবে না যে, তারা এমন লোকদের ভালোবাসে যারা আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, যদি সে (আল্লাহবিরোধী) লোকেরা তাদের পিতা, ছেলে, ভাই কিংবা নিজেদের জাতি গোত্রের লোকও হয় (তবুও নয়); এ (আপসহীন) ব্যক্তিরাই হচ্ছে সেসব লোক, যাদের অন্তরে আল্লাহ তা'আলা ঈমান (এর ফয়সালা) এঁকে দিয়েছেন এবং নিজস্ব গায়বী মদদ দিয়ে তিনি (এ দুনিয়ায়) তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন; কেয়ামতের দিন তিনি তাদের এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে; (সর্বোপরি ) আল্লাহ তা'আলা তাদের ওপর প্রসন্ন হবেন এবং তারাও (সেদিন) তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হবে; এরাই হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা র নিজস্ব বাহিনী, আর হ্যাঁ, আল্লাহর বাহিনীই (শেষতক) কামিয়াব হয়।



💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url