Mohammadia Foundation
https://www.mohammadiafoundationbd.com/2021/11/Mystery-of-Human-Creation-Bengali_01311274945.html
বিষয় ভিত্তিক আয়াত (পর্ব - ১৭) || আল কুরআনে মানব সৃষ্টির রহস্য ||
মানব সৃষ্টির রহস্য
আল্লাহ মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন? তিনি কিভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন? মানব সৃষ্টির পিছনে কি তার রহস্য? পবিত্র কুরআন পাকে কমপক্ষে ৮২টি আয়াতে আল্লাহ পাক তাঁর শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানব সৃষ্টির রহস্য উম্মোচন করেছেন। আমরা ধারাবাহিকভাবে “মানব সৃষ্টির রহস্য” নিয়ে এখানে প্রতিটি আয়াতের বাংলা ও ইংরেজি অর্থ এবং এর ব্যাখ্যা বা তাফসীর নিয়ে আলোচনা করবো। জ্ঞানীদের জন্য এসব আয়াতে রয়েছে আল্লাহ পাকের নির্দশন ইন শা আল্লাহ।
সূরা ফাতির, আয়াতঃ ১১
৩৫:১১ وَ اللّٰهُ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ جَعَلَکُمۡ اَزۡوَاجًا ؕ وَ مَا تَحۡمِلُ مِنۡ اُنۡثٰی وَ لَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلۡمِهٖ ؕ وَ مَا یُعَمَّرُ مِنۡ مُّعَمَّرٍ وَّ لَا یُنۡقَصُ مِنۡ عُمُرِهٖۤ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ ؕ اِنَّ ذٰلِکَ عَلَی اللّٰهِ یَسِیۡرٌ
১১. আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে তারপর
শুক্রবিন্দু থেকে তারপর তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন এবং নারী তার
গর্ভে যা ধারণ করে আর যা প্রসব করে তা আল্লাহর জ্ঞাতসারেই হয়। আর কোন বয়স্ক
ব্যক্তির বয়স বাড়ানো হয় না কিংবা কমানো হয় না কিন্তু তা তো রয়েছে কিতাবে*;
নিশ্চয় তা আল্লাহর জন্য সহজ।
আল-বায়ান
11. And Allah created you from dust, then from a sperm-drop; then
He made you mates. And no female conceives nor does she give birth
except with His knowledge. And no aged person is granted [additional]
life nor is his lifespan lessened but that it is in a register. Indeed,
that for Allah is easy.
Sahih International
* ‘কিতাব’ বলতে এখানে ‘লওহে মাহফুয’ বা সংরক্ষিত ফলককে বুঝানো হয়েছে।
১১. আর আল্লাহ তোমাদেরকে
সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে; তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর তোমাদেরকে করেছেন
যুগল! আল্লাহর অজ্ঞাতে কোন নারী গর্ভ ধারণ করে না এবং প্রসবও করে না। আর
কোন দীর্ঘায়ু ব্যক্তির আয়ু বৃদ্ধি করা হয় না এবং তার আয়ু হ্রাস করা হয়
না, কিন্তু তা রয়েছে কিতাবে।(১) এটা আল্লাহর জন্য সহজ।(২)
(১) কিতাবে বলে লাওহে মাহফুযে রয়েছে বুঝানো হয়েছে।
[মুয়াস্সার] অধিকাংশ তাফসীরবিদদের মতে এ আয়াতের মর্ম এই যে, আল্লাহ্
তা'আলা যাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন, তা পূর্বেই লওহে মাহফুযে লিখিত রয়েছে।
অনুরূপভাবে স্বল্প জীবনও পূর্ব থেকে লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ থাকে। যার
মর্মদাঁড়াল এই যে, এখানে ব্যক্তিবিশেষের জীবনের দীর্ঘতা বা হ্রস্বতা
বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। বরং গোটা মানবজাতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যে,
তাদের কাউকে দীর্ঘ জীবন দান করা হয় এবং কাউকে তার চেয়ে কম। কেউ কেউ বলেন,
যদি আয়াতের অর্থ একই ব্যক্তির বয়সের হ্রাস-বৃদ্ধি ধরে নেয়া যায়, তবে
বয়স হ্রাস করার উদ্দেশ্য এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তির বয়স আল্লাহ তা’আলা যা
লিখে দিয়েছেন, তা নিশ্চিত কিন্তু এই নির্দিষ্ট বয়ঃক্রম থেকে একদিন
অতিবাহিত হলে একদিন হ্রাস পায়, দুদিন অতিবাহিত হলে দুদিন হ্রাস পায়।
এমনিভাবে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি নিঃশ্বাস তার জীবনকে হ্রাস করতে থাকে।
রাসূলুল্লাহ বলেনঃ “যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিযিক প্রশস্ত ও জীবন দীর্ঘ
হোক, তার উচিত আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।” [বুখারী: ২০৬৭,
মুসলিম: ২৫৫৭]
এই হাদীস থেকে বাহ্যতঃ জানা যায় যে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহারের
ফলে জীবন দীর্ঘ হয়। সারকথা, যেসব হাদীসে কোন কোন কর্ম সম্পর্কে বলা
হয়েছে যে, এগুলো সম্পাদন করলে বয়স বেড়ে যায়, সেগুলোর অর্থ, পূর্বেই তার
তাকদীরে লিখা আছে অমুক আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, তাই তার
আয়ু বর্ধিত আকারে দেয়া হলো। সুতরাং যে কেউ আত্মীয়-স্বজনের সাথে
সদ্ব্যবহার করার তাওফীক পাবে সে যেন এটা বুঝে নেয় যে, এ কারণেই হয়ত: তার
আয়ু বৃদ্ধি ঘটেছে।
(২) যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্পর্কে যদি
তোমরা সন্দেহে থাক তবে অনুধাবন কর—আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে,
তারপর শুক্র হতে, তারপর ‘আলাকাহ (রক্তপিণ্ড বা লেগে থাকে এরকম পিণ্ড) হতে,
তারপর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূৰ্ণাকৃতি গোশতপিণ্ড হতে — যাতে আমরা বিষয়টি
তোমাদের কাছে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করি। আর আমরা যা ইচ্ছে তা এক নির্দিষ্ট
কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তারপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি,
পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটান
হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হীনতম বয়সে প্রত্যাবর্তিত করা হয়,
যার ফলে সে জানার পরেও যেন কিছুই (আর) জানে না। [সূরা আল-হাজ: ৫] আরও বলেন,
“তিনি শুক্র হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ দেখুন, সে প্রকাশ্য
বিতণ্ডাকারী!” [সূরা আন-নাহল: ৪]
তাফসীরে জাকারিয়া
সূরা আর রহমান, আয়াতঃ ১৪-১৫
৫৫:১৪ خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ کَالۡفَخَّارِ
৫৫:১৫ وَ خَلَقَ الۡجَآنَّ مِنۡ مَّارِجٍ مِّنۡ نَّارٍ
১৪. তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে যা পোড়া মাটির ন্যায়।
১৫. আর তিনি জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন অগ্নিশিখা থেকে।
আল-বায়ান
আল-বায়ান
14. He created man from clay like [that of] pottery.
15. And He created the jinn from a smokeless flame of fire.
Sahih International
Sahih International
১৪. মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন শুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে যা পোড়া মাটির মত(১),
(১) এখানে إنسان বলে সরাসরি মৃত্তিকা থেকে সৃষ্ট আদম আলাইহিস সালাম-কে বুঝানো হয়েছে। صلصال এর অর্থ পানি মিশ্ৰিত শুষ্ক মাটি। فخار এর অর্থ পোড়ামাটি। অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহ্ তা'আলা পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক
মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছেন। [কুরতুবী] কুরআন মজীদে মানুষ সৃষ্টির যে
প্রাথমিক পর্যায়সমূহ বৰ্ণনা করা হয়েছে, কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানের
বক্তব্য একত্রিত করে তাঁর নিম্নোক্ত ক্ৰমিক বিন্যাস অবগত হওয়া যায়
(১) تراب ‘তুরাব’ অর্থাৎ মাটি। আল্লাহ বলেন, (كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ) [সূরা আলে-ইমরান: ৫৯]
(২) طين ‘ত্বীন’ অৰ্থাৎ পচা কৰ্দম যা মাটিতে পানি মিশিয়ে বানানো হয়। আল্লাহ বলেন, (الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنْسَانِ مِنْ طِينٍ) [সূরা আস-সাজদাহ: ৭]
(৩) (طِينٍ لَّازِبٍ) ‘ত্বীন লাযেব’ বা আঠালো কাদামাটি। অৰ্থাৎ এমন কাদা, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে যার মধ্যে আঠা সৃষ্ট হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, (إِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِنْ طِينٍ لَازِبٍ) [সূরা আস-সাফফাত: ১১]
(৪) (صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ) ‘সালসালিন মিন হামায়িন মাসনুন’ যে কাদার মধ্যে গন্ধ সৃষ্টি হয়ে যায়। আল্লাহ্ বলেন, (وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ) [সূরা আল-হিজর: ২৬]
(৫) (صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ)
‘সালসালিন কাল-ফাখখার’ অর্থাৎ পচা কাদা যা শুকিয়ে যাওয়ার পরে মাটির শুকনো
ঢিলার মত হয়ে যায়। আলোচ্য সূরা আর-রাহমানের এ আয়াতেই আল্লাহ্ তা'আলা এ
পর্যায়টি উল্লেখ করে বলেন,
(৬) (بشر) ‘বাশার’ মাটির এ শেষপর্যায়
থেকে যাকে বানানো হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা যার মধ্যে তার বিশেষ রূহ ফুৎকার
করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে যাকে সিজদা করানো হয়েছিল এবং তার সমজাতীয় থেকে
তার জোড়া সৃষ্টি করা হয়েছিল। আল্লাহ্ বলেন, (إِذْ
قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ ٭
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ
سَاجِدِينَ) [সূরা সোয়াদ: ৭১–৭২]
(৭) (مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ)
“মিন সুলালাতিন মিন মায়িন মাহীন” তারপর পরবর্তী সময়ে নিকৃষ্ট পানির মত
সংমিশ্রিত দেহ নির্যাস থেকে তার বংশ ধারা চালু করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ) [সূরা আস-সাজদাহ: ৮] এ কথাটি বুঝাতে অন্য স্থানসমূহে نطفة বা শুক্র শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
১৫. এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন নির্ধূৰ্ম আগুনের শিখা থেকে।(১)
(১) جان এর অর্থ জিন জাতি। مارج এর অর্থ অগ্নিশিখা। জিন সৃষ্টির প্রধান উপাদান অগ্নিশিখা, যেমন মানব সৃষ্টির প্রধান উপাদান মৃত্তিকা। نار অর্থ
এক বিশেষ ধরনের আগুন। কাঠ বা কয়লা জ্বালালে যে আগুন সৃষ্টি হয় এটা সে
আগুন নয়। আর অর্থ ধোঁয়াবিহীন শিখা। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] এ কথার অর্থ
হচ্ছে প্রথম মানুষকে যেভাবে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর সৃষ্টির
বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করার সময় তার মাটির সত্তা অস্থি-মাংসে তৈরী জীবন্ত
মানুষের আকৃতি লাভ করেছে এবং পরবর্তী সময়ে শুক্রের সাহায্যে তার বংশধারা
চালু আছে। অনুরূপ প্রথম জিনকে নিছক আগুনের শিখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল
এবং তার বংশধরদের থেকে পরবর্তী সময়ে জিনদের অধস্তন বংশধররা সৃষ্টি হয়ে
চলেছে। মানব জাতির জন্য আদমের মর্যাদা যা, জিন জাতির জন্য সেই প্রথম জিনের
মর্যাদাও তাই। জীবন্ত মানুষ হয়ে যাওয়ার পর আদম এবং তার বংশ থেকে জন্ম
লাভকারী মানুষের দেহের সেই মাটির সাথে যেমন কোন মিল থাকলো না জিনদের
ব্যাপারটাও তাই। তাদের সত্তাও মুলত আগুনের সত্তা। কিন্তু আমরা যেমন মাটির
স্তুপ নই, অনুরূপ তারাও শুধু অগ্নি শিখা নয়। [দেখুন: আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া
******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন