Mohammadia Foundation
https://www.mohammadiafoundationbd.com/2021/11/Mystery-of-Human-Creation-Bengali_01616122950.html
বিষয় ভিত্তিক আয়াত (পর্ব -১৬) || আল কুরআনে মানব সৃষ্টির রহস্য ||

মানব সৃষ্টির রহস্য
আল্লাহ মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন? তিনি কিভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন? মানব সৃষ্টির পিছনে কি তার রহস্য? পবিত্র কুরআন পাকে কমপক্ষে ৮২টি আয়াতে আল্লাহ পাক তাঁর শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানব সৃষ্টির রহস্য উম্মোচন করেছেন। আমরা ধারাবাহিকভাবে “মানব সৃষ্টির রহস্য” নিয়ে এখানে প্রতিটি আয়াতের বাংলা ও ইংরেজি অর্থ এবং এর ব্যাখ্যা বা তাফসীর নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি, সবার ভাল লাগবে ইন শা আল্লাহ।
সূরা হজ্জ, আয়াতঃ ৫
২২:৫ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّنَ الۡبَعۡثِ فَاِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَۃٍ ثُمَّ مِنۡ مُّضۡغَۃٍ مُّخَلَّقَۃٍ وَّ غَیۡرِ مُخَلَّقَۃٍ لِّنُبَیِّنَ لَکُمۡ ؕ وَ نُقِرُّ فِی الۡاَرۡحَامِ مَا نَشَآءُ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ثُمَّ نُخۡرِجُکُمۡ طِفۡلًا ثُمَّ لِتَبۡلُغُوۡۤا اَشُدَّکُمۡ ۚ وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّتَوَفّٰی وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّرَدُّ اِلٰۤی اَرۡذَلِ الۡعُمُرِ لِکَیۡلَا یَعۡلَمَ مِنۡۢ بَعۡدِ عِلۡمٍ شَیۡئًا ؕ وَ تَرَی الۡاَرۡضَ هَامِدَۃً فَاِذَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡهَا الۡمَآءَ اهۡتَزَّتۡ وَ رَبَتۡ وَ اَنۡۢبَتَتۡ مِنۡ کُلِّ زَوۡجٍۭ بَهِیۡجٍ
আল-বায়ান
5. O People, if you should be in doubt about the Resurrection, then
[consider that] indeed, We created you from dust, then from a
sperm-drop, then from a clinging clot, and then from a lump of flesh,
formed and unformed - that We may show you. And We settle in the wombs
whom We will for a specified term, then We bring you out as a child, and
then [We develop you] that you may reach your [time of] maturity. And
among you is he who is taken in [early] death, and among you is he who
is returned to the most decrepit [old] age so that he knows, after [once
having] knowledge, nothing. And you see the earth barren, but when We
send down upon it rain, it quivers and swells and grows [something] of
every beautiful kind. Sahih International
৫. হে মানুষ! পুনরুত্থান
সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দেহে থাক তবে অনুধাবন কর–আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি
করেছি(১) মাটি হতে(২), তারপর শুক্র(৩) হতে, তারপর আলাকাহ(৪) হতে, তারপর
পূর্ণাকৃতি অথবা অপূৰ্ণাকৃতি গোশতপিণ্ড হতে(৫) যাতে আমরা বিষয়টি তোমাদের
কাছে সুস্পষ্টরূপে প্ৰকাশ করি। আর আমরা যা ইচ্ছে তা এক নির্দিষ্ট কালের
জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তারপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি(৬), পরে
যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও।(৭) তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটান
হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হীনতম বয়সে(৮) প্রত্যাবৃত্ত করা হয়,
যার ফলে সে জানার পরেও যেন কিছুই (আর) জানে না। আর আপনি ভূমিকে দেখুন
শুষ্ক, অতঃপর তাতে আমরা পানি বর্ষণ করলে তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদগত
করে সব ধরনের সুদৃশ্য উদ্ভিদ(৯);
(১) আয়াতটিকে আল্লাহ তা'আলা পুনরুত্থানের উপর প্রথম
প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন। প্রথম সৃষ্টি যার পক্ষে করা সম্ভব তাঁর পক্ষে
দ্বিতীয় সৃষ্টি কিভাবে কঠিন হবে? প্রথম সৃষ্টিই প্রমাণ করছে যে, তিনি
দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম। [ইবন কাসীর] আয়াতে মাতৃগর্ভে মানব সৃষ্টির
বিভিন্ন স্তর বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ বলেনঃ মানুষের বীর্য চল্লিশ দিন
পর্যন্ত গর্ভাশয়ে সঞ্চিত থাকে। চল্লিশ দিন পর তা জমাট রক্তে পরিণত হয়।
এরপর আরো চল্লিশ দিন অতিবাহিত হলে তা মাংসপিণ্ড হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ্
তা'আলার পক্ষ থেকে একজন ফিরিশতা প্রেরিত হয়। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়। এ
সময়েই তার সম্পর্কে চারটি বিষয় লিখে দেয়া হয়ঃ (১) তার বয়স কত হবে, (২)
সে কি পরিমাণ রিযিক পাবে, (৩) সে কি কি কাজ করবে এবং (৪) পরিণামে সে
ভাগ্যবান হবে, না। হতভাগা হবে। [বুখারীঃ ২৯৬৯, মুসলিমঃ ২৬৪৩]
(২) এর অর্থ হচ্ছে মানুষ নামের প্রজাতির সূচনা হয়েছে আদম আলাইহিস সালাম
থেকে। তাকে সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তারপর পরবর্তী
পর্যায়ে শুক্র থেকেই মানব বংশের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। যেমন অন্যত্র বলা
হয়েছেঃ “মানুষের সৃষ্টি শুরু করেন মাটি থেকে তারপর তার বংশ-ধারা চালান
একটি নির্যাস থেকে যা বের হয় তুচ্ছ পানির আকারে।” [সূরা আস সাজদাহ, ৭–৮]
(৩) নুতফা শব্দের অর্থ শুক্র বা বীর্য। সাধারণত: নুতফা বলা হয়, অল্প
পানিকে। [কুরতুবী] মাটি থেকে আদম সৃষ্টির পর তার বংশধারা জারি রাখা হয়েছে
পানির মাধ্যম। আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আমরা তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির
উপাদান থেকে” [সূরা আল-মুমিনুন: ১২] অন্য আয়াতে বলেন, “তারপর তিনি তার বংশ
উৎপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে” [সূরা আস-সাজদাহ: ৮]
(৪) আলাকা শব্দের অর্থ শক্ত রক্ত, ঘন তাজা রক্ত। বা প্রচণ্ড লাল বৰ্ণ
[কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] মানব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে যখন শুক্রটি
মহিলার গর্ভাশয়ে স্থির হয়ে যায়, তখন সেটা চল্লিশ দিন এ অবস্থায় থাকে।
এর সাথে যা জমা হবার তা জমা হয়। তারপর সেটি একটি পর্যায়ে আল্লাহর হুকুমে
লাল তাজা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। এভাবে সেটি চল্লিশ দিন অতিবাহিত করে। তারপর
সেটি পরিবর্তিত হয়ে একখণ্ড গোস্তের টুকরোতে পরিণত হয়ে যায়। তখন তাতে
কোন রূপ বা সূরত থাকে না। তারপর সেটি বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করতে থাকে। তখন
তা থেকে মাথা, দু’হাত, বুক, পেট, দুই রান, দুই পা এবং বাকী
অংগ-প্রত্যঙ্গসমূহ। কখনও কখনও সেটি সূরত গ্রহণ করার আগেই গর্ভপাত ঘটে যায়,
আবার কখনও পূর্ণ অবয়ব ঘটনের পর সেটির গর্ভপাত হয়ে যায়। [ইবন কাসীর]
(৫) আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, বীর্য যখন কয়েক
স্তর অতিক্রম করে মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়, তখন মানব সৃষ্টির কাজে আদিষ্ট
ফিরিশতা আল্লাহ তা'আলাকে জিজ্ঞেস করেঃ يَا رَبّ مُخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ
مُخَلَّقَةٍ অর্থাৎ এই মাংসপিণ্ড দ্বারা মানব সৃষ্টি আপনার কাছে অবধারিত
কি না? যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তরে বলা হয় (وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ) তবে
গর্ভাশয়ে সেই মাংসপিণ্ডকে পাত করে দেয়া হয় এবং তা সৃষ্টির অন্যান্য স্তর
অতিক্রম করে না। পক্ষান্তরে যদি জবাবে (مُخَلَّقَةٍ) বলা হয়, তবে ফিরিশতা
জিজ্ঞেস করেঃ ছেলে না মেয়ে, হতভাগা না ভাগ্যবান, বয়স কত, কি কর্ম করবে
এবং কোথায় মৃত্যুবরণ করবে? এসব প্রশ্নের জবাব তখনই ফিরিশতাকে বলে দেয়া
হয়। [ইবনে জরীর, ও ইবনে আবী হাতিম।]
উল্লেখিত শব্দদ্বয়ের তাফসীর থেকে এই জানা গেল যে, যে বীর্য দ্বারা
মানবসৃষ্টি অবধারিত হয়, তা (مُخَلَّقَةٍ) আর যা বিনষ্ট ও পাত হওয়া
অবধারিত, তা (وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ)। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] কোন কোন
মুফাসসির (مُخَلَّقَةٍ) ও (وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ) এর এরূপ তাফসীর করেন যে,
যে শিশুর সৃষ্টি পূর্ণাঙ্গ এবং সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ, সুঠাম ও সুষম
হয়, সে (مُخَلَّقَةٍ) অর্থাৎ পূৰ্ণাকৃতিবিশিষ্ট এবং যার কতক অঙ্গ
অসম্পূর্ণ অথবা দৈহিক গড়ন ইত্যাদি অসম, সে (وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ)।
[কুরতুবী]
(৬) অর্থাৎ মাতৃগর্ভ থেকে তোমাদেরকে দুর্বল শিশুর আকারে বের করি। এ সময়
শিশুর দেহ, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, জ্ঞান, নড়াচড়া ও ধারণশক্তি ইত্যাদি
সবই দুর্বল থাকে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে এগুলোকে শক্তি দান করা হয় এবং
পরিশেষে পূর্ণশক্তির স্তরে পৌছে যায়। [ইবন কাসীর]
(৭) أشد শব্দটির অর্থ বুদ্ধি, শক্তি ও ভাল-মন্দ পৃথকীকরণে পূর্ণতা। কারও
কারও মতে, ত্ৰিশ থেকে চল্লিশ বয়সের মধ্যে। [ফাতহুল কাদীর] উদ্দেশ্য এই
যে, পর্যায়ক্রমে উন্নতির ধারা ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে যতক্ষণ তোমাদের
প্রত্যেকটি শক্তি পূর্ণতা লাভ না করে, যা যৌবনকালে প্রত্যক্ষ করা হয়।
[ইবন কাসীর]
(৮) এটা সেই বয়সকে বলা হয়, যে বয়সে মানুষের বুদ্ধি, চেতনা ও
ইন্দ্ৰিয়ানুভূতিতে ত্রুটি দেখা দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এমন বয়স থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত দোআ অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ
اللَّهُمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنَ البُخْلِ،
وَأَعوذُ بِكَ مِنَ الجُبْنِ، وَأعُوذُ بِكَ أنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ
العُمُرِ، وَأعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا،وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ
عَذَابِ القَبْرِ
হে আল্লাহ্! আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি ভীরুতা
থেকেও আপনার কাছে আশ্রয় নিচ্ছি। অনুরূপভাবে হীনতম বয়সে উপণীত হওয়া থেকেও
আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তদ্রুপ আমি দুনিয়ার ফেতনায় নিপতিত
হওয়া থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তাছাড়া আমি কবরের শাস্তি
থেকেও আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।' [বুখারীঃ ৫৮৯৩]
এমন বৃদ্ধাবস্থায় মানুষের নিজের শরীরের ও অংগ-প্রত্যংগের কোন খোজ-খবর
থাকে না। যে ব্যক্তি অন্যদেরকে জ্ঞান দিতো বুড়ো হয়ে সে এমন অবস্থায়
পৌঁছে যায়, যাকে শিশুদের অবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। যে জ্ঞান, জানা
শোনা, অভিজ্ঞতা ও দুরদর্শিতা ছিল তার গর্বের বস্তু তা এমনই অজ্ঞতায়
পরিবর্তিত হয়ে যায় যে, একটি ছোট ছেলেও তার কথায় হাসতে থাকে। এভাবে
বান্দার শক্তি দু’টি দুর্বল অবস্থা ঘিরে আছে। এক. ছোট কালের দুর্বলতা, দুই.
বৃদ্ধাবস্থার দুর্বলতা। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেনঃ আল্লাহ্, তিনি তোমাদেরকে
সৃষ্টি করেন দুর্বলতা থেকে, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি; শক্তির পর আবার
দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ,
সর্বক্ষম।” [সূরা আর রূম: ৫৪] [সা’দী]
(৯) আয়াতের এ অংশে আল্লাহ তা'আলা পুনরুত্থানের উপর দ্বিতীয় আরেকটি
প্রমাণ পেশ করছেন। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ যেভাবে তিনি
মৃত ভূমিকে জীবিত করতে পারেন, যে যমীনে কোন প্ৰাণের স্পন্দন নেই, কোন
উদ্ভিদ দেখা যায় না। তারপর তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করে তিনি জীবনের উন্মেষ
ঘটান, সেভাবে তাঁর পক্ষে পুনরুত্থান ঘটানো কোন কঠিন বিষয় নয়।
তাফসীরে জাকারিয়া
সূরা আর রূম, আয়াতঃ ২০-২১
৩০:২০ وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖۤ اَنۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ بَشَرٌ تَنۡتَشِرُوۡنَ
৩০:২১ وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡهَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ
২০. আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমরা মানুষ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছ।
২১. আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই
স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি
তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী
রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।
আল-বায়ান
আল-বায়ান
20. And of His signs is that He created you from dust; then, suddenly you were human beings dispersing [throughout the earth].
21. And of His signs is that He created for you from yourselves mates that
you may find tranquillity in them; and He placed between you affection
and mercy. Indeed in that are signs for a people who give thought.
Sahih International
Sahih International
২০. আর তাঁর নিদর্শনাবলীর
মধ্যে(১) রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর এখন
তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছ।(২)
(১) ২০ থেকে ২৭নং আয়াতসমূহে মহান আল্লাহর যেসব নিদর্শন
বর্ণনা করা হচ্ছে, সেগুলো বক্তব্য পরম্পরার সাথে সম্পর্ক রেখে আখেরাতের
সম্ভাবনা ও অস্তিত্বশীলতার কথা প্রমাণ করে, কেয়ামতে পুনরুজ্জীবন,
হিসাব-নিকাশ এবং শাস্তি ও প্রতিদানকে যেসব বাহ্যদর্শী অবান্তর মনে করতে
পারতো, এ আয়াতসমূহে তাদেরকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে জওয়াব দেয়া হয়েছে। [ফাতহুল
কাদীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]।
(২) আল্লাহর কুদরাতের প্রথম নিদর্শন: প্রথম নিদর্শন এই যে, মানব জাতীকে
মাটি থেকে সৃষ্টি করা। মানব সৃষ্টির উপাদান যে মৃত্তিকা, একথা আদিম আলাইহিস
সালামের দিক দিয়ে বুঝতে কষ্ট হয় না। তিনি সমগ্ৰ মানব জাতির অস্তিত্বের
মূলভিত্তি, তাই অন্যান্য মানুষের সৃষ্টিও পরোক্ষভাবে তাঁরই সাথে
সম্বন্ধযুক্ত হওয়া অবান্তর নয়। [কুরতুবী] এটাও সম্ভবপর যে, সাধারণ
মানুষের প্রজনন বীর্যের মাধ্যমে হলেও বীর্য যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত,
তন্মধ্যে মৃত্তিকা প্রধান [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]।
২১. আর তাঁর
নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি
করেছেন তোমাদের জোড়া(১); যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও(২) এবং সৃজন
করেছেন তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সহমর্মিতা। নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে
সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা চিন্তা করে।(৩)
(১) আল্লাহর কুদরতের দ্বিতীয় নিদর্শনঃ দ্বিতীয় নিদর্শন
এই যে, মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহ তাআলা নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তারা
পুরুষের সংগিনী হয়েছে। [ইবন কাসীর] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও
শেষ দিবসে ঈমান রাখবে সে যেন তার পড়শীকে কষ্ট না দেয়। আর তোমরা মহিলাদের
প্রতি কল্যাণকর হওয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে উপদেশ দাও; কেননা তারা বাঁকা হাড়
থেকে সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বাঁকা অংশ হচ্ছে হাড়ের উপরের অংশ। যদি তুমি
তাকে সোজা করতে যাও তবে তা ভেঙ্গে ফেলবে। পক্ষান্তরে যদি তুমি ছেড়ে যাও
তবে সব সময় বাঁকাই থেকে যাবে। সুতরাং তোমরা মহিলাদের প্রতি কল্যাণকর
হওয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে উপদেশ দাও। [বুখারী: ৫১৮৫, ৫১৮৬]
(২) ইবন কাসীর বলেন, এর অর্থ তোমাদের স্বজাতি থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রীর
ব্যবস্থা করেছেন। যাতে তোমাদের মধ্যে প্রশান্তি আসে। যেমন অন্য আয়াতে
বলেছেন, “তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার
স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।” [সূরা আল-আরাফ: ১৮৯]
(৩) এখানে নারী জাতি সৃষ্টি করার রহস্য ও উপকারিতা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা
হয়েছেঃ অর্থাৎ তোমরা তাদের কাছে পৌঁছে শান্তি লাভ কর, এ কারণেই তাদেরকে
সৃষ্টি করা হয়েছে। পুরুষদের যত প্রয়োজন নারীর সাথে সম্পৃক্ত সবগুলো
সম্পর্কে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, সবগুলোর সারমর্ম হচ্ছে মানসিক শান্তি ও
সুখ। [আদওয়াউল বায়ান; সাদী]
তাফসীরে জাকারিয়া
*****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন