রিজিক বৃদ্ধির উপায়
আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশিত কিছু পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি করা যায়
রিজিক প্রসঙ্গে আল্লাহ কি বলেছেন?
পৃথিবীর
প্রতিটি প্রাণীর খাবার সংস্থানের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করেছেন। মানুষের জন্মের
পূর্বেই তার খাদ্যের বিষয়টি নির্ধারণ হয়ে যায়। জীবদ্দশায় মানুষ তার স্থিরীকৃত খাবার
গ্রহণ করে থাকে। ভাগ্যে লিপিবদ্ধ খাবার সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কারোর মৃত্যু সংঘটিত
হয় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিক আল্লাহ
তায়ালা নিজ দায়িত্বে রাখেননি।’ (সুরা হুদ: ৬) অপর আয়াতে বলেছেন,
‘আসমানেই আছে তোমাদের রিজিক এবং তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় তাও।’
(সুরা জারিয়াত: ২২)
তবে
বাহ্যিক উপকরণ ও মাধ্যম হিসেবে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে রিজিক অন্বেষণ ও খাবার জোগানোর
লক্ষ্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তিনিই তোমাদের
জন্য ভূমিকে বশ্য করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তার কাঁধে চলাফেরা কর ও তাঁর রিজিক খাও।
তাঁরই কাছে তোমাদেরকে পুনর্জীবিত হয়ে যেতে হবে।’ (সুরা মুলক: ১৫) অপর
আয়াতে বলেছেন, ‘নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকার)
সন্ধান কর। যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা: ১০) আয়াতদ্বয়
থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই রিজিক দাতা। কিন্তু অন্বেষণ পরিত্যাগ করে হাত
গুটিয়ে বসে থাকা ইসলামে সমর্থনযোগ্য নয়। বরং মানুষের কর্তব্য হল, রিজিকের চাহিদা মেটাতে
আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে হালাল পন্থায় সাধ্যানুযায়ী অবিরত প্রচেষ্টা চালানো।
রিজিক
দ্বারা উদ্দেশ্য ধন-সম্পদ, এমন ধারণা ভুল। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ
যত প্রকার নেয়ামত দান করেছেন সবই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন: ধন-সম্পদ, নেককার স্ত্রী-সন্তান-পরিজন,
সুস্থতা-গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি। এ সবকিছু আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ণীত। সুতরাং আল্লাহ
তায়ালার অশেষ অনুগ্রহে এসব নেয়ামত প্রাপ্তিতে এসে গেলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আবশ্যক।
তেমনি নেয়ামত হস্তচ্যুত হয়ে যাওয়ার মত কার্যকারণ থেকে দূরে থাকাও অবশ্য কর্তব্য।
আল্লাহ পাক রিজিক বৃদ্ধির ব্যাপারে কুরআন পাকে ছয়টি
উপায় বর্ণনা করেছেন। আসুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
তাক্বওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি পায়
যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির
পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। [সূরা তালাক(৬৫):
২-৩]
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে
তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ
স্থির করে রেখেছেন।“ [সূরা তালাক(৬৫): ৩]
বেশি বেশি দান-সদকা করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়
কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি
তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন? [সূরা বাক্বারাহ(২): ২৪৫]
শুকরিয়া আদায় করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়
আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা
শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ
হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন’। [সূরা ইবরাহিম(১৪): ৭]
বেশি বেশি ইস্তিগফার করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়
“অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা
প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে
দিবেন, তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন
করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।“ [সূরা নূহ(৭১): ১০-১২]
পারিবারিক বন্ধন দৃঢ়/ পিতামাতার সেবা করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, “যে কামনা করে যে তার রিযিক বৃদ্ধি পাক এবং জীবন দীর্ঘায়িত হোক, সে যেন
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে।“ [সহীহ বুখারী]
রিজিক বৃদ্ধির আমল
প্রত্যেক মানুষের ভাগ্যে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে
কিছু নেয়ামত দান করা হয়। যেগুলি অর্জন করতে হয়। পরিত্যাগ করলে অধিকারে আসে না। মানুষের
জন্য আসমানে দুটি দরজা থাকে। একটির মাধ্যমে তার আমলসমূহ আল্লাহ তায়ালার নিকট উপস্থাপিত
হয়। আরেকটির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার রিজিক অবতীর্ণ হয়ে থাকে। আসমান ও
জমিনের মালিক আল্লাহ তায়ালার নিকট এই দরজা দুটির চাবি রয়েছে। আল্লাহ তায়ালার আরোপিত
বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে দরজা দুটি প্রশস্ত হয়। এর সাথে রিজিক বৃদ্ধির কিছু আমলের
কথাও কুরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
সুরা ওয়াকেয়া, সুরা ফাতেহা, সুরা জারিয়াত এবং ঋণপরিশোধ সংক্রান্ত আয়াত পাঠ।
রিজিক বৃদ্ধি-হ্রাসের কথা বর্ণিত হয়েছে এমন আয়াত পাঠ।
রিজিক বৃদ্ধির দোয়াসমূহ পাঠ।
আল্লাহ তায়ালার নিরানব্বইটি নাম পাঠ।
দুরুদ শরিফ পাঠ।
যে কোনো কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন।
অভাবীকে অভাব থেকে, ঋণগ্রস্তকে ঋণ থেকে, পীড়িতকে পীড়া থেকে দ্রুত মুক্ত করুন,
আমিন।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url