শবে বরাতের বিশেষ নামাজ ও বিশেষ ইবাদত, এ বিষয়ে হাদিস কি বলে?

শবে বরাতের বিশেষ নামাজ ও বিশেষ ইবাদত, এ বিষয়ে  হাদিস কি বলে?

মধ্য শাবানের রাত্রি সম্পর্কে বর্ণিত কিছু হাদীসে এ রাত্রিতে সালাত আদায় ও দোয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ সকল হাদীস এ রাতের সালাতের জন্য কোনো নির্ধারিত রাক‘আত, নির্ধারিত সূরা বা নির্ধারিত পদ্ধতি উল্লেখ করা হয় নি। শুধু সাধারণভাবে এ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় ও দোয়া করার বিষয়টি এ সকল হাদীস থেকে জানা যায়। এ অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলো প্রায় সবই বানোয়াট। দু-একটি হাদীস দুর্বল হলেও বানোয়াট নয়।

শবে বরাতে নির্ধারিত রাক‘আত, সূরা ও পদ্ধতিতে সালাত

শবে বরাত বিষয়ক অন্য কিছু হাদীসে এ রাত্রিতে বিশেষ পদ্ধতিতে, বিশেষ সুরা পাঠের মাধ্যমে, নির্দ্দিষ্ট সংখ্যক রাকআত সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মত মত অনুযায়ী এই অর্থে বর্ণিত সকল হাদীস বানোয়াট। হিজরী চতুর্থ শতকের পরে রাসুলুলাহ (ﷺ) -এর নামে বানিয়ে এগুলো প্রচার করা হয়েছে। এখানে এ জাতীয় কয়েকটি জাল ও বানোয়াট হাদীস উল্লেখ করছি।

শবে বরাতে ৩০০ রাক‘আত, প্রতি রাক‘আতে ৩০ বার সূরা ইখলাস

‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে প্রত্যেক রাকআতে ৩০বার সুরা ইখলাস পাঠের মাধ্যমে ৩০০ রাকআত সালাত আদায় করবে জাহান্নামের আগুন অবধারিত এমন ১০ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’’ হাদীসটি ইবনুল ক্বাইয়িম বাতিল বা ভিত্তিহীন হাদীস সমূহের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।[ইবনুল কাইয়িম, নাক্বদুল মানকুল ১/৮৫]

শবে বরাতে ১০০ রাক‘আত, প্রতি রাক‘আতে ১০ বার সুরা ইখলাস

মধ্য শাবানের রজনীতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন হিজরী চতুর্থ শতকের পরে মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রথম এ রাত্রিতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়।[মোল্লা আলী ক্বারী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৩/৩৮৮] এ সময়ে বিভিন্ন মিথ্যাবাদী গল্পকার ওয়ায়িয এ অর্থে কিছু হাদীস বানিয়ে বলেন। এ অর্থে ৪টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যার প্রত্যেকটিই বানোয়াট ও ভিওিহীন।

এর প্রথমটি আলী (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে প্রচারিত: যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০ রাকআত সালাত আদায় করবে, প্রত্যেক রাকআতে সুরা ফাতিহা ও ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে সে উক্ত রাতে যত প্রয়োজনের কথা বলবে আল্লাহ তায়ালা তার সকল প্রয়োজন পূরণ করবেন। লাওহে মাহফুযে তাকে দুর্ভাগা লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরির্বতন করে সৌভাগ্যবান হিসেবে তার নিয়তি নির্ধারণ করা হবে, আল্লাহ তায়ালা তার কাছে ৭০ হাজার ফিরিশতা প্রেরণ করবেন যারা তার পাপরাশি মুছে দেবে, বছরের শেষ পর্যন্ত তাকে সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন রাখবে, এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা ‘আদন’ জান্নাতে ৭০ হাজার বা ৭ লাখ ফিরিশতা প্রেরণ করবেন যারা জান্নাতের মধ্যে তার জন্য শহর ও প্রাসাদ নির্মাণ করবে এবং তার জন্য বৃক্ষরাজি রোপন করবে...। যে ব্যক্তি এ নামায আদায় করবে এবং পরকালের শান্তি কামনা করবে মহান আল্লাহ তার জন্য তার অংশ প্রদান করবেন।

হাদীসটি সর্বসম্মতভাবে বানোয়াট ও জাল। এর বর্ণনাকারীগণ কেউ অজ্ঞাত পরিচয় এবং কেউ মিথ্যাবাদী জালিয়াত হিসেবে পরিচিত।
[ইবনুল জাওযী, আল-মাওদু‘আত ২/৪৯-৫০; সুয়ুতী, আল-লাআলী, ২/৫৭-৫৮; ইবনু আর্রাক, তানযীহ, ২/৯২-৯৩; মোল্লা ক্বারী, আল-আসরার, পৃ- ৩৩০-৩৩১; আল মাসনু’, পৃ- ২০৮-২০৯; শাওকানী, আল ফাওয়ায়েদ ১/৭৫-৭৬]

এ বিষয়ক দ্বিতীয় জাল হাদীসটিতে জালিয়াতগণ ইবনু উমার (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামে বলেছে: ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে এক শত রাকআত সালাতে এক হাজার বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ তা‘য়ালা তার কাছে ১০০ জন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন, তন্মধ্যে ত্রিশজন তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবে, ত্রিশজন তাকে জাহান্নমের আগুন থেকে নিরাপত্তার সুসংবাদ প্রদান করবে, ত্রিশজন তাকে ভুলের মধ্যে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং দশজন তার শত্রুদের ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে।’’

এ হাদীসটিও বানোয়াট। সনদের অধিকাংশ রাবী অজ্ঞাতপরিচয়। বাকীরা মিথ্যাবাদী হিসাবে সুপরিচিত।
[ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত, ২/৫০-৫১; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ৫/২৭১; সুয়ূতী, আল লাআলী, ২/৫৯; ফাকিহানী, মুহাম্মদ বিন ইসহাক্ব, আখবারু মাক্কাহ ৩/৮৬-৮৭]

এ বিষয়ক তৃতীয় জাল হাদীসটিতে মিথ্যাবাদীগণ বিশিষ্ট তাবিয়ী ইমাম আবু জাফর মুহাম্মাদ আল বাকির (১১৫ হি) থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বরাতে বর্ণনা করেছে: ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০ রাকআত সালাতে ১০০০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বেই মহান আল্লাহ তার কাছে ১০০ ফিরিশতা প্রেরণ করবেন। ৩০ জন তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবে, ৩০ জন তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবে, ৩০ জন তার ভুল সংশোধন করবে এবং ১০ জন তার শত্রুদের নাম লিপিবদ্ধ করবে।’’

এ হাদীসটিও বানোয়াট। সনদের কিছু রাবী অজ্ঞাতপরিচয় এবং কিছু রাবী মিথ্যাবাদী হিসাবে সুপরিচিত।।[ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ ‘আত, ২/৫১; সুয়ূতী, আল-লাআলী, ২/৫৯]

১০০ রাকআত সংক্রান্ত এ বিশেষ পদ্ধতিটি হিজরী চতুর্থ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন গল্পকার ওয়ায়িযদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং যুগে যুগে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে ভারতীয় ওয়ায়িযগণ এ সালাতের পদ্ধতির মধ্যে প্রত্যেক দু রাকআতের পরে ‘‘তাসবীহুত তারাবীহ’’র প্রচলন করেন এবং ১০০ রাকআত পূর্ণ হওয়ার পর কতিপয় সাজদা, সাজদার ভিতরে ও বাহিরে কতিপয় দোয়া সংযুক্ত করেছেন।

আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী (১৩০৬ হি) বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হাদীস সমুহের মধ্যে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। যার সারমর্ম হলো, মধ্য শাবানের রাতে পঞ্চাশ সালামে ১০০ রাকআত সালাত আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পর ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। প্রত্যেক দুই রাকআত পর ‘তাসবীহুত তারাবীহ’ পাঠ করবে, এর পর সাজদা করবে। সাজদার মধ্যে কিছু নির্ধারিত বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে। অতঃপর সাজদা থেকে মাথা তুলবে এবং নবী (ﷺ) এর উপর দুরূদ পাঠ করবে ও কিছু নির্ধারিত বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে। অতঃপর দ্বিতীয় সাজদা করবে এবং তাতে কিছু নির্ধারিত বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে।[আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার আল-মারফুআ, পৃ- ১১৩-১১৪]

শবে বরাতে ৫০ রাক‘আত

ইমাম যাহাবী এ হাদীসটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট হাদীস হিসেবে হাদীসটির বর্ণনাকারী অজ্ঞাত রাবী মুহাম্মাদ বিন সাঈদ আলমীলী আত তাবারীর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। উক্ত মুহাম্মাদ বিন সাঈদ এ হাদীসটি তার মতই অজ্ঞাত রাবী মুহাম্মদ বিন আমর আল বাজালী এর সনদে আনাস (রা) থেকে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেনঃ যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ৫০ রাকআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার কাছে যত প্রকার প্রয়োজনের কথা বলবে তার সবটুকুই পূরণ করে দেয়া হবে। এমনকি লাওহে মাহফুযে তাকে দুর্ভাগ্যবান হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরিবর্তন করে তাকে সৌভাগ্যবান করা হবে। এবং আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে ৭ লাখ ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার নেকী লিপিবদ্ধ করবে, অপর ৭ লাখ ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার জন্য বেহেশতে প্রাসাদ নির্মাণ করবে ..... এবং ৭০ হাজার একত্ববাদীর জন্য তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে...। ইমাম যাহাবী এ মিথ্যা হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, যে ব্যাক্তি এ হাদীসটি বানোয়াট করেছে আল্লাহ তা‘আলা তাকে লাঞ্চিত করুন।[যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল, ৬/১৬৮-১৬৯]

শবে বরাতে ১৪ রাক‘আত

ইমাম বায়হাকী তাঁর সনদে আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে মধ্য শাবানের রাতে ১৪ রাকআত সালাত আদায় করতে দেখেছি। সালাত শেষে বসে তিনি ১৪ বার সূরা ফাতিহা, ১৪ বার সূরা ইখলাস, ১৪ বার সূরা ফালাক, ১৪ বার সূরা নাস, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং সূরা তাওবার শেষ দু আয়াত তিলাওয়াত করেন, এ সব কাজের সমাপ্তির পর আমি তাঁকে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: তুমি আমাকে যে ভাবে করতে দেখেছ এভাবে যে করবে তার আমলনামায় ২০টি কবুল হজ্জের সাওয়াব লেখা হবে এবং ২০ বছরের কবুল সিয়ামের সাওয়াব লিখা হবে। পরদিন যদি সে সিয়াম পালন করে তবে দু বছরের সিয়ামের সাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।

হাদীসটি উল্লেখ করার পর ইমাম বায়হাকী বলেন: ইমাম আহমাদ বলেছেন যে, এ হাদীসটি আপত্তিকর, পরিত্যক্ত, জাল ও বানোয়াট বলে প্রতীয়মান। হাদীসটির সনদে অজ্ঞাত পরিচয় বর্ণনাকারীগণ রয়েছে।[বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, ৩/৩৮৬ - ৩৮৭, হাদীস নং - ৩৮৪১]

অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে জাল বলে গণ্য করার বিষয়ে ইমাম বাইহাকীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। আল্লামা ইবনুল জাওযী ও ইমাম সুয়ুতী বলেন: হাদীসটি বানোয়াট, এর সনদ অন্ধকারাচ্ছন্ন। .... সনদের মধ্যে মুহাম্মাদ বিন মুহাজির রয়েছেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন: মুহাম্মদ বিন মুহাজির হাদীস বানোয়াট-কারী।[ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূআত, ২/৫২; সুয়ূতী, আল-লাআলী, ২/৫৯-৬০]

শবে বরাতে ১২ রাক‘আত, প্রত্যেক রাক‘আতে ৩০ বার সূরা ইখলাস

জালিয়াতগণ আবু হুরাইরা (রা) পর্যন্ত একটি জাল সনদ তৈরী করে তাঁর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছে: ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শা’বানের রাতে ১২ রাকআত সালাত আদায় করবে, প্রত্যেক রাকাতে ৩০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, সালাত শেষ হওয়ার পূর্বেই বেহেশতের মধ্যে তার অবস্থান সে অবলোকন করবে এবং তার পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়েছে এমন দশ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’’

এ হাদীসের সনদের অধিকাংশ বর্ণনাকারীই অজ্ঞাত। এছাড়াও সনদের মধ্যে কতিপয় দুর্বল ও পরিত্যাজ্য বর্ণনাকারী রয়েছে। [ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূআত, ২/৫২; সুয়ূতী, আল-লাআলী, ২/৫৯]

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, মধ্য শা’বানের রাতে নির্দ্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দ্দিষ্ট সূরার মাধ্যমে নির্দ্দিষ্ট রাকআত সালাত আদায় সংক্রান্ত হাদীস সমূহ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে সকলেই একমত। কিন্তু কতিপয় নেককার ও সরলপ্রাণ ফকীহ ও মুফাস্সির তাঁদের রচনাবলিতে এগুলোর জালিয়াতি ও অসারতা উল্লেখ ছাড়াই এসকল ভিত্তিহীন হাদীস স্থান দিয়েছেন। এমনকি কেউ কেউ এগুলোর উপর ভিত্তি করে ফতোয়া প্রদান করেছেন ও তদনুযায়ী আমল করেছেন, যা পরবর্তীতে এ রীতি প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।

মোল্লা আলী ক্বারী (১০১৪ হি) মধ্য শাবানের রাতে সালাত আদায়ের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোর অসারতা উল্লেখপূর্বক বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে, যারা সুন্নাতের ইলমের সন্ধান পেয়েছেন তারা এগুলো দ্বারা প্রতারিত হন কি করে! এ সালাত চতুর্থ হিজরী শতকের পর ইসলামের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে যার উৎপত্তি হয়েছে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে। এব্যাপারে অসংখ্য জাল হাদীস তৈরী করা হয়েছে যার একটিও সঠিক বা নির্ভরযোগ্য নয়। [মোল্লা ‘আলী ক্বারী, আল-আসরার, পৃ- ৩৩০-৩৩১; ইবনুল কাইয়িম, আল-মানার আল-মুনীফ, পৃ- ৮৯-৯৯] তিনি আরো বলেন, হে পাঠক, এ সকল ভিত্তিহীন মিথ্যা হাদীস ‘কুতুল কুলুব’, ‘এহয়িয়াউ উলুমিদ্দীন’ ও ইমাম সা‘লাবীর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ থাকার কারণে আপনারা প্রতারিত ও বিভ্রান্ত হবেন না। [মোল্লা আলী ক্বারী, আল মাসনূ’, পৃষ্ঠা- ২০৮-২০৯] ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ আজলুনীও (১১৬২ হি) অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।[আজলুনী, কাশফুল খাফা, ২/৫৫৪-৫৫৫]
আল্লামা শাওকানী (১২৫০ হি) শবে বরাতের রাত্রিতে আদায়কৃত এ সালাত সংক্রান্ত হাদীসের ভিত্তিহীনতা উল্লেখ পূর্বক বলেন, এ সকল হাদীস দ্বারা এক দল ফকীহ প্রতারিত হয়েছেন। যেমন ‘এহয়িয়াউ উলূমিদ্দীন’ গ্রন্থকার ইমাম গাযালী ও অন্যান্যরা। এমনিভাবে কতিপয় মুফাস্সিরও প্রতারিত হয়েছেন। এ সালাতের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের জাল হাদীস রচিত হয়েছে। এ সকল হাদীস মাউযূ বা বানোয়াট হওয়ার অর্থ হলো, এই রাত্রিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত রাক‘আত সালাত আদায়ের প্রচলন বাতিল ও ভিত্তিহীন। তবে কোনো নির্ধারিত রাক‘আত, সূরা বা পদ্ধতি ব্যতিরেকে সাধারণ ভাবে এ রাত্রিতে ইবাদত বা দোয়া করার বিষয়ে দুই একটি যয়ীফ হাদীস রয়েছে।’’[শাওকানী, আল-ফাওয়ায়িদ ১/৭৬]



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url