হজ্জ সফরের সহজ গাইড (পর্ব-২)



হজের ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি ও বিদ‘আত

দীর্ঘ ১৪০০ বছর সময় ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের দেশগুলোতে হজের রীতি-নীতি মৌখিক ও লিখিত আকারে পৌঁছেছে। দুঃখের বিষয় হলো এ দীর্ঘ্য সময়ের ব্যাবধানে কিছু লোক অথবা দল হজের কিছু রীতি-নীতির মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং এটা হওয়া স্বাভাবিকভাবে অনিবার্য ছিল।
কিছু লোক অথবা দল হজের কিছু রীতি-নীতি ভুলভাবে বুঝেছে এবং তারা তাদের সেই বোধ থেকেই হজের রীতিনীতি পালন করছে। আবার অনেকে হজের পদ্ধতিতে নতুন রীতি ও বিভিন্ন দো‘আ যোগ করেছে। সাধারণভাবে দেখলে এসব রীতি সঠিকই মনে হবে, এর কোনো ত্রুটিই খুজে পাবেন না। মনে হবে এসব রীতি পালন করাও ভালো।
কিন্তু কথা হলো কেন এসব ভ্রান্ত রীতি বা অতিরিক্ত রীতি পালন করবেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজে যা যা করেছেন তার থেকে বেশি করে আপনি কি বেশি আমল অর্জন করতে পারবেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে করেছেন এবং করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন সে সম্পর্কে আপনি যতটুক শুদ্ধ ভাবে জানতে পারেন বা আপনার জ্ঞান অনুসারে আমল করাই কি ভালো নয়? আপনি কি জানেন, ইবাদতে বা আমলে নতুন রীতি তৈরি অথবা নতুন কিছু যোগ করার ফলে আপনার ইবাদতই বাতিল হয়ে যেতে পারে; কেননা তা বিদ‘আত!
এখন প্রশ্ন আসতে পারে; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজের নিয়ম-কানুন আমি কোথায় পাবো বা কীভাবে জানবো? উত্তর সহজ: সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী-এর হজ অধ্যায়ের হাদীস পড়ুন। যদি সব হাদীস পড়ার মতো যথেষ্ট সময় না পান বা সকল হাদীস বই না থাকে তাহলে নির্ভরযোগ্য সুপরিচিত আলেমদের দলীল ভিত্তিক লেখা বই পড়ুন। কয়েকটি বই পড়ে যাচাই করুন। হজের শুদ্ধ রীতি-নীতির সবকিছুই বিভিন্ন বই থেকে পেয়ে যাবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, ‘‘তোমরা হজের নিয়ম-কানুন শিখে নাও আমার কাছ থেকে”।[১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘‘আমি তোমাদের যা কিছু করতে বলেছি সেই সব ব্যতীত আর কোনো কিছুই তোমাদের জান্নাতের নিকটবর্তী করবে না এবং যে সকল বিষয় সতর্ক করেছি সেগুলো ব্যতীত কোনো কিছুই তোমাদের জাহান্নামের নিকটবর্তী করবে না”।[২]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘‘যে দীনের মধ্যে এমন কাজ করবে যার প্রতি আমার নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত (বাতিল)”।[৩]
হুযায়ফাহ ইবন আল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘যেসব ইবাদাত (আমল) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ করেন নি, তা তোমরাও করো না”।[৪]
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মেনে চলো ও নতুন কিছু সৃষ্টি করো না, রাসূলের দেখানো এ পথ আঁকড়ে ধরাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট’’।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই (বিদ‘আত) পথভ্রষ্টতা, এবং সকল পথভ্রষ্টতা আগুনে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে”।[৫]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ সম্পন্ন করার পর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [المائ‍دة: ٣]

‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নি‘আমতও পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকেই মনোনিত করলাম”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]

ইসলামের যেকোনো ইবাদতের নির্দেশিকা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কারো এর কম বা বেশি করার কোনো অধিকার বা ক্ষমতা নেই। আমাদের শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা দরকার।
এ বইয়ে হজের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিবিধ ভুলত্রুটি ও বিদ‘আত বিষয়গুলো সংযোজন করেছি; কারণ এগুলো আলাদাভাবে উল্লেখ না করলে হজযাত্রীরা এগুলোকে সাধারণ রীতি-নীতি হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এ ভুলত্রুটি ও বিদ‘আত বিষয়গুলো বিগত শতাব্দীর প্রথিতযশা হাদীস বিশারদ, আরব বিশ্বে অত্যন্ত সুপরিচিত নাম শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আলবানীর ‘আহায্যুকা সাহীহুন’ (আপনার হজ শুদ্ধ হচ্ছে কি?) ও Innovations of Hajj, Umrah & Visiting Madinah. বই থেকে সংগ্রহ করেছি।

[১] আস-সুনানুল কাবরা লিল-বায়হাকী, হাদীস নং ৯৩০৯
[২] মুসনাদে আস শাফে‘ঈ
[৩] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৮৯; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭
[৪] সহীহ বুখারী
[৫] তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬

হজ যাত্রার পূর্বে প্রচলিত ভুলত্রুটি ও বিদ‘আত

হজ যাত্রাকে উপলক্ষ্য করে যাত্রা শুরুর পূর্ব মুহূর্তে দুই রাকাত নফল সালাত পড়া এবং ১ম ও ২য় রাকাতে সূরা আল-কাফিরূন ও সূরা আল-ইখলাস নির্ধারিতভাবে তিলাওয়াত করাকে হজের নিয়ম মনে করা। তবে যে কোনো সফরে বের হওয়ার পূর্বে নফল সালাত পড়ে বের হওয়া সুন্নাত।
হজযাত্রার আগে মিলাদ দেওয়া, মিষ্টি বিতরণ করা এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কান্নাকাটি করা।
হজে যাওয়ার সময় আযান দেওয়া অথবা এ উপলক্ষে ইসলামী সঙ্গীত বাজানো।
কিছু সুফীদের মতো করে ‘একমাত্র আল্লাহকে সঙ্গী করে’ একাই হজযাত্রায় রওয়ানা হওয়া।
একজন পুরুষের কোনো মহিলা হজযাত্রীর সঙ্গে তার মাহরাম হওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়া।
একজন মহিলা হজযাত্রী কোনো অনাত্মীয়কে ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাকে মাহরাম করা।
নারীর ক্ষেত্রে কোনো একটি আস্থাভাজন মহিলা দলের সঙ্গে মাহরাম ছাড়াই হজে যাওয়া এবং একইভাবে এমন কোনো পুরুষের সঙ্গে গমন করা যিনি পুরো মহিলা দলের মাহরাম হিসেবে নিজেকে দাবি করেন।
এ কথা মানা যে, হজের পরিপূর্ণতা হচ্ছে নিজ এলাকার ভিতরেই ইহরাম বাঁধা।
হজ যাত্রার পূর্ব মুহূর্তে অথবা বিভিন্ন স্থানে পৌছানোর পর উচ্চস্বরে যিকির করা এবং উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবার ধ্বনি তোলা।
এ কথা বিশ্বাস করা যে, পায়ে হেঁটে হজ করার সাওয়াব ৭০ হজ আর আরোহনে হজ করলে ৩০ হজের সাওয়াব।
প্রতি যাত্রা বিরতিতে দুই রাকাত সালাত আদায় করা এবং এ কথা বলা, (হে আল্লাহ তুমি আমার জন্য এ যাত্রা বিরতির স্থানকে তোমার আশির্বাদপুষ্ট কর এবং তুমিই উত্তম আশ্রয়দাতা।)

হজের উদ্দ্যেশে ঘর থেকে বের হওয়া

হজ ফ্লাইটের শিডিউল ও বিমানবন্দর থেকে দুরত্বের ওপর ভিত্তি করে আপনার হজ এজেন্সি আপনাকে ফ্লাইটের দিনই বিমানবন্দরে অথবা এর দুই/একদিন আগে ঢাকা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাবেন।
যেহেতু অধিকাংশ হজযাত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন, তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে এখানে একটি দৃশ্যপট চিন্তা করি; ধরুন প্রথমে আপনি ঢাকা হজ ক্যাম্পে যাবেন।
চেক লিস্ট অনুযায়ী ব্যাগ গোছান; বড় আকারের একটি মেইন ব্যাগ করবেন (ওজন ৮-১০ কেজি) এবং ছোট আকারের একটি হাত ব্যাগ করবেন (ওজন ৫-৭ কেজি) এবং ছোট ব্যাগটিতে দরকারী কাগজপত্র (পাসপোর্ট, টিকেট, অনাপত্তিপত্র, ওষুধপত্র ইত্যাদি) নিবেন। আপনার ব্যাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরও ৩টি জিনিস নিতে ভুলবেন না তা হল; ধৈর্য, ত্যাগ ও ক্ষমা!
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় শান্ত ও খুশি মনে আপনার পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিন। ভালো হয় যদি আপনার পরিবারের দুই একজন সদস্য আপনাকে বিদায় জানানোর জন্য কিছু পথ এগিয়ে দিতে আসেন।
যাদের ছেড়ে হজের সফরে বের হচ্ছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য বলতে পারেন:

أَسْتَوْدِعُكمُ اللهُ الَّذِيْ لَا تضِيْعُ وَدَائِعُهُ

“আসতাওদি‘উ কুমুল্লাহুল্লাযী লা তাদী‘উ ওয়াদা-য়ী‘উহু”।

অর্থাৎ “আমি তোমাদেরকে আল্লাহর হিফাযতে রেখে যাচ্ছি যার হিফাযতে থাকা কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না”।[১]

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আপনি নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করতে পারেন:
بسم الله توكلت على الله ولا حول ولا قوة إلا بالله

‘‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”।

অর্থ “আল্লাহর নামে, সকল ভরসা তারই ওপর এবং আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত ভালো করার বা মন্দকে প্রতিহত করার ক্ষমতা নেই”।[২]

সিঁড়ি অথবা লিফটে করে উপরে ওঠার সময় বলুন ‘আল্লাহু আকবার’। নামার সময় বলুন ‘সুবহানাল্লাহ’। পরিবহনে ওঠার সময় বলুন ‘বিসমিল্লাহ’। আসনে বসার সময় বলুন ‘আলহামদুলিল্লাহ’।[৩]
রিক্সা, ট্যাক্সি, কার, বাস, ট্রেন ও বিমানে আরোহন করে আপনি নিম্মোক্ত যাত্রা পথের দো‘আটি পড়তে পারেন:

اَللهُ أَكْبر، اَللهُ أَكْبَر، أَللهُ أَكْبَر سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ وإنا إلى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ

“আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, সুবহানাল্লাযি সাখ্খারালানা হাযা ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবূন”।

অর্থ: “আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি এ বাহনকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। একে বশীভূত করতে আমরা সক্ষম ছিলাম না। আমরা অবশ্যই আমাদের পালনকর্তার দিকে ফিরে যাবো”।[৪]

নৌকা, লঞ্চ ও জাহাজে উঠে আপনি নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করতে পারেন:

﴿بِسۡمِ ٱللَّهِ مَجۡرٜىٰهَا وَمُرۡسَىٰهَآۚ إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ﴾ [هود: ٤١]

উচ্ছারণ: বিসমিল্লাহি মাজরিহা ওয়া মুরছাহা ইন্না রাব্বিবলা গাফুরুর রাহীম।

অর্থ: আল্লাহর নামেই এ বাহন চলাচল করে এবং থামে। নিশ্চয় আমার প্রভু ক্ষমাশীল ও দয়ালু”। [সূরা হুদ, আয়াত: ৪১]

যারা দূর থেকে আসবেন তারা বাস অথবা ট্রেন স্টেশনে এসে আপনার হজ সঙ্গীদের সঙ্গে মিলিত হবেন। তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আপনার দলনেতা অথবা আমীরের নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। অতঃপর আপনার ব্যাগপত্র নিয়ে পরিবহনে উঠুন এবং চূড়ান্তভাবে আপনার পরিচিতজনদের কাছ থেকে বিদায় নিন।
যখন তিনজন বা এর অধিক লোক কোনো দূরবর্তী স্থানে সফরের উদ্দেশ্যে বের হবে তখন তাদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর নির্বাচন করে নেওয়া উত্তম। তাই আমীরের নির্দেশনা শুনুন ও দলের শৃংখলা বজায় রাখুন।[৫]
ভ্রমণ অবস্থায় আপনি রিলাক্স হয়ে বসুন। সম্ভব হলে হজ বিষয়ে বই পড়ুন বা মনে মনে দো‘আ ও যিকির করুন। মুসাফিরের দো‘আ আল্লাহ কবুল করেন।
সফরে আপনি ঘুমাতে অভ্যস্থ হলে আপনি ঘুমিয়ে যেতে পারেন। অথবা আপনি আপনার অন্য সঙ্গীদের সঙ্গে হজ সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। তবে সময় কাটানোর জন্য অযথা গল্পে লিপ্ত না হওয়াই ভালো।
মুসাফির অবস্থায় ভ্রমণে সালাত কসর করে আদায় করতে পারেন। কসর সালাত আদায় এর নিয়ম-কানুন ভালোভাবে জেনে নিন। যোহর ও আসরকে একত্রে কসর করে যোহর বা আসরের সময় এবং মাগরিব ও এশাকে একত্রে কসর করে মাগরিব বা এশার সময় জমা করেও আদায় করতে পারেন।[৬]
সফররত অবস্থায় জুমু‘আর সালাত-এর পরিবর্তে যোহর সালাত আদায় করতে পারেন। কিবলা কোন দিকে তা একটু চিন্তা-ভাবনা বা জিজ্ঞাসা করে নির্ণয় করে নিবেন, তবে নির্ণয় করা সম্ভব না হলে বা জটিলতার কারণে কোনো এক দিককে কিবলা নির্ধারণ করবেন।[৭]
যাত্রা পথে কোথাও অবতরণ করে এ দো‘আ পাঠ করা:

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্ছারণ: আউযু বিকালিমাতিল্লা-হিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক্ব।

অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্য দ্বারা তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করছি।[৮]

[১] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৯৬; ইবন মাজাহ
[২] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৯৬; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪২৬
[৩] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৩
[৪] সূরা-আল যুখরূফ ৪৩:১৩-১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪২
[৫] আবু দাউদ, হাদীস নং ২২৪১
[৬] সহীহ মুসলিম
[৭] সূরা-বাকারা ২:২৩৯, আবু দাউদ, হাদীস নং ১২২৪-২৮
[৮] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৮

ঢাকা হজ ক্যাম্পে করণীয়

হজ ক্যাম্প দূর থেকে আগত হজযাত্রীদের আশ্রয়কেন্দ্র। এখানে দলে দলে হজযাত্রীরা এসে ১/২ দিন থাকেন এবং ফ্লাইটের শিডিউল অনুযায়ী হজ ক্যাম্প ছেড়ে চলে যান।
আপনার হজ এজেন্সি হজ ক্যাম্পে আপনার থাকার জন্য ছোট ছোট ডরমেটরি রুম এর ব্যবস্থা করতে পারেন ২য়/৩য় তলায়। হজ ক্যাম্পের নিচ তলা অফিসিয়াল কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এখানে আপনার হজ এজেন্সি, হজ ক্যাম্পের অফিস থেকে বিভিন্ন কাগজপত্র পরীক্ষা করবেন ও হজ ফ্লাইটের শিডিউল চেক করবেন। কেউ যদি মেনিনজাইটিস টিকা না নিয়ে থাকেন তবে এখান থেকে টিকা নিতে পারেন।
এখানে কিছু খাবার ক্যান্টিন ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। আপনি অথবা আপনার হজ এজেন্সি এখান থেকে খাবার এর ব্যবস্থা করতে পারেন। আপনি এখানে কিছু মানি এক্সচেঞ্জার পাবেন এবং চাইলে টাকা রিয়াল করে নিতে পারেন।
এখানে কিছু হজ প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে মক্কা, মদীনা ও মিনার তাবুর মানচিত্র বিতরণ করা হয় যা সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
হজ ক্যাম্পে থাকার সময় সতর্ক থাকুন কারণ এখান থেকে অনেক সময় টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী হারিয়ে অথবা চুরি হয়ে যায়।
মনে রাখবেন হজ ক্যাম্প একটি ধুমপান মুক্ত এলাকা, এখানে অপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনরা আপনার সাথে দেখা করতে পারেন নিচ তলায়; তবে তাদের ২য়/৩য় তলায় ডরমেটরি রুম এ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।
ফ্রি সৌদি মোবাইল সিমকার্ড (মোবিলি, জেইন) পাওয়া যায় এখানে অথবা আপনি মোবাইল সিমকার্ডও কিনতে পারেন।

বোর্ডিং পাস ও ইমিগ্রেশনে করণীয়

হজ যাত্রার প্রস্থান প্রক্রিয়ার কাজ (বড় ব্যাগ জমা করণ, বোর্ডিং পাস ও ইমিগ্রেশন) ঢাকা হজ ক্যাম্প থেকে শুরু হতে পারে আবার বিমান বন্দর থেকেও শুরু হতে পারে, এটা নির্ভর করে বিমান কর্তৃপক্ষ ও সরকার এর সিদ্ধান্তের উপর। সাধারণত বাংলাদেশ বিমান এর প্রস্থান প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয় ঢাকা হজ ক্যাম্প থেকে এবং সৌদি এয়ারলাইনস-এর কাজ শুরু হয় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে।
আপনি যদি ঢাকা শহরের মধ্য থেকে সরাসরি আসেন তবে আপনার হজ এজেন্সির সাথে কথা বলে জেনে নিন আপনার ফ্লাইট কোন এয়ারলাইনসে এবং আপনাকে প্রথমে কোথায় রিপোর্ট করতে হবে - ঢাকা হজ ক্যাম্প নাকি বিমান বন্দর। এখানে আমরা ধরে নিয়েছি আপনি প্রথমে ঢাকা হজ ক্যাম্পে এসেছেন কারণ বেশিরভাগ হজযাত্রী হজ ক্যাম্প হয়ে বিমানে উঠেন।
যখন ফ্লাইটের সময় নিকটবর্তী হবে -সাধারণত ফ্লাইটের ৫/৬ ঘন্টা আগে হজ ক্যাম্পে ও বিমানবন্দরে বিমান শিডিউল এর ঘোষণা হবে তখন আপনি আপনার ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হন।
আপনার হজ এজেন্সির পরিকল্পনা অনুসারে আপনি যদি প্রথমে মক্কায় যান তাহলে আপনার বাড়ি থেকে অথবা হজ ক্যাম্প অথবা বিমানবন্দর থেকেই শুধু ইহরামের কাপড় পরে নিবেন কিন্তু নিয়ত বাকি রাখবেন। তবে ইহরামের কাপড় আপনি বিমানের ভেতরেও পরতে পারবেন। পৃষ্ঠা নং .... থেকে আপনি ইহরামের তাৎপর্য ও বিধি-বিধান বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আপনি যদি প্রথমে মদীনায় যান তাহলে ইহরামের কাপড় পরিধান করার দরকার নেই। সাধারণ কাপড় পরিধান করে যাবেন। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ হজযাত্রী প্রথমে মক্কা যান ও উমরাহ পালন করেন তাই এখানে ধরে নিচ্ছি আপনি প্রথমে মক্কায় যাচ্ছেন।
বিমানে ইহরামের কাপড় পরা দৃষ্টিকটু ও কঠিন কাজ। তাই বিমানে আরোহণের পূর্বেই ইহরামের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নিবেন মানে ইহরামের কাপড় পড়ে নিবেন। শুধুমাত্র নিয়তটা বাকি রাখবেন। ইহরাম করবেন বা নিয়ত করবেন যখন আপনি মিকাত এর কাছাকাছি পৌছাবেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীকাতের কাছাকাছি পৌছানোর পূর্বে ইহরামের নিয়ত করেন নি।[১]
হজ ক্যাম্পে অথবা বিমানবন্দরে আপনার দলনেতা বা আমীরের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমে লাইন ধরে বিমান টিকেট হাতে নিয়ে কাষ্টমস ও ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে ব্যাগ জমাকরণ কাউন্টারে আপনার বড় ব্যাগটি জমা দিয়ে দিন। এখানে আপনার বিমান টিকেট চেক করা হবে এবং আপনার লাগেজে স্টিকার লাগিয়ে বিমানের কার্গোতে জমা করা হবে। এখানে আপনাকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হবে। যত্নসহকারে বোর্ডিং পাসটি সংরক্ষণ করুন।
এরপর ইমিগ্রেশন অফিসের দিকে অগ্রসর হউন এবং লাইনে দাঁড়ান। ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার পাসপোর্ট চেক করবেন এবং সিল দিবেন, তিনি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন, আপনার অফিস অনাপত্তিপত্র (NOC) দেখতে পারেন। ইমিগ্রেশন-এর কাজ শেষ হলে হজযাত্রী অপেক্ষা কক্ষে গিয়ে বসুন। মনে মনে দো‘আ ও যিকির করুন। এরপর হজ ক্যাম্পে হজযাত্রী পরিবহন বাস এসে হাজীদের বিমানবন্দর নিয়ে যাবে।
[১] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮

বিমানবন্দরে করণীয়

বিমানবন্দরের নির্দিষ্ট একটি কাউন্টারে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আপনার বোর্ডিং পাস দেখিয়ে আপনার ছোট ব্যাগপত্র চেক করিয়ে অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট অপেক্ষা কক্ষে গিয়ে বসুন।
বিমানবন্দরে হাজীদের জন্য আপ্যায়ন হিসাবে কখনো কখনো বিভিন্ন মহল থেকে খাবার ও পানীয় দেওয়া হয়। এগুলো রাখতে পারেন।
হজের যাত্রায় আপনার সঙ্গে অবশ্যই ছোট হাত ব্যাগ/সৈনিক ব্যাগ/কোমরের ব্যাগ নেবেন। এ ব্যাগে টাকা, পাসপোর্ট, টিকেট, ওষুধ ও চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র রাখবেন।
ফ্লাইটের সময় নিকটবর্তী হলে আবার শৃংখলাবদ্ধ হয়ে লাইনে দাঁড়াবেন এবং লাইন ধরেই বিমানে উঠে পড়বেন। একটি সর্তকতা; সবসময় দলবদ্ধ হয়ে সকল জায়গায় যাবেন এবং সকল কাজ করবেন। কখনই দলছাড়া হবেন না, দলছাড়া হলে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন ও সমস্যায় পড়তে পারেন।

বিমানের ভেতরে করণীয়

বিমানে উঠে আপনার নির্দিষ্ট আসন অথবা যদি ফ্রি সিটিং বলা হয় তখন যে কোনো আসনে আসন গ্রহণ করুন। আপনার মাথার উপরের বক্সে আপনার ছোট হাত ব্যাগটি রাখুন।
বিমানে উাঠার পর আপনার পরিচিতজনদের ফোন করে আপনার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করুন ও এরপর মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখুন অথবা উড্ডয়নের আগে এয়ারপ্লেন মোড দিয়ে রাখুন। আপনার সিটটি সোজা করে রাখুন এবং সিট বেল্ট বেঁধে নিন। এখন যাত্রা পথের দো‘আটি পড়তে পারেন।
বিমানের ক্রুদের ঘোষিত নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। বিমান ক্রু যখন যাত্রী সংখ্যা গণনা করবেন তখন আপনি সিটে বসে থাকুন।
সাধারণত হজ ফ্লাইটে ২তলা বিশিষ্ট বোয়িং ৭৪৭/৭৭৭ বিমান ব্যবহৃত হয়। এক একটি বিমান ৪৫০-৫৫০ জন যাত্রী বহন করতে পারে।
বিমান উড্ডয়নের পর সিট বেল্ট খুলে সিটটি পিছনের দিকে হেলে দিয়ে আরাম করে বসুন অথবা ঘুমিয়ে যান। মনে মনে দো‘আ ও যিকির করুন।
বিমান সাধারণত ৬০০ মাইল/ঘন্টা বেগে ভূপৃষ্ঠ হতে ৩০,০০০ ফুট উপর দিয়ে উড়ে যাবে। সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দর পৌছাতে সময় লাগে সাধারণত ৫-৬ ঘন্টা।
বিমানের ১বার লাঞ্চ/ডিনার ও ১বার হালকা খাবার পরিবেশন করা হবে।
বিমানের ওয়াশরুমে বিমানে পানি খুবই সীমিত তাই পানি বেশি খরচ করবেন না। ওয়াশরুমে অযু করবেন না এবং কমোডের ভিতরে টিস্যু ফেলবেন না।
সালাতের জন্য বিমানে তায়াম্মুম করবেন। এজন্য মাটির ইট দেওয়া হবে।
বিমান কোনো মীকাতের কাছাকাছি চলে এলে বিমান ক্রুরা আগেভাগেই জানিয়ে দেবেন। যারা প্রথমে মক্কায় যাবেন, তারা তখন মীকাত থেকে ইহরাম করবেন বা উমরাহর নিয়ত করবেন। এরপরই উমরাহ অধ্যায় থেকে আপনি ইহরাম ও উমরাহ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জেদ্দা বিমানবন্দরে বিমান অবতরণের পর আপনি ছোট হাত ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে যাত্রীদের ওয়েটিং লাউঞ্জে/অপেক্ষা কক্ষে গিয়ে বসুন।
মদীনাতেও বিমানবন্দর আছে। আপনার হজ এজেন্সি যদি প্রথমে মদীনা যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে হজ ফ্লাইটের শিডিউল মদীনা বিমানবন্দরেও নিতে পারেন তবে মদীনা যাওয়া সহজ হয়।

কৃতজ্ঞতা: মুহাম্মাদ মোশফিকুর রহমান এর লেখা
হজ সফরে সহজ গাইড’ নাম পুস্তক থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে।


****************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url