প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-২২]




হিজরতকালে ১৪ দিন ক্বোবায় অবস্থানের পর মদিনায় পৌঁছলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। প্রিয় নবীকে মদিনায় উষ্ণ আতিথেয়তায় গ্রহণ। মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা।

ক্বোবায় অবতরণ ও প্রথম মসজিদ স্থাপন

একটানা আটদিন চলার পর ১৪ নববী বর্ষের ৮ই রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে ক্বোবা উপশহরে শ্বেত-শুভ্র বসনে তাঁরা অবতরণ করেন।[1] প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকলেও এদিন দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে না পাওয়ায় এবং সূর্য অধিক গরম হওয়ায় মুসলমানগণ স্ব স্ব বাড়ীতে ফিরে যান। এমন সময় জনৈক ইহূদী কোন কাজে একটি টিলার মাথায় উঠলে তাঁদের দেখতে পায় এবং সবাইকে খবর দেয় (বুখারী হা/৩৯০৬)। ক্বোবায় মানুষের ঢল নামে। হাযারো মানুষের অভ্যর্থনার মধ্যেও রাসূল (ছাঃ) ছিলেন চুপচাপ। তাঁর উপরে হযরত আবুবকর (রাঃ) চাদর দিয়ে ছায়া করলে লোকেরা রাসূল (ছাঃ)-কে চিনতে পারে। এ সময় তাঁর উপরে ‘অহি’ নাযিল হয়-فَإِنَّ اللهَ هُوَ مَوْلاَهُ وَجِبْرِيْلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمَلاَئِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيْرٌ ‘জেনে রেখ, আল্লাহ, জিব্রীল ও সৎকর্মশীল মুমিনগণ তার সহায়। উপরন্তু ফেরেশতাগণও তার সাহায্যকারী’।[2]

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ

ক্বোবায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বনু আমর বিন ‘আওফ গোত্রের কুলছূম বিন হিদমের (كُلْثُومُ بْنُ هِدْم) বাড়ীতে অবস্থান করেন।[3] এদিকে হযরত আলীও মক্কায় তিনদিন অবস্থান করে গচ্ছিত আমানত সমূহ স্ব স্ব মালিককে ফেরত দানের পর মদীনায় চলে আসেন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সাথেই অবস্থান করতে থাকেন। ক্বোবাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ১৪ দিন অবস্থান করেন (বুখারী হা/৪২৮)। এতে মতভেদ থাকলেও এ ব্যাপারে সকলে একমত যে, তিনি সোমবারে ক্বোবায় অবতরণ করেন এবং শুক্রবারে সেখান থেকে ইয়াছরিবের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এ সময়ে তিনি সেখানে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন ও সেখানে ছালাত আদায় করেন। এই মসজিদ সম্পর্কেই সূরা তওবা ১০৮ আয়াতেلَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى ‘তাক্বওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ’ বলে প্রশংসা করা হয়েছে। এটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ। যার প্রথম উদ্যোগী ছিলেন ‘আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ)। তিনিই রাসূল (ছাঃ)-কে এদিকে ইঙ্গিত দেন। অতঃপর পাথরসমূহ জমা করেন। অতঃপর প্রথমে রাসূল (ছাঃ) ক্বিবলার দিকে একটি পাথর রাখেন। অতঃপর আবুবকর (রাঃ) একটি রাখেন। অতঃপর বাকী কাজ ‘আম্মারের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়’ (ইবনু হিশাম ১/৪৯৪, ৪৯৮- টীকাসহ)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইয়াছরিবে তাঁর দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিবের মাতুল গোষ্ঠী বনু নাজ্জারকে সংবাদ দেন। বনু নাজ্জার ছিল খাযরাজ গোত্রভুক্ত। তারা এসে সশস্ত্র প্রহরায় তাঁকে সাথে নিয়ে ইয়াছরিবের পথে যাত্রা করেন। ক্বোবা থেকে ইয়াছরিবের মসজিদে নববীর দূরত্ব হ’ল ১ ফারসাখ (ফাৎহুল বারী হা/৩৯০৬-এর আলোচনা) তথা ৩ মাইল বা ৫ কি.মি.।

বনু নাজ্জারকে রাসূল (ছাঃ)-এর মাতৃকুল বলার কারণ এই যে, রাসূল (ছাঃ)-এর প্রপিতামহ হাশেম বিন ‘আব্দে মানাফ এই গোত্রে বিবাহ করেছিলেন। সেকারণ মদীনাবাসীগণ মক্কার বনু হাশেমকে তাদের ‘ভাগিনার গোষ্ঠী’ (إِبْنُ أُخْتِنَا) বলে অভিহিত করতেন (ইবনু হিশাম ১/১৩৭ টীকা -২)।

[1]. আর-রাহীক্ব পৃঃ ১৭০; ইবনু হিশাম ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার বলেছেন। টীকাকার সুহায়লী বলেন, বলা হয়েছে যে, এটি ছিল ৮ই রবীউল আউয়াল। যেমন বলা হয়েছে, তিনি গুহা থেকে রওয়ানা হয়েছিলেন ১লা রবীউল আউয়াল সোমবার (ইবনু হিশাম ১/৪৯২, টীকা-৪)। ছহীহ মুসলিমে ‘রাত্রি’র (فَقَدِمْنَا الْمَدِينَةَ لَيْلاً) কথা এসেছে (মুসলিম হা/২০০৯)। এর ব্যাখ্যায় ইবনু হাজার বলেন, তাঁরা রাত্রি শেষে অবতরণ করেন এবং দিনে শহরে প্রবেশ করেন (ফাৎহুল বারী হা/৩৯০৬-এর আলোচনা)। অর্থাৎ তিনি মক্কার ছওর গিরিগুহা থেকে সোমবারে প্রত্যুষে রওয়ানা দিয়ে পরবর্তী সোমবার দুপুরে ক্বোবায় পৌঁছেন মোট ৮ দিনে।
[2]. আর-রাহীক্ব পৃঃ ১৭১; তাহরীম ৬৬/৪, যাদুল মা‘আদ ৩/৫২।
[3]. ত্বাবারাণী হা/৯৯২২; ইবনু হিশাম ১/৪৯৩। সুহায়লী বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর মদীনা আগমনের অল্প কিছু দিনের মধ্যেই কুলছূম বিন হিদম মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আনছার ছাহাবীদের মধ্যে প্রথম মৃত্যু বরণকারী। তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন পরে মৃত্যুবরণ করেন আস‘আদ বিন যুরারাহ (ইবনু হিশাম ১/৪৯৩ টীকা-১); আল-ইছাবাহ ক্রমিক ৭৪৪৯।

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম জুম‘আ

ইয়াছরিবের উপকণ্ঠে পৌঁছে বনু সালেম বিন ‘আওফ গোত্রের ‘রানূনা’ (رَانُونَاء) উপত্যকায় তিনি ১ম জুম‘আর ছালাত আদায় করেন। যাতে একশত জন মুছল্লী শরীক হন।[1] এটাই ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর আদায়কৃত ইসলামের ইতিহাসে প্রথম জুম‘আ। কেননা হিজরতের পূর্বে মদীনার আনছারগণ আপোষে পরামর্শক্রমে ইহূদী ও নাছারাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিনের বিপরীতে নিজেদের জন্য একটি ইবাদতের দিন ধার্য করেন ও সেমতে আস‘আদ বিন যুরারাহ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে মদীনার বনু বায়াযাহ গোত্রের ‘নাক্বী‘উল খাযেমাত’ (نَقِيعُ الْخَضِمَاتِ) নামক স্থানের ‘নাবীত’ (هَزْمُ النَّبِيْتِ) সমতল ভূমিতে সর্বপ্রথম জুম‘আর ছালাত চালু হয়। যেখানে চল্লিশ জন মুছল্লী অংশগ্রহণ করেন।[2]

রাসূল (ছাঃ) এর ইয়াছরিব (মদিনায়) প্রবেশ

জুম‘আ পড়ে রাসূল (ছাঃ) পুনরায় যাত্রা করে দক্ষিণ দিক থেকে ইয়াছরিবে প্রবেশ করেন। এদিন ছিল ১২ই রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার (আর-রাহীক্ব ১৮৪ পৃঃ)। ইয়াছরিবের শত শত মানুষ তাকে প্রাণঢালা অভ্যর্থনা জানায়। বহু পুরুষ ও নারী বাড়ী-ঘরের ছাদের উপরে আরোহন করেন। এমনকি ছোট্ট শিশু-কিশোররা বলতে থাকে, هَذَا رَسُولُ اللهِ قَدْ جَاءَ (এই যে, আল্লাহর রাসূল এসে গেছেন (বুখারী হা/৪৯৪১ ‘তাফসীর’ অধ্যায়)। جَاءَ نَبِىُّ اللهِ، جَاءَ نَبِىُّ اللهِ (এই যে, আল্লাহর নবী এসে গেছেন (বুখারী হা/৩৯১১)। يَا مُحَمَّدُ يَا رَسُولَ اللهِ يَا مُحَمَّدُ يَا رَسُولَ اللهِ (হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রাসূল!-মুসলিম হা/২০০৯)। প্রত্যক্ষদর্শী ছাহাবী বারা বিন ‘আযেব আনছারী (রাঃ) বলেন, فَمَا رَأَيْتُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ فَرِحُوا بِشَىْءٍ فَرَحَهُمْ بِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‘রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনে আমি মদীনাবাসীকে যত খুশী হ’তে দেখেছি, এত খুশী তাদের কখনো হ’তে দেখিনি’ (বুখারী হা/৩৯২৫)। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ) ও আবুবকর (রাঃ)-এর আগমনের দিনের চেয়ে অধিক সুন্দর ও হাস্যোজ্জ্বল দিন আর কখনো দেখিনি।[3] আনন্দে উচ্ছ্বসিত মানুষ ঐদিন থেকে তাদের শহরের নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘মদীনাতুর রাসূল’ (রাসূলের শহর) বা সংক্ষেপে ‘মদীনা’।[4]

ইয়াছরিবে প্রবেশের পর প্রত্যেক বাড়ীওয়ালা তার বাড়ীতে রাসূল (ছাঃ)-কে মেহমান হিসাবে পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে উটের লাগাম ধরে টানতে থাকে। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) বলতে থাকেন, তোমরা ওকে ছাড়। কেননা সে আদেশপ্রাপ্ত’ (دَعُوهَا فَإِنَّهَا مَأْمُورَةٌ)। অতঃপর উষ্ট্রী নিজের গতিতে চলে বর্তমানের মসজিদে নববীর দরজার স্থানে গিয়ে বসে পড়ে। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) নামেননি। পরে উষ্ট্রী পুনরায় উঠে কিছু দূর গিয়ে আবার পূর্বের স্থানে ফিরে এসে বসে পড়ে। এটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর মাতুল গোষ্ঠী বনু নাজ্জারের মহললা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চেয়েছিলেন এখানে অবতরণ করে তার মাতুল বংশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে। আল্লাহ তার সে আশা পূরণ করে দেন। এখন বনু নাজ্জার গোত্রের লোকদের মধ্যে হিড়িক পড়ে গেল কে রাসূলকে আগে তার বাড়ীতে নিবে। আবু আইয়ূব আনছারী উষ্ট্রীর পিঠ থেকে পালান উঠিয়ে নিজ বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। ওদিকে আক্বাবাহর প্রথম বায়‘আতকারী আস‘আদ বিন যুরারাহ উটের লাগাম ধরে রইলেন। কেউ দাবী ছাড়তে চান না।[5]

[1]. ইবনু হিশাম ১/৪৯৪; আল-বিদায়াহ ২/২১১।
উল্লেখ্য যে, ইবনু ইসহাক এখানে পরপর দু’টি খুৎবা উল্লেখ করেছেন (ইবনু হিশাম ১/৫০০-০১; বায়হাক্বী দালায়েল ২/৫২৪-২৫; যাদুল মা‘আদ ১/৩৬২-৬৩ টীকাসহ)। বর্ণনা দু’টির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৫৩৬, ৫৩৭)। খুৎবা দু’টি বিভিন্ন পাঠ্য পুস্তকে এবং খুৎবার কিতাবসমূহে প্রচলিত আছে। কিন্তু তা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/১০৮২; আবুদাঊদ হা/১০৬৯ সনদ ‘হাসান’। ইবনু হিশাম ১/৪৩৫; যাদুল মা‘আদ ১/৩৬১; মির‘আত ৪/৪২০।
[3]. আহমাদ হা/১২২৫৬, সনদ ছহীহ। প্রসিদ্ধ আছে যে, এই সময় মদীনার ছোট ছোট মেয়েরা রাসূল (ছাঃ)-কে স্বাগত জানিয়ে নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ করে। বর্ণনাটির সনদ মু‘যাল বা যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৯৮)। কবিতাটি ছিল নিম্নরূপ:

طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا + مِنْ ثَنِيَّاتِ الْوَدَاع
وَجَبَ الشّكْرُ عَلَيْنَا + مَا دَعَا ِللهِ دَاعِ
أَيُّهَا الْمَبْعُوْثُ فِيْنَا + جِئْتَ بِالأَمْرِ الْمُطَاع

‘ছানিয়াতুল বিদা টিলা সমূহ হ’তে আমাদের উপরে পূর্ণচন্দ্র উদিত হয়েছে’। ‘আমাদের উপরে শুকরিয়া ওয়াজিব হয়েছে এজন্য যে, আহবানকারী (রাসূল) আল্লাহর জন্য (আমাদেরকে) আহবান করেছেন’। ‘হে আমাদের মধ্যে (আল্লাহর) প্রেরিত পুরুষ! আপনি এসেছেন অনুসরণীয় বিষয়বস্তু (ইসলাম) নিয়ে’ (আর-রাহীক্ব ১৭২, ৪৩৬ পৃঃ; আল-বিদায়াহ ৫/২৩)।

কবিতাটি প্রথম জীবনীকার মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক (৮৫-১৫১ হি.) উল্লেখ করেননি। পরবর্তীতে প্রায় সকল জীবনীকার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটি ছহীহ সনদে প্রমাণিত নয় (মা শা-‘আ ৮৭-৯০)। এ সময় মেয়েরা ‘দফ’ বাজিয়ে উক্ত গান গেয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে অভ্যর্থনা জানিয়ে ছিল বলে যা বর্ণিত হয়েছে, তা যঈফ (আলবানী, দিফা‘ আনিল হাদীছ ২৪ পৃঃ)।

‘ছানিয়াহ’ (ثَنِيَةٌ) অর্থ টিলা। মদীনার লোকেরা তাদের মেহমানদেরকে নিকটবর্তী এই টিলা পর্যন্ত এসে বিদায় জানাতো। এজন্য এই টিলা ‘ছানিয়াতুল বিদা’ বা বিদায় দানের টিলা নামে পরিচিত হয়। অধিকাংশ জীবনীকার এটিকে হিজরতকালে মদীনায় উপস্থিতির সময়ের ঘটনা বলেছেন। ইবনুল ক্বাইয়িম প্রমুখ বিদ্বানগণ এটিকে তাবূক অভিযান থেকে মদীনায় উপস্থিতির সময়ের ঘটনা বলেছেন। তারা বলেন, কোন কোন বর্ণনাকারী এটাকে হিজরতকালীন ঘটনা বলেছেন। এটি স্পষ্টভাবে ধারণা মাত্র। কেননা ‘ছানিয়াতুল বিদা’ হ’ল মদীনা থেকে শামমুখী রাস্তায়, মক্কা থেকে মদীনায় আগমনকারী ব্যক্তি তা দেখতে পাবে না। এটা কেবল ঐ ব্যক্তি অতিক্রম করবে, যে শাম থেকে মদীনায় আসবে (যাদুল মা‘আদ ৩/৪৮২)।

বায়হাক্বী বলেন, আমাদের বিদ্বানগণ এটিকে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকালীন সময়ের কথা বলেছেন, তাবূক থেকে ফেরার সময় নয়’ (আল-বিদায়াহ ৫/২৩)। জীবনীকার আলী আল-হালাবী (৯৭৫-১০৪৪ হি.) বলেন, ولا مانع من تعدد ذلك ‘এটি একাধিক বার হওয়ায় কোন বাধা নেই’ (সীরাহ হালাবিইয়াহ ৩/২০৪)। তাছাড়া ‘ছানিয়াহ’ বা টিলা দু’দিকে হওয়াটা অসম্ভব নয়। বস্ত্ততঃ এ ব্যাপারে প্রমাণিত সেটুকুই যা ছহীহ হাদীছ সমূহে উপরে বর্ণিত হয়েছে। যেখানে কবিতা পাঠের কথা নেই।

[4]. আর-রাহীক্ব ১৭২ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ২/৩০৯; বুখারী হা/১৮৭১; মুসলিম হা/১৩৮২।
[5]. আর-রাহীক্ব ১৭৩ পৃঃ; আল-বিদায়াহ ৩/২০২; যাদুল মা‘আদ ১/৯৯- টীকা; ইবনু হিশাম ১/৪৯৪। লোকদের সকলের দাবীর মুখে রাসূল (ছাঃ) তাদের বলেন, তোমরা উষ্ট্রীকে ছেড়ে দাও, সে আদেশপ্রাপ্ত’(خَلُّوا سَبِيلَهَا فَإِنَّهَا مَأْمُورَةٌ)। অতঃপর সে বর্তমান মসজিদে নববীর দরজার সামনে বসে পড়ে (ইবনু হিশাম ১/৪৯৫)। বর্ণনাটি যঈফ। তবে বহু সূত্রে এবং আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের সূত্রে আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের কারণে এটি ‘হাসান লিগায়রিহি’ স্তরে উন্নীত হয়েছে’ (সীরাহ ছহীহাহ ১/২১৯-টীকা)। অবশ্য তিনি যে সেখানেই অবতরণ করেছিলেন, তা মুসলিম (হা/২০৫৩ (১৭১) ও বুখারী (হা/৩৯১১) দ্বারা প্রমাণিত।

আবু আইয়ূবের বাড়ীতে রাসূলুল্লা ‘র (ছাঃ) অবতরণ

অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, কার বাড়ী নিকটে? আবু আইয়ূব বললেন, هَذِهِ دَارِى وَهَذَا بَابِى ‘এই তো আমার বাড়ী, এইতো আমার দরজা’। তখন রাসূল (ছাঃ) তার বাড়ীতে গেলেন। আবুবকরও তাঁর সাথে গেলেন। এই সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দো‘আ করেন, قُومَا عَلَى بَرَكَةِ اللهِ ‘আল্লাহর রহমতের উপরে তোমরা দু’জন (রাসূল ও আবুবকর) দাঁড়িয়ে যাও’ (বুখারী হা/৩৯১১)। এর মাধ্যমে তিনি সেখানে অবস্থান করার কথা ঘোষণা দেন। আবু আইয়ূবের বাড়ীটি ছিল দোতলা।

আবু আইয়ূব (রাঃ) বলেন, তিনি তাঁকে দোতলায় থাকতে অনুরোধ করেন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) বললেন, নীচতলাটাই সহজতর (السُّفْلُ أَرْفَقُ) হবে। ফলে আবু আইয়ূব দোতলায় এক পাশে থেকে রাত্রি যাপন করতে থাকেন। এক রাতে তিনি চিন্তা করলেন, রাসূল (ছাঃ) নীচে থাকবেন, আর আমরা তাঁর মাথার উপরে চলাফেরা করব, এটা কিভাবে সম্ভব? পরে তিনি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে নীচে রেখে আমরা মাথার উপরে থাকতে পারব না। তখন রাসূল (ছাঃ) দোতলায় উঠেন। আবু আইয়ূব (রাঃ) নীচ থেকে তাঁর জন্য খাবার রান্না করে উপরে পরিবেশন করতে থাকেন। খাওয়ার পর পাত্রে কিছু বাকী থাকলে আবু আইয়ূব ও তাঁর স্ত্রী তা (বরকতের আশায়) খেয়ে নিতেন’।[1]

[1]. মুসলিম হা/২০৫৩ (১৭১); ছহীহ মুসলিমের উক্ত বর্ণনার সঙ্গে ইবনু হিশামের বর্ণনায় কিছুটা গরমিল রয়েছে। কেননা সেখানে রাসূল (ছাঃ) নীচতলাতেই অবস্থান করেন’ বলা হয়েছে (ইবনু হিশাম ১/৪৯৮)।

নবী পরিবারের মদিনায় আগমন

কয়েক দিনের মধ্যেই নবীপত্নী হযরত সওদা বিনতে যাম‘আহ এবং নবীকন্যা উম্মে কুলছূম ও ফাতেমা এবং উসামা বিন যায়েদ ও তার মা রাসূল (ছাঃ)-এর মুক্তদাসী উম্মে আয়মন মদীনায় পৌঁছে যান। এদের সকলকে আব্দুল্লাহ বিন আবুবকর তার পারিবারিক কাফেলার সাথে নিয়ে এসেছিলেন। যাদের মধ্যে হযরত আয়েশাও ছিলেন। কেবল নবীকন্যা যয়নব তার স্বামী আবুল ‘আছের সঙ্গে রয়ে গেলেন। যিনি বদর যুদ্ধের পরে আসেন (ইবনু হিশাম ১/৪৯৮)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর জন্য গৃহ নির্মাণ

এই সময় মসজিদের পাশে মাটি ও পাথর দিয়ে রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর স্ত্রীদের জন্য নয়টি গৃহ নির্মাণ করা হয়। প্রত্যেকটি ছিল খেজুর পাতার ছাউনী। বাড়ীগুলির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আবু আইয়ূবের বাড়ী ছেড়ে সপরিবারে এখানে চলে আসেন। তিনি সেখানে সাত মাস ছিলেন’ (সীরাহ ছহীহাহ ১/২২০)। উল্লেখ্য যে, তাঁদের মৃত্যুর পর উক্ত গৃহসমূহ ভেঙ্গে মসজিদের মধ্যে শামিল করে নেওয়া হয়। খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের সময় (৬৫-৮৬ হিঃ/৬৮৫-৭০৫ খৃঃ) যখন উক্ত মর্মে নির্দেশনামা এসে পৌঁছে, তখন মদীনাবাসীগণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। যেমন তারা কেঁদেছিল রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর দিন (ইবনু হিশাম ১/৪৯৮ টীকা-২)।



******************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url