প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-২৩]




মদীনার আবহাওয়ায় মুহাজিরগণ অসুখে পড়েন

মদীনায় নতুন আবহাওয়ায় এসে মুহাজিরগণের অনেকে অসুখে পড়েন। আবুবকর (রাঃ) কঠিন জ্বরে কাতর হয়ে কবিতা পাঠ করেন,

كُلُّ امْرِئٍ مُصَبَّحٌ فِى أَهْلِهِ + وَالْمَوْتُ أَدْنَى مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ

‘প্রত্যেক মানুষকে তার পরিবারে ‘সুপ্রভাত’ বলে সম্ভাষণ জানানো হয়। অথচ মৃত্যু সর্বদা জুতার ফিতার চাইতে নিকটবর্তী’। বেলালও অনুরূপ বিলাপ করে কবিতা পাঠ করেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) এসব কথা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে তুলে ধরেন। তখন তিনি আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেন,

اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِينَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ، اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِى صَاعِنَا، وَفِى مُدِّنَا، وَصَحِّحْهَا لَنَا وَانْقُلْ حُمَّاهَا إِلَى الْجُحْفَةِ-

‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের নিকটে মদীনাকে প্রিয় করে দাও, যেমন মক্কা আমাদের প্রিয় ছিল; বরং তার চাইতে বেশী। এখানকার খাদ্য-শস্যে বরকত দাও এবং মদীনাকে স্বাস্থ্যকর করে দাও এবং এর জ্বরসমূহকে (দূরে) জোহফায় সরিয়ে দাও’।[1] ফলে আল্লাহর ইচ্ছায় মদীনার অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরী হয়।

[1]. বুখারী হা/১৮৮৯, ৫৬৭৭।

মদিনায় আনছারগণের অপূর্ব ত্যাগ

আল্লাহপাক ঈমানের বরকতে আনছারগণের মধ্যে এমন মহববত সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে, মুহাজিরগণকে ভাই হিসাবে পাওয়ার জন্য প্রত্যেকে লালায়িত ছিলেন। যদিও তাদের মধ্যে সচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু তারা ছিলেন ঈমানী প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা। সবাই মুহাজিরগণকে স্ব স্ব পরিবারে পেতে চান। ফলে মুহাজিরগণকে আনছারদের সাথে ভাই ভাই হিসাবে ঈমানী বন্ধনে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। তারা তাদের জমি, ব্যবসা ও বাড়ীতে তাদেরকে অংশীদার করে নেন। এমনকি যাদের দু’জন স্ত্রী ছিল, তারা একজনকে তালাক দিয়ে স্ত্রীহারা মুহাজির ভাইকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। রাসূল (ছাঃ) ও মুহাজিরগণের প্রতি এইরূপ অকুণ্ঠ সহযোগিতার জন্য তাঁরা ইতিহাসে ‘আনছার’ (সাহায্যকারী) নামে অভিহিত হয়েছেন।[1] যাদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন,

وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلاَ يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

‘আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা এই নগরীতে (মদীনায়) বসবাস করেছে ও ঈমান এনেছে, তারা (আনছাররা) তাদেরকে (মুহাজিরদেরকে) ভালবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে কোনরূপ আকাংখা পোষণ করে না। আর তারা তাদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়, যদিও তারা নিজেরা ছিল অভাবগ্রস্ত। বস্ত্ততঃ যারা মনের সংকীর্ণতা হ’তে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারে, তারাই হ’ল সফলকাম’ (হাশর ৫৯/৯)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের প্রশংসায় বলেন, لَوْلاَ الْهِجْرَةُ لَكُنْتُ امْرَأً مِنَ الأَنْصَارِ ‘যদি হিজরতের বিষয়টি না থাকত, তাহলে আমি আনছারদের একজন হিসাবে গণ্য হতাম’ (বুখারী হা/৭২৪৫)।لَوْ سَلَكَتِ الأَنْصَارُ وَادِيًا أَوْ شِعْبًا، لَسَلَكْتُ وَادِىَ الأَنْصَارِ أَوْ شِعْبَهُمْ ‘যদি আনছারগণ কোন উপত্যকা বা ঘাঁটিতে অবতরণ করে, তাহলে আমিও তাদের সেই উপত্যকা বা ঘাঁটিতে অবতরণ করব’ (বুখারী হা/৩৭৭৮)। আর হিজরতকারী ও সাহায্যকারী উভয়দলের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ‘মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী ও প্রথম দিককার এবং (পরবর্তীতে) যারা তাদের অনুসরণ করেছে নিষ্ঠার সাথে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হ’ল মহা সফলতা’ (তওবাহ ৯/১০০)।
[বিস্তারিত ‘মাদানী জীবন’-এর ‘আনছার ও মুহাজিরগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন’ অনুচ্ছেদ দ্রষ্টব্য]।

[1]. আজকাল অনেক বাঙ্গালী মুসলমানকে তাদের নামের শেষে ‘কুরায়শী’ ও ‘আনছারী’ লিখতে দেখা যায়। অথচ এ লকব স্রেফ কুরায়েশ বংশীয়দের জন্য এবং মদীনার আনছারদের জন্য খাছ। অন্যদের জন্য নয়। এখন এসব ‘লকব’ ব্যবহার করা স্রেফ রিয়া ও অহংকারের পর্যায়ভুক্ত হবে। যাকে হাদীছে ‘জাহেলিয়াতের অহংকার’ (عُبِّيَّةُ الْجَاهِلِيَّةِ) বলা হয়েছে (তিরমিযী হা/৩৯৫৫; মিশকাত হা/৪৮৯৯)। এগুলিকে রাসূল (ছাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন পায়ের তলে (كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوعٌ) পিষ্ট করেছেন’ (মুসলিম হা/১২১৮)। উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الأَئِمَّةُ مِنْ قُرَيْشٍ ‘নেতা হবে কুরায়েশদের মধ্য হতে’ (ছহীহুল জামে‘ হা/২৭৫৭)। এটি ছিল সে সময় খলীফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে, (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নয় (ইরওয়া হা/৫২০-এর আলোচনা)। উক্ত হাদীছ দ্বারা সে সময় মদীনার মুহাজির কুরায়েশ নেতা আবুবকর, ওমর প্রমুখদের বুঝানো হয়েছিল। সাধারণ কুরায়েশদের নয়। কেননা আবু জাহল-আবু লাহাবরাও কুরায়েশ নেতা ছিলেন। কিন্তু তারা মুসলমানদের নেতা ছিলেন না। অতএব এসব লকব থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

হিজরতের গুরুত্ব

(১) বিশ্বাসগত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোন বিধান প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। সেকারণ সার্বিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যখন মক্কায় সেরূপ পরিবেশ তৈরী হয়নি, তখন ইয়াছরিবে পরিবেশ তৈরী হওয়ায় সেখানে হিজরতের নির্দেশ আসে। সেকারণ হিজরত ছিল ইসলামের ইতিহাসে মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা।

(২) ঈমানী বন্ধন দুনিয়াবী বন্ধনের চাইতে অনেক বেশী শক্তিশালী। যেমন রক্তের বন্ধন হিসাবে চাচা আবু তালেব-এর নেতৃত্বে বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সার্বিক সহযোগিতা করলেও তা টেকসই হয়নি। অবশেষে ঈমানী বন্ধনের আকর্ষণে রাসূল (ছাঃ)-কে সুদূর ইয়াছরিবে হিজরত করতে হয় এবং সেখানে গিয়ে তিনি নতুন ঈমানী সমাজের গোড়াপত্তন করেন।

(৩) জনমত গঠন হ’ল ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার আবশ্যিক পূর্বশর্ত। তাই মক্কার জনমত বিরুদ্ধে থাকায় আল্লাহর রাসূলকে মদীনায় হিজরত করতে হয়। অতঃপর অনুকূল জনমতের কারণে শত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও মুনাফেকীর মধ্য দিয়েও তিনি সেখানে ইসলামী খেলাফত কায়েমে সক্ষম হন। আজও তা সম্ভব, যদি নবীগণের তরীকায় আমরা পরিচালিত হই।

(৪) হিজরত হয়েছিল বলেই ইসলামী বিধানসমূহের প্রতিষ্ঠা দান সম্ভব হয়েছিল। এমনকি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে ছিয়াম, যাকাত ও হজ্জ তিনটিই ফরয হয়েছিল মদীনায় হিজরতের পর।

(৫) ইসলামের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিধান সমূহ মদীনায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যা হিজরতের কারণেই সম্ভব হয়েছিল।

(৬) ওমর (রাঃ) হিজরতকে ‘হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী’ বলে আখ্যায়িত করেন। অতঃপর এর গুরুত্বকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য স্বীয় খেলাফতকালে হিজরী বর্ষ গণনার নিয়ম জারি করেন। যা আজও অব্যাহত রয়েছে।

মদীনায় হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দো‘আ করেন, اللهُمَّ أَمْضِ لأَصْحَابِى هِجْرَتَهُمْ، وَلاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ছাহাবীদের হিজরত জারী রাখ এবং তাদেরকে পিছনে ফিরিয়ে দিয়ো না’ (বুখারী হা/১২৯৫)। ফলে মুহাজিরগণ নতুন পরিবেশে নানা অসুবিধা সত্ত্বেও সেটাকে মেনে নেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের হেফাযত ও দাওয়াতের স্বার্থে মুমিনের জন্য হিজরত করা ওয়াজিব। মাওয়ার্দী বলেন, কাফিরের দেশে যদি দ্বীনের দাওয়াত বাধাহীন হয় এবং কোন ফিৎনার আশংকা না থাকে, তবে তাদের সেখানেই থাকা উত্তম হবে হিজরত করার চাইতে। কেননা তাতে অন্যদের ইসলাম কবুলের সম্ভাবনা থাকে’।[1]

[1]. বুখারী ফাৎহসহ হা/৩৯০০-এর আলোচনা।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
(১) স্রেফ দ্বীন বাঁচানোর স্বার্থে হিজরত করাই হ’ল প্রকৃত হিজরত।

(২) রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থ হাছিলের উদ্দেশ্যে উক্ত হিজরত প্রকৃত হিজরত নয় এবং সে উদ্দেশ্যে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করেননি।

(৩) যাবতীয় দুনিয়াবী কৌশল ও উপায়-উপাদান ব্যবহার করার পরেই কেবল আল্লাহর বিশেষ রহমত নেমে আসে, যদি উদ্দেশ্য স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা হয়। হিজরতের পথে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে যেসব গায়েবী মদদ এসেছিল, সেগুলি আল্লাহর সেই বিশেষ রহমতেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

হিজরী সনের প্রবর্তন

ওমর ফারূক (রাঃ) স্বীয় খেলাফতকালে (১৩-২৩ হিঃ) হিজরী সন প্রবর্তন করেন এবং রবীউল আউয়াল মাসের বদলে মুহাররম মাসকে ১ম মাস হিসাবে নির্ধারণ করেন। কারণ হজ্জ পালন শেষে মুহাররম মাসে সবাই দেশে ফিরে যায়। তাছাড়া যিলহাজ্জ মাসে বায়‘আতে কুবরা সম্পন্ন হওয়ার পর মুহাররম মাসে হিজরতের সংকল্প করা হয়।

ঘটনা ছিল এই যে, আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) খলীফা ওমর (রাঃ)-কে লেখেন যে, আপনি আমাদের নিকটে যেসব চিঠি পাঠান তাতে কোন তারিখ থাকে না। যাতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তখন ওমর (রাঃ) পরামর্শ সভা ডাকেন। সেখানে তিনি হিজরতকে হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী বলে আখ্যায়িত করেন এবং মুহাররম মাস থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব করেন। বিস্তারিত আলোচনার পর সকলে তা মেনে নেন। ঘটনাটি ছিল ১৭ হিজরী সনে।[1]

[1]. বুখারী ফৎহসহ হা/৩৯৩৪-এর আলোচনা; সীরাহ ছহীহাহ ১/২২৩।

মাক্কী জীবন থেকে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ

(১) কা‘বাগৃহ ও মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণকারী কুরায়েশ নেতার গৃহে জন্মগ্রহণকারী বিশ্বনবীকে তার বংশের লোকেরাই নবী হিসাবে মেনে নেননি। কারণ তারা এর মধ্যে তাদের নেতৃত্বের অবসান ও দুনিয়াবী স্বার্থের ক্ষতি বুঝতে পেরেছিলেন। সেকারণ আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয়েও তারা মুমিন হ’তে পারেননি’ (বাক্বারাহ ২/৮)।

(২) নবী বংশের লোক হওয়া, আল্লাহর ঘর তৈরী করা ও তার সেবক হওয়া পরকালীন মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। বরং সার্বিক জীবনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা এবং আল্লাহর বিধান মেনে চলা ও তা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোই হ’ল আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার পূর্বশর্ত’ (তওবাহ ৯/১৯-২০)।

(৩) আক্বীদায় পরিবর্তন না আনা পর্যন্ত সমাজের কোন মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। যেমন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নবী হওয়ার পূর্বে তরুণ বয়সে ‘হিলফুল ফুযূল’ নামক ‘কল্যাণ সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন ও তাঁর সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য সকলের প্রশংসাভাজন হন। তিনি ‘আল-আমীন’ উপাধিতে ভূষিত হন। কিন্তু তাতে সার্বিকভাবে সমাজের ও নেতৃত্বের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি।

(৪) সমাজের সত্যিকারের কল্যাণকামী ব্যক্তি নিজের চিন্তায় ও প্রচেষ্টায় যখন কোন কুল-কিনারা করতে পারেন না, তখন তিনি আল্লাহর নিকটে হেদায়াত প্রার্থনা করেন ও নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তাঁর উপরে সমর্পণ করে দেন। অতঃপর আল্লাহর দেখানো পথেই তিনি অগ্রসর হন। হেরা গুহায় দিন-রাত আল্লাহর সাহায্য কামনায় রত মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহর মধ্যে আমরা সেই নিদর্শন দেখতে পাই। বর্তমান যুগে আর ‘অহি’ নাযিল হবে না। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া কুরআন ও সুন্নাহ মুমিনকে সর্বদা জান্নাতের পথ দেখাবে।

(৫) রক্ত, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল প্রভৃতি জাতি গঠনের অন্যতম উপাদান হ’লেও মূল উপাদান নয়। বরং ধর্মবিশ্বাস হ’ল জাতি গঠনের মূল উপাদান। আর সেকারণেই একই বংশের হওয়া সত্ত্বেও আবু লাহাব ও আবু জাহল হয়েছিল রাসূল (ছাঃ)-এর রক্তপিপাসু দুশমন। অথচ ভিনদেশী ও ভিন রক্ত-বর্ণ ও অঞ্চলের লোক হওয়া সত্ত্বেও ছুহায়েব রূমী ও বেলাল হাবশী হয়েছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর বন্ধু। সেকারণ মযবুত সংগঠনে ও জাতি গঠনে আক্বীদাই হ’ল সবচেয়ে বড় উপাদান।

(৬) আল্লাহর পথের পথিকগণ শত নির্যাতনেও আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হন না। জান্নাতের বিনিময়ে তারা দুনিয়াবী কষ্ট ও দুঃখকে তুচ্ছ জ্ঞান করেন। মক্কার নির্যাতিত অসহায় মুসলমানদের অবস্থা বিশেষ করে বেলাল, খাববাব ও ইয়াসির পরিবারের লোমহর্ষক নির্যাতনের কাহিনী যেকোন মানুষকে তাড়িত করে।

(৭) ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ নেতৃবৃন্দ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপর ভরসা করেন এবং ইসলামের স্বার্থে প্রয়োজন বোধ করলে আল্লাহ তাদের রক্ষা করেন। যেমন হিজরতের পথে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে রক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, মুমিনদের রক্ষা করাই তাঁর কর্তব্য’ (রূম ৩০/৪৭; ইউনুস ১০/১০৩)।

(৮) কায়েমী স্বার্থবাদী নেতৃত্ব কখনোই সংস্কারের বাণীকে সহ্য করতে পারে না। তারা অহংকারে ফেটে পড়ে এবং নিজেদের চালু করা মনগড়া রীতি-নীতির উপরে যিদ ও হঠকারিতা করে’ (বাক্বারাহ ২/২০৬)। যেমন ইতিপূর্বে মূসার বিরুদ্ধে ফেরাঊন তার লোকদের বলেছিল, ‘আমি তোমাদেরকে কেবল কল্যাণের পথই দেখিয়ে থাকি’ (মুমিন/গাফের ৪০/২৯)। অথচ তা ছিল জাহান্নামের পথ এবং মূসার পথ ছিল জান্নাতের পথ।


****************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url