প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-২৪]





রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মাদানী জীবন শুরু এবং ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার উত্থান


রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মাদানী জীবনকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে।

এক. ১ম হিজরী সনের ১২ই রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে সেপ্টেম্বর সোমবার হ’তে ৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসে অনুষ্ঠিত হোদায়বিয়ার সন্ধি পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর। এই সময় কাফের ও মুনাফিকদের মাধ্যমে ভিতরে ও বাইরের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও সশস্ত্র হামলা সমূহ সংঘটিত হয়। ইসলামকে সমূলে উৎপাটিত করার জন্য এ সময়ের মধ্যে সর্বমোট ৫০টি ছোট-বড় যুদ্ধ ও অভিযান সমূহ পরিচালিত হয়।

দুই. মক্কার মুশরিকদের সাথে সন্ধি চলাকালীন সময়। যার মেয়াদকাল ৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বা‘দাহ হ’তে ৮ম হিজরীর রামাযান মাসে মক্কা বিজয় পর্যন্ত প্রায় দু’বছর। এই সময়ে প্রধানতঃ ইহূদী ও তাদের মিত্রদের সাথে বড়-ছোট ২২টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

তিন. ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর হ’তে ১১ হিজরীতে রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় তিন বছর। এই সময়ে দলে দলে লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে। চারদিক থেকে গোত্রনেতারা প্রতিনিধিদল নিয়ে মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদেশী রাজন্যবর্গের নিকটে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে দূত মারফত পত্র প্রেরণ করেন। এ সময় হোবল, লাত, মানাত, ‘উযযা, সুওয়া‘ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ মূর্তিগুলি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সময়ে হোনায়েন যুদ্ধ এবং রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে তাবূক যুদ্ধে গমন ও সর্বশেষ সারিইয়া উসামা প্রেরণ সহ মোট ১৮টি মিলে মাদানী জীবনের ১০ বছরে ছোট-বড় প্রায় ৯০টি যুদ্ধ ও অভিযানসমূহ পরিচালিত হয়। অবশেষে সব বাধা অতিক্রম করে ইসলাম রাষ্ট্রীয় রূপ পরিগ্রহ করে এবং তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি সমূহকে চ্যালেঞ্জ করে টিকে থাকার মত শক্তিশালী অবস্থানে উপনীত হয়।

এক্ষণে আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হিজরত কালীন সময়ে মদীনার সামাজিক অবস্থা ও সে প্রেক্ষিতে রাসূল (ছাঃ)-এর গৃহীত কার্যক্রমসমূহ একে একে আলোচনা করব।

মদীনার তৎকালীন সামাজিক অবস্থা

খ্রিষ্টীয় ৭০ সালে প্রথমবার এবং ১৩২-৩৫ সালে দ্বিতীয়বার খ্রিষ্টান রোমকদের হামলায় বায়তুল মুক্বাদ্দাস অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হয়ে ইহূদীরা ইয়াছরিব ও হিজায অঞ্চলে হিজরত করে (সীরাহ ছহীহাহ ১/২২৭)। মিষ্ট পানি, উর্বর অঞ্চল এবং শামের দিকে ব্যবসায়ী পথের গুরুত্বের কারণে ইহূদী বনু নাযীর ও বনু কুরায়যা গোত্রদ্বয় ইয়াছরিবের পূর্ব অংশ হাররাহ (حَرَّة) এলাকায় বসতি স্থাপন করে। তাদের অপর গোত্র বনু ক্বায়নুক্বা ইয়াছরিবের নিম্নভূমিতে বসতি স্থাপন করে। বনু ক্বায়নুক্বার শাখা গোত্রসমূহের আরবী নাম দেখে তাদেরকে আরব থেকে ধর্মান্তরিত ইহূদী বলে ঐতিহাসিকগণের অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। যেমন বনু ইকরিমা, বনু মু‘আবিয়া, বনু ‘আওফ, বনু ছা‘লাবাহ প্রভৃতি নাম সমূহ। উপরোক্ত তিনটি প্রধান গোত্র ছাড়াও ছোট ছোট বিশটির অধিক ইহূদী শাখা গোত্রসমূহ ইয়াছরিবের বিভিন্ন অঞ্চলে এ সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।

অন্যদিকে আউস ও খাযরাজ, যারা ইসমাঈল-পুত্র নাবেত (نَابِت)-এর বংশধর ছিল এবং ইয়ামনের আযদ (الْأَزْدُ) গোত্রের দিকে সম্পর্কিত ছিল, তারা খ্রিষ্টীয় ২০৭ সালের দিকে ইয়ামন থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন সময়ে ইয়াছরিবে হিজরত করে। সেখানে পূর্ব থেকেই অবস্থানরত ইহূদীরা তাদেরকে ইয়াছরিবের অনুর্বর ও পরিত্যক্ত এলাকায় বসবাস করতে বাধ্য করে। আউসরা বনু নাযীর ও বনু কুরায়যার প্রতিবেশী হয় এবং খাযরাজরা বনু ক্বায়নুক্বার প্রতিবেশী হয়। আউসদের এলাকা খাযরাজদের এলাকার চাইতে অধিকতর উর্বর ছিল। ফলে তাদের মধ্যে নিয়মিত হানাহানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের এটাও একটা কারণ ছিল। ইহূদীরা উভয় গোত্রের উপর কর্তৃত্ব করত। তারা উভয় দলের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দিত। আবার উভয় দলের মধ্যে সন্ধি করে দিত। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে বড় ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছিল হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে সংঘটিত বু‘আছ যুদ্ধ। যাতে আউসরা খাযরাজদের উপর জয়লাভ করে। কিন্তু উভয় গোত্র সর্বদা পুনরায় পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধের আশংকা করত। ফলে তারা নিজেদের মধ্যে মৈত্রী স্থাপন করে এবং উভয় গোত্রের ঐক্যমতে আব্দুল্লাহ বিন উবাই খাযরাজীকে তাদের নেতা নির্বাচন করে। এমতাবস্থায় আখেরী নবীর শুভাগমনে তারা উৎফুল্ল হয় এবং নিজেদের মধ্যকার সব তিক্ততা ভুলে শেষনবী (ছাঃ)-কে স্বাগত জানাবার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। যেমন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, বু‘আছ যুদ্ধের দিনটিকে আল্লাহ তাঁর রাসূলের আগমনের এবং ‘ইয়াছরিব বাসীদের ইসলামে প্রবেশের অগ্রিম দিবস’ (يَوْمًا قَدَّمَهُ اللهُ لِرَسُولِهِ صـ فِى دُخُولِهِمْ فِى الإِسْلاَمِ) হিসাবে নির্ধারণ করেছিলেন।[1]

উল্লেখ্য যে, আউস ও খাযরাজ ছিলেন আপন দুই ভাই এবং ইসমাঈল-পুত্র নাবেত-এর বংশধর। যারা উত্তর হেজায শাসন করতেন। কিন্তু মালেক বিন ‘আজলান খাযরাজীর গোলাম হুর বিন সুমাইরকে হত্যার কারণে তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। যা প্রায় ১২০ বছর যাবৎ চলে। পরে তারা ইয়াছরিবে হিজরত করেন। সেখানে তাদের মধ্যে সর্বশেষ বু‘আছ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যার পাঁচ বছর পর রাসূল (ছাঃ)-এর হিজরতের মাধ্যমে ইসলামের বরকতে উভয় দলের মধ্যে দীর্ঘকালীন যুদ্ধের আগুন নির্বাপিত হয় এবং তারা পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে যায়। যে বিষয়ে সূরা আলে ইমরান ১০৩ আয়াত নাযিল হয় (তাফসীর ত্বাবারী হা/১৪৭৩, ৭৫৮৯; তাফসীর ইবনু কাছীর)।

২০৭ খ্রিষ্টাব্দে একই সময় বনু খোযা‘আহ গোত্র ইয়ামন থেকে হিজরত করে মক্কার নিকটবর্তী মার্রুয যাহরানে বসতি স্থাপন করে। যারা পরবর্তীকালে মক্কার শাসন ক্ষমতা লাভ করে এবং দীর্ঘদিন উক্ত ক্ষমতায় থাকে। অবশেষে তাদের জামাতা কুরায়েশ নেতা কুছাই বিন কিলাব মক্কার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন। জামাতার বংশ হিসাবে বনু খোযা‘আহ সর্বদা বনু হাশেমকে সহযোগিতা করেছে। যা মক্কা বিজয় ও তার পরবর্তীকালেও অব্যাহত ছিল।[2]

মক্কা ও মদীনার সামাজিক অবস্থার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য ছিল এই যে, মক্কার সমাজ ব্যবস্থাপনায় কুরায়েশদের একক প্রভুত্ব ছিল। ধর্মীয় দিক দিয়ে তাদের অধিকাংশ মূর্তিপূজারী ছিল। যদিও সবাই আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী ছিল। হজ্জ ও ওমরাহ করত। ইবরাহীম (আঃ)-এর দ্বীনের উপরে কায়েম আছে বলে তারা নিজেদেরকে ‘হানীফ’ (حَنِيْفٌ) বা ‘আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ’ বলে দাবী করত। বিগত নেককার লোকদের মূর্তির অসীলায় তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করত। এই অসীলাপূজার কারণেই তারা মুশরিক জাতিতে পরিণত হয়েছিল এবং তাদের রক্ত হালাল গণ্য হয়েছিল। তারাও রাসূল (ছাঃ)-এর প্রচারিত নির্ভেজাল তাওহীদকে তাদের কপট ধর্ম বিশ্বাস ও দুনিয়াবী স্বার্থের বিরোধী সাব্যস্ত করে রাসূল (ছাঃ)-এর ও মুসলমানদের রক্তকে হালাল গণ্য করেছিল। মক্কায় মুসলমানরা ছিল দুর্বল ও মযলূম এবং বিরোধী কুরায়েশ নেতারা ছিল প্রবল ও পরাক্রমশালী।

পক্ষান্তরে মদীনায় সমাজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কারু একক নেতৃত্ব ছিল না। ধর্মীয় দিক দিয়েও তারা এক ছিল না বা বংশধারার দিক দিয়েও এক ছিল না। সর্বশেষ বু‘আছের যুদ্ধে বিপর্যস্ত আউস ও খাযরাজ প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করেন। এর দ্বারা মদীনাবাসীদের আন্তরিক কামনা ছিল যে, তাঁর আগমনের মাধ্যমে তাদের মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান ঘটবে। ফলে এখানে রাসূল (ছাঃ) ও মুহাজিরগণ ছিলেন শুরু থেকেই কর্তৃত্বের অধিকারী।

[1]. বুখারী হা/৩৭৭৭; সীরাহ ছহীহাহ ১/২২৭-৩১।
[2]. ইবনু হিশাম ১/৯১, ১১৭; সীরাহ ছহীহাহ ১/২২৯।

মদীনার তৎকালীন দল ও উপদলসমূহ

হিজরতকালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়াছরিবে মূলতঃ দু’দল লোক বসবাস করত। একদল ছিল ইয়াছরিবের পৌত্তলিক মুশরিক সম্প্রদায়। যারা প্রধানতঃ আউস ও খাযরাজ দু’গোত্রে বিভক্ত ছিল। আউসদের নেতা ছিলেন সা‘দ বিন মু‘আয ও খাযরাজদের নেতা ছিলেন সা‘দ বিন ওবাদাহ। মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ বিন উবাই ইবনে সুলূল ছিলেন খাযরাজ গোত্রভুক্ত। এরা ছিল বিশুদ্ধ আরবী ভাষী। রাসূল (ছাঃ)-এর দাদার মাতুল গোষ্ঠী বনু নাজ্জারও ছিল এই গোত্রভুক্ত।

দ্বিতীয় ছিল ইহূদী সম্প্রদায়। খ্রিষ্টানরা যাদেরকে ফিলিস্তীন ও সিরিয়া অঞ্চল থেকে উৎখাত করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের উপর দখল কায়েম করেছিল। ইহূদীরা শেষনবীর আগমনের অপেক্ষায় এবং তাঁর নেতৃত্বে তাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের আশায় ইয়াছরিবে হিজরত করে এসেছিল বহুদিন পূর্বে। এরা ছিল হিব্রুভাষী। কিন্তু পরে আরবীভাষী হয়। এদের প্রধান তিনটি গোত্র বনু ক্বায়নুক্বা‘, বনু নাযীর ও বনু কুরায়যা মদীনার উপকণ্ঠে তাদের তৈরী স্ব স্ব দুর্ভেদ্য দুর্গসমূহে বসবাস করত। দক্ষ ব্যবসায়ী ও সূদী কারবারী হওয়ার কারণে এরা ছিল সর্বাধিক সচ্ছল। চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও কূট কৌশলের মাধ্যমে এরা আউস ও খাযরাজের মধ্যে সর্বদা যুদ্ধাবস্থা জিইয়ে রাখতো এবং ‘বিভক্ত কর ও শাসন কর’ নীতির মাধ্যমে উভয় গোত্রের উপরে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতো। এই সূক্ষ্ম পলিসির কারণে তাদের বনু ক্বায়নুক্বা‘ গোষ্ঠী খাযরাজদের মিত্র ছিল এবং বনু নাযীর ও বনু কুরায়যা গোষ্ঠী আউসদের মিত্র ছিল। আসলে তারা উভয়েরই শত্রু ছিল। তাদেরকে তারা সূদী কারবার ও অস্ত্র ব্যবসার ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করত। তারা এভাবে আরবদের শোষণ করত। এজন্য তাদের মূর্খতার প্রতি তাচ্ছিল্য করে তারা বলত, لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الأُمِّيِّيْنَ سَبِيْلٌ ‘মূর্খদের ব্যাপারে আমাদের কোন দায়িত্ব নেই’ (আলে ইমরান ৩/৭৫)। অর্থাৎ মূর্খদের সম্পদ হরণ করায় ও তাদের অধিকার নষ্ট করায় আমাদের কোন পাপ নেই। সেই সময় ইয়াছরিবে পৌত্তলিক ও ইহূদীদের বাইরে কিছু সংখ্যক খ্রিষ্টানও বসবাস করত। যারা ইহূদীদের ন্যায় ইয়াছরিবে হিজরত করে এসেছিল শেষনবীর আগমন প্রত্যাশায়।

বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তিগুলি গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের শ্লোগানের আড়ালে উন্নয়নশীল ও বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে তাদের শোষণ-নির্যাতন, সূদী কারবার ও অস্ত্র ব্যবসা পূর্বের ন্যায় বজায় রেখে চলেছে। মুসলমানদের সম্পদ হরণ করায় ও তাদের অধিকার বিনষ্ট করায় কোন পাপ নেই বলে আজও তাদের আচরণে প্রমাণ পাওয়া যায়। ভূগর্ভের তৈল লুট করার জন্য তারা ভূপৃষ্ঠের মানুষের রক্ত পান করছে গোগ্রাসে। কিন্তু এই রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারদের রক্ত নেশা মিটছে না মোটেই। এজন্যেই এরা ‘মাগযূব’ (অভিশপ্ত) ও ‘যোওয়াল্লীন’ (পথভ্রষ্ট) বলে কুরআনে অভিহিত হয়েছে।[1]

ইহূদীরা ভেবেছিল, শেষনবী হযরত ইসহাকের বংশে হবেন এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের প্রতি অত্যাচারের প্রতিশোধ নেবেন। তারা ইয়াছরিবের লোকদের হুমকি দিত এই বলে যে, سَيَخْرُجُ نَبِىُّ آخِرِ الزَّمَانِ فَنَتَّبِعُهُ وَنَقْتُلُكُمْ مَعَهُ قَتْلَ عَادٍ وَإِرَمَ ‘আখেরী যামানার নবী সত্বর আগমন করবেন। আমরা তাঁর অনুসারী হব এবং তোমাদের হত্যা করব (বিগত ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি) ‘আদ ও ইরামের ন্যায়’।[2] কিন্তু হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশে শেষনবীর আগমন ঘটায় এবং তিনি হযরত মূসা ও ঈসা (আঃ) উভয়ের সত্যায়ন করায় ইহূদীরা তাঁর শত্রু হয়ে যায়।

পক্ষান্তরে তৃতীয় দল খ্রিষ্টানরা ভেবেছিল যে, শেষনবী এসে তাদের লালিত বিশ্বাস অনুযায়ী কথিত ত্রিত্ববাদ, ঈসার পুত্রত্ববাদ, প্রায়শ্চিত্ববাদ, সন্ন্যাসবাদ ও পোপের ঐশী নেতৃত্ববাদ সমর্থন করবেন। কিন্তু এসবের বিপরীত হওয়ায় তারাও রাসূল (ছাঃ)-এর বিরোধী হয়ে গেল। উল্লেখ্য যে, ইহূদী ও নাছারা কারু মধ্যে তাদের ধর্ম প্রচারের ব্যাপারে কোনরূপ সংগ্রামী চেতনা ছিল না। ধর্মের প্রতিপাদ্য তাদের মধ্যে যা লক্ষ্য করা যেত, সেটা ছিল কেবল জাদু-টোনা, ঝাড়-ফুঁক, শুভাশুভ লক্ষণ নির্ধারণ ও অনুরূপ কিছু ক্রিয়া-কর্ম। এ সকল কাজের জন্যই তারা নিজেদেরকে জ্ঞানী-গুণী এবং আধ্যাত্মিক গুরু ও নেতা মনে করত।

চতুর্থ আরেকটি উপদল গড়ে উঠেছিল খাযরাজ গোত্রের আব্দুল্লাহ বিন উবাই ইবনে সুলূলের নেতৃত্বে। বু‘আছ যুদ্ধের পর আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্র মিলে তাকে নেতা নির্বাচিত করে। এজন্য তারা বহু মূল্যবান রাজমুকুট তৈরী করে এবং এই প্রথমবারের মত উভয় গোত্র একত্রিত হয়ে তাকে রাজ আসনে বসাতে যাচ্ছিল। এমনি সময়ে রাসূল (ছাঃ)-এর আগমন ঘটে এবং উভয় গোত্র তাকে ছেড়ে রাসূল (ছাঃ)-কে নেতারূপে বরণ করে। এতে আব্দুল্লাহ ও তার অনুসারীরা মনে মনে ক্ষুব্ধ হয় এবং তাদের সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে। কিন্তু অবস্থা অনুকূল না দেখে তারা চুপ থাকে এবং বছর দেড়েক পরে বদর যুদ্ধের পর হতাশ হয়ে অবশেষে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইসলাম কবুলের ঘোষণা দেয়। তবে আদি বাসিন্দা আউস ও খাযরাজদের অনেকে পূর্বেই ইসলাম কবুল করায় এবং তারাই রাসূল (ছাঃ)-কে ও মুহাজিরগণকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আশ্রয় দেওয়ায় অন্যেরা সবাই চুপ থাকে এবং ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় রাসূল (ছাঃ)-এর নেতৃত্ব মেনে নেয়।

উপরোক্ত চারটি দল তথা (১) পৌত্তলিক আউস ও খাযরাজ (২) ইহূদী। বনু ক্বায়নুক্বা, বনু নাযীর ও বনু কুরায়যা। (৩) নাছারা। যারা প্রধানতঃ নাবিত্ব বাজার(سوق النبط) এলাকায় বসবাস করত। তবে সমাজে তাদের তেমন কোন প্রভাব ছিল না। (৪) খাযরাজ গোত্রের আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের গ্রুপ। যারা গোপন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে সর্বদা তৎপর ছিল।

এতদ্ব্যতীত (৫) মুহাজির মুসলমানদের নানাবিধ সমস্যা মুকাবিলা করা রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য বলতে গেলে জ্বলন্ত সমস্যা ছিল। তবে মুহাজিরদের সমস্যা আনছাররাই মিটিয়ে দিত। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের পরস্পরে ধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছিলেন। মক্কা থেকে কোন মুহাজির এলেই তারা তাকে সাদরে বরণ করে নিত। ফলে মুহাজিরগণের সমস্যা ছিল পজেটিভ। কিন্তু বিরুদ্ধবাদীদের সমস্যা ছিল নেগেটিভ। যা সর্বদা রাসূল (ছাঃ)-কে চিন্তাগ্রস্ত করে রাখতো।

উপরোক্ত সমস্যাবলীর সাথে যোগ হয়েছিল আরেকটি কঠিন সমস্যা। সেটা ছিল (৬) মক্কার মুশরিকদের অপতৎপরতা। তারা মুহাজিরদের ফেলে আসা বাড়ী-ঘর ও ধন-সম্পত্তি জবরদখল করে নিল। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বন্দী ও নির্যাতন করতে লাগল। অধিকন্তু তাদের ধর্মীয় ও ব্যবসায়িক নেতৃত্বের প্রভাব খাটিয়ে আরব উপদ্বীপের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকদের উস্কানি দিতে লাগল, যাতে মদীনায় খাদ্য-শস্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ তারা বন্ধ করে দেয়। ফলে মদীনায় পণ্য আমদানী হ্রাস পেতে থাকল। যা মক্কার মুশরিকদের সাথে মদীনার মুসলমানদের মধ্যে ক্রমে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরী করে ফেলল।

[1]. সূরা ফাতিহা ৭ আয়াত; তিরমিযী হা/২৯৫৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৮২০২।
[2]. ইবনু হিশাম ১/৪২৯; আলবানী, ফিক্বহুস সীরাহ পৃঃ ১৪৬, সনদ হাসান।

মাক্কী ও মাদানী জীবনের প্রধান পার্থক্য সমূহ

মাক্কী ও মাদানী জীবনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য ছিল এই যে, মক্কায় জন্মস্থান হ’লেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মুসলমানগণ সেখানে ছিলেন দুনিয়াবী শক্তির দিক দিয়ে দুর্বল ও নির্যাতিত। পক্ষান্তরে মাদানী জীবনের প্রথম থেকেই নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের বাগডোর ছিল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মুসলমানদের হাতে। এখানে বিরোধীরা স্থানীয় হ’লেও তারা ছিল নিষ্প্রভ। ফলে মদীনার অনুকূল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে ইসলামকে পূর্ণতা দানের সুযোগ আসে। আর সেকারণেই ইসলামের যাবতীয় হারাম-হালাল ও আর্থ-সামাজিক বিধি-বিধান একে একে মাদানী জীবনে অবতীর্ণ হয় ও তা বাস্তবায়িত হয়। অতঃপর বিদায় হজ্জের সময় আল্লাহর পক্ষ হ’তে পূর্ণতার সনদ হিসাবে আয়াত নাযিল হয়- اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا ‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপরে আমার অনুগ্রহকে সম্পূর্ণ করে দিলাম ও তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। বিদায় হজ্জের সময় ১০ম হিজরীর ৯ই যিলহাজ্জ শুক্রবার মাগরিবের পূর্বে মক্কায় আরাফা ময়দানে অবস্থানকালে এ আয়াত নাযিল হয়। এর মাত্র ৮৩ দিন পর ১১ হিজরীর ১লা রবীউল আউয়াল সোমবার মদীনায় রাসূল (ছাঃ) মৃত্যু বরণ করেন।

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, অত্র আয়াত নাযিলের পর বিধি-বিধান সম্পর্কিত আর কোন আয়াত নাযিল হয়নি। তবে উৎসাহ প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন মূলক কয়েকটি মাত্র আয়াত নাযিল হয়। এভাবে আদি পিতা আদম (আঃ) থেকে আল্লাহর পক্ষ হ’তে সত্য দ্বীন নাযিল হওয়ার যে সিলসিলা জারী হয়েছিল, শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে মদীনায় তার পরিসমাপ্তি ঘটে এবং আল্লাহ প্রেরিত ইলাহী বিধানের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।

ইহূদীদের কপট চরিত্র

হিজরতের পূর্ব থেকেই ইহূদীরা মক্কায় রাসূল (ছাঃ)-এর আবির্ভাব সম্পর্কে জানত। এখন যখন তিনি মদীনায় হিজরত করে এলেন এবং মানুষের পারস্পরিক ব্যবহার, লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা ও পবিত্রতার পথ অবলম্বন করলেন। যার ফলে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও হিংসা-হানাহানিতে বিপর্যস্ত ইয়াছরিবের গোত্র সমূহের মধ্যকার শীতল সম্পর্ক ক্রমেই উষ্ণ, মধুর ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে লাগল, তখন তা ইহূদীদের মনে দারুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল। তাদের আশংকা হ’ল যে, এইভাবে যদি সবাই মুসলমান হয়ে যায় ও আপোষে ভাই ভাই হয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহ’লে তাদের ‘বিভক্ত কর ও শোষণ কর’ নীতি মাঠে মারা যাবে। এর ফলে তাদের সামাজিক নেতৃত্ব খতম হয়ে যাবে। সাথে সাথে ইসলামে সূদ হারাম হওয়ার কারণে তাদের রক্তচোষা সূদী কারবার একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে, যা তাদের পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ধ্বস নামাবে। এমনকি চক্রবৃদ্ধি হারে ফেঁপে ওঠা সূদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কারণে অত্যাচারমূলক চুক্তির ফলে ইয়াছরিব বাসীদের যে বিপুল ধন-সম্পদ তারা কুক্ষিগত করেছিল, তার সবই তাদেরকে ফেরৎ দিতে বাধ্য হ’তে হবে। ফলে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে গোপনে শত্রুতা শুরু করে দেয়। পরে যা প্রকাশ্য রূপ ধারণ করে। তাদের কপট চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ রাসূল (ছাঃ)-এর মদীনায় পদার্পণের প্রথম দিনেই ঘটে। নিম্নের দু’টি ঘটনা তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।-

দু’টি দৃষ্টান্ত:

আবু ইয়াসির বিন আখত্বাব-এর আগমন

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় আগমনের পর প্রথম তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বনু নাযীর গোত্রের অন্যতম নেতা আবু ইয়াসির বিন আখত্বাব। তিনি তার লোকদের নিকট ফিরে গিয়ে বলেন, أَطِيْعُوْنِىْ فَإِنَّ هَذَا هُوَ النَّبِىُّ الَّذِىْ كُنَّا نَنْتَظِرُ ‘তোমরা আমার আনুগত্য কর। কেননা ইনিই সেই নবী আমরা যার অপেক্ষায় ছিলাম’। কিন্তু হুয়াই বিন আখত্বাব, যিনি তার ভাই ও গোত্রের নেতা ছিলেন, তার বিরোধিতার কারণে সাধারণ ইহূদীরা ইসলাম কবুল করা হতে বিরত থাকে।[1]

উল্লেখ্য যে, ইহূদী আলেম ও সমাজনেতাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছিলেন, لَوْ آمَنَ بِىْ عَشْرَةٌ مِنَ الْيَهُوْدِ لَآمَنَ بِى الْيَهُوْدُ ‘যদি আমার উপরে দশজন ইহূদী নেতা ঈমান আনত, তাহলে গোটা ইহূদী সম্প্রদায় আমার উপরে ঈমান আনতো’।[2] এতে বুঝা যায় যে, সমাজনেতা ও আলেমগণের দায়িত্ব সর্বাধিক। অতএব তাদের সাবধান হওয়া কর্তব্য।

আব্দুল্লাহ বিন সালাম-এর ইসলাম গ্রহণে প্রতিক্রিয়া

ক্বোবার পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ইয়াছরিবে তাঁর দাদার মাতুল গোষ্ঠী বনু নাজ্জার গোত্রে অবতরণ করেন, তখন সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন ইহূদীদের সবচেয়ে বড় আলেম আব্দুল্লাহ বিন সালাম। তিনি ছিলেন বনু ক্বায়নুক্বা‘ ইহূদী গোত্রের অন্তর্ভুক্ত (আবুদাঊদ হা/৩০০৫)। তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে এমন কিছু প্রশ্ন করলেন, যার উত্তর নবী ব্যতীত কারু পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। সব প্রশ্নের সঠিক জবাব পেয়ে তিনি সাথে সাথে মুসলমান হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে সাবধান করে দিলেন এই বলে যে, إِنَّ الْيَهُوْدَ قَوْمٌ بُهُتٌ إِنْ عَلِمُوْا بِإِسْلاَمِىْ قَبْلَ أَنْ تَسْأَلَهُمْ بَهَتُوْنِىْ عِنْدَكَ ‘ইহূদীরা হল মিথ্যা অপবাদ দানকারী এক ঘৃণিত সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করার আগেই যদি তারা আমার ইসলাম গ্রহণ করার বিষয়টি জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার নিকটে আমার সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিবে’। তখন তিনি আব্দুল্লাহকে পাশেই আত্মগোপন করতে বলে ইহূদীদের ডেকে পাঠালেন। তারা এলে তিনি তাদের নিকটে আব্দুল্লাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তারা বলল,سَيِّدُنَا وَابْنُ سَيِّدِنَا، خَيْرُنَا وَابْنُ خَيْرِنَا ‘আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার পুত্র। আমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং আমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পুত্র’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَأَعْلَمُنَا وَابْنُ أَعْلَمِنَا ‘আমাদের মধ্যে সেরা জ্ঞানী ও সেরা জ্ঞানীর পুত্র’ (বুখারী হা/৩৯১১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ عَبْدُ اللهِ؟ ‘আচ্ছা যদি আব্দুল্লাহ মুসলমান হয়ে যায়’? জবাবে তারা দু’বার বা তিনবার বলল, أَعَاذَهُ اللهُ مِنْ ذَلِكَ ‘আল্লাহ তাকে এ থেকে রক্ষা করুন’! অতঃপর আব্দুল্লাহ বিন সালাম গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে এসে উচ্চকণ্ঠে কালেমা শাহাদাত পাঠ করলেন। এটা শোনামাত্র ইহূদীরা বলে উঠলো, شَرُّنَا وَابْنُ شَرِّنَا ‘আমাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি ও নিকৃষ্ট ব্যক্তির পুত্র’।[3] আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) তখন তাদেরকে বললেন,يَا مَعْشَرَ الْيَهُوْدَ اتَّقُوا اللهَ فَوَ اللهِ الَّذِىْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ، إِنَّكُمْ لَتَعْلَمُوْنَ أَنَهُ رَسُوْلُ اللهِ وَأَنَّهُ جَاءَ بِحَقٍّ ‘হে ইহূদী সম্প্রদায়! আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তোমরা ভালভাবেই জানো যে, ইনি আল্লাহর রাসূল এবং ইনি সত্যসহ আগমন করেছেন’। জবাবে তারা বলল, كَذَبْتَ ‘তুমি মিথ্যা বলছ’।[4] বলা বাহুল্য এটাই ছিল ইহূদীদের সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রথম তিক্ত অভিজ্ঞতা, যা তিনি মদীনায় পদার্পণের শুরুতেই অর্জন করেন।

আজকেও ইহূদী-নাছারাদের উক্ত বদস্বভাব অব্যাহত আছে। তাদের মিডিয়াগুলি রাসূল (ছাঃ) ও ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বদা লাগামহীনভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সেদিন যেমন মদীনার মুনাফিকরা ইহূদীদের দোসর ছিল, আজও তেমনি মুসলিম নামধারী বস্ত্তবাদীরা তাদের দোসর হিসাবে কাজ করছে।

[1]. বুখারী ফৎহসহ হা/৩৯৩৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ৭/২৭৫ পৃঃ। উল্লেখ্য যে, ইহূদী নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব সম্পর্কে তার কন্যা ছাফিইয়াহ, যিনি পরবর্তীতে রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রী হয়ে উম্মুল মুমেনীন রূপে বরিত হন, তিনি বলেন, আমি আমার বাপ-চাচাদের নিকটে তাদের সকল সন্তানের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় ছিলাম এবং সকলের আগেই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে তারা আদর করতেন। যেদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রথম ইয়াছরিবে আগমন করেন ও ক্বোবায় বনু ‘আমর বিন ‘আওফের গোত্রে অবতরণ করেন, সেদিন অতি প্রত্যুষে আমার পিতা ও চাচা রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হন। অতঃপর সন্ধ্যার দিকে তারা ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। আমি ছুটে তাদের কাছে গেলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম তারা এত চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন যে, আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না। এ সময় আমি আমার চাচাকে বলতে শুনলাম তিনি আমার আববাকে বলছেন, أَهُوَ هُوَ؟ ‘ইনিই কি তিনি? আববা বললেন, نَعَمْ وَاللهِ ‘আল্লাহর কসম, ইনিই তিনি’। চাচা বললেন, فَمَا فِي نَفْسِكَ مِنْهُ؟ ‘এখন তাঁর সম্পর্কে আপনার চিন্তা কী’? আববা বললেন, عَدَاوَتُهُ وَاللهِ مَا بَقِيتُ ‘স্রেফ শত্রুতা। আল্লাহর কসম! যতদিন আমি বেঁচে থাকব’ (ইবনু হিশাম ১/৫১৯; আল-বিদায়াহ ৩/২১২, আর-রাহীক্ব ১৮১ পৃঃ)। বর্ণনাটির সনদ মুনক্বাতি‘ বা যঈফ (ঐ, তা‘লীক্ব ১২২ পৃঃ)।

অবশ্য মুসলমানদের প্রতি ইহূদীদের হিংসা ও শত্রুতা প্রমাণের জন্য এইরূপ যঈফ বর্ণনার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এজন্য পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারায় বর্ণিত ১০৯, ৮৯, ১৪৬, ১২০ ও সূরা মায়েদাহ ৫১ আয়াতগুলিই যথেষ্ট।
[2]. বুখারী হা/৩৯৪১, ‘আনছারদের মর্যাদা’ অধ্যায় ৫২ অনুচ্ছেদ।
[3]. বুখারী হা/৩৩২৯; মিশকাত হা/৫৮৭০, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মু‘জিযা’ অনুচ্ছেদ-৭।
[4]. বুখারী হা/৩৯১১ ‘আনছারদের মর্যাদা’ অধ্যায়, ৪৫ অনুচ্ছেদ।

ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার গোড়াপত্তন

পূর্বোক্ত সামগ্রিক অবস্থা সম্মুখে রেখে এক্ষণে আমরা মদীনায় নতুন সমাজ ব্যবস্থার রূপায়ণ প্রত্যক্ষ করব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে একই সঙ্গে আভ্যন্তরীণ সংশোধন ও বাইরের অবস্থা সামাল দিয়ে চলতে হয়েছে। নতুন জাতি গঠনের প্রধান ভিত্তি হ’ল আধ্যাত্মিক কেন্দ্র স্থাপন। সেজন্য তিনি ক্বোবায় প্রথম মসজিদ নির্মাণের পর এবার মদীনায় প্রধান মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।

মসজিদে নববী নির্মাণ

মদীনায় প্রবেশ করে রাসূল (ছাঃ)-এর উটনী যে স্থানে প্রথম বসে পড়েছিল, সেই স্থানটিই হ’ল পরবর্তীতে মসজিদে নববীর দরজার স্থান। স্থানটির মালিক ছিল দু’জন ইয়াতীম বালক সাহল ও সোহায়েল বিন রাফে‘ বিন ‘আমর। এটি তখন তাদের খেজুর শুকানোর চাতাল ছিল (ইবনু হিশাম ১/৪৯৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দশ দীনার মূল্যে স্থানটি খরীদ করলেন। আবুবকর (রাঃ) মূল্য পরিশোধ করলেন।[1] অতঃপর তার আশপাশের মুশরিকদের কবরগুলি উঠিয়ে ফেলা হয় এবং ভগ্নস্তূপগুলি সরিয়ে স্থানটি সমতল করা হয়। গারক্বাদের খেজুর গাছগুলি উঠিয়ে সেগুলিকে ক্বিবলার দিকে সারিবদ্ধভাবে পুঁতে দেওয়া হয়’ (বুখারী হা/৪২৮)। অতঃপর খেজুর গাছ ও তার পাতা দিয়ে মসজিদ তৈরী হয়। চার বছর পর এটি কাঁচা ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়।[2] ঐ সময় আল্লাহর হুকুমে ক্বিবলা ছিল বায়তুল মুক্বাদ্দাস, যা ছিল ইহূদীদের ক্বিবলা এবং মদীনা থেকে উত্তর দিকে। মসজিদের ভিত ছিল প্রায় তিন হাত উঁচু। দরজা ছিল তিনটি। যার দু’বাহুর স্তম্ভগুলি ছিল পাথরের, মধ্যের খাম্বাগুলি খেজুর বৃক্ষের, দেওয়াল কাঁচা ইটের, ছাদ খেজুর পাতার এবং বালু ও ছোট কংকর বিছানো মেঝে- এই নিয়ে তৈরী হ’ল মসজিদে নববী, যা তখন ছিল ৭০×৬০×৫ হাত মোট ৪২০০ বর্গ হাত আয়তন বিশিষ্ট। যেখানে বর্ষায় বৃষ্টি পড়ত। ১৬ বা ১৭ মাস পরে ক্বিবলা পরিবর্তিত হ’লে উত্তর দেওয়ালের বদলে দক্ষিণ দেওয়ালের দিকে ক্বিবলা ঘুরে যায়। ফলে পিছনে একমাত্র দরজাটিই এখন ক্বিবলা হয়েছে।[3] কেননা মক্কা হ’ল মদীনা থেকে দক্ষিণ দিকে।

‘উবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) বলেন, আনছারগণ মাল জমা করে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এদিয়ে আপনি মসজিদটি আরও সুন্দরভাবে নির্মাণ করুন। কতদিন আমরা এই ছাপড়ার নীচে ছালাত আদায় করব? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَا بِيْ رَغْبَةٌ عن أخِي موسى، عَرِيْشٌ كَعَريشِ مُوسى ‘আমার ভাই মূসার ছাপড়ার ন্যায় ছাপড়া থেকে ফিরে আসতে আমার কোন আগ্রহ নেই’।[4]

[1]. আর-রাহীক্ব ১৮৪ পৃঃ; বুখারী ফৎহসহ হা/৩৯০৬-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[2]. বুখারী ফৎহসহ হা/৩৯০৬ ও ৩৫৩৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[3]. মুহাম্মাদ ইলিয়াস আব্দুল গণী, তারীখুল মাসজিদিন নববী আশ-শারীফ (মদীনা : ১ম সংস্করণ ১৪১৬/১৯৯৬ খৃ.) ৪১ পৃঃ।
[4]. বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/৪১৩; মুরসাল ছহীহ, ছহীহাহ হা/৬১৬।

মসজিদে নববী নির্মাণ কাজে রাসূল (ছাঃ)

মসজিদ নির্মাণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নিজ হাতে ইট ও পাথর বহন করেন। এ সময় তিনি সাথীদের উৎসাহিত করে বলতেন, اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الْآخِرَه + فَاغْفِرِ الْأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَةَ ‘হে আল্লাহ! আখেরাতের আরাম ব্যতীত কোন আরাম নেই। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা কর’ (বুখারী হা/৪২৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُ الْآخِرَهْ + فَانْصُرِ الْأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَةَ ‘হে আল্লাহ! আখেরাতের কল্যাণ ব্যতীত কোন কল্যাণ নেই। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের সাহায্য কর’ (বুখারী হা/৩৯৩২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, اللَّهُمَّ إِنَّ الأَجْرَ أَجْرُ الآخِرَهْ + فَارْحَمِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই পুরস্কার হ’ল আখেরাতের পুরস্কার। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের প্রতি অনুগ্রহ কর’ (বুখারী হা/৩৯০৬)।

মসজিদ নির্মাণের বরকতমন্ডিত কাজের প্রতি উজ্জীবিত করার জন্য তিনি বলেন, هَذَا الْحِمَالُ لاَ حِمَالَ خَيْبَرْ + هَذَا أَبَرُّ رَبَّنَا وَأَطْهَرْ ‘এই বোঝা খায়বরের বোঝা নয়। হে আমাদের প্রভু! একাজ অতীব পুণ্যময় ও পবিত্র’ (বুখারী হা/৩৯০৬)। রাসূল (ছাঃ)-এর নিজ হাতে কাজ করায় উৎসাহিত হয়ে ছাহাবীগণ গেয়ে ওঠেন- لَئِنْ قَعَدْنَا وَالنَّبِيُّ يَعْمَلُ + لَذَاكَ مِنَّا الْعَمَلُ الْمُضَلَّلُ ‘যদি আমরা বসে থাকি, আর নবী কাজ করেন, তবে সেটা আমাদের পক্ষ থেকে হবে নিতান্তই ভ্রান্ত কাজ’ (বুখারী ফৎহসহ হা/৩৯০৬)।

আযানের প্রবর্তন

মসজিদ নির্মিত হওয়ার পর মুছল্লীদের পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে আহবানের জন্য পরামর্শসভা বসে। ছাহাবীগণ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। কিন্তু কোনরূপ সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। পরদিন আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ বিন ‘আব্দে রবিবহী (রাঃ) প্রথমে এসে রাসূল (ছাঃ)-কে বর্তমান আযানের শব্দ সমূহ সহ স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনালে তিনি তার সত্যায়ন করেন। অতঃপর উচ্চকণ্ঠের অধিকারী বেলালকে আযান দেওয়ার নির্দেশ দেন। আযানের ধ্বনি শুনে কাপড় ঘেঁষতে ঘেঁষতে ওমর (রাঃ) দৌড়ে এসে বললেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! যিনি আপনাকে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন, সেই আল্লাহর কসম করে বলছি, আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ফালিল্লা-হিল হামদ’ ‘আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা’।[1] একটি বর্ণনা মতে ঐ রাতে ১১ জন ছাহাবী একই আযানের স্বপ্ন দেখেন’।[2] উল্লেখ্য যে, ওমর ফারূক (রাঃ) ২০ দিন পূর্বে উক্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আগেই বলেছে দেখে লজ্জায় তিনি নিজের কথা প্রকাশ করেননি।[3]

বলা বাহুল্য, এই আযান কেবল ধ্বনি মাত্র ছিল না। বরং এ ছিল শিরকের অমানিশা ভেদকারী আপোষহীন তাওহীদের এক দ্ব্যর্থহীন আহবান। যা কেবল সে যুগে মদীনার মুশরিক ও ইহূদী-নাছারাদের হৃদয়কে ভীত-কম্পিত করেনি, বরং যুগে যুগে প্রতিষ্ঠিত শিরকী সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এ ছিল তাওহীদ ভিত্তিক সমাজ বিপ্লবের উদাত্ত ঘোষণা। এ আযান যুগে যুগে প্রত্যেক আল্লাহপ্রেমীর হৃদয়ে এনে দেয় এক অনন্য প্রেমের অনবদ্য মূর্ছনা। যার আহবানে সাড়া দিয়ে মুমিন পাগলপারা হয়ে ছুটে চলে মসজিদের পানে। লুটিয়ে পড়ে সিজদায় স্বীয় প্রভুর সকাশে। তনুমন ঢেলে দিয়ে প্রার্থনা নিবেদন করে আল্লাহর দরবারে। বাংলার কবি কায়কোবাদ (১৮৫৭-১৯৫১ খৃ.) তাই কত সুন্দরই না গেয়েছেন-

কে ঐ শুনালো মোরে আযানের ধ্বনি
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনী
কে ঐ শুনালো মোরে আযানের ধ্বনি’।-

ইহূদীদের বাঁশি, নাছারাদের ঘণ্টাধ্বনি ও পৌত্তলিকদের বাদ্য-বাজনার বিপরীতে মুসলমানদের আযান ধ্বনির মধ্যেকার পার্থক্য আসমান ও যমীনের পার্থক্যের ন্যায়। আযানের মধ্যে রয়েছে ধ্বনির সাথে বাণী, রয়েছে হৃদয়ের প্রতিধ্বনি, রয়েছে তাওহীদের বিচ্ছুরণ এবং রয়েছে আত্মনিবেদন ও আত্মকল্যাণের এক হৃদয়ভেদী অনুরণন। এমন বহুমুখী অর্থবহ মর্মস্পর্শী ও সুউচ্চ আহবানধ্বনি পৃথিবীর কোন ধর্মে বা কোন জাতির মধ্যে নেই। ১ম হিজরী সনে আযান চালু হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি তা প্রতি মুহূর্তে ধ্বনিত হচ্ছে পৃথিবীর দিকে দিকে অবিরামভাবে অপ্রতিহত গতিতে। আহ্নিক গতির কারণে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর প্রতি স্থানে সর্বদা ছালাতের সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে। সেই সাথে পরিবর্তন হচ্ছে আযানের সময়ের। ফলে পৃথিবীর সর্বত্র সর্বদা প্রতিটি মিনিটে ও সেকেন্ডে আযান উচ্চারিত হচ্ছে। আর সেই সাথে ধ্বনিত হচ্ছে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্যবাণী এবং উচ্চকিত হচ্ছে সর্বত্র আল্লাহর মহত্ত্ব ও বড়ত্বের অনন্য ধ্বনি। যার সাক্ষী হচ্ছে প্রতিটি সজীব ও নির্জীব বস্ত্ত ও প্রাণী। এমনকি পানির মধ্যে বিচরণকারী মৎস্যকুল। মানুষ যদি কখনো এ আহবানের মর্ম বুঝে এগিয়ে আসে, তবে পৃথিবী থেকে দূর হয়ে যাবে সকল প্রকার শিরকী জাহেলিয়াতের গাঢ় অমানিশা। টুটে যাবে মানুষের প্রতি মানুষের দাসত্ব নিগড়। প্রতিষ্ঠিত হবে আল্লাহর গোলামীর অধীনে সকল মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা। শৃংখলমুক্ত হবে সত্য, ন্যায় ও মানবতা। আযান তাই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নিরংকুশ উলূহিয়াতের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা। বিশ্বমানবতার একক চেতনা ও কল্যাণের হৃদয়স্রাবী দ্যোতনা।

[1]. আবুদাঊদ হা/৪৯৯, সনদ হাসান ছহীহ; মিশকাত হা/৬৫০।
[2]. মিরক্বাত শরহ মিশকাত ‘আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১৪৯ পৃঃ।
[3]. আবুদাঊদ (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৪ ‘আযানের সূচনা’ অনুচ্ছেদ।




**********************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url