“যিলহজ মাসের আমল ও কুরবানির বিধান” একটি বিস্তারিত আলোচনা ( তৃতীয় পর্ব)





কুরবানির পশু যবেহ করা ও ঈদের দিনের করণীয়


বছর ঘুরে প্রতিবছরই যিলহজ মাস আসে। এই মাসটি এলে আমরা আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব কুরবানির ঈদ পালন করি। সাধ্যানুসারে আমরা পশু কুরবানী করি, আনন্দ করি। অথচ আমরা অনেকেই জানি না এই ‍যিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ট দিন। এই দিনগুলোতে আমরা কি আমল করবো, কিভাবে কাটাবো তা বেশিরভাগ মানুষই জানি না। এমন কি কষ্টের টাকায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কুরবানি আমরা দিয়ে থাকি সেটা আদৌ ইসলামের বিধান মতে হচ্ছে কিনা আমরা সেটাও জানি না। অথচ এসব বিষয় জানা আমাদের জন্য অবশ্যই জরুরী। তাই আমরা যিলহজ মাসের আমল ও কুরবানির আদ্যপান্ত সকল বিষয় এখানে ধারাবাহিকভাবে বিস্তারিত তুলে ধরবো। মুল লেখক মুহতারাম আবদুল হামীদ ফাইযী সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

কুরবানির পশু যবেহ করার নিয়ম

কুরবানী এক ইবাদত। যা তার নির্ধারিত সময় ছাড়া অন্য সময়ে সিদ্ধ হয় না। এই কুরবানীর সময় দশই যুলহজ্জ ঈদের নামাযের পর। নামাযের পূর্বে কেউ যবেহ করলে তার কুরবানী হয় না এবং নামাযের পর ওর পরিবর্তে কুরবানী করা জরুরী হয়।

জুনদুব বিন সুফ্য়যান আল-বাজালী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কুরবানীতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি যখন নামায সমাপ্ত করলেন তখন কতক ছাগ ও মেষকে দেখলেন যবেহ করা হয়ে গেছে। অতঃপর বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি নামাযের পূর্বে যবেহ করেছে, সে যেন ওর পরিবর্তে আর এক পশু যবেহ করে। আর যে ব্যক্তি যবেহ করে নি, সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করে।’’

ঈদের খুতবায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আজকের এই দিন আমরা যা দিয়ে শুরু করব তা হচ্ছে নামায। অতঃপর ফিরে গিয়ে কুরবানী করব। অতএব যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের সুন্নাহ (তরীকার) অনুবর্তী। আর যে ব্যক্তি (নামাযের পূর্বে) কুরবানী করে নিয়েছে, তাহলে তা গোশতই; যা সে নিজের পরিবারের জন্য পেশ করবে এবং তা কুরবানীর কিছু নয়।’’[1]

আর আফযল এটাই যে, নামাযের পর খুতবা শেষ হলে তবে যবেহ করা। যে ব্যক্তি ভালরূপে যবেহ করতে পারে তার উচিত, নিজের কুরবানী নিজের হাতে যবেহ করা এবং অপরকে তার দায়িত্ব না দেওয়া। যেহেতু আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বহস্তে নিজ কুরবানী যবেহ করেছেন। এবং যেহেতু কুরবানী নৈকট্যদানকারী এক ইবাদত, তাই এই নৈকট্য লাভের কাজে অপরের সাহায্য না নিয়ে নিজস্ব কর্মবলে লাভ করা উত্তম। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন, ‘আবু মূসা (রাঃ) তাঁর কন্যাদেরকে আদেশ করেছিলেন যে, তারা যেন নিজের কুরবানী নিজের হাতে যবেহ করে।’[2]

পক্ষান্তরে যবেহ করার জন্য অপরকে নায়েব করাও বৈধ। যেহেতু এক সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাতে তেষট্টিটি কুরবানী যবেহ করেছিলেন এবং বাকী উঁট যবেহ করতে আলী (রাঃ)-কে প্রতিনিধি করছিলেন।[3]

[1] (বুখারী , মুসলিম ১৯৬১নং)
[2] (ফাতহুল বারী ১০/১৯)
[3] (মুসলিম)

কুররবানির পশু যবেহ করার সময় লক্ষণীয় ও কর্তব্য

১। পশুর প্রতি দয়া করা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা। আর তা নিম্ন পদ্ধতিতে সম্ভব;

(ক) সেইরূপ ব্যবস্থা নিয়ে যবেহ করা, যাতে পশুর অধিক কষ্ট না হয় এবং সহজেই সে প্রাণত্যাগ করতে পারে।
(খ) যবেহ যেন খুব তীক্ষ্ম ধারালো অস্ত্র দ্বারা হয় এবং তা খুবই শীঘ্রতা ও শক্তির সাথে যবেহস্থলে (গলায়) পেঁচানো হয়।

ফলকথা, পশুর বিনা কষ্টে খুবই শীঘ্রতার সাথে তার প্রাণ বধ করাই উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ প্রত্যেক বস্ত্তর উপর অনুগ্রহ লিপিবদ্ধ (জরুরী) করেছেন। সুতরাং যখন (জিহাদ বা হদ্দে) হত্যা কর তখন উত্তমরূপে অনুগ্রহের সাথে হত্যা কর এবং যখন যবেহ কর তখন উত্তমরূপে অনুগ্রহের সাথে যবেহ কর। তোমাদের উচিত, ছুরিকে ধারালো করা এবং বধ্য পশুকে আরাম দেওয়া।’’[1]

বধ্য পশুর সম্মুখেই ছুরি শান দেওয়া উচিত নয় (মকরূহ)। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি শান দিতে এবং তা পশু থেকে গোপন করতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ যবেহ করবে, তখন সে যেন তাড়াতাড়ি করে।’’[2]

আর যেহেতু পশুর চোখের সামনেই ছুরি ধার দেওয়ায় তাকে চকিত করা হয়; যা বাঞ্ছিত অনুগ্রহ ও দয়াশীলতার প্রতিকূল।

তদনুরূপ এককে অপরের সামনে যবেহ করা এবং ছেঁচ্ড়ে যবেহস্থলে টেনে নিয়ে যাওয়াও মকরূহ।

২। কুরবানী যদি উঁট হয়, (অথবা এমন কোন পশু হয় যাকে আয়ত্ত করা সম্ভব নয়), তাহলে তাকে বাম পা বাঁধা অবস্থায় দাঁড় করিয়ে নহর করা হবে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘‘সুতরাং দন্ডায়মান অবস্থায় ওদের যবেহকালে তোমরা আল্লাহর নাম নাও।’’ (কুঃ ২২/৩৬)

ইবনে আববাস (রা.) এই আয়াতের তফসীরে বলেন, ‘বাম পা বেঁধে তিন পায়ের উপর দন্ডায়মান অবস্থায় (নহর করা হবে)।’[3]

যদি উঁট ছাড়া অন্য পশু হয় তাহলে তা বামকাতে শয়নাবস্থায় যবেহ করা হবে। যেহেতু তা সহজ এবং ডান হাতে ছুরি নিয়ে বাম হাত দ্বারা মাথায় চাপ দিয়ে ধরতে সুবিধা হবে। তবে যদি যবেহকারী নেটা বা বেঁয়ো হয় তাহলে সে পশুকে ডানকাতে শুইয়ে যবেহ করতে পারে। যেহেতু সহজ উপায়ে যবেহ করা ও পশুকে আরাম দেওয়াই উদ্দেশ্য।

পশুর গর্দানের এক প্রান্তে পা রেখে যবেহ করা মুস্তাহাব। যাতে পশুকে অনায়াসে কাবু করা যায়। কিন্তু গর্দানের পিছন দিকে পা মুচ্ড়ে ধরা বৈধ নয়। কারণ, তাতে পশু অধিক কষ্ট পায়।

৩। যবেহকালে পশুকে কেবলামুখে শয়ন করাতে হবে।[4] অন্যমুখে শুইয়েও যবেহ করা সিদ্ধ হবে। যেহেতু কেবলামুখ করে শুইয়ে যবেহ করা ওয়াজেব হওয়ার ব্যাপারে কোন শুদ্ধ প্রমাণ নেই।[5]

৪। যবেহকালে আল্লাহর নাম নেওয়া (‘বিসমিল্লাহ’ বলা) ওয়াজেব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘যদি তোমরা তাঁর নিদর্শনসমূহের বিশ্বাসী হও তবে যাতে (যে পশুর যবেহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা আহার কর।’’ (কুঃ ৬/১১৮) ‘‘এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা হতে তোমরা আহার করো না; উহা অবশ্যই পাপ।’’ (কুঃ ৬/১২১)

আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যা খুন বহায় এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা ভক্ষণ কর।’’[6]

‘বিসমিল্লাহ’র সাথে ‘আল্লাহু আকবার’ যুক্ত করা মুস্তাহাব। অবশ্য এর সঙ্গে কবুল করার দুআ ছাড়া অন্য কিছু অতিরিক্ত করা বিধেয় নয়। অতএব (কুরবানী কেবল নিজের তরফ থেকে হলে) বলবে, ‘বিসমিল্লাহি অল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিন্কা অলাক, আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী।’

নিজের এবং পরিবারের তরফ থেকে হলে বলবে,‘---তাক্বাববাল মিন্নী অমিন আহলে বাইতী।’ অপরের নামে হলে বলবে, ‘---তাক্বাববাল মিন (এখানে যার তরফ থেকে কুরবানী তার নাম নেবে)[7]

এই সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ করা বিধেয় নয়; বরং তা বিদআত।[8] যেমন ‘বিসমিল্লাহ’র সাথে ‘আর-রাহমানির রাহীম’ যোগ করাও সুন্নত নয়। যেহেতু এ সম্বন্ধে কোন দলীল নেই। যেমন যবেহ করার লম্বা দুআ ‘ইন্নী অজ্জাহ্তু’ এর হাদীস যয়ীফ।[9]

যবেহর ঠিক অব্যবহিত পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ জরুরী। এর পর যদি লম্বা ব্যবধান পড়ে যায়, তাহলে পুনরায় তা ফিরিয়ে বলতে হবে। তবে ছুরি ইত্যাদি হাতে নিয়ে প্রস্ত্ততি নেওয়ায় যেটুকু ব্যবধান পড়ে তাতে ‘বিসমিল্লাহ’ ফিরিয়ে পড়তে হয় না।

আবার ‘বিসমিল্লাহ’ শুধু সেই পশুর জন্যই পরিগণিত হবে যাকে যবেহ করার সঙ্কল্প করা হয়েছে। অতএব এক পশুর জন্য ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে অপর পশু যবেহ বৈধ নয়। বরং অপরের জন্য পুনরায় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া জরুরী। অবশ্য ‘বিসমিল্লাহ’ বলার পর অস্ত্র পরিবর্তন করাতে আর পুনরায় পড়তে হয় না।

প্রকাশ যে, যবেহর পর পঠনীয় কোন দুআ নেই।

৫। যবেহতে খুন বহা জরুরী। আর তা দুই শাহরগ (কন্ঠনালীর দুই পাশে দু’টি মোটা আকারের শিরা) কাটলে অধিকরূপে সম্ভব হয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যা খুন বহায়, যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা ভক্ষণ কর। তবে যেন (যবেহ করার অস্ত্র) দাঁত বা নখ না হয়।’’[10]

সুতরাং রক্ত প্রবাহিত ও শুদ্ধ যবেহ হওয়ার জন্য চারটি অঙ্গ কাটা জরুরী; শক্ষাসনালী, খাদ্যনালী এবং পাশর্ক্ষস্থ দুই মোটা শিরা।

৬। প্রাণ ত্যাগ করার পূর্বে পশুর অন্য কোন অঙ্গ কেটে কষ্ট দেওয়া হারাম। যেমন ঘাড় মটকানো, পায়ের শিরা কাটা, চামড়া ছাড়ানো ইত্যাদি জান যাওয়ার আগে বৈধ নয়। অনুরূপভাবে দেহ আড়ষ্ট হয়ে এলে চামড়া ছাড়াতে শুরু করার পর যদি পুনরায় লাফিয়ে ওঠে তাহলে আরো কিছুক্ষণ প্রাণ ত্যাগ করা কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যেহেতু অন্যভাবে পশুকে কষ্ট দেওয়া আদৌ বৈধ নয়।

পশু পালিয়ে যাওয়ার ভয় থাকলেও ঘাড় মটকানো যাবে না। বরং তার বদলে কিছুক্ষণ ধরে রাখা অথবা (হাঁস-মুরগীকে ঝুড়ি ইত্যাদি দিয়ে) চেপে রাখা যায়।

যবেহ করার সময় পশুর মাথা যাতে বিচ্ছিন্ন না হয় তার খেয়াল রাখা উচিত। তা সত্ত্বেও যদি কেটে বিচ্ছিন্ন হয়েই যায়, তাহলে তা হালাল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

যবাই করে ছেড়ে দেওয়ার পর (অসম্পূর্ণ হওয়ার ফলে) কোন পশু উঠে পালিয়ে গেলে তাকে ধরে পুনরায় যবাই করা যায়। নতুবা কিছু পরেই সে এমনিতেই মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে। আর তা হালাল।

প্রকাশ থাকে যে, যবেহ করার জন্য পবিত্রতা বা যবেহকারীকে পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। যেমন মাথায় টুপী রাখা বা মাথা ঢাকাও বিধিবদ্ধ নয়। অবশ্য বিশ্বাস ও ঈমানের পবিত্রতা জরুরী। সুতরাং কাফের, মুশরিক (মাযার বা কবরপূজারী) ও বেনামাযীর হাতে যবেহ শুদ্ধ নয়।

যেমন যবেহ করার আগে কুরবানীর পশুকে গোসল দেওয়া, তার খুর ও শিঙে তেল দেওয়া অথবা তার অন্য কোন প্রকার তোয়ায করা বিদআত।

প্রকাশ থাকে যে, যবেহকৃত পশুর রক্ত হারাম। অতএব তা কোন ফল লাভের উদ্দেশ্যে পায়ে মাখা, দেওয়ালে ছাপ দেওয়া বা তা নিয়ে ছুড়াছুড়ি করে খেলা করা বৈধ নয়।

[1] (মুসলিম ১৯৫৫নং)
[2] (মুসনাদ আহমাদ ২/১০৮, ইবনে মাজাহ ৩১৭২নং, সহীহ তারগীব ১/৫২৯)
[3] (তাফসীর ইবনে কাষীর)
[4] (আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ ২/১০৪৩, হাদীসটির সনদে সমালোচনা করা হয়েছে)
[5] (আহকামুল উযহিয়্যাহ ৮৮,৯৫পৃঃ)
[6] (বুখারী ২৩৫৬, মুসলিম ১৯৬৮নং)
[7] (মানাসিকুল হাজ্জ, আলবানী ৩৬পৃঃ)
[8] (আল-মুমতে ৭/৪৯২)
[9] (যয়ীফ আবূ দাঊদ ৫৯৭নং)
[10] (আহমাদ, বুখারী, মুসলিম প্রভৃতি, সহীহুল জামে’ ৫৫৬৫নং)

কুরবানীর দিনের ফযীলত ও তার অযীফাহ

কুরবানীর দিন এক মহান দিন। এই দিনকে ‘হজ্জে আকবার’ এর দিন বলা হয়।[1]

এই দিন সারা বছরের শ্রেষ্ঠতম দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর নিকট মহানতম দিন কুরবানীর দিন। অতঃপর স্থিরতার (কুরবানীর পরের) দিন।[2]

কুরবানীর ঈদ বা ঈদুল আযহা, রোযার ঈদ বা ঈদুল ফিতর অপেক্ষা উত্তম। কারণ, ঈদুল আযহাতে নামায ও কুরবানী আছে। কিন্তু ঈদুল ফিতরে আছে নামায ও সদকাহ। আর কুরবানী সদকাহ অপেক্ষা উত্তম। আবার কুরবানীর দিনে হাজীদের জন্য স্থান ও কালের মাহাত্ম্য ও পবিত্রতা একত্রিত হয়। যেহেতু ঐ সময় পবিত্র কাবাগৃহের হজ্জ হয়। আর যার পূর্বে আরাফার দিন ও পরে তাশরীকের তিন দিন। আর এই দিনগুলির প্রত্যেকটাই হাজীদের জন্য ঈদ।[3]

এই দিনে কতকগুলি পালনীয় অযীফাহ রয়েছে যা পর্যায়ক্রমে নিম্নরূপঃ

[1] (আবূ দাঊদ ৫/৪২০, ইবনে মাজাহ ২/১০১৬)
[2] (আবূ দাঊদ ৫/১৭৪, মিশকাত ২/৮১০)
[3] (লাতায়েফুল মাআরিফ ৩১৮পৃঃ)

ঈদগাহের প্রতি বহির্গমন

এই দিনে সুন্দর পোষাক ও বেশ-ভুষায় সজ্জিত হয়ে উত্তম খোশবু মেখে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। যেহেতু এই দিন সৌন্দর্য ও সাজ-সজ্জার দিন। যেমন ঈদের জন্য গোসল করা কিছু সলফ, সাহাবা ও তাবেঈন কর্তৃক শুদ্ধভাবে প্রমাণিত আছে।[1]

খুবই সকাল সকাল ঈদগাহে পৌঁছে ইমামের নিকটবর্তী স্থানে বসার চেষ্টা করবে মুসলিম। এতে নামাযের জন্য প্রতীক্ষার সওয়াব লাভ করবে।

ঈদগাহে যাবার পথে তকবীর পাঠ করবে। ইমাম বের হওয়া (নামাযে দাঁড়ানো) পর্যন্ত ঐ তকবীর পড়া সুন্নত। যুহরী বলেন, লোকেরা ঈদের সময় তকবীর পাঠ করত, যখন ঘর হতে বের হত তখন থেকে শুরু করে ঈদগাহ পর্যন্ত পথে এবং ইমাম বের হওয়া পর্যন্ত ঈদগাহে তকবীর পড়ত। ইমামকে (নামাযে দাঁড়াতে) দেখে সকলেই চুপ হয়ে যেত। পুনরায় ইমাম যখন (নামাযের) তকবীর পড়তেন তখন আবার সকলে তকবীর পড়ত।[2]

সকলেই এই তকবীর উচ্চসবরে পাঠ করবে। তবে একই সঙ্গে সমসবরে তকবীর পাঠ বৈধ নয়। উল্লেখ্য যে, ঈদুল ফিতরের চেয়ে ঈদুল আযহার তকবীর অধিকরূপে তাকীদপ্রাপ্ত।[3]

ঈদগাহে পাঁয়ে হেঁটে যাওয়াই সুন্নত। অবশ্য ঈদগাহ দূর হলে অথবা অন্য কোন ওজর ও অসুবিধার ক্ষেত্রে সওয়ার হয়েও যাওয়া চলে।[4]

ঈদুল আযহার দিন নামাযের পূর্বে কিছু না খাওয়া সুন্নত। আর ঈদুল ফিতরের দিন ইদগাহে বের হওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নত।[5]

ইবনুল কাইয়েম বলেন, ‘তিনি ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে (কুরবানী করে) কুরবানীর (গোশত) খেতেন।’[6]

প্রকাশ থাকে যে, ঈদুল আযহার দিনে নামাযের পূর্বে না খাওয়ার নাম হাফ রোযা নয়। আর এই রোযার জন্য ফজরের পূর্বে সেহরী খাওয়াও বিধেয় নয়। পক্ষান্তরে জানা কথা যে, হাফ বলে কোন রোযা শরীয়তে নেই এবং ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম।

[1] (ফাতহুল বারী ২/৪৩৯, মুগনী ৩/২৫৬)
[2] (ইবনে আবী শাইবাহ ২/১৬৫, ইরওয়াউল গলীল ৩/১২১)
[3] (মাজমূ ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়্যাহ ২৪/২২১)
[4] (মুগনীঃ ৩/২৬২)
[5] (তিরমিযী ৩/৯৮, ইবনে মাজাহ ১/২৯২)
[6] (যাদুল মাআদ ১/৪৪১)

ঈদের নামায

এই নামায সুন্নতে মুআক্কাদা। কোন সক্ষম মুসলিমের জন্য তা ত্যাগ করা বা আদায় করতে অবহেলা করা উচিত নয়। শিশুদেরকেও এই নামাযে উপস্থিত হতে উদ্বুদ্ধ করবে। সৌন্দর্য প্রকাশ না হলে, পর্দার রীতি থাকলে এবং পথে ও ঈদগাহে নারী-পুরুষে মিলা-মিশার ভয় না থাকলে মহিলারা জামাআতে শামিল হবে। বরং পর্দার ব্যবস্থা করে ঈদগাহে মহিলাদেরকে উপস্থিত হয়ে নামায পড়ার বন্দোবস্ত করা জরুরী। যাতে ঋতুবতী মহিলারাও নামাযে না হলেও দুআ ও খুশীতে শরীক হবে। এ ছাড়া পৃথকভাবে কেবল মেয়েদের জন্য কোন বাড়িতে বা মসজিদে ঈদের নামাযের কথা শরীয়তে উল্লেখিত নেই।

অনেক ওলামা যেমন, ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনুল কাইয়েম, শওকানী, সিদ্দীক হাসান খান প্রভৃতিগণের মতে এই নামায ওয়াজেব।

ঈদের নামাযের জামাআত ছুটে গেলে একাকী দুই রাকআত নামায পড়ে নেবে।[1] ঈদের খুতবাহ শোনা সুন্নত। তবে উপস্থিত থেকে তাতে লাভবান হওয়া উচিত। খুতবাহ শেষে (যে পথে গিয়েছিল তার) ভিন্ন পথে বাড়ি ফিরবে।[2]

[1] (ফাতহুল বারী ২/৪৭৪)
[2] (বুখারী ৯৪৩নং)

কুরবানী যবেহ ও গোশত বিতরণ

পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে কুরবানী যবেহর সময় ঈদের খুতবা শেষ হলে শুরু হয়। কুরবানী দাতার জন্য সুন্নত যে, সে তা হতে খাবে, আত্মীয়-সবজনকে (তারা কুরবানী দিক, চাই না দিক) হাদিয়া দেবে এবং গরীবদেরকে সদকাহ করবে। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে বলেন,

(فَكُلُوْا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيْرَ)

অর্থাৎ, অতঃপর তোমরা তা হতে ভক্ষণ কর এবং নিঃসব অভাবগ্রস্তদেরকে ভক্ষণ করাও। (সূরা হাজ্জ ২৮ আয়াত)

(وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذَلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُون)

অর্থাৎ, আর (কুরবানীর) উঁটকে করেছি আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের অন্যতম; তোমাদের জন্য তাতে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় ওগুলির উপর (নহর করার সময়) তোমরা আল্লাহর নাম নাও। অতঃপর যখন ওরা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তোমরা তা হতে আহার কর এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে ও যাচ্ঞাকারী অভাবগ্রস্তকে। এইভাবে আমি ওদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা হাজ্জ ৩৬ আয়াত)

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (কুরবানীর গোশত) তোমরা খাও, জমা কর, এবং দান কর।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘তা খাও, খাওয়াও এবং জমা রাখ।’’[1]

উপর্যুক্ত আয়াত বা হাদীসে খাওয়া, হাদিয়া দেওয়া ও দান করার কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ বিবৃত হয়নি। তবে অধিকাংশ উলামাগণ মনে করেন যে, সমস্ত গোশতকে তিন ভাগ করে এক ভাগ খাওয়া, এক ভাগ আত্মীয়-সবজনকে হাদিয়া দেওয়া এবং এক ভাগ গরীবদেরকে দান করা উত্তম।

কেউ চাইলে সে তার কুরবানীর সমস্ত গোশ্ত্কে বিতরণ করে দিতে পারে। আর তা করলে উক্ত আয়াতের বিরোধিতা হবে না। কারণ, ঐ আয়াতে নিজে খাওয়ার আদেশ হল মুস্তাহাব বা সুন্নত। সে যুগের মুশরিকরা তাদের কুরবানীর গোশত খেত না বলে মহান আল্লাহ উক্ত আদেশ দিয়ে মুসলিমদেরকে তা খাবার অনুমতি দিয়েছেন। অবশ্য কেউ কেউ খাওয়া ওয়াজেবও বলেছেন।[2] সুতরাং কিছু খাওয়াই হল উত্তম।

কুরবানীর গোশত হতে কাফেরকে তার অভাব, আত্মীয়তা, প্রতিবেশ অথবা তাকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করার জন্য দেওয়া বৈধ। আর তা ইসলামের এক মহানুভবতা।[3]

তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়া সংক্রান্ত হাদীসটি মনসুখ (রহিত) হলেও যেখানে দুর্ভিক্ষ থাকে সেখানে তিন দিনের অধিক গোশত জমা রাখা বৈধ নয়।[4]

কুরবানীদাতা পশু যবেহ করার পর চুল, নখ ইত্যাদি কাটতে পারে। তবে এতে কুরবানী দেওয়ার সমান সওয়াব লাভ হওয়ার কথা ঠিক নয়। যেমন কুরবানী দিতে না পারলে মুরগী কুরবানী দেওয়া বিদআত।

আর দাড়ি কোন সময়কার জন্য চাঁছা বৈধ নয়। কিন্তু বহু মানুষ আছে যারা কুরবানী করার সাথে সাথে নিজের দাড়িও কুরবানী (?) করে থাকে! কেউ কেউ তো নামাযে বের হওয়ার পূর্বেই দাড়ি চেঁছে সাজ-সজ্জা করে। অথচ সে এ কাজ ক’রে তিনটি পাপে আলিপ্ত হয়ঃ (১) দাড়ি চাঁচার পাপ (২) পাপ কাজের মাধ্যমে ঈদের জন্য সৌন্দর্য অর্জন করার পাপ এবং (৩) কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চুল (দাড়ি) কাটার পাপ।[5]

অনুরূপভাবে অধিকাংশ দাড়ি-বিহীন হাজীদেরকে দেখা যায় যে, তারা ইহরামের কারণে দাড়ি কিছু বাড়িয়ে থাকে। অতঃপর যখন হালাল হবার সময় হয়, তখন মাথার কেশ মুন্ডনের পরিবর্তে তারা তাদের দাড়ি মুন্ডন করে থাকে! অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেশ মুন্ডন করতে উৎসাহিত করেছেন এবং দাড়ি বর্ধন করতে আদেশ করেছেন। অতএব ‘ইন্নালিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজেঊন।’

পরন্তু এই অপকর্মে কয়েকটি বিরুদ্ধাচরণ রয়েছে। (১) দাড়ি বর্ধনের উপর রসূলের আদেশ উল্লংঘন এবং তাতে তাঁর বিরোধিতা। (২) কাফেরদের প্রতিরূপ ধারণ। অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য ধারণ করে সে তাদেরই শ্রেণীভুক্ত।’’ (৩) নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন। অথচ তিনি নারীদের আকৃতি ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। (৪) (আল্লাহর বিনা অনুমতিতে) আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন এবং শয়তানের প্রতিজ্ঞার আনুগত্য। যেহেতু সে আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে;

যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

(لَعَنَهُ اللهُ وَقَالَ لأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيباً مَفْرُوضاً- وَلأضِلَّنَّهُمْ وَلأمَنِّيَنَّهُمْ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الأَنْعَامِ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ وَمَنْ يَتَّخِذْ الشَّيْطَانَ وَلِيّاً مِنْ دُونِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَاناً مُبِيناً)

অর্থাৎ, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন। সে (শয়তান) বলে, ‘আমি তোমার বান্দাদের একটা নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবই, তাদের হূদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই, আমি তাদেরকে নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই, এবং তাদেরকে অবশ্যই নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই।’ আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা নিসা ১১৮-১১৯)

বলাই বাহুল্য যে, দাড়ি রাখা সকল নবীর সুন্নত (তরীকা)। আর তা মৌলবী-অমৌলবী ও হাজী-অহাজী প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজেব। কেউ দাড়ি না রাখলে, তার কাবীরা গোনাহ হবে।

[1] (মুসলিম ১৯৭১নং)
[2] (তফসীর ইবনে কাষীর ৩/২৯২, ৩০০, মুগনী ১৩/৩৮০, মুমতে ৭/৫২৫)
[3] (মুগনী ১৩/ ৩৮১, ফাতহুল বারী ১০/৪৪২)
[4] (ফাতহুল বারী ১০/২৮, ইনসাফ ৪/১০৭)
[5] (সালাতুল ঈদাইন, আলবানী ৪০পৃঃ)

ঈদের মুবারকবাদ

ঈদের দিন এক অপরকে মুবারকবাদ দেওয়ায় ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে কোন দোষ নেই। যেমন, ‘তাক্বাব্বাল্লাহু মিন্না অমিনকুম’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের নিকট থেকে ইবাদত কবুল করেন), ঈদ মুবারক ইত্যাদি দুআমূলক বাক্য বলে এক অপরের সাথে সাক্ষাৎ করা বৈধ। যেহেতু ঈদে ও অন্যান্য খুশীতে মুবারকবাদ দেওয়া, বর্কত, মঙ্গল ও কবুলের দুআ করা) ইসলামে স্পষ্টভাবে সবীকৃত।

যেমন, সাহাবাগণ ঈদগাহ হতে ফিরার সময় এক অপরকে বলতেন, ‘তাক্বাব্বাল্লাহু মিন্না অমিনক্।[1]

অন্যান্য খুশীর বিষয়ে মুবারকবাদ দেওয়ার ব্যাপারেও ইসলামে ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন আনাস (রাঃ) বলেন, (বিজয়ের খবর নিয়ে) যখন ‘‘---এ এজন্য যে, তিনি তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করবেন---’’ এই আয়াতটি (কুঃ ৮৮/২) হুদাইবিয়া থেকে ফিরার পথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ হল তখন তিনি বললেন, ‘‘আমার উপর এমন একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যা ধরাপৃষ্ঠে সমগ্র বস্তু থেকে আমার নিকট প্রিয়তম।’’ অতঃপর তিনি তাঁদের (সাহাবাদের) কাছে তা পড়ে শুনালেন। তা শুনে সাহাবাগণ বললেন, ‘যে জিনিস আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন তার উপর আপনাকে মুবারকবাদ---।’[2]

অনুরূপভাবে যখন কা’ব বিন মালেক (রাঃ)-এর তওবা কবুল হল তখন তাঁকে মুবারকবাদ দেওয়া হয়েছিল।[3]

বিবাহ-শাদীতে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বারাকাল্লাহু লাকা অবারাকা আলাইক---’ বলে বরকে মুবারকবাদের দুয়া দিতেন।[4]

অবশ্য ঈদের খুশীতে মুবারকবাদ দেওয়ার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কোন হাদীস প্রমাণিত নেই। তবে কিছু সাহাবা ও তাবেয়ীন হতে এ কথা বিশুদ্ধরূপে প্রমাণিত আছে। অতত্রব কেউ এ কাজ করলে করতেও পারে এবং ছাড়লে ছাড়তেও পারে।[5]

শায়খ আব্দুর রহমান সা’দী বলেন, ‘বিভিন্ন উপযুক্ত শুভক্ষণে মুবারকবাদ শরীয়তের এক ফলপ্রসূ বৃহৎ মূলের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। কারণ, যাবতীয় কথা ও কাজের দেশাচার ও প্রথার মৌলিক মান হচ্ছে বৈধতা। অতএব কোন আচার বা প্রথাকে হারাম বলা যাবে না; যতক্ষণ না ঐ প্রথা বা আচারকে শরীয়ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অথবা তাতে কোন বিঘ্ন বা ক্ষতি প্রকাশিত না হয়েছে। এই মহান মৌলনীতির সপক্ষে কিতাব ও সুন্নাহর সমর্থনও রয়েছে।

সুতরাং লোকেরা এই মুবারকবাদকে কোন ইবাদত বলে মনে করে না। বরং তা একটা প্রচলিত রীতি মনে করে; যাতে শুভক্ষণে খুশির সাথে এক অপরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে থাকে এবং তাতে কোন বাধা বা বিঘ্নও নেই। বরং তাতে উপকারই আছে; যেমন মুসলিমরা এক অপরকে এর মাধ্যমে উপযুক্ত দুআ দিয়ে থাকে এবং তাতে আপোসে সৌহার্দ্য, ভালবাসা ও সম্প্রীতি সঞ্চার ও বৃদ্ধি হয়ে থাকে। তাই রীতির সাথে যখন কোন লাভ ও মঙ্গল যুক্ত হয় তখন তা তার ফল হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[6]

[1] (হাবী ১/৮২, ফাতহুল বারী ২/৪৪৬, তামামুল মিন্নাহ ৩৫৪পৃঃ)
[2] (বুখারী ৩৯৩৯, মুসলিম ১৭৮৬নং)
[3] (বুখারী ৪১৫৬, মুসলিম ২৭৬৯নং)
[4] (বুখারী ৪৮৬০, মুসলিম ১৪২৭নং)
[5] (মাজমূ ফাতাওয়া ২৪/২৫৩)
[6] (ফাতাওয়া সা’দিয়্যাহ ৪৮৭পৃঃ, হাবী ১/৭৯)

পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ

পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও জ্ঞাতি-বন্ধনের দাবী এই যে, বিশেষ করে ঈদের দিন তাদের যিয়ারত করা। তাদের অবস্থা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা, ঈদের খুশী ও সুখে তাদের শরীক হওয়া। পিতামাতা থেকে পৃথক থাকলে (বা এক বাড়িতে না থাকলে) তাদের যিয়ারত পুত্রের জন্য সুনিশ্চিত হয়। অতঃপর আত্মীয়-স্বজনদের যিয়ারত ও তার পর দ্বীনী ভাই-বন্ধুদের যিয়ারত করা কর্তব্য। সুতরাং বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের যিয়ারতকে পিতা-মাতার যিয়ারতের উপর প্রাধান্য দেওয়া আদৌ বৈধ নয়।

যেমন, এই যিয়ারতে বেগানা নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীর অবাধ মিলামিশা, পর্দাহীনতা, নারীদের নানান সাজ-সজ্জা ও অঙ্গরাগে সুগন্ধ মেখে গায়ের মাহরাম (গম্য) পুরুষদের সাথে সাক্ষাৎ ও মুসাফাহাহ করা, খেলা, ছবি তোলা ইত্যাদি হারাম।

জ্ঞাতি-বন্ধন জাগরূক রাখার জন্য ঈদ এক বড় শুভপর্ব। যেদিন প্রায় সকলের মুখে হাসির ফুলকুঁড়ি ফুটে ওঠে। কিন্তু এমন অনেক মানুষ থাকে, যাদের সে হাসি ওষ্ঠাধরে পৌঁছনোর পূর্বে হূদয় মাঝেই বিলীন হয়ে যায়। তারা খুশীর সংবাদ অনুভব করতে সক্ষম হয় না। বরং মনঃকষ্টে অনেকের চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হয়। এমন লোকদেরকে বেছে তাদের হাসি ফুটিয়ে তুলতে সহযোগিতা করা এক মহান কাজ। ঐ দিনে আত্মীয় ও প্রতিবেশীর কোন অনাথ, এতীম, দুঃস্থ, দাস-দাসী, বিধবা অভাগিনীদের কথা বিস্মৃত হওয়া উচিত নয়। এ উপলক্ষে তাদেরকে কিছু উপহার দিয়ে সান্তনা দান মহৎ লোকের কাজ।

ঈদের দিন সৎকাজ করা ও শুকুর আদায় করা

অতএব ঐ দিনকে গর্ব, অহংকার, নজরবাজি, তাসবাজি, আতশবাজি ও অন্যান্য অবৈধ খেলা, সিনেমা বা অবৈধ ফ্লিম্ দর্শন, গান-বাজনা করা ও শোনা, মাদকদ্রব্য সেবন প্রভৃতির মাধ্যমে অবৈধ হর্ষোৎফুল্ল দিন বানানো কোন মুসলিমের জন্য আদৌ উচিত নয়। নচেৎ নেক আমলের শুক্রিয়া আদায়ের বদলে কৃত আমলের ফলই নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য এই পবিত্র খুশির দিনে ছোট শিশু কন্যারা ‘দুফ’ (ঢপঢপে আওয়াজবিশিষ্ট একমুখো ঢোলক) বাজিয়ে মার্জিত বৈধ গজল ইত্যাদি গাইতে পারে।

সতর্কতার বিষয় যে, বিশেষ করে ঈদের দিন ঈদের নামাযের পর পিতামাতা বা কোন আত্মীয়-স্বজনের কবর যিয়ারতের প্রথা ইসলামে নেই। এ অভ্যাসটিকে কর্তব্য মনে করলে নিঃসন্দেহে তা বিদআত হবে।[1]
[1] (আহকামুল জানায়েয, আলবানী ২৫৮পৃঃ)

তাশরীকের দিনসমূহের ফযীলত

১১,১২,১৩ই যুলহজ্জকে ‘আইয়্যামে তাশরীক’ বলা হয়। তাশরীকের অর্থ হল, রৌদ্রে গোশত শুকানো। যেহেতু এই দিনগুলিতে কুরবানীর গোশত বেশী দিন রাখার জন্য রৌদ্রে শুকানো হত, তাই উক্ত দিনগুলির এই নামকরণ হয়।

এ দিনগুলিও শ্রেষ্ঠ ও ফযীলতপূর্ণ দিনসমূহের অন্যতম; যে মহান কাল-সময়ে আল্লাহ পাক তাঁর যিক্র করতে আদেশ করেছেন। (সূরা বাক্বারাহ ২০৩ আয়াত)

ইবনে আববাস (রা.) বলেন, ‘আইয়্যামে মা’লূমাত’ (বিদিত দিনসমূহ) বলে উদ্দেশ্য হল, (যুলহজ্জের) দশ দিন এবং ‘আইয়্যামে মা’দূদাত’ (নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনসমূহ) বলে উদ্দেশ্য হল, তাশরীকের (কুরবানী ঈদের পরের তিন) দিনসমূহ। আর এই ব্যাখ্যা অধিকাংশে উলামার।[1]

মুফাসসির কুরতুবী বলেন, ‘উলামাদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই যে, ‘আইয়্যামে মা’দূদাত’ এর উদ্দেশ্য মিনার দিনসমূহ এবং তাই তাশরীকের দিন। আর এই তিনটি নাম ঐ দিনগুলির জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই আয়াতে যিক্র করার আদেশ নিয়ে হাজী-অহাজী নির্বিশেষে সকলকেই সম্বোধন করা হয়েছে। আর বিশেষ করে নামাযসমূহের সময়ে নামাযীকে - একাকী হোক অথবা জামাআতে- যিক্র করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কথার উপর সাহাবা ও তাবেয়ীনদের প্রসিদ্ধ ফকীহগণ একমত।’[2]

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তাশরীকের দিনগুলি পান-ভোজনের ও যিক্র করার দিন।’’[3]

তিনি আরো বলেছেন, (যেমন পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে) ‘‘আরাফাহ, কুরবানী ও তাশরীকের দিনসমূহ আহলে ইসলাম, আমাদের ঈদ।’’ আর ‘‘আল্লাহর নিকট সর্বমহান দিন কুরবানীর দিন। অতঃপর তাশরীকের (ঈদের দ্বিতীয়) দিন।’’

আইয়্যামে তাশরীক শ্রেষ্ঠত্বপূর্ণ দিন। যেহেতু এ দিনগুলি যুলহজ্জের প্রথম দশ দিনের সংলগ্নেই পড়ে; যার ফযীলত এই পুস্তিকার প্রারম্ভে আলোচিত হয়েছে। পক্ষান্তরে এই দিনগুলিতে হজ্জের কিছু আমল পড়ে, যেমন রম্ই, তওয়াফ ইত্যাদি। যাতে মূল শ্রেষ্ঠতেক্ষ ঐ দিনগুলির সাথে মিলিত হয়। যেমন তকবীর বিধেয় হওয়ার ব্যাপারে দুই প্রকারের দিনগুলিই সম্পৃক্ত।

উপর্যুক্ত হাদীস হতে বুঝা যায় যে, তাশরীকের দিনগুলিও পান-ভোজনের দিন। আনন্দ ও খুশী করার, আত্মীয়-স্বজনকে সাক্ষাৎ করার এবং বন্ধু-বান্ধব মিলে ফলপ্রসূ বৈঠক করার দিন। এই দিনগুলিতে অধিকরূপে উত্তম পানাহার; বিশেষ করে গোশত ব্যবহার করা দূষণীয় নয়। তবে তাতে যেন কোন প্রকারের অপচয়, নষ্ট ও আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করা না হয়।

এই দিনগুলি আল্লাহকে বিশেষভাবে স্মরণ ও তার যিক্র করার দিন। এই যিক্র হবে বিবিধ প্রকারেরঃ-

১। প্রতি ফরয নামাযের পর তকবীর পাঠ। যা তাশরীকের শেষ দিনের আসর পর্যন্ত পড়তে হয়। অবশ্য অনেক উলামাগণ মনে করেন যে, তকবীর কেবল নামাযের পরেই সুনির্দিষ্ট নয়। বরং এই দিনগুলিতে যে কোন সময় সর্বদা পড়াই উত্তম।

অভিমতটি অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। যেহেতু আল্লাহ তাআলা এই দিনগুলিকে যিক্র দ্বারা বিশিষ্ট করেছেন। কিন্তু তাতে কোন নির্ধারিত সময় নির্দিষ্ট করেন নি। তিনি বলেন, ‘‘এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলিতে আল্লাহর যিক্র কর।’’ (সূরা বাক্বারাহ ২০৩ আয়াত) আর এই আদেশ হাজী-অহাজী সকলের জন্য সাধারণ। তদনুরূপ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বলেন, ‘‘এই দিনগুলি আল্লাহর যিক্র করার দিন।’’ অতএব এই নির্দেশ পালন স্পষ্টভাবে তখনই সম্ভব হয় যখন তকবীরাদি সর্বাবস্থায় (যে অবস্থায় আল্লাহর যিক্র করা চলে) পাঠ করা হয়। যেমন, নামাযের পরে, মসজিদে, বাড়িতে, পথে, মাঠে ইত্যাদিতে।[4]

২। কুরবানী যবেহ করার সময় তাসমিয়াহ ও তাকবীর পাঠ।

৩। পান ও ভোজনের পর যিক্র ও দুআ। যেহেতু দিনগুলি অধিক রূপে খাওয়া ও পান করার দিন, যাতে পূর্বে আল্লাহর নাম ও পরে তার প্রশংসা করায় যিক্র হয়।

৪। (হাজীদের জন্য) রম্ই জিমার করার সময় তকবীর পাঠ।

সুতরাং মুসলিমকে গাফলতি থেকে সতর্ক হওয়া উচিত। তার উচিত, এই সময়গুলিতে আল্লাহর যিক্র ও নেক আমল দ্বারা আবাদ করা। নচেৎ আল্লাহ-ভোলা মানুষদের মত ফালতু বেশী বেশী রাত্রি জেগে কোন বিলাস ও প্রমোদ যন্ত্রের সম্মুখে বসে শুক্রিয়ার পরিবর্তে পাপ করা আদৌ উচিত নয়।

অধিক খেয়ে-পান করে আল্লাহর যিক্র ও ইবাদতে সাহায্য নেওয়ায় তাঁর নিয়ামতের এক প্রকার শুকরিয়া আদায় করা হয়। কিন্তু আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত দ্বারা উদরপূর্তি করে তার অবাধ্যাচরণ ও পাপকাজে সাহায্য নেওয়ায় তাঁর অকৃতজ্ঞতা করা হয়। আর তাঁর দেওয়া সম্পদকে অসবীকার করলে এবং তাঁর কৃতঘ্নতা করলে কখনো তা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পক্ষান্তরে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলে সম্পদ অধিকরূপে বর্ধমান হতে থাকে।

যেহেতু তাশরীকের দিনগুলিকেও ঈদ বলা হয়েছে, তাই তাতে কোন প্রকারের রোযা পালন করা শুদ্ধ নয়। কারো অভ্যাসমত যদিও এই দিনগুলিতে রোযা পড়ে, তবুও তার পরবর্তী কোন দিনে রেখে নেবে এবং এই দিনগুলিতে খান-পানের মাধ্যমে আল্লাহর যিক্র করবে।[5]

অবশ্য যে তামাত্তু হজ্জের হাজী কুরবানী দিতে সক্ষম না হয়, সে এই দিনগুলিতে তিনটি রোযা পালন করবে কিনা তা নিয়ে মতান্তর আছে। অনেকে বলেন, ‘কেবল ঐ হাজী রোযা রাখবে। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘‘অতএব যে ব্যক্তি (কুরবানী) না পায় সে হজ্জে তিনটি রোযা (পালন করবে)। (সূরা বাক্বারাহ ১৯৬ আয়াত) আর ‘হজ্জে’ বলতে কুরবানীর পূর্বের ও পরের দিনকেও বুঝায়।’ পরন্তু ইবনে উমার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, ‘কুরবানী দিতে অক্ষম এমন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য তাশরীকের দিনগুলিতে রোযা রাখার অনুমতি নেই।’[6]

তাশরীকের দিনগুলিতেও কুরবানী যবেহ করা যায়। তাই সর্বমোট চার দিন কুরবানী বৈধ। যেহেতু তাশরীকের দিন, কুরবানীর পরের তিন দিনকে বলা হয়।[7] আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তাশরীকের সমস্ত দিনগুলিতেই যবেহ করা যায়।’’[8] যেমন দিনের বেলায় সুযোগ না হলে রাতেও কুরবানী যবেহ করা যায়।[9] রাতে কুরবানী যবেহ করার ব্যাপারে হাদীস সহীহ নয়।[10] আর নামাযের নিষিদ্ধ সময়গুলোতে কুরবানী যবেহ করা নিষিদ্ধ নয়।

[1] (ফাতহুল বারী ২/৪৫৮, লাতায়িফুল মাআরিফ ৩২৯পৃঃ)
[2] (তফসীর কুরতুবী ৩/১,৩)
[3] (মুসলিম ১১৪১নং)
[4] (নাইলুল আওতার ৩/৩৫৮)
[5] (লাতায়িফুল মাআরিফ ৩৩৩পৃঃ)
[6] (বুখারী ১৮৯৮, ফাতহুল বারী ৪/২৪৩, নাইলুল আওতার ৪/২৯৪)
[7] (তাফসীর ইবনে কাষীর ৫/৪১২, আল-মুমতে ৭/৪৯৯)
[8] (আহমাদ ৪/৮২, বাইহাকী ৯/২৯৫, সিলসিলাহ সহীহাহ ৫/৬১৭)
[9] (আল-মুমতে ৭/৫০৩)
[10] (মাযাঃ ৪/২৩)


****************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url