হজ্জ ও উমরা সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর ৪





মুযদালিফা, মিনা ও আরাফাতের আমল এবং তাওয়াফের আগে-পরের আমলসমূহ

মুযদালিফার সিমানায় দেরিতে প্রবেশ

ভিড়ের কারণে ফজরের আগে পর্যন্ত মুযদালিফার সিমানায় প্রবেশ না করতে পারলে করণীয় কি?

ভিড় অথবা অন্য কোন কারণে মুযদালিফার সিমানায় প্রবেশ না করতে পারলে সেখানে রাত্রিবাস মাফ হয়ে যাবে এবং দম লাগবে না। যেহেতু যা সাধ্যের বাইরে, তা ক্ষমার্হ। ৩৭০ (ঐ)
অবশ্য সতর্কতামূলকভাবে মক্কায় একটি কুরবানী করা উচিৎ। সামর্থ্য না থাকলে মাফ। ৩৭১ (ইবনে উষাইমীন)

মুযদালিফা থেকে চলে যেতে চাইলে

মুযদালিফা থেকে মুআল্লিমের বাস অর্ধরাত্রি পূর্বে তাড়াহুড়া করে চলে যেতে চাইলে করণীয় কি?

মুযদালিফা থেকে মুআল্লিমের বাস অর্ধরাত্রির পূর্বে তাড়াহুড়া করে চলে যেতে চাইলে বাস ছেড়ে পায়ে হেঁটে ফজরের পর মিনায় যাবে। হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে বাসেই যাবে। বাধ্য হওয়ার কারণেই তাঁর উপর দম ওয়াজেব হবে না। ৩৭২ (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৬০০)

মুযদালিফা থেকে মিনায়

মুযদালিফা থেকে মিনায় কত আগে যাওয়া যায়?

মুযদালিফা থেকে অর্ধরাত্রি পর মিনায় যাওয়া যায়। তবে চন্দ্র অস্ত যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম। আর এ শুধু দুর্বল শ্রেণীর মানুষ (ও তাঁদের সহযোগী সঙ্গী) দের জন্য। ৩৭৩ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/২৭২)

অর্ধরাত্রির পর এই শ্রেণীর মানুষের জামরায়ে আক্বাবায় পাথর মেরে মক্কায় হজ্জের তওয়াফও করতে পারে। ৩৭৪ (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ১৩/ ৮৬)

তবে অর্ধরাত্রির পূর্বে রমই ও তওয়াফ করলে তা শুদ্ধ হবে না। করে ফেললে পুনরায় করতে হবে। নচেৎ রমইর জন্য মক্কায় দম দেবে এবং তওয়াফ যূল হজ্জের বা মুহরামের শেষে অথবা যখন ভুল বুঝতে পারবে তখনই মক্কা এসে পূর্ণ করবে। নচেৎ হজ্জ হবে না।

তওয়াফ ইফায্বাহ সফর পিছিয়ে রাখা

ভিড়ের ভয়ে তওয়াফ ইফায্বাহ সফর করা পর্যন্ত পিছিয়ে রাখা যায় কি? কতদিন পর তা করা যায়?

তওয়াফে ইফায্বাহ সফর করা পর্যন্ত পিছিয়ে রাখা যায়। ভিড়ের ভয়ে যূল হজ্জের শেষের দিকেও করা যায়। বরং সঠিক ওযর থাকলে যুল হজ্জ মাসের পরেও করতে পারে। ৩৭৫ (ঐ ২/৬৪০)

তওয়াফে ইফায্বার পূর্বে কেউ মারা গেলে

তওয়াফে ইফায্বার পূর্বে কেউ মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে তওয়াফ পূর্ণ করতে হবে কি?

তওয়াফে ইফায্বার পূর্বে কেউ মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে তওয়াফ পূর্ণ করতে হবে না। ৩৭৬ (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৬১২)

তওয়াফে ইফায্বাহর পূর্বে স্ত্রী চুম্বন

পাথর মেরে কেশ মুণ্ডন করার পর তওয়াফে ইফায্বাহর পূর্বে স্ত্রী চুম্বন বা আলিঙ্গনের ফলে বীর্যপাত করলে করণীয় কি?

পাথর মেরে কেশ মুণ্ডন করার পর তওয়াফে ইফায্বাহর পূর্বে স্ত্রী চুম্বন বা আলিঙ্গনের ফলে বীর্যপাত করলে তওবা সহ দম লাগবে। ৩৭৭ (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ১৩/ ৭৪)

প্রথম হালালের পূর্বে স্ত্রী সহবাস

প্রথম হালালের পূর্বে যদি কেউ স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তাহলে তাঁর হজ্জ হবে কি?

প্রথম হালালের পূর্বে যদি কেউ স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তাহলে তাঁর হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। অবশ্য বাকী হজ্জের কাজ তাকে পূরণ করতে হবে এবং কাফফারা স্বরূপ একটি উট কুরবানী দিয়ে তাঁর গোশত মক্কার মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। আর ঐ বাতিল হজ্জ নফল হলেও তাকে আগামীতে নতুনভাবে পালন করতে হবে। ৩৭৮ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/২৭২)

ইহরাম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে

ইহরাম অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকাকালে স্বপ্নদোষ হলে কোন ক্ষতি হয় কি?

স্বপ্নদোষে বীর্যপাত ঘটলে হজ্জ বা উমরার কোন ক্ষতি হয় না। যেহেতু তা নিজের এখতিয়ারভুক্ত নয়। ৩৭৯ (ঐ ২/২৩৩-২৩৪)

সাঈ কেউ করতে সক্ষম না হলে

তওয়াফ ইফায্বাহ বা সাঈ কেউ করতে সক্ষম না হলে অন্য কেউ তাঁর নায়েব হয়ে করে দিতে পারে কি?

তওয়াফ ইফায্বাহ বা সাঈ কেউ করতে সক্ষম না হলে অন্য কেউ তাঁর নায়েব হয়ে করে দিতে পারে না। খাট বা ঠেলা গাড়িতে বসে অথবা কারো কাঁধে বা পিঠে চড়ে তাকে নিজে করতে হবে। যদি সম্ভব না হয়, তবে রোগ বা দুর্বলতা দূর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে এবং ইহরাম খুলবে না। যদি আরোগ্যের আশা না থাকে, তবে একটি ছাগল বা ভেড়া যবেহ করে তাঁর গোশত মক্কার গরীবদের মাঝে বিতরণ করে হালাল হয়ে যাবে এবং হজ্জ আগামীতে কাযা করবে। ৩৮০ (ঐ ২/২৪৩)

হজ্জের কুরবানী দিতে না পারলে

কোন কারনবশতঃ হজ্জের কুরবানী দিতে না পারলে হাজী কি করবে?

কোন কারনবশতঃ হজ্জের কুরবানী দিতে না পারলে ১০ টি রোযা রাখবে। ৩ টি হজ্জে, আরাফার দিনের পূর্বে রেখে নেবে এবং বাকী ৭ টি দেশে ফিরে রাখবে। আরাফার দিন রোযা রাখবে না। ৩৮১ (ফাতাওয়া মুহিম্মাহ ৩৮ পৃঃ) হজ্জের মধ্যে ঐ তিনটি রোযা তাশরীকের দিনগুলোতে ১১, ১২, ১৩ তারিখেও রাখতে পারে। আর এটা ঐ দিনগুলিতে রোযা রাখা নিষিদ্ধ আইনের ব্যতিক্রম। তবে আরাফার দিনের পুবেই রোযা রেখে নেওয়া উত্তম; যদি তাঁর পূর্ব থেকেই জানা যায় যে, সে কুরবানী দিতে পারবে না। ৩৮২ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/২৯৫-২৯৬)

মক্কাবাসী হাজীদের জন্য ঐ কুরবানী নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন, “অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি হজ্জের প্রাক্কালে উমরাহ দ্বারা লাভবান হতে চায়, সে সহজলভ্য কুরবানী করবে। কিন্তু যদি কেউ কুরবানী না পায় (বা দিতে অক্ষম হয়), তাহলে তাকে হজ্জের সময় তিন দিন এবং গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর সাত দিন--- এই পূর্ণ দশ দিন রোযা পালন করতে হবে। এই নিয়ম সেই ব্যক্তির জন্য, যার পরিবার পরিজন পবিত্র কা’বার নিকটে (মক্কায়)বাস করে না।” (বাকারাহঃ ১৯৬)

হজ্জের কুরবানী

ভেবেছিলাম কুরবানী দিতে পারব না। তাই তাশরীকের দিনগুলিতে রোযা রাখলাম। কিন্তু ১৩ তারিখের রাত্রে মনে হল, আমার কাছে যে টাকা আছে, তাঁতে কুরবানী দেওয়া যেতো। তাছাড়া বাড়ী ফিরে ৭ টি রোযা রাখাও কঠিন। সুতরাং ১৪ তারিখের রাতে বা দিনে কুরবানী দিলে কি তা যথেষ্ট হবে?
১৩ তারিখের সূর্য অস্ত গেলে আর কুরবানী শুদ্ধ হবে না। ৩৮৩ (ঐ ২/২৯৬) অতঃএব ৩টি রোযা রেখে তাশরীকের দিনসমূহ অতিবাহিত করে পুনরায় কুরবানী দিতে চাইলে আর হবে না। বাকী ৭টি রোযা দেশে পূর্ণ করতে হবে।

মিনাতে কুরবানী

কুরবানী কি মিনাতেই হওয়া জরুরী?

কুরবানী মিনাতেই যবেহ করা জরুরী নয়। মক্কার হারামের সীমার ভিতরে যে কোন স্থানে কুরবানী যবেহ করা যায়। হারামের সীমার বাইরে হজ্জের কুরবানী সিদ্ধ হবে না; যদিও তাঁর গোশত হারামের ভিতরে বিতরণ করা হয়।

কুরবানী নিজ হাতে যবেহ করা

দেখা যায়, অনেকে কুরবানী নিজ হাতে যবেহ করে ফেলে চলে যায়। এটা কি ঠিক?

কুরবানী যবেহ করে সম্পূর্ণ ফেলে দেওয়া বৈধ নয়। বরং তাঁর কিছু খাওয়া ও দান করা কর্তব্য। তাঁতে কষ্ট আছে মনে করলে নির্দিষ্ট সংস্থায় টাকা জমা দেওয়া যায়।

চুল কাটতে ভুলে গেলে

চুল কাটতে ভুলে গিয়ে সফর করার পর স্মরণ হলে করণীয় কি?

চুল কাটতে ভুলে গিয়ে সফর করার পর স্মরণ হলে, স্মরণ হওয়া মাত্র (পুরুষ হলে এবং ইহরামের কাপড় খুলে ফেললে)ইহরামের কাপড় পরবে এবং হজ্জ পুরা করার নিয়তে চুল কাটে নেবে। অতঃপর যদি এর পূর্বে মক্কায় স্ত্রী সহবাস করে থাকে তবে মক্কায় ১টি (ছাগল বা ভেড়া, নচেৎ উট বা গরুর ৭ ভাগের এক ভাগ)দম লাগবে। আর সে গোশত সেখানকার গরীবদের মাঝে বিতরণ বিতরণ করতে হবে। তবে যদি সহবাস মক্কার বাইরে কোথাও হয় তবে দেশেই ঐ ফিদিয়্যাহ যবেহ করে দেশের গরীবদের মাঝে তাঁর গোশত বিতরণ করতে পারে। ৩৮৫ (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ)তদনুরূপ যে ব্যক্তি না জেনে মাথার সম্পূর্ণ চুল না ছেঁটে কেবল এখান ওখান থেকে কিছু চুল কেটে হালাল হয়েছে সে ব্যক্তির জন্যও বিধান এই। ৩৮৬ ( ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৬৩৪)

তাশরীকের রাত্রি

তাশরীকের রাত্রিগুলি মিনায় না কাটলে করনীয় কি?

তাশরীকের রাত্রিগুলো মিনায় যাপন করা জরুরী। অবশ্য ১২ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্বে বের হয়ে গেলে ১৩ তারিখের রাত্রি যাপন করতে হয় না। কিন্তু যদি কেউ ১১ তারিখে মিনা ত্যাগ করে চলে যায়, তবে তাকে ফিদয়্যাহ দিতে হবে। ৩৮৭ (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ১৩/৮৮)অবশ্য অসুখের কারণে ত্যাগ করতে বাধ্য হলে কোন কিছু ওয়াজেব নয়। আল্লাহ কাউকে তাঁর সামর্থ্যের অধিক দায়িত্ব অর্পণ করেন না। ৩৮৮ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/২৭৬)

মাসজিদুল হারামে রাত কাটানো

রাত্রির অধিকাংশ সময় মিনায় কাটিয়ে বাকী সময় (অথবা সারা দিন) অন্য কোথাও বা মাসজিদুল হারামে কাটানো যায় কি?

রাত্রির অধিকাংশ সময় মিনায় কাটিয়ে বাকী সময় (অথবা সারা দিন) অন্য কোথাও বা মাসজিদুল হারামে কাটানো যায়। তাঁতে কোন ক্ষতি হয় না। ৩৮৯ (ঐ ২/২৭৪)

মিনায় থাকার জন্য জায়গা না পেলে

মিনায় থাকার জন্য জায়গা না পেলে করণীয় কি?

মিনায় থাকার জন্য জায়গা না পেলে মিনার সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী কোন জায়গায় মিনায় অবস্থানকারী অন্যান্য হাজীদের পাশাপাশি স্থান নিয়ে বাস করবে। মিনার সীমানার ভিতরে জায়গা পায়নি বলে মক্কায় রাত্রিযাপন বৈধ হবে না। ৩৯০(ফাতাওয়া ইবনে উষাইমিন ২/৬০৪)যেমন সামর্থ্য থাকতে কম ভাড়া পেয়ে মিনা ছেড়ে মুযদালিফায় খিমা নেওয়া বৈধ নয়।

 রাত্রিতে পাথর মারা যায় কি? তা কি পরের দিন কাযা করা যায়।
নিরুপায় হলে রাত্রিতেও পাথর মারা যায়। এক দিনের পাথর পর দিনে মেরে কাযা করা যায়। ৩৯১ (ঐ ২/২৮৪) অবশ্য আগামী কালের পাথর আজ আগাম মারা যায় না।

 দুই দিনের রমই কি শেষ দিনে কাযা করা যায়? কোন নিয়মে করতে হবে?
শেষ দিনে তিন দিনের পাথর এক সাথে মারতে হলে প্রথম ১১ তারিখের পাথর যথা নিয়মে তিনটি জামরাতেই মারতে হবে। তারপর ছোট জামরায় ফিরে গিয়ে ১২ তারিখের পাথর যথা নিয়মে তিনটি জামরাতেই মারতে হবে। সর্বশেষে ১৩ তারিখের পাথর যথা নিয়মে তিনটি জামরাতেই মারতে হবে। ৩৯২ (ইবনে বায)

অপরকে দিয়ে পাথর মারা

পাথর মারতে সক্ষম অপরকে ব্যক্তি অপরকে প্রতিনিধি করতে পারে কি? কোন অহাজী নায়েব হয়ে পাথর মেরে দিতে পারে কি?

পাথর মারতে সক্ষম ব্যক্তি অপরকে প্রতিনিধি করতে পারে না; করলে দম লাগবে। যাকে প্রতিনিধি করা হবে তাকে বর্তমানে হাজী হতে হবে। ৩৯৩ (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১৪০)




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url