সুদ ব্যভিচারের চাইতেও মারাত্মক গুনাহের কাজ
আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন, আর ব্যবসাকে হালাল করেছেন। সুদ দেয়া ও গ্রহণ করা একটি হারাম এবং চরম ঘৃণিত কাজ। পবিত্র কোরআন এবং হাদীস শরীফে সুদ সম্পর্কে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। হাদীষস শরীফে এসেছে ‘সুদের সত্তরটি স্তর রয়েছে। সবচেয়ে নিন্মটি হলো নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা’; ‘জেনেশুনে এক দিরহাম পরিমান সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ছত্রিশ বার ব্যভিচারের চাইতেও অধিক গুনাহের কাজ।’ সুদের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন শরীফের আয়াত হলো-
(০১) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত : ২৭৮)
(০২) কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।এখনো তাওবা করে নাও এবং সুদ ছেড়ে দাও। তাহলে তোমরা আসল মূলধনের অধিকারী হবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না।(সূরা আল বাকারাহ : আয়াত : ২৭৯)
(০৩)
যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান ¯পর্শ করে
পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলে
‘ব্যবসা তো সুদেরই মতো।’ অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে
করেছেন হারাম। কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌছে
যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে
তাতো খেয়ে ফেলেছেই ও এ ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে। আর এই
নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে
সে থাকবে চিরকাল।(সূরা আল বাকারাহ : আয়াত :২৭৫)
(০৪) আল্লাহ সুদকে
নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত ও বিকশিত করেন। আ
র আল্লাহ অকৃতজ্ঞ
দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না।(সূরা আল বাকারাহ : আয়াত : ২৭৬)
(০৫) হে
ঈমানদারগণ! চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া বন্ধ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, আশা
করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।(সূরা আলে ইমরান : আয়াত : ১৩০)
(০৬) সুদ গ্রহণ
করার জন্য যা গ্রহণ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকদের
ধন-স¤পদ গ্রাস করার জন্য, আমি এমন অনেক পাক-পবিত্র জিনিস তাদের জন্য হারাম
করে দিয়েছি, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল। আর তাদের মধ্য থেকে যারা
কাফের তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি।(সূরা আন নেসা :
আয়াত : ১৬১)
(০৭) যে সুদ তোমরা দিয়ে থাকো, যাতে মানুষের স¤পদের সাথে
মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না। আর যে যাকাত তোমরা আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকো, তা প্রদানকারী আসলে নিজের স¤পদ
বৃদ্ধি করে।(সূরা আর রূম : আয়াত : ৩৯)
সুদের বিরুদ্ধে পবিত্র হাদীস
শরীফের বর্ণনা হলো- (০১) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সাঈদ (রঃ)...আবু হুরাইরাহ
(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সুদের সত্তরটি স্তর
রয়েছে। সবচেয়ে নিন্মটি হলো নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা। (ইবনে মাজাহ :
অধ্যায় : ব্যবসা-সুদ : ২২৭৪)
(০২) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালাহ (রা.)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘জেনেশুনে এক দিরহাম পরিমান
সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ছত্রিশ বার ব্যভিচারের চাইতেও অধিক গুনাহের কাজ।’
(মুসনাদে আহমদ : ১০৩৩)
(০৩) হযরত মূসা ইবনে ইসমাঈল (র.), সামুরা ইবনে
জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আজ রাতে আমি
স্বপ্ন দেখেছি যে, দু’ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমাকে এক পবিত্র ভ‚মিতে নিয়ে
গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌছলাম। নদীর মাঝখানে এক ব্যক্তি
দাঁড়িয়ে আছে। আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর
মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায় তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড
নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে সে যতবার বেরিয়ে আসতে চায়
ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি
জিজ্ঞাসা করলাম, এ কে? সে বলল, যাকে আপনি রক্তের নদীতে দেখছেন, সে হল
সূদখোর।’ (বুখারী : অধ্যায় : ক্রয়-বিক্রয় : ১৯৫৫)
(০৪) হযরত আবু
হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি
ধ্বংসকারী জিনিস থেকে বিরত থাক।’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.)
সে গুলো কি কি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সাথে শরীক করা, যাদু টোনা করা,
আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন এমন প্রাণীকে অকারণে হত্যা করা, এতিমের মাল আত্মসাত
করা, সুদ খাওয়া, জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং সতি সাধ্বী নিষ্কলুষ
মুমিন মহিলার উপর ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা।’ (মুসলিম : কিতাবুল
ইমান : ১৭০)
(০৫) হযরত আহমদ ইবনে ইউনুস (র.)...আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) সুদখোর, সুদ দাতা, এর সাক্ষী
এবং সুদের হিসাব/দলীল লেখক সকলকে অভিশাপ দিয়েছেন। আর তিনি এদের সবাই কে
সমান অপরাধী বলেছেন। (আবু দাউদ : অধ্যায় : ক্রয়-বিক্রয় : ৩৩০০)
(০৬)
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন,
‘মিরাজের রাতে আমি এমন এক গোত্রের পাশ দিয়ে গমন করি, যাদের পেট ছিল ঘরের মত
বড়, যার মধ্যে বিভিন্ন রকম সাপ বাহির থেকে দেখা যাচ্ছিল। আমি জিবরাঈলকে
জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হল সুদখোর।’ (ইবনে মাজাহ :
অধ্যায় : ব্যবসা-সুদ : ২২৭৩)
আসুন আমরা সকলে মিলে আল্লাহ রাব্বুল আল
আমীন ও তাঁর রাসূল (সা.)-এঁর নির্দেশিত পথে চলি। আমাদের সবাইকে আল্লাহ
সুদমুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url