আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-২৭) || রাগ শয়তানের অস্ত্র || কাজ যত গুরুত্বপূর্ণ চাপ তত বেশি || আল্লাহর কর্তৃত্বকে স্বীকার করুন ||

এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

কাজ যত গুরুত্বপূর্ণ চাপ তত বেশি

গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত লোকের ঘাড়ে ভীষণ কাজের চাপ পড়ে। তাদের গুরুদায়িত্বের কারণে তাদের স্বাস্থ্য ও সুখ দূর হয়ে যায়। প্রচুর শ্রমসাধ্য ও চাহিদা পূর্ণ কাজে যে চাপ পড়ে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম।

কথিত আছেঃ “নেতা বা শাসক হতে চেয়ো না।”

“(আমাকে রক্ষা করার মতো) আমার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে।” (৬৯-সূরা আল হাক্কাহ: আয়াত-২৯)

মনে করুন গোটা পৃথিবীটাই আপনার। অবশেষে এসব কিছু কোথায় যাবে? নিঃসন্দেহে এসব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।

“এবং একমাত্র তোমার মহাপ্রতাপশালী ও মহিমান্বিত প্রভুর সত্তাই চিরকাল অবশিষ্ট থাকবে।” (৫৫-সূরা আর রাহমানঃ আয়াত-২৭)

একজন বিজ্ঞলোক তার ছেলেকে সাবধান করে বলেছেন, “নেতা হতে চেয়ো না, কেননা নেতারা সর্বদা কষ্ট পায়।”

অন্য কথায় বলা যায়, সর্বদা নেতা হওয়ার বা প্রধান হওয়ার আশা করিও না। নেতাদের ভাগ্যে থাকে তিক্ত সমালোচনা, গালি এবং কঠিন সমস্যা।

একজন আরব কবি বলেছেন-

إنَّ نصفَ الناسِ أعداءٌ لمنْ ٭ ولـيَ الأحكامَ هذا إن عَدَلْ

“অর্ধেক মানুষ শাসকের শক্ৰ, এটা তখন যখন নাকি সে ন্যায়পরায়ণ (আর অত্যাচারী হলে তো কথাই নেই, তখন সকলেই শক্র)।”

ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও, এটা আল্লাহর আদেশ

“আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও।” (২-সূরা আল বাকারাঃ আয়াত-৪৫)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন সংকটে পড়তেন অমনি সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি বেলাল (রাঃ)-কে মাঝে মাঝে বলতেন, “হে বেলাল! আযান দিয়ে আমাদেরকে শান্তি দাও।” [বেলাল (রাঃ)-এর দায়িত্ব ছিল আযান দেয়া]

যখন আপনি মানসিক চাপ অনুভব করেন, সমস্যায় পড়েন বা যখন আপনি নিজেকে প্রতারিত বোধ করেন তখন তাড়াতাড়ি মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করুন।

বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে শান্তি পেতেন। যেমন- বদর ও আহযাবের যুদ্ধে। বুখারী শরীফের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার একবার ডাকাত দল পরিবেষ্টিত এক প্রাসাদে আটকা পড়েন। যখন তিনি সালাতে দাঁড়ালেন তখন আল্লাহ তাকে রক্ষা করলেন।

ইবনে আসাকির ও ইবনুল কায়্যিম উভয়েই একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এক ধাৰ্মিক লোক শাম দেশে (বর্তমানে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন) যাত্রা করেন। পথিমধ্যে এক ডাকাত তার সঙ্গী হয়, ডাকাতটি তাকে হত্যা করতে চায় কিন্তু তার নিকটে আসার আগে ধাৰ্মিক লোকটি ডাকাতের কাছে সালাত পড়ার জন্য কয়েক মিনিট সময় চায়। সে সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী স্মরণ করল-

أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ

“(তোমাদের দেবতাগণ ভালো?) না কি তিনি যিনি সংকটাপন্ন লোকের ডাকে সাড়া দেন যখন সে তাকে ডাকে?” (২৭-সূরা আন নামল : আয়াত-৬২)

সে এ আয়াত তিনবার পড়ল। তারপর আকাশ থেকে একজন ফেরেশতা বর্শা নিয়ে এসে ডাকাতকে হত্যা করে ফেলল। ফেরেশতা বলল, “আমি তার ফেরেশতা যিনি সংকটাপন্ন লোকদের ডাকে সাড়া দেন যখন তারা তাকে ডাকে।”

“এবং তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত পড়ার আদেশ দাও এবং তুমি তাতে অবিচলিত থাক।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-১৩২)

إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ

নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও অপছন্দীয় কাজ থেকে বিরত রাখে।” (২৯-সূরা আল আনকাবূতঃ আয়াত ৪৫)

“নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু'মিনদের উপর ফরয।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১০৩)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ শরীফ পৌছালেও তা সংকট দূর করতে সাহায্য করে।

“হে মু’মিনগণ! তোমরা তার (মুহাম্মদের) উপর দরূদ পৌছাও এবং সালাম দেয়ার নিয়ম অনুযায়ী তাকে সালাম দাও।” (৩৩-সূরা আল আহযাবঃ আয়াত-৫৬)

উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার উপর আমি কত সংখ্যক দরূপ পড়ব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তোমার যত ইচ্ছা।” উবাই (রাঃ) বললেন, “এক-চতুর্থাংশ?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তোমার যত ইচ্ছা, যদি আরো বেশি পড় তবে তোমার জন্য তা ভালো।” তিনি (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, “দুই-তৃতীয়াংশ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, “তোমার যত ইচ্ছা, যদি আরো বেশি পড় তবে তা ভাল।” তারপর তিনি বললেন, সুব দুরূদ আপনার জন্য পড়ব” নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, “তাহলে তোমাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তোমার দুশ্চিন্তার প্রতি খেয়াল রাখা হবে।”

উপরোক্ত হাদীসের শেষ কথা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ শরীফ পৌছালে দুশ্চিন্তা দূর হয়।

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

“হে আল্লাহ! আপনি ইব্রাহীম (আঃ) ও তার অনুসারীদের উপর যেমন শান্তি বর্ষণ করেছেন তেমনি মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি ইব্রাহীম ও তার

পরিবার পরিজনের উপর যেমন কল্যাণ বর্ষণ করেছেন তেমনি মুহাম্মদ ও তার পরিবার পরিজনের উপর কল্যাণ বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।”

দেখানো হচ্ছেঃ ১৪১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৪৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে

দান সাদকা দাতার জন্য শান্তি বয়ে আনে

যে সব বিষয় শান্তি বয়ে আনে তার মধ্যে অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা ও অন্যকে দান করা অন্যতম।

“আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় কর।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-২৫৪)

“যে সব নারী-পুরুষ দান করে।” (৩৩-সূরা আল আহযাবঃ আয়াত-৩৫)

“যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবং (আল্লাহর নিকট তাদের দানের পুরস্কার পাবেন এই) দৃঢ় আশাসহ আল্লাহ্‌র রাস্তায় দান করেন তাদের উদাহরণ ঐ বাগানের মতে যা উচ্চস্থানে, অতপর সেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হয় ফলে এর ফলমূল দ্বিগুণ উৎপাদিত হয়, যদি সেখানে মুষলধারে বৃষ্টিপাত নাও হয় তবে অল্প বৃষ্টিই যথেষ্ট হয়।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-২৬৫)

“এবং কৃপণের মতো) তোমার হাতকে তোমার ঘাড়ের নিকট গুটিয়ে রেখে না।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত-২৯)

কৃপণ লোকের অবস্থা শোচনীয় এবং সর্বদা অশান্তিবোধ করে, তারা আল্লাহর রহমতের ভাগ নিতে ব্যয়কুণ্ঠ বা কৃপণ। (অর্থাৎ তারা কৃপণ হওয়ার কারণে দান করতে পারে না হলে আল্লাহর রহমতও অর্জন করতে পারেনা।)

কৃপণ ব্যক্তি যদি শুধুমাত্র একথা জানতো যে, গরীবদের জন্য টাকা-পয়সা খরচ করে সে সুখ অর্জন করতে পারবে তবে সে অবশ্যই দানের প্রতিযোগিতা করত।

“যদি তোমরা আল্লাহকে করযে হাসানাহ দিতে তবে আল্লাহ তা তোমাদের জন্য দ্বিগুণ করে দিতেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন।” (৬৪-সূরা আত তাগাবুনঃ আয়াত-১৭)

“আর যাকে তার কাপর্ণ বা লোভ থেকে রক্ষা করা হয়; ফলত তারই সফলকাম।” (৫৯-সূরা আল হাশরঃ আয়াত-৯)

“এবং তারা যারা আমি তাদেরকে যা দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-৩) অর্থাৎ তারা যাকাত দেয়; নিজেদের জন্য, তাদের পিতা-মাতার জন্য, তাদের সন্তানদের জন্য, তাদের স্ত্রীদের জন্য, ইত্যাদি নানা বিষয়ে তাদের সম্পদ ব্যয় করে এবং গরীবদেরকে দান করে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে যথা জিহাদ ইত্যাদি কাজে দান করে।

হাতেম তাই তার স্ত্রীকে বলেছিলেন-

إذا ما صنعت الزاد، فالتمسي لهُ ٭ أكيلاً، فإني لست آكلهُ وحدي

“যখন তুমি খাদ্য তৈরি করবে তখন একজন খাদককে দাওয়াত করিও, কেননা আমি তা একাকী খাব না।”

তারপর তিনি তার স্ত্রীর নিকট তার দর্শন ব্যক্ত করে বলেছেন-

أريني كريماً مات مِنْ قبلِ حِينهِ ٭ فيرضى فؤادي أو بخيلاً مخلدَّا

আমাকে এমন একজন দয়ালু দেখাও যে নাকি (দান করে অভাবে পড়ে না খেয়ে) তার মৃত্যুর সময়ের আগেই মারা গেছে। অথবা এমন একজন কৃপণ দেখাও যে নাকি (দান না করে ধনী হয়ে) চিরকাল বেঁচে থাকবে, তবেই আমার মন শান্তি পাবে।”

রাগ শয়তানের অস্ত্র

“আর যদি তোমার মনে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা আসে তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।” (৭-সূরা আল আরাফঃ আয়াত-২০০)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার একজন সাহাবীকে এই বলে উপদেশ দিয়েছিলেন যে, ‘তুমি রাগ করিও না’ একথা তিনি তিনবার বলেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে যখন এক লোক রাগান্বিত হয়েছিল তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাইতে আদেশ করেছিলেন।

“এবং আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, হে আমার প্রতিপালক! যাতে শয়তানরা আমার নিকট হাজির হতে না পারে।" (২৩-সূরা আল মু'মিনূনঃ আয়াত-৯৮)

“নিশ্চয় যারা মুত্তাকী, তাদেরকে যখন শয়তান কুমন্ত্রণা দেয় তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে, ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের অন্তদৃষ্টি খুলে যায়।” (৭-সূরা আল আরাফঃ আয়াত-২০১)

যা মানুষকে হতাশ ও বিষন্ন করে ক্রোধও তার মধ্যে একটি। নিচে রাগ দমন করার কয়েকটি পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-

রাগ করলেন তো হেরে গেলেন, রাগকে দমন করুন

১. রাগকে আপনার শক্ৰ মনে করে তা দমন করার জন্য প্রতিযোগিতা করুন।

“এবং ক্রোধ সংবরণকারীগণ এবং মানুষদেরকে ক্ষমাকারীগণ, আর নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সৎকর্মপরায়ণদের ভালবাসেন।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৩৪)

“আর যখন তারা ক্রুদ্ধ হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।” (৪২-সূরা আশ শূরাঃ আয়াত-৩৭)

“আর যখন মূসার রাগ পড়ল তখন তিনি ফলকগুলো তুলে নিলেন।” (৭-সূরা আল আরাফঃ আয়াত-১৫৪)

২. অযু করুন, কেননা ক্রোধ আগুনের একটি কণা, এটাকে পানি দ্বারা নিভানো যায়।

৩ আপনি দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়ুন আর বসা অবস্থায় থাকলে শুয়ে পড়ুন।

৪. ক্রুদ্ধ অবস্থায় চুপ থাকুন।

৫. যারা রাগ দমন করে ও যারা ক্ষমা করে তাদের পুরস্কারের কথা স্মরণ করুন।

সকালে এই দোয়াগুলো পাঠ করুন

এ অধ্যায়ে যে দু'আগুলো লিখা আছে আপনি যদি তা প্রতিদিন পড়েন তবে এগুলো আপনার সুখ বয়ে আনতে সাহায্য করবে, আপনাকে মানুষ ও জ্বীন শয়তান থেকে রক্ষা করবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত বাকি দিনের জন্য আপনাকে রক্ষা করবে।

أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، رَبِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوءِ الْكِبَرِ، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ

اللّهُـمَّ عالِـمَ الغَـيْبِ وَالشّـهادَةِ فاطِـرَ السّماواتِ وَالأرْضِ رَبَّ كـلِّ شَـيءٍ وَمَليـكَه، أَشْهَـدُ أَنْ لا إِلـهَ إِلاّ أَنْت، أَعـوذُ بِكَ مِن شَـرِّ نَفْسـي وَمِن شَـرِّ الشَّيْـطانِ وَشِـرْكِه ، وَأَنْ أَقْتَـرِفَ عَلـى نَفْسـي سوءاً أَوْ أَجُـرَّهُ إِلـى مُسْـلِم

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

এ দোয়া তিনবার পড়বেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَصْبَحْتُ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَكَ، وَجَمِيعَ خَلْقِكَ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ

এ দু’আ তিন বার পড়বেন।

أَصْبَـحْـنا عَلَى فِطْرَةِ الإسْلاَمِ، وَعَلَى كَلِمَةِ الإِخْلاَصِ، وَعَلَى دِينِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعَلَى مِلَّةِ أَبِينَا إبْرَاهِيمَ حَنِيفاً مُسْلِماً وَمَا كَانَ مِنَ المُشْرِكِينَ

তিন বার।

سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ ، عَدَدَ خَلْقِهِ ، وَرِضَا نَفْسِهِ ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ

তিন বার।

رضيت بالله ربّاً وبالإسلام ديناً وبمحمّدٍ صلّى الله عليه وسلم نبيّاً

তিন বার।

أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ

তিন বার।

اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ أَمْسَيْنَا وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوتُ وَإِلَيْكَ النُّشُورُ

لا إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

একশ বার।

আল্লাহর কর্তৃত্বকে স্বীকার করুন

আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে, যখন কেউ সকল আশা-ভরসা হারিয়ে ফেলে তখন সে (আল্লাহকে বাদ দিয়ে) নিজের উপর নির্ভর করে (আর আল্লাহ যখন তার উপর রাগ হন তখন তিনি তাকে দিয়ে এ কাজ করান) একথাই বুঝা যায়। আর যখন কেউ আল্লাহর উপর নির্ভর করে তখন আল্লাহ (তার উপর খুশি হয়ে) তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন এটাই বুঝা যায়।

আল্লাহর বান্দাগণ সর্বদা প্রথম অবস্থা থেকে দ্বিতীয় অবস্থায় দোল খেতে থাকে। একই সময়ে কারো আবার উভয় অবস্থাই হতে পারে। তাই সে আল্লাহর আনুগত্য করে এবং তাকে সন্তুষ্ট করে, সে আল্লাহর জিকির করে ও তার শোকরিয়া আদায় করে এবং সে এগুলো একমাত্র আল্লাহর সাহায্যেই করতে পারে। কিছু পরে সে আল্লাহকে অমান্য করে তার আদেশের বিরুদ্ধে যায়, তার ক্রোধ অর্জন করে এবং সাধারণত সে আল্লাহকে ভুলে যায়, কারণ সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজের উপর নির্ভর করে। অতএব, আল্লাহর বান্দাগণ সর্বদা তার স্বর্গীয় বা জান্নাতী যত্নের মাঝে ও পরিত্যক্ত অবস্থার মাঝে দোল খেতে থাকে।

যখন আল্লাহর কোন বান্দা লক্ষ্য করে যে, সে এক অবস্থা থেকে অপর অবস্থায় পরিবর্তিত হচ্ছে তখন তার উচিত তার দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থাকে অনুধাবন করা ও প্রতি দমে ও তার জীবনের প্রতি মুহুর্তে আল্লাহর সাহায্যের অতীব প্রয়োজনীয়তাকে অনুধাবন করা। তার ঈমান তো আল্লাহর মালিকানার। আল্লাহ্‌ যদি তাকে এক পলকের জন্য একাকী ছেড়ে দেন তবে তার ঈমান মাটিতে মিশে যাবে বা ধুলোয় লুন্ঠিত হবে। অতএব আপনার বুঝা উচিত যে তিনিই আপনার ঈমানকে রক্ষা করছেন যিনি না কি আসমানকে জমিনে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।

আল কুরআন এক মোবারক কিতাব

আপনি যখন কুরআন তেলাওয়াত করেন ও এর অর্থ বুঝার জন্য ধ্যান করেন তখন আপনি সুখ অর্জনের দিকে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নিলেন। আল্লাহ কুরআনকে পথ নির্দেশনা, আলো এবং অন্তরের ব্যাধির আরোগ্যকর ঔষধ বলেছেন। তিনি এ গ্রন্থকে রহমত ও দয়া বলেছেন।

قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ

তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে (ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ সম্বলিত কুরআন নামে) এক উপদেশ গ্রন্থ এবং অন্তরের (মূর্খতা, সন্দেহ, মোনাফেকি ও বিরোধিতা ইত্যাদি রোগের) আরোগ্য বিধান এসেছে।” (১০-সূরা ইউনুসঃ আয়াত-৫৭)

“তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখে না না কি (কুরআন বুঝার ব্যাপারে) তাদের অন্তরে তালা মারা আছে?” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতালঃ আয়াত-২৪)

“তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখেনা? যদি এ গ্রন্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য করে নিকট থেকে আসতো তবে তারা এতে অনেক অসংগতি পেত।” (৪-সূরা আন নিসা : আয়াত ৮২)

“এ কিতাব (আল কুরআন) যা আমি আপনার নিকট অবতীর্ণ করেছি তা মোবারক (কিতাব), (আর এটা আমি এ জন্য অবতীর্ণ করেছি) যাতে তারা আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখে।” (৩৮-সূরা ছোয়াদঃ আয়াত-২৯)

কুরআন তেলাওয়াত করা যেমন কল্যাণের কাজ, কুরআন অনুযায়ী আমল করা এবং বিচারের জন্য ও পথ নির্দেশনার জন্য এর শরণাপন্ন হওয়া তেমনই কল্যাণের কাজ।

এক ধাৰ্মিক লোক একবার বলেছেন- “আমি বুঝতে পারলাম যে, হতাশা ও উদ্বিগ্নতার এক মেঘখণ্ড আমার মাথার উপর ঝুলছে। তখন আমি কুরআন নিয়ে কতক্ষণ তেলাওয়াত করলাম। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তখন আমার হতাশা ও উদ্বিগ্নতা দূর হয়ে গেল ও তার স্থানে সুখ ও প্রশান্তি এল।”

“নিশ্চয় এই কুরআন সুদৃঢ় (অর্থাৎ ন্যায়সঙ্গত ও সঠিক) পথ প্রদর্শন করে।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত-৯)

“আর (হে মুহাম্মদ!) এভাবে আমি তোমার নিকট আমার আদেশ থেকে রূহ (তথা প্রত্যাদেশ ও করুণা) ওহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছি।” (৪২-সূরা আশ শুরাঃ আয়াত-৫২)


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



*****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url