যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (১৬) || একজন মুসলিম যে কাজগুলো করতে পারেন না || কবর পাকা করা বা ঘর উঠানো ||





একজন মুসলিম যে কাজগুলো করতে পারেন না


এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

ফরয নামাযের জায়গা পরিবর্তন না করে নফল নামায আদায়

কোন ইমাম সাহেবের তার ফরয নামায শেষে জায়গা পরিবর্তন না করে উক্ত জায়গায়ই কোন নফল নামায আদায় করা
মুগীরাহ্ বিন্ শু’বাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يُصَلِّيْ الْإِمَامُ فِيْ الْـمَوْضِعِ الَّذِيْ صَلَّى فِيْهِ ؛ حَتَّى يَتَحَوَّلَ

‘‘কোন ইমাম সাহেব তার ফরয নামাযের জায়গায় কোন নফল নামায পড়বে না যতক্ষণ না সে জায়গা পরিবর্তন করেছে’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৬১৬)

অপরাধের জন্য স্ত্রীকে চরমভাবে অবজ্ঞা করা

নিজ স্ত্রীর যে কোন মার্জনীয় অপরাধের জন্য তাকে চরমভাবে অবজ্ঞা করা
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً ، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ

‘‘কোন মু’মিন পুরুষ যেন (নিজ স্ত্রী) কোন মু’মিন মহিলাকে ঘৃণাভরে চরমভাবে অবজ্ঞা না করে। কারণ, তার একটি চরিত্রে সে তার উপর অসন্তুষ্ট হলেও তার অন্য চরিত্রে সে তার উপর সন্তুষ্ট হতে পারে’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ১৪৬৯)

কাফিরের পরিবর্তে মু’মিনকে হত্যা

কোন মু’মিনকে কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর বিন্ ’আস্ব্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يُقْتَلُ مُؤْمِنٌ بِكَافِرٍ

‘‘কোন মু’মিনকে কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ২৭৫১)

সূরা বা আয়াত ভুলে যাওয়া

আমি অমুক সূরা কিংবা অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি এমন বলা
আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَقُلْ أَحَدُكُمْ : نَسِيْتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ ، بَلْ هُوَ نُسِّيَ

‘‘তোমাদের কেউ যেন এমন না বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি ; বরং সে বলবে: আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে’’।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

بِئْسَمَا لِلرَّجُلِ أَنْ يَقُوْلَ : نَسِيْتُ سُوْرَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ أَوْ نَسِيْتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ، بَلْ هُوَ نُسِّيَ

‘‘কারোর জন্য এমন বলা খুবই নিকৃষ্ট যে, আমি অমুক অমুক সূরা এবং অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি ; বরং সে বলবেঃ আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে’’। (মুসলিম, হাদীস ৭৯০)

খারাপ শব্দে কথা বলা

কোন কথা ভালো শব্দে বলা সম্ভব হলেও তা খারাপ শব্দে বলা
সাহল বিন্ ’হুনাইফ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَقُلْ أَحَدُكُمْ : خَبُثَتْ نَفْسِيْ ، وَلْيَقُلْ : لَقِسَتْ نَفْسِيْ

‘‘তোমাদের কেউ যেন এমন না বলে যে, আমার অন্তর খবিস কিংবা নোংরা হয়ে গেছে ; বরং বলবে: আমার অন্তর আর পূর্বের অবস্থায় নেই অথবা বলবে: আমার অন্তরের অবস্থা এখন ভালো নয়’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ২২৫১)

ধোঁকা খাওয়ার পরও সতর্ক না হওয়া

কোথাও একবার ধোঁকা খাওয়ার পরও পুনর্বার সেখান থেকে সতর্ক না হওয়া
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يُلْدَغُ الْـمُؤْمِنُ مِنْ جُحْرٍ وَاحِدٍ مَرَّتَيْنِ

‘‘কোন মু’মিন যেন একই গর্ত থেকে দু’ বার দংশিত না হয় তথা একই জায়গায় দু’ বার ধোঁকা না খায়’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ৬১৩৩)


প্রতিবেশীর দেয়ালে কিছু গাড়তে নিষেধ করা

কারোর দেয়ালে তার প্রতিবেশীকে কোন কিছু গাড়তে নিষেধ করা
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَمْنَعْ جَارٌ جَارَهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَهُ فِيْ جِدَارِهِ

‘‘কোন প্রতিবেশী যেন তার কোন প্রতিবেশীকে তার নিজের দেয়ালে (প্রয়োজনবশত) কোন কাঠের টুকরো অথবা অন্য কোন কিছু গাড়তে নিষেধ না করে’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ২৪৬৩)

মানুষের ভয়ে সত্য কথা গোপন করা

একমাত্র মানুষের ভয়েই কোন সত্য কথা জেনেশুনেও প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তা না বলা
আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَلاَ لاَ يَمْنَعَنَّ أَحَدَكُمْ رَهْبَةُ النَّاسِ أَنْ يَقُوْلَ بِحَقٍّ إِذَا عَلِمَهُ وَفِيْ رِوَايَةٍ : إِذَا رَآهُ أَوْ شَهِدَهُ أَوْ سَمِعَهُ فَإِنَّهُ لاَ يُقَرِّبُ مِنْ أَجَلٍ ، وَلاَ يُبَاعِدُ مِنْ رِزْقٍ أَنْ يَقُوْلَ بِحَقٍّ أَوْ يَذْكُرَ بِعَظِيْمٍ

‘‘মানুষের ভয় যেন তোমাদের কাউকে সত্য কথা জেনেশুনেও তা বলতে বাধা না দেয়। কারণ, এ কথা একেবারেই নিশ্চিত যে, সত্য কথা বলার দরুন কারোর মৃত্যু ঘনিয়ে আসে না এবং কারোর রিযিক তার থেকে দূর হয়ে যায় না’’।[1]
[1] (আহমাদ, হাদীস ১১০৩০, ১১৪৯২, ১১৫১৬, ১১৮৪২, ১১৮৪৯ তিরমিযী, হাদীস ২১৯৬ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৪০৭৯ ’হাকিম ৪/৫০৬ ত্বায়ালিসী, হাদীস ২১৫৬)

সুস্থ ব্যক্তির নিকট বিনা প্রয়োজনে রুগ্ন ব্যক্তির গমন

কোন রুগ্ন ব্যক্তির অন্য কোন সুস্থ ব্যক্তির নিকট বিনা প্রয়োজনে গমন করা
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تُوْرِدُوْا الْـمُمْرِضَ عَلَى الْـمُصِحِّ

‘‘তোমরা কোন রুগ্ন ব্যক্তিকে (বিনা প্রয়োজনে) কোন সুস্থ ব্যক্তির নিকট নিয়ে যেও না’’।[1]

এ কথা নিশ্চিত যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে সংক্রামক রোগ বলতে কিছুই নেই। তবে কোন ব্যক্তির ঈমান নিতান্ত দুর্বল হওয়ার দরুন তার নিকট কোন অসুস্থ ব্যক্তি আসার পর সে যে কোনভাবেই অসুস্থ হয়ে পড়লে সে এ কথা স্বভাবতই মনে করতে পারে যে, উক্ত অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখার দরুনই সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ; অথচ তার অসুস্থতা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায়ই হয়েছে। উক্ত অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখার দরুন নয়। তাই উক্ত ভুল চেতনা থেকে যে কোন দুর্বল মু’মিন-মুসলমানকে রক্ষা করার জন্য কোন রুগ্ন ব্যক্তি যেন কোন সুস্থ ব্যক্তির নিকট বিনা প্রয়োজনে না যায়।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ وَلاَ نَوْءَ وَلاَ غُوْلَ ، فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! فَمَا بَالُ الْإِبِلِ تَكُوْنُ فِيْ الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ ، فَيَجِيْءُ الْبَعِيْرُ الْأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ فِيْهَا ، فَيُجْرِبُهَا كُلَّهَا ، قَالَ: فَمَنْ أَعْدَى الْأَوَّلَ؟

‘‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছুই নেই। কুলক্ষণ বলতেই তা একান্ত অমূলক। হুতোম পেঁচা, সফর মাস, রাশি-নক্ষত্র অথবা পথ ভুলানো ভূত কারোর কোন ক্ষতি করতে পারে না। তখন এক গ্রাম্য ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! কখনো এমন হয় যে, মরুভূমির মধ্যে শায়িত কিছু উট। দেখতে যেমন হরিণ। অতঃপর দেখা যাচ্ছে, চর্ম রোগী একটি উট এসে এগুলোর সাথে মিশে গেলো। তাতে করে সবগুলো উট চর্ম রোগী হয়ে গেলো। তখন রাসূল (সা.) বললেন: বলো তো: প্রথমটির চর্ম রোগ কোথা থেকে এসেছে’’?[2]

[1] (বুখারী, হাদীস ৫৭৭১, ৫৭৭৪ মুসলিম, হাদীস ২২২১)
[2] (বুখারী, হাদীস ৫৭০৭, ৫৭১৭, ৫৭৭০, ৫৭৭৩ মুসলিম, হাদীস ২২২০, ২২২২ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯১১, ৩৯১২, ৩৯১৩, ৩৯১৫ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৬০৫, ৩৬০৬ আহ্মাদ : ২/২৬৭, ৩৯৭ আব্দুর রায্যাক : ১০/৪০৪ ত্বাহাওয়ী/মুশ্কিলুল্ আসা-র, হাদীস ২৮৯১)

কবর পাকা করা বা ঘর উঠানো

কবর পাকা করা, কবরের উপর বসা কিংবা কবরের উপর ঘর উঠানো
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ ، وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ ، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ

‘‘রাসূল (সা.) কবর পাকা করতে, কবরের উপর বসতে এবং কবরের উপর ঘর বানাতে নিষেধ করেছেন’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ৯৭০)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব



***************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url