যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (৩৪) || ঘৃণ্য কোন বস্তুকে ওষুধ হিসেবে সেবন || দুধেল পশু যবাই করা ||





একজন মুসলিম হিসেবে যেসব কাজ আপনার জন্য নিষেধ

৩৪-তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ
  • ঘৃণ্য কোন বস্তুকে ওষুধ হিসেবে সেবন
  • দুধেল পশু যবাই করা
  • মূর্তি বা ছবি ছবি ঘরে রাখা

ঘৃণ্য কোন বস্তুকে ওষুধ হিসেবে সেবন

বিষাক্ত, নাপাক, হারাম কিংবা ঘৃণ্য কোন বস্তুকে ওষুধ হিসেবে সেবন করা
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الدَّوَاءِ الْـخَبِيثِ يَعْنِيْ السُّمَّ

‘‘রাসূল (সা.) নাপাক ও ঘৃণ্য তথা বিষাক্ত ওষুধ সেবন করতে নিষেধ করেছেন’’।[1]

ও’য়াইল্ বিন্ ’হুজ্র (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা ত্বারিক বিন্ সুওয়াইদ্ (রা.) নবী (সা.) কে মদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাঁকে তা সেবন করতে নিষেধ করেন। এরপর আবারো তিনি এ সম্পর্কে নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাঁকে আবারো তা সেবন করতে নিষেধ করেন। অতঃপর তিনি বললেন: হে আল্লাহ্’র নবী! এটা তো ওষুধ। তখন নবী (সা.) তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ

لاَ ، وَلَكِنَّهَا دَاءٌ

‘‘না, তা ওষুধ নয়। বরং তা রোগই বটে’’।[2]

উম্মু সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيْمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ

‘‘আল্লাহ্ তা’আলা হারাম বস্তুর মধ্যে তোমাদের জন্য কোন চিকিৎসা রাখেননি’’।[3]

[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৭০ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৫২৩)
[2] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৭৩)
[3] (বাইহাক্বী, হাদীস ১৯৪৬৩ ইবনু হিববান খন্ড ৪ হাদীস ১৩৯১)

দুধেল পশু যবাই করা

কোন দুধেল পশু যবাই করা
’আলী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَبْحِ ذوَاتِ الدَّرِّ

‘‘রাসূল (সা.) দুধেল কোন পশু যবাই করতে নিষেধ করেছেন’’।[1]

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল (সা.) জনৈক আনসারী সাহাবীর বাড়িতে মেহমান হলে তিনি একটি ছুরি হাতে নিয়ে রাসূল (সা.) এর জন্য একটি ছাগল যবাই করতে উদ্যত হলে তিনি তাঁকে বললেন:

إِيَّاكَ وَالْـحَلُوبَ

‘‘সাবধান! কোন দুধেল পশু যবাই করো না’’। [2]

[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৮৮৪)
[2] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩২৪০)

 মূর্তি বা ছবি ছবি ঘরে রাখা

কোন প্রাণীর মূর্তি ঘরে রাখা এবং ছবি উঠানো কিংবা ঘরে টাঙ্গানো
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الصُّورَةِ فِي الْبَيْتِ وَنَهَى أَنْ يُصْنَعَ ذَلِكَ

‘‘রাসূল (সা.) ঘরে ছবি রাখতে এবং তা বানাতেও নিষেধ করেছেন’’।[1]

মূলতঃ ছবি তোলাই ছিলো মূর্তিপূজার প্রথম পর্যায়। শয়তান ইবলিস সর্ব প্রথম নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায়কে তাদের নেক্কারদের ছবি বা মূর্তি বানিয়ে তাদের মজলিসে স্থাপন করতে পরামর্শ দেয়। যাতে করে তাদেরকে স্মরণ করা যায় এবং ইবাদাতের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা যায়। পরবর্তীতে সে ছবি বা মূর্তিগুলোর পূজা শুরু হয়ে যায় এবং তারা কারোর লাভ বা ক্ষতি করতে পারে এমনও মনে করা হয়। এ পরিণতির কথা চিন্তা করেই রাসূল (সা.) ছবি তুলতে নিষেধ করেছেন এবং ছবি উত্তোলনকারীরাই কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।

’আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَشَدُّ النَّاسِ عَذَاباً يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِيْنَ يُضَاهُوْنَ بِخَلْقِ اللهِ

‘‘কিয়ামতের দিন সর্ব কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে ওরা যারা আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টির ন্যায় কোন কিছু বানাতে চায়’’।[2]

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস’ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী (সা.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَاباً عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُصَوِّرُوْنَ

‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সবচেয়ে কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে ওরা যারা (বিনা প্রয়োজনে) ছবি তোলে বা তৈরি করে’’।[3]

’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِيْ النَّارِ ، يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُوْرَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسٌ فَتُعَذِّبُهُ فِيْ جَهَنَّمَ

‘‘প্রত্যেক ছবিকার ও মূর্তি নির্মাতা জাহান্নামী। প্রত্যেক ছবির পরিবর্তে তার জন্য একটি করে প্রাণী ঠিক করা হবে যে তাকে সর্বদা জাহান্নামের মধ্যে শাস্তি দিতে থাকবে’’।[4]

’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: আমি মুহাম্মাদ (সা.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

مَنْ صَوَّرَ صُوْرَةً فِيْ الدُّنْيَا كُلِّفَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْ يَنْفُخَ فِيْهَا الرُّوْحَ ، وَلَيْسَ بِنَافِخٍ

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন ছবি আঁকে বা মূর্তি বানায় কিয়ামতের দিন তাকে সে ছবি বা মূর্তিতে রূহ্ দিতে বলা হবে। কিন্তু সে কখনোই তা করতে পারবে না’’।[5]

’আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، يُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ ، وَإِنَّ الْـمَلَآئِكَةَ لاَ تَدْخُلُ بَيْتاً فِيْهِ الصُّوْرَةُ

‘‘নিশ্চয়ই এ সকল মূর্তি নির্মাতা ও ছবিকারদেরকে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে: তোমরা যা বানিয়েছো তাতে জীবন দাও। কিন্তু তারা কখনো তা করতে পারবে না। নিশ্চয়ই ফিরিশ্তারা এমন ঘরে প্রবেশ করেন না যে ঘরে ছবি বা মূর্তি রয়েছে’’।[6]

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন:

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِيْ ، فَلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً ، وَلْيَخْلُقُـوْا ذَرَّةً ، وَلْيَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً

‘‘সে ব্যক্তির ন্যায় জালিম আর কেউ হতে পারে না? যে আমার সৃষ্টির ন্যায় কোন কিছু বানাতে চায়। মূলতঃ সে কখনোই তা করতে পারবে না। যদি সে তা করতে পারবে বলে দাবি করে তাহলে সে যেন একটি দানা, একটি অণু-পরমাণু এবং একটি যব বানিয়ে দেখায়’’।[7]আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সকলকে উক্ত নিষিদ্ধ কর্ম সমূহ থেকে সর্বদা বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন!

[1] (তিরমিযী, হাদীস ১৭৪৯)
[2] (বুখারী, হাদীস ৫৯৫৪ মুসলিম, হাদীস ২১০৭ বাগাওয়ী, হাদীস ৩২১৫ নাসায়ী : ৮/২১৪ বায়হাক্বী : ২৬৯)
[3] (বুখারী, হাদীস ৫৯৫০ মুসলিম, হাদীস ২১০৯)
[4] (মুসলিম, হাদীস ২১১০)
[5] (বুখারী, হাদীস ২২২৫, ৫৯৬৩, ৭০৪২ মুসলিম, হাদীস ২১১০ বাগাওয়ী, হাদীস= =৩২১৯ নাসায়ী : ৮/২১৫ ইবনু আবী শাইবাহ্ : ৮/৪৮৪-৪৮৫ আহ্মাদ্ : ১/২৪১, ৩৫০ ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস ১২৯০০)
[6] (বুখারী, হাদীস ২১০৫, ৫৯৫৭ মুসলিম, হাদীস ২১০৭)
[7] (বুখারী, হাদীস ৫৯৫৩, ৭৫৫৯ মুসলিম, হাদীস ২১১১ বায়হাক্বী : ৭/২৬৮ বাগাওয়ী, হাদীস ৩২১৭ ইবনু আবী শাইবাহ্ : ৮/৪৮৪ আহ্মাদ্ : ২/২৫৯, ৩৯১, ৪৫১, ৫২৭)

একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব



****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url