যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (১০) || কোন কিছুকে গালি দেয়া || মু’মিন ছাড়া অন্য কারোর সাথে চলাফেরা ||
- মোরগকে গালি দেয়া
- বাতাসকে গালি দেয়া
- জ্বরকে গালি দেয়া
- রিযিক আসতে দেরি হচ্ছে এমন মনে করা
- তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সাওয়াবের নিয়তে সফর করা
- মু’মিন ছাড়া অন্য কারোর সাথে চলাফেরা
- উট, গরু বা ছাগলের স্তনে কয়েক দিনের দুধ জমিয়ে সেগুলোকে কারোর নিকট বিক্রি করা
- উট বসার জায়গায় নামায পড়া
- নিজে যা খায় না এমন কোন জিনিস মিসকিনকে খেতে দেয়া
- একই দিনে কোন ফরয নামায দু’ বার পড়া
মোরগকে গালি দেয়া
যায়েদ বিন্ খালিদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تَسُبُّوْا الدِّيْكَ ؛ فَإِنَّهُ يُوْقِظُ للصَّلاَةِ
‘‘তোমরা মোরগকে গালি দিও না। কারণ, সে মুসল্লীদেরকে নামাযের জন্য জাগিয়ে তোলে’’।[1]
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
إِذَا سَمِعْتُمْ صِيَاحَ الدِّيَكَةِ ؛ فَسَلُوْا اللهَ تَعَالَى مِنْ فَضْلِهِ ؛ فَإِنَّهَا رَأَتْ مَلَكًا ، وَإِذَا سَمِعْتُمْ نَهِيْقَ الْحِمَارِ ؛ فَتَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ؛ فَإِنَّهَا رَأَتْ شَيْطَانًا
‘‘তোমরা যখন মোরগের ডাক শুনবে তখন তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত অনুগ্রহ কামনা করবে। কারণ, মোরগটি তখন নিশ্চয়ই ফিরিশ্তা দেখেছে। আর যখন তোমরা গাধার ডাক শুনবে তখন তোমরা শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ্ তা’আলার আশ্রয় কামনা করবে। কারণ, গাধাটি তখন নিশ্চয়ই শয়তান দেখেছে’’।[2]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৫১০১)
[2] (আবু দাউদ, হাদীস ৫১০২)
বাতাসকে গালি দেয়া
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تَسُبُّوْا الرِّيْحَ ؛ فَإِنَّهَا مِنْ رَوْحِ اللهِ تَعَالَى ، تَأْتِيْ بِالرَّحْمَةِ وَالْعَذَابِ ، وَلَكِنْ سَلُوْا اللهَ مِنْ خَيْرِهَا ، وَتَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ شَرِّهَا
‘‘তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। কারণ, তা মূলত আল্লাহ্ তা’আলার রহমত। তবে তা কখনো আল্লাহ্ তা’আলার রহমত নিয়ে আসে। আবার কখনো তাঁর আযাব। তাই তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট উহার কল্যাণ কামনা করো এবং তাঁর নিকট উহার অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাও’’।[1]
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৭৩১৬)
জ্বরকে গালি দেয়া
জাবির বিন্ ’আব্দুল্লাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল (সা.) উম্মুস্-সা-ইব অথবা উম্মুল্-মুসাইয়াবের নিকট গিয়ে তাঁকে বললেনঃ তোমার কি হলো ? হে উম্মুস্-সা-ইব অথবা হে উম্মুল্-মুসাইয়াব! তুমি কাঁপছো কেন ? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমি তো জ্বরে কাঁপছি। আল্লাহ্ তা’আলা তাতে বরকত না দিক!! রাসূল (সা.) বললেন:
لاَ تَسُبِّيْ الْـحُمَّى ، فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِيْ آدَمَ ، كَمَا يُذْهِبُ الْكِيْرُ خَبَثَ الْـحَدِيْدِ
‘‘তুমি জ্বরকে গালি দিও না। কারণ, জ্বর তো আদম সন্তানের পাপরাশি মুছে দেয়। যেমনিভাবে রেত লোহার মরিচা দূর করে দেয়’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ২৫৭৫)
রিযিক আসতে দেরি হচ্ছে এমন মনে করা
মূলতঃ প্রত্যেকের রিযিক তার নিজ সময় মতোই আসে। তা আসতে এতটুকুও দেরি হয় না।
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تَسْتَبْطِئُوْا الرِّزْقَ ؛ فَإِنَّهُ لَمْ يَكُنْ عَبْدٌ لِيَمُوْتَ حَتَّى يَبْلُغَهُ آخِـرُ رِزْقٍ هُوَ لَهُ ، فَاتَّقُوْا اللهَ ، وَأَجْمِلُوْا فِيْ الطَّلَبِ ؛ أَخْذِ الْحَلاَلِ ، وَتَرْكِ الْحَرَامِ
‘‘তোমরা তোমাদের রিযিক আসতে দেরি হচ্ছে এমন মনে করো না। কারণ, কোন বান্দাহ্ মরবে না যতক্ষণ না তার শেষ রিযিকটুকু তার নিকট পৌঁছে। অতএব তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় করো এবং রিযিক অনুসন্ধানে শরীয়তের সুন্দর পথ অবলম্বন করো। তথা হালাল গ্রহণ করো এবং হারামকে বর্জন করো’’।[1]
[1] (স’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৭৩২৩)
তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সাওয়াবের নিয়তে সফর করা
আবু সা’ঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تُشَدُّ الرِّحَـالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ : مَسْجِدِ الْـحَرَامِ ، وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى ، وَمَسْجِدِيْ
‘‘তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও সাওয়াবের নিয়্যাতে সফর করা যাবে না। সে মসজিদগুলো হলোঃ হারাম (মক্কা) শরীফ, মসজিদে আক্সা এবং মসজিদে নববী’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ১১৯৭, ১৯৯৫ মুসলিম, হাদীস ৮২৭ তিরমিযী, হাদীস ৩২৬)
মু’মিন ছাড়া অন্য কারোর সাথে চলাফেরা
আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا ، وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إلاَّ تَقِيٌّ
‘‘একজন খাঁটি ঈমানদার ছাড়া তুমি অন্য কারোর সাথে চলাফেরা করো না এবং একজন মুত্তাকী তথা আল্লাহ্ভীরু ছাড়া অন্য কেউ যেন তোমার খানা না খায়’’।[1] তবে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা কিংবা কাউকে নসীহত করা অথবা কাউকে ইসলামের দিকে দা’ওয়াত দেয়ার জন্য তার সঙ্গ দেয়া কিংবা তাকে খানা খাওয়ানো যেতে পারে।
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৩২ তিরমিযী, হাদীস ২৩৯৫)
উট, গরু বা ছাগলের স্তনে কয়েক দিনের দুধ জমিয়ে সেগুলোকে কারোর নিকট বিক্রি করা
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تَصُرُّوْا الْإِبِلَ وَالْغَنَمَ ، فَمَنِ ابْتَاعَهَا بَعْدُ فَإِنَّهُ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ بَعْدَ أَنْ يَحْتَلِبَهَا : إِنْ شَاءَ أَمْسَكَ وَإِنْ شَاءَ رَدَّهَا وَصَاعَ تَمْرٍ ، وَفِيْ رِوَايَةٍ : صَاعًا مِنْ طَعَامٍ وَهُوَ بِالْخِيَارِ ثَلاَثًا ، وَفِيْ رِوَايَةٍ : صَاعًا مِنْ طَعَامٍ لاَ سَمْرَاءَ
‘‘তোমরা উট ও ছাগলের দুধ কয়েক দিন যাবৎ স্তনে জমিয়ে রেখো না। এমন করার পরও কেউ যদি তা খরিদ করে তা হলে সে দুধ দোহনের পর দু’ মতের ভালোটি গ্রহণ করবে। যদি সে চায় পশুটি এমতাবস্থায় নিজের কাছে রেখে দিবে। আর যদি চায় তা ফেরত দিবে এবং তার সাথে এক সা’ (দু’ কিলো ৪০ গ্রাম) খেজুর। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এক সা’ খাদ্য এবং সে তিন দিন বিবেচনার সুযোগ পাবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এক সা’ খাদ্য। তবে গম নয়’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ২১৪৮ মুসলিম, হাদীস ১৫২৪)
উট বসার জায়গায় নামায পড়া
বারা’ বিন্ ’আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল (সা.) কে উট বসার জায়গায় নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
لاَ تُصَلُّوْا فِيْ مَبَارِكِ الْإِبِلِ ؛ فَإِنَّهَا مِنَ الشَّيَاطِيْنِ
‘‘তোমরা উট বসার জায়গায় নামায পড়ো না। কারণ, উট হচ্ছে শয়তানের জাত’’।
তেমনিভাবে তাঁকে ছাগল বসার জায়গায় নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
صَلُّوْا فِيْهَا ؛ فَإِنَّهَا بَرَكَةٌ
‘‘তাতে নামায পড়বে। কারণ, ছাগল হচ্ছে বরকতময় পশু’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৩)
নিজে যা খায় না এমন কোন জিনিস মিসকিনকে খেতে দেয়া
আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تُطْعِمُوْا الْمَسَاكِيْنَ مِمَّا لاَ تَأْكُلُوْنَ
‘‘তোমরা যা খাও না মিসকিনদেরকে তা থেকে খেতে দিও না’’।[1]
[1] (স’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৭৩৬৪)
একই দিনে কোন ফরয নামায দু’ বার পড়া
মাইমূনাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এর আযাদ করা গোলাম সুলাইমান (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কে মসজিদের মেঝে বসে থাকতে দেখলাম ; অথচ অন্যরা সবাই জামাতে নামায পড়ছে। তখন আমি বললাম: হে আব্দুর রহমানের পিতা! আপনি সবার সাথে নামায পড়ছেন না কেন ? উত্তরে তিনি বললেন: আমি ইতিপূর্বে উক্ত নামাযটি পড়েছি। আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تُعَادُ الصَّلاَةُ فِيْ يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ
‘‘একই দিনে কোন (ফরয) নামায দু’ বার পড়া যায় না’’।[1]
তবে কেউ কোন ফরয নামায পড়ার পর অন্যদেরকে উক্ত নামায জামাতে পড়তে দেখলে তাদের সাথে নফলের নিয়্যাতে দাঁড়িয়ে যাবে।
একদা মি’হজান (রা.) রাসূল (সা.) এর সাথে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় নামাযের আযান হয়ে গেলো। রাসূল (সা.) সেখান থেকে উঠে গিয়ে নামায শেষ করে এসে দেখলেন, মি’হজান (রা.) সেখানেই বসে আছেন। তখন তিনি তাঁকে বললেনঃ তুমি নামায পড়লে না কেন ? তুমি কি মুসলমান নও? তিনি বললেন: অবশ্যই আমি মুসলমান। তবে আমি নিজ এলাকায় নামায পড়ে এসেছি। তখন রাসূল (সা.) বললেন:
إِذَا جِئْتَ فَصَلِّ مَعَ النَّاسِ وَإِنْ كُنْتَ قَدْ صَلَّيْتَ
‘‘যখন তুমি এমতাবস্থায় আসবে তখনও তুমি মানুষের সাথে নামায পড়বে। যদিও তুমি ইতিপূর্বে নামায পড়ে থাকো’’।[2]
[1] (নাসায়ী, হাদীস ৮৬২)
[2] (নাসায়ী, হাদীস ৮৫৯)
একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ট পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব ৯ম পর্ব ১০ম পর্ব ১১তম পর্ব ১২তম পর্ব ১৩তম পর্ব ১৪তম পর্ব ১৫তম পর্ব ১৬তম পর্ব ১৭তম পর্ব ১৮তম পর্ব ১৯তম পর্ব ২০ম পর্ব ২১তম পর্ব ২২তম পর্ব ২৩তম পর্ব ২৪তম পর্ব ২৫তম পর্ব ২৬তম পর্ব ২৭তম পর্ব ২৮তম পর্ব ২৯তম পর্ব ৩০ম পর্ব ৩১তম পর্ব ৩২তম পর্ব ৩৩তম পর্ব ৩৪ম পর্ব
****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url