যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (২৬) || বেশকম করে বিক্রি করা || মসজিদে ঝগড়া-বিবাদ করা || নামাযের মধ্যে কোন কিছু স্পর্শ করা ||






২৬-তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

সাদাকার পশুগুলো এক জায়গায় নিয়ে আসতে বলা

পশুর সাদাকা গ্রহণকারী সবার বাড়ি বাড়ি না গিয়ে কোন এক নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করে তার নিকট সাদাকার পশুগুলো নিয়ে আসতে বলা
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর বিন্ ’আস্ব (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ جَلَبَ وَلاَ جَنَبَ ، وَلاَ تُؤْخَذُ صَدَقَاتُهُمْ إِلاَّ فِيْ دُوْرِهِمْ

‘‘সাদাকা গ্রহণকারী কোন এক নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করে তার নিকট সাদাকার পশুগুলো নিয়ে আসতে বলা যাবে না। না সাদাকার পশুগুলো পূর্ব থেকেই ভিন্ন করে তার নিকট নিয়ে আসতে বলা হবে। বরং মানুষের সাদাকাগুলো তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েই উসুল করতে হবে’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ১৫৯১)

বেশকম করে বিক্রি করা

স্বর্ণকে স্বর্ণের বিনিময়ে কিছু বেশকম করে বিক্রি করা
ফাযালাহ্ বিন্ ’উবাইদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি খাইবার দিবসে একটি হার বারো দীনার দিয়ে কিনিছিলাম। যাতে ছিলো কিছু সোনা ও কয়েকটি পাথর দানা। অতঃপর আমি তা ভিন্নভাবে হিসেব করে দেখলাম তাতে বারো দীনারের বেশি স্বর্ণ রয়েছে। নবী (সা.) এর নিকট ব্যাপারটি বলা হলে তিনি বললেন:

لاَ تُبَاعُ حَتَّى تُفَصَّلَ

‘‘এমনিভাবে কোন হার আর বিক্রি করা হবে না যতক্ষণ না তা ভিন্নভাবে হিসেব করে দেখা হয়’’।

সাদাকা করা বস্তুটি পুনরায় খরিদ করা

নিজের সাদাকা করা বস্তুটি পুনরায় খরিদ করা
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) একদা ’উমর (রা.) কে একটি ঘোড়া দিলে তিনি ঘোড়াটি জনৈক ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা’আলার পথে যুদ্ধ করার জন্য সাদাকা করে দিলেন। একদা তিনি শুনলেন ঘোড়াটি বিক্রি করার জন্য তা বাজারে উপস্থিত করা হয়েছে। তখন তিনি তা কেনার জন্য রাসূল (সা.) এর পরামর্শ চাইলে রাসূল (সা.) তাঁকে বললেন:

لاَ تَبْتَعْهُ ، وَلاَ تَرْجِعَنَّ فِيْ صَدَقَتِكَ

‘‘তুমি তা খরিদ করো না এবং তোমার সাদাকায় পুনরায় ফিরে যেও না’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ২৭৭৫ মুসলিম, হাদীস ১৬২১)

মসজিদে বাজারের ন্যায় ঝগড়া-বিবাদ করা

যে কোন ব্যাপার নিয়ে মসজিদে বাজারের ন্যায় ঝগড়া-বিবাদ করা
আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’উদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

وَلاَ تَخْتَلِفُوْا فَتَخْتَلِفَ قُلُوْبُكُمْ ، وَإِيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الأَسْوَاقِ

‘‘তোমরা বিভেদ করো না তা হলে তোমাদের অন্তরে ভিন্নতা সৃষ্টি হবে। আর তোমরা মসজিদে বাজারের ন্যায় কোলাহল ও দ্বন্দ্ব-বিরোধ থেকে দূরে থাকবে’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ৪৩২ আবু দাউদ, হাদীস ৬৭৫)

উলঙ্গ হয়ে রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করা

পুরো কিংবা অর্ধ উলঙ্গ হয়ে রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করা
মিস্ওয়ার বিন্ মাখরামাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি একটি বড়ো পাথর বহন করছিলাম। এমতাবস্থায় চলতে চলতে আমার পরনের কাপড়টি খুলে গেলো। তখন রাসূল (সা.) আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

خُذْ عَلَيْكَ ثَوْبَكَ ، وَلاَ تَمْشُوْا عُرَاةً

‘‘তুমি তোমার (খুলে যাওয়া) কাপড়টি পরে নাও। উলঙ্গ হয়ে চলো না’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৪০১৫)

নামাযের মধ্যে কোন কিছু স্পর্শ করা

নামাযের মধ্যে পাথর কিংবা অন্য কোন কিছু স্পর্শ করা
মু’আইক্বীব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَمْسَحْ وَأَنْتَ تُصَلِّيْ ، فَإِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَوَاحِدَةً تَسْوِيَةَ الْـحَصَى

‘‘তুমি নামায পড়াবস্থায় মুছা জাতীয় কোন কাজ করতে যাবে না। একান্ত যদি তা করতেই হয় তা হলে তা একবারই করবে শুধু পাথরগুলো সমান করার জন্য’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৯৪৬)

সাবালক হওয়ার পরও এতীম বলা

কোন সন্তান সাবালক হওয়ার পরও এতীম অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করা
’আলী বিন্ আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) থেকে যে হাদীসগুলো মুখস্থ করেছি তার মধ্যে এও যে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يُتْمَ بَعْدَ احْتِلاَمٍ ، وَلاَ صُمَاتَ يَوْمٍ إِلَى اللَّيْلِ

‘‘সাবালক হওয়ার পর কোন সন্তান আর এতীম থাকে না এবং সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত পুরো দিন চুপ থাকার মধ্যেও কোন সাওয়াব নেই’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ২৮৭৩)

খাদ্য দ্রব্য গুদামে স্টক করে মূল্য বাড়িয়ে দেয়া

কোন খাদ্য দ্রব্য গুদামে স্টক করে পরিকল্পিতভাবে তার মূল্য বাড়িয়ে দেয়া
মা’মার বিন্ আবু মা’মার (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ يَحْتَكِرُ إِلاَّ خَاطِئٌ

‘‘একমাত্র কোন অপরাধী ব্যক্তিই খাদ্য দ্রব্য স্টক করতে পারে’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৪৭)

ক্রেতা-বিক্রেতার যে কারোর দ্রুত প্রস্থান করা

অন্য জনকে চুক্তি থেকে রুজু করার সুযোগ না দেয়ার মানসিকতায় ক্রেতা-বিক্রেতার যে কারোর উক্ত স্থান থেকে দ্রুত প্রস্থান করা
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর বিন্ ’আস্ব্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

الْـمُتَبَايِعَانِ بِالْـخِيَارِ مَا لَمْ يَفْتَرِقَا إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَفْقَةَ خِيَارٍ ، وَلَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يُفَارِقَ صَاحِبَهُ خَشْيَةَ أَنْ يَسْتَقِيلَهُ

‘‘ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই স্বাধীন (উক্ত ব্যবসায়িক চুক্তি ভঙ্গের ব্যাপারে) যতক্ষণ না তারা একে অপর থেকে পৃথক হয়ে যায়। তবে যদি তারা মূল চুক্তিতেই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যে কোন কারোর অথবা উভয়েরই স্বাধীনতার শর্ত রেখে থাকে তা হলে সে সময় পর্যন্ত উক্ত ব্যক্তির জন্য তা বহাল থাকবে। উপরন্তু এদের কারোর জন্য জায়িয হবে না তার ব্যবসায়িক সাথী থেকে দ্রুত পৃথক হয়ে যাওয়া অন্যের পক্ষ থেকে চুক্তি ভঙ্গের ভয়ে’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৫৬)

ফসলের বিনিময়ে জমিন ভাড়া দেয়া

জমিনের কোন নির্দিষ্ট অংশের ফসলের বিনিময়ে উক্ত জমিন কারোর নিকট ভাড়া দেয়া
সা’দ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كُنَّا نُكْرِي الْأَرْضَ بِمَا عَلَى السَّوَاقِي مِنْ الزَّرْعِ وَمَا سَعِدَ بِالـْمَاءِ مِنْهَا فَنَهَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَلِكَ وَأَمَرَنَا أَنْ نُكْرِيَهَا بِذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ

‘‘আমরা নালার পাড়ের ফসলের বিনিময়ে যাতে নালার পানি সহজে পৌঁছে জমিন ভাড়া দিতাম। রাসূল (সা.) তা করতে নিষেধ করেন এবং তিনি সোনা-রূপার বিনিময়ে জমিন ভাড়া দিতে আদেশ করেন’’।[1]

রাসূল (সা.) কেন জমিনের নির্দিষ্ট কোন অংশের বিনিময়ে তা ভাড়া দিতে নিষেধ করেছেন তা নিম্নোক্ত রাফি’ বিন্ খাদীজ্ (রা.) এর হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। ’হানযালাহ্ বিন্ ’ক্বাইস্ আনসারী (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাফি’ বিন্ খাদীজ্ (রা.) কে সোনা-রূপার বিনিময়ে জমিন ভাড়া দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: তাতে কোন অসুবিধে নেই। রাসূল (সা.) এর যুগে লোকেরা নদী-নালার পাড়ের এবং নির্দিষ্ট কোন অংশের ফসলের বিনিময়ে জমিন ভাড়া দিতো। তখন দেখা যেতো উক্ত নির্দিষ্ট অংশটুকুতেই শুধুমাত্র ফসল হয়েছে। অন্যটুকুতে নয়। অথবা অন্যটুকুতেই শুধুমাত্র ফসল হয়েছে। উক্ত নির্দিষ্ট অংশটুকুতে নয়। আর তখন এভাবেই ভাড়া চলতো। তখন রাসূল (সা.) তা করতে নিষেধ করেন। তবে নির্ধারিত যা কিছুর নিশ্চয়তা রয়েছে তার বিনিময়ে অবশ্যই ভাড়া দেয়া যাবে।[2]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৩৯১)
[2] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৩৯২)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব





****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url