যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (২৮) || মুশরিকের জন্য মাগ্ফিরাত কামনা || ‘আমি মোসলমানই নই’ এমন কসম খাওয়া || ‘বিসমিল্লাহ্’ না বলা ||





যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ

২৮-তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

মুশরিকের জন্য মাগ্ফিরাত কামনা

মৃত্যুর পর কোন মুশরিকের জন্য মাগ্ফিরাতের দু’আ করা
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ

‘‘কোন নবী কিংবা ঈমানদার ব্যক্তির জন্য এটি জায়িয নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা তাদের নিকটতম আত্মীয়-স্বজন হোক না কেন। যখন তারা সুস্পষ্টভাবে এ কথা জানে যে, নিশ্চয়ই ওরা জাহান্নামী’’। (তাওবাহ্ : ১১৩)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

زَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ ، فَقَالَ: اسْتَأْذَنْتُ رَبِّيْ فِيْ أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِيْ ، وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِيْ أَنْ أَزُوْرَ قَبْـرَهَا فَأَذِنَ لِيْ ، فَزُوْرُوْا الْقُبُوْرَ ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْـمَوْتَ

‘‘একদা নবী (সা.) নিজ মায়ের কবর যিয়ারত করলেন। তখন নিজেও কাঁদলেন এবং আশপাশের সকলকেও কাঁদালেন। অতঃপর তিনি বললেন: আমি আমার প্রভুর নিকট আমার মায়ের মাগ্ফিরাত কামনার অনুমতি চাইলে তিনি তা নামঞ্জুর করেন। তাই আমি তাঁর নিকট আমার মায়ের মাগ্ফিরাত কামনা না করে শুধু তার কবরটি যিয়ারতের অনুমতি চাইলাম। তখন তিনি তা মঞ্জুর করলেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কারণ, তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়’’।[1]

[1] (মুসলিম, হাদীস ৯৭৬ আবু দাউদ, হাদীস ৩২৩৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১৫৯৪ ইবনু হিববান/ইহ্সা’ন, ৩১৫৯ বাগাওয়ী, হাদীস ১৫৫৪ নাসায়ী : ৪/৯০ আহ্মাদ্ : ২/৪৪১ হা’কিম : ১/৩৭৫ বায়হাক্বী : ৪/৭০, ৭৬ ও ৭/১৯০)

সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজে কথা বলা

সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজে কথা বলার চেষ্টা করা
মূলতঃ নিয়ম হচ্ছে, আপনি অন্যদের কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করবেন। অতঃপর তারা চুপ করলে আপনি আপনার কথা বলবেন।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا قُلْتَ لِلنَّاسِ أَنْصِتُوا وَهُمْ يَتَكَلَّمُونَ فَقَدْ أَلْغَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ

‘‘যখন তুমি অন্যদেরকে বললেঃ তোমরা চুপ করো ; অথচ তখনো তারা কথা বলছে তা হলে তুমি যেন নিজকে একটি অযথা কাজে ব্যস্ত করলে’’।[1]
[1] (আহমাদ্, হাদীস ৭৮৮৭, ৮২৩৫)

‘আমি মোসলমানই নই’ এমন কসম খাওয়া

কসম খাওয়ার সময় এমন বলা: ’আমার কথা যদি সঠিক না হয় তাহলে আমি মোসলমানই নই’
বুরাইদাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ قَالَ : إِنِّي بَرِيءٌ مِنْ الْإِسْلَامِ ؛ فَإِنْ كَانَ كَاذِبًا فَهُوَ كَمَا قَالَ ، وَإِنْ كَانَ صَادِقًا لَمْ يَعُدْ إِلَى الْإِسْلَامِ سَالِمًا

‘‘যে ব্যক্তি কসম খাওয়ার সময় এমন বলে: ’’আমার কথা যদি সঠিক না তা হলে আমি মোসলমানই নই’’। এর পরিপ্রেক্ষিতে মূলতঃ সে যদি তার কসমে মিথ্যুকই হয়ে থাকে তা হলে সে আর মোসলমানই থাকলো না। আর যদি সে তার কসমে সত্যবাদীই হয়ে থাকে তা হলে সে আর ইসলামের দিকে পুনরায় সম্পূর্ণরূপে নিরাপদভাবে ফিরে আসলো না’’।[1]
[1] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২১৩০)

মহিলার এমন কথা বলা বা আচরণ করা যা দেখে পুরুষের মাঝে যৌন উত্তেজনা আসে

কোন মহিলার এমন কোন কথা বলা কিংবা এমন কোন আচরণ দেখানো যাতে করে তাকে দেখে অন্য পুরুষের মাঝে কোন ধরনের যৌন উত্তেজনা আসে
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

‘‘(হে মুহাম্মাদ) তুমি তেমনিভাবে মু’মিন মহিলাদেরকেও বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্য (শরীরের সাথে এঁটে থাকা অলংকার কিংবা আকর্ষণীয় পোষাক) প্রকাশ না করে। তবে যা স্বভাবতই প্রকাশ পেয়ে যায় (বোরকা, চাদর, মোজা ইত্যাদি) তা প্রকাশ পেলে কোন অসুবিধে নেই। তাদের ঘাড়, গলা ও বক্ষদেশ (চেহারা সহ) যেন মাথার ওড়না দিয়ে আবৃত রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইপো, বোনপো, স্বজাতীয় মহিলা, মালিকানাধীন দাস, যৌন কামনা রহিত অধীন পুরুষ, নারীদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো নিকট নিজ সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তেমনিভাবে তারা যেন সজোরে ভূমিতে নিজ পদযুগল ক্ষেপণ না করে। কারণ, তাতে করে তাদের আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে। বরং হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্ তা’আলার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। তখনই তোমরা সফলকাম হতে পারবে’’। (নূর : ৩১)

উক্ত আয়াতে মহিলাদেরকে নিজ পদযুগল ভূমিতে সজোরে নিক্ষেপ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যাতে করে, তাদের পায়ের অলঙ্কারের আওয়াজ শুনে কোন পুরুষ নিজের মধ্যে তাদের প্রতি কোন ধরনের যৌন উত্তেজনা অনুভব না করে।

ইমামের পূর্বেই কোন রুকন আদায় করা

নিজ ইমাম সাহেবের পূর্বেই নামাযের যে কোন রুকন আদায় করা
মূলতঃ নামাযের যে কোন রুকন ইমাম সাহেবের একটু পরেই আদায় করতে হয়। তথা ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে পুরোপুরি রুকুতে চলে যাবেন তখন মুক্তাদিগণ রুকু করতে অগ্রসর হবেন। তেমনিভাবে ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে সিজদার জন্য জমিনে কপাল ঠেকাবেন তখনই মুক্তাদিগণ তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবেন। ইমাম সাহেবের আগে, বহু পরে কিংবা সমানতালে কোন রুকন আদায় করা চলবে না।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَمَا يَخْشَى الَّذِيْ يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ أَوْ يُحَوِّلَ صُوْرَتَهُ صُوْرَةَ حِمَارٍ

‘‘ওই ব্যক্তি কি ভয় পাচ্ছে না যে ইমাম সাহেবের পূর্বেই রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা তার মাথাকে গাধার মাথায়
রূপান্তরিত করবেন অথবা তার গঠনকে গাধার গঠনে পরিণত করবেন’’।[1]

আবু মূসা আশ্’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) একদা আমাদেরকে নামায শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন:

فَإِذَا كَبَّرَ وَرَكَعَ فَكَبِّرُوْا وارْكَعُوْا فَإِنَّ الإِمَامَ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ

‘‘ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে রুকু’তে যাবেন তারপর তোমরাও তাকবীর দিয়ে রুকু’তে যাবে। কারণ, একমাত্র ইমাম সাহেবই তো তোমাদের আগেই রুকু করবেন এবং তোমাদের আগেই রুকু থেকে মাথা উঠাবেন’’।[2]

আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল (সা.) নামায শেষে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

أَيُّهَا النَّاسُ! إِنِّيْ إِمَامُكُمْ فَلاَ تَسْبِقُوْنِيْ بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالْقُعُوْدِ وَلاَ بِالاِنْصِرَافِ

‘‘হে মানব সকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরই ইমাম। সুতরাং তোমরা আমার আগে রুকু, সিজদাহ্, উঠা, বসা ও সালাম আদায় করবে না’’।[3]

আনাস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) একদা সাহাবাগণকে নামাযের প্রতি খুবই উৎসাহিত করেছেন এবং এরই পাশাপাশি তিনি তাঁদেরকে তাঁর আগে সালাম ফেরাতেও নিষেধ করেছেন।[4]

আব্দুল্লাহ্ বিন মাস’ঊদ্ ও আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) একদা রুকন আদায়ে ইমামের অগ্রবর্তী জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

لاَ وَحْدَكَ صَلَّيْتَ وَلاَ بِإِمَامِكَ اِقْتَدَيْتَ

‘‘(তোমার নামাযই হয়নি) না তুমি একা নামায পড়লে; না ইমাম সাহেবের সাথে পড়লে’’। (রিসালাতুল ইমাম আহ্মাদ্)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلاَتُكَبِّرُوْا حَتَّى يُكَبِّرَ ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلاَ تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ

‘‘ইমাম সাহেব হচ্ছেন অনুসরণীয়। তাই তিনি তাকবীর সমাপ্ত করলেই তোমরা তাকবীর বলবে। তোমরা কখনো তাকবীর বলবে না যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেন। তিনি রুকুতে চলে গেলেই তোমরা রুকু শুরু করবে। তোমরা রুকু করবে না যতক্ষণ না তিনি রুকু করেন’’।[5]

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا كَبَّرَ الإِمَامُ فَكَبِّرُوْا وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ وَقَاْلَ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَارْفَعُوْا وَقُوْلُوْا رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوْا

‘‘যখন ইমাম সাহেব তাকবীর সমাপ্ত করবেন তখন তোমরা তাকবীর বলবে। আর যখন তিনি রুকুতে চলে যাবেন তখন তোমরা রুকু শুরু করবে। আর যখন তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে ’’সামি’আল্লাহু লিমান্ হামিদাহ্’’ বলবেন তখন তোমরা রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে’’রাববানা ওয়া লাকাল্ হাম্দ’’ বলবে। আর যখন তিনি সিজদায় যাবেন তখন তোমরা সিজদাহ শুরু করবে’’।[6]

বারা’ বিন ’আযিব (রাযিয়াল্লাহু আন্হু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا انْحَطَّ لِلسُّجُوْدِ لاَ يَحْنِيْ أَحَدٌ ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَبْهَتَهُ عَلَى الأَرْضِ

‘‘নবী (সা.) যখন সিজদাহ্’র জন্যে ঝুঁকে পড়তেন তখনো আমাদের কেউ নিজ পৃষ্ঠদেশ বাঁকা করতো না যতক্ষণ না তিনি নিজ কপাল জমিনে রাখতেন’’।[7]

[1] (বুখারী, হাদীস ৬৯১ মুসলিম, হাদীস ৪২৭ আবু দাউদ, হাদীস ৬২৩)
[2] (মুসলিম, হাদীস ৪০৪ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৫৯৩)
[3] (মুসলিম, হাদীস ৪২৬)
[4] (আবু দাউদ, হাদীস ৬২৪)
[6] (বুখারী, হাদীস ৭২২, ৭৩৪, ৮০৫ মুসলিম, হাদীস ৪১৪)
[7] (বুখারী, হাদীস ৬৯০, ৮১১ মুসলিম, হাদীস ৪৭৪ আবু দাউদ, হাদীস ৬২১)

ইদ্দতে থাকাবস্থায় তাকে বিবাহ করা

কোন মহিলা ইদ্দতে থাকাবস্থায় তাকে কারো বিবাহ্ করা
ইদ্দত বলতে কোন মহিলাকে তালাক দেয়ার পর অথবা তার স্বামী মারা যাওয়ার পর যে সময়টুকু তাকে তার পূর্বের স্বামীর ঘরেই কাটাতে হয় তা বুঝানো হয়। যা তালাকপ্রাপ্তার জন্য তার তিন ঋতুস্রাব পার হওয়ার সমপরিমাণ সময়। আর স্বামীহারার জন্য চার মাস দশ দিন।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِي أَنفُسِكُمْ ۚ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَٰكِن لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَن تَقُولُوا قَوْلًا مَّعْرُوفًا ۚ وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ

‘‘তোমরা কোন মহিলার ইদ্দত তথা নির্ধারিত সময় পার হওয়া পর্যন্ত তার সাথে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন দৃঢ় সংকল্প করো না। তোমরা অবশ্যই এ কথা জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের অন্তরের সব কিছুই জানেন। অতএব তোমরা তাঁকে অবশ্যই ভয় করো এবং জেনে রাখো, নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম সহিষ্ণু’’। (বাক্বারাহ্ : ২৩৫)

‘ইনশাআল্লাহ্’ না বলে কোন কাজ করার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ করা

আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল না হয়ে তথা ‘ইনশাআল্লাহ্’ না বলে কোন কাজ ভবিষ্যতে করবে বলে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَٰلِكَ غَدًا إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ

‘‘তুমি কখনো কোন ব্যাপারে এমন বলো না যে, আমি এ কাজটি আগামী কাল করবো। বরং বলবেঃ ’’যদি আল্লাহ্ তা’আলা চান’’। (কাহফ : ২৩-২৪)

‘‘সকল মানুষই ধ্বংস, খারাপ কিংবা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে’’ এমন বলা

‘‘সকল মানুষই ধ্বংস, খারাপ কিংবা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে’’ এমন কথা বলা
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا سَمِعْتُمْ رَجُلًا يَقُولُ: قَدْ هَلَكَ النَّاسُ فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ يَقُولُ اللَّهُ: إِنَّهُ هُوَ هَالِكٌ

‘‘যখন তোমরা কাউকে এ কথা বলতে শুনো যে, সকল মানুষই তো ধ্বংস হয়ে গেছে তা হলে জেনে রাখো, সেই হচ্ছে সব চাইতে বেশি ধ্বংস প্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ নিশ্চয়ই সেই হচ্ছে সত্যিই ধ্বংস প্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট’’।[1]

তবে তা তখনই যখন কেউ এমন কথা বলে থাকে নিজকে বড়ো ভেবে ও অতি পবিত্র মনে করে। আর যদি সে এমন কথা বলে থাকে মানুষের চরম ধর্মীয় দুরবস্থা দেখে তথা নিজ মনে খুব একটা ব্যথা অনুভব করে তা হলে তাতে কোন অসুবিধে নেই। অন্য বর্ণনা أَهْلَكَهُمْ শব্দে এসেছে যার অর্থঃ তা হলে জেনে রাখো, সেই তো সবাইকে ধ্বংসে উপনীত করলো। কারণ, যখন মানুষ তার এ কথা শুনে আল্লাহ্ তা’আলার রহমত থেকে একেবারেই নিরাশ হয়ে যাবে তখন তারা আর তাঁর ইবাদতে উৎসাহী হবে না। এ ভাবেই তারা ধীরে ধীরে ধ্বংসে উপনীত হবে।
[1] (আহমাদ্, হাদীস ৭৩৬০, ৭৬৮৫)

‘বিসমিল্লাহ্’ না বলা

খানা খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ্’ না বলা, ডান হাতে না খাওয়া কিংবা নিজের পাশ থেকে না খাওয়া
’উমর বিন্ আবু সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি আমার পিতা আবু সালামাহ্’র ইন্তিকালের পর রাসূল (সা.) এর তত্ত্বাবধানেই লালিত-পালিত হচ্ছিলাম। একদা রাসূল (সা.) এর সাথে খানা খাওয়ার সময় আমি প্লেটের এদিক-ওদিক থেকে খাচ্ছিলাম। তখন তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

يَا غُلَامُ سَمِّ اللَّهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ

‘‘হে ছেলে! তুমি আল্লাহ্ তা’আলার নামেই খেতে শুরু করো, ডান হাতে খাও এবং তোমার পাশ থেকেই খাও’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ২০২২)

নামাযে কুকুরের ন্যায় বসা, হিংস্র পশুর ন্যায় সাজ্দাহ

নামাযে কুকুরের ন্যায় বসা, হিংস্র পশুর ন্যায় সাজ্দাহ্, কাকের ন্যায় ঠোকর, শিয়ালের ন্যায় এদিক ওদিক তাকানো কিংবা উটের ন্যায় মসজিদের নির্দিষ্ট কোন স্থানে সর্বদা সালাত আদায়ের অভ্যাস গড়ে তোলা
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثٍ وَنَهَانِي عَنْ ثَلَاثٍ، أَمَرَنِي بِرَكْعَتَيْ الضُّـحَى كُلَّ يَوْمٍ، وَالْوِتْرِ قَبْلَ النَّوْمِ، وَصِيَامِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَنَهَانِي عَنْ نَقْرَةٍ كَنَقْرَةِ الدِّيكِ، وَإِقْعَاءٍ كَإِقْعَاءِ الْكَلْبِ، وَالْتِفَاتٍ كَالْتِفَاتِ الثَّعْلَبِ

‘‘রাসূল (সা.) আমাকে তিনটি কাজের আদেশ করেন এবং তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করেন। তিনি আমাকে প্রতি দিন যুহা তথা সূর্যের তাপ বেড়ে যাওয়ার সময়কার দু’ রাক্’আত নামায, ঘুমের আগে বিতরের নামায এবং প্রতি মাসে তিনটি রোযা রাখতে আদেশ করেন। তেমনিভাবে তিনি আমাকে মোরগের মতো ঠোকর দিতে, কুকুরের মতো তথা উভয় হাঁটু খাড়া করে দু’ হাত ও দু’ পাছা জমিনে বিছিয়ে বসতে এবং শিয়ালের মতো এদিক-ওদিক তাকাতে নিষেধ করেন’’।[1]

আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

اعْتَدِلُوْا فِيْ السُّجُوْدِ ، وَلاَ يَبْسُطْ أَحَدُكُمْ ذِرَاعَيْهِ انْبِسَاطَ الْكَلْبِ

‘‘তোমরা সেজ্দাহ্ করার সময় শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকভাবে রাখো। তোমাদের কেউ যেন নিজের উভয় কনুই কুকুরের ন্যায় জমিনে বিছিয়ে না দেয়’’।[2]

বারা’ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا سَجَدْتَ فَضَعْ كَفَّيْكَ وَارْفَعْ مِرْفَقَيْكَ

‘‘যখন তুমি সেজ্দাহ্ করবে তখন তোমার উভয় হাতের তালু জমিনে রাখবে এবং তোমার কনুইদ্বয় জমিন থেকে উঁচিয়ে রাখবে’’।[3]

আব্দুর রহমান বিন্ শিব্ল (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ نَقْرَةِ الْغُرَابِ وَافْتِرَاشِ السَّبُعِ وَأَنْ يُّوَطِّنَ الرَّجُلُ الْـمَكَانَ فِيْ الْمَسْجِدِ كَمَا يُوَطِّنُ الْبَعِيْرُ

‘‘রাসূল (সা.) কাকের ঠোকর কিংবা হিংস্র পশুর ন্যায় দু’ কনুই জমিনে বিছিয়ে সিজ্দাহ্ করা অথবা উটের ন্যায় মসজিদের নির্দিষ্ট কোন স্থানে সর্বদা নামায পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে নিষেধ করেছেন’’।[4]

[1] (আহমাদ্, হাদীস ৭৭৫৮, ৮১০৬)
[2] (মুসলিম, হাদীস ৪৯৩)
[3] (মুসলিম, হাদীস ৪৯৪)
[4] (আবু দাউদ, হাদীস ৮৬২)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব



****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url