যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (২৭) || দুর্বল পশু দিয়ে কুরবানি দেয়া || কাতার সোজা না করে নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়া ||






২৭-তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

একত্রে খানা খেতে বসলে একাধিক সংখ্যা এক গ্রাসে খাওয়া

কয়েকজন একত্রে খানা খেতে বসলে অথবা কারোর নিকট কেউ মেহমান হলে খেজুর, মিষ্টি কিংবা এ জাতীয় কোন জিনিস একাধিক সংখ্যা এক গ্রাসে খাওয়া
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الْإِقْرَانِ إِلَّا أَنْ تَسْتَأْذِنَ أَصْحَابَكَ

‘‘রাসূল (সা.) এক গ্রাসে একাধিক খেজুর কিংবা এ জাতীয় অন্য কিছু খেতে নিষেধ করেছেন যতক্ষণ না তুমি তোমার সাথীদের থেকে এ ব্যাপারে অনুমতি নিবে’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ২৪৮৯ আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৩৪)

পশুর বিনিময়ে পশু বাকিতে বিক্রি করা

একটি পশু অন্য পশুর বিনিময়ে বাকিতে বিক্রি করা
সামুরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ بَيْعِ الْـحَيَوَانِ بِالْـحَيَوَانِ نَسِيئَةً

‘‘নবী (সা.) একটি পশু আরেকটি পশুর বিনিময়ে বাকিতে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৩৫৬)

কুকুর বিড়াল বিক্রি করা পয়সা খাওয়া

কুকুর কিংবা বিড়াল বিক্রি করা পয়সা খাওয়া
জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَالسِّنَّوْرِ

‘‘নবী (সা.) কুকুর ও বিড়াল বিক্রি করা পয়সা খেতে নিষেধ করেছেন’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৭৯)

মানুষকে দেখানোর জন্য কোন পশু যবাই করা

মানুষকে দেখানো কিংবা আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে কোন পশু যবাই করা
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ مُعَاقَرَةِ الْأَعْرَابِ

‘‘রাসূল (সা.) আরব বেদুঈনদের ন্যায় (মানুষকে দেখানোর জন্য) পশু যবাই করতে নিষেধ করেছেন’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ২৮২০)

দুর্বল পশু দিয়ে কুরবানি দেয়া

সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয় এমন লেংড়া, কানা, রোগা কিংবা অত্যন্ত দুর্বল পশু দিয়ে কুরবানি দেয়া
বারা’ বিন্ ’আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

لَا يُضَحَّى بِالْعَرْجَاءِ بَيِّنٌ ظَلَعُهَا وَلَا بِالْعَوْرَاءِ بَيِّنٌ عَوَرُهَا وَلَا بِالْـمَرِيضَةِ بَيِّنٌ مَرَضُهَا وَلَا بِالْعَجْفَاءِ الَّتِي لَا تُنْقِيْ

‘‘সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয় এমন লেংড়া, কানা, রোগা ও অত্যন্ত দুর্বল পশু দিয়ে কুরবানি দেয়া যাবে না’’।[1]
[1] (তিরমিযী, হাদীস ১৪৯৭)

কাতার সোজা না করে নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়া

নামাযের কাতারটুকু সম্পূর্ণরূপে সোজা না করে যেনতেনভাবে নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়া
আবু মাস্’ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِي الصَّلَاةِ وَيَقُولُ: اسْتَوُوا وَلَا تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ ، لِيَلِنِي مِنْكُمْ أُولُو الْأَحْلَامِ وَالنُّهَى ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ

‘‘রাসূল (সা.) নামাযে দাঁড়ানোর সময় আমাদের কাঁধগুলো স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমরা সবাই নামাযের কাতারে একদম সোজা হয়ে দাঁড়াও। একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কখনো দাঁড়িও না তা হলে তোমাদের অন্তরগুলোর মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হবে। তোমাদের মধ্যকার বয়স্ক ও বুদ্ধিমানরা যেন আমার নিকটবর্তী জায়গায় অবস্থান করে। অতঃপর তাদের পরবর্তীরা। এরপর আরো পরবর্তীরা’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ৪৩২ নাসায়ী, হাদীস ৮০৩)

এক বছর অতিবাহিত হতে না হতেই উক্ত মালের যাকাত দিতে বাধ্য করা

কোন মালের উপর এক বছর অতিবাহিত হতে না হতেই উক্ত মালের মালিককে তা থেকে যাকাত দিতে বাধ্য করা
’আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

لَا زَكَاةَ فِي مَالٍ حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ

‘‘কোন মালে যাকাত আসবে না যতক্ষণ না তার উপর পুরাপুরিভাবে একটি বছর অতিবাহিত হয়’’।[1]
[1] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১৮১৯)

বাচ্চা মায়ের পেটেই মারা যাওয়ার পরও সম্পদের ওয়ারিশ বানানো

কোন বাচ্চা মায়ের পেটেই মারা যাওয়ার পরও তাকে কারোর সম্পদের ওয়ারিশ বানানো
জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ ও মিস্ওয়ার্ বিন্ মাখরামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لَا يَرِثُ الصَّبِيُّ حَتَّى يَسْتَهِلَّ صَارِخًا ، قَالَ: وَاسْتِهْلَالُهُ : أَنْ يَبْكِيَ وَيَصِيحَ أَوْ يَعْطِسَ

‘‘কোন বাচ্চা কারোর সম্পদের ওয়ারিশ হবে না যতক্ষণ না সে মায়ের পেট থেকে বের হওয়ার পর কোন ধরনের আওয়াজ করে। কোন ধরনের আওয়াজ দেয়া মানে, চাই সে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কান্না করুক, চিৎকার কিংবা হাঁচি দিক’’।[1]
[1] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৮০০)

মসজিদে প্রবেশ করেই দু’ রাক্’আত্ তাহিয়্যাতুল-মসজিদ নামায আদায়

যে কোন মসজিদে প্রবেশ করে অন্ততপক্ষে দু’ রাক্’আত্ তাহিয়্যাতুল-মসজিদের নামায আদায় না করে এমনিতেই বসে পড়া

আবু ক্বাতাদাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْـمَسْجِدَ ، فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ

‘‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন দু’রাক’আত নামায আদায় না করে না বসে’’।[1]

জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِيُّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ، وَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَجَلَسَ، فَقَالَ لَهُ: يَا سُلَيْكُ! قُمْ فَارْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَ تَجَوَّزْ فِيْهِمَا، ثُمَّ قَالَ: إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ، وَ الْإِمَامُ يَخْطُبُ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَ لْيَتَجَوَّزْ فِيْهِمَا

‘‘সুলাইক্ গাত্বাফানী (রা.) জুমার দিন মসজিদে ঢুকে তাড়াতাড়ি বসে পড়লেন যখন রাসূল (সা.) খুৎবা দিচ্ছিলেন। তখন রাসূল (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে সুলাইক্! দাড়াও। সংক্ষিপ্তাকারে দু’ রাক্’আত নামায পড়ে নাও। অতঃপর রাসূল (সা.) ব্যাপকভাবে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন: তোমাদের কেউ খুৎবা চলাকালীন মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন সংক্ষিপ্তাকারে দু’ রাক্’আত নামায পড়ে নেয়’’।[2]
[1] (বুখারী, হাদীস ৪৪৪, ১১৬৩ মুসলিম, হাদীস ৭১৪)
[2] (মুসলিম, হাদীস ৮৭৫)

খুৎবা চলা কালীন হাঁটু দু’টোকে নিজ পেটের সাথে জড়িয়ে বসা

জুমার দিন খুৎবা চলা কালীন সময় হাঁটু দু’টোকে উভয় হাত কিংবা কাপড় ইত্যাদি দিয়ে নিজ পেটের সাথে জড়িয়ে বসা
 মু’আয্ বিন্ আনাস্ (রাহিমাহুল্লাহ্) তাঁর পিতা আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন:

نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الْـحُبْوَةِ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ

‘‘রাসূল (সা.) জুমার দিন খুৎবা চলা কালীন সময় হাঁটু দু’টোকে উভয় হাত কিংবা কাপড় ইত্যাদি দিয়ে নিজ পেটের সাথে জড়িয়ে বসতে নিষেধ করেছেন’’।[1]

কারণ, এভাবে বসলে অতি তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসবে।
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ১১১০)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব



****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url