যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (০১) || কিছু না খেয়ে পরপর একাধিক রোযা রাখা || ইশার আগে ঘুম ও ’ইশার পর গল্প-গুজব ||





একজন মুসলিম হিসাবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ

(প্রথম পর্ব)

আহলে কিতাবদের সাথে ঝগড়া-ফাসাদ

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ ۖ وَقُولُوا آمَنَّا بِالَّذِي أُنزِلَ إِلَيْنَا وَأُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَإِلَٰهُنَا وَإِلَٰهُكُمْ وَاحِدٌ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

‘‘তোমরা অমূলকভাবে আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। বরং তাদের সাথে বিতর্কের সময় সর্বোত্তম পন্থাই অবলম্বন করবে। তবে এ ব্যাপারে তাদের যালিমদের কথা একেবারেই ভিন্ন। তোমরা শুধু বলবেঃ আমরা মূলত তোমাদের প্রতি ও আমাদের প্রতি অবতীর্ণ সকল প্রত্যাদেশেই বিশ্বাসী। আমাদের মা’বূদ ও তোমাদের মা’বূদ একই। আর আমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণকারী’’। (আনকাবূত : ৪৬)

পানপাত্রে নিশ্বাস ত্যাগ, ডান হাত দিয়ে পবিত্রতার্জন ও লিঙ্গ স্পর্শ করা

আবু ক্বাতাদাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِيْ الْإِنَاءِ ، وَإِذَا أَتَى الْخَـلاَءَ فَلاَ يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِيْنِهِ ، وَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِيْنِهِ

‘‘তোমাদের কেউ যেন পানি পান করার সময় পানপাত্রে নিশ্বাস ত্যাগ না করে। বাথরুমে প্রবেশ করলে যেন ডান হাত দিয়ে নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে। এমনকি ডান হাত দিয়ে যেন ঢিলা-কুলুখও না করে’’।[1]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

وَلاَ يَسْتَنْجِ بِيَمِيْنِهِ

‘‘এমনকি ডান হাত দিয়ে যেন ইস্তিঞ্জাও না করে’’।[2]

[1] (বুখারী, হাদীস ১৫৩ মুসলিম, হাদীস ২৬৭)
[2] (বুখারি, হাদীস ১৫৩, ১৫৪ মুসলিম, হাদীস ২৬৭)

নামাযে বাম হাতের উপর ভর দিয়ে বসা

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَجْلِسَ الرَّجُـلُ فِيْ الصَّلاَةِ وَهُـوَ مُعْتَمِدٌ عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى ، وَقَالَ: إِنَّهَا صَلاَةُ الْيَهُوْدِ

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন নামাযের ভেতর বাম হাতের উপর ভর দিয়ে বসতে এবং তিনি বলেন: এ জাতীয় নামায ইহুদিদেরই নামায’’।[1]

[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৮২২)

পেয়ালার ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি পান ও পানিতে ফুঁ দেয়া

আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الشُّرْبِ مِنْ ثُلْمَةِ الْقَدَحِ ، وَأَنْ يُنْفَخَ فِيْ الشَّرَابِ

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন পেয়ালার ভগ্নস্থল দিয়ে পানি পান করতে এবং পানিতে ফুঁ দিতে’’।[1]

[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৭২২)

কলসির মুখ দিয়ে পানি পান করা

আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ اِخْتِنَاثِ الْأَسْقِيَةِ أَنْ يُشْرَبَ مِنْ أَفْوَاهِهَا

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন কলসি কাত করে উহার মুখ দিয়ে পানি পান করতে’’।[1]

[1] (মুসলিম, হাদীস ২০২৩ আবু দাউদ, হাদীস ৩৭১৯, ৩৭২০)

ইশার আগে ঘুম ও ’ইশার পর গল্প-গুজব

ইবনু ’আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّوْمِ قَبْلَ الْعِشَاءِ ، وَعَنِ الْـحَدِيْثِ بَعْدَهَا

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন ইশার আগে ঘুম যেতে এবং ইশার পর গল্প-গুজব করতে।[1]
তবে নিতান্ত প্রয়োজনে অথবা সাওয়াবের কাজে ব্যস্ত থাকলে তাতে কোন অসুবিধে নেই।ইবনু মাস্’ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ سَمَرَ إِلاَّ لِـمُصَلٍّ أَوْ مُسَافِرٍ

‘‘’ইশার পর কোন গল্প-গুজব চলবে না। তবে কেউ ইচ্ছে করলে তখন নামায পড়তে পারবে অথবা সফর করতে পারবে’’।[2]

[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৯১৫)
[2] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৭৪৯৯)

বায়ু নির্গমনের আওয়াজে হেঁসে উঠা

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الضَّحِكِ مِنَ الضَّرْطَةِ

‘‘রাসূল (সা.) কারোর বায়ু নির্গমনের আওয়াজে হাঁসতে নিষেধ করেছেন’’।[1]

[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৮৯৬)

খাওয়ার শেষে আঙুলগুলো চেটে না খেয়ে হাত ধুয়ে ফেলা

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا وَقَعَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيَأْخُذْهَا ، فَلْيُمِطْ مَا كَـانَ بِهَا مِنْ أَذًى ، وَلْيَأْكُلْهَا ، وَلاَ يَدَعْـهَا لِلشَّيْطَانِ ، وَلاَ يَمْسَحْ يَدَهُ بِالْمِنْدِيْلِ حَتَّى يَلْعَقَ أَصَابِعَهُ، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِيْ فِيْ أَيِّ طَعَامِهِ الْبَرَكَةُ

‘‘তোমাদের কারোর হাত থেকে খাবারের লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা উঠিয়ে নেয়। অতঃপর তাতে কোন ধরনের ময়লা লেগে থাকলে সে যেন তা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য সে যেন তা ফেলে না রাখে। তেমনিভাবে তোমাদের কেউ যেন তার হাত খানা না চেটে টিসু বা রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কারণ, সে তো জানে না খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে’’।[1]

[1] (মুসলিম, হাদীস ২০৩৩)

কিছু না খেয়ে পরপর একাধিক রোযা রাখা

আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تُوَاصِلُوْا ، فَأَيُّكُمْ أَرَادَ أَنْ يُوَاصِلَ فَلْيُوَاصِلْ حَتَّى السَّحَرِ ، قَالُوْا: فَإِنَّكَ تُوَاصِلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ ، إِنِّيْ أَبِيْتُ لِيْ مُطْعِمٌ يُطْعِمُنِيْ وَسَاقٍ يَسْقِيْنِ

‘‘তোমরা রাত্রি বেলায় কিছু না খেয়ে পরস্পর একাধিক রোযা রেখো না। এরপরও তোমাদের কেউ এমন করতে চাইলে সে যেন তা সেহ্রী পর্যন্ত পালন করে। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি তো এমনটি করছেন? তখন তিনি বললেন: আরে আমি তো আর তোমাদের মতো নই। বরং আমাকে তো রাত্রি বেলায় খাবার সরবরাহ্কারী আল্লাহ্ তা’আলা খাইয়ে দেন এবং পানীয় পরিবেশনকারী আল্লাহ্ তা’আলা পান করান’’।[1]

নিষেধের পরও সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এমনটি করলে রাসূল (সা.) তাঁদেরকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) একদা রাত্রি বেলায় কিছু না খেয়ে পরস্পর একাধিক রোযা রাখতে নিষেধ করেন। তখন জনৈক মুসলমান বলে উঠলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি তো এমনটি করছেন? তখন রাসূল (সা.) বললেনঃ

وَأَيُّكُمْ مِثْلِيْ ؟ إِنِّيْ أَبِيْتُ يُطْعِمُنِيْ رَبِّيْ وَيَسْقِيْنِ

‘‘আরে তোমাদের কেই বা আর আমার মতো? বরং আমাকে তো আমার প্রভুই রাত্রি বেলায় খাওয়ান ও পান করান’’।

সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) যখন এ কাজে নিবৃত্ত হলেন না তখন রাসূল (সা.) পরস্পর দু’ দিন রাত্রি বেলায় কিছু না খেয়ে রোযা রাখলেন। এরই মধ্যে তাঁরা নতুন চাঁদ দেখতে পেলো। তখন রাসূল (সা.) বললেন:

لَوْ تَأَخَّرَ لَزِدْتُكُمْ

‘‘চাঁদটি উঠতে দেরি করলে আমি অবশ্যই আরো রোযা বাড়িয়ে দিতাম। আর তা হতো তাঁদের জন্য শাস্তি স্বরূপ’’।[2]

[1] (বুখারী, হাদীস ১৯৬৩, ১৯৬৭)
[2] (বুখারী, হাদীস ১৯৬৫ মুসলিম, হাদীস ১১০৩)

ঘুম থেকে জেগে প্রথমে উভয় হাত তিন বার না ধুয়ে কোন খাবার স্পর্শ করা

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلاَ يَغْمِسْ يَدَهُ فِي الإِنَاءِ حَتَّى يَغْسِلَهَا ثَلاَثاً، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِيْ أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ

‘‘তোমাদের কেউ যেন ঘুম থেকে জেগেই তার হাত খানা তিনবার না ধুয়ে কোন পানি ভর্তি পাত্রে প্রবেশ না করায়। কারণ, সে তো আর জানে না রাত্রি বেলায় তার হাত খানা কোথায় ছিলো’’।[1]

[1] (বুখারী, হাদীস ১৬২ মুসলিম, হাদীস ২৭৮)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব
 


************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url