যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (২২) || শরীয়ত বিরোধী আদেশ মেনে নেয়া || মুশরিকদের কোন উপঢৌকন গ্রহণ করা ||





একজন মুসলিম হিসাবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ


এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

এমনিতেই বিনষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিসের ক্ষতি পূরণ চাওয়া

কারোর নিকট কোন জিনিস আমানত রাখার পর তা এমনিতেই বিনষ্ট হয়ে গেলে উক্ত ব্যক্তির নিকট উহার ক্ষতিপূরণ দাবি করা নিষেধ
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ أُوْدِعَ وَدِيْعَةً ، فَلاَ ضَمَانَ عَلَيْهِ

‘‘কারোর নিকট কোন কিছু আমানত রাখলে উহার ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না’’।[1]
[1] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৪৩০)

শরীয়ত বিরোধী আদেশ মেনে নেয়া

উপরস্থদের যে কোন শরীয়ত বিরোধী আদেশ মেনে নেয়া নিষেধ
আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ أَمَرَكُمْ مِنَ الْوُلاَةِ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ تُطِيْعُوْهُ

‘‘তোমাদের উপরস্থরা তোমাদেরকে কোন গুনাহ্’র আদেশ করলে তা তোমরা মানবে না’’।[1]
[1] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৯১৪ ইবনু হিববান, হাদীস ১৫৫২ আহমাদ্ ৩/৬৭)

বাড়ি কিংবা জমিন বিক্রির অর্থ বাড়ি কিংবা জমিন কেনা ছাড়া অন্য কাজে ব্যয় করা

কোন বাড়ি কিংবা জমিন বিক্রির অর্থ একমাত্র বাড়ি কিংবা জমিন কেনা ছাড়া অন্য কোন কাজে লাগানো নিষেধ
সা’ঈদ্ বিন্ ’হুরাইস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ بَاعَ دَارًا أَوْ عَقَارًا ، فَلَمْ يَجْعَلْ ثَمَنَهُ فِيْ مِثْلِهِ ، كَانَ قَمِنًا أَنْ لاَ يُبَارَكَ فِيْهِ

‘‘কেউ কোন বাড়ি বা জমিন বিক্রি করে উহার বিক্রিলব্ধ অর্থ যদি আবারো বাড়ি বা জমিন কেনার কাজে না লাগিয়ে অন্য কোন কাজে লাগায় তা হলে তাতে বরকত না হওয়াই স্বাভাবিক’’।[1]

’হুযাইফাহ্ বিন্ ইয়ামা’ন (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ بَاعَ دَارًا وَلَمْ يَجْعَلْ ثَمَنَهَا فِيْ مِثْلِهَا ، لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيْهَا

‘‘কেউ কোন বাড়ি বিক্রি করে উহার বিক্রিলব্ধ অর্থ যদি আবারো বাড়ি কেনার কাজে না লাগিয়ে অন্য কোন কাজে লাগায় তা হলে তাতে কোন বরকত দেয়া হবে না’’।[2]
[1] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৫৩৫)
[2] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৫৩৬)

নামাযে দুনিয়ার কোন কথা বলা

নামাযে দুনিয়ার কোন কথা বলা নিষেধ
মু’আবিয়া বিন্ ’হাকাম সুলামী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِنَّ هَذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيْهَا شَيْءٌ مِنْ كَلاَمِ النَّاسِ ، إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيْحُ وَالتَّكْبِيْرُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ

‘‘নামাযে দুনিয়ার কোন কথাই বলা চলবে না। বরং তা হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলার পবিত্রতা ও তাঁর মহিমা বর্ণনা এবং কুর’আন তিলাওয়াতের সমষ্টি মাত্র’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ৫৩৭)

ঘরের দেয়ালকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা

ঘরের কোন দেয়ালকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা নিষেধ
আলী বিন্ ’হুসাইন (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُسْتَرَ الْـجُدُرُ

‘‘রাসূল (সা.) ঘরের কোন দেয়ালকে কোন কিছু দিয়ে ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন’’।[1]

’আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল (সা.) ঘরের দরজা কাপড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় দেখলে তা ছিঁড়ে ফেলে বললেন:

إِنَّ اللهَ لَمْ يَأْمُرْنَا أَنْ نَكْسُوَ الْحِجَارَةَ وَالطِّيْنَ

‘‘আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে পাথর ও মাটিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে বলেননি’’।[2]

এ কারণেই একদা আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) দেয়াল সমূহ কাপড় দিয়ে ঢাকা এমন ঘরে ঢুকতে অস্বীকৃতি জানান। সালিম বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি আমার পিতার জীবদ্দশায় জনৈকা মহিলার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। উক্ত বিবাহ উপলক্ষে আমার পিতা কিছু মানুষকে দাওয়াত করেছিলেন। যাদের মধ্যে আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) ও উপস্থিত ছিলেন। ইতিমধ্যে আমার আত্মীয়রা আমার ঘরটিকে সবুজ চাদর দিয়ে ঢেকে ফেললো। তখন আবু আইয়ূব আন্সারী (রা.) ঘরে ঢুকে আমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। এমতাবস্থায় তিনি ঘরটিকে সবুজ চাদর দিয়ে ঢাকা দেখে আমার পিতাকে সম্বোধন করে বললেন: হে আব্দুল্লাহ্! তোমরা কি ঘরের দেয়ালগুলোকে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখো? তখন আমার পিতা লজ্জিত স্বরে বললেন: আমাদেরকে কখনো কখনো মেয়েলোকের কথাও শুনতে হয়। আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) বলেন: কারোর ব্যাপারে এমনটির আশঙ্কা করলেও তোমার ব্যাপারে তো এমনটি আশঙ্কা করা যায় না। আমি তোমাদের কোন খানাও খাবো না এবং তোমাদের কোন ঘরেও ঢুকবো না। এ বলে তিনি দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।[3]
[1] (বায়হাক্বী ৭/২৭২)
[2] (মুসলিম, হাদীস ২১০৭)
[3] (ত্বাবারানী/কবীর, হাদীস ৩৮৫৩)

পেটে ভর দিয়ে খাওয়া কিংবা মদ বিতরণ ও পান করা হয় এমন দস্তরখানে খাওয়া

পেটে ভর দিয়ে খাওয়া কিংবা এমন দস্তরখানে খাওয়া যাতে মদ বিতরণ ও পান করা হয়-নিষেধ
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ مَطْعَمَيْنِ : عَنِ الْـجُلُوْسِ عَلَى مَائِدَةٍ يُشْرَبُ عَلَيْهَا الْـخَمْرُ، وَأَنْ يَأْكُلَ الرَّجُلُ وَهُوَ مُنْبَطِحٌ عَلَى بَطْنِهِ

‘‘রাসূল (সা.) দু’ ভাবে খেতে নিষেধ করেছেন। এমন দস্তরখানে খাওয়া যাতে মদ পান করা হয় এবং পেটে ভর দিয়ে খাওয়া’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৭৭৪ ’হাকিম ৪/১২৯ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৪৩৩)

আক্বীক্বার পশুর রক্ত বাচ্চার মাথায় লাগিয়ে দেয়া

কোন বাচ্চার আক্বীক্বা শেষে আক্বীক্বার পশুটির রক্ত তার মাথায় লাগিয়ে দেয়া নিষেধ
ইয়াযীদ মুযানী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

يُعَقُّ عَنِ الْغُلاَمِ ، وَلاَ يُمَسُّ رَأْسُهُ بِدَمٍ

‘‘বাচ্চার পক্ষ থেকে আক্বীক্বা দেয়া হবে ঠিকই তবে তার মাথার চুল উক্ত রক্তে রাঙ্গানো যাবে না’’।[1]
[1] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩২২৫)

মুসলমানের দাওয়াত কিংবা কোন উপঢৌকন গ্রহণ না করা

কোন মুসলমানের দা’ওয়াত কিংবা তার কোন উপঢৌকন গ্রহণ না করা অথবা কোন মুসলমানকে প্রহার করা নিষেধ
আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَجِيْبُوْا الدَّاعِيَ وَلاَ تَرُدُّوْا الْهَدِيَّةَ ، وَلاَ تَضْرِبُوْا الْـمُسْلِمِيْنَ

‘‘তোমরা (জায়িয) দা’ওয়াত গ্রহণ করো এবং কারোর (জায়িয) উপঢৌকন ফিরিয়ে দিও না। তেমনিভাবে কোন মুসলমানকে (অবৈধভাবে) প্রহার করো না’’।[1]
[1] (বুখারী/আল্-আদাবুল্-মুফরাদ্, হাদীস ১৫৭)

মুশরিকদের কোন উপঢৌকন গ্রহণ করা

মুশরিকদের কোন উপঢৌকন গ্রহণ করা নিষেধ
’ইয়ায বিন্ ’হিমার (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি একদা রাসূল (সা.) এর (’হারবী) যুদ্ধরত শত্রু ছিলাম। তখন আমি মুসলমান ছিলাম না। এমতাবস্থায় আমি তাঁকে একটি উট উপঢৌকন দিলে তিনি তা গ্রহণ করেননি। তখন তিনি বলেন:

إِنِّيْ أَكْرَهُ زَبْدَ الْـمُشْرِكِيْنَ

‘‘আমি মুশরিকদের কোন উপঢৌকন গ্রহণ করা পছন্দ করি না’’।[1]
[1] (বুখারী/আল্-আদাবুল্-মুফরাদ্, হাদীস ৪২৮)

কাজের লোকদেরকে সঠিকভাবে খাদ্য ও বস্ত্র না দেয়া

নিজের গোলাম তথা ঘরের কাজের লোকদেরকে সঠিকভাবে খাদ্য ও বস্ত্র না দেয়া কিংবা তাদেরকে তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজে বাধ্য করা নিষেধ
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لِلْمَمْلُوْكِ طَعَامُهُ وَكِسْوَتُهُ ، وَلاَ يُكَلَّفُ مِنَ الْعَمَلِ مَا لاَ يُطِيْقُ

‘‘নিজ গোলামকে খাদ্য ও বস্ত্র দিতে হবে এবং তাকে এমন কাজে কখনো বাধ্য করা যাবে না যা তার সাধ্যাতীত’’।[1]
[1] (বুখারী/আল্-আদাবুল্-মুফরাদ্, হাদীস ১৯২)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url