যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (৩১) || আজীবন রোযা রাখার সংকল্প || প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য পোপন করা || অপরাধ জনসমক্ষে বলাবলি করা ||





একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ

৩১-তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

আজীবন রোযা রাখার সংকল্প

আজীবন রোযা রাখার সংকল্প করা
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর বিন্ ’আস্ব্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

لَا صَامَ مَنْ صَامَ الْأَبَدَ ، لَا صَامَ مَنْ صَامَ الْأَبَدَ ، لَا صَامَ مَنْ صَامَ الْأَبَدَ

‘‘যে ব্যক্তি আজীবন রোযা রাখলো সে যেন কার্যত কোন রোযাই রাখেনি। যে ব্যক্তি আজীবন রোযা রাখলো সে যেন কার্যত কোন রোযাই রাখেনি। যে ব্যক্তি আজীবন রোযা রাখলো সে যেন কার্যত কোন রোযাই রাখেনি’’।[1]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ صَوْمُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنَ الشَّهْرِ صَوْمُ الدَّهْرِ كُلِّهِ

‘‘যে ব্যক্তি আজীবন রোযা রাখলো সে যেন কার্যত কোন রোযাই রাখেনি। প্রতি মাসের তিনটি রোযা আজীবন রোযা রাখার সমতুল্য’’।[2]
[1] (মুসলিম, হাদীস ১১৫৯)
[2] (নাসায়ী, হাদীস ২৪১১)

কাফন দেয়ার সময় সুঘ্রাণ ব্যবহার ও মাথা ঢেকে দেয়া

মুহরিম অবস্থায় কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাকে কাফন দেয়ার সময় সুঘ্রাণ ব্যবহার করা ও তার মাথা ঢেকে দেয়া
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি নবী (সা.) এর সাথে ’আরাফায় অবস্থান করছিলো। এমতাবস্থায় সে হঠাৎ নিজ উট থেকে পড়ে গিয়ে উটের পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেলো। তখন নবী (সা.) তার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন:

اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ، وَكَفِّنُـوْهُ فِى ثَوْبَيْنِ، وَلاَ تَمَسُّوهُ طِيبًا، وَلاَ تُخَمِّرُوا رَأْسَهُ، وَلاَ تُحَنِّطُوهُ، فَإِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا

‘‘তোমরা তাকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল ও তার দু’টি কাপড় দিয়েই তাকে কাপন দাও। উপরন্তু তাকে কোন ধরনের সুগন্ধ স্পর্শ করিও না। তেমনিভাবে তার মাথা ঢেকো না এবং তার গায়ে কাফুর ইত্যাদি লাগিও না। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে কিয়ামতের দিন ’’তালবিয়াহ্’’ তথা ’’লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক’’ পড়াবস্থায় উঠাবেন’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ১৮৫০)

প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য পোপন করা

কারোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কোন সাক্ষ্য পোপন করা
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَإِن كُنتُمْ عَلَىٰ سَفَرٍ وَلَمْ تَجِدُوا كَاتِبًا فَرِهَانٌ مَّقْبُوضَةٌ ۖ فَإِنْ أَمِنَ بَعْضُكُم بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ ۗ وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ ۚ وَمَن يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

‘‘আর তোমরা কারোর ব্যাপারে কোন প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য গোপন করো না। যে ব্যক্তি এ জাতীয় কোন সাক্ষ্য গোপন করলো তা সত্যিই এটাই প্রমাণ করে যে, নিশ্চয়ই তার মন পাপাচারমুখী। আর আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের সকল কর্মকান্ড সম্পর্কে সম্যক অবগত’’। (বাক্বারাহ্ : ২৮৩)

তালাক দেয়ার পর মোহর ফেরত নেয়া

কোন মহিলাকে তালাক দেয়ার পর তাকে দেয়া মোহরের কোন অংশ ফেরত নেয়া
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا ۚ أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا

‘‘আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর জায়গায় অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে চাও এবং তাদের কাউকে ইতিপূর্বে রাশি রাশি সম্পদ দিয়ে থাকো তা হলে তার কিয়দংশও তোমরা তাদের থেকে ফেরত নিও না। তোমরা কি তা যে কোন অপবাদ দিয়ে ও প্রকাশ্য পাপ করে ফেরত নিবে’’? (নিসা’ : ২০)

অপরাধ জনসমক্ষে বলাবলি করা

বিচার দায়ের করার ইচ্ছা ছাড়া যে কোন অপরাধ জনসমক্ষে বলাবলি করা
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

لَّا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا

‘‘আল্লাহ্ তা’আলা কখনো কোন খারাপ বাক্য প্রকাশ্যে বলা পছন্দ করেন না যতক্ষণ না কেউ অত্যাচারিত হয়। আল্লাহ্ তা’আলা অবশ্যই সকল কথা শুনেন ও জানেন’’। (নিসা’ : ১৪৮)

পাপাচার নিয়ে পরস্পর সলা-পরামর্শ

পাপাচার, অত্যাচার কিংবা রাসূল (সা.) এর আদর্শ বিরোধী কোন ব্যাপার নিয়ে পরস্পর সলা-পরামর্শ করা
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ الرَّسُولِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

‘‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কোন সলা-পরামর্শ করো তখন তা যেন কোন পাপাচার, অত্যাচার ও রাসূল (সা.) এর বিরুদ্ধাচরণ সম্পর্কে না হয়। বরং তা যেন কোন নেক কাজ সম্পাদন ও আল্লাহ্ভীরুতা অর্জনের সলা-পরামর্শ হয়। আর তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় করো যাঁর নিকট একদা তোমাদের সকলকেই সমবেত হতে হবে’’। (মুজাদালাহ্ : ৯)

শোয়ার সময় লাইট জ্বালিয়ে শোয়া

শোয়ার সময় চেরাগ, হারিকেন, লাইট ইত্যাদি জ্বালিয়ে শোয়া
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

لَا تَتْرُكُوا النَّارَ فِي بُيُوتِكُمْ حِينَ تَنَامُونَ

‘‘তোমরা কখনো শোয়ার সময় নিজ ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রেখো না’’।[1]

আবু মূসা আশ্’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাত্রি বেলায় মদীনার একটি ঘর মানুষ সহ জ্বলে যায়। নবী (সা.) কে তাদের ব্যাপারটি জানানো হলে তিনি বলেন:

إِنَّ هَذِهِ النَّارَ إِنَّمَا هِيَ عَدُوٌّ لَكُمْ فَإِذَا نِمْتُمْ فَأَطْفِئُوهَا عَنْكُمْ

‘‘নিশ্চয়ই আগুন হচ্ছে তোমাদের শত্রু। অতএব তোমরা যখন ঘুমুতে যাও তখন তা নিভিয়ে ঘুমাও’’।[2]

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

خَمِّرُوا الْآنِيَةَ ، وَأَجِيفُوا الْأَبْوَابَ ، وَأَطْفِئُوا الْمَصَابِيحَ ، فَإِنَّ الْفُوَيْسِقَةَ رُبَّمَا جَرَّتْ الْفَتِيلَةَ فَأَحْرَقَتْ أَهْلَ الْبَيْتِ

‘‘তোমরা তোমাদের পানপাত্রগুলো ঢেকে রাখো। দরজাগুলো বন্ধ করে রাখো। শোয়ার সময় চেরাগগুলো নিভিয়ে দাও। কারণ, ইঁদুর হয়তো বা চেরাগের ফিতা টেনে ঘরের সবাইকেই জ্বালিয়ে দিবে’’।[3]
[1] (বুখারী, হাদীস ৬২৯৩ মুসলিম, হাদীস ২০১৫)
[2] (বুখারী, হাদীস ৬২৯৪ মুসলিম, হাদীস ২০১৬)
[3] (বুখারী, হাদীস ৬২৯৫ মুসলিম, হাদীস ২০১২)

গৃহপালিত পশু বা বাচ্চাদেরকে রাত্রে ঘর থেকে বের হতে দেয়া

গৃহপালিত পশু কিংবা বাচ্চাদেরকে রাত্রের প্রথমাংশে নিজ নিজ ঘর থেকে বের হতে দেয়া
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لَا تُرْسِلُوا فَوَاشِيَكُمْ وَصِبْيَانَكُمْ إِذَا غَابَتْ الشَّمْسُ حَتَّى تَذْهَبَ فَحْمَةُ الْعِشَاءِ فَإِنَّ الشَّيَاطِينَ تَنْبَعِثُ إِذَا غَابَتْ الشَّمْسُ حَتَّى تَذْهَبَ فَحْمَةُ الْعِشَاءِ

‘‘সূর্যাস্ত হওয়া মাত্রই তোমরা নিজ গৃহপালিত পশু ও বাচ্চাদেরকে ঘরের বাইরে ছেড়ে দিও না যতক্ষণ না রাত্রের প্রথমাংশ চলে যায়। কারণ, শয়তানগুলো সূর্যাস্ত হওয়া মাত্রই রাত্রের শুরুর দিকে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ২০১৩ আবু দাউদ, হাদীস ২৬০৪)

কসম করে তা ভঙ্গ করা

কসম করে তা দ্রুত ভঙ্গ করা
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدتُّمْ وَلَا تَنقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللَّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ

‘‘তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সম্পাদন করা ওয়াদা পূরণ করো এবং তাঁর নামে করা দৃঢ় অঙ্গীকার কখনো ভঙ্গ করো না। কারণ, তোমরাই তো একদা স্বেচ্ছায় তাঁকে এ ব্যাপারে জিম্মাদার বানালে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের সকল কর্মকান্ড সম্পর্কে সম্যক অবগত’’। (না’হল : ৯১)

সতী মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া

কোন সতী মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়ে তা চারটি সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত করতে না পারা সত্ত্বেও তার যে কোন সাক্ষ্য গ্রহণ করা
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

‘‘যারা সতী-সাধ্বী মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়ে তা চার জন সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণিত করতে পারেনি তাদেরকে তোমরা আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং এরপর আর কখনো তাদের কোন সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। কারণ, তারা সত্যিই ফাসিক’’। (নূর : ৪)



একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব




*****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url