যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (২০) || নামাজের মধ্যে কোন কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ ||





নামাজের মধ্যে কোন কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ


এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

একাকী এক কাতারে নামায পড়া

কোন মুক্বতাদীর জন্য আগের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও পরের কাতারে তার একাকী নামায পড়া নিষেধ
’আলী বিন্ শাইবান (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা একদা রাসূল (সা.) এর পিছনে নামায পড়ছিলাম। নামায শেষে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে মুসল্লীদের কাতারের পিছনে একাকী নামায পড়তে দেখলেন। রাসূল (সা.) তার নিকট দাঁড়িয়ে তার নামায খানা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। অতঃপর তার নামায শেষে তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

اِسْتَقْبِلْ صَلاَتَكَ ، فَلاَ صَلاَةَ لِفَرْدٍ خَلْفَ الصَّفِّ

‘‘তোমার নামায খানা আবার নতুন করে পড়ে নাও। কারণ, কেউ কাতারের পিছনে একাকী নামায পড়লে তার নামায আদায় হয় না।[1]
[1] (ইবনু খুযাইমাহ্, হাদীস ১৫৬৯)

মসজিদের মধ্যবর্তী স্থানে নামাজ পড়া

বিনা প্রয়োজনে মসজিদের মাঝে অবস্থিত বড় বড় খুঁটি সমূহের মধ্যবর্তী জায়গায় নামায পড়া নিষেধ
ক্বুররাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كُنَّا نُنْهَى عَنِ الصَّلاَةِ بَيْنَ السَّوَارِيْ ، وَنُطْرَدُ عَنْهَا طَرْدًا

‘‘আমাদেরকে খুঁটি সমূহের মধ্যবর্তী জায়গায় নামায পড়তে নিষেধ করা হতো। এমনকি সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হতো’’।[1]
[1] (ইবনু খুযাইমাহ্, হাদীস ১৫৬৭)

দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে মসজিদে একত্রিত হওয়া

দুনিয়ার উদ্দেশ্যে যে কোন এলাকার কোন মসজিদে একত্রিত হওয়া নিষেধ
আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস’ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

سَيَكُوْنُ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ يَجْلِسُوْنَ فِيْ الْـمَسَاجِدِ حِلَقًا حِلَقًا إِمَامُهُمُ الدُّنْيَا فَلاَ تُجَالِسُوْهُمْ ، فَإِنَّهُ لَيْسَ لِلَّهِ فِيْهِمْ حَاجَةٌ

‘‘অচিরেই দুনিয়ার শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায় আসবে যারা মসজিদে মসজিদে গোলাকার হয়ে বসবে। তাদের মূল লক্ষ্য হবে দুনিয়া। তোমরা কখনো তাদের সাথে বসবে না। কারণ, তাদের প্রতি আললাহ্ তা’আলার কোন প্রয়োজন নেই’’।[1]
[1] (আস্-সিল্সিলাতুস্-স্বা’হী’হাহ্, হাদীস ১১৬৩)

সম্পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে প্রথম বৈঠকের জন্য আবারো ফিরে আসা

কোন ইমাম সাহেব নামাযের প্রথম বৈঠক করতে ভুলে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে গেলে প্রথম বৈঠকের জন্য তাঁর আবারো ফিরে আসা নিষেধ
মুগীরা বিন্ শু’বা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا قَامَ الْإِمَامُ فِيْ الرَّكْعَتَيْنِ ؛ فَإِنْ ذَكَرَ قَبْلَ أَنْ يَسْتَوِيَ قَائِمًا فَلْيَجْلِسْ ، فَإِنِ اسْتَوَى قَائِمًا فَلاَ يَجْلِسْ وَيَسْجُدْ سَجْدَتَيِ السَّهْوِ

‘‘কোন ইমাম সাহেব যদি প্রথম বৈঠক না করে দু’ রাক’আত নামায পড়েই দাঁড়িয়ে যায়। অতঃপর সম্পূর্ণরূপে দাঁড়ানোর আগেই তার তা স্মরণ আসে তা হলে সে যেন প্রথম বৈঠকের জন্য অবশ্যই বসে পড়ে। আর যদি সে ইতিমধ্যে সম্পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে যায় তা হলে সে যেন আর না বসে। বরং ভুলের জন্য দু’টি সাজ্দাহ্ দিয়ে দেয়’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ১০৩৬)

রমযান মাসে ই’তিকাফ্ থাকাবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা

রমযান মাসে ই’তিকাফ্ থাকাবস্থায় রাত্রি বেলায় স্ত্রী সহবাস করা নিষেধ
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

‘‘রোযার রাত্রিতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সহবাস হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পোশাক তুল্য এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাকের ন্যায়। আল্লাহ্ তা’আলা জানেন তোমাদের আত্মসাৎ সম্পর্কে। তাই তিনি তোমাদের তাওবা গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তোমাদের জন্য বরাদ্দকৃত সন্তানের আশায় (রোযার রাত্রিতে) তাদের সাথে সঙ্গম করতে পারো। ... তবে তোমরা মসজিদে ই’তিকাফ্ থাকাবস্থায় তাদের সাথে সঙ্গম করো না। এটি হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলার সীমানা। তাই তোমরা এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ্ তা’আলা মানুষের জন্য তাঁর নিদর্শন সমূহ বর্ণনা করেন যাতে তারা সংযত তথা আল্লাহ্ভীরু হতে পারে’’। (বাক্বারাহ্ : ১৮৭)

মসজিদে দেরিতে এসেও মানুষের ঘাড় টপকিয়ে ইমামের নিকটবর্তী বসা

মসজিদে দেরিতে এসেও পুনরায় মানুষের ঘাড় টপকিয়ে ইমামের নিকটবর্তী হওয়া নিষেধ
আব্দুল্লাহ্ বিন্ বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

جَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ وَرَسُوْلُ اللهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ ، فَقَالَ لَهُ : اِجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ وَآنَيْتَ

‘‘রাসূল (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় টপকিয়ে তাঁর দিকে অগ্রসর হচ্ছে দেখে তিনি তাকে বললেনঃ বসো। তুমি এমনিতেই মসজিদে দেরি করে এসেছো। আবারো মানুষকে কষ্ট দিচ্ছো’’।[1]
[1] (ইবনু খুযাইমাহ্, হাদীস ১৮১১)

নামাযরত অবস্থায় এদিক ওদিক তাকানো

নামাযরত অবস্থায় এদিক ওদিক তাকানো নিষেধ
আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে নামাযরত অবস্থায় এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন:

هُوَ اخْتِلاَسٌ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلاَةِ أَحَدِكُمْ

‘‘তা হচ্ছে শয়তানের ছোঁ। যার মাধ্যমে সে তোমাদের কারোর নামাযের মনোযোগিতা ছিনিয়ে নেয়’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ৭৫১, ৩২৯১)

রাত্রি বেলায় একাকী সফর করা

রাত্রি বেলায় কারোর একাকী সফর করা নিষেধ
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِيْ الْوَحْدَةِ مَا أَعْلَمُ ، مَا سَارَ رَاكِبٌ بِلَيْلٍ وَحْدَهُ

‘‘যদি মানুষ জানতো একাকিত্বের কি ক্ষতি যা আমি জানি তা হলে কোন আরোহী মাত্রই রাত্রি বেলায় একাকী ভ্রমণ করতো না’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ২৯৯৮)

মানুষের ধন-সম্পদের প্রতি লোভী হওয়া

মানুষের ধন-সম্পদের প্রতি লোভী হওয়া কিংবা তাদের কাছ থেকে কোন কিছু পাওয়ার আশা করা নিষেধ
আবু আইয়ূব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমাকে অতি সংক্ষেপে কিছু কথা শিক্ষা দিন। তখন রাসূল (সা.) বলেন:

إِذَا قُمْتَ فِيْ صَلاَتِكَ فَصَلِّ صَلاَةَ مُوَدِّعٍ ، وَلاَ تَكَلَّمْ بِكَلاَمٍ تَعْتَذِرُ مِنْهُ ، وَأَجْمِعِ الْيَأْسَ عَمَّا فِيْ أَيْدِيْ النَّاسِ

‘‘যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে তখন দুনিয়া থেকে অচিরেই বিদায় গ্রহণকারী ব্যক্তির নামাযের ন্যায় নামায পড়ো। এমন কথা বলবে না যা বললে একদা তোমাকে উক্ত কথার জন্য অন্যের নিকট কৈফিয়ত দিতে হবে এবং মানুষের ধন-সম্পদের প্রতি সম্পূর্ণরূপে নিরাশ থাকবে তথা তাদের কাছ থেকে কোন কিছু পাওয়ারই আশা করবে না’’।[1]
[1] (আহমাদ্ ৫/৪১২ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৪২৪৬ আবু নু’আইম/হিল্ইয়াহ্ ১/৩৬২)

কারোর আমানতে খিয়ানত করা

কেউ কারোর আমানতে খিয়ানত করলে তার আমানতে অন্যের খিয়ানত করা নিষেধ
আবু হুরাইরাহ্ ও মা’হাক্ আল-মাক্কী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَدِّ الْأَمَانَةَ إِلَى مَنِ ائْتَمَنَكَ ، وَلاَ تَخُنْ مَنْ خَانَكَ

‘‘কেউ তোমার নিকট কোন কিছু আমানত রাখলে তা সম্পূর্ণরূপে আদায় করবে এবং কেউ তোমার আমানতে খিয়ানত করলে তুমি তার আমানতে খিয়ানত করবে না’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৫৩৪, ৩৫৩৫)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব




****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url