আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-২৮) || তাওহীদের সুফল || ক্ষমা করা আল্লাহর গুণ || বিপদে ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের কাজ ||





আল্লাহর উপর ভরসা মানেই  উত্তম জীবন


২৮-তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

যশ ও খ্যাতির পিছনে ছুটা মানুষগুলো বিপর্যয় সৃষ্টিকারী

যশখ্যাতির আশা করবেন না, যদি করেন তবে মানসিক চাপগ্ৰস্ত ও উদ্বিগ্ন হবেন।
মানুষের মনোযোগের পাত্র হতে চেয়ে এবং মানুষকে খুশি করতে চেষ্টা করে আপনি জীবনের সুখ ও ভারসাম্যতা উভয়টাই হারাবেন।

تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا

“পরকালের সে বাড়ি (অর্থাৎ জান্নাত) আমি তাদেরকে দিব যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে চায় না ও বিপর্যয়ও সৃষ্টি করতে চায় না।” (২৮-সূরা আল কাছাছঃ আয়াত-৮৩)

একজন আরবী কবি বলেছেন-

من أخمل النفس أحياها وروحها

ولم يبت طاويا فيها على ضجر

إن الرياح إذا اشتدت عواصفها

فليس ترمي سوى العالي من الشجر

“যে আনুগত্যে তৃপ্ত কিন্তু নেতা হওয়াতে তৃপ্ত নয়,
সে নিজের জন্য সৌম্যতা বয়ে আনে ও তার রাত শান্তিতে কাটায়।
নিশ্চয় বায়ু যখন প্রচণ্ডভাবে বয়ে যায়
তখন তা গাছের আগাতেই আঘাত হানে।”

(এ অনুবাদ ইংরেজী পুস্তক অনুসারে করা হলো।)

অথবা, “যে নিজেকে অখ্যাত করল সে নিজেকে জীবিত ও সতেজ করল, আর সে (খ্যাতির) ক্ষুধায় কাতর হয়ে বিরক্ত বা ক্রুদ্ধ অবস্থায় রাত কাটাল না, কেননা, বায়ুর বেগ যখন প্রচণ্ড হয় তখন তা গাছের আগা ছাড়া অন্য অংশকে নিক্ষেপ করে না (বা ভেঙ্গে ফেলে না) অর্থাৎ প্রচণ্ড বায়ু গাছের আগাকেই ভেঙ্গে ফেলে)।” (এ অনুবাদ আরবী কবিতা অনুসারে শাব্দিকভাবে করা হল। -অনুবাদক)

“তারা অলসভাবে দাড়ায়; তারা তো লোক দেখাতে চায়।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১৪২)

“এবং তারা যা করেনি তার জন্য তারা প্রশংসিত হতে ভালোবাসে।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৮৮)

“আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা দম্ভ ভরে ও লোক দেখানোর জন্য তাদের ঘর থেকে বের হয়েছিল।” (৮-সূরা আনফালঃ আয়াত-৪৭)

একজন আরব কবি বলেছেন-

ثَوْبُ الرِّياء يَشِفُّ عَّما تَحْتَهُ ٭ فَإذا التَحَفْتَ بهِ فإنّك عَارِي

“লোক দেখানোর কাপড় এত পাতলা যে তার নিচের সবকিছু দেখা যায়। অতএব, যদি তুমি তা দিয়ে তোমার ছতর ঢাক তবে তুমি উলঙ্গ থাকবে।”

আল্লাহর উপর ভরসা মানেই  উত্তম জীবন

সুখ সম্বন্ধে আমরা পূর্বে অধ্যায়গুলোতে যা কিছু আলোচনা করেছি তা এক কথায় প্রকাশ করা যায়। আর তা হলোঃ সবকিছুর প্রভু আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা। এ পর্যন্ত অন্য যা কিছু আমরা আলোচনা করেছি তা সবই বৃথা যদি আপনার আল্লাহর প্রতি ঈমান না থাকে। আল্লাহকে প্রভু হিসেবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আল্লাহর রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করা এবং ইসলামকে জীবন-বিধান হিসেবে গ্রহণ করা অবশ্যই ভিত্তি (প্রধান কাজ) হতে হবে।

“(তাওহীদ বা ইসলামী একত্ববাদে বিশ্বাসী) যে কোন ঈমানদার নর-নারী নেক আমল করবে আমি অবশ্যই তাকে (এ পৃথিবীতে সম্মান, পরিতৃপ্তি ও হালাল রিযিক সম্বলিত) উত্তম জীবন দান করব এবং আমি অবশ্যই তাদেরকে তাদের নেক আমল আনুযায়ী (পরকালে জান্নাত) পুরস্কার দিব।” (১৬-সূরা আন নাহলঃ আয়াত-৯৭)

উত্তম জীবনের জন্য দুটি শর্ত আছে। আর তা হলো-

১. আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা, ২. আমলে সালেহ করা।

“নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও আমলে সালেহ করে পরম করুণাময় (আল্লাহ মু’মিনদের অন্তরে) তাদের জন্য অচিরেই ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিবেন। (১৯-সূরা মারইয়ামঃ আয়াত-৯৬)

যে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে ও নেক আমল করে সে দুটি উপকার পায়

১. ইহকালে ও পরকালে এক সুখী-সমৃদ্ধ উত্তম জীবন।
২. মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশাল পুরস্কার।

“দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে শুভ সংবাদ।” (১০-সুরা ইউনুসঃ আয়াত-৬৪)

বিপদে ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের কাজ

দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ ও সংকটে বিচলিত হবেন না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “নিশ্চয় আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন তিনি তাদেরকে পরীক্ষা করেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি আর যে তাতে ক্রুদ্ধ হয় তার জন্য রয়েছে গযব।” বিপদে ধৈর্য ধারণ করাই মুমিনের কাজ।

আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা ছাড়া মুক্তি নেই

তকদীরের ভালো-মন্দ সব কিছুর প্রতি রাজি থাকা ঈমানের জরুরি বিষয়।

“এবং আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়; ক্ষুধা সম্পদ, জীবন ও ফলমূলের ক্ষয়-ক্ষতি এমনসব কিছু জিনিস দ্বারা পরীক্ষা করব; কিন্তু ধৈর্যশীলদেরকে (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করুন।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-১৫৫)

আমাদের তকদীরে যা কিছু নির্ধারিত আছে তা সর্বদা আমাদের ইচ্ছা ও কল্পনার সাথে মিলে না। কিন্তু তখন আমাদের কোন (বিরূপ) মন্তব্য করা শোভা পায় না। বরং তোমাদের সঠিক অবস্থা হলো তাই যা একজন আত্মসমপর্ণকারী দাসের অবস্থা।

আমরা সবাই আমাদের ঈমানের সবলতা ও দুর্বলতা অনুযায়ী কঠিন ও সহজ পরীক্ষার সম্মুখীন হই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “তোমরা দু'জন লোক যতটা মৃত্যু-যন্ত্রণা অনুভব কর আমি একাই ততটা মৃত্যু-যন্ত্রণা অনুভব করছি। (ইংরেজি পুস্তকে যেমন আছে তেমনই অনুবাদ করা হল । -অনুবাদক।)

“নবীদেরকে সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা করা হয়; অতপর অন্যান্য সৎকর্মশীলদেরকে (তাদের মর্যাদা অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়)”।

“অতএব (হে মুহাম্মদ!) আপনি তেমনভাবে ধৈর্য ধরুন যেমনভাবে দৃঢসংকল্প রাসূলগণ ধৈর্য ধরেছিলেন।” (৪৬-সূরা আল আহকাফঃ আয়াত-৩৬)

আল্লাহ যদি কারো ভালো চান তবে তিনি তাকে পরীক্ষায় ফেলেন।

“এবং আমি অবশ্যই পরীক্ষা করে তোমাদের মধ্য থেকে মুজাহিদদেরকে এবং ধৈর্যশীলদেরকে চিনে নিব। এবং আমি তোমাদের ব্যাপার-স্যাপার (অর্থাৎ কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী) পরীক্ষা করে দেখব।” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতালঃ আয়াত-৩১)

“আর আমি অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছিলাম।” (২৯-সূরা আল আনকাবূতঃ আয়াত-৩)
মোট কথা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা ছাড়া ইহকাল বা পরকালে কোন কিছুতেই মুক্তি নেই।

শাসক থেকে কাঠমিস্ত্রি

আলী ইবনুল মাইমূনিল আব্বাসী নিজে একজন শাসক ও একজন খলিফার পুত্র ছিলেন। তিনি এক বিশাল প্রাসাদে ধনাঢ্য জীবন-যাপন করতেন। পৃথিবীর যা কিছুই তিনি পেতে চাইতেন তাই তার জন্য সহজপ্রাপ্য ছিল।

একদিন প্রাসাদের এক বারান্দা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে মাঠে একলোক কঠোর পরিশ্রম করছে। আলী পরপর কয়েক দিন তার প্রতি অধিক থেকে অধিতর মনোযোগ দিলেন এবং লক্ষ্য করলেন যে সে সারাটা সকাল কাজ করার পর একটু বিরতি দেয় ও তখন অজু করে দুরাকাত সালাত আদায় করে, কেবলমাত্র সন্ধ্যা হলেই সে তার কাজ ছাড়ে ও বাড়িতে তার পরিবার পরিজনের কাছে যায়। তার সম্বন্ধে আরো কিছু জানার জন্য আলী একদিন তাকে দাওয়াত করলেন ও তাকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি শীঘ্রই জেনে নিলেন যে কাজের লোকটির একজন স্ত্রী, দু’জন বোন ও একজন মা আছেন। এবং এদের সকলকেই তার দেখা শুনা করতে হয়। আর তাদের জন্যই তাকে এতটা অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করতে হয়।

তিনি (সে কর্মচারীটি) সারাদিন রোযা রাখতেন ও সন্ধ্যা হলে দিনের উপার্জিত অর্থ দ্বারা (খাদ্য ক্রয় করে) রোযা ভাঙতেন। আলী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার কি কোন অভিযোগ আছে?” তিনি উত্তর দিলেন, “না, সকল প্রশংসা সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।”

এই সামান্য কর্মচারীর কথায় আলী এতটাই অভিভূত হয়ে পড়লেন যে, তিনি রাজপ্রাসাদ ও রাজপদ ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি দিলেন। কয়েক বছর পরে তাকে খোরাসানের নিকটবর্তী অঞ্চলে মৃত পাওয়া গিয়েছিল। তিনি কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং তার নতুন জীবনে তিনি এমন সুখ পেয়েছিলেন যা তার আগের জীবনে তার নিকট সম্পূর্ণ আজানা ছিল।

“পক্ষান্তরে যারা সৎপথে চলে আল্লাহ তাদের সৎপথে চলার ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেন এবং তাদেরকে তাদের (প্রাপ্য) তাকওয়া দান করেন।” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতালঃ আয়াত-১৭)

এ ঘটনা আমাকে আসহাবে কাহাফের ঘটনা মনে করিয়ে দেয়। তারা এক রাজার নিকট তার রাজপ্রাসাদে থাকত। তবুও তারা নিজেদেরকে সংকীর্ণ। দ্বিধাগ্রস্ত ও সমস্যাগ্রস্ত মনে করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধনাঢ্য জীবনে কুফুরী ও অপচয় প্রাধান্য পায়। তাই তারা সে স্থান ত্যাগ করে চলে গেল। তাদের একজন বলেছিলেনঃ “অতএব তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর, তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্য তার দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের কাজকে কার্যকর করবার বন্ধোবস্ত করবেন। (অর্থাৎ তিনি তোমাদের প্রয়োজনীয় খাবার, বাসস্থান ইত্যাদি তোমাদেরকে দিবেন।) (১৮-সূরা আল কাহাফঃ আয়াত-১৬)

যাদের সঙ্গ দুর্বিসহ তাদের সঙ্গ শান্তি নষ্ট করে

যাদের সঙ্গ বিরক্তিকর ও অপ্রীতিকর তাদেরকে ইসলামী পণ্ডিতবর্গের লেখা কিতাবাদিতে ভূরিভূরি জায়গায় দুর্বিসহ বলা হয়েছে। তারা এমন লোক যাদের সঙ্গ অসহ্যকর। ইমাম আহমদ তাদেরকে বিদআতী বা অভিনব লোক বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে তারা সমাজের বোকা লোকজন। আবার কেউ কেউ এদেরকে অমার্জিত লোকজন বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথবা তারা হলো নিরস ও বৈচিত্রহীন (চরিত্রের) লোকজন।

“তারা যেন (দেয়ালে) ঠেকান কাঠের গুড়ি।” (৬৩-সূরা আল মুনাফিকূনঃ আয়াত-৪)

“অতএব এসব লোকদের কী হলো যে তারা কোন কথা বুঝার উপক্রম করে না।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-৭৮)

ইমাম শাফেয়ী বলেছেন- “যখন কোন বোকালোক আমার পাশে বসতে আসে, তখন আমার মনে হতে থাকে যেন তার সাহচর্যের কারণে তার নিচের মাটি ডেবে যাচ্ছে।”

আল আ’মাশ এ ধরনের লোক দেখলে তেলাওয়াত করতেন— “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে শাস্তি দূর করুন। আমরা অবশ্যই ঈমানদার (হব)!” (৪৪-সূরা আদ দোখানঃ আয়াত-১২)

মহান আল্লাহ বলেছেন- “আর যারা আয়াতসমূহ নিয়ে বাজে কথায় লিপ্ত হয় আপনি তাদেরকে দেখলে এড়িয়ে চলুন ...।” (৬-সূরা আল আন’আমঃ আয়াত-৬৮)

“অতএব, তোমরা তাদের সাথে বসবে না।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১৪০)

গুণহীন লোকজনের উদ্দেশ্য নীচুমানের এবং যারা সহজেই তাদের আকাঙ্খার কাছে হার মানে তাদের সাহচর্য সর্বাপেক্ষা বেশি অসহ্যকর।

“অতএব যতক্ষণ না তারা অন্য কথা বলতে শুরু করে ততক্ষণ তোমরা তাদের সাথে বসবে না, (অন্যথায়) তোমরাও অবশ্যই তাদের মতো হয়ে যাবে।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১৪০)

একজন আরবী কবি বলেছেন-

أَنْتَ يَا هَذَا ثَقِيلٌ وَثَقِيلٌ وَثَقِيلُ

أَنْتَ فِي الْمَنْظَرِ إنْسَانٌ وَفِي الْمِيزَانِ فِيلُ

“এই যে তুমি তো ভারী, মোটা ও বিশাল দেহী, তুমি দেখতে মানুষ অথচ ওজনে হাতী।”

ইবনুল কায়্যিম বলেছেন- “অসহ্যকর কোন লোকের কথা যদি তোমাকে জোর করে শুনানো হয় তবে তুমি তার কথা কান দিয়ে শুনিও কিন্তু মন দিয়ে গ্রহণ করিও না এবং তোমার মন নিয়ে তুমি অন্যত্র চলে যেও (অর্থাৎ তার কথায় মন দিও না)। যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাকে তার সঙ্গ ত্যাগ করে যাবার পথ করে দেন ততক্ষণ তুমি তার কথা শুনেও শুনবে না ও তাকে দেখেও দেখবে না।”

“এবং আপনি তার অনুসরণ করবেন না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ বা জিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আর কাজ কর্ম লাগামহীন।” (১৮-সূরা আল কাহাফঃ আয়াত-২৮)

দুর্যোগগ্রস্তদের জন্য অমিয় বাণী

হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, মহান আল্লাহ বলেন- “যদি আমি কারো কাছ থেকে তার সর্বাপেক্ষা প্রিয়জনকে ছিনিয়ে নিই আর তখন যদি সে ধৈর্যসহকারে আমার কাছ থেকে পুরস্কার আশা করে তবে আমি তাকে এর বদলে পুরস্কার স্বরূপ জান্নাত দান করব।”

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, মহান আল্লাহ বলেছেন- “আমি যাকে তার দু’টি প্রিয় বস্তুর ব্যাপারে পরীক্ষা করেছি (অর্থাৎ আমি যার দু’ চোখের দৃষ্টি শক্তি ছিনিয়ে নিয়েছি) তাকে আমি এর বদলে জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করব।”

فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ

“কেননা, চক্ষু অন্ধ হয় না, বরং, বক্ষস্থিত আত্মাই অন্ধ হয়।” (২২-সূরা আল হাজ্জঃ আয়াত-৪৬)

তিরমিয়ী শরীফে একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “আল্লাহ যখন তার কোন ঈমানদার বান্দার ছেলেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তখন তিনি তাঁর ফেরেশতাদেরকে বলেন, ‘তোমরা আমার ঈমানদার বান্দার ছেলেকে ছিনিয়ে নিয়েছ?’ তারা উত্তর দেয় ‘হ্যাঁ’। তারপর আল্লাহ বলেন, “তোমরা কি তার হৃদয়ের মনিকে ছিনিয়ে নিয়েছ? তারা উত্তর দেয় ‘হ্যাঁ’। তখন আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা কি বললঃ তারা উত্তর দেয়, ‘সে আপনার প্রশংসা করল এবং বলল, আমরা সবাই আল্লাহর জন্যই এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন’ তখন আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে আদেশ করেন জান্নাতে আমার বান্দার জন্য একটি বাড়ি তৈরি কর এবং এর নাম দাও “প্রশংসাগৃহ।”

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ

“শুধুমাত্র ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার বেহিসাবে পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে।” (৩৯ সূরা আয যুমারঃ আয়াত ১০)

“তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছিলে তাই তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” (১৩-সূরা রাআদঃ আয়াত-২৪)

“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন। (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-২৫০)

“এবং (হে মুহাম্মদ!) আপনি ধৈর্য ধরুন, আর আপনার ধৈর্য তো আল্লাহর সাহায্যেই হয়ে থাকে।” (১৬-সূরা আন নাহলঃ আয়াত-১২৭)

“অতএব (হে মুহাম্মদ!) আপনি ধৈর্য ধরুন নিশ্চয় আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। (৩০-সূরা আর রূমঃ আয়াত-৬০)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “নিশ্চয় পরীক্ষার গুরুত্ব অনুসারেই পুরস্কারের গুরুত্ব হয়ে থাকে, বাস্তবিকই আল্লাহ যদি কোন জাতিকে ভালোবাসেন তবে তিনি তাদেরকে পরীক্ষা করেন। যে এতে রাজি বা সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি আর যে এতে ক্রুদ্ধ হয় তার জন্য রয়েছে গযব।” যখন দুর্যোগ আঘাত হানে তখন ধৈর্য, তাকদীর ও আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। আর আমাদের একথা জানা উচিত যে, যিনি প্রথমে দান করেছেন, তিনিই তো নিয়েছেন।

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন যে, তোমরা যেন আমানতকে তার মালিকের নিকট দিয়ে দাও।” (৪-সূরা আন নিসা : আয়াত-৫৮)

একজন আরবী কবি বলেছেন-

ومَا المالُ والأهْلُونَ إلاَّ وَديعَة ٌ ٭ وَلابُدَّ يَوْماً أنْ تُرَدَّ الوَدائِعُ

“সম্পদ ও পরিবার তো শুধুমাত্র ঋণস্বরূপ, একদিনতো অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।"

তাওহীদের সুফল

আপনি যখন অত্যাচারের শিকার হন তখন আপনার জীবনে অবশ্যই তাওহীদের সুফল দেখা দেয়। একথা মনে রাখবেন যে, অন্যেরা যখন আপনাকে আঘাত করে তখন আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আপনাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করবে।

১. আল্লাহর প্রতি আপনার পাকা ঈমান থাকলে আপনার প্রতি যে ব্যক্তি জুলুম করেছে আপনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। এর চেয়ে আরো ভালো তার জন্য শুভ কামনা করা। শুধুমাত্র ক্ষমা করে দেয়া বা শুধুমাত্র শুভ কামনা করার চেয়েও আরো ভালো, উচ্চতম ও সর্বোত্তম স্তর হলো তার কোন উপকার করা বা তাকে কোনভাবে সাহায্য করা। ক্ষমার প্রথম পর্যায় হলো স্বীয় ক্রোধ দমন করা, এর অর্থ হলো আপনি আঘাতের বদলে আঘাত দিচ্ছেন না। তারপর আসছে সত্যিকার ক্ষমা- যার অর্থ হলো ক্ষমা করা, কোনরূপ অশুভ ইচ্ছা বা কামনা পরিত্যাগ করা। এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে আসছে কল্যাণ করা তথা আপনার যে ক্ষতি করা হয়েছে কোন ভালো কাজের মাধ্যমে বা (অত্যাচারীকে) দয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে তার ক্ষতি পূরণ করা।

এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-

وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

“যারা ক্রোধ দমন করে এবং অন্যদেরকে ক্ষমা করে; আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৩৪)

“আর যে নাকি ক্ষমা করে দেয় এবং আপোস মীমাংসা করে তার পুরস্কার আল্লাহর নিকটই আছে।” (৪২-সূরা আশ শুরাঃ আয়াত-৪০)

“তারা যেন (তাদেরকে) ক্ষমা করে ও (তাদের) দোষ উপেক্ষা করে।” (২৪-সূরা আন নূরঃ আয়াত-২২)

বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

ان الله امرني ان اصل من وان اعفوا عمن ظلمنى وان اعطى من حرمنى

“যে ব্যক্তি আমার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক করতে, যে আমার সাথে অন্যায় আচরণ করেছে তাকে ক্ষমা করে দিতে এবং যে আমাকে বঞ্চিত করেছে তাকে দান করতে আল্লাহ অবশ্যই আমাকে আদেশ করেছেন।”

২. তকদীরের প্রতি আপনার ঈমান পাকা হবে। অন্য কথায় আপনি বুঝতে পারবেন যে, যে ব্যক্তি আপনার সাথে অন্যায় আচরণ করেছে সে তা আল্লাহর পূর্ব নির্ধারণী ও বিধান অনুসারেই করেছে।

মানুষ তো উপায় মাত্র, কিন্তু যিনি বিধান করেন ও সিদ্ধান্ত নেন তিনি হলেন আল্লাহ। সুতরাং আপনার ইচ্ছাকে তার সমীপে সমর্পণ করুন।

৩. আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনার যে ক্ষতি হয়েছে তাতে আপনার পাপ ক্ষমা হয়েছে এবং এর ফলে আল্লাহর দরবারে আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি পেতে পারে।

এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-

فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ

অতএব যারা হিজরত করেছে এবং নিজেদের ঘর-বাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে ও আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে আমি অবশ্যই তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিব।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৯৫)

মু’মিনগণ একথা বুঝতে পারে যে, জীবনে শক্রতার আগুন নিভানো এক বুদ্ধিমত্তার কাজ।

কুরআনের ভাষায়-

ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ

উত্তম জিনিস দ্বারা মন্দকে দূর কর, যাতে তোমার মাঝে ও যে তোমার সাথে শক্রতা করে তার মাঝে এমন সম্পর্ক হয়ে যায় যেন সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।” (৪১-সূরা হা-মীম-আস-সাজদাহঃ আয়াত-৩৪) অর্থাৎ আল্লাহ মু’মিনদেরকে ক্রোধের সময় ধৈর্য ধরতে এবং যারা তাদের সাথে মন্দ আচরণ করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।

“যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সেই প্রকৃত মুসলমান।”

পূর্বোক্ত আয়াতের অর্থ হলো, যে ব্যক্তি আপনার ক্ষতি করে বিনিময়ে আপনার উচিত তার সাথে হাসি মুখে সাক্ষাৎ করা ও কোমল কথা বলা। এভাবে আপনি তার অন্তর থেকে ঘৃণার আগুন নিভিয়ে দিতে পারবেন।

কুরআনের ভাষায়-

“আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বলুন, নিশ্চয় শয়তান তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত-৫৩)

৪. আপনি আপনার ক্রটি-বিচ্যুতি সম্বন্ধে জানতে পারবেন। অন্য কথায় আপনি একথা বুঝতে পারবেন যে, আপনার পাপের কারণেই একজন লোক আপনার ক্ষতি করার সুযোগ গ্রহণ করতে পেরেছে।

“কি ব্যাপার! যখন তোমাদের নিকট একটি বিপদ আসল তখন তোমরা বললে, “এটা কোথা হতে আসল? অথচ পূর্বে তোমরা (তোমাদের শক্রদের) দ্বিগুণ বিপদ ঘটিয়ে ছিলে।” আপনি (হে মুহাম্মদ!) (তাদেরকে) বলে দিন যে, এটা (তোমাদের পাপের কারণে) তোমাদের নিজেদের থেকেই এসেছে।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৬৫)

“আর তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে তা তোমাদের নিজ কৃত কর্মের ফলেই ঘটে।” (৪২-সূরা আশ শূরাঃ আয়াত-৩০)

৫. আপনি যখন অত্যাচারিত হন তখন আপনাকে অত্যাচারী না বানিয়ে অত্যাচারিত বানানোর কারণে আল্লাহর প্রশংসা করুন ও তার শোকরিয়া আদায় করুন। আমাদের কতিপয় ধাৰ্মিক পূর্বসূরী বলতেন

اللهم اجعلني مظلوما لا ظالماً

“হে আল্লাহ! আমাকে অত্যাচারী না বানিয়ে বরং অত্যাচারিত বানান।”

আদম (আঃ)-এর দু'ছেলের একজন অপরজনকে যা বলেছিল একথা সে কথার মতো। (আর তা হলো)

لَئِن بَسَطتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَا بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لِأَقْتُلَكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ

যদি তুমি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াও তবে আমি তোমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াবো না; নিশ্চয় আমি সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। (৫-সূরা মায়িদাঃ আয়াত ২৮)

ক্ষমা করা আল্লাহর গুণ

যে আপনাকে আঘাত করেছে তার প্রতি আপনার করুনা প্রদর্শন করা উচিত। সে আপনার অনুকম্পা ও করুণার পাত্র। মন্দ কাজে তার গোঁ ও মুসলমানকে আঘাত না করার জন্য আল্লাহর যে আদেশ তা প্রকাশ্যে অমান্য করার কারণে সে আপনার কোমলাচরণ ও অনুকম্পার পাত্র। সম্ভবত আপনি (এরূপ আচরণ করে) তাকে পতন বা ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারবেন। 

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “অত্যাচারী বা অত্যাচারিত যাই হোক না কেন তোমার ভাইকে সাহায্য কর।” (অত্যাচারিতকে সাহায্য করার অর্থ আশা করি সকলেই বুঝি । কিন্তু অত্যাচারীকে সাহায্য করার অর্থ হলো সদাচারণের মাধ্যমে তাকে অত্যাচার করা থেকে বিরত রাখা ও ফলে তাকে আল্লাহর গযব ও ধ্বংস থেকে বাচতে সাহায্য করা। -অনুবাদক)

যখন মিসত্বাহ আবু বকর (রাঃ)-এর মেয়ে আয়েশা (রাঃ)-এর সম্মানে কলঙ্ক আরোপ করেছিল তখন আবু বকর (রাঃ) মিসত্বাহকে আর কোনরূপ সাহায্য না করার অঙ্গীকার করেছিলেন। মিসত্বাহ গরীব থাকার কারণে আবু বকর (রাঃ) তার জন্য খরচ করতেন ও তাকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তৎক্ষণাৎ নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করলেন-

وَلَا يَأْتَلِ أُولُو الْفَضْلِ مِنكُمْ وَالسَّعَةِ أَن يُؤْتُوا أُولِي الْقُرْبَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ

তোমাদের মধ্যে যারা অনুগ্রহ ধন্য ও অবস্থা সম্পন্ন তারা যেন নিকটাত্মীয় দরীদ্রদেরকে ও আল্লাহর রাস্তায় হিযরতকারীদেরকে দান ও সাহায্য সহযোগিতা না করার শপথ না করে। তারা যেন (তাদেরকে) ক্ষমা করে দেয় ও (তাদের সাথে) আপোষ-মিমাংসা করে নেয়। তোমরা কি এটা ভালোবাসনা যে আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন?” (২৪-সূরা আন নূরঃ আয়াত-২২)

আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিবেন- এটাই আমি ভালোবাসি। এরপর তিনি মিসত্বাহের জন্য খরচ করা শুরু করে দিলেন এবং তিনি তাকে ক্ষমাও করে দিলেন।

উয়াইনাহ ইবনে হিস্‌ন উমরকে (রাঃ) বলেছিল, “হে উমর! একি ব্যাপার! আল্লাহর কসম, তুমি আমাদেরকে উদারভাবে দিচ্ছ না ও তুমি আমাদের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে ফয়সালা করছ না।”

একথা শুনে উমর (রাঃ) তার প্রতি রুষ্ট হয়ে তাকে শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত নিলেন (তার দিকে তেড়ে গেলেন), এমন সময় হুর্‌র ইবনে কায়স বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, আল্লাহ বলেন-

“ক্ষমা প্রদর্শন কর, সৎকাজের আদেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চল (অর্থাৎ তাদের শাস্তি দিওনা)” (৭-সূরা আল আ'রাফঃ আয়াত-১৯৯)

পরবর্তীতে হুর্‌র ইবনে কায়স বলেছেন- “আল্লাহর কসম, উমর (রাঃ) এ আয়াত অমান্য করেনি এবং সর্বদাই (আল্লাহর সীমলঙ্ঘন করা থেকে) বিরত থেকেছেন ও আল্লাহর কিতাবে যা আছে তার অনুসরণ করেছেন।

নবী ইউসুফ (আঃ) তার ভাইদেরকে বলেছিলেন- “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই; আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।” (১২-সূরা ইউসুফঃ আয়াত-৯২)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিজয়ী বেশে মক্কাতে ফিরে এলেন তখন তিনি কুরাইশ গোত্রের কাফেরদের সেসব মুখ দেখতে পেলেন যারা তাকে আঘাত দিয়েছিল, তাকে স্বীয় মাতৃভূমি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিল। (কিন্তু তিনি তাদের প্রতিশোধ গ্রহণ না করে বরং) তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ যাও। কেননা, তোমরা স্বাধীন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “কুস্তিতে বিজয়ী ব্যক্তি শক্তিশালী নয় বরং যে ব্যক্তি ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ (আত্মসংবরণ) করতে পারে সেই শক্তিশালী।”

এক আরব কবি বলেছেন- “যদি তুমি প্রিয়জনদের সঙ্গে থাক তবে তাদের সাথে আত্মীয়ের মতো কোমল আচরণ করিও।”

আর কারো সকল ভুল-ত্রুটি ধরিও না, যদি ধর তবে তুমি বন্ধুহীন জীবন কাটাবে।” কেউ কেউ বলেছেন যে ইঞ্জীল শরীফে লিখা আছে—

اغفر لمن اخطا عليك مرة سبع مرات

“Forgive seven times the one, who wronged you once.”

“যে তোমার সাথে একবার অন্যায় আচরণ করেছে তাকে সাতবার ক্ষমা কর।” অর্থাৎ যে তোমার সাথে একবার অন্যায় আচরণ করেছে, তুমি ধর্ম রক্ষার্থে ও তোমার আত্মাকে নির্মল রাখতে তাকে সাতবার ক্ষমা করে দাও। প্রতিশোধ গ্রহণেচ্ছা শুধুমাত্র মনের শক্তি, নিদ্রা, মনের স্থিরতা ও শান্তিই দূর করতে পারে, কিন্তু অন্যের কোন কিছু ছিনিয়ে নিতে পারে না।

“কিন্তু যে ব্যক্তি ক্ষমা করে ও আপোষ মীমাংসা করে আল্লাহর নিকট তার পুরস্কার রয়েছে।” (৪২-সূরা আশ শুরাঃ আয়াত-৪০)

ভারতীয় প্রবাদে আছে— “যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক বীর যে নাকি একটি নগরকে জয় করে।”

“অবশ্যই মানব মন মন্দকৰ্ম (বা অপরাধ) প্রবণ।” (১২-সূরা ইউসুফঃ আয়াত-৫৩)


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



*****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url