আল্লাহর উপর ভরসা || (পর্ব-৩৫) || পাপ মার্জনার দু’টি পথ || সালাতের উপকারিতা || ইসলাম ধর্ম কল্যাণের ধর্ম ||





আল্লাহর উপর ভরসা ও সালাতের মধ্যেই সাফল্য ও কল্যাণ



পাপ মার্জনার দু’টি পথ

আমরা আসলে পাপ মার্জনার দু’টি পথ না বলে এভাবেও বলতে পারি পাপ মার্জনার দু’টি রহস্য। পাপ মার্জনার এই দু’টি রহস্যই মূলত পাপ মার্জনার দু’টি পথ। আপনি যখন পাপ মার্জনার এই দু’টি পথ বা রহস্য সম্পর্কে হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করবেন, বুঝবেন তখন আপনার পক্ষে পুনরায় পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া আদৌ উচিৎ হবে না। 

কিছু কিছু বিজ্ঞজন উল্লেখ করেছেন যে-

১. পাপ থেকে তওবা করার পর আত্ম-গরিমাও কৃত্রিম ধাৰ্মিকভাব দমিত হয়ে যায়।

২. আল্লাহর রহীম (পরম করুণাময়), গফুর (পরম ক্ষমাশীল) ও তাওয়াব (তওবা কবুলকারী) ইত্যাদি নাম ও গুণ তার অন্যান্য নাম ও গুণের তুলনায় পাপ থেকে তওবাকারীর নিকট অধিক অর্থবহ বা কার্যকর বা উপকারী। (অর্থাৎ এসব নামের দোহাই দিয়ে তওবা করলে আল্লাহ পাপ মার্জনা করে দেন। -অনুবাদক)

যিনি তওবা করবেন তিনি অবশ্যই খালেস মনে কৃত পাপের জন্য লজ্জিত হয়ে এবং অনুসূচনা থেকেই করবেন। ইন শা আল্লাহ, আল্লাহ পাক তওবা কবুল করবেন।

রিযিক তালাশ করুন কিন্তু লোভ করবেন না

সমস্ত মহিমা ও প্রশংসা স্রষ্টা ও রিযিকদাতারই প্রাপ্য। তিনি কীটকে মাটিতে, মাছকে পানিতে, পাখিকে শূন্যে (আকাশে), পিপড়াকে অন্ধকারে এবং সাপকে পাথরের ফাটলে খোরাক দেন। আল্লামা ইবনুল জাওযী এমন এক দৃশ্য দর্শন করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন যা চমৎকার এমনকি আজবও বটে।

একটি গাছের আগডালে একটি অন্ধ সাপ বাস করত। একটি পাখি তার ঠোঁটে করে এটির জন্য খাবার নিয়ে আসত। এটি সাপের নিকট এসে একটি (কিচির মিচির) শব্দ করত। এ শব্দ শুনে সাপটি হা করত, আর পাখিটি সাপের (সে হা করা) মুখে খাবার ভরে দিত। সকল মহিমা ও প্রশংসা সে আল্লাহরই প্রাপ্য যিনি পাখিকে দিয়ে সাপের সাহায্য করালেন।

وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُم

“নিজ ডানার সাহায্যে উড়ে এমন প্রতিটি পাখিই তোমাদের মত একটি উম্মত।” (৬-সূরা আন’আমঃ আয়াত-৩৮)

মেহরাবের মধ্যে মরিয়ম (আঃ)-এর নিকট দিন-রাত রিযিক আসত। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো-

أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَا قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ

“এসব আপনার নিকট কীভাবে আসে?” তিনি উত্তর দিলেন, “এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান তাকে অপরিমিত রিযিক দান করেন।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-৩৭)

وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ

এবং অভাবের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করনা। আমিই তোমাদের ও তাদের রিযিক দিই।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত-৩১)

লোকজনকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে পিতা-পুত্র উভয়েরই রিযিকদাতা হলেন তিনি যিনি জন্ম দেন না এবং (কারো দ্বারা) জাতও নন। অনন্ত অসীম ধন ভাণ্ডারের মালিক নিজেই আপনার (এবং সকলের) রিযিকের গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

فَابْتَغُوا عِندَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ

“অতএব আল্লাহর নিকট রিযিক চাও এবং তার দাসত্ব (ইবাদত) কর ও তার কৃতজ্ঞতা (শোকরিয়া) আদায় কর।” (২৯-সূরা আনকাবূত আয়াত-১৭)

وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ

“এবং তিনিই আমাকে পানাহার করান।” (২৬-সূরা আশ শুয়ারাঃ আয়াত-৭৯)

আপনি রিযিক তালাশ করুন, রিযিক তালাশ করতে থাকুন এটাই আপনার কাজ। আর মহান আল্লাহ পাকের দায়িত্ব হলো আপনাকে রিযিক দান করা। সুতরাং লোভ করে, প্রতারণা করে আপনার জন্য রিযিক আশার পথকে বন্ধ করবেন না, কুলুষিত করবেন না। আল্লাহ পাকের উপর ভরসা করুন এবং রিযিক তালাশ করুন। সময় মত আল্লাহ-ই আপনার কাছে রিযিক পৌঁছে দিবেন।

সালাতের উপকারিতা

সালাতের আংশিক গুরুত্ব হলো এই যে, এটি মন থেকে মন্দ অনুভূতিসমূহ (যথা কুচিন্তা, দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা, দুঃখ-বেদনা ইত্যাদি দূর করে দেয় এবং মনকে শক্তি ও আনন্দে ভরে দেয়। সালাতের সময় হৃদয়-মন আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকে। আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়াতে সান্ত্বনা পাওয়া যায়, তার সামনে দাঁড়ালে আধ্যাত্মিকতা অনুভব করা যায়।

আর এসব কিছুই সালাতের সময় অনুভব করা যায়। সালাতে (শরীরের) সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই ব্যবহার করা হয়, কিন্তু যা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আত্মাকেও অবশ্যই সজাগ রাখতে হবে। সালাতের সময় সৌম্যতা ও শান্তি অর্জন করা যায়, যেমন নাকি শক্র ও সমস্যা থেকে কেউ (কমপক্ষে আত্মিকভাবে) দূরে চলে যায়। (অর্থাৎ শক্র ও সমস্যা থেকে দূরে চলে গেলে যেমন শান্তি পাওয়া যায় তেমনই সালাতের মধ্যে আত্মিকভাবে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করে দুনিয়ার কষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি পাওয়া যায় -অনুবাদক)

এভাবে সালাত হৃদরোগের একটি শক্তিশালী ঔষুধ। তবুও কেবলমাত্র যোগ্য আত্মাই সালাত থেকে উপকৃত হয়; পক্ষান্তরে দুর্বল আত্মা শরীরের মতো পার্থিব বস্তু থেকেই তার খোরাক তালাশ করে।

সুতরাং আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাত এই উভয় জাহানের কল্যাণ অর্জন করতে সাহায্য করার জন্য সালাত সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। সালাত পাপ কাজে বাধা দেয়, রোগ প্রতিরোধ করে, আত্মা ও চেহারা উভয়কেই নূরান্বিত (আলোকিত) করে, সালাতীকে কর্মক্ষম করে তোলে এবং ব্যাপক অর্থে যে নাকি সতর্কতার সাথে, যথাযথভাবে ও একনিষ্ঠভাবে সালাত আদায় করে, সালাত তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।

ইসলাম ধর্ম কল্যাণে ভরপুর এক ধর্ম

ইসলাম ধর্ম মু’মিন বান্দাকে বিশাল পরিসরের কল্যাণ ও পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। এটা এমন সব কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা তাকে সর্বদা সত্যপথে থাকতে উৎসাহ দেয় এবং এমন সব পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা আখেরাতের জন্য তার আশাকে বাড়িয়ে তোলে। যেসব আমল গুনাহ মুছে ফেলে (যেমন সালাত) ইসলামে এমন সব আমল অনেক আছে।

যেমন একটি আমলে সালেহ বা নেক আমল দশ গুণ, সাতশত গুণ, এমনকি আরো অনেক অনেক গুণ বেশি বাড়ানো হয়। আরেকটি উদাহরণ হলো দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন ও যে কোন সংকট, যখনই কোন মু’মিন বান্দা কোন সংকটে পড়ে তখনই তার কিছু পাপ মাফ করে দেয়া হয়। মুসিবতের সময় মু’মিন বান্দা অন্যান্য মু’মিন বান্দাদের দোয়ার দ্বারাও উপকৃত হয়। পৃথিবীতে ইসলাম ছাড়া এমন কল্যাণকামী ধর্ম আর দ্বিতীয়টি নেই। তাই বিশ্বব্যাপী এখন স্বীকৃত বিষয় এই যে, ইসলাম ধর্ম কল্যাণে ভরপুর এক ধর্ম।

وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا

আর যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামতকে গণনা কর তবে তোমরা তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না।” (১৬-সূরা নাহলঃ আয়াত-১৮)

“আর তিনি তোমাদের উপর তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য উভয় নেয়ামতসমূহ পূর্ণ করে দিয়েছেন।” (৩১-সূরা লোকমানঃ আয়াত-২০)

[প্রকাশ্য নেয়ামত বলতে বুঝায় ইসলামী তাওহীদ (একত্ববাদ) ও স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ইত্যাদিসহ এ পৃথিবীর বৈধ আমোদ-প্রমোদ। অপ্রকাশ্য নেয়ামত বলতে বুঝায় আল্লাহর প্রতি ঈমান, ইলম (জ্ঞান), হেকমত (প্রজ্ঞা), আমলে সালেহ করার জন্য পথ-নির্দেশ বা হেদায়েত এবং আখেরাতে জান্নাতের আমোদ-ফুর্তি]

ভয় করো না তুমিই বিজয়ী হবে

তুমি একজন মুসলিম, তোমার জন্য আল্লাহ আছেন, এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখো। আল্লাহর উপর ভরসা করো নিশ্চয় তুমি বিজয়ী হবে। ভয় করা বা হতাশা ডুবে যাওয়া মুসলিমের জন্য হারাম। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আছেন, তাকে ভয় করো, আল্লাহ তোমাকে বিজয়ী করবেন। হ্যা, ভয় করো না, নিশ্চয় তুমি বিজয়ী হবে- এটা আল্লাহ নিজে তোমাকে বলছেন।

“ভয় করো না, নিশ্চয় তুমি বিজয়ী হবে।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-৬৮)

নবী মূসা (আঃ) তিনবার সমস্যায় পড়েছিলেন-

১. যখন তিনি দুষ্ট ও দুৰ্বত্ত ফেরাউনের দরবারে প্রবেশ করেছিলেনঃ “হে আমাদের প্রভু! নিশ্চয় আমরা ভয় করি পাছে সে (ফেরাউন) উত্তেজিত হয়ে আমাদেরকে কষ্ট দেয় বা সীমালঙ্ঘন (জুলুম) করে।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-৪৫)

قَالَ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَىٰ

“তিনি (আল্লাহ) বললেন, “ভয় করো না, নিশ্চয় আমি তোমাদের দুজনের সাথে আছি, সবকিছু শুনছি ও দেখছি।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-৪৬)

আমি তোমাদের সাথে আছি, সবকিছু শুনছি ও দেখছি, কথাটি সর্বদা মুসলমানের মনে রাখা উচিৎ।

২. যখন যাদুকররা তাদের জাদুর রশি ও লাঠি নিক্ষেপ করল তখন সর্বশক্তিমান বললেন-لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنتَ الْأَعْلَىٰ “ভয় করো না, নিশ্চয় তুমিই বিজয়ী হবে।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-৬৮)

৩. যখন ফেরাউন ও সেনাবাহিনী মূসা (আঃ)-কে ধাওয়া করছিল তখন আল্লাহ্‌ বলেছিলেন-

اضْرِب بِّعَصَاكَ الْبَحْرَ

“তোমার লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত কর।” (২৬-সূরা আশ শোয়ারাঃ আয়াত-৬৩)

মূসা (আঃ) বললেন-

كَلَّا إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ

“কখনো না! নিশ্চয় আমার সাথে আমার প্রভু আছেন, তিনি আমাকে সঠিক পথ-প্রদর্শন করবেন। (২৬-সূরা আশ শোয়ারাঃ আয়াত-৬২)


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



*****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url